সাহাবাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ইসলাম ধর্ম ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব দেয়। তার অনুসারীদের মাঝে মুমিনদের পরষ্পর বিবাদ-বিসংবাদ দূর করে তাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা করার নজির হিসেবে সাহাবাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ বা সেতু বন্ধন তৈরি হয়।[১]

ইসলামের নবী মুহাম্মাদ হিজরতের পর মদীনার আনসার ও মক্কার মুহাজিরদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। ৭৪০ জন সাহাবিকে এ বন্ধনে আবদ্ধ করেন। [২]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

গঠন[সম্পাদনা]

মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করে আসা মুসলমানদের মুহাজীরদের এবং মদীনায় তাদেরকে সাহায্যকারীদেরকে আনসার বলা হয়। মদীনায় মুহাজিরগণ নানাবিধ সমস্যা যেমন অর্থনৈতিক, সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিলো। মুহাজিরগণ পরিবার-পরিজন এবং অধিকাংশ সম্পদ মক্কায় ফেলে চলে আসার ফলে মদীনায় অসহায় ও একাকিত্ব বোধ করতে থাকে। কৃষি ও হস্তশিল্পের ওপর নির্ভরশীল ছিল মদীনার অর্থনীতি। অপরদিকে মক্কা বাসী ব্যবসা-বাণিজ্যে দক্ষ ছিলেন। কৃষি ও হস্তশিল্পে তেমন পারদর্শী না হওয়ায় তারা সুবিধা করতে পারছিলো না।

মদিনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনাস ইবন মালিক এর গৃহে আনসার ও মুহাজিরদের মাঝে এই ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। আনাসের ঘরে ৪৫ জন আনসার এবং ৪৫ জন মুহাজির মোট নব্বই জন সাহাবী একত্রিত হয়। নবী মুহাম্মাদ স. একজন আনসার এবং একজন মুহাজিরের মধ্যে ভাই পাতিয়ে দেন। তাদের সম্পর্ক বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত খুবই গাঢ় ছিলো। রক্তের সম্পর্কের বাইরে হলেও এই জুটির একজন মারা গেলে তার সম্পত্তিতে অপরজন অংশ পেত। সুরা আনফালের ৭৫ নম্বর আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পরে সম্পদের বণ্টন শুধুমাত্র রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। নবী মুহাম্মাদ নিজের অতি উচ্চ মর্যাদা ও যোগ্যতার আলোকে মু'মিন ভাই হিসেবে আনসার বা মুহাজিরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ না হয়ে আলী ইবনে আবু তালিবের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এ কার্যক্রমের সূচনা করেন।[৩] তিনি আলীকে পার্থিব জীবন ও ইসলামের বিশ্বাসে আখিরাতের জন্যে নিজের ভাই বলে ঘোষণা করেন।[৪]

প্রক্রিয়া ও পরিসংখ্যান[সম্পাদনা]

মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করে চলে আসা মুসলমানদের মুহাজির এবং মদীনায় তাঁদের সহায়তাকারী মুসলমানদের আনসার হিসেবে স্বীকৃত। ৭৪০ জন সাহাবিকে (আনসার+মুহাজির) জোড়ায় জোড়ায় ভ্রাতৃত্ব-বন্ধনে চুক্তিবদ্ধ করা হয়। স্বভাবগত মিল, বৈশিষ্ট্য এবং তাদের পারস্পরিক বন্ধুত্বের মাত্রা বা ঘনিষ্ঠতার প্রবণতা অনুযায়ী এসব জোড়াগুলো বেছে নেয়া হয়েছিল।

ভ্রাতৃত্ব-বন্ধনে আবদ্ধ করার এই চুক্তিতে একই জোড়ার দুই সাহাবি কোনো যুদ্ধে শহীদ হলে (ওসিয়ত বা নির্দেশনা অনুযায়ী) তাঁদেরকে একই কবরে দাফন করা হতো।

ফলাফল[সম্পাদনা]

ভ্রাতৃত্ব বন্ধন চুক্তি আরবদের মধ্যে যুগ যুগ ধরে চলে আসা গোত্রীয় দ্বন্দ্ব ছিল দূর করা ও বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সফলতা পেয়েছে।

জোড়া তালিকা[সম্পাদনা]

মিকদাদ বিন আসওয়াদের সঙ্গে হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসিরের। এছাড়া জোড়ায় জোড়ায় ভ্রাতৃত্ব-বন্ধনে চুক্তিবদ্ধ হওয়া সাহাবিদের মধ্যে হযরত আবু বকর ও উমর ইবনে খাত্তাবের জোড়া, তালহাযুবাইরের জোড়া এবং উসমান ইবনে আফফানআবদুর রহমান ইবনে আওফের জোড়া ছিল লক্ষ্যনীয়।[৫]

মক্কা[সম্পাদনা]

মদীনা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "ভ্রাতৃত্বের চর্চায় আলোকিত হোক আমাদের সমাজ -"মাসিক আল-কাউসার। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-২০ 
  2. "৭৪০ জন সাহাবি এবং বিশ্বনবী (সা.) ও আলী (আ.)'র ভ্রাতৃত্ব-বন্ধনের শপথ"পার্স টুডে। ৮ জুন ২০১৭। ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  3. "Ali ibn Abitalib"Encyclopedia Iranica। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-২৫ 
  4. "আনসার ও মুহাজির এবং বিশ্বনবী (সা.) ও আলী (আ.)'র ভ্রাতৃত্ব-বন্ধনের শপথ"পার্স টুডে। ১৮ জুন ২০১৬। ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  5. "আনসার ও মুহাজিরগণের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন রচনায় প্রিয় নবীজির অনুপম দৃষ্টান্ত"Welcome To Anjuman-E- Rahmania Ahmadia Sunnia Trust (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-১১-২৭। ২০১৯-১২-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-২০ 
  6. "A Restatement of the History of Islam and Muslims" on Al-Islam.org
  7. Hadrat 'Umar Farooq by Prof. Masudul Hasan Islamic Publications Lahore
  8. "A Restatement of the History of Islam and Muslims" on Al-Islam.org [১]