বিষয়বস্তুতে চলুন

রূহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

রূহ (আরবি: رُوح‎) একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হলো "আত্মা" বা "প্রাণশক্তি"। এটি ইসলামী চিন্তাধারায় আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের মধ্যে সঞ্চারিত এক বিশেষ শক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জীবনের প্রাণশক্তি এবং মানব দেহে কার্যক্ষমতা আনয়ন করে। রূহকে ইসলামিক দৃষ্টিতে একটি আধ্যাত্মিক ও আল্লাহর সৃষ্ট শক্তি হিসেবে দেখা হয়, যা মানবজীবনের মৌলিক উপাদান।[]

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

[সম্পাদনা]

কুরআনের ব্যাখ্যা

[সম্পাদনা]

কুরআনে রুহ সম্পর্কে বলা হয়েছে:

তারা আপনাকে রুহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, রুহ আমার রবের আদেশ।

ডক্টর জাকারিয়া কামালের মতে, এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে রুহ হল এক বিশেষ সৃষ্টি, যা মানুষের জ্ঞানের পরিধির বাইরে।

রুহ এবং বল ক্ষেত্র (Force Field)

[সম্পাদনা]

ডক্টর কামালের তাফসিরে বলা হয়েছে যে রুহের কার্যপদ্ধতি প্রাকৃতিক বলের (চৌম্বকীয় বল, নিউক্লিয়ার ফোর্স) মতো হতে পারে। যেমন:

  • চৌম্বকীয় ক্ষেত্র সৌর বাতাসকে প্রতিরোধ করে, তেমনি রুহ মানবদেহ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • এটি দেহের সঙ্গে সম্পর্কিত কিন্তু দেহ থেকে আলাদা সত্তা।

হাদিসের ব্যাখ্যা

[সম্পাদনা]

আত্মাগুলো একে অপরের সাথে পরিচিত হলে মিলিত হয়, আর অপরিচিত হলে দূরে থাকে।

ডক্টর কামাল বিজ্ঞানসম্মতভাবে ব্যাখ্যা করেন যে, আত্মার পারস্পরিক আকর্ষণ পরমাণুর নিউক্লিয়ার ফোর্সের মতো কাজ করতে পারে।

রুহের প্রকারভেদ

[সম্পাদনা]

ডক্টর জাকারিয়া কামাল অনুযায়ী রুহ দুই ধরনের হতে পারে:

  1. রুহ (Elementary Soul) – এটি মৌলিক আত্মা, যা আল্লাহর বিশেষ আদেশের অংশ।
  2. নফস (Composite Soul) – এটি বিভিন্ন আত্মার সংমিশ্রণে গঠিত, যা ব্যক্তির চরিত্র নির্ধারণ করে।

বিশেষ রুহ ও মানবসত্তা

[সম্পাদনা]
  • জন্মের সময় মানুষ একটি বিশেষ রুহ পায়, যা তার চেতনার উৎস।
  • প্রথম কান্না রুহের শারীরিক প্রকাশের প্রথম ধাপ।
  • এটি সরাসরি আল্লাহর তরফ থেকে আসে এবং এটি অন্যান্য সৃষ্টির রুহ থেকে আলাদা।

ডক্টর জাকারিয়া কামালের বিশ্লেষণে রুহ হলো **আল্লাহর এক বিশেষ আদেশ**, যা সৃষ্টিজগৎ নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি বিজ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা করেছেন যে বিভিন্ন **শক্তিক্ষেত্র (force fields)** ও **পদার্থবিজ্ঞানীয় উপাদান** রুহের কার্যপদ্ধতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হতে পারে।

[]

কুরআনি আয়াতসমূহ

[সম্পাদনা]
  • "অতঃপর তিনি তাকে সুসজ্জিত করলেন এবং তার মধ্যে তাঁর রূহ ফুঁকে দিলেন।"

    — সূরা আস-সাজদাহ (৩২:৯)
  • যতক্ষণ না আমি তাকে সোজা করে বানিয়ে তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকেছি।"

    — সূরা আল-হিজর (১৫:২৯)
  • যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে একটি লেইল থেকে, আর তার মধ্যে রূহ দিয়ে।"

    — সূরা আল-আলাক (৯৬:৫)

ড. জাকারিয়া কামাল তার তাফসীরে উল্লেখ করেছেন যে, রূহ আধুনিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে একটি শক্তিরূপ, যা জীবিত দেহে প্রভাব বিস্তার করে। রূহের প্রকৃতি ও তার শক্তি সম্পর্কে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ কুরআনের আয়াতসমূহের সাথে মিল রেখে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

রূহের মৃত্যুর পর অবস্থা

[সম্পাদনা]

ইসলামে, রূহ মানুষের মৃত্যুর পর আল্লাহর কাছে ফিরে যায় এবং আখিরাতের জন্য প্রস্তুত হয়। মৃত্যুর পর রূহের অবস্থান এবং আধ্যাত্মিক জীবন ইসলামের অন্যতম মৌলিক বিষয়।[]

রূহ মানবজীবনের একটি অমূল্য উপাদান হিসেবে ইসলামে বিবেচিত। ড. জাকারিয়া কামালের সাইন্টিফিক তাফসীরের মাধ্যমে, রূহের প্রকৃতি এবং তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাগুলি স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়, যা পাঠকদের মধ্যে ইসলামের শিক্ষার গভীরতা ও আধুনিক বিজ্ঞানের মাঝে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে সহায়ক।

সম্পর্কিত বিষয়

[সম্পাদনা]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]
  1. www.kalerkantho.com https://www.kalerkantho.com/print-edition/islamic-life/2021/11/11/1091081। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০১-১৪  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  2. "BOOKS"al-quran-tafsir (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০১-১৪ 
  3. "গ্রন্থঃ রূহ সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত মাসআলাসমূহ | লেখক/পাবঃ ইসলামহাউজ.কম"www.hadithbd.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০১-১৪