গাধা
| গাধা | |
|---|---|
পোষ মানা | |
| বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
| জগৎ: | প্রাণী জগৎ |
| পর্ব: | কর্ডাটা |
| শ্রেণী: | স্তন্যপায়ী |
| বর্গ: | পেরিসোডাক্টাইলা |
| পরিবার: | ইকুইডে |
| গণ: | ইকুস |
| উপগণ: | আছিনাস |
| প্রজাতি: | ই. আফ্রিকানাস |
| উপপ্রজাতি: | ই. এ. এসিনাস |
| ত্রিপদী নাম | |
| ইক্যুয়াস আফ্রিকানাস এসিনাস Linnaeus, 1758 | |

গাধা বা গর্দভ বৈজ্ঞানিক নাম বা ত্রিপদী নাম ই. আফ্রিকানাস এসিনাস (Equus africanus asinus)[১][২] Equidae বা ঘোড়া পরিবারের একটি অযুগ্ম-খুর-যুক্ত চতুষ্পদ প্রাণী যেটি কালক্রমে গৃহপালিত পশুতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বে ৪ কোটিরও বেশি গাধা রয়েছে, বেশিরভাগই অনুন্নত দেশগুলিতে, যেখানে এগুলি মূলত ড্রাফ্ট বা প্যাক প্রাণী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যদিও কর্মজীবী গাধা প্রায়শই জীবিকা নির্বাহকারী বা তার নিচে বসবাসকারী ব্যক্তিদের সাথে যুক্ত থাকে, উন্নত দেশগুলিতে প্রজনন, পোষা প্রাণী হিসাবে এবং গরু সুরক্ষার জন্য অল্প সংখ্যক গাধা বা গাধা রাখা হয়।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]বিগত কয়েক শতাব্দীতে গাধা মানুষের জীবনের একটি অংশ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে পণ্য পরিবহণে মানুষকে সাহায্য করে এসেছে, এমনকি তারা যুদ্ধেও ভূমিকা রেখেছে। আজও গাধা পরিবহণ, নির্মাণ ও কৃষিসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। তা ছাড়া চিড়িয়াখানাতেও দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে গাধা। প্রতিবছর ৮ মে বিশ্ব গাধা দিবস পালন করা হয় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে। প্রাণীটি সম্পর্কে তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে তাদের রক্ষার জন্য কাজ করতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হয় এদিন।পশুপালকদের কাছে গাধা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী। একজন দক্ষ পশুপালক পশুদের নেতা হিসেবে শক্তিশালী গাধাকে বেছে নেন। কারণ, খামারে পালন করা পশুরা অন্য হিংস্র পশু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু গাধা নেকড়ে বাঘ বা অন্য শিকারীর হাত থেকে সবাইকে রক্ষা করতে পারে সংকেত জানিয়ে। বিশ্ব সভ্যতার ঐতিহ্য গড়তেও গাধাদের ভূমিকা কম নয়। কারণ, ভারি সব উপকরণ বহন করতে ব্যবহার করা হয়েছে গাধাকে। মিশরীয় ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর অধিকাংশ ধাতু বহন করা হয়েছিল গাধার মাধ্যমে। শুধু তাই নয়, গ্রিসে সংকীর্ণ পথের ওপর কাজ করার জন্যও গাধা ব্যবহার করা হয়েছিল। রোমান আর্মিরা গাধাকে কৃষিপালিত ও পণ্য বহনকারী প্রাণী হিসেবে ব্যবহার করতো। ভারতের মরু অঞ্চল রাজস্থান ও জয়পুরে অন্যতম বাহন গাধা। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় মাল নিয়ে এরা সহজে চলাফেরা করতে পারে। বিশ্বের বহু অঞ্চলে জল, জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ, জমি চাষ এবং পরিবহনে সাহায্য করে গাধা। গাধা গরু, ভেড়া এবং ছাগলকে পাহারা দেয়। বন্য কুকুর থেকে রক্ষা করতে গাধা তাদের সতর্ক করে দিতে পারে। গাধা প্রতিদিন ১০ থেকে ২৫ লিটার জল পান করে। এরা নোংরা জল পান করে না। গাধারা মাঠ থেকে খুব ভাল তাজা সবুজ ঘাস খেতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে।[৩]
গাধার দুধের উপকারিতা
[সম্পাদনা]গাধা/জেনি দুধ হল স্ত্রী গাধার (Equus asinus) দ্বারা উৎপাদিত দুধ। ছোট থলির কারণে এর পরিমাণ খুবই কম, তাই বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা কঠিন। প্রাচীনকাল থেকেই এটি শিশু পুষ্টির পাশাপাশি প্রসাধনী উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে গাধার দুধ শিশুদের খাওয়ানো এবং দুর্বল ও অসুস্থ শিশুদের নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হত কারণ এটি মানুষের বুকের দুধের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। মানুষের বুকের দুধের সাথে ব্যতিক্রমীভাবে উচ্চ সান্নিধ্যের কারণে গ্রীস, ইতালি, বেলজিয়াম, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড এবং ইউরোপীয় বিশ্বের কিছু অংশে দুধের জন্য গাধা পোষা হয়। ছাগল, ভেড়া, গরু এবং উটের দুধের তুলনায় ল্যাকটোজ, প্রোটিন এবং ছাইয়ের জন্য গাধার দুধের গঠন মানুষের বুকের দুধের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে গাধার দুধে বেশ কিছু সক্রিয় উপাদান রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। কার্যকরী উপাদানগুলির মধ্যে গাধার দুধে লাইসোজাইম এবং ল্যাকটোফেরিনের মতো সক্রিয় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল পদার্থ থাকে। এই অণুগুলি ছাগল, ভেড়া এবং গরুর দুধেও উপস্থিত থাকে তবে কম পরিমাণে। গাধার দুধে গরু, ছাগল এবং ভেড়ার দুধের তুলনায় কম ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল থাকে। তাই এই দুধ হৃদরোগ বা হৃদরোগীদের জন্য সবচেয়ে ভালো।[৪]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "ডন ই উইলসন এবং ডিআন এম রীডার,২০০৫ সংস্করণ-ম্যামাল স্পিসেশ অব দ্য ওয়ার্লড"। ৮ মে ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০০৯।
- ↑ "ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন জুলজিক্যাল নোমেনক্লিচার"। ২২ এপ্রিল ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০০৯।
- ↑ "banglanews"। সংগ্রহের তারিখ ৭ মে ২০২৫।
- ↑ "foods"। সংগ্রহের তারিখ ৮ মে ২০২৫।