মদিনার সনদ
মদিনার সনদ (আরবি: صحيفة المدينة, সাহিফাত আল-মাদিনাহ; or: ميثاق المدينة, মীছাক্ক আল-মাদিনাহ) হলো ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে (অথবা ১লা হিজরি সালে) মক্কা থেকে মদিনায় গমনের (হিজরত) পর ইসলামের নবী মুহাম্মাদ কর্তৃক প্রণয়নকৃত শান্তিস্থাপনের একটি প্রাথমিক সংবিধান।[১] এটি মদিনার সংবিধান (دستور المدينة, দাস্তুর আল-মাদিনাহ) নামেও পরিচিত।
ইতিহাস[সম্পাদনা]
৬২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে সেপ্টেম্বর রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা নগরীতে হিজরত করেন। এসময় সেখানে বসবাসরত বানু আউস এবং বানু খাযরাজ সম্প্রদায় দুটির মধ্যে ছিল গোষ্ঠীগত হিংসা-বিদ্বেষ।[২] তাই কলহে লিপ্ত এ দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি স্থাপন ও মদিনায় বসবাসরত সকল গোত্রের মধ্যে সুশাসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠা লক্ষ্যে ইসলামের নবী মুহাম্মাদ ৪৭ ধারার একটি সনদ বা সংবিধান প্রণয়ন করেন যা ইতিহাসে 'মদিনার সনদ(Medina charter)' নামে পরিচিত।[৩][৪][৫] এটিই পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান। ইবনে হিশামের মতে এ সনদের ৫৩টি ধারার রয়েছে। উইলিয়াম মন্টগোমারি ওয়াটের মতে এই সনদের ধারার সংখ্যা ৪৭টি।[৬][৭][৮]
গঠন ও প্রভাব[সম্পাদনা]
এর প্রথম ১০ ধারায় বলা হয় যে, মুহাজির (দেশত্যাগী বা যারা মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিল) বানু আউফ, বানু কায়নুকা, বানু খাযরাজ, বানু সালাবা(জাফনা উপগোত্রের একটি শাখাগোত্র), বানু নাযির, বানু শুতাইবা, বানু জুরহাম, বানু সাঈদা, বানু হারিস, বানু জুশাম, বানু নাজ্জার, বানু আমর, বানু নাবিত ও বানু আউস পূর্বহারে মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত নিয়মনীতি এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে পণের মাধ্যমে বন্দীদের মুক্ত করবে। ১১ থেকে ২০ ধারায় মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক সম্পর্কিত আইন বিধৃত হয়। ২১ থেকে ২৬ ধারায় হত্যাকারীর উপযুক্ত শাস্তি, কোনো মুসলমান কোনো অন্যায়কারীকে আশ্রয় দিলে তার উপযুক্ত শাস্তি, কোনো বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে তার মীমাংসা পদ্ধতি, ধর্মীয় স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয়ক আইন সন্নিবেশিত হয়। ২৭ থেকে ৪৭(৫০) ধারায় সন্নিবেশিত হয় বিভিন্ন গোত্রের স্বরূপ সম্পর্কিত বিধান। পরবর্তী ধারাসমূহে যুদ্ধনীতি, নাগরিকদের ক্ষতির ক্ষতিপূরণ, নিজ নিজ আয়ব্যয় ও জীবিকা নির্বাহ, এ সনদে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে কেউ যুদ্ধে লিপ্ত হলে তার ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা, বন্ধুর দুষ্কর্ম, যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহ ও ব্যয়ভার বহন, সুনাগরিকের অধিকার, আশ্রয়দাতা ও আশ্রিতের সম্পর্ক, নারীর আশ্রয়, সনদের স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে শান্তিভঙ্গের আশঙ্কা দেখা দিলে করণীয়, কুরাইশদের ব্যাপারে ব্যবস্থা, মদিনার উপর অতর্কিত আক্রমণ হলে করণীয় ইত্যাদি সন্নিবেশিত হয়। বিশ্বের ইতিহাসে এটিই প্রথম লিখিত সন্ধিচুক্তি ও সংবিধান। ঐতিহাসিক পি.কে. হিট্টির মতে-" Out of the religious community of all Madinah the later and largest state of Islam arose" অর্থাৎ মদিনা প্রজাতন্ত্রই পরবর্তীকালে ইসলামী সাম্রাজ্যের ভিত্তিমূল স্থাপন করে। উক্ত সংবিধানে সকল পক্ষ মেনে নিয়ে স্বাক্ষর দান করেছিল। এই সনদে মদিনাকে একটি হারাম (حرم, "পবিত্র ভূমি") স্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়, যেখানে কোনো অস্ত্র বহন করা যাবেনা এবং কোনো প্রকার রক্তপাত ঘটানো যাবেনা।
মদিনা সনদের মূল বিষয়বস্তু[সম্পাদনা]
পরম করুণাময় ও দয়ালু আল্লাহর নামে। এটা হচ্ছে নবী মুহাম্মদ-এর পক্ষ থেকে লিপি। কুরাইশ ও ইয়াসরিবের মুমিন ও মুসলমানদের মধ্যে এবং যারা তাদের অধীনে, তাদের সাথে শামিল হবে বা তাদের সাথে জিহাদে মিলেমিশে কাজ করবে। মদিনা শরীফ পূর্ববর্তী নাম হলো "ইয়াসরীব" ছিল।[৯]
- অন্যদের মোকাবিলায় তারা এক উম্মত বলে গণ্য হবে।
- কুরাইশের মুহাজিরগণ, বানু আউফের লোকেরা (আনসারগণ), বানু সাঈদা, বানু হারিস, বানু জুশাম, বানু নাজ্জার, বানু আমর ইবনে আউফ, বানু নাবিত,বানু খাযরাজ ও বানু আউস তাদের পূর্ব প্রথানুসারেই রক্তপণ আদায় করবে এবং তাদের যুদ্ধবন্দীদের মুক্তিপণ পরিশোধ করে তাদের মুক্ত করবে। যাতে করে মুমিনদের মধ্যকার পারস্পারিক আচরণ ন্যায়ানুগ এবং ভারসাম্যপূর্ণ হয়।
- আর মুমিনদেরকে নিঃস্ব অভাবগ্রস্তরূপে ছেড়ে দেয়া হবে না। যাতে করে তারা ন্যায়ানুগভাবে মুক্তিপণ ও রক্তপণ পরিশোধ করতে পারে।
- কোন মুমিন ব্যক্তি অন্য মুমিন ভাইয়ের অনুমতি না নিয়ে অন্য কারো সাথে চুক্তিবদ্ধ হবে না।
- আল্লাহভীরু মুমিনরা ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে থাকবে তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অন্যায় করবে বা গুরুতর অবিচার, পাপ, সীমালংঘন বা মুসলিমদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে তৎপর হবে, তাদের সকলের সমবেত হস্ত তার বিরুদ্ধে উত্থিত হবে- যদিও সে তাদের কারো আপন উত্তরাধিকারীও হয়।
- কোন মুমিন ব্যক্তি কোন কাফিরের জন্যে কোন মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করবেনা বা কোন মুমিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন কাফিরকে সাহায্য করবেনা।
- নিঃসন্দেহে আল্লাহর জিম্মা বা অভয় অভিন্ন। তাদের যে কোন সাধারণ ব্যক্তি কাউকে অভয় দিয়ে সকলকে সে চুক্তির মর্যাদা রক্ষার দায়িত্বে আবদ্ধ করতে পারবে। আর মুমিনগণ অন্যান্য লোকের মোকাবিলায় পরস্পর ভাই ভাই।
- আর ইয়াহূদীদের মধ্যে যারা আমাদের আনুগত্য করবে, তারাও সাহায্য ও সমতার হকদার বলে গণ্য হবে, তাদের প্রতি জুলুমও হবেনা আর তাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্য করাও চলবেনা।
- আর মুসলমানদের সন্ধিও অভিন্ন সন্ধি। আল্লাহর রাহে যুদ্ধে কোন মুমিন ব্যক্তি অপর কোন মুমিন ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে শত্রুর সাথে সন্ধি করবেনা—যাবৎ না এ সন্ধি সকলের জন্যে সমান ও ন্যায়ানুগ হবে।
- এবং আমাদের পক্ষের শক্তিরূপে যারা আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করবে, তাদের একে অপরের পিছনে থাকবে।
- আর ঈমানদারগণ আল্লাহর রাহে মৃত তাদের একের রক্তের বদলা অপরে নেবে।
- আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে, মুমিন মুত্তাকীগণ সব চাইতে সহজ-সরল ও সঠিক পথে রয়েছে।
- আর কোন মুশরিক বা পৌত্তলিক ব্যক্তি কোন কুরাইশের সম্পদ বা প্রাণের আশ্রয়দাতা হবেনা এবং কোন মুমিন ব্যক্তিকে এ ব্যাপারে বাধা দিতে পারবেনা।
- আর যে ব্যক্তি কোন মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করবে আর সাক্ষ্য-প্রমাণে তা প্রমাণিতও হয়ে যাবে, তার উপর থেকে কিসাস গ্রহণ করা হবে হত্যার বদলে তাকে হত্যা করা হবে। হ্যা, যদি নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী রক্তপণ নিয়ে তাকে ছেড়ে দিতে রাযী হয়, আর সমস্ত মুমিনের তাতে সায় থাকে, তাহলে স্বতন্ত্র কথা। এ ছাড়া তার আর কোন বিকল্প ব্যবস্থা নেই (অর্থাৎ, এটা অবশ্য করণীয়)।
- আর যে মুমিন ব্যক্তি এই লিপির বক্তব্য স্বীকার করে নিয়েছে। আর সে আল্লাহ্ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস পোষণ করে, তার জন্যে কোন নতুন ফিতনা সৃষ্টিকারীকে সাহায্য করা বা তাকে আশ্রয় দান বৈধ হবেনা। যে ব্যক্তি তাকে সাহায্য করবে বা আশ্রয় দেবে, তার প্রতি আল্লাহর লা'নত ও গযব হবে কিয়ামতের দিনে এবং তার থেকে কোন ফিদয়া (মুক্তিপণ) বা বদলা গ্রহণ করা হবেনা।
- আর যখন তোমাদের মধ্যে কোন বিরোধ উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ্ তা'আলা ও মুহাম্মদ (সা)-এর নিকট তা উত্থাপন করতে হবে।
- আর ইয়াহুদীরা যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলিমগণের সঙ্গে মিলেমিশে যুদ্ধ করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা যুদ্ধের ব্যয়ও নির্বাহ করবে।
- বানু আউফ, বানু নাজ্জার, বানু হারিস, বানু সাঈদা, বানু জুশাম, বানু আউস ও বানু সালাবার ইয়াহুদীরা; জাফনা উপগোত্র যা সালাবার শাখাগোত্র, বানু শুতাইবার লোকজন, সা'লাবাদের মাওয়ালীরা মু'মিনদের সাথে একই উম্মতরূপে গণ্য হবে। ইয়াহুদীদের জন্যে তাদের ইহুদি ধর্ম, মুসলমানদের জন্যে তাদের ইসলাম ধর্ম, তাদের দাসদের এবং তাদের নিজেদের ব্যাপারে একথা প্রযােজ্য হবে। তবে যে ব্যক্তি জুলুম বা অপরাধ করবে, সে তার নিজকে ও স্ব গোত্রবাসীদেরকে ছাড়া অন্য কাউকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবেনা।
- এবং ইয়াহুদী শাখাগোত্রসমূহও তাদের মূল গোত্রের লোকদের সমান অধিকার লাভ করবে—বিশ্বস্ততায়, বিশ্বাস ভঙ্গে নয়।
- তাদের মধ্যকার কেউই মুহাম্মদ-এর অনুমতি ব্যতিরেকে যুদ্ধার্থে বহির্গত হবেনা।
- এবং যখমের প্রতিশোধ গ্রহণের পথে কোন বাধা-বিপত্তি সৃষ্টি করা হবেনা। যে ব্যক্তি রক্তপাত করবে, সে নিজে ও নিজ পরিজনদের জন্য ধ্বংস ডেকে আনবে। অবশ্য, যে অত্যাচারিত হয়েছে এবং (সে হিসাবে) আল্লাহর আনুকূল্য পাবে (তার কথা স্বতন্ত্র)।
- ইয়াহূদীদের উপর তাদের নিজেদের ব্যয়ভার বর্তাবে এবং মুসলিমগণের উপর তাদের নিজেদের ব্যয়ভার বর্তাবে।
- যে কেউ এই চুক্তিনামা গ্রহণকারী কোন পক্ষের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবে, তার বিরুদ্ধে একে অপরকে সাহায্য করবে এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও মঙ্গল কামনার সম্পর্ক থাকবে। একপক্ষ অপরপক্ষকে সুপরামর্শ দেবে। বিশ্বস্ততা সুরক্ষা ও শক্তিশালী করবে, বিশ্বাস ভঙ্গ বা বিশ্বাসঘাতকতা করবেনা।
- আর কোন পক্ষ তার মিত্র পক্ষের অপকর্মের জন্যে দায়ী হবেনা আর অত্যাচারিতই সাহায্যের হকদার বলে গণ্য হবে।
- আর ইয়াহুদীরা যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্বাসীদের সাথী ও সহযোদ্ধারূপে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারাও যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহ করবেন।
- আর ইয়াসবির উপত্যকা এই চুক্তিনামার সকল পক্ষের কাছে মহাপবিত্র ভূমি বলে গণ্য হবে।
- আর কোন পক্ষের আশ্রিত ব্যক্তি আশ্রয়দাতার সমান মর্যাদা ও অধিকার লাভ করবে—যে কোন ক্ষতিসাধন করবেনা এবং অপরাধ করবেনা।
- আর কোন নারীকে তার পরিবারের লোকজনের অনুমতি ব্যতিরেকে আশ্রয় দেয়া যাবেনা।
- এই চুক্তিনামা গ্রহণকারী পক্ষসমূহের মধ্যে যদি এমন কোন নতুন সমস্যার বা বিরোধের উদ্ভব হয়-যা থেকে দাঙ্গা বেধে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, তাহলে তা আল্লাহ তায়ালা এবং আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ-এর নিকট মীমাংসার্থে উত্থাপিত করতে হবে। এ চুক্তিনামায় যা কিছু রয়েছে এর প্রতি সর্বাধিক নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছেই খুবই পছন্দনীয়।
- কোন কুরাইশকে বা তাদের সাহায্যকারীকে নিরাশ্রয় দেওয়া চলবে।
- আর চুক্তির সকল পক্ষ ইয়াসবির আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে একে অপরকে সম্পূর্ণরূপে সাহায্য করবে।
- যখন তাদেরকে সন্ধির জন্য আহবান জানানো হবে, তখন তারা সন্ধিবদ্ধ হবে। অনুরূপ যখন তারা সন্ধির জন্যে আহবান জানাবে তখন মুমিনদেরকেও সন্ধির আহ্বানে সাড়া দিতে হবে। তবে, যদি কেউ ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়, তবে তার ক্ষেত্রে একথা প্রযোজ্য হবেনা।
- প্রত্যেককে তার নিজের দিকের প্রতিরোধের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে।
- আর আউসের ইহুদিরা—তারা নিজের গোত্রবাসীই হোক বা তাদের মাওয়ালীই হোক, এইচুক্তিতে শরীক পক্ষসমূহের সমান অধিকার লাভ করবে এই চুক্তির পক্ষসমূহের সাথেই সুসম্পর্কের ভিত্তিতে।
- আর এ চুক্তিনামা কোন অত্যাচারী বা অপরাধীর সহায়ক বিবেচিত হবেনা। যে ব্যক্তি যুদ্ধে বের হবে এবং যে ব্যক্তি মদীনায় বসা থাকবে, উভয়েই নিরাপত্তার হকদার বিবেচিত হবে; অত্যাচারী এবং অপরাধী এর ব্যতিক্রম বলে গণ্য হবে।
- আল্লাহ তাঁর রাসূল মুহাম্মদ ঐ ব্যক্তির পক্ষে রয়েছে,যে চুক্তিপালনে নিষ্ঠাবান ও আল্লাহকে ভয় করে।
- ইহুদীরা ও মুসলিমরা তাদের স্বযুদ্ধের ব্যয়ভার নিজের গোত্রবাসীরাই বহন করবে।আর যারা এই চুক্তিবদ্ধ হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে তাদের বিপক্ষে সাহায্য করা চুক্তিবদ্ধ সবার জন্য আবশ্যক হবে। চুক্তিবদ্ধ দলসমূহ মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক শুভকামনা ও সদুপদেশের মতো থাকবে এবং তাদের মাঝে অন্যায় ও অপরাধের পরিবর্তে উদারতা এবং মহানুভবতার সম্পর্ক বিরাজ করবে। নিশ্চয়ই মিত্রের সাথে সম্পাদিত সন্ধিচুক্তি লঙ্ঘন করবেনা। অবশ্যই নিপীড়িত,অত্যাচারিত, নির্যাতিত,শাসিত-শোষিতকে সম্পূর্ণরূপে সাহায্য করা হবে।
- মুমিনরা যতদিন যুদ্ধরত অবস্থায় থাকবে ইহুদীরাও তাদের সাথে মিলিতভাবে যুদ্ধব্যয় বহন করবে।
- ইয়াসরীব উপত্যকা এই চুক্তিবদ্ধ শরীকদের জন্য সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ।
- প্রতিবেশীরা স্বগোত্রলোকদের মতই নিরাপত্তা ভোগ করবে, তাদের কোনো ক্ষতি করবেনা আর তারাও কোনো অপরাধ লিপ্ত হবেনা।
- নগরবাসীর অনুমতি ব্যতীত কোনো মদিনার বাহিরে ব্যক্তি নিরাশ্রয় দেয়া যাবে।
- ইয়াসরীব বহিশত্রুর আক্রমিত হলে প্রত্যেক চুক্তিবদ্ধ শরীকদলের উপর তাদের সম্মুখে নগরাংশে সুরক্ষা করার দায়িত্ব-কর্তব্য বর্তাবে। ইহুদিদেরকে কোন সন্ধি ও মৈত্রী স্থাপন জন্য আহ্বান জানানো হলে তারা সন্ধি ও মৈত্রী স্থাপন করবে।একইভাবে মুসলিমদেরকে কোন সন্ধি ও মৈত্রী স্থাপনের জন্য আহ্বান জানানো হলে মুমিনদের সন্ধি ও মৈত্রী স্থাপন করা বাধ্যতামূলক। তবে ধর্মীয় কারণে যুদ্ধ হলে সেকথা ভিন্ন ও পৃথক।
- এটি আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর ঘোষণাপত্র যা কুরাইশদের অন্তগর্ত মুসলিম ও মুমিনদের এবং ইয়াসরীববাসী ও তাদের অধীনস্থ হয়ে যারা সম্মিলিতভাবে জিহাদে অংশগ্রহণ করবে তাদের জন্য প্রযোজ্য।
- বানু আউস গোত্রের ইহুদিরা এবং তাদের মিত্ররা এই চুক্তিতে অন্তগর্ত অন্যান্য শরীকদলের মত সমান অধিকার ও দায়িত্ব রাখেন। এই ঘোষণাপত্র সম্পাদকদের কাছে থেকে তারা সম্পূর্ণরূপে ও ন্যায়সঙ্গতভাবে তা লাভ করবে। অপরাধী ব্যক্তি কেবল নিজের অপরাধের দায়িত্ব বহন করবে।যে ব্যক্তি ন্যায়নিষ্ঠার সাথে চুক্তি পালন করবে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার সহায়ক হবেন।
- (ক)এই চুক্তিতে কোনো অত্যাচারী-অপরাধী বা চুক্তিভঙ্গকের জন্য একটি আক্রমণকবচ।যে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে তার জন্য রয়েছে সম্পূর্ণরূপে নিরাপত্তা বন্দোবস্ত আর যে ব্যক্তি যুদ্ধ অংশ নিবেনা নিষ্ক্রিয় হয়ে বাড়ীতে বসে থাকবে তার জন্য রয়েছে সম্পূর্ণরূপে নিরাপত্তা বন্দোবস্ত।(খ)প্রত্যেকেরই যেদিকে থেকে তার অংশ সেদিকে পাবে।
- আল-আউসের ইহুদীরা, তাদের মুক্তিদাতারা এবং নিজেরা এই দলিলের লোকদের কাছ থেকে বিশুদ্ধভাবে আনুগত্যের সাথে এই দলিলের লোকদের সাথে একই অবস্থান করে। আনুগত্য বিশ্বাসঘাতকতা বিরুদ্ধে একটি সুরক্ষা. যে অর্জন করে তার নিজের জন্যই অর্জন করা উচিত। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই দলিল অনুমোদিত ও সম্মতিযোগ্য।
- এই কাজটি অন্যায়কারী ও পাপীকে আক্রমণ করবে। যে ব্যক্তি যুদ্ধ করতে বের হয় এবং যে ব্যক্তি শহরে বাড়িতে থাকে সে সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ থাকে যদি না সে অন্যায় ও পাপ না করে থাকে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ভাল এবং খোদাভীরু মানুষের মহারক্ষক এবং মুহাম্মদ (সঃ) মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রেরিত একজন(খাতামুন নাবিয়্যিন) নবী ও রাসূল।
বানু কায়নুকা গোত্রের নির্বাসন[সম্পাদনা]
ইসলামের ঐতিহ্যগত ইতিহাস অনুসারে, ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে বানু কায়নুকা আক্রমণ সঙ্ঘটিত হয়[১০] যা বানু কায়নুকার বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযান নামেও পরিচিত।[১১] বানু কায়নুকা ছিল একটি ইহুদি গোত্র যাকে ইসলামের নবি মুহাম্মাদ মদিনা সনদ নামক চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করেছিলেন,[১২][১৩] কারণ তারা এক মুসলিম মহিলার কাপড় পেরেকের সাথে আটকে দিয়েছিল, যার ফলে তার কাপড় সম্পূর্ণ ছিঁড়ে গিয়ে তিনি বিবস্ত্র হয়ে পড়েন। এর প্রতিশোধে এক মুসলিম যুবক এ ঘটনায় সম্পৃক্ত ইহুদিকে হত্যা করেন, এবং তা দেখে ইহুদিরা ওই মুসলিম যুবকটিকে মেরে ফেলে। এই ঘটনায় প্রতিহিংসার আগুন দুই দলের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে এবং মুসলিম ও বনু কায়নুকার মাঝে শত্রুতা ফুলে ফেঁপে উঠে, যার ফলে মুসলিমগণ বানু কায়নুকার দুর্গ অবরোধ করে।[১২][১৪][১৫]:১২২ গোত্রটি অবশেষে নবী মুহাম্মাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে, মুহাম্মাদ প্রথমে গোত্রের সকল সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে চাইলেও পরবর্তীতে আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের গোত্রীয় ব্যক্তিগত আনুগত্যের দায়িত্ব ও অনুরোধে তিনি এই সিদ্ধান্ত পরিত্যাগ করেন এবং তাদের শুধুমাত্র বহিষ্কার করেন।[১৬]
আরও দেখুন[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ Watt. Muhammad at Medina. pp. 227-228 Watt argues that the initial agreement was shortly after the hijra and the document was amended at a later date specifically after the battle of Badr (AH [anno hijra] 2, = AD 624). "The Constitution of Medina: A Reconsideration." Israel Oriental Studies 4 (1974): p. 45.
- ↑ Ibid, Serjeant, page 4.
- ↑ R. B. Serjeant, "Sunnah Jāmi'ah, pacts with the Yathrib Jews, and the Tahrīm of Yathrib: analysis and translation of the documents comprised in the so-called 'Constitution of Medina'", Bulletin of the School of Oriental and African Studies (1978), 41: 1-42, Cambridge University Press.
- ↑ See: *Reuven Firestone, Jihād: the origin of holy war in Islam (1999) p. 118; *"Muhammad", Encyclopedia of Islam Online
- ↑ Watt. Muhammad at Medina and R. B. Serjeant "The Constitution of Medina." Islamic Quarterly 8 (1964) p. 4.
- ↑ "মদিনা সনদ পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান"। Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-০৩।
- ↑ "মদিনা সনদ : প্রথম লিখিত সংবিধান | কালের কণ্ঠ"। Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-০৩।
- ↑ "স্বাধীনতা ও মদিনা সনদ"। SAMAKAL (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-০৩।
- ↑ আবূ মুহাম্মদ আবদুল মালিক ইব্ন হিশাম মুআফিরী; সিরাতুন্নবী ২ p. ১৭৫-১৮১
- ↑ Mubarakpuri, Saifur Rahman Al (২০০৫), Ar-Raheeq Al-Makhtum, Darussalam Publications, পৃষ্ঠা 117
- ↑ Mubarakpuri, Saifur Rahman Al (২০০২), When the Moon Split, DarusSalam, পৃষ্ঠা 159, আইএসবিএন 978-9960-897-28-8
- ↑ ক খ Sirat Rasul Allah [The Life of Muhammad], transl. Guillaume, পৃষ্ঠা 363 Authors list-এ
|প্রথমাংশ1=
এর|শেষাংশ1=
নেই (সাহায্য) - ↑ Watt (১৯৫৬), Muhammad at Medina :২০৯
- ↑ Mubarakpuri, Saifur Rahman Al (২০০৫), The sealed nectar: biography of the Noble Prophet, Darussalam Publications, পৃষ্ঠা 284, আইএসবিএন 978-9960-899-55-8
- ↑ Stillman, The Jews of Arab Lands: A History and Source Book .
- ↑ Cook, Michael, Muhammad, পৃষ্ঠা 21 .
বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

- মূল রচনা ইংরেজি অনুবাদ সহ
- মদিনার সনদ (ইংরেজি)