মালিক

ইসলাম |
---|
বিষয়ক ধারাবাহিক নিবন্ধের অংশ |
![]() |
ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী, মালিক (আরবি: مَٰالِكُ)[১][ক] হলেন জাহান্নাম বা পূর্বরূপ নরক-এর (আরবি: جهنم) একজন ফেরেশতা যিনি জাহান্নামের আগুন পাহারা দেন। তাঁকে সাহায্য করেন আরও কিছু ফেরেশতা-প্রহরী (৭৪:৩০), যাদের বলা হয় জাবানিয়া (আরবি: الزبانية)। কুরআনে আয-যুখরুফ ৪৩:৭৭ আয়াতে মালিককে জাহান্নামের প্রধান ফেরেশতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাচীন কুরআনিক পান্ডুলিপিগুলিতে মালিক নামটির বিভিন্ন বানান পাওয়া যায়, যার মধ্যে malak — অর্থাৎ "ফেরেশতা", ব্যক্তিনামের পরিবর্তে একটি সাধারণ পদ।
কুরআনে বর্ণনা
[সম্পাদনা]৪৩:৭৭ ও পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে, মালিক জাহান্নামের অধিবাসীদের জানিয়ে দেন যে তাদের সেখানেই চিরকাল থাকতে হবে:
অবশ্যই পাপীরা চিরকাল জাহান্নামের শাস্তিতে থাকবে। তাদের শাস্তি কখনও লাঘব করা হবে না, এবং তারা তাতে সম্পূর্ণরূপে হতাশ থাকবে। আমরা তাদের প্রতি জুলুম করিনি; বরং তারা নিজেরাই ছিল জুলুমকারী। তারা বলবে, "হে মালিক! তোমার প্রভুকে বলো যেন তিনি আমাদের শেষ করে দেন।" তিনি বলবেন, "তোমরা এখানেই থাক।" আমরা তোমাদের কাছে সত্য এনেছিলাম, কিন্তু তোমাদের অনেকেই সত্যকে অপছন্দ করেছিল।
আত-তাহরীম ৬৬:৬ আয়াতে বলা হয়েছে, এসব শাস্তি আল্লাহর নির্দেশেই কার্যকর হয়: "হে মুমিনগণ! নিজেদের এবং নিজেদের পরিবার-পরিজনকে এমন আগুন থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। এর তত্ত্বাবধানে থাকবে কঠোর ও কঠিন ফেরেশতা, যারা আল্লাহর কোনো আদেশ অমান্য করে না এবং যা আদেশ করা হয়, তাই পালন করে।"
হাদীসে বর্ণনা
[সম্পাদনা]ইসলামি বর্ণনানুযায়ী, মুহাম্মদ (সা.) তাঁর স্বর্গীয় সফরের সময় ফেরেশতা মালিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বলা হয়, তিনি যখন স্বর্গে পৌঁছান, তখন সব ফেরেশতা হাসিমুখে তাঁকে সম্ভাষণ করেন; শুধু মালিক ছাড়া। তিনি চুপচাপ ছিলেন। মুহাম্মদ (সা.) জিবরাঈলকে জিজ্ঞাসা করলে, জিবরাঈল জানান—মালিক জাহান্নামের রক্ষক এবং কখনও হাসেন না। এরপর মুহাম্মদ (সা.) তাঁকে জাহান্নাম দেখানোর অনুরোধ করেন এবং মালিক দরজা খুলে তাকে তার ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখান।[৩][৪]
আব্বাসীয় যুগের বিচারক ইবন কুতাইবা (যিনি আল-কুতব নামেও পরিচিত) বলেছেন, মালিকের আঙুলের সংখ্যা জাহান্নামের অধিবাসীর সংখ্যার সমান।[৫] তিনি আরও বর্ণনা করেন, মালিকের প্রতিটি আঙুল এতটাই উত্তপ্ত যে, যদি একটি আঙুল আকাশকে ছুঁত, তাহলে তা গলে যেত।[৫]
আল-সুয়ুতি বলেন, মালিক সৃষ্টি হয়েছিলেন জাহান্নামের সৃষ্টি হওয়ার হাজার বছর আগে, এবং তখন থেকেই তাঁর শক্তি প্রতিদিন অগণনভাবে বেড়ে চলেছে।[৫]
ইবন হিশাম হাদীসের ভিত্তিতে বলেন, মালিকের চেহারা এতই ভয়ানক যে, যদি কোনো মানুষ জীবদ্দশায় তাঁর প্রকৃত চেহারা দেখত, তাহলে সে যন্ত্রণায় মরে যেত।[৫]
মধ্যযুগীয় পুণ্যচরিত লেখক ইবন ইসহাক তাঁর ইসরা-মিরাজ সংক্রান্ত হাদীসগুলিতে উল্লেখ করেছেন যে, স্বর্গীয় সফরে মুহাম্মদ (সা.) দেখেন, অন্য সব ফেরেশতা হাসিমুখে অভ্যর্থনা করলেও মালিক ছিলেন নির্বিকার।[৬] আরও জানা যায়, মুহাম্মদ (সা.) জিবরাঈলকে জাহান্নাম দেখতে চাওয়ার কথা বললে, তিনি মালিককে নির্দেশ দেন তাঁকে তা দেখানোর জন্য।[৬]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]পরিশিষ্ট
[সম্পাদনা]টীকা
[সম্পাদনা]- ↑ আল্লাহর নাম হিসেবে ব্যবহৃত মালিক (الملك) শব্দটির উচ্চারণ ও অর্থ আলাদা।[২]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Surat Az-Zukhruf Ayat 77"। Tafsirweb (ইন্দোনেশীয় ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৬ নভেম্বর ২০২৩।
- ↑ "AL-MALIK MEANING - 99 NAMES OF ALLAH"। সংগ্রহের তারিখ ৬ নভেম্বর ২০২৩।
- ↑ Alan E. Bernstein Hell and Its Rivals: Death and Retribution among Christians, Jews, and Muslims in the Early Middle Ages Cornell University Press 2017 আইএসবিএন ৯৭৮-১-৫০১-৭১২৪৮-৭
- ↑ Brooke Olson Vuckovic Heavenly Journeys, Earthly Concerns: The Legacy of the Mi'raj in the Formation of Islam Routledge 2004 আইএসবিএন ৯৭৮-১-১৩৫-৮৮৫২৪-৩ page 37
- ↑ ক খ গ ঘ Imam Jalaluddin Abdurrahman As-Suyuthi (২০২১)। Misteri Alam Malaikat (ebook) (ইন্দোনেশীয় ভাষায়)। Al-Kautsar। পৃষ্ঠা 72। আইএসবিএন 9789795929512। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০২৩।
- ↑ ক খ Mansur Abdul Hakim (২০১৫)। Malaikat Malik A.S : Penjaga Neraka (Malay ভাষায়)। 9789678605250। পৃষ্ঠা 9–10; 15–16। সংগ্রহের তারিখ ৫ নভেম্বর ২০২৩।