ইসলাম (আরবি ভাষায়: الإسلام আল্-ইসলাম্) একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম। "ইসলাম" শব্দের অর্থ "আত্মসমর্পণ", বা একক স্রষ্টার নিকট নিজেকে সমর্পণ। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতকে আরবের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা এবং ইসলামের নবীমুহাম্মদ এই ধর্ম প্রচার করেন। কুরআন ইসলামের মূল ধর্মগ্রন্থ। এই ধর্মে বিশ্বাসীদের মুসলমান বা মুসলিম বলা হয়। কুরআন আল্লাহর বাণী এবং তার কর্তৃক মুহাম্মদের নিকট প্রেরিত বলে মুসলমানরা বিশ্বাস করেন। তাদের (মুসলমানদের) বিশ্বাস অনুসারে মুহাম্মদ শেষ নবী। হাদিসে প্রাপ্ত তাঁর নির্দেশিত কাজ ও শিক্ষার ভিত্তিতে কুরআনকে ব্যাখ্যা করা হয়। ইহুদি ও খ্রিস্ট ধর্মের ন্যায় ইসলাম ধর্মও আব্রাহামীয়। মুসলমানের সংখ্যা আনুমানিক ১৪০ কোটি ও তারা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠী। মুহাম্মদ ও তার উত্তরসূরীদের প্রচার ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ফলশ্রুতিতে ইসলাম দ্রুত বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব আফ্রিকা, পশ্চিম আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মুসলমানরা বাস করেন। আরবে এ ধর্মের গোড়া পত্তন হলেও অধিকাংশ মুসলমান অনারব এবং আরব দেশের মুসলমানরা মোট মুসলমান সংখ্যার শতকরা মাত্র বিশ ভাগ। যুক্তরাজ্যসহ বেশ কিছু ইউরোপীয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম ইসলাম।
আল্লাহ্ (আরবি: ﺍﷲ) একটি আরবি শব্দ, ইসলাম ধর্মানুযায়ী যার মানে হল "বিশ্বজগতের একমাত্র স্রষ্টা এবং প্রতিপালকের নাম"। "আল্লাহ" শব্দটি প্রধানতঃ মুসলমানরাই ব্যবহার করে থাকেন। মূলতঃ “আল্লাহ্" নামটি ইসলাম ধর্মে বিশ্বজগতের সৃষ্টিকতার সাধারনভাবে বহুল-ব্যবহৃত নাম। এটি ছাড়াও আরো কিছু নামে সম্বোধন করা হয়। মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ কোরআনে আল্লাহ্র নিরানব্বইটি নামের কথা উল্লেখ আছে; তার মধ্যে কয়েকটি হল: সৃষ্টিকতা, ক্ষমাকারী, দয়ালু, অতিদয়ালু, বিচারদিনের মালিক, খাদ্যদাতা, বিশ্বজগতের মালিক প্রভৃতি।
মসজিদ (আরবি: مسجد উচ্চরণ:ˈmæsdʒɪd) মুসলমানদের দলবদ্ধভাবে নামাজ পড়ার জন্য নির্মিত স্থাপনা। শব্দটির উৎপত্তি আরবি "মসজিদ" থেকে, যার আভিধানিক অর্থ শ্রদ্ধাভরে মাথা অবনত করা অর্থৎ সিজদাহ করা। সাধারণভাবে, যেসব ইমারত বা স্থাপনায় মুসলমানেরা একত্র হয়ে প্রাত্যহিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ (আরবি: صلاةসালাত) আদায় করেন, তাকে মসজিদ বলে। আবার যেসব বড় আকারের মসজিদগুলো নিয়মিত নামাজের সাথে সাথে শুক্রবারের জুম'আর নামাজ আদায় হয় এবং অন্যান্য ইসলামিক কার্যাবলী (যেমন: কোরআন শিক্ষা দেওয়া) সম্পাদিত হয়, সেগুলো জামে মসজিদ (مسجد جامع) নামে অভিহিত। ইমাম নামাজের ইমামতি করেন বা নেতৃত্ব দেন।
মসজিদ মুসলমানদের বিভিন্ন ধর্মীয় কার্যাবলীর প্রাণকেন্দ্র। এখানে প্রার্থণা করা ছাড়াও শিক্ষা প্রদান, তথ্য বিতর়ণ এবং বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়।মসজিদের উৎকর্ষের ক্ষেত্রে, সেই সপ্তম শতাব্দির সাদাসিধে খোলা প্রাঙ্গনবিশিষ্ট মসজিদে কাবা বা মসজিদে নববী থেকে বর্তমানে এর প্রভূত উন্নয়ন ঘটেছে। এখন অনেক মসজিদেরই সুবিশাল গম্বুজ, উঁচু মিনার এবং বৃহদাকার প্রাঙ্গন দেখা যায়। মসজিদের উৎপত্তি আরব উপদ্বীপে হলেও বর্তমানে তা পৃথিবীর সব দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে।
১৬শ ও ১৭শ শতাব্দীতে বিশেষত সুলতান প্রথম সুলাইমানের সময় উসমানীয় সাম্রাজ্য দক্ষিণপূর্ব ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া, ককেসাস, উত্তর আফ্রিকা ও হর্ন অব আফ্রিকা জুড়ে বিস্তৃত একটি শক্তিশালী বহুজাতিক, বহুভাষিক সাম্রাজ্য ছিল।১৭শ শতাব্দীর শুরুতে সাম্রাজ্যে ৩২টি প্রদেশ ও বেশ কয়েকটি অনুগত রাজ্য ছিল। এসবের কিছু পরে সাম্রাজ্যের সাথে একীভূত করে নেয়া হয় এবং বাকিগুলোকে কিছুমাত্রায় স্বায়ত্ত্বশাসন দেয়া হয়।
উসমানীয় সাম্রাজ্য ছয় শতাব্দী ধরে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছে। তবে দীর্ঘদিনব্যাপী ইউরোপীয়দের তুলনায় সামরিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে। ধারাবাহিক অবনতির ফলে সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যায়। এরপর আনাতোলিয়ায় নতুন প্রজাতন্ত্র হিসেবে আধুনিক তুরস্কের উদ্ভব হয়। বলকান ও মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্যের সাবেক অংশগুলো বিভিন্ন নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদের তুগরা (طغراء).এতে উল্লেখ রয়েছে মাহমুদখান,
আবদুল হামিদেরপুত্র,
সর্বদাবিজয়ী. -
محمودخانبنعبدالحميدمظفردائماً । তুগরা (উসমানীয় তুর্কি: طغراtuğrâ) উসমানীয় সুলতানদের ক্যালিগ্রাফিক মনোগ্রাম, সিল বা স্বাক্ষর যা বিভিন্ন সরকারি দলিল ও চিঠিতে ব্যবহার হত।প্রাচীন মিশরের কারটুশ ও ব্রিটিশ রাজার রয়েল সাইফারের মত তুগরা কাজ করত। প্রত্যেক উসমানীয় সুলতান তাদের নিজস্ব তুগরা ব্যবহার করতেন।
মুহাম্মাদ (আরবি উচ্চারণ শুনতে ক্লিক করুন محمد(সাহায্য·তথ্য) মোহাম্মদ এবং মুহম্মদও বলা হয়), (তুর্কী: মুহাম্মেদ) ইসলামের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব এবং ধর্মীয় বিশ্বাসমতে আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত সর্বশেষ নবী (আরবি ভাষায়: النبي আন-নাবিয়্যু) তথা "বার্তাবাহক" (আরবি: الرسول আর-রাসুল) যাঁর উপর আল কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। অমুসলিমদের মতে তিনি ইসলামী জীবন ব্যবস্থার প্রবর্তক। অধিকাংশ ইতিহাসবেত্তা ও বিশেষজ্ঞদের মতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতা। তার এই বিশেষত্বের অন্যতম কারণ হচ্ছে আধ্যাত্মিক ও জাগতিক উভয় জগতেই চূড়ান্ত সফলতা অর্জন। তিনি ধর্মীয় জীবনে যেমন সফল তেমনই রাজনৈতিক জীবনে। সমগ্র আরব বিশ্বের জাগরণের পথিকৃৎ হিসেবে তিনি অগ্রগণ্য। বিবদমান আরব জনতাকে একীভূতকরণ তার জীবনের অন্যতম সফলতা। মুসলমানগণ তার নামের শেষে ইসলামের মৌলিক ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বাধ্যতামূলকভাবে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (তার উপর শান্তি ও নিরাপত্তা বর্ষিত হোক) বলে থাকেন।
৫ম হিজরীর শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ (ইংরেজি: Battle of the Trench, আরবি: غزوة الخندق, প্রতিবর্ণীকৃত: Ghazwah al-Khandaq) সংঘঠিত হয়। খন্দকের যুদ্ধে কোরাইশদের সম্মিলিত বাহিনীর আক্রমণের বিরুদ্ধে মদিনা নগরী রক্ষাকল্পে পারস্য থেকে আগত বর্ষীয়ান সাহাবী হযরত সালমান ফারসী রা. পরামর্শে তার দেশের প্রাচীন প্রথায় শত্রুবাহিনীর প্রবেশ রোধ করার উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা নগরীর চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। ইহা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সমর-কৌশলের এক অনন্য অভাবনীয় কৃতিত্ব। এই পরিকল্পনাই বারো হাজার সৈন্যে প্রবল শত্রুবাহিনীকে প্রায় এক মাসকাল পরিখার বাইরে নিস্ফল অবস্থানের পর প্রবল শীত ও তুষার ঝড়ের মধ্যে ভবিষ্যতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে আর কোনো যুদ্ধের অভিপ্রায় ত্যাগ করে চলে যেতে বাধ্য করেছিল। এরপর কুরাইশরা মক্কার অভিমুখে আর কখনো আক্রমণ করেনি। পরিখা খননের সময় বিরাট একটি পাথর কোনো সাহাবি ভাঙতে না পারলেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহা কুঠারের তিন আঘাতে টুকরো টুকরো করেন। সেই সময় উনি মুসালমানদের সিরিয়া, ইরান ও ইয়ামেন বিজয়ের সুসংবাদ দেন। ইহা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি মুজিযা। আরও জানুন...
শুরু করছি আল্লাহর নামে, যিনি পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু
“
তিনিই আপনার প্রতি এই কিতাব নাযিল করেছেন যার কিছু আয়াত ‘মুহ্কাম’, এগুলো কিতাবের মূল; আর অন্যগুলো ‘মুতাশাবিহ্’, সুতরাং যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে শুধু তারাই ফেৎনা এবং ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে মুতাশাবিহাতের অনুসরণ করে। অথচ আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর তারা বলে, ‘আমরা এগুলোতে ঈমান রাখি, সবই আমাদের রবের কাছ থেকে এসেছে’; এবং জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা ছাড়া আর কেউ উপদেশ গ্রহণ করে না।
নোট: মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে মানবজাতিকে দিক নির্দেশনা প্রদানের জন্য আল্লাহ নবীদেরকে পাঠিয়েছেন। কুরআনে বেশি উল্লিখিত ইসলামের পয়গম্বরদের নাম উপরে দেওয়া হল।