সূরা নাস
| শ্রেণী | মাদানী সূরা |
|---|---|
| নামের অর্থ | মানবজাতি |
| অন্য নাম | মানুষ |
| পরিসংখ্যান | |
| সূরার ক্রম | ১১৪ |
| আয়াতের সংখ্যা | ৬ |
| পারার ক্রম | ৩০ পারা |
| রুকুর সংখ্যা | ১ |
| সিজদাহ্র সংখ্যা | নেই |
| শব্দের সংখ্যা | ২০ |
| অক্ষরের সংখ্যা | ৮০ |
| ← পূর্ববর্তী সূরা | সূরা ফালাক |
| আরবি পাঠ্য · বাংলা অনুবাদ | |
সূরা আন-নাস (আরবি: سورة الناس; মানবজাতি) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ১১৪ তম এবং সর্বশেষ সূরা; এর আয়াত, অর্থাৎ বাক্য সংখ্যা ৬ এবং রূকু, তথা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ১। সূরা আন-নাস মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে; যদিও কোন কোন বর্ণনায় একে মক্কায় অবতীর্ণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়।[১] এর ছয় আয়াতে শয়তানের অনিষ্ট থেকে সুরক্ষার জন্য সংক্ষেপে আল্লাহর নিকট প্রার্থণা করা হয়। এই সূরাটি এবং এর পূর্ববর্তী সূরা আল-ফালাককে একত্রে মু'আওবিযাতাইন (আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার দু'টি সূরা) নামে উল্লেখ করা হয়। অসুস্থ অবস্থায় বা ঘুমের আগে এই সূরাটি পড়া একটি ঐতিহ্যগত সুন্নত।[২]
নামকরণ
[সম্পাদনা]সূরা আল-ফালাক ও সূরা আন-নাস আলাদা আলাদা সূরা হলেও এদের পারস্পরিক সম্পর্ক এত গভীর ও উভয়ের বিষয়বস্তু পরস্পরের সাথে এত বেশি নিকট সম্পর্কিত যে এদেরকে একত্রে “মু’আওবিযাতাইন” (আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার দু’টি সূরা) নামে ডাকা হয়; আর এই সূরা দু’টি নাযিলও হয়েছে একই সাথে একই ঘটনার পরি-প্রেক্ষিতে।[৩][৪][৫]
| কুরআন |
|---|
| ধারাবাহিক নিবন্ধশ্রেণীর অংশ |
![]() |
শানে নুযূল
[সম্পাদনা]সূরা ফালাক ও পরবর্তী সূরা আন নাস একই সাথে একই ঘটনায় অবতীর্ণ হয়েছে। মুসনাদে আহমদে বর্ণিত আছে, জনৈক ইহু্দী রসূলুল্লাহ্ (সাঃ)- এর উপর জাদু করেছিল। ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। জিবরাঈল আগমন করে সংবাদ দিলেন যে, জনৈক ইহু্দী জাদু করেছে এবং যে জিনিসে জাদু করা হয়েছে, তা অমুক কুপের মধ্যে আছে। রসূলুল্লাহ্ লোক পাঠিয়ে সেই জিনিস কূপ থেকে উদ্ধার করে আনলেন। তাতে কয়েকটি গিরু ছিল। তিনি এই সূরা দুটি পড়ে ফুক দেওয়ায় গিরুগুলো সাথে সাথে খুলে যায় এবং তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে শয্যা ত্যাগ করেন।[৬]
হযরত আয়েশা থেকে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ্ - এর উপর জাদু করলে তার প্রভাবে তিনি মাঝে মাঝে দিশেহারা হয়ে পড়তেন এবং যে কাজটি করেননি, তাও করেছেন বলে অনুভব করতেন। একদিন তিনি হযরত আয়েশা -কে বললেনঃ আমার রোগটা কি, আল্লাহ্ তা'আলা তা আমাকে বলে দিয়েছেন। (স্বপ্নে) দুব্যক্তি আমার কাছে আসল এবং একজন শিয়রের কাছে ও অন্যজন পায়ের কাছে বসে গেল। শিয়রের কাছে উপবিষ্ট ব্যক্তি অন্য জনকে বলল, তাঁর অসুখটা কি? অন্যজন বললঃ ইনি জাদুগ্রস্ত। প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলঃ কে জাদু করেছে? উত্তর হল, ইহুদীদের মিত্র মুনাফিক লবীদ ইবনে আ'সাম জাদু করেছে। আবার প্রশ্ন হলঃ কি বস্তুতে জাদু করেছে? উত্তর হল, একটি চিরুনীতে। আবার প্রশ্ন হল, চিরুনীটি কোথায়? উত্তর হল, খেজুর ফলের আবরণীতে 'বির যরোয়ান' কূপে একটি পাথরের নিচে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ তিনি কূপে গেলেন এবং বললেনঃ স্বপ্নে আমাকে এই কূপই দেখানো হয়েছে। অতঃপর চিরুনীটি সেখান থেকে বের করে আনলেন।[৭]
আয়াতসমূহ ও অর্থ
[সম্পাদনা]- بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে।
- قُلۡ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلنَّاسِ
ক্বুল আউযু বিরাব্বিন নাস।
বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি মানুষের পালনকর্তার - مَلِكِ ٱلنَّاسِ
মালিকিন্নাস।
মানুষের অধিপতির। - إِلَـٰهِ ٱلنَّاسِ
ইলাহিন্নাস।
মানুষের মা'বুদের। - مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ
মিন শাররীল ওয়াস ওয়াসিল খান্নাস।
তার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্মগোপন করে। - الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ
আল্লাযি ইউওয়াস ইসু ফী সুদুরিন্নাস।
যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে। - مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ
মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাস।
জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।
| আরবি ভাষায় | উচ্চারণ | বাংলায় অনুবাদ |
|---|---|---|
| বিস্মিল্লাহির রাহ্মানির রাহীম | ||
|
قُلۡ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلنَّاسِ |
ক্বুল আউযু বিরাব্বিন নাস। |
বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি মানুষের পালনকর্তার। |
হাদিস
[সম্পাদনা]- আবু দাউদ, তিরমিযী ও নাসায়ীর এক দীর্ঘ রেওয়ায়েতে রসুলুল্লাহ বলেনঃ
যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল সূরা এখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করে তা তাকে বালা-মুসীবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে যথেষ্ট হয়। - (ইবনে-কাসীর)[৮]
- সহীহ মুসলিমে ওকবা ইবনে আমের -এর বর্ণিত হাদীসে রসূলুল্লাহ বলেনঃ
তোমরা লক্ষ্য করেছ কি, অদ্য রাত্রিতে আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি এমন আয়াত নাযিল করেছেন, যার সমতুল্য আয়াত দেখা যায় না। অর্থাৎ ক্বুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক এবং ক্বুল আউযু বিরাব্বিন নাস আয়াতসমূহ। অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, তওরাত, ইঞ্জীল, যাবুর এবং কোরআনেও অনুরূপ অন্য কোন সূরা নেই।
- এক সফরে রসূলুল্লাহ ওকবা ইবনে আমেন -কে সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পাঠ করালেন, অত:পর মাগরিবের নামাযে এ সূরাদ্বয়ই তেলাওয়াত করে বললেনঃ
অন্য হাদীসে তিনি প্রত্যেক নামাযের পর সূরাদ্বয় পাঠ করার আদেশ করেছেন। - (আবু দাউদ, নাসায়ী)এই সূরাদ্বয় নিদ্রা যাওয়ার সময় এবং নিদ্রা শেষে বিছানা থেকে উঠার সময়ও পাঠ করো।
- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হাবীব বর্ণনা করেন,
- (মাযহারী)[৯]এক রাত্রিতে বৃষ্টি ও ভীষণ অন্ধকার ছিল। আমরা রসূলুল্লাহ -কে খুঁজতে বের হলাম। যাখন তাকে পেলাম, তখন প্রথমেই তিনি বললেনঃ বল। আমি আরয করলাম, কি বলব? তিনি বললেনঃ সূরা এখলাস ও কূল আউযু সূরাদ্বয়। সকাল-সন্ধ্যায় এগুলো তিন বার পাঠ করলে তুমি প্রত্যেক কষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ মওদুদী, সাইয়েদ আবুল আ'লা (১৯৭২)। তাফহীমুল কুরআন। উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>ট্যাগে অবৈধ প্যারামিটার - ↑ ইমাম বুখারী। সহীহ আল-বুখারী। পৃ. ৫০১৭ নং হাদীস। উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>ট্যাগে অবৈধ প্যারামিটার - ↑ শাফী', মুহাম্মদ (১৯৯১)। তফসীর মাআরেফুল ক্বোরআন। খাদেমুল-হারামাইন বাদশাহ ফাহদ কোরআন মুদ্রণ প্রকল্প, মদীনা মোনাওয়ারা, সৌদী আরব। উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>ট্যাগে অবৈধ প্যারামিটার - ↑ বায়হাকী, ইমাম (১৯৯০)। দালায়েলে নবুওয়াত। উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>ট্যাগে অবৈধ প্যারামিটার - ↑ "সূরার নামকরণ"। www.banglatafheem.com। তাফহীমুল কোরআন, ২০ অক্টোবর ২০১০। সংগ্রহের তারিখ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
{{ওয়েব উদ্ধৃতি}}:|প্রকাশক=-এ ইটালিক বা গাঢ় লেখা অনুমোদিত নয় (সাহায্য);|সংগ্রহের-তারিখ=এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] উদ্ধৃতি ত্রুটি:<ref>ট্যাগে অবৈধ প্যারামিটার - ↑ তফসীর মাআরেফুল ক্বোরআন (১১ খন্ডের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা)। উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>ট্যাগে অবৈধ প্যারামিটার - ↑ সহীহ্ বোখারী শরীফ। উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>ট্যাগে অবৈধ প্যারামিটার - ↑ মারেফুল কোরআন, পৃষ্ঠা নং ১৪৮৩। উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>ট্যাগে অবৈধ প্যারামিটার - ↑ মারেফুল কোরআন, পৃষ্ঠা নং ১৪৮৪-৮৫ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>ট্যাগে অবৈধ প্যারামিটার
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- ডিজিটাল 'আল কোরআন' - ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ।
- কোরআন শরীফ.অর্গ।

