লাত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আল লাত
খেঁজুর পাতা হাতে সিংহের সাথে আল লাত, বাআলশামিন মন্দির, ১ম খ্রিস্টাব্দ। দামেস্ক, সিরিয়া
প্রধান অর্চনাকেন্দ্র centerপালমিরা, তায়েফ
প্রতীকসিংহ, গ্যাজেল, চাঁদ, ঘনাকার পাথর
অঞ্চলআরব
ব্যক্তিগত তথ্য
মাতাপিতাপ্রাক-ইসলামী আরবে ধর্ম#সৃষ্টিকর্তা[১][২][৩][৪]
সহোদরআল উজ্জা, মানাত
সঙ্গীLion of Al-lāt (Palmyrene tradition)[৫]
Dushara (Nabataean tradition)
সন্তানদুশারা (নবতাই ঐতিহ্যে)
সমকক্ষ
গ্রিক সমকক্ষএথেনা
রোমান সমকক্ষমিনার্ভা
কার্থাজিনিয়ান সমকক্ষআল্লাতু
ঊটের পিঠে লাত, ১০০ খ্রিস্টাব্দ, তায়েফ, সৌদি আরব

লাত বা আল-লাত (আরবী: اللات) ছিলেন আরবের প্রাক-ইসলামী যুগের একজন দেবী। তিনি মক্কার তিনজন প্রধান দেবীর একজন। মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন শরীফের ৫৩ নম্বর সুরা নজমের ১৯ নম্বর আয়াত বা বাক্যে লাতের কথা বর্ণিত হয়েছে যা থেকে জানা যায় ইসলাম পূর্ববর্তী সময়ে আরবের অধিবাসীগন মানাতউজ্জার সাথে লাতকে আল্লাহর মেয়ে হিসেবে বিবেচনা করত।

মুহাম্মদ এর নির্দেশে তায়েফ এ লাতের মন্দির গুড়িয়ে দেয়া হয়।[৬][৭][৮] তায়েফের গোত্রবাসীদের ক্ষমা করার পূর্বে লাতের মূর্তি ধ্বংস করার দাবী করেছিলেন মুহাম্মদ ।[৯]

বর্ণনা[সম্পাদনা]

সিংহের পিঠে খেঁজুর পাতা হাতে লাত, পালমিরা
লাত-মিনার্ভা। ২য় খ্রিস্টাব্দ। সিরিয়ার আস সুয়েদায় প্রাপ্ত। দামাস্কাসের জাতীয় জাদুঘর

পুরাতন উৎস থেকে জানা যায় আল-লাত ছিলো মেসোপটেমীয়দের পাতালের[১০][১১] দেবী, যিনি এরেশকিগাল নামে পরিচিত, কার্থেজে তাকে আল্লাতু[১২] নামে ডাকা হতো।

পেত্রার নবতাঈগণ এবং হাত্রার জনসাধারণ লাতের পূজা করতো। তাকে গ্রীক দেবী এথেনাটাইচি এবং রোমান দেবী মিনার্ভার সাথে তুলনা করা হতো। প্রাচীন পূঁথিতে তাকে মহান দেবী নামে সম্বোধন করা হয়েছে।[১৩]

গ্রীক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম শতকে তার লেখায় লাতকে আফ্রোদিতির সমতুল্য বলে উল্লেখ করেছেন।

অ্যাসিরিয়ানরা আফ্রোডাইটকে মাইলিটা, আরবীয়রা আলিলাট [গ্রীক বানান: Ἀλιλάτ],এবং পারসিকদের মিথ্রা বলে। এছাড়াও সেই দেবতা ভারতীয় দেবতা মিত্রের সাথে যুক্ত।[১৪]

হেরোডোটাসের মতানুসারে প্রাচীন আরবগণ দুইজন ঈশ্বরে বিশ্বাস করতঃ

তারা ডায়োনিসাস এবং স্বর্গীয় আফ্রোডাইট ছাড়া অন্য কোনো দেবতাকে বিশ্বাস করে না; এবং তারা বলে যে তারা ডায়োনিসাসের মতো চুল পরে, মাথার চারপাশে কেটে দেয় এবং মন্দিরগুলি শেভ করে। তারা ডায়োনিসাসকে ডাকে,ওরোটাল্ট; এবং অ্যাফ্রোডাইট,আলিলাত

[১৫]

Museum of Fine Arts of Lyo

আল কোরআনের সুরা নজমে উজ্জা এবং মানাতের সঙ্গে লাতকে উল্লেখ করা হয়েছে ১৯ নম্বর আয়াতে। আল কোরআন, সুরা নজম, আয়াত ১৯,২০

হিশাস্ম ইবনে আল কালবি লিখিত কিতাব আল আসনাম (মূর্তি সম্পর্কিত বই) থেকে জানা যায় ইসলাম পূর্ববর্তী যুগে আরবগণ বিশ্বাস করতেন লাত কাবা শরীফে বাস করেন। এবং সেখানেও তার একটি মূর্তি স্থাপিত ছিলো।

আল-লাত এর দায়িত্বে ছিল সাকিফ গোত্রের বনু আত্তাব ইবনে মালিক, যে এর উপর একটি প্রাসাদ নির্মাণ করে। কুরাইশসহ অন্যান্য আরবরা একে অনেক সম্মান করত। তারা এই দেবীর নামে তাদের সন্তানদের নাম রাখত 'জায়েদ আল-লাত' এবং 'তাইম আল-লাত' এভাবে। আল তায়েফ মসজিদের মিনারের বামদিকে এটি দাঁড় করানো ছিল। সাকিফ গোত্র ইসলাম গ্রহণ না করা পর্যন্ত আল লাতের উপাসনা অব্যাহত রেখেছিল। যখন আল্লাহর নবী (হযরত মুহাম্মদ সা.) আল মুগিরাহ ইবনে-শুবাহকে পাঠান, তিনি একে ধ্বংস করেন এবং তার মন্দির মাটির সাথে মিশিয়ে দেন।[১৬][১৭][১৮]

মন্দির ধ্বংস[সম্পাদনা]

তায়েফ বাসী লাতের পূজা করত।[৮] তাবুক যুদ্ধ[৬] পরিচালিত হওয়ার একই বছরে ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে[৭] মুহাম্মদ এর নির্দেশে আবু সুফিয়ান ইবনে হার্বের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে তায়েফে লাতের মন্দির ধ্বংস করা হয়। এর পূর্বে ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী বনু হাওয়াজিন গোত্র মালিকের নেতৃত্রে তায়েফ অবরোধ করে রাখে।[৯]

আরো পড়ুন[সম্পাদনা]

গ্রন্থ[সম্পাদনা]

  • বাইবেল শব্দের হিব্রু এবং আরামীয় অভিধান (Strong's Hebrew and Aramaic Dictionary of Bible Words)
  • Georgii Wilhelmi Freytagii : Lexicon Arabico-Latinum. Librairie du Liban, বৈরুত, ১৯৭৫

তথ্য উৎস[সম্পাদনা]

  1. Berkey 2003, পৃ. 42।
  2. Robinson 2013, পৃ. 75।
  3. Peters 1994, পৃ. 110।
  4. Peterson 2007, পৃ. 21।
  5. Butcher 2003, পৃ. 309।
  6. Tabari, Al (২৫ সেপ্টে ১৯৯০), The last years of the Prophet (translated by Isma'il Qurban Husayn), State University of New York Press, পৃষ্ঠা 46, আইএসবিএন 978-0887066917 
  7. Hawarey, Dr. Mosab (২০১০)। The Journey of Prophecy; Days of Peace and War (Arabic)। Islamic Book Trust। ২২ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১৪ Note: Book contains a list of battles of Muhammad in Arabic, English translation available here ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ আগস্ট ২০১৪ তারিখে, and archive of page
  8. Muir, William (আগস্ট ১৮৭৮), The life of Mahomet (Full free digitized version), Kessinger Publishing Co, পৃষ্ঠা 207 
  9. Muir, William (আগস্ট ১৮৭৮), The life of Mahomet (Full free digitized version), Kessinger Publishing Co, পৃষ্ঠা 205 
  10. The Dawn of Civilisation, by: Gaston Maspero
  11. «A History Of Art In Chaldæa & Assyria» Georges Perrot, Professor in The Faculty of Letters, Paris; Member of The Institute, and Charles Chipiez. New York, 1884.
  12. Encyclopedia of Gods, Michael Jordan, Kyle Cathie Limited, 2002
  13. Healey, John F. (২০০১)। "4"। The Religion of the Nabataeans: A Conspectus। Religions in the Graeco-Roman World। 136। Boston: Brill। পৃষ্ঠা 107–119। আইএসবিএন 90-04-10754-1 
  14. Histories I:131
  15. Histories III:8
  16. Faris 1952, পৃ. 14–15.
  17. "Oxfordislamicstudies.com"। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১৪ 
  18. Mify narodov mira 1984. Article: Allat