আবু উসমান আল-সাবুনি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আবু উসমান আল-সাবুনি
أبو عثمان الصابوني
উপাধিশাইখ আল-ইসলাম[১]
আল-হাফেজ
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দ
মৃত্যু১০৫৭ (বয়স ৭৩–৭৪)
ধর্মইসলা।
যুগইসলামি স্বর্ণযুগ
অঞ্চলখোরাসান
আখ্যাসুন্নি
ব্যবহারশাস্ত্রশাফিঈ (মাযহাব)
ধর্মীয় মতবিশ্বাসআশআরি[২][৩]
প্রধান আগ্রহআকিদা, ফিকহ, হাদিস, তাফসির
ঊর্ধ্বতন পদ

ইসমাইল বিন আবদাল-রহমান বিন আহমদ বিন ইসমাইল বিন ইব্রাহিম বিন আমির, আবু উসমান আল-সাবুনি আল-শাফেয়ী[৪] (আরবি: أبو عثمان الصابوني) আবু উসমান আল-সাবুনি নামেও পরিচিত (৩৭৩ - ৪৪৯ হিজরি / ৯৮৩ - ১০৫৭ খ্রিষ্টাব্দ)। তিনি ছিলেন একজন সুন্নি ইসলামী পণ্ডিত। খোরাসান অঞ্চলের অন্যতম প্রধান হাদিস বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি খ্যাত। ইসলামী আইনশাস্ত্রে, বিশেষ করে শাফেয়ী মাযহাবে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল। তাছাড়া তিনি ছিলেন একজন কুরআনের ব্যাখ্যাকার (তাফসীরবিদ), ধর্মতত্ত্ববিদ, বক্তা, এবং দক্ষ বাগ্মী। তাঁর সময়কার সুন্নিরা তাকে শায়খ আল-ইসলাম উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। এই উপাধি ব্যবহার করে তাঁরা আর অন্য কাউকে নির্দেশ করতেন না। আবু উসমান আল-সাবুনি পারস্য ও আরবি উভয় ভাষাতেই অসামান্য দক্ষতা রাখতেন।[৫][৬][৭] আল-বায়হাকি তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, "তিনি ছিলেন মুসলিমদের সত্যিকারের ইমাম এবং ইসলামের প্রকৃত শায়খ।"[২]

জীবনী[সম্পাদনা]

আল-সাবুনি হেরাতের উপকণ্ঠে ৩৭৩ হিজরি / ৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র নয় বছর বয়সে তিনি এতিম হন যখন তার পিতাকে ধর্ম প্রচারের অপরাধে হত্যা করা হয়।[৮] আল-সাবুনিকে বিখ্যাত ইমাম এবং সাধক আবু আল-তাইয়িব সাহল আল-সালুকির তত্ত্বাবধানে বড় করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ইমাম আল-সালুকি আল-সাবুনির যিকির অনুষ্ঠানে যোগদান করতেন এবং আল-সাবুনির ধার্মিকতা, আচরণ, বুদ্ধিমত্তা, আরবি ও ফার্সি ভাষায় দক্ষতা, স্মৃতিশক্তি এবং কুরআন ও হাদিসের গভীর জ্ঞানের প্রশংসা করতেন। আবু ইসহাক আল-ইসফারায়েনি এবং ইবনে ফুরাকের মতো তাঁর সময়ের অন্যান্য প্রধান পণ্ডিতরাও আল-সাবুনির জ্ঞানের প্রশংসা করতেন।[২]

বিশ্বাস (আকিদা)[সম্পাদনা]

আল-সাবুনি আশআরি মতাদর্শের একজন দৃঢ় রক্ষক ছিলেন। বিভ্রান্তিকর মতবাদের খণ্ডনে যথেষ্ট পারদর্শিতার কারণে আবদ আল-গাফির আল-ফারসির মতো উচ্চ প্রশংসিত পণ্ডিতদের কাছ থেকে "সুন্নাহর তরবারি" এবং "বিদআ'তের প্রতিহতকারী (মিথ্যা উদ্ভাবন)" এর মতো বিশেষ উপাধি লাভ করেন। তাঁর সমসাময়িক আবু ইসহাক আল-ইসফারায়িনি তাঁকে "বিভ্রান্তিবাদীদের মহামারী" উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। আশআরী-বিরোধী দুর্নীতির বিস্তারের সময়ে ইমাম আল-কুশায়রি যে আশআরি বিবৃতিটি রচনা করেছিলেন, আল-সাবুনিও ছিলেন সেই বিবৃতির প্রধান স্বাক্ষরকারী পণ্ডিতদের মধ্যে অন্যতম।[২] আবু উসমান আল-সাবুনি জানান, তাঁর হাতে আবু আল-হাসান আল-আশআরির আল-ইবানাহ গ্রন্থটি না থাকলে তিনি তাঁর পাঠদান অধিবেশনে যেতেন না। এই গ্রন্থটির প্রতি তিনি যথেষ্ট শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছিলেন।[৯]

ইবনে আল-সুবকি বর্ণনা করেন যে, হেরাতের কাররামিয়্যা সম্প্রদায় আল-সাবুনির অত্যন্ত জনপ্রিয়তা এবং অঞ্চলটিতে তাঁর উচ্চ মর্যাদাকে হুমকি হিসেবে দেখত। তাই তারা মিথ্যাভাবে তাঁর নাম ও উপাধিটি আবু ইসমাইল 'আবদুল্লাহ আল-হারাউই রচিত একটি আশআরী-বিরোধী বইয়ের সাথে জুড়ে দেয়, যে গ্রন্থের নাম 'ধাম্ম আল-কালাম [আর]' (সুন্নীদের বিরুদ্ধে)। উল্লেখ্য, একই "শায়খ আল-ইসলাম" উপাধিটি ছিল আল-সাবুনিরও।[২]

প্রশংসা[সম্পাদনা]

আল-বায়হাকী বলেন: "আমি আল্লাহর কসম করে বলছি যে, প্রখ্যাত ইমাম আবু আবদুল্লাহ আল-হাকিম তার বয়স, হাদিস বিষয়ক দক্ষতা ও পান্ডিত্য সত্ত্বেও, যখনই ইমাম সাবুনি তার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসতেন, তখন তার সম্মানে দাঁড়িয়ে যেতেন। তিনি ইমাম সাবুনিকে "অতুলনীয় শিক্ষক" বলে সম্বোধন করতেন এবং লোকজনকে সাবুনির বিপুল জ্ঞান, যোগ্যতা ও সদ্গুণ সম্পর্কে সচেতন করতেন। এমনকি তিনি নিজের বক্তৃতাগুলোতে ইমাম সাবুনির বলা কথাগুলো পুনরাবৃত্তি করতেন।"[২]

ইবনে আল-ইমাদ আল-হানবালি বলেন: "শেখ আল-ইসলাম... বিখ্যাত বক্তা, ব্যাখ্যাকারী, গ্রন্থকার; তিনি ছিলেন অন্যতম প্রধান আলেম।"[১০]

রচনাবলি[সম্পাদনা]

আল-সাবুনি বিভিন্ন বিষয়ে অসংখ্য বই রচনা করেছেন। তবে, তার সবচেয়ে জনপ্রিয় বইয়ের নাম "আকিদাতুস সালাফ ওয়া আহল আল-হাদিস" (পূর্ববর্তী সৎকর্মশীল পন্ডিত ও হাদিসের অনুসারীদের বিশ্বাসধারা)। এই বইয়ে তিনি সৎ পূর্বসূরিদের বর্ণনা সংযুক্ত করেছেন, যেখানে তাদের বিশ্বাসধারা এবং ধর্মীয় মূলনীতিগুলোর (উসুল আল-দ্বীন) ব্যাখ্যা আছে।[১১]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Izz al-Din ibn 'Abd al-Salam (১৯৯৯)। The Belief of the People of TruthGibril Fouad Haddad কর্তৃক অনূদিত। As-Sunnah Foundation of America। পৃষ্ঠা 57। আইএসবিএন 9781930409026 
  2. Gibril Fouad Haddad (২ মে ২০১৫)। THE BIOGRAPHIES OF THE ELITE LIVES OF THE SCHOLARS, IMAMS & HADITH MASTERS Biographies of The Imams & Scholars। Zulfiqar Ayub। পৃষ্ঠা 167। 
  3. "The Notables of the Shafi'i-Ash'ari school"almostaneer.com (Arabic ভাষায়)। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  4. Senturk, Recep (২০০৫)। Narrative Social Structure Anatomy of the Hadith Transmission Network, 610-1505Stanford University Press। পৃষ্ঠা 185। আইএসবিএন 9780804752077 
  5. Richards, D.S. (৪ এপ্রিল ২০১৪)। The Annals of the Saljuq Turks Selections from Al-Kamil Fi'l-Ta'rikh of Ibn Al-AthirTaylor & Francis। পৃষ্ঠা 116। আইএসবিএন 9781317832553 
  6. Lois Beck, Guity Nasha (২০০৩)। Women in Iran from the Rise of Islam to 1800University of Illinois Press। পৃষ্ঠা 73। আইএসবিএন 9780252071218 
  7. "Al-Alam, Al-Zarkali, Part 1, p. 317" (Arabic ভাষায়)। ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  8. "The Arabic Encyclopedia: Al-Sabuni" (Arabic ভাষায়)। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  9. IslamKotob। "الرد على عبد الله الحبشى (Reply to Abdullah Al-Habashi)"। পৃষ্ঠা 39। 
  10. "The Book of Gold Nuggets in News of Gold - the year four hundred and forty-nine - The Modern Comprehensive Library, p. 213" (Arabic ভাষায়)। ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  11. Spevack, Aaron (২০১৪)। The Archetypal Sunnī Scholar Law, Theology, and Mysticism in the Synthesis of Al-BājūrState University of New York Press। পৃষ্ঠা 198। আইএসবিএন 9781438453712