বিষয়বস্তুতে চলুন

ইসলামে নারী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী ইসলাম হল মানুষের জন্য আল্লাহর প্রেরিত জীবন বিধান। মুসলিম নারীদের অভিজ্ঞতাবিভিন্ন সমাজের মধ্যে এবং বিভিন্ন সমাজের মধ্যে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়।[]

কুরআনে বেশ কয়েকজন নারীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে শুধু একজনেরই নামসহ উল্লেখ করা হয়েছে। আর তিনি হলেন মারিয়াম। এমনকি বাইবেলেও এতবার উল্লেখ করা হয়নি। গোটা একটা সূরাই তার নামে নামকরন করা হয়েছে, যেটা সূরা মারইয়াম নামে পরিচিত[]। কুরআন অনুসারে, তিনি জন্মথেকেই আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত। অল্পবয়সেই তিনি ফেরেস্তা প্রধান জীব্রাইলের মাধ্যমে আল্লাহর দেয়া বার্তা পান, যে তিনি তাকে নির্বাচিত করেছেন, পবিত্র করেছেন এবং তাকে উল্লেখযোগ্য করেছেন "দুনিয়ার সমস্ত নারীর মধ্য থেকে"[][][]

নারীশিক্ষা

[সম্পাদনা]

কুরআন, হাদীস উভয়ই পুরুষ ও নারীর জ্ঞানঅন্বেষণের অধিকারকে সমানভাবে সমর্থন করে[]। কুরআন সব মুসলিমকে জ্ঞানঅন্বেষণের প্রচেষ্টা করতে আদেশ দিয়েছে, তাদের লিঙ্গ যাই হোক না কেন। কুরআন ও হাদিস মুসলানদেরকে বারবার পড়তে, চিন্তা-ভাবনা করতে এবং প্রকৃতিতে আল্লাহপ্রদত্ত উপকরণ থেকে শিক্ষা নিতে বারবার তাগীদ দিয়েছে[]। এছাড়াও নারী-পুরুষ উভইকেই মুহাম্মদ (সাঃ) শিক্ষাঅর্জনে উদ্ভুদ্ধ করেছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, জ্ঞানঅন্বেষণ প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য অবশ্য কর্তব্য[]। পুরুষের মত প্রত্যেক নারীই নীতিগত ও ধর্মিয় এমন বাধ্যবাধকতার অন্তর্ভূক্ত। যাতে তিনি জ্ঞানঅন্বেষণ করেন, নিজের বুদ্ধিবৃত্তিক সমৃদ্ধির চেষ্টা করেন, মননকে সমৃদ্ধ করেন, নিজের মেধা-প্রতিভার চর্চা করেন যাতে তার সুপ্ত সম্ভাবনার দ্বারা নিজে এবং তার সমাজ উপকার লাভ করতে পারে।[]

নারীদের ঘরের বাইরে যাওয়া

[সম্পাদনা]

নারীদের ঘরের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরআনের সূরা আহযাবে বলা হয়েছে,

সাধারণত ইসলাম সর্বাবস্থায় নারীদের ঘরে আবদ্ধ করে রাখার কথা বলে না। এ সম্পর্কে হযরত আয়েশা থেকে বর্ণিত,

তবে, সেক্ষেত্রে দূর যাত্রা হলে সাথে মাহরাম নিতে হবে। মাহরাম হল সাথে কোনো পুরুষ অভিভাবক থাকা। এ সম্পর্কে সহীহ বোখারী শরীফে হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত,

পর্দা

[সম্পাদনা]

ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়, অশ্লীলতা ও ব্যভিচার নিরসনের লক্ষ্যে নারী-পুরুষ উভয়েরই তাদের নিজ নিজ রূপ-লাবণ্য ও সৌন্দর্যকে একে অপরের চোখ থেকে আড়ালে রাখার জন্য ইসলামে যে বিশেষ ব্যবস্থা অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছে, তাকে হিজাব বা পর্দা বলা হয়।[১১] ইসলাম মুসলমান নারী এবং পুরুষ উভয়ের ওপর পর্দা ফরজ করে দিয়েছে। এ সম্পর্কে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরআনের সূরা নূরে বলা হয়েছে,

ইসলামের গবেষকেরা এই আয়াত সমূহ এবং এ সংক্রান্ত হাদিসের ওপর ভিত্তি করে, নারী-পুরুষের পর্দার একটা সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে পুরুষের জন্য বাধ্যতামূলক হল, কমপক্ষে নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত ঢেকে রাখা। আর নারীর জন্য বাধ্যতামূলক হল, কমপক্ষে দুই হাতের কব্জী এবং মূখ মন্ডল ছাড়া পুরো শরীর ঢেকে রাখা। কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ বলেন, তাও ঢেকে রাখতে হবে।কারন চেহারা হচ্ছে সৌন্দর্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ । এছাড়া পর্দার বাকি শর্তগুলো হল: পরিধেয় পোশাক ঢিলেঢালা হবে। যেন দেহের মূল কাঠামো প্রকাশ না পায়। পোশাক এত পাতলা ও স্বচ্ছ হবে না, যাতে ভেতরটা দেখা যায়। পোশাক বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করার মত আকর্ষণীয় হবে না। পোশাকের ধরন বিপরীত লিঙ্গের মত হবে না। এবং পোশাকের ধরন অবিশ্বাসীদের মত হবে না। এই শর্তগুলো নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য একই রকম।

উত্তরাধিকার

[সম্পাদনা]

উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরআনে সূরা নিসায় বলা হয়েছে,

এবং

আয়াতত্রয়ীর বর্ণনা মতে, ত্যক্ত সম্পত্তির বণ্টনের বেলায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ দুজনেই সমান। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারী এগিয়ে। তবে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষ এগিয়ে।

সাক্ষী

[সম্পাদনা]

মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনে সূরা বাক্বারায় বলা হয়েছে,

ইসলামী সমাজে নারী এবং পুরুষের প্রকৃতি এবং ভূমিকার পার্থক্যের ভিত্তিতে সাক্ষী দানের ক্ষেত্রে আলাদা মানদন্ড নির্ধারণ করেছে। লিঙ্গ বৈষম্য এক্ষেত্রে বিবেচ্য নয়। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

মুসলমানদের কাছে তাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনের পরই নির্দেশনার জন্য মূল্যবান যে উৎস, তা হচ্ছে হাদিসগ্রন্থ

হযরত আবু হুরায়রা সর্বাধিক ৫৩৭৪ টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। আর তার বর্ণিত হাদিস সমূহ শুধু তার একক স্বাক্ষীর ওপরেই বিশুদ্ধতার সকল বিবেচনায় উত্তীর্ণ।[১৪] আবার হাদিসগ্রন্থ সমূহের মধ্যে হযরত আয়েশা থেকে বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ২২১০ টি। যা সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তিনি একজন নারী। আর তার বর্ণিত হাদিস সমূহও শুধু তার একক সাক্ষ্যের ওপরেই বিশুদ্ধতার সকল বিবেচনায় উত্তীর্ণ।[১০] এক্ষেত্রে নারী-পুরুষে কোনো পার্থক্য নেই। ঘটনার প্রকৃতি ও ভূমিকা ঠিক থাকলে, ইসলামে একজন নারী সাক্ষীই যথেষ্ট। ইসলামী আইনশাস্ত্রবিদেরা অনেকেই এ ব্যাপারে একমত [তথ্যসূত্র প্রয়োজন], যে চাঁদ দেখার ব্যপারে একজন বিশ্বাসী নারীর সাক্ষীই যথেষ্ট। তবে, ঘটনার প্রকৃতি এবং ভূমিকা বদলে গেলে সাক্ষীর ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের পার্থক্য সৃষ্টি হয়ে যায়। সাধারণত ইসলাম পর্দার বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। তাই ইসলাম নারীদের ওপর কোনো অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতা বা দায়দায়িত্ব আরোপ করেনি। যেসব ক্ষেত্রে ঘটনার প্রকৃতি আর্থিক এর মত (ইসলামী মতে যা অধিক পুরুষ সংশ্লিষ্ট) সেসব ক্ষেত্রে নারীদের তুলনায় পুরুষ সাক্ষীর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

বিবাহ

[সম্পাদনা]

ইসলাম ধর্ম অনুসারে কোন নারী এক সাথে একাধিক স্বামী গ্রহণ করতে পারবে না। তবে, একজন পুরুষ একাধিক (সর্বোচ্চ চারজন) নারীর সাথে বিবাহে আবদ্ধ হতে পারবে।[১০] তবে, পুরুষদের মতই একজন নারী তার পছন্দের সৎপুরুষের কাছে নিজেকে বিয়ের জন্য পেশ করতে পারবে।[১০] কোনো অভিভাবক বা পুরুষ কোনো বিধবা অথবা কুমারী মহিলাকে তার অনুমতি ব্যতীত বিয়ে করতে বা দিতে পারবে না।[১০] এমনকি নারীর অনুমতি ব্যতীত অভিভাবক তাকে বিয়ে দিলে তা বাতিল করা যাবে। এ সম্পর্কে হযরত খানসা বিনতে খিযাম আল আনসারিয়া থেকে বর্ণিত,

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Bodman, Herbert L.; Tawḥīdī, Nayyirah (১৯৯৮)। Women in Muslim Societies: Diversity Within Unity (ইংরেজি ভাষায়)। Lynne Rienner Publishers। আইএসবিএন 978-1-55587-578-7 
  2. "Surah Maryam"alqurankarim.net। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-১০ 
  3. Qur'an 3:42; cf. অনুবাদ. আরবেরি ও পিকথাল; Stowasser, Barbara Freyer, "মেরি", in: এনসাইক্লোপিডিয়া অব কুরআন, সাধারণ সম্পাদক: জেন ডেমিন ম্যাকঅলিফে, জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি, ওয়াশিংটন ডিসি.
  4. Enzyklopadie des Islam eslam.de তে "Maria" নামের জার্মান ভাষার নিবন্ধ এর ইংরেজী অনুবাদ
  5. Stowasser, Barbara Freyer, "Mary", in: এনসাইক্লোপিডিয়া অব কুরআন, সাধারণ সম্পাদক: জেন ডেমিন ম্যাকঅলিফে, জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি, ওয়াশিংটন ডিসি.
  6. যাওয়াদ, হাইফা এ. (১৯৯৮)। দ্য রাইটস অব ইসলাম: অ্যান অথেনটিক অ্যাপ্রোচ। লন্ডন, ইংল্যান্ড: পালগ্রেভ ম্যাকমিলান। পৃষ্ঠা ৮। আইএসবিএন 978-0-333-73458-2 
  7. যাওয়াদ, হাইফা এ. (১৯৯৮)। দ্য রাইটস অব ইসলাম: অ্যান অথেনটিক অ্যাপ্রোচ। লন্ডন, ইংল্যান্ড: পালগ্রেভ ম্যাকমিলান। পৃষ্ঠা ৯। আইএসবিএন 978-0-333-73458-2 
  8. যাওয়াদ, হাইফা এ. (১৯৯৮)। দ্য রাইটস অব ইসলাম: অ্যান অথেনটিক অ্যাপ্রোচ। লন্ডন, ইংল্যান্ড: পালগ্রেভ ম্যাকমিলান। পৃষ্ঠা ২০। আইএসবিএন 978-0-333-73458-2 
  9. পবিত্র কোরআনুল করীম (বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তফসীর)। খাদেমুল-হারমাইন বাদশাহ ফাহদ, কোরআন মুদ্রণ প্রকল্প। ১৪১৩ হিজরী। পৃষ্ঠা ১৪৮০ পাতা।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  10. সহীহ বোখারী শরীফ [১ম হইতে ১০ম খন্ড এক ভলিয়মে সমাপ্ত] অনুবাদ: শায়খুল হাদিস মাওলানা মোহাম্মদ আজীজুল হক। আলহাজ্ব মোঃ সোলায়মান চৌধুরী, একুশে বই মেলা। ২০০৬ সন। পৃষ্ঠা ১১২০ পাতা।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  11. "আল মু‘জামুল ওয়াসীত" ১ম খ-, ১৫৬ পৃষ্ঠা
  12. "পরিচ্ছদঃ ৫২/১২. স্ত্রী লোকের সাক্ষ্যদান"বাংলা হাদিস। Rokon-ul-Haque। সংগ্রহের তারিখ ৬ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  13. টেমপ্লেট:Ihadis
  14. সহীহ মুসলিম শরীফ [১ম হইতে 8ম খন্ড এক ভলিয়মে সমাপ্ত] অনুবাদ: শায়খুল হাদিস মাওলানা মোহাম্মদ আজীজুল হক। আলহাজ্ব মোঃ সোলায়মান চৌধুরী, একুশে বই মেলা। ২০০৭ সন। পৃষ্ঠা ১১০০ পাতা।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  15. টেমপ্লেট:Ihadis