সম্প্রদায়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
একটি সম্প্রদায়

সম্প্রদায় হলো ক্ষুদ্র বা বৃহৎ জনগোষ্ঠী যাদের মধ্যে কিছু বিষয়; যেমন সামাজিক প্রথা, ধর্ম, মূল্যবোধসামাজিক পরিচয়ের মিল থাকে। সম্প্রদায় প্রায়শই একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবস্থানের (যেমন: দেশ, শহর, বা গ্রাম) ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। তবে সব ক্ষেত্রে নয়। নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবস্থানের বাইরেও দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে উঠলে তাকে সম্প্রদায় বলা হয়। এমন সম্প্রদায়ের একটি ভালো উদাহরণ হলো ইন্টারনেট সম্প্রদায়। মানুষ এই ধরনের সামাজিক সম্পর্ককে তাদের পরিচয়, রীতিনীতি ও সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে; যেমন পরিবার, কর্মক্ষেত্র, সরকার, সমাজ, বা মানবসেবায় ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে।[১][২] যদিও সম্প্রদায় বলতে ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যক্তিগত সামাজিক সম্পর্ককে বুঝানো হয়, "সম্প্রদায়" বলতে বৃহৎ জনগোষ্ঠী, যেমন জাতীয় সম্প্রদায়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, ভার্চুয়াল সম্প্রদায়ের সাথে একাত্মতাও বুঝানো হয়।

বিভিন্ন শাখার দৃষ্টিভঙ্গি[সম্পাদনা]

সম্প্রদায় অধ্যয়ন[সম্পাদনা]

সম্প্রদায় অধ্যয়ন হল সমাজবিজ্ঞাননৃবিজ্ঞান এবং নৃকুলবিদ্যার সামাজিক গবেষণা পদ্ধতি ও অংশগ্রহণকারী পর্যবেক্ষণের গবেষণার ক্ষেত্র। বিশ্বের বিভিন্ন পাঠ্যক্রমে সম্প্রদায় অধ্যয়ন নৃবিজ্ঞান বা সমাজবিজ্ঞানের উপশাখা হিসেবে বা স্বাধীন শাখা হিসেবে পড়ানো হয়। এই পাঠ্যক্রম প্রায়শই আন্তঃবিষয়ক এবং সম্পূর্ণ তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে না সাজিয়ে ব্যবহারিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সাজানো হয়।[৩] আবার সম্প্রদায় অধ্যয়ন অন্য ক্ষেত্রের সাথেও মিলিয়ে পড়ানো হয়, যেমন "নগর ও সম্প্রদায় অধ্যয়ন", "স্বাস্থ্য ও সম্প্রদায় অধ্যয়ন", বা "পরিবার ও সম্প্রদায় অধ্যয়ন"।[৪]

সামাজিক বিজ্ঞানের দর্শন[সম্পাদনা]

সামাজিক বিজ্ঞানের দর্শন হল সামাজিক বিজ্ঞান, তথা সমাজবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের যুক্তি ও পদ্ধতি অধ্যয়ন। সামাজিক বিজ্ঞানের দার্শনিকগণ সামাজিক ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের পার্থক্য ও সাদৃশ্য, সামাজিক ঘটনাবলীর সম্পর্কের কারণ, সামাজিক আইনের সম্ভাব্য অস্তিত্ব, এবং সংগঠন ও এজেন্সির তাত্ত্বিক গুরুত্ব বিষয়ে আলোকপাত করে থাকেন।

নৃবিজ্ঞান[সম্পাদনা]

সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান হল নৃবিজ্ঞানের একটি শাখা যেখানে মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করা হয়। ইহা সামাজিক নৃবিজ্ঞানের বিপরীত। সামাজিক নৃবিজ্ঞানে বলা হয় সাংস্কৃতিক পার্থক্য হল নৃতাত্ত্বিক ধ্রুবকের একটি উপশাখা। সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের কয়েকটি পদ্ধতি হল অংশগ্রহণকারী পর্যবেক্ষণ (ফিল্ডওয়ার্কও বলা হয় কারণ নৃতাত্ত্বিকগণ গবেষণার স্থানে অনেক সময় কাটিয়ে থাকেন), সাক্ষাৎকার ও জরিপ[৫]

প্রত্নতত্ত্ব[সম্পাদনা]

প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় "সম্প্রদায়" শব্দটি দুই ভাবে ব্যবহৃত হয়। প্রথম অনানুষ্ঠানিক সংজ্ঞায় বলা হয় সম্প্রদায় হল এমন একটি স্থান যেখানে মানুষ বসবাস করে। ফলে তা প্রাচীন সময় থেকে চলে আসা বসতি, গ্রাম, শহর বা নগরের সমার্থক। দ্বিতীয় সংজ্ঞা অনুসারে সম্প্রদায়কে অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয়ের সমার্থক হিসেবে উল্লেখ করা হয়: সম্প্রদায় হল পাশাপাশি বসবাসরত মানুষদের একটি দল যারা সামাজিকভাবে একে অপরের সাথে যোগাযোগ ও ভাবের আদান-প্রদান করে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ অল্প মাত্রায় হলে প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য বের করা কষ্টসাধ্য হয়ে পরে। প্রত্নতত্ত্ববিদগণ অতীতের সম্প্রদায়ের ধারণা পেতে সাধারণত বস্তুবাদী সংস্কৃতির সাদৃশ্যতাকে ব্যবহার করে থাকেন, যেমন বাড়িঘরের ধরন বা মৃৎশিল্পের নির্মাণশৈলী। এই ধারণার কারণ হিসেবে তার ব্যাখ্যা করেন যে একই সামাজিক সম্প্রদায়ের বাড়িঘরের ধরন ও মৃৎশিল্পের নির্মাণশৈলীর মধ্যে সাদৃশ্যতা থাকবে যা অন্য সম্পদায়ের সাথে থাকবে না।[৬][৭]

মনোবিজ্ঞান[সম্পাদনা]

সম্প্রদায় মনোবিজ্ঞান ব্যক্তিকেন্দ্রিক থেকে শুরু করে বৃহত্তর সমাজ পর্যন্ত বিষয় নিয়ে গবেষণা করে এবং ব্যক্তির সাথে সম্প্রদায় ও সমাজের সম্পর্ক নির্ণয় করে।[৮] সম্প্রদায় মনোবিজ্ঞানীগণ একটি গোষ্ঠী, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান, সম্প্রদায়, ও সমাজের মধ্যে একজন ব্যক্তির জীবনের মান খুঁজে বের করেন। তাদের লক্ষ্য হল সম্মিলিত গবেষণা ও কাজের মাধ্যমে জীবনের মান উন্নয়ন করা।[৯]

সম্প্রদায়ের ধরন[সম্পাদনা]

সম্প্রদায়কে বিভিন্ন ভাগে শ্রেণিবিভাগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হল:

  • অবস্থান-ভিত্তিক সম্প্রদায়: স্থানীয় মহল্লা থেকে শুরু করে, উপশহর, গ্রাম, শহর, অঞ্চল, দেশ বা সমগ্র গ্রহ।
  • পরিচয়-ভিত্তিক সম্প্রদায়: স্থানীয় দল থেকে শুরু করে, উপ-সংস্কৃতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, ধর্মীয় গোষ্ঠী, একাধিক সংস্কৃতি, বা বিশ্বায়নের ফলে বর্তমান সময়ের বৈশ্বিক সংস্কৃতি।
  • সংঘ-ভিত্তিক সম্প্রদায়: পরিবার থেকে শুরু করে বিভিন্ন নেটওয়ার্ক-ভিত্তিক সমিতি, কয়েকটি সংঘের সমন্বয়, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রণয়নকারী সংগঠন, অর্থনৈতিক সংগঠন, পেশাদারী সংগঠন।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. James, Paul; Nadarajah, Yaso; Haive, Karen; Stead, Victoria (2012)। "Sustainable Communities, Sustainable Development: Other Paths for Papua New Guinea"। Honolulu: University of Hawaii Press. p. 14।
  2. See also James, Paul (2006)। "Globalism, Nationalism, Tribalism: Bringing Theory Back In —Volume 2 of Towards a Theory of Abstract Community"। London: Sage Publications।
  3. The University of California at Santa Cruz has an interdisciplinary Community Studies Department।
  4. Urban and Community Studies at the University of Toronto; The Institute of Health and Community Studies at Bournemouth University, UK, and The Faculty of Child, Family and Community Studies at Douglas College, New Westminster BC, Canada.
  5. Johnson, Christopher (2003)। Claude Levi-Strauss: the formative years। Cambridge University Press, p.31।
  6. Canuto, Marcello A. and Jason Yaeger (editors) (2000)। The Archaeology of Communities। Routledge, New York।
  7. Hegmon, Michelle (2002)। Concepts of Community in Archaeological Research. In Seeking the Center: Archaeology and Ancient Communities in the Mesa Verde Region, edited by Mark D. Varien and Richard H. Wilshusen, pp. 263-279. University of Utah Press, Salt Lake City।
  8. Jim Orford (2008). Community Psychology: Challenges, Controversies and Emerging Consensus। John Wiley and Sons।
  9. Dalton, J.H., Elias, M.J., & Wandersman, A. (2001)। "Community Psychology: Linking Individuals and Communities।" Stamford, CT: Wadsworth।