ইমাম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ইমাম (আরবি: إمام, বহুবচন: أئمة; ফার্সি: امام) ইসলাম ধর্মাবলম্বিদের ব্যবহৃত একটি শব্দ যদ্বারা সাধারণভাবে মুসলিম সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে বোঝানো হয়ে থাকে। সর্বাধিক প্রচলিত অর্থে ইমাম হলেন সেই ব্যক্তি যিনি মসজিদে বা বাইরে জামায়াতে নামাজ পরিচালনা করেন। উপরন্তু, ইসলামী বিষয়ে অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী ব্যক্তি বা উচ্চ পর্যায়ের আলেমকে ইমাম হিসাবে সম্বোধন করা হয়। বর্তমানে প্রচলন অনুযায়ী ইসলামের ৪র্থ খলিফা আলী (রা:) সহ তার বংশোদ্ভূত বারোজন ইমামকে শিয়া সম্প্রদায়ের মূল স্তম্ভ হিসাবে গণ্য করা হয়। অধিকন্তু ইসমাইলীয়া সম্প্রদায়ের আন্তর্জাতিক নেতাকে ইমাম হিসেবে অভিহিত করা হয়।

কুরআনের ব্যবহার[সম্পাদনা]

আরবী শব্দ হিসাবে ইমাম শব্দটি কুরআন শরীফে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছ। সুরা বাক্বারার ১২৪ নম্বর আয়াতের ব্যবহার অনুযায়ী ইমাম অর্থ নেতা; ইমাম অর্থ ক্বিতাব।

সুন্নি ইমাম[সম্পাদনা]

১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে মিশরের কায়রোতে একজন ইমাম নামাজ পরিচালনা করছেন

ইমাম সম্পর্কে শিয়াদের চেয়ে সুন্নিদের মতামত ভিন্ন। সুন্নিদের মতে নামাজ পরিচালনাকারী যে কেউই ইমাম হিসেবে সম্বোধিত হন, তিনি মসজিদের বাহিরে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির নামাজ পরিচালনা করলেই। ফলে প্রতিটি মসজিদেই সম্মানী ভাতা প্রদানের মাধ্যমে একজন ইমাম সংযুক্ত রাখা হয়; তবে কোনো কারণে তিনি অপারগ হলে নামাজ পরিচালনার জন্য আগত যে কাউকেই ইমাম হিসেবে নির্বাচন করা হয়। তবে সুন্নিদের ক্ষেত্রে নামাজ পরিচালনার জন্য শরিয়তের আলেম হতে হয়।

সুন্নি মুসলমানদের মতানুসারে ধর্মীয় বিষয়াদিতে অগাধ পান্ডিত্যের কারণে "ইমাম" হিসেবে সম্বোধিত ব্যক্তিগণ:

মাযহাব ফিকহ আকীদা কালাম হাদিস সূফী তরিকা তাফসীর
আবু হানিফা আবুল মনসুর আল মাতুরিদি ইমাম বুখারী আব্দুল কাদের জিলানী জালালুদ্দীন সুয়ুতী
ইমাম মালিক আবুল হাসান আল-আশআরি আবু দাউদ খাজা মঈনুদ্দিন ইবনে কাসীর
ইমাম শাফি আত-তাহাবী ইমাম মুসলিম বাহা-উদ-দিন নকশবন্দ বুখারী আত তাবারি
আহমদ ইবনে হাম্বল ওয়াসিল ইবনে আতা মুহাম্মাদ ইবনে ঈসা আত-তিরমিজি মাওলানা রুমী
দাউদ আল জাহিরি আত-তাহাবী ইবনে মাজাহ আহমেদ সিরহিন্দি
সুফইয়ান সাওরী আহমদ রেযা খান বেরলভী ইমাম নাসাই সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারি

শিয়া ইমাম[সম্পাদনা]

ইমামত (إمامة) হল শিয়া ইসলামের একটি তত্ত্ব যার মতে নবী মুহাম্মদের বংশোদ্ভূত নির্দিষ্ট ব্যক্তিরাই তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত ও মুসলিম উম্মাহর নেতা ও পথপ্রদর্শক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।[১] শিয়ারা বিশ্বাস করে যে ইমামগণ হলেন মুহাম্মদের প্রকৃত খলিফা বা ন্যায্য উত্তরাধিকারী। তারা আরও বিশ্বাস করে যে ইমামগণ ঐশী জ্ঞান, অভ্রান্ততা, নিষ্পাপতা, কর্তৃত্ব প্রভৃতির অধিকারী এবং পাশাপাশি মুহাম্মদের পরিবার তথা আহল আল-বাইতের সদস্য।[২] ইমামদের কুরআনের তাফসীর ও ব্যাখ্যার পাশাপাশি[৩] দিকনির্দেশনা দেওয়ার ক্ষমতা আছে।

মুহম্মদ ও বারো ইমামের নামের ক্যালিগ্রাফিক উপস্থাপনা

বারো ইমাম[সম্পাদনা]

দ্বাদশী শিয়া মতানুসারে বারোজন ইমাম রয়েছেন। তাঁরা হলেন:

ক্রম ইসলামি চারুলিপি নাম
কুনিয়া
আরবি উপাধি
তুর্কি উপাধি[৪]
জীবনকাল (খ্রিস্টাব্দ)
জীবনকাল (হিজরি)[৫]
জন্মস্থান
ইমামত গ্রহণকালে বয়স মৃত্যুকালে বয়স ইমামতকাল গুরুত্ব মৃত্যুর কারণ ও মৃত্যুস্থল
সমাধি[৬]
ʿআলী ʾইবনে ʾআবী ত়ালিব
ٱلْإِمَام عَلِيّ ٱبْن أَبِي طَالِب عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবুল হ়াসান
أَبُو ٱلْحَسَن
  • আমীরুল মুʾমিনীন
    (أَمِير ٱلْمُؤْمِنِين)
    (বিশ্বাসীদের নেতা)[৭]
  • আল-মুর্তজ়া
    (ٱلْمُرْتَضَىٰ)
    (প্রিয়জন)
  • আল-ওয়াস়ী
    (ٱلْوَصِيّ)
    (স্থলাভিষিক্ত)
  • আল-ওয়ালী[৮]
    (ٱلْوَلِيّ)
    (ওয়ালি)
  • আবু তুরাব
    (أَبُو تُرَاب)
    (মাটির পিতা)
  • আসাদুল্লাহ
    (أَسَد الله)
    (আল্লাহর সিংহ)
  • ওয়ালীউল্লাহ[৯]
    (وَلِيّ الله)
    (আল্লাহর ওয়ালি)
  • মওলা
    (مَوْلَاه)
    (সর্দার, কর্তা, বন্ধু)
  • হয়দর
    (حَيّدَر)
    (সিংহ)
  • উলিল আমর[১০]
    (أُولِي الْأَمْرِ‌)
    (কর্তৃত্বের অধিকারী)
  • মুশকিল কুশা
    (مُشْکِل کُشَاہ)
    (কষ্ট দূরকারী)
  • নফসে নবী[১১]
    (نَفْسِ نَبِيّ)
    (নবীর নফস)
  • বাব আল-মদীনাতুল ʿইলম
    (بَابِ ٱلْمَدِيْنَةُ ٱلْعِلْمِ)
    (জ্ঞানের শহরের দরজা)
  • আন-নাসি মাইয়াশরিয়ুন নফসাহুব তিগাআ মরদাতিল্লাহ[১২]
    (النَّاسِ مَنۡ يَّشۡرِىۡ نَفۡسَهُ ابۡتِغَآءَ مَرۡضَاتِ اللّٰهِ​)
    (যে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিজেকে বিকিয়ে দেয়)

  • বিরিঞ্জি আলী
    (Birinci Ali)
    (প্রথম আলী)[১৩]
৬০০–৬৬১[৭]
২৩ হিজরতপূর্ব–৪০[১৪]
মক্কা, হেজাজ[৭]
৩৩ বছর ৬১ বছর ২৮ বছর মুহম্মদের ﷺ চাচাতো ভাই ও জামাতা। শিয়া বিশ্বাসমতে তিনি ইসলামের পবিত্রতম স্থান কাবার অভ্যন্তরে জন্মগ্রহণকারী একমাত্র ব্যক্তি এবং প্রথম ইসলামগ্রহণকারী পুরুষ। শিয়া মুসলমানেরা তাঁকে মুহম্মদের ﷺ একমাত্র ন্যায্য স্থলাভিষিক্ত এবং প্রথম ইমাম হিসেবে বিবেচনা করে। সুন্নি মুসলমানেরা তাঁকে চতুর্থ রাশিদুন খলিফা হিসেবে গণ্য করে। সুফিবাদের প্রায় সকল তরিকায় তাঁকে উচ্চ মর্যাদা দেওয়া হয়; তরিকাসমূহের সদস্যগণ মুহম্মদ ﷺ পর্যন্ত তাদের সিলসিলা আলীর মাধ্যমে জারি রাখেন।[৭] রমজান মাসে মসজিদ আল-কুফায় নামাজে সেজদারত অবস্থায় আব্দুর রহমান ইবনে মুলজিম নামক এক খারিজি গুপ্তঘাতকের বিষাক্ত তরবারির আঘাতে আহত হয়ে বিষক্রিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন।[৭][১৫]
শিয়া বিশ্বাসমতে তাঁকে ইরাকের নাজাফ শহরের ইমাম আলী মসজিদে দাফন করা হয়।
হ়াসান ʾইবনে ʿআলী
ٱلْإِمَام ٱلْحَسَن ٱبْن عَلِيّ عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবু মুহ়ম্মদ
أَبُو مُحَمَّد
  • আল-মুজতবা
    (ٱلْمُجْتَبَىٰ)
    (মনোনীত)
  • আস-সৈয়দ
    (ٱلْسَّيِّد)
    (সর্দার)
  • সৈয়দু শবাবি আহলিল জান্নাহ[১৬][১৭]
    (سَيِّدُ شَبَابِ أهْلِ ٱلْجَنَّةِ)
    (জান্নাতি যুবকদের সর্দার)
  • সিবত় আন-নবী
    (سِبْط ٱلنَّبِيّ)
    (নবীর বংশ)

  • ইকিঞ্জি আলী
    (İkinci Ali)
    (দ্বিতীয় আলী)[১৩]
৬২৫–৬৭০[১৮]
৩–৫০[১৯]
মদীনা, হেজাজ[১৮]
৩৯ বছর ৪৭ বছর ৮ বছর তিনি ছিলেন মুহম্মদের ﷺ কন্যা ফাতিমার গর্ভজাত দৌহিত্রদের মধ্যে সবার বড়। হাসান কুফায় তাঁর পিতা আলীর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে নিযুক্ত হন। সাত মাস খলিফা হিসেবে দায়িত্বপালনের পর মুয়াবিয়া ইবনে আবী সুফিয়ানের সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তির ভিত্তিতে তিনি পদত্যাগ করেন।[১৮] মুয়াবিয়ার প্ররোচনায় স্বীয় স্ত্রীর মাধ্যমে বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হয়।[২০]
তাঁকে মদীনার জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়।
হ়োসাইন ʾইবনে ʿআলী
ٱلْإِمَام ٱلْحُسَيْن ٱبْن عَلِيّ عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবু ʿআব্দুল্লাহ
أَبُو عَبْد ٱللَّٰه
  • আশ-শহীদ[১৬]
    (ٱلشّهِيْد)
    (শহীদ)
  • সৈয়দ আশ-শুহাদাʾ[২১][২২][২৩]
    (سَيِّد ٱلشُّهَدَاء)
    (শহীদদের সর্দার)
  • সৈয়দু শবাবি আহলিল জান্নাহ[১৬][২৪]
    (سَيِّدُ شَبَابِ أَهْلِ ٱلْجَنَّةِ)
    (জান্নাতি যুবকদের সর্দার)
  • আর-রশীদ[১৬]
    (ٱلرَّشِيْد)
    (ন্যায়নিষ্ঠ)
  • আত-তাবিঈ লি মর্দাতিল্লাহ[১৬]
    (ٱلتَّابِعّ لِي مَرۡضَاتِ اللّٰهِ)
    (দৈব ইচ্ছার অনুসারী)
  • আল-মুবারক[১৬]
    (ٱلْمُبَارَك)
    (মহিমান্বিত)
  • আত়-ত়ৈয়িব[১৬]
    (ٱلطَّيِّب)
    (বিশুদ্ধ)
  • আল-মজ়লুম
    (ٱلْمَظْلُوم)
    (নিপীড়িত)
  • আল-ওয়াফী[১৬]
    (ٱلْوَافِيّ)
    (বিশ্বস্ত)
  • সিবত় আন-নবী
    (سِبْط ٱلنَّبِيّ)
    (নবীর বংশ)

  • উচুঞ্জু আলী
    (Üçüncü Ali)
    (তৃতীয় আলী)[১৩]
৬২৬–৬৮০[২৫]
৪–৬১[২৬]
মদীনা, হেজাজ[২৫]
৪৬ বছর ৫৭ বছর ১১ বছর তিনি ছিলেন মুহম্মদের ﷺ দৌহিত্র, আলীর পুত্র এবং হাসানের ভাই। হোসাইন উমাইয়া শাসক ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার দুঃশাসনের বিরোধিতা করেন। ফলস্রুতিতে তিনি, তাঁর পরিবার ও সহচারীরা কারবালার যুদ্ধে ইয়াজিদের সৈন্যবাহিনী কর্তৃক নির্মমভাবে শহীদ হন। এই ঘটনার পর থেকে হোসাইনের শাহাদতের স্মৃতিচারণ শিয়া আত্মপরিচয়ের একটি কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে ওঠে।[২৫] কারবালার যুদ্ধে শিরশ্ছেদ করে হত্যা করা হয়।
তাঁকে ইরাকের কারবালার ইমাম হোসেনের মাজারে দাফন করা হয়।[২৫]
ʿআলী ʾইবনে হ়োসাইন
ٱلْإِمَام عَلِيّ ٱبْن ٱلْحُسَيْن ٱلسَّجَّاد عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবু মুহ়ম্মদ
أَبُو مُحَمَّد
  • আস-সাজ্জাদ
    (ٱلسَّجَّاد)
    (অবিচল সেজদাকারী)
  • জ়য়নুল ʿআবেদীন
    (زَيْن ٱلْعَابِدِين)
    (উপাসকদের অলঙ্কার)[২৭]

  • দর্দুঞ্জু আলী
    (Dördüncü Ali)
    (চতুর্থ আলী)[১৩]
৬৫৮/৬৫৯[২৭] – ৭১২[২৮]
৩৮[২৭]–৯৫[২৮]
মদীনা, হেজাজ[২৭]
২৩ বছর ৫৭ বছর ৩৪ বছর সহিফা আস-সাজ্জাদিয়ার রচয়িতা, যা আহল আল-বাইতের স্তোত্র হিসেবে পরিচিত।[২৮] দুর্বলতাজনিত অসুস্থতার কারণে কারবালার যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। উমাইয়া খলিফা প্রথম আল-ওয়াহিদের নির্দেশে তাঁকে বিষপ্রয়োগ করে হত্যা করা হয়।[২৮]
মদীনার জান্নাতুল বাকিতে তাঁকে দাফন করা হয়।
মুহ়ম্মদ ʾইবনে ʿআলী
ٱلْإِمَام مُحَمَّد ٱبْن عَلِيّ ٱلْبَاقِر عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবু জাʿফর
أَبُو جَعْفَر
  • আল-বাক়ির
    (ٱلبَاقِر)
    (উন্মোচনকারী)[২৯]

  • বেশিঞ্জি আলী
    (Beşinci Ali)
    (পঞ্চম আলী)[১৩]
৬৭৭–৭৩২[২৯]
৫৭–১১৪[২৯]
মদীনা, হেজাজ[২৯]
৩৮ বছর ৫৭ বছর ১৯ বছর সুন্নিশিয়া উভয় সূত্রমতে তিনি অন্যতম প্রাচীন ও বিশিষ্ট ফিকহশাস্ত্রবিদ ছিলেন যিনি তাঁর জীবদ্দশায় অসংখ্য শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন।[২৯][৩০] উমাইয়া খলিফা হিশাম ইবনে আবদুল মালিকের নির্দেশে ইব্রাহীম ইবনে ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল্লাহ কর্তৃক বিষপ্রয়োগে তাঁকে হত্যা করা হয়।[২৮]
মদীনার জান্নাতুল বাকিতে তাঁকে দাফন করা হয়।
জাʿফর ʾইবনে মুহ়ম্মদ
ٱلْإِمَام جَعْفَر ٱبْن مُحَمَّد ٱلصَّادِق عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবু ʿআব্দুল্লাহ[৩১]
أَبُو عَبْد ٱللَّٰه
  • আস়-স়াদিক়[৩২]
    (ٱلصَّادِق)
    (সজ্জন)

  • আলতিঞ্জি আলী
    (Altıncı Ali)
    (ষষ্ঠ আলী)[১৩]
৭০২–৭৬৫[৩২]
৮৩–১৪৮[৩২]
মদীনা, হেজাজ[৩২]
৩১ বছর ৬৫ বছর ৩৪ বছর শিয়া বিশ্বাসমতে তিনি জাফরি মাজহাব এবং দ্বাদশী ধর্মতত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে অসংখ্য পণ্ডিতদের শিক্ষাদান করেছিলেন। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে ফিকহশাস্ত্রে আবু হানিফামালিক ইবনে আনাস, কালামশাস্ত্রে ওয়াসিল ইবনে আতা ও হিশাম ইবনে হাকাম, এবং বিজ্ঞানআলকেমিতে জাবির ইবনে হাইয়ান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।[৩২] আব্বাসীয় খলিফা আল-মনসুরের নির্দেশে মদীনায় বিষপ্রয়োগ করে তাঁকে হত্যা করা হয়।[৩২]
তাঁকে মদীনার জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়।
মুসা ʾইবনে জাʿফর
ٱلْإِمَام مُوسَىٰ ٱبْن جَعْفَر ٱلْكَاظِم عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবুল হ়াসান
أَبُو ٱلْحَسَن ٱلْأَوَّل[৩৩]
  • আল-কাজ়িম[৩৪]
    (ٱلْكَاظِم)
    (কারারুদ্ধ)

  • ইয়েদিঞ্জি আলী
    (Yedinci Ali)
    (সপ্তম আলী)[১৩]
৭৪৪–৭৯৯[৩৪]
১২৮–১৮৩[৩৪]
আল-আবওয়াʿ, হেজাজ[৩৪]
২০ বছর ৫৫ বছর ৩৫ বছর তিনি জাফর আস-সাদিকের মৃত্যুর পর ইসমাইলি ও ওয়াকিফি বিচ্ছেদকালীন শিয়া সম্প্রদায়ের নেতা ছিলেন।[৩৫] তিনি মধ্যপ্রাচ্যবৃহত্তর খোরাসানের শিয়া মতাবলম্বীদের কাছ থেকে খুমুস সংগ্রহের উদ্দেশ্যে প্রতিনিধিদের একটি অন্তর্জাল গড়ে তোলেন। তিনি মাহদবী তরিকায় উচ্চ সম্মানে ভূষিত যারা তাঁর মাধ্যমে মুহম্মদ ﷺ অবধি সিলসিলা চিহ্নিত করে থাকে।[৩৬] আব্বাসীয় খলিফা হারুনুর রশিদের নির্দেশে বাগদাদে তাঁকে কারাবন্দী করা হয় এবং বিষপ্রয়োগ করে হত্যা করা হয়।
ইরাকের বাগদাদ শহরের কাজিমিয়া শহরতলীর আল-কাজিমিয়া মসজিদের তাঁকে দাফন করা হয়।[৩৪]

ʿআলী ʾইবনে মুসা
ٱلْإِمَام عَلِيّ ٱبْن مُوسَىٰ ٱلرِّضَا عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
দ্বিতীয় আবুল হ়াসান
أَبُو ٱلْحَسَن ٱلثَّانِي[৩৩]
  • আর-রিদ়া[৩৭]
    (ٱلرِّضَا)
    (মনোরম)

  • সেকিজ়িঞ্জি আলী
    (Sekizinci Ali)
    (অষ্টম আলী)[১৩]
৭৬৫–৮১৭[৩৭]
১৪৮–২০৩[৩৭]
মদীনা, হেজাজ[৩৭]
৩৫ বছর ৫৫ বছর ২০ বছর আব্বাসীয় খলিফা আল-মামুন তাঁকে যুবরাজ ঘোষণা করেন। তিনি মুসলিম ও অমুসলিম ধর্মীয় পণ্ডিতদের সাথে তাঁর আলোচনার জন্য বিখ্যাত।[৩৭] শিয়া সূত্রমতে আল-মামুনের নির্দেশে পারস্যের মাশহাদে তাঁকে বিষপ্রয়োগ করে হত্যা করা হয়৷
তাঁকে ইরানের মাশহাদের ইমাম রেজার মাজারে দাফন করা হয়।[৩৭]
মুহ়ম্মদ ʾইবনে ʿআলী
ٱلْإِمَام مُحَمَّد ٱبْن عَلِيّ ٱلْجَوَّاد عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবু জাʿফর
أَبُو جَعْفَر
  • আল-জওয়াদ[৩৮]
    (ٱلْجَوَّاد)
    (উদার)
  • আত-তক়ী[৩৮]
    (ٱلتَّقِيّ)
    (খোদাভীরু)

  • দোকুজ়ুঞ্জু আলী
    (Dokuzuncu Ali)
    (নবম আলী)[১৩]
৮১০–৮৩৫[৩৮]
১৯৫–২২০[৩৮]
মদীনা, হেজাজ[৩৮]
৮ বছর ২৫ বছর ১৭ বছর আব্বাসীয় খলিফাদের নিপীড়নের মুখেও তাঁর উদারতা ও ধার্মিকতার জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। খলিফা আল-মুতাসিমের নির্দেশে আল-মামুনের কন্যা ও স্বীয় স্ত্রীর মাধ্যমে বিষপ্রয়োগ করে তাঁকে হত্যা করা হয়।
তাঁকে ইরাকের বাগদাদ শহরের কাজিমিয়া শহরতলীর আল কাজিমিয়া মসজিদে দাফন করা হয়।[৩৮]
১০ ʿআলী ʾইবনে মুহ়ম্মদ
ٱلْإِمَام عَلِيّ ٱبْن مُحَمَّد ٱلْهَادِي عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
তৃতীয় আবুল হ়াসান
أَبُو ٱلْحَسَن ٱلثَّالِث[৩৯]
  • আল-হাদী[৩৯]
    (ٱلْهَادِي)
    (পথপ্রদর্শক)
  • আন-নক়ী[৩৯]
    (ٱلنَّقِيّ)
    (পবিত্র)

  • ওনুঞ্জু আলী
    (Onuncu Ali)
    (দশম আলী)[১৩]
৮২৭–৮৬৮[৩৯]
২১২–২৫৪[৩৯]
মদীনার নিকটস্থ সুরাইয়া গ্রাম, হেজাজ[৩৯]
৮ বছর ৪২ বছর ৩৪ বছর তিনি শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রতিনিধিদের অন্তর্জালকে জোরদার করেন। তিনি তাঁদের নির্দেশনা প্রদান করেন এবং বিনিময়ে বিশ্বাসীদের কাছ থেকে খুমুস জাতীয় আর্থিক অনুদান ও ধর্মীয় প্রতিশ্রুতি লাভ করেন।[৩৯] খলিফা আল-মুতাজের নির্দেশে ইরাকের সামাররায় তাঁকে বিষপ্রয়োগ করে হত্যা করা হয়।[৪০]
তাঁকে ইরাকের সামাররা শহরের আল-আসকারী মসজিদে দাফন করা হয়।
১১ হ়াসান ʾইবনে ʿআলী
ٱلْإِمَام ٱلْحَسَن ٱبْن عَلِيّ ٱلْعَسْكَرِيّ عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবুল মাহদী
أَبُو ٱلْمَهْدِيّ
  • আল-ʿআসকারী[৪১]
    (ٱلْعَسْكَرِيّ)
    (সামরিক ঘাঁটির নাগরিক)

  • ওনবিরিঞ্জি আলী
    (Onbirinci Ali)
    (একাদশ আলী)[১৩]
৮৪৬–৮৭৪[৪১]
২৩২–২৬০[৪১]
মদীনা, হেজাজ[৪১]
২২ বছর ২৮ বছর ৬ বছর তাঁর পিতার মৃত্যুর পর তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময়ই খলিফা আল-মুতামিদের নজরদারিতে গৃহবন্দী অবস্থায় কাটে। এই সময় শিয়া মুসলমানেরা সংখ্যায় ও শক্তিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের ওপর নিপীড়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়।[৪২] ইরাকের সামাররায় খলিফা আল-মুতামিদের নির্দেশে বিষপ্রয়োগ করে তাঁকে হত্যা করা হয়।[৪৩]
তাঁকে ইরাকের সামাররা শহরের আল-আসকারী মসজিদে দাফন করা হয়।
১২ মুহ়ম্মদ ʾইবনে হ়াসান
مُحَمَّد ٱبْن ٱلْحَسَن
আবুল ক়াসিম
أَبُو ٱلْقَاسِم

  • ওনিকিঞ্জি আলী
    (Onikinci Ali)
    (দ্বাদশ আলী)[১৩]
৮৬৯–বর্তমান[৪৭]
২৫৫–বর্তমান[৪৭]
সামাররা, ইরাক[৪৭]
৫ বছর অজানা বর্তমান দ্বাদশী শিয়া বিশ্বাসমতে তিনি হলেন বর্তমান ইমাম এবং প্রতীক্ষিত মাহদী, একজন মসীহীয় ব্যক্তিত্ব যিনি নবী ঈসা ইবনে মরিয়মের সঙ্গে শেষ জমানায় আবির্ভূত হবেন। তিনি ইসলামের ন্যায়ভিত্তিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন এবং সমগ্র পৃথিবীতে ন্যায়বিচার ও বিশ্বশান্তি কায়েম করবেন।[৪৮] দ্বাদশী শিয়া তত্ত্বমতে তিনি ৮৭৪ সাল থেকে গয়বত বা সমাবরণে চলে গিয়েছেন এবং আল্লাহর নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত এ অবস্থাতেই থাকবেন।[৪৭]

চিত্র[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Amir-Moezzi, Mohammad Ali। "SHIʿITE DOCTRINE"। Encyclopædia Iranica। সংগ্রহের তারিখ ২৪ এপ্রিল ২০১৬ 
  2. Nasr 2006, পৃ. 38
  3. Sociology of religions: perspectives of Ali Shariati (2008) Mir Mohammed Ibrahim
  4. The Imam's Arabic titles are used by the majority of Twelver Shia who use Arabic as a liturgical language, including the Usooli, Akhbari, Shaykhi, and to a lesser extent Alawi. Turkish titles are generally used by Alevi, a fringe Twelver group, who make up around 10% of the world Shia population. The titles for each Imam literally translate as "First Ali", "Second Ali", and so forth. Encyclopedia of the Modern Middle East and North Africa। Gale Group। ২০০৪। আইএসবিএন 978-0-02-865769-1 
  5. The abbreviation CE refers to the Common Era solar calendar, while AH refers to the Islamic Hijri lunar calendar.
  6. Except Twelfth Imam
  7. Nasr, Seyyed Hossein"Ali"Encyclopædia Britannica Online। ২০০৭-১০-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-১২ 
  8. [কুরআন ৫:৫৫]
  9. [কুরআন ৫:৫৫]
  10. [কুরআন ৪:৫৯]
  11. [কুরআন ৩:৬১]
  12. [কুরআন ২:২০৭]
  13. Encyclopedia of the Modern Middle East and North Africa। Gale Group। ২০০৪। আইএসবিএন 978-0-02-865769-1 
  14. Tabatabae (1979), pp.190–192
  15. Tabatabae (1979), p.192
  16. al-Qarashi, Baqir Shareef (২০০৭)। The life of Imam Husain। Qum: Ansariyan Publications। পৃষ্ঠা 58। 
  17. Tirmidhi, Vol. II, p. 221 ; تاريخ الخلفاء، ص189 [History of the Caliphs]
  18. Madelung, Wilferd"ḤASAN B. ʿALI B. ABI ṬĀLEB"Encyclopaedia Iranica। ২০১৪-০১-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৭-০৬ 
  19. Tabatabae (1979), pp.194–195
  20. Tabatabae (1979), p.195
  21. A Brief History of The Fourteen Infallibles। Qum: Ansariyan Publications। ২০০৪। পৃষ্ঠা 95। 
  22. Kitab al-Irshad। পৃষ্ঠা 198। 
  23. Nakash, Yitzhak (১ জানুয়ারি ১৯৯৩)। "An Attempt To Trace the Origin of the Rituals of Āshurā¸"। Die Welt des Islams33 (2): 161–181। ডিওআই:10.1163/157006093X00063 
  24. Tirmidhi, Vol. II, p. 221 ; تاريخ الخلفاء، ص189 [History of the Caliphs]
  25. Madelung, Wilferd। "ḤOSAYN B. ʿALI"Encyclopaedia Iranica। ২০১১-০৪-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৩-২৩ 
  26. Tabatabae (1979), pp.196–199
  27. Madelung, Wilferd"ʿALĪ B. ḤOSAYN B. ʿALĪ B. ABĪ ṬĀLEB, ZAYN-AL-ʿĀBEDĪN"Encyclopaedia Iranica। ২০১৭-০৮-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-০৮ 
  28. Tabatabae (1979), p.202
  29. Madelung, Wilferd"BĀQER, ABŪ JAʿFAR MOḤAMMAD"Encyclopaedia Iranica। ২০১১-০৪-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-০৮ 
  30. Tabatabae (1979), p.203
  31. "JAʿFAR AL-ṢĀDEQ, ABU ʿABD-ALLĀH"Encyclopaedia Iranica। ২০১৮-১০-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৭-০৭ 
  32. Tabatabae (1979), p.203–204
  33. Madelung, Wilferd"ʿALĪ AL-REŻĀ"Encyclopaedia Iranica। ২০১২-০৯-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-০৯ 
  34. Tabatabae (1979), p.205
  35. Tabatabae (1979) p. 78
  36. Sachedina 1988, পৃ. 53–54
  37. Tabatabae (1979), pp.205–207
  38. Tabatabae (1979), p. 207
  39. Madelung, Wilferd"ʿALĪ AL-HĀDĪ"Encyclopaedia Iranica। ২০১৫-১১-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-০৮ 
  40. Tabatabae (1979), pp.208–209
  41. Halm, H। "ʿASKARĪ"Encyclopaedia Iranica। ২০১১-০৪-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-০৮ 
  42. Tabatabae (1979) pp. 209–210
  43. Tabatabae (1979), pp.209–210
  44. "THE CONCEPT OF MAHDI IN TWELVER SHIʿISM"Encyclopaedia Iranica। ২০১১-০৪-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৭-০৭ 
  45. "ḠAYBA"Encyclopaedia Iranica। ২০১৪-০৮-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৭-০৭ 
  46. "Muhammad al-Mahdi al-Hujjah"Encyclopædia Britannica Online। ২০০৭-১০-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-০৮ 
  47. Tabatabae (1979), pp.210–211
  48. Tabatabae (1979), pp. 211–214

বহি:সংযোগ[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:Professional titles