হাতি
| হাতি সময়গত পরিসীমা: Late Miocene–Holocene | |
|---|---|
| বন্দিপুর জাতীয় উদ্যানে একটি এশীয় হাতি (Elephas maximus)। | |
| স্টেগোটেট্রাবেলোডন | |
| বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
| জগৎ/রাজ্য: | অ্যানিম্যালিয়া (Animalia) |
| পর্ব: | কর্ডাটা (Chordata) |
| শ্রেণি: | ম্যামালিয়া (Mammalia) |
| বর্গ: | Proboscidea |
| মহাপরিবার: | Elephantoidea |
| পরিবার: | হাতি (Elephantidae) Gray, 1821 |
| গোষ্ঠীর ধরন | |
| Elephas লিনিয়াস, ১৭৫৮ | |
| গণসমূহ | |
| |
| জীবিত হাতির প্রজাতির বিস্তৃতি | |
| প্রতিশব্দ[৩] | |
| |
হাতি (Elephantidae) বা হস্তী (স্ত্রীলিঙ্গ: হস্তিনী) প্রবোসিডিয়া (Proboscidea) বর্গের অন্তর্গত তৃণভোজী স্তন্যপায়ী প্রাণীর একটি পরিবার, যা পৃথিবীর বৃহত্তম জীবিত স্থলচর প্রাণী। এটি তিনটি জীবিত প্রজাতি ও একাধিক বিলুপ্ত প্রজাতি নিয়ে গঠিত। হাতির তিনটি জীবিত প্রজাতি হচ্ছে আফ্রিকান অরণ্য হাতি (লক্সোডন্টা সাইক্লোটিস), আফ্রিকান গুল্ম হাতি (লক্সোডন্টা আফ্রিকানা) ও এশীয় হাতি (এলিফাস ম্যাক্সিমাস)।
হাতির স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের মধ্যে দীর্ঘ শুঁড়, গজদন্ত, বড় কর্ণপর্দা, স্তম্ভাকৃতি চারটি পা এবং ধূসর বর্ণের শক্ত অথচ সংবেদনশীল চামড়া উল্লেখযোগ্য। খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করা আর কোনো বস্তুকে আঁকড়ে ধরার জন্য হাতি শুঁড় ব্যবহার করে। প্রাপ্তবয়স্ক (এশীয় হলে শুধু পুরুষ) হাতির উপরের ইনসিসর দাঁত দুটি লম্বা হয়ে গজদন্ত তৈরি হয়। বস্তু স্থানান্তর, খনন ও অস্ত্র হিসাবে হাতি গজদন্ত ব্যবহার করে। হাতির বৃহৎ কর্ণপর্দা দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও যোগাযোগে যাহায্য করে। আফ্রিকান হাতির কান বৃহত্তর ও ললাট অবতল, আর এশীয় হাতির কান ক্ষুদ্রতর ও ললাট উত্তল বা সমতল।
সাহারা-নিম্ন আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে হাতি বিস্তৃত। এর স্বাভাবিক বাসস্থান সাভানা, অরণ্য, মরুভূমি ও জলাভূমি। হাতি তৃণভোজী ও দলবদ্ধ প্রাণী। তার পরিবেশে তার প্রভাবের জন্য হাতি কিস্টোন প্রজাতি বলে পরিচিত। হাতির সমাজ বিভাজন-সংযোজন প্রকৃতির, আর সেখানে একাধিক পরিবার গোষ্ঠী একত্রে এসে সমাজবদ্ধ হয়। হস্তিনী সাধারণত পরিবার গোষ্ঠীতে বসবাস করে, যা এক বা একাধিক সম্পর্কিত হস্তিনী ও তাদের সন্তানসমূহ নিয়ে গঠিত। সাধারণত কোনো হস্তিনী গোষ্ঠীর সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ হস্তিনী ঐ গোষ্ঠীর নেত্রী হয়।
বয়ঃসন্ধিতে পুরুষ হাতি তার পরিবার গোষ্ঠী ত্যাগ করে। তখন সে একাকী বা অন্য পুরুষ হাতিদের সঙ্গে বসবাস করে। সাধারণত সঙ্গীর খোঁজে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ হাতি পরিবার গোষ্ঠীদের সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়া করে। তখন সে মত্তহস্তীতে পরিণত হয়, আর তার টেস্টোস্টেরন ও আগ্রাসনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা অন্যান্য পুরুষ হাতিদের উপর আধিপত্য লাভ ও প্রজননমূলক সাফল্যে সাহায্য করে। পুরুষ হাতির পরিবারে শিশু হাতি মনোযোগের কেন্দ্র, আর সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত সে তার মাতার উপর নির্ভর করে। বন্য প্রান্তরে হাতি সর্বোচ্চ ৭০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। স্পর্শ, দর্শন, ঘ্রাণ ও শ্রবণের মাধ্যমে হাতিরা যোগাযোগ করে, আর বেশি দূরত্বের জন্য সে অবশ্রাব্য শব্দ ব্যবহার করে। হাতির বুদ্ধিমত্তা প্রাইমেট ও সিটাসিয়ার সঙ্গে তুলনীয়। তার আত্মসচেতনতা আছে এবং সে সম্ভবত তার সগোত্রের মৃত্যু ও মৃতদেহ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা অগভীর জলে সহজ করে নিশ্বাস নিতে সুবিধা হওয়ায় প্রোবোসিডিয়াদের জলচর পূর্বপুরুষদের নাক লম্বা হয়ে শুঁড়ে বিবর্তিত হয়েছিল।[৪] এদের নিকটতম স্তন্যপায়ী আত্মীয়রা হল ডুগং, মানাটি, সমুদ্র-গাভী (sea cow) ইত্যাদি যারা জলচর সিরেনিয়া বর্গের অন্তর্ভুক্ত। এদের শরীরবৃত্তীয় অনন্যতা হল যে জন্মের পরে এদের প্লুরার (ফুসফুসের আবরণ) শূন্যস্থান সংযোজক কলা দ্বারা ভরাট হয়ে যায় (সম্ভবতঃ লম্বা শূঁড়ের ডেড স্পেস সমেত হাওয়া টানবার জন্যে এত বেশি ঋণাত্মক বায়ুচাপ করতে হয় যে প্লুরা গহ্বর থাকলে রক্তবাহ ফেটে তার মধ্যে রক্তপাতের সম্ভাবনা থাকত।[৫]
আইইউসিএন লাল তালিকায় আফ্রিকান গুল্ম হাতি ও এশীয় হাতিকে "বিপন্ন প্রজাতি" এবং আফ্রিকান অরণ্য হাতিকে "চরমভাবে বিপন্ন" হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। গজদন্তের জন্য হাতিদের চোরাশিকার করা হয়, যা হাতির জনসংখ্যার অন্যতম বড় হুমকি। এছাড়া স্বাভাবিক বাসস্থান ধ্বংস ও স্থানীয়দের সঙ্গে দ্বন্দ্বও বুনো হাতির বিপন্নতার কারণ। এশিয়াতে কাজের পশু হিসাবে হাতি ব্যবহার করা হয়। আগেকার সময় যুদ্ধে হাতির ব্যবহার ছিল। বর্তমানে এদের চিড়িয়াখানায় বা সার্কাসে বিনোদনে এদের ব্যবহার করা হয়। মানব কৃষ্টিতে হাতির মর্যাদা অনন্য, আর বিভিন্ন ধর্ম, শিল্পকর্ম, লোকগাথা, জনপ্রিয় সংস্কৃতি ইত্যাদিতে হাতি উপস্থিত।
ব্যুৎপত্তি ও পরিভাষা
[সম্পাদনা]শুঁড়কে হাতের মতো ব্যবহার করতে পারার জন্য প্রাণীটি "হাতি", "হস্তী" বা "করী" নামে পরিচিত। এছাড়া এটি গজ ও কুঞ্জর নামেও পরিচিত। বড় গজদন্তবিশিষ্ট হাতিকে "দাঁতাল" বলে। গজদন্তহীন পুরুষ হাতিকে "মাকনা" বলে। এরা মাদী হাতিদের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে এবং দাঁতালদের অজ্ঞাতসারে বংশবিস্তার করতে পারে।
শ্রেণিবিন্যাস
[সম্পাদনা]হাতি পরিবার প্রবোসিডিয়া (Proboscidea) বর্গের একমাত্র অবশিষ্ট পরিবার। এদের নিকটতম স্তন্যপায়ী আত্মীয়রা হলো ডুগং, ম্যানাটি, সমুদ্র-গাভী (sea cow) ইত্যাদি, আর তারা জলচর সিরেনিয়া বর্গের অন্তর্ভুক্ত। প্রোবোসিডিয়া ও সিরেনিয়া উভয় বর্গ আফ্রোথেরিয়া (Afrotheria) মহাবর্গের অন্তর্গত।[৬] হাতি ও সিরেনিয়াকে আবার টেথিথেরিয়াতে (Tethytheria) শ্রেণিভুক্ত করা হয়।[৭]
কিছু লেখক হাতি পরিবারকে দুটি উপপরিবারে বিভক্ত করে: কেবল স্টেগোটেট্রাবেলোডন (Stegotetrabelodon) নিয়ে গঠিত "স্টেগোটেট্রাবেলোডনটিনি" (Stegotetrabelodontinae) এবং অন্যান্য হাতি গণদের নিয়ে গঠিত "এলিফ্যান্টিনি" (Elephantinae)।[৮]
হাতির জীবিত প্রজাতি তিনটি: আফ্রিকান অরণ্য হাতি (Loxodonta cyclotis), আফ্রিকান গুল্ম হাতি (Loxodonta africana) ও এশীয় হাতি (Elephas maximus)।[৯] আগে আফ্রিকান হাতিকে একক প্রজাতি (Loxodonta africana) বলে ধরা হতো,[১০] তবে পরের আণবিক গবেষণার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আফ্রিকান হাতিকে দুটি প্রজাতিতে বিভক্ত করা হয়েছে।[১১][১২][১৩]
হাতির বিলুপ্ত বংশধারার মধ্যে ম্যামথ (Mammuthus) ও প্যালিওলক্সোডন (Palaeoloxodon) উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে ম্যামথ আফ্রিকান হাতির তুলনায় এশীয় হাতির সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।[১৪] অন্যদিকে প্যালিওলক্সোডন আফ্রিকান হাতির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত বলে মনে করা হয়। শুধু তাই নয়, প্যালিওলক্সোডনের সঙ্গে আফ্রিকান অরণ্য হাতির সংকরায়ন ঘটেছে বলে মনে করা হয়।[১৫] বিলুপ্ত প্যালিওলক্সোডনের কিছু প্রজাতি জীবিত হাতিদের তুলনায় অতিশয় বৃহৎ। তাদের উচ্চতা ৪ মিটারের বেশি ও দেহের ভর ১০ টনের বেশি। প্যালিওলক্সোডনের প্রজাতিদের মধ্যে ন্যামাডিকাস প্রজাতি (P. namadicus) বৃহত্তম স্থলচর স্তন্যপায়ী।[১৬]
জীবিত প্রজাতি
[সম্পাদনা]| নাম | আকার | আকৃতি | বিস্তার | চিত্র |
|---|---|---|---|---|
| আফ্রিকান গুল্ম হাতি (Loxodonta africana) | পুরুষ: ৩০৪–৩৩৬ সেন্টিমিটার (১০ ফুট ০ ইঞ্চি – ১১ ফুট ০ ইঞ্চি) (উচ্চতা), ৫.২–৬.৯ metric ton (৫.৭–৭.৬ short ton) (ওজন); স্ত্রী: ২৪৭–২৭৩ সেন্টিমিটার (৮ ফুট ১ ইঞ্চি – ৮ ফুট ১১ ইঞ্চি) (উচ্চতা), ২.৬–৩.৫ metric ton (২.৯–৩.৯ short ton) (ওজন)।[১৬] | তুলনায় বড় ও ত্রিভুজাকার কান, অবতল ললাট, হীরকাকৃতির মাড়ি, কুঞ্চিত ত্বক, ঢালু উদর এবং শুঁড়ের অগ্রভাগে দুটি আঙুল আকৃতির প্রসারিত অংশ।[১৭] | সাহারা-নিম্ন আফ্রিকা; অরণ্য, সাভানা, মরুভূমি, জলাভূমি ও হ্রদের পার্শ্ববর্তী এলাকা।[১৮] | |
| আফ্রিকান অরণ্য হাতি (Loxodonta cyclotis) | ২০৯–২৩১ সেন্টিমিটার (৬ ফুট ১০ ইঞ্চি – ৭ ফুট ৭ ইঞ্চি) (উচ্চতা), ১.৭–২.৩ metric ton (১.৯–২.৫ short ton) (ওজন)।[১৬] | গুল্ম প্রজাতির মতোই, কিন্তু এর কান ছোট ও গোলাকার এবং গজদন্ত সরু ও সোজা।[১৭][১৮] | পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকা; বিষুবীয় অরণ্য।[১৮] | |
| এশীয় হাতি (Elephas maximus) | পুরুষ: ২৬১–২৮৯ সেন্টিমিটার (৮ ফুট ৭ ইঞ্চি – ৯ ফুট ৬ ইঞ্চি) (উচ্চতা), ৩.৫–৪.৬ metric ton (৩.৯–৫.১ short ton) (ওজন); স্ত্রী: ২২৮–২৫২ সেন্টিমিটার (৭ ফুট ৬ ইঞ্চি – ৮ ফুট ৩ ইঞ্চি) (উচ্চতা), ২.৩–৩.১ metric ton (২.৫–৩.৪ short ton) (ওজন)।[১৬] | তুলনায় ছোট কান, উত্তল বা সমতল ললাট, দুটি স্ফীতিসহ চাকতি আকৃতির কপাল, সরু মাড়ি, মসৃণ ত্বক, সমতল বা ঝুলন্ত উদর এবং শুঁড়ের অগ্রভাগে একটি প্রসারিত অংশ।[১৭] | দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া; ঘাস, নিচু কাষ্ঠল উদ্ভিদ ও গাছের সম্মিলিত বাসস্থান।[১৮][১৯] |
বিবর্তন
[সম্পাদনা]প্রায় ৬ কোটি বছর আগে প্যালিওসিনে আফ্রিকায় প্রবোসিডিয়া বর্গের প্রাচীনতম সদস্যদের আবির্ভাব ঘটে, যার মধ্যে ইরিথেরিয়াম (Eritherium) উল্লেখযোগ্য। আকারে তারা জীবিত হাতিদের তুলনায় অনেক ছোট, আর ইরিথেরিয়ামের দৈহিক ভর ৩–৮ কিলোগ্রাম (৬.৬–১৭.৬ পাউন্ড)।[২০] ইয়োসিনের শেষে কিছু প্রবোসিডিয়া, যেমন ব্যারিথেরিয়াম (Barytherium) আকারে যথেষ্ট বড় হয়ে উঠে, আর তাদের ওজন প্রায় ২ টন।[১৬] এছাড়া মিরিথেরিয়ামের (Moeritherium) মতো কিছু প্রবোসিডিয়াদের অর্ধ-জলচর বলে ধরা হয়।[২১]
প্রায় ১.৮-১.৯ কোটি বছর আগে মায়োসিনের প্রথমদিকে আফ্রো-আরব অতিমহাদেশের সাথে ইউরেশিয়ার সংঘর্ষ প্রবোসিডিয়াদের বিবর্তনের অন্যতম যুগসন্ধি। এর ফলে প্রবোসিডিয়া বর্গের প্রাণীরা তাদের জন্মভূমি আফ্রিকা থেকে ইউরেশিয়ায় বংশবিস্তার করে। প্রায় ১.৫-১.৬ কোটি বছর আগে বেরিং ভূ-সেতু দিয়ে তারা ইউরেশিয়া থেকে উত্তর আমেরিকায় বংশবিস্তার করে। মায়োসিনের সময়কার প্রবোসিডিয়াদের মধ্যে ডিনোথেরিইডি (Deinotheriidae) ও আরও উন্নত এলিফ্যান্টিমরফা (গজাকৃতির প্রাণী) উল্লেখযোগ্য। তখনকার এলিফ্যান্টিমরফার মধ্যে আবার ম্যাস্টোডন, গমফোথির, অ্যামবেলোডন্টিডি, কিরোলোফোডন্টিডি ও স্টেগোডন্টিডি উল্লেখযোগ্য।[২২]
প্রায় ৮০-১০০ লাখ বছর আগে মায়োসিনের শেষে আফ্রো-আরব অতিমহাদেশে গমফোথিরদের থেকে হাতি পরিবারের (Elephantidae) প্রথম সদস্যের আবির্ভাব ঘটে, যা সম্ববত টেট্রালোফোডন (Tetralophodon) গণের অন্তর্গত।[২৩][২৪] প্রায় ৫০-৬০ লাখ বছর আগে প্লাইওসিনের শুরুতে হাতি পরিবারের আধুনিক গণের সদস্যের আবির্ভাব ঘটে। প্রায় ৩২-৩৬ লাখ বছর আগে প্লাইওসিনের শেষে এলিফাস (Elephas) ও ম্যামথ (Mammuthus) গণের হাতি আফ্রিকা থেকে বহির্গমন করে।[২৫] প্রায় ১৫ লাখ বছর আগে বেরিং ভূ-সেতু দিয়ে ম্যামথ উত্তর আমেরিকায় বংশবিস্তার করে।[২৬] প্লাইস্টোসিনের শুরুতে প্রায় ৮ লাখ বছর আগে প্যালিওলক্সোডন (Palaeoloxodon) গণের হাতি আফ্রিকা থেকে ছড়িয়ে পড়ে আর ইউরেশিয়ায় ব্যাপকভাবে বংশবিস্তার করে।[২৭] প্লাইস্টোসিনের শেষে প্যালিওলক্সোডন বিলুপ্ত হয়, আর হলোসিনের শুরুতে বেরিং প্রণালির দ্বীপসমূহে অবশিষ্ট ম্যামথ টিঁকে থাকে। প্রায় ৪,০০০ বছর আগে র্যাঙ্গেল দ্বীপে শেষ ম্যামথ জীবিত ছিল।[২২][২৮]
আচরণ ও বাস্তুবিদ্যা
[সম্পাদনা]হাতি তৃণভোজী আর সে পাতা, প্রশাখা, ফল, বাকল, ঘাস ও মূল খায়।[১৮] হাতি সর্বোচ্চ ৩০০ কিলোগ্রাম (৬৬০ পাউন্ড) খাদ্য ও ৪০ লিটার (১১ ইউএস গ্যালন) পানি গ্রহণ করতে পারে। হাতির সাধারণত পানির উৎসের কাছাকাছি থাকার প্রবণতা থাকে।[১৮][২৯] হাতির নাস্তা, বিকাল ভোজন ও নৈশভোজের ব্যবস্থা থাকে। মধ্যাহ্নে হাতি গাছের তলায় বিশ্রাম নেয় আর সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে যায়। রাতে হাতি সুপ্ত অবস্থায় নিদ্রা নেয়।[২৯] হাতি দিনে গড় ৩-৪ ঘণ্টা ঘুমায়।[৩০] পুরুষ ও পরিবার-গোষ্ঠী উভয়ই দিনে সাধারণত ২০ কিলোমিটার (১২ মাইল)-এর বেশি গমন করে না, তবে নামিবিয়ার এটোশা অঞ্চলে ১৮০ কিলোমিটার (১১২ মাইল) পর্যন্ত দূরত্ব নথিভুক্ত রয়েছে।[৩১] আগস্ট মাসের শেষে উত্তর বতসোয়ানায় স্থানীয় জলরাশি শুকিয়ে গেলে হাতি চোবে নদীর উদ্দেশ্যে ৩২৫ কিলোমিটার (২০২ মাইল) গমন করে।[৩২]
ভৌগোলিক বিস্তার
[সম্পাদনা]হাতিরা তৃণভূমিতে বসবাস করে। হাতি প্রায় সবদেশে পাওয়া যায়। বেশি পাওয়া যায় আফ্রিকার দেশগুলোতে। তবে ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান, নেপালে ভারতীয় হাতি পাওয়া যায়। দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা, জিম্বাবুয়ে, কেনিয়া, তানজানিয়া, জাম্বিয়া, অ্যাঙ্গোলা, নামিবিয়া, রুয়ান্ডা, মোজাম্বিকে পাওয়া যায়।
টীকা
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ H. T. Mackaye, M. Brunet, and P. Tassy. 2005. Selenetherium kolleensis nov. gen. nov. sp.: un nouveau Proboscidea (Mammalia) dans le Pliocène tchadien. Geobios 38(6):765-777
- ↑ Kalb, J. E.; & Froehlich, D. J. (১৯৯৫)। "Interrelationships of Late Neogene Elephantoids: New evidence from the Middle Awash Valley, Afar, Ethiopia"। Geobios। ২৮ (6): ৭২৭–৭৩৬। বিবকোড:1995Geobi..28..727K। ডিওআই:10.1016/s0016-6995(95)80068-9।
- ↑ Maglio, Vincent J. (১৯৭৩)। "Origin and Evolution of the Elephantidae"। Transactions of the American Philosophical Society। ৬৩ (3): ১৬। ডিওআই:10.2307/1006229। জেস্টোর 1006229।
- ↑ "The American Physiological Society - Press Room - For Elephants, It's Not Just Their Ears And Trunk That Make Them Unique On Land"। web.archive.org। ১৮ জুন ২০০৬। ১৮ জুন ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০২৫।
{{ওয়েব উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: বট: মূল ইউআরএলের অবস্থা অজানা (লিঙ্ক) - ↑ John B. West Why Doesn't the Elephant Have a Pleural Space? News Physiol Sci 17: 47-50, 2002. http://physiologyonline.physiology.org/cgi/content/full/17/2/47 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৭ অক্টোবর ২০০৬ তারিখে
- ↑ Kellogg, M.; Burkett, S.; Dennis, T. R.; Stone, G.; Gray, B. A.; McGuire, P. M.; Zori, R. T.; Stanyon, R. (২০০৭)। "Chromosome painting in the manatee supports Afrotheria and Paenungulata"। Evolutionary Biology। ৭ (1): ৬। বিবকোড:2007BMCEE...7....6K। ডিওআই:10.1186/1471-2148-7-6। পিএমসি 1784077। পিএমআইডি 17244368।
- ↑ Ozawa, T.; Hayashi, S.; Mikhelson, V. M. (১৯৯৭)। "Phylogenetic position of mammoth and Steller's sea cow within tethytheria demonstrated by mitochondrial DNA sequences"। Journal of Molecular Evolution। ৪৪ (4): ৪০৬–১৩। বিবকোড:1997JMolE..44..406O। ডিওআই:10.1007/PL00006160। পিএমআইডি 9089080। এস২সিআইডি 417046।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>ট্যাগ বৈধ নয়;:1নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ Shoshani, J. (২০০৫)। "Order Proboscidea"। Wilson, D. E.; Reeder, D. M (সম্পাদকগণ)। Mammal Species of the World: A Taxonomic and Geographic Reference। খণ্ড ১ (3rd সংস্করণ)। Johns Hopkins University Press। পৃ. ৯০–৯১। আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮০১৮-৮২২১-০। ওসিএলসি 62265494। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০১৬।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>ট্যাগ বৈধ নয়;ভারতকোষনামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ Rohland, N.; Reich, D.; Mallick, S.; Meyer, M.; Green, R. E.; Georgiadis, N. J.; Roca, A. L.; Hofreiter, M. (২০১০)। Penny, David (সম্পাদক)। "Genomic DNA Sequences from Mastodon and Woolly Mammoth Reveal Deep Speciation of Forest and Savanna Elephants"। PLOS Biology। ৮ (12): e১০০০৫৬৪। ডিওআই:10.1371/journal.pbio.1000564। পিএমসি 3006346। পিএমআইডি 21203580।
- ↑ Ishida, Y.; Oleksyk, T. K.; Georgiadis, N. J.; David, V. A.; Zhao, K.; Stephens, R. M.; Kolokotronis, S.-O.; Roca, A. L. (২০১১)। Murphy, William J (সম্পাদক)। "Reconciling apparent conflicts between mitochondrial and nuclear phylogenies in African elephants"। PLOS ONE। ৬ (6): e২০৬৪২। বিবকোড:2011PLoSO...620642I। ডিওআই:10.1371/journal.pone.0020642। পিএমসি 3110795। পিএমআইডি 21701575।
- ↑ Roca, Alfred L.; Ishida, Yasuko; Brandt, Adam L.; Benjamin, Neal R.; Zhao, Kai; Georgiadis, Nicholas J. (২০১৫)। "Elephant Natural History: A Genomic Perspective"। Annual Review of Animal Biosciences। ৩ (1): ১৩৯–১৬৭। ডিওআই:10.1146/annurev-animal-022114-110838। পিএমআইডি 25493538।
- ↑ Roca, Alfred L.; Ishida, Yasuko; Brandt, Adam L.; Benjamin, Neal R.; Zhao, Kai; Georgiadis, Nicholas J. (২০১৫)। "Elephant Natural History: A Genomic Perspective"। Annual Review of Animal Biosciences। ৩ (1): ১৩৯–১৬৭। ডিওআই:10.1146/annurev-animal-022114-110838। পিএমআইডি 25493538।
- ↑ Palkopoulou, Eleftheria; Lipson, Mark; Mallick, Swapan; Nielsen, Svend; Rohland, Nadin; Baleka, Sina; Karpinski, Emil; Ivancevic, Atma M.; To, Thu-Hien; Kortschak, R. Daniel; Raison, Joy M. (১৩ মার্চ ২০১৮)। "A comprehensive genomic history of extinct and living elephants"। Proceedings of the National Academy of Sciences (ইংরেজি ভাষায়)। ১১৫ (11): E২৫৬৬ – E২৫৭৪। বিবকোড:2018PNAS..115E2566P। ডিওআই:10.1073/pnas.1720554115। আইএসএসএন 0027-8424। পিএমসি 5856550। পিএমআইডি 29483247।
- 1 2 3 4 5 Larramendi, A. (২০১৫)। "Shoulder height, body mass and shape of proboscideans"। Acta Palaeontologica Polonica। ডিওআই:10.4202/app.00136.2014।
- 1 2 3 Shoshani, pp. 38–41.
- 1 2 3 4 5 6 Shoshani, pp. 42–51.
- ↑ Shoshani, J.; Eisenberg, J. F. (১৯৮২)। "Elephas maximus" (পিডিএফ)। Mammalian Species (182): ১–৮। ডিওআই:10.2307/3504045। জেস্টোর 3504045। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে (পিডিএফ) আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ Gheerbrant, E. (২০০৯)। "Paleocene emergence of elephant relatives and the rapid radiation of African ungulates"। Proceedings of the National Academy of Sciences of the United States of America। ১০৬ (26): ১০৭১৭–১০৭২১। বিবকোড:2009PNAS..10610717G। ডিওআই:10.1073/pnas.0900251106। পিএমসি 2705600। পিএমআইডি 19549873।
- ↑ Liu, Alexander G. S. C.; Seiffert, Erik R.; Simons, Elwyn L. (১৫ এপ্রিল ২০০৮)। "Stable isotope evidence for an amphibious phase in early proboscidean evolution"। Proceedings of the National Academy of Sciences (ইংরেজি ভাষায়)। ১০৫ (15): ৫৭৮৬–৫৭৯১। বিবকোড:2008PNAS..105.5786L। ডিওআই:10.1073/pnas.0800884105। আইএসএসএন 0027-8424। পিএমসি 2311368। পিএমআইডি 18413605।
- 1 2 Cantalapiedra, J. L.; Sanisidro, Ó.; Zhang, H.; Alberdi, M. T.; Prado, J. L.; Blanco, F.; Saarinen, J. (২০২১)। "The rise and fall of proboscidean ecological diversity"। Nature Ecology & Evolution। ৫ (9): ১২৬৬–১২৭২। বিবকোড:2021NatEE...5.1266C। ডিওআই:10.1038/s41559-021-01498-w। এইচডিএল:10261/249360। পিএমআইডি 34211141। এস২সিআইডি 235712060।
- ↑ Saegusa, H.; Nakaya, H.; Kunimatsu, Y.; Nakatsukasa, M.; Tsujikawa, H.; Sawada, Y.; Saneyoshi, M. & Sakai, T. (২০১৪)। "Earliest elephantid remains from the late Miocene locality, Nakali, Kenya" (পিডিএফ)। Kostopoulos, D. S.; Vlachos, E. & Tsoukala, E. (সম্পাদকগণ)। VIth International Conference on Mammoths and Their Relatives। খণ্ড ১০২। Thessaloniki: School of Geology, Aristotle University of Thessaloniki। পৃ. ১৭৫। আইএসবিএন ৯৭৮-৯৬০-৯৫০২-১৪-৬।
- ↑ Sanders, William J. (২০২২), Bibi, Faysal; Kraatz, Brian; Beech, Mark J.; Hill, Andrew (সম্পাদকগণ), "Proboscidea from the Baynunah Formation", Sands of Time (ইংরেজি ভাষায়), Cham: Springer International Publishing, পৃ. ১৪১–১৭৭, ডিওআই:10.1007/978-3-030-83883-6_10, আইএসবিএন ৯৭৮-৩-০৩০-৮৩৮৮২-৯, সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০২৫
- ↑ Iannucci, Alessio; Sardella, Raffaele (২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩)। "What Does the "Elephant-Equus" Event Mean Today? Reflections on Mammal Dispersal Events around the Pliocene-Pleistocene Boundary and the Flexible Ambiguity of Biochronology"। Quaternary। ৬ (1): ১৬। ডিওআই:10.3390/quat6010016। এইচডিএল:11573/1680082।
- ↑ Lister, A. M.; Sher, A. V. (২০১৫)। "Evolution and dispersal of mammoths across the Northern Hemisphere"। Science। ৩৫০ (6262): ৮০৫–৮০৯। বিবকোড:2015Sci...350..805L। ডিওআই:10.1126/science.aac5660। পিএমআইডি 26564853। এস২সিআইডি 206639522।
- ↑ Lister, A. M. (২০০৪)। "Ecological Interactions of Elephantids in Pleistocene Eurasia"। Human Paleoecology in the Levantine Corridor। Oxbow Books। পৃ. ৫৩–৬০। আইএসবিএন ৯৭৮-১-৭৮৫৭০-৯৬৫-৪।
- ↑ Rogers, R. L.; Slatkin, M. (২০১৭)। "Excess of genomic defects in a woolly mammoth on Wrangel island"। PLOS Genetics। ১৩ (3): e১০০৬৬০১। ডিওআই:10.1371/journal.pgen.1006601। আইএসএসএন 1553-7404। পিএমসি 5333797। পিএমআইডি 28253255।
- 1 2 উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>ট্যাগ বৈধ নয়;Shoshani124নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ Siegel, J. M. (২০০৫)। "Clues to the functions of mammalian sleep"। Nature। ৪৩৭ (7063): ১২৬৪–১২৭১। বিবকোড:2005Natur.437.1264S। ডিওআই:10.1038/nature04285। পিএমসি 8760626। পিএমআইডি 16251951। এস২সিআইডি 234089।
- ↑ Sukumar, p. 159.
- ↑ Hoare, B. (২০০৯)। Animal Migration: Remarkable Journeys in the Wild। University of California Press। পৃ. ৫৮–৫৯। আইএসবিএন ৯৭৮-০-৫২০-২৫৮২৩-৫।