ইসলাম-পূর্ব আরব
ইসলাম-পূর্ব আরব شبه الجزيرة العربية قبل الإسلام (আরবি) | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
![]() ইসলাম-পূর্ব আরবে নাবাতিয়ানদের বাণিজ্যপথ | |||||||
|
ইসলাম-পূর্ব আরব বলতে আরব উপদ্বীপ এবং এর উত্তর দিকে বিস্তৃত সিরীয় মরুভূমির অঞ্চলকে বোঝানো হয়, যা ইসলামের আবির্ভাবের আগের সময়কে নির্দেশ করে। সমসাময়িকদের ভাষায় আরব শব্দটি শুধুমাত্র উপদ্বীপের জন্য নয়, বরং আরবদের বসবাস করা যেকোনো স্থান বোঝাতে ব্যবহৃত হতো।[১]
ইসলাম-পূর্ব আরবে ঘনবসতিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি ছিল যাযাবর জনগোষ্ঠীও। অনেক স্থায়ী জনগোষ্ঠী নিজস্ব সভ্যতা গড়ে তোলে। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দীর মধ্যভাগ থেকে দক্ষিণ আরবে সাবাইয়ান, মিনাইয়ান প্রভৃতি রাজ্য গঠিত হয়। পূর্ব আরব অঞ্চলে বাস করত সেমিটিক ভাষাভাষী জনগণ, যাদের ধারণা করা হয় দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে অভিবাসন করে এসেছিল। এদের মধ্যে সামাদ জনগোষ্ঠী অন্যতম।[২]
১০৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আরবের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি অংশ ছিল রোমান সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে। তারা এ অঞ্চলকে আরবিয়া পেত্রেয়া নামে শাসন করত।[৩] এছাড়াও কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ছিল পার্সীয়দের নিয়ন্ত্রণে। প্রথমে পার্থিয়ান সাম্রাজ্য এবং পরে সাসানীয় সাম্রাজ্য এ অঞ্চলের কিছু অংশ শাসন করেছিল।
ধর্মীয় দিক থেকে এ সময় ছিল অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। বেশিরভাগ সময়ে বহুদেববাদ প্রভাবশালী ছিল, বিশেষত প্রাচীন সেমিটিক ধর্মবিশ্বাসের রূপে। তবে ইসলামের আবির্ভাবের কয়েক শতাব্দী আগে থেকে একেশ্বরবাদ ধীরে ধীরে প্রভাব বিস্তার করে। এ সময় আরবের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলে খ্রিস্টান এবং ইহুদি জনগোষ্ঠীও বিদ্যমান ছিল।[৪]
তথ্যের উৎস
[সম্পাদনা]ইসলাম-পূর্ব আরব থেকে প্রাপ্ত বিশদ সাহিত্যিক বর্ণনা প্রায় অনুপস্থিত। "এই অঞ্চলের জন্য কোনো আরব টাসিতাস বা জোসেফাস নেই, যিনি আমাদের জন্য একটি সুস্পষ্ট ঐতিহাসিক বিবরণ উপস্থাপন করতে পারতেন।"[৫] ফলে ইসলাম-পূর্ব আরব সম্পর্কে তথ্য বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত, যা প্রায়শই অসম্পূর্ণ, বিলম্বিত বা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে।
ইসলামী যুগে সংগৃহীত তথ্য মূলত মৌখিক ঐতিহ্যের ভিত্তিতে গঠিত, যা পরবর্তীতে সংকলন ও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কুরআন, ইসলাম-পূর্ব আরবি কবিতা এবং আরবি ইতিহাসসমূহ। সমসাময়িক তথ্যের উৎস হতে পারে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ, ইসলাম-পূর্ব আরবের শিলালিপি এবং উপদ্বীপের বাইরের পর্যবেক্ষকদের সাহিত্যিক বিবরণ। এসব বিবরণের মধ্যে রয়েছে আসিরীয়, বাবিলীয়, ইসরায়েলীয়, গ্রিক, রোমান, এবং পার্সীয় পর্যবেক্ষকদের লেখনি।[৬][৭]
খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতক থেকে খ্রিস্টীয় ৩য় শতক পর্যন্ত দক্ষিণ আরবের মুদ্রা বিশ্লেষণের মাধ্যমে স্থানীয় কিংবদন্তি, চিত্ররীতি এবং শাসন ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।[৮]
আরব উপদ্বীপে বৃহৎ পরিসরে খননকাজ অত্যন্ত সাম্প্রতিক, তাই এখানকার বস্তুগত সংস্কৃতির কোনো সুসংহত কালপঞ্জি এখনো গঠিত হয়নি।[৯] এখন পর্যন্ত সবচেয়ে অগ্রসর প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ হয়েছে পূর্ব আরবে।[১০] এই অঞ্চলটিই সাহিত্যে সর্বপ্রথম নথিবদ্ধ হয়েছে, যা খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ অব্দ পর্যন্ত পুরনো। এরপরে উত্তর ও দক্ষিণ আরবের সাহিত্যিক নথিপত্র শুরু হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব ৯০০ অব্দ থেকে।[১১]
ভৌগোলিক সংজ্ঞা
[সম্পাদনা]প্রাচীন গ্রন্থগুলোতে আরবিয়া শব্দটি বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, তবে এটি সবসময় আরব উপদ্বীপের সমার্থক ছিল না। প্রাচীনতম উৎসগুলোতে আরবিয়া বলতে উপদ্বীপ নয়, বরং মিশর ও উর্বর আধচন্দ্র অঞ্চল সংলগ্ন তৃণভূমি ও মরুভূমিকে বোঝানো হয়েছে।
প্রাচীন ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস এই শব্দটি এমন অঞ্চল বোঝাতে ব্যবহার করেছেন যা পূর্ব মিশর, সিনাই উপদ্বীপ এবং নেগেভ পর্যন্ত বিস্তৃত। পার্সীয় প্রশাসনিক তালিকায় আরাবায়া বলতে আসিরিয়া ও মিশরের মধ্যবর্তী অঞ্চলকে বোঝানো হয়েছে। ইতিহাসবিদ রবার্ট হয়ল্যান্ডের মতে, এই "আরাবায়া" অঞ্চলটি হেরোডোটাসের উল্লেখিত আরবিয়া এবং সিরীয় মরুভূমির কিছু অংশের সমন্বয়।
প্লিনি দ্য এল্ডার যখন "যাযাবরদের আরবিয়া" বলেন, তখন তিনি মূলত সিরীয় মরুভূমিকে নির্দেশ করেন।[১]

পূর্ব আরব
[সম্পাদনা]পূর্ব আরব একটি ভৌগোলিক অঞ্চল, যা আধুনিক কুয়েত, বাহরাইন, কাতার, সৌদি আরবের পূর্ব উপকূল, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ওমান—এই দেশগুলির এলাকা নিয়ে গঠিত।[১১] এ অঞ্চলের স্থায়ী জনগণের মধ্যে প্রধান ভাষা ছিল আরামাইক, আরবি, এবং কিছু ক্ষেত্রে ফারসি। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সিরিয়াক ভাষা ব্যবহৃত হতো।[১২]
এই অঞ্চলে নানা ধর্ম প্রচলিত ছিল। এখানে আরব খ্রিস্টান (যাদের মধ্যে আবদ আল-কাইস গোত্র উল্লেখযোগ্য), আরামীয় খ্রিস্টান, ফারসি ভাষাভাষী জরথুস্ত্রপূজক[১৩] এবং ইহুদি কৃষকদের বসবাস ছিল।[১৪] একটি ধারণা অনুসারে, বর্তমান বাহারনা জনগোষ্ঠী আসলে এই অঞ্চলের আরামীয়, ইহুদি এবং ফারসিদের উত্তরসূরি।[১৪][১৫]
পূর্ব আরবে জরথুস্ত্রধর্মের উপস্থিতি ছিল সুস্পষ্ট।[১৬][১৭][১৮] ইসলাম-পূর্ব সময়ে এই অঞ্চলের জরথুস্ত্রপূজকদের “মাজুস” নামে অভিহিত করা হতো।[১৯]
পূর্ব আরবের স্থানীয় উপভাষাগুলোর মধ্যে বাহরানী আরবি অন্যতম। এসব উপভাষার ওপর আক্কাদীয় ভাষা, আরামাইক এবং সিরিয়াক ভাষার প্রভাব ছিল।[২০][২১]
দক্ষিণ আরব
[সম্পাদনা]দক্ষিণ আরব বলতে মূলত আধুনিক ইয়েমেনকে বোঝানো হয়। অপরদিকে, ওমান অঞ্চলটি পূর্ব আরবের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।[১১] আরবের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ আরব একটি স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক অঞ্চল, যা প্রাচীন রাজ্যগুলোর উদ্ভব থেকে শুরু করে পরবর্তী প্রাচীন যুগের শেষ পর্যন্ত নিজস্ব সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও ভাষাগত স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেছিল।[২২]
দক্ষিণ আরবের রাজ্যগুলোর বিকাশ মূলত সেচব্যবস্থার উন্নয়ন এবং বাণিজ্যপথের মাধ্যমে সম্ভব হয়। বার্ষিক দুইবার বর্ষার পানিকে কাজে লাগিয়ে সেচব্যবস্থা গড়ে ওঠে, যা কৃষিকে সম্ভব করে তোলে। পাশাপাশি, ধূপ ও অন্যান্য মসলা পরিবহনকারী বাণিজ্যপথ দক্ষিণ আরবকে সমৃদ্ধ করে তোলে এবং গ্রিক-রোমান পর্যবেক্ষকদের চোখে এই অঞ্চলকে এক কিংবদন্তির ধনসম্পদের উৎস হিসেবে চিত্রিত করে।[২৩]
দক্ষিণ আরবে খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দের শুরুতেই মাঈন, সাবা, হাদরামাউত, আসওয়ান ও কাতাবান রাজ্যগুলোর আবির্ভাব ঘটে। দীর্ঘ সময় ধরে প্রথম সহস্রাব্দ খ্রিস্টপূর্বের আগের মানব কার্যকলাপ সম্পর্কে খুব সামান্য তথ্য পাওয়া যেত। তবে সাম্প্রতিক কয়েক দশকের প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় এ চিত্র দ্রুত পরিবর্তিত হয়েছে।[২৪] এর ফলে এই ক্ষেত্রের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে, যদিও এখনো নিকট প্রাচ্যের প্রত্নতত্ত্বে এটি মূলধারার বিষয় হয়ে ওঠেনি।[২৫]
খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতকে হিমিয়ার রাজ্য আবির্ভূত হয় এবং আশেপাশের রাজ্যগুলোকে দখল করে দক্ষিণ আরবে পূর্ণ রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। এই অবস্থা কয়েক শতাব্দী ধরে বজায় থাকে। তবে ষষ্ঠ শতকের মধ্যে হিমিয়ার রাজ্য ভেঙে পড়ে এবং সামাজিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। এর নির্দিষ্ট কারণ জানা না গেলেও একাধিক সমকালীন ঘটনা এর জন্য দায়ী হতে পারে। CIH 541 শিলালিপি থেকে জানা যায়, ৫৫০-এর দশকে এক মহামারী বিস্তার লাভ করে—সম্ভবত এটি ছিল জাস্টিনিয়ানের প্লেগ।
সামরিক দিক থেকে, আকসুম রাজ্যের হিমিয়ার আক্রমণ বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামোকে টুকরো টুকরো করে দেয়। পাশাপাশি, জলবায়ুগত চরম পরিবর্তন ঘটে। ৫০০ থেকে ৫৩০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মারাত্মক খরা দেখা দেয়, এবং ষষ্ঠ শতকের মাঝামাঝি ক্ষুদ্র হিমযুগের প্রভাবও পড়ে। এসব পরিবর্তনের প্রভাব আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্নভাবে পড়লেও সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী ছিল দক্ষিণ, বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল।
৫৫০ ও ৫৬০-এর দশকের মধ্যে হিমিয়ারের পতন সম্পূর্ণ হয়। তখন কেন্দ্রীয় ও উত্তর-পশ্চিম আরব থেকে সামরিক আক্রমণ এবং অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দেখা দেয়। ৫৫৯ খ্রিস্টাব্দে হিমিয়ারদের শেষ শিলালিপি উৎকীর্ণ হয়। ঐতিহ্যবাহী শাসনব্যবস্থার পতনের অন্যতম প্রতীক ছিল মারিব বাঁধের ভেঙে পড়া, যা ৫৭০-এর দশকে ঘটে। ষষ্ঠ শতকের শেষভাগে পার্সীয় সাসানীয় সাম্রাজ্যের প্রভাব দক্ষিণ আরবে প্রবেশ করতে শুরু করে।[২৬][২৭]


পশ্চিম আরব (হেজাজ)
[সম্পাদনা]

লিহিয়ান/দেদান রাজ্য (খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতক – খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতক)
[সম্পাদনা]লিহিয়ান, যা কখনও দেদান নামেও পরিচিত, ছিল উত্তর-পশ্চিম আরবের একটি রাজ্য। এদের ভাষা ছিল দেদানীয়। রাজ্যটি খ্রিস্টপূর্ব ৫ম থেকে ১ম শতকের মধ্যে কোনো এক সময়ে গঠিত হয়, তবে এর শেষ পর্ব নির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। নাবাতীয়রা কি এই রাজ্য দখল করেছিল, না কি এটি পতনের পর নাবাতীয়রা অঞ্চলটি দখল করে—এ বিষয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে।[২৮]
সামুদ সভ্যতা
[সম্পাদনা]সামুদ (আরবি: ثمود) ছিল হেজাজের একটি প্রাচীন সভ্যতা। এদের সম্পর্কে অষ্টম খ্রিস্টপূর্ব শতক থেকে পঞ্চম খ্রিস্টীয় শতক পর্যন্ত উৎসে তথ্য পাওয়া যায়। মেসোপটেমীয় ও শাস্ত্রীয় যুগের উৎস এবং আরবি শিলালিপিতে এদের উল্লেখ আছে। পঞ্চম শতক পর্যন্ত তারা রোমানদের সহযোগী সৈন্য (auxilia) হিসেবে কাজ করত। এছাড়াও, ইসলাম-পূর্ব আরবি কবিতা এবং ইসলামী যুগের লেখায়, বিশেষ করে কুরআনে, এদের স্মরণ করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ঈলাহ দেবতার সম্মানে নির্মিত একটি মন্দিরে খ্রিস্টীয় ১৬৫–১৬৯ সালের মধ্যে উৎকীর্ণ রুওয়াফা শিলালিপিতে এদের নাম পাওয়া যায়।
কুরআন-এ সামুদের নাম ২৬ বার এসেছে। সেখানে তাদেরকে এক বহুদেববাদী জাতি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যারা সালেহ নবীর আহ্বান প্রত্যাখ্যান করায় ঈশ্বরের দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।[২৯] কুরআনে সামুদের কাহিনীকে পূর্ববর্তী জাতিগুলোর—যেমন আদ, লূত, ও নূহের—অবাধ্যতার ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সালেহ তাদের একমাত্র ঈশ্বরের উপাসনায় আহ্বান জানান, তখন তারা একটি নিদর্শনের দাবি করে। সালেহ তাদের সামনে এক অলৌকিক উষ্ট্রী পেশ করেন। সামুদ সেই উষ্ট্রীকে আহত করে; এর পরিণতিতে ঈশ্বর তাদের ধ্বংস করেন, সালেহ ও তার অনুসারীরা ব্যতীত। এই কাহিনী ইসলামী ব্যাখ্যামূলক সাহিত্যে আরও বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে।
কিছু ঐতিহ্যে সামুদদের অবস্থান হেগরা (মাদায়িন সালেহ) অঞ্চলে নির্ধারণ করা হয়েছে; অন্য কিছু মতে, তারা নাবাতীয়দের সাথেও সম্পর্কিত।[৩০] ইসলামি বংশানুক্রম অনুসারে, সামুদরা ছিলেন “আসল আরব” জাতিগুলোর অন্তর্ভুক্ত—তথাকথিত “আরবীকৃত আরবদের” (Arabicized Arabs) বিপরীতে।[৩১]
উত্তর আরব
[সম্পাদনা]
কেদার রাজ্য (খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতক – ?)
[সম্পাদনা]উত্তর আরবের গোত্রগুলোর মধ্যে কেদার ছিল সবচেয়ে সংগঠিত। খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে এদের রাজ্য পারস্য উপসাগর থেকে সিনাই উপদ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।[৩২] খ্রিস্টপূর্ব ৮ম থেকে ৪র্থ শতক পর্যন্ত এই রাজ্য প্রভাবশালী ছিল। এদের রাজাদের নাম প্রথম পাওয়া যায় আসিরীয় শিলালিপিতে। শুরুতে কিছু কেদারীয় শাসক আসিরীয়দের অধীন বাঁধা রাজা ছিলেন, তবে খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতকে বিদ্রোহও দেখা যায়। ধারণা করা হয়, পরবর্তীতে কেদারীয়দের নাবাতীয় রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
আচেমেনীয়দের উত্তর আরবে উপস্থিতি
[সম্পাদনা]আচেমেনীয়দের শাসনাধীন আরব অঞ্চল বলতে মূলত নাইল ডেলটা ও মেসোপটেমিয়ার মধ্যবর্তী ভূমিকে বোঝায়, যা পরে রোমানরা "আরাবিয়া পেত্রেয়া" নামে অভিহিত করে। হেরোডোটাসের মতে, কম্বাইসেস দ্বিতীয় ৫২৫ খ্রিস্টপূর্বে মিশর আক্রমণ করলেও আরবদের দমন করেননি। দারিউস প্রথম তার শাসনের শুরুর দিকের বেহিস্তুন শিলালিপিতে আরবদের নাম উল্লেখ করেননি, তবে পরবর্তী লিখিত গ্রন্থে তাদের নাম পাওয়া যায়। এটি থেকে ধারণা করা হয় যে, হয়তো পরবর্তীতে দারিউস আরব অঞ্চল দখল করেন অথবা এটি পূর্বে অন্য কোনো প্রদেশ, যেমন ব্যাবিলনের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
আরবদের আচেমেনীয় শাসনের অধীনে অন্যান্য জাতির মতো করদাতারূপে গণ্য করা হতো না; বরং তারা প্রতি বছর ১,০০০ ট্যালেন্ট ধূপরজন প্রদান করত। এছাড়া তারা দ্বিতীয় পার্সীয়-গ্রিক যুদ্ধের সময় অংশগ্রহণ করে এবং মিশর আক্রমণের সময় সৈন্যদের জন্য মরুভূমিতে জলের থলে সরবরাহ করত।[৩৩]
নাবাতীয়রা
[সম্পাদনা]নাবাতীয়দের নাম আরব গোত্রের বংশানুক্রমিক তালিকায় দেখা যায় না, কারণ ইসলামের আগমনের অনেক আগেই এদের রাজ্য বিলুপ্ত হয়। তারা ডেড সি ও লাল সাগরের মধ্যবর্তী সিরো-আফ্রিকান গিরিখাতের পূর্ব দিকে, প্রাচীন এদোমের ভূমিতে বসতি স্থাপন করে। তাদের প্রথম নিশ্চিত উল্লেখ পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব ৩১২ সালে, তবে তাদের উপস্থিতি তারও আগে থেকে ছিল বলে ধারণা করা হয়।
নাবাতীয়দের রাজধানী ছিল পেত্রা (গ্রিক ভাষায় পেত্রা অর্থ ‘পাথর’)। এটি জর্দান রিফট উপত্যকার ওয়াদি আরাবার পূর্বদিকে অবস্থিত। পেত্রা প্রথম শতকের শেষদিকে মসলার বাণিজ্যের মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করে। শহরটি দুইটি বিষয়ে বিশেষভাবে খ্যাত: বাণিজ্য এবং উন্নত জল-প্রকৌশল ব্যবস্থা।
প্রথম শতকে শহরটি রোমানদের অধীনে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখে এবং সমৃদ্ধি লাভ করে। কলোনেড রোডের চারপাশে শহর গড়ে ওঠে এবং ১ম শতকের মাঝামাঝি নাগাদ ব্যাপক নগরায়ণের সূচনা হয়। এই সময়েই কোয়ারিগুলো (খনি) চালু হয় এবং ১ম ও ২য় শতকে টানা নির্মাণকাজ চলে।
রোমান আরব
[সম্পাদনা]উত্তর আরবে রোমানদের শাসনের প্রমাণ অগাস্টাস সম্রাটের (খ্রিস্টপূর্ব ২৭ – খ্রিস্টীয় ১৪) শাসনকাল থেকেই পাওয়া যায়। টাইবেরিয়াসের (১৪–৩৭ খ্রিস্টাব্দ) শাসনামলে, সমৃদ্ধ বাণিজ্যপথে অবস্থিত উত্তর আরবের শহর পালমিরা রোমান প্রদেশ সিরিয়া (রোমান প্রদেশ)-এর অন্তর্ভুক্ত হয়। শহরটি পারস্য, ভারত, চীন এবং রোমান সাম্রাজ্যের মধ্যে সংযোগকারী বাণিজ্যপথে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
এ সময় পালমিরার আরব অধিবাসীরা পার্থীয় ও গ্রিক-রোমান সংস্কৃতির প্রভাব গ্রহণ করে। ১২৯ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট হাদ্রিয়ান শহরটি পরিদর্শন করে অভিভূত হন এবং একে “স্বাধীন নগর” ঘোষণা দিয়ে নাম দেন পালমিরা হাদ্রিয়ানা।

আরবিয়া পেত্রেয়া নামক রোমান প্রদেশটি খ্রিস্টীয় ২য় শতকের শুরুতে সম্রাট ত্রায়ান প্রতিষ্ঠা করেন। এর কেন্দ্র ছিল পেত্রা, এবং নাবাতীয় নিয়ন্ত্রিত উত্তর আরবের অঞ্চলগুলো এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।
সম্প্রতি প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণে দেখা যায় যে, হিজাজ পর্বতের মাদায়িন সালেহ অঞ্চলে রোমান সৈন্যরা অবস্থান করত, যা এই প্রদেশের বিস্তৃতি আরও সুদূরপ্রসারী ছিল তা নির্দেশ করে।[৩৪]
এই প্রদেশের মরু সীমান্তকে রোমানরা লিমেস আরাবিকুস নামে অভিহিত করত। এটি ছিল একটি সীমানা অঞ্চল, যার অন্তর্ভুক্ত ছিল উত্তর-পূর্ব আরবের মরুভূমি, যেখানে যাযাবর সারাসেনি জনগোষ্ঠী বাস করত।
মধ্য আরব
[সম্পাদনা]কিন্দা রাজ্য
[সম্পাদনা]কিন্দা ছিল মধ্য আরবের নাজদ অঞ্চলে গঠিত একটি আরব রাজ্য, যা কিন্দা গোত্রের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই গোত্রের অস্তিত্ব খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক পর্যন্ত ফিরে যায়।[৩৫] ইয়েমেনের সংগঠিত রাজ্যগুলোর মতো নয়, কিন্দা রাজ্য গড়ে উঠেছিল অপেক্ষাকৃত ঢিলে-ধরা কাঠামোতে। এর রাজারা অন্যান্য গোত্রের ওপর তাদের ব্যক্তিগত খ্যাতি ও মর্যাদার মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করতেন, তবে তাদের নিয়ন্ত্রণ ছিল মূলত রাজনৈতিক বলপ্রয়োগহীন।
তাদের প্রথম রাজধানী ছিল কারিয়াত ধাত কাহিল, যা আজকের কারিয়াত আল-ফাও নামে পরিচিত।[৩৬]
প্রাচীন দক্ষিণ আরবীয় শিলালিপিতে kdt নামে একটি গোত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়, যারা নাজদ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল। তাদের রাজা ছিলেন rbˁt (রবী‘আ), যিনি ḏw ṯwr-m (থাওর সম্প্রদায়) থেকে আগত এবং সাবা ও যু রায়দান-এর রাজার অনুগত ছিলেন।[৩৭] পরবর্তীকালে আরব বংশতালিকাবিদরা কিন্দা গোত্রকে থাওর ইবন উকাইর নামক ব্যক্তির বংশধর হিসেবে উল্লেখ করেন। আধুনিক ইতিহাসবিদরা মনে করেন, শিলালিপিতে উল্লিখিত rbˁt ḏw ṯwrm-ই ছিলেন কিন্দা (kdt) রাজ্যের রাজা। মুসনাদ শিলালিপিতে বলা হয়েছে, তিনি শুধু কিন্দা-র (kdt) নয়, বরং কাহতান-এর (qhtn)-ও রাজা ছিলেন।
তারা হিমিয়ার ও হাদরামাউত রাজ্যের মধ্যকার যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হিমিয়ারদের বিজয়ের পর কিন্দার একটি শাখা মারিব অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে, তবে বেশিরভাগ কিন্দা গোত্র মধ্য আরবেই থেকে যায়।
প্রথম শাস্ত্রীয় লেখক যিনি কিন্দা সম্পর্কে উল্লেখ করেন তিনি হলেন জাস্টিনিয়ান-এর দূত বাইজান্টাইন রাষ্ট্রদূত নোনোসোস। তিনি গ্রিক ভাষায় তাদেরকে খিন্দেনয় (গ্রিক: Χινδηνοι, আরবি: কিন্দা) বলে অভিহিত করেন এবং তাদের পাশাপাশি মা'দিনয় (গ্রিক: Μααδηνοι, আরবি: মা'দ) গোত্রকেও সবচেয়ে প্রভাবশালী দুটি গোত্র হিসেবে উল্লেখ করেন। কিন্দা রাজাকে তিনি “কাইসোস” (গ্রিক: Καισος, আরবি: কাইস/কাইস), এবং তাকে আরেথা (গ্রিক: Άρεθα, আরবি: হারিথ)-র ভাগ্নে হিসেবে চিহ্নিত করেন।
বংশতাত্ত্বিক ঐতিহ্য
[সম্পাদনা]
আরব গোত্রগুলোর উৎপত্তি ও শ্রেণিবিন্যাস সম্পর্কিত ঐতিহ্য বাইবেলীয় বংশতালিকার ভিত্তিতে গঠিত। ১৪শ শতকের আরব বংশতাত্ত্বিকদের মধ্যে সাধারণ ঐকমত্য ছিল যে আরবরা তিন ধরনের:
- "নাশ্যমান আরব" (আরব আল-বাʼইদা): এরা প্রাচীন আরব জাতি, যাদের ইতিহাস সম্পর্কে খুব কম জানা যায়। এদের মধ্যে আছে আদ, সামুদ, তাসম, জাতিস, ইমলাক এবং অন্যান্যরা। তাসম ও জাতিস গণহত্যার কারণে বিলুপ্ত হয়েছিল। আদ ও সামুদ বিলুপ্ত হয়েছিল তাদের চারিত্রিক অবক্ষয়ের কারণে। অতীতে কেউ কেউ এদের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেও, "ইমলাক" শব্দটি আমালিক-এর একবচন, যা সম্ভবত বাইবেলীয় আমালেক গোত্রেরই সমার্থক।
- "বিশুদ্ধ আরব" (কাহতানি): ঐতিহ্য অনুযায়ী, এরা ইয়ারুব ইবন ইয়াশজুব ইবন কাহতান-এর বংশধর হিসেবে বিবেচিত, তাই এদেরকে কাহতানি আরব বলা হয়।[৩৮]
আধুনিক ইতিহাসবিদদের মতে, কাহতানি ও আদনানি এই শ্রেণিবিন্যাস আসলে উমাইয়া যুগে রাজনৈতিক বিভাজনের পটভূমিতে সৃষ্টি হয়েছিল, যখন খেলাফতের অভ্যন্তরে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই চলছিল।[৩৮]
ধর্ম
[সম্পাদনা]
ইসলাম-পূর্ব আরবের ধর্মীয় প্রেক্ষাপট ছিল বহুবিধ। এতে অন্তর্ভুক্ত ছিল ইসলাম-পূর্ব আরবের বহুদেববাদ, প্রাচীন সেমিটিক ধর্ম, এবং ইহুদি ধর্ম ও খ্রিস্টধর্মসহ আব্রাহামীয় ধর্মসমূহ। এছাড়াও কিছু গবেষক ধারণা করেন, এ সময় সামরীয় ধর্ম, মান্দায়ী ধর্ম, এবং জরথুস্ত্রধর্ম ও মানিচীবাদ-এর মতো পারস্য ধর্মগুলোর উপস্থিতিও ছিল।
ইসলামি ঐতিহ্য অনুযায়ী, ইসলাম-পূর্ব আরবে সবচেয়ে প্রভাবশালী ছিল বহুদেববাদ। এই ধর্মীয় চর্চা ছিল দেবতা ও আত্মার পূজার ওপর ভিত্তি করে। স্থানীয় উপাসনালয় ও মন্দিরে হুবাল, এবং দেবী আল-লাত, আল-উজ্জা ও মানাত-সহ বিভিন্ন দেবতার পূজা করা হতো। সম্ভবত মক্কার কাবা-তেও এই দেবতাদের পূজা হতো। এসব দেবতার উদ্দেশ্যে তীর-ভাগ্য পরীক্ষা, তীর্থযাত্রা এবং বলিদানসহ নানা ধর্মীয় আচার পালন করা হতো।
আল্লাহর ভূমিকা ইসলাম-পূর্ব মক্কায় কী ছিল, তা নিয়ে বিভিন্ন তত্ত্ব রয়েছে। ইসলামি ঐতিহ্য অনুযায়ী, কাবায় ৩৬০টি মূর্তি ছিল, যেগুলোর মাধ্যমে এই ধর্মীয় উপাসনার চিত্র ফুটে ওঠে।
অন্য ধর্মসমূহও স্বল্প মাত্রায় আরবে প্রচলিত ছিল। রোমান ও আকসুমি প্রভাবের কারণে আরবের উত্তর-পশ্চিম, উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ অঞ্চলে খ্রিস্টান সম্প্রদায় গড়ে ওঠে। যদিও খ্রিস্টধর্ম পুরো উপদ্বীপে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারেনি, তবে কিছু অঞ্চল বিশেষত নেস্টোরিয়ান (উত্তর-পূর্ব আরব ও পারস্য উপসাগর) এবং মিয়াফিজিত মতবাদ প্রচলিত ছিল।
আরব উপদ্বীপে ইহুদি ধর্মের আগমন রোমান যুগেরও আগের সময় থেকে শুরু হয়। এটি স্থানীয় ধর্মান্তরিতদের মাধ্যমে আরও বিস্তৃত হয়। সাসানীয় প্রভাবের ফলে পারস্য ধর্মগুলোও আরবে প্রবেশ করে। জরথুস্ত্রধর্ম পূর্ব ও দক্ষিণ আরবে বিদ্যমান ছিল, তবে মানিচীবাদ মক্কায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এমন কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই।[৪১][৪২][৪৩]
চতুর্থ শতক থেকে ইসলাম-পূর্ব আরবে একেশ্বরবাদের প্রভাব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর প্রমাণ মেলে জাবাল দাবুব, রি আল-জালাল্লাহ, এবং আবদ শামস শিলালিপিতে উৎকীর্ণ লেখায়।[৪৪]
সাক্ষরতা
[সম্পাদনা]ইসলাম-পূর্ব আরবে সাক্ষরতা বিষয়ে মাইকেল সি. এ. ম্যাকডোনাল্ড একটি শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি প্রস্তাব করেন। তাঁর মতে, কোনো সমাজে লেখার ব্যবহারকে ভিত্তি করে সমাজকে দুই ধরনের—সাক্ষর ও অসাক্ষর—বিভাগে ভাগ করা যায়।
একটি **অসাক্ষর সমাজ** হলো এমন এক সমাজ যেখানে ব্যক্তিগতভাবে লেখার ক্ষমতা অনেকের মধ্যে থাকলেও সমাজের প্রশাসনিক কাঠামোতে (যেমন: সরকারি শিলালিপি, আইনি দলিল প্রভৃতি ক্ষেত্রে) লেখার ব্যবহার করা হয় না। বিপরীতে, একটি **সাক্ষর সমাজে** প্রশাসনিক কার্যাবলি পরিচালনার জন্য লেখার উপর নির্ভরতা থাকে।[৪৫]
ইসলাম-পূর্ব আরবে যাযাবর ও স্থায়ী উভয় ধরণের জনগোষ্ঠীর মধ্যেই লেখার প্রচলন ছিল। যদিও উত্তর আরব ও দক্ষিণ লেভান্তের যাযাবর আরব সমাজগুলোতে অনেকেই লিখতে পারতেন, তথাপি এই সমাজগুলোকে অসাক্ষর বলা হয়। কারণ লেখার ব্যবহার এসব সমাজে মূলত বিনোদন ও অবসরের সময় কাটানোর উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হতো, প্রশাসনিক বা আইনি উদ্দেশ্যে নয়।
অন্যদিকে, দক্ষিণ আরব ছিল একটি সাক্ষর সমাজ। এখানে হাজার হাজার সরকারি শিলালিপি পাওয়া গেছে, যা লেখার প্রশাসনিক ব্যবহারকে নির্দেশ করে। হাজার হাজার গ্রাফিতির উপস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে, লেখার দক্ষতা কেবল উচ্চশ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং সাধারণ জনগণের মধ্যেও তা বিস্তৃত ছিল।
উত্তর ও পশ্চিম আরবের প্রধান মরূদ্যান শহরগুলোতেও লেখার ব্যবহার ব্যাপক ছিল, যা এগুলোকে সাক্ষর সমাজের অন্তর্ভুক্ত করে।[৪৬][৪৭]
হেলেনিক প্রভাব
[সম্পাদনা]হেলেনিকরণ (Hellenization) বলতে স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে গ্রিক-রোমান সংস্কৃতির মিশ্রণকে বোঝায়, যা আলেকজান্ডার মহান-এর বিজয়-পরবর্তী সময়ে বিস্তার লাভ করে। গবেষকদের মতে, ইসলাম-পূর্ব আরবেও হেলেনিক প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল।[৪৮]
আরবে হেলেনিক সংস্পর্শের প্রাচীনতম প্রমাণ পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকে, তবে সে সময় এটি শুধু পূর্ব আরবেই সীমাবদ্ধ ছিল। রোডস ও চিওস থেকে আগত অ্যাম্ফোরা (মাটির কলস) এ সংযোগের ইঙ্গিত বহন করে।
দক্ষিণ আরবে হেলেনিক প্রভাব পৌঁছায় খ্রিস্টপূর্ব ২য় বা ১ম শতকে। এই সময়ের কাছাকাছি কাতাবান রাজ্যের শেষদিককার রাজাদের সময়ে এটি লক্ষ্য করা যায়।[৪৯] একই সময়ে আউসান রাজ্যের উত্থানকালে রাজাদের প্রতীকচিত্রে পরিবর্তন দেখা যায়—তারা আর প্রচলিত দক্ষিণ আরবীয় পোশাকে নয়, বরং রোমান নাগরিকদের মতো টোগা পরিহিত অবস্থায় ও ঘুঙচি চুলসহ উপস্থাপিত হতে শুরু করে।[৫০]
সাবা রাজ্যে ঐতিহ্যবাহী নিকটপ্রাচ্য দেবচিত্রের পরিবর্তে খ্রিস্টীয় যুগের কাছাকাছি সময়ে মানবাকৃতি গ্রিক-রোমান শৈলীর প্রতীক ব্যবহৃত হতে শুরু করে।[৫১] সাম্প্রতিককালে ফারাসান দ্বীপপুঞ্জে লাতিন শিলালিপি আবিষ্কারের মাধ্যমে রোমান সামরিক উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা আজকের দক্ষিণ-পশ্চিম সৌদি আরব পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।[৫২]
খ্রিস্টীয় ১০৬ সালে রোমান সাম্রাজ্য নাবাতীয় রাজ্য জয় করে এবং সেখানে আরাবিয়া পেত্রেয়া নামে একটি প্রদেশ গঠন করে। তবে এর আগেই রোমান শাসন সিরিয়া, ট্রান্সজর্ডান ও প্যালেস্টাইনে আরবভাষী জনগোষ্ঠীর উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই বিজয়ের ফলে রোমান শাসন হেজাজের উত্তর অংশসহ উত্তর-পশ্চিম আরবেও বিস্তৃত হয়।[৪৮]
হেগরা (মাদায়িন সালেহ) এবং রুওয়াফা-তে রোমান সৈন্যশিবিরের প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ মিলেছে, যার মধ্যে দ্বিভাষিক গ্রিক-আরবি শিলালিপি অন্যতম।[৫৩] খ্রিস্টীয় ৫৬৯/৫৭০ সালে রচিত আর্কিম্যান্ড্রাইটদের পত্র গ্রিক ভাষায় রচিত হলেও সিরিয়াক ভাষায় সংরক্ষিত হয়েছিল। এই চিঠিতে রোমান আরব প্রদেশে ১৩৭ জন আর্কিম্যান্ড্রাইট সনদকারীদের মাধ্যমে ধর্মীয় প্রশাসনের বিস্তারের প্রমাণ মেলে।[৫৪]
সাফায়িতিক শিলালিপিতে রোমান সম্রাটদের উল্লেখ পাওয়া যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরবভাষী গোত্রগুলো খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হতে শুরু করে অথবা ফোয়েদারাতি (সম্রাটের সহযোগী রাষ্ট্র) হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। এর ফলে তারা ধীরে ধীরে রোমান জগতের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে পড়ে। ষষ্ঠ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জাস্টিনিয়ান প্রথম ছিলেন ঘাসসানিদ রাজ্যের মিত্র—একটি হেলেনিক প্রভাবিত খ্রিস্টান আরব রাজ্য।[৪৮]
মধ্য আরবের কিন্দা রাজ্যের প্রাচীন রাজধানী কারিয়াত আল-ফাও এলাকায় আর্তেমিস, হেরাক্লেস এবং হারপোক্রেটিস-এর মতো গ্রিক দেবতাদের মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে।[৪৮]
হেলেনিক প্রভাব ইসলাম-পূর্ব আরবি কবিতাতেও পরিলক্ষিত হয়।[৫৫]
শিল্পকলা
[সম্পাদনা]ইসলাম-পূর্ব আরবের শিল্পকলা প্রতিবেশী সংস্কৃতিগুলোর অনুরূপ ছিল। বিশেষ করে ইসলাম-পূর্ব ইয়েমেনে অ্যালাবাস্টার (শিল্পকর্ম নির্মাণে ব্যবহৃত সবচেয়ে প্রচলিত উপাদান) দিয়ে নির্মিত আদলিত মানবমুখাবয়ব শিল্পকর্ম তৈরি করা হতো, যেগুলো নান্দনিকতা ও ঐতিহাসিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
-
ইয়েমেন থেকে প্রাপ্ত অ্যালাবাস্টার নির্মিত পূজার উদ্দেশ্যে তৈরি মূর্তি, যেগুলো বসে থাকা নারী ও নারীর মাথার প্রতিকৃতি উপস্থাপন করে; খ্রিস্টপূর্ব ৩য়–১ম শতক; জাতীয় প্রাচ্য শিল্পকলা জাদুঘর (রোম, ইতালি)।
-
একটি পুরুষাকৃতি স্তম্ভচিত্র, যিনি বাল্ড্রিক (কাঁধে ঝোলানো তলোয়ার-বেল্ট) পরেছেন—ইসলাম-পূর্ব আরবের প্রতীকী শিল্পকর্ম; চতুর্থ সহস্রাব্দ খ্রিস্টপূর্ব; আল-উলা, সৌদি আরব; কোরিয়া জাতীয় জাদুঘর (সিওল) প্রদর্শনী।
-
ইসলাম-পূর্ব সৌদি আরব থেকে প্রাপ্ত আরেকটি মানবাকৃতি স্তম্ভচিত্র।
-
দক্ষিণ আরবীয় স্তম্ভচিত্র; নারী বক্ষভাগ তুলে ধরা হয়েছে, নিচে দাতার নাম রাথাদুম উৎকীর্ণ; খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতক–খ্রিস্টীয় ১ম শতক; ক্যালসাইট-অ্যালাবাস্টার; উচ্চতা: ৩২.১ সেমি; ওয়াল্টারস আর্ট মিউজিয়াম (বাল্টিমোর)।
-
ইয়েমেনের সানা শহর থেকে প্রাপ্ত হলুদ অ্যালাবাস্টারে নির্মিত খেজুরগাছের অংশবিশেষ সম্বলিত রিলিফ শিল্প।
-
ক্ষুদ্রাকৃতির দরজার প্রতিকৃতি; জাফার, ইয়েমেন; ২য়–৩য় শতক খ্রিস্টাব্দ।
-
পারগামন জাদুঘর (বার্লিন)-এ অনুষ্ঠিত "আরবের পথসমূহ" প্রদর্শনীতে রাখা থাজ শহরের সমাধিচিত্র ও স্বর্ণমণ্ডিত দস্তানা; খ্রিস্টীয় ১ম শতক; তেল আল-জায়ের থেকে প্রাপ্ত (জাতীয় জাদুঘর, রিয়াদ)।
-
হিমিয়ার রাজ্যের রাজা ধামার আলী ইয়াহবুর দ্বিতীয়-এর বক্ষমূর্তি।
-
অজানা উৎসের ইসলাম-পূর্ব আরবীয় প্রত্নবস্তুর চিত্র (বেসেল, ২০১২)।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]

- প্রাচীন নিকটপ্রাচ্য
- আরব (শব্দের উৎস)
- আরব পৌরাণিক কাহিনি
- সৌদি আরবের ইতিহাস
- বাহরাইনের ইতিহাস
- আরবি বর্ণমালার ইতিহাস
- সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইতিহাস
- ধূপ বাণিজ্যপথ
- ইসলাম-পূর্ব আরব বাণিজ্য
- ইসলাম-পূর্ব বর্ষপঞ্জি
- রহমানবাদ
- ইসলাম নিয়ে সোভিয়েত ওরিয়েন্টালিস্ট গবেষণা
- ইসলাম-পূর্ব আরবে নারীর অবস্থা
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ Hoyland 2002, পৃ. 1–5।
- ↑ Kenneth A. Kitchen The World of "Ancient Arabia" Series. Documentation for Ancient Arabia. Part I. Chronological Framework and Historical Sources p.110
- ↑ Taylor, Jane (২০০৫)। Petra। London: Aurum Press Ltd। পৃষ্ঠা 25–31। আইএসবিএন 9957-451-04-9।
- ↑ Lindstedt 2023, পৃ. 1–144।
- ↑ Hoyland 2002, পৃ. 10।
- ↑ Munt 2014, পৃ. 21–22।
- ↑ Hoyland 2002, পৃ. 8–9।
- ↑ Nebes 2023, পৃ. 308।
- ↑ MacDonald 2015, পৃ. 2।
- ↑ Hoyland 2002, পৃ. 32–35।
- ↑ ক খ গ Hoyland 2002, পৃ. 11।
- ↑ Cameron, Averil (১৯৯৩)। The Mediterranean World in Late Antiquity। Routledge। পৃষ্ঠা 185। আইএসবিএন 9781134980819।
- ↑ E.J. Brill's First Encyclopaedia of Islam, 1913-1936, Volume 5। BRILL। ১৯৯৩। পৃষ্ঠা 98। আইএসবিএন 978-9004097919।
- ↑ ক খ Holes, Clive (২০০১)। Dialect, Culture, and Society in Eastern Arabia: Glossary। BRILL। পৃষ্ঠা XXIV–XXVI। আইএসবিএন 978-9004107632।
- ↑ Robert Bertram Serjeant (১৯৬৮)। "Fisher-folk and fish-traps in al-Bahrain"। Bulletin of the School of Oriental and African Studies, University of London। 31 (3): 486–514। এসটুসিআইডি 128833964। জেস্টোর 614301। ডিওআই:10.1017/s0041977x00125522।
- ↑ Patricia Crone (২০০৫)। Medieval Islamic Political Thought। পৃষ্ঠা 371। আইএসবিএন 9780748621941।
- ↑ G. J. H. van Gelder (২০০৫)। Close Relationships: Incest and Inbreeding in Classical Arabic Literature। Bloomsbury Academic। পৃষ্ঠা 110। আইএসবিএন 9781850438557।
- ↑ Matt Stefon (২০০৯)। Islamic Beliefs and Practices
। The Rosen Publishing Group, Inc। পৃষ্ঠা 36। আইএসবিএন 9781615300174।
- ↑ Zanaty, Anwer Mahmoud। Glossary Of Islamic Terms।
- ↑ Jastrow, Otto (২০০২)। Non-Arabic Semitic elements in the Arabic dialects of eastern Arabia। Clive Holes। Otto Harrassowitz Verlag। পৃষ্ঠা 270–279। আইএসবিএন 9783447044912।
- ↑ Holes, Clive (২০০১)। Dialect, Culture, and Society in Eastern Arabia: Glossary। BRILL। পৃষ্ঠা XXIX–XXX। আইএসবিএন 978-9004107632।
- ↑ Nebes 2023, পৃ. 299।
- ↑ Nebes 2023, পৃ. 301–303।
- ↑ Wilkinson 2009।
- ↑ Magee 2014, পৃ. 1–2।
- ↑ Haldon, John; Fleitmann, Dominik (২০২৪)। "A Sixth-Century CE Drought in Arabia New Palaeoclimate Data and Some Historical Implications"। Journal of Late Antique, Islamic and Byzantine Studies। 3 (1–2): 1–45।
- ↑ Fleitmann, Dominik; Haldon, John; Bradley, Raymond S.; Burns, Stephen J.; Cheng, Hai; Edwards, R. Lawrence; Raible, Christoph C.; Jacobson, Matthew; Matter, Albert (২০২২-০৬-১৭)। "Droughts and societal change: The environmental context for the emergence of Islam in late Antique Arabia"। Science। 376 (6599): 1317–1321।
- ↑ Rohmer ও Charloux 2015, পৃ. 297।
- ↑ Mackintosh-Smith 2019, পৃ. 29।
- ↑ Firestone 2006।
- ↑ Mackintosh-Smith 2019, পৃ. 30।
- ↑ Stearns, Peter N.; Langer, William Leonard (২০০১), The Encyclopedia of world history: ancient, medieval, and modern, chronologically arranged (6th, illustrated সংস্করণ), Houghton Mifflin Harcourt, পৃষ্ঠা 41, আইএসবিএন 978-0-395-65237-4
- ↑ Encyclopædia Iranica[অধিগ্রহণকৃত!]
- ↑ "Saudi Aramco World : Well of Good Fortune"। Saudiaramcoworld.com। ২০১৪-১০-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০১৪।
- ↑ D. H. Müller, Al-Hamdani, 53, 124, W. Caskel, *Entdeckungen In Arabien*, Koln, 1954, S. 9. Mahram, P.318
- ↑ History of Arabia – Kindah ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৫-০৪-০৩ তারিখে. *Encyclopædia Britannica*. Retrieved 11 February 2012.
- ↑ Jamme 635. দেখুন: জাওয়াদ আলী, *আল-মুফাসসাল ফি তারীখ আল-আরব কাবল আল-ইসলাম*, খণ্ড ৩৯।
- ↑ ক খ গ Parolin, Gianluca P. (২০০৯)। Citizenship in the Arab World: Kin, Religion and Nation-State। Amsterdam University Press। পৃষ্ঠা 30। আইএসবিএন 978-9089640451। "আরবীকৃত আরবদেরকে সাধারণত ইসমাঈল (ইসলামে) থেকে উদ্ভূত বলে ধরা হয়, যদিও তাদের বংশতালিকা বাইবেলীয় বংশের সাথে পুরোপুরি মিলে না। বলা হয়, ইসমাঈল মূলত হিব্রু ভাষায় কথা বলতেন, কিন্তু মক্কায় এক ইয়েমেনি নারীর সঙ্গে বিবাহের পর তিনি আরবি ভাষা রপ্ত করেন। উভয় বংশই নুহ (আ.)-এর পুত্র সামের পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তবে শুধুমাত্র আদনানিরাই ইব্রাহিম (আ.)-এর বংশধর হিসেবে দাবি করতে পারে এবং নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর বংশতালিকাও এই আদনানি লাইনের মাধ্যমে ইব্রাহিম (আ.) পর্যন্ত গিয়েছে। আধুনিক ইতিহাসচর্চায় এই বংশতাত্ত্বিক কাঠামোর অভ্যন্তরীণ অসংগতি প্রকাশিত হয়েছে এবং দেখা গেছে, এটি ঐতিহাসিকভাবে পূর্ণ সমর্থনযোগ্য নয়।"
- ↑ Reuven Firestone (১৯৯০)। Journeys in Holy Lands: The Evolution of the Abraham-Ishmael Legends in Islamic Exegesis। SUNY Press। পৃষ্ঠা 72। আইএসবিএন 9780791403310।
- ↑ Göran Larsson (২০০৩)। Ibn García's Shuʻūbiyya Letter: Ethnic and Theological Tensions in Medieval al-Andalus। BRILL। পৃষ্ঠা 170। আইএসবিএন 978-9004127401।
- ↑ "MANICHEISM v. MISSIONARY ACTIVITY AND TECHNIQUE: Manicheism in Arabia"। ২০১৯-১১-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২৬।
- ↑ tavakoli, mohammadhadi। "Investigating the possibility of Manichaean presence in Hejaz during the pre-Islamic" (পিডিএফ)। Studies of Religions and Denominations।
- ↑ M. Tardieu, "Les manichéens en Egypte," Bulletin de la Société Française d'Egyptologie 94, 1982, pp. 5-19.।
- ↑ Al-Jallad, Ahmad; Sidky, Hythem (২০২২)। "A Paleo-Arabic inscription on a route north of Ṭāʾif"। Arabian Archaeology and Epigraphy। 33 (1): 202–215। ডিওআই:10.1111/aae.12203।
- ↑ MacDonald 2015, পৃ. 29।
- ↑ Al-Jallad 2020।
- ↑ Van Putten 2023।
- ↑ ক খ গ ঘ Cole 2020।
- ↑ Avanzini 2016, পৃ. 198–199।
- ↑ Avanzini 2016, পৃ. 201–202।
- ↑ Nebes 2023, পৃ. 336।
- ↑ Villeneuve 2004।
- ↑ MacDonald 2015b, পৃ. 44–56।
- ↑ Millar 2009।
- ↑ Klasova 2023, পৃ. 3–4।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- প্রাচীন আরব সম্পর্কে জোনা ল্যান্ডারিং এর নিবন্ধ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে