হেজাজ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
লাল রং দ্বারা সৌদি অঞ্চল ও সবুজ রং দ্বারা ১৯২৩ সালের হেজাজ রাজতন্ত্র দেখানো হয়েছে।

হেজাজ় (আরবি: الحجاز al-Ḥiǧāz, আক্ষরিক অর্থ বাধা) হল বর্তমান সৌদি আরবের পশ্চিম অংশ। এর পশ্চিমে লোহিত সাগর, উত্তরে জর্ডান, পূর্বে নজদ ও দক্ষিণে আসির অবস্থিত।[১] এর প্রধান শহর জেদ্দা। তবে ইসলামের পবিত্র শহর মক্কামদিনার জন্য এই অঞ্চল অধিক পরিচিত। ইসলামের পবিত্র স্থানের অবস্থানের কারণে হেজাজ আরব ও ইসলামি বিশ্বে ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমে তিহামাহ থেকে পূর্বের নজদকে পৃথক করেছে বলে এই অঞ্চলের এরূপ নাম হয়েছে। এটি "পশ্চিম প্রদেশ" বলেও পরিচিত[২]

ঐতিহাসিকভাবে হেজাজ সৌদি আরবের বাকি অংশ থেকে পৃথক বিবেচিত হয়ে এসেছে।[৩] এটি সৌদি আরবের সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চল।[৪] মোট সৌদি জনসংখ্যার ৩৫% এখানে বসবাস করে।[৫] হেজাজি আরবির সাথে মিশরীয় আরবির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।[৬] সৌদি হেজাজিদের জাতিগত উৎস ভিন্ন।[৭]

আরব উপদ্বীপের মধ্যে হেজাজ সর্বাধিক সার্বজনীন।[৭] সৌদি আরবের যেকোনো আঞ্চলিক গোষ্ঠীর চেয়ে হেজাজের জনগণ অধিকতর পৃথক পরিচয় বহন করে। উৎপত্তিগত উৎসের কারণে সৌদি আরবের কাছ থেকে তারা কিছু মাত্রায় পৃথক। ফলে আরব উপদ্বীপের ইতিহাসের বয়ানে পার্থক্য ধরা পড়ে।[৮] এ কারণে হেজাজিরা নজদের সাথে উত্তেজনাকর অবস্থার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছে।[৮] হেজাজের লোকেরা কখনো সৌদি শাসন পূর্ণরূপে গ্রহণ করেনি।

প্রত্নতত্ত্ব[সম্পাদনা]

হেজাজে এক বা দুইটি মেগালিথিক সমাধি খুজে পাওয়া গেছে।[৯]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

তথ্যপ্রমাণ অনুযায়ী হেজাজের উত্তরাংশ রোমান প্রদেশ আরাবিয়া পেট্রাইয়ার অংশ ছিল।[১০]

মাহদ আদ জাহাবের স্বর্ণ খনন অঞ্চল ও উত্তর পূর্ব দিকে পারস্য উপসাগরের দিকে ওয়াদি আল বাতিন প্রক্রিয়ায় প্রবাহিত পানির উৎস (বর্তমানে শুষ্ক) হিজাজের অন্তর্ভুক্ত। বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব গবেষণা অনুযায়ী ২৫০০-৩০০০ খ্রিষ্টপূর্বে নদী ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল।[১১][১২]

পবিত্র দুই শহরের উপস্থিতির কারণে হেজাজ অঞ্চল আধুনিক ইতিহাসের বেশ কিছু সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। দামেস্কে রাজধানী স্থানান্তরের আগ পর্যন্ত হেজাজ খিলাফতের কেন্দ্র ছিল। পরবর্তী অধিকাংশ সময়জুড়ে হেজাজ মিশরউসমানীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এরপর ২০ শতকের প্রথমদিকে সংক্ষিপ্তকালের জন্য হেজাজ রাজনৈতিক স্বাধীনতা ভোগ করে।

১৯১৬ সালে হুসাইন-ম্যাকমোহন সমঝোতার ভিত্তিতে হুসাইন বিন আলী নিজেকে হেজাজের স্বাধীন রাজা বলে ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে সংঘটিত আরব বিদ্রোহ উসমানীয় সাম্রাজ্যের অবসান ঘটায়। ১৯২৪ সালে পার্শ্ববর্তী নজদ অঞ্চলের আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ কর্তৃক হুসাইন বিন আলী ক্ষমতাচ্যুত হন। হেজাজ নজদ ও হেজাজ রাজতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত যা পরবর্তীতে সৌদি আরব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

হেজাজের জনগোষ্ঠী[সম্পাদনা]

সৌদি আরবের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে হেজাজের অধিবাসীরা পৃথক বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। উৎপত্তিগত পার্থক্যের কারণে আরব উপদ্বীপের ইতিহাসের ভিন্ন বয়ান পাওয়া যায়। [৮]

হেজাজের অধিবাসীরা পূর্ণরূপে সৌদি শাসন কখনো পুরোপুরি মেনে নেয়নি। উমাইয়া খিলাফত থেকে উসমানীয় খিলাফত পর্যন্ত বিভিন্ন সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত থাকার কারণে অনেকেই তাদের অধিক বিশ্বজনীন মনে করে।[১৩]

ভূগোল[সম্পাদনা]

এই অঞ্চল লোহিত সাগরের তীর ঘেষে অবস্থিত। গাঢ় আগ্নেয় বালির কারণেও এই অঞ্চল পরিচিত। হেজাজে অনেক উচ্চ পর্বত রয়েছে। এগুলো নজদকে তিহামাহ থেকে পৃথক করে। গুগগুল গাছ হেজাজে প্রচুর জন্মায়।

শহর[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Merriam-Webster's Geographical Dictionary। ২০০১। পৃষ্ঠা 479। আইএসবিএন 0 87779 546 0। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মার্চ ২০১৩ 
  2. Mackey, p. 101. "The Western Province, or the Hijaz[...]
  3. Oman, UAE & Arabian Peninsula। পৃষ্ঠা 316। 
  4. "Mecca: Islam's cosmopolitan heart"। ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৪The Hijaz is the largest, most populated, and most culturally and religiously diverse region of Saudi Arabia, in large part because it was the traditional host area of all the pilgrims to Mecca, many of whom settled and intermarried there. 
  5. "Saudi Arabia Population Statistics 2011 (Arabic)" (পিডিএফ)। পৃষ্ঠা 11। ১৫ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৪ 
  6. "Dialect, Culture, and Society in Eastern Arabia: Glossary"Clive Holes। ২০০১। 
  7. Britain and Saudi Arabia, 1925-1939: The Imperial Oasis। পৃষ্ঠা 12। 
  8. Beranek, Ondrej (জানুয়ারি ২০০৯)। "Divided We Survive: A Landscape of Fragmentation in Saudi Arabia" (পিডিএফ)Middle East Brief33: 1–7। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৫, ২০১২ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  9. Gajus Scheltema (২০০৮)। Megalithic Jordan: an introduction and field guide। ACOR। আইএসবিএন 978-9957-8543-3-1। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০১২ 
  10. Kesting, Piney (মে–জুন ২০০১)। "Well of Good Fortune"Saudi Aramco। ২৩ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ২০, ২০০৭ 
  11. "The Pishon River – Found. by C.A. Salabach at Focus Magazine"। ২৫ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৪ 
  12. Sullivan, Walter (মার্চ ৩০, ১৯৯৩)। "SCIENCE WATCH; Signs of Ancient River"The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০১৪ 
  13. Riedel, Bruce (২০১১)। "Brezhnev in the Hejaz" (পিডিএফ)The National Interest115। নভেম্বর ১৫, ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ২৩, ২০১২ 

টেমপ্লেট:Middle Eastern megaliths