লায়লাতুল মাবিত
লায়লাতুল মাবিত (Arabic: لَـیْـلَـة ٱلْـمَـبِـیْـت, অর্থ: 'রাত্রিকালীন অবস্থান') ৬২২ খ্রিস্টাব্দের সেই রাতকে নির্দেশ করে যে রাতে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হত্যার ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করার জন্য মক্কা থেকে ইয়াসরিবের (মদীনা) উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন। নিপীড়িত অনুসারীদের নিরাপদ আশ্রয় ইয়াসরিবে (যা পরবর্তীতে তাঁর সম্মানে মদীনা নামে পরিচিতি লাভ করে) চলে যাওয়ার পরে মক্কা থেকে তাঁর এই পলায়ন সংঘটিত হয়েছিল। ইসলামী সাহিত্যে Laylat al-mabit প্রায়শই এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত যে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মক্কা থেকে নিরাপদে পলায়নে সহায়তা করতে তাঁর চাচাতো ভাই আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ) নিজের জীবন বিপন্ন করেছিলেন।
ঘটনা
[সম্পাদনা]![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/7/70/Qubaorig.jpg/220px-Qubaorig.jpg)
মক্কায় নবী মুহাম্মাদের অনুসারীদের ওপর নির্যাতন অব্যাহত থাকার প্রেক্ষাপটে, অথবা সম্ভবত আরও ভালো ভবিষ্যতের আশায়, তিনি তার অনুসারীদের ইয়াসরিব শহরে হিজরতের নির্দেশ দেন। ইয়াসরিবের অধিবাসীরা মুহাম্মাদকে সুরক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কম মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য, ৬২২ খ্রিস্টাব্দের গ্রীষ্মকাল জুড়ে মুসলমানরা ছোট ছোট দলে মক্কা ত্যাগ করে। অন্যদিকে, মুহাম্মাদ হিজরতের প্রচেষ্টাকে সুসংগঠিত ও উৎসাহিত করতে মক্কাতেই থেকে যান। সম্ভবত পরবর্তীতে ইয়াসরিবের একটি স্বাধীন অবস্থান নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে তিনি থেকে গিয়েছিলেন।[১]
এই নতুন ঘটনাবলীতে চিন্তিত হয়ে মক্কার গোত্রনেতারা মুহাম্মাদকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। তাদের পরিকল্পনা ছিল এই: মুহাম্মাদের গোত্র বনু হাশেমের কাছ থেকে সম্ভাব্য প্রতিশোধ এড়াতে, প্রতিটি মক্কান গোত্র থেকে একজন করে যোদ্ধারা একসাথে তাকে হত্যা করবে।[২]
একজন গোপনচর, অথবা সম্ভবত মহান ফেরেশতা জিব্রাইল, এই হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রটি মুহাম্মাদের কাছে ফাঁস করে দেন। মক্কার নেতাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ করার জন্য, তার চাচাতো ভাই আলী ইবনে আবি তালিব নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সে রাতে মুহাম্মাদের জায়গায় ঘুমান। অন্যদিকে, ইতিহাসবিদ ইবনে ইসহাক (মৃত্যু ৭৬৭ খ্রিষ্টাব্দ) লিখেছেন, মুহাম্মাদ আগেই আলীকে তার নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছিলেন। যাই হোক, এসবের মাঝে মুহাম্মাদ রাতের অন্ধকারে মক্কা ত্যাগ করেন এবং পরে আরেক সঙ্গী আবু বকরের সাথে মিলিত হন।[৩]
পরিকল্পনার একদম শেষ মুহূর্তে পরিবর্তন এনে, হত্যাকারীরা পরের দিন ভোর পর্যন্ত আক্রমণের জন্য অপেক্ষা করে। ভোরবেলা তারা মুহাম্মাদের বাড়িতে হামলা করে এবং সেখানে আলীকে খুঁজে পায়। তবে তারা আলীর প্রাণ সংহার করে না। মুহাম্মাদের রেখে যাওয়া মূল্যবান সম্পদের দায়িত্ব পালনের জন্য আলী মুহাম্মাদের চলে যাওয়ার কয়েকদিন পর পর্যন্ত মক্কাতেই থেকে যান। মুহাম্মাদের বিশ্বস্ততার স্বীকৃতিস্বরূপ মক্কায় তিনি 'আল-আমিন' (আক্ষরিক অর্থে 'বিশ্বস্ত') নামে পরিচিত ছিলেন। এরপর, কয়েকজন মুসলিম নারী, যাদের মধ্যে ছিলেন তার নিজের মা ফাতিমা বিনতে আসাদ এবং মুহাম্মাদের কন্যা ফাতিমা, সাথে নিয়ে আলীও মক্কা ছেড়ে পালিয়ে যান।[৩]
বলা হয় যে, ২৭শে সেপ্টেম্বর ৬২২ খ্রিস্টাব্দে ইয়াসরিব শহরে প্রবেশের আগে আলীর আগমনের জন্য মুহাম্মাদ শহরের বাইরে কুবায় অপেক্ষা করেছিলেন। পরবর্তীকালে মুহাম্মাদের সম্মানার্থে ইয়াসরিবের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় মদিনাতুন নবী (আক্ষরিক অর্থে 'নবীর শহর') বা সংক্ষেপে মদিনা।[৪]
কুরআনের একটি আয়াতে ইঙ্গিত
[সম্পাদনা]কথিত আছে যে, মুহাম্মদ (সা.)-এর নিরাপদ পলায়নের সুবিধার্থে আলী (রা.) নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছিলেন। এই ঘটনা কুরআনের ২:২০৭ নম্বর আয়াতের অবতরণের কারণ হতে পারে।[৫]
"আর এমন ব্যক্তিও আছে, যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে। আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু।"[৬]
প্রখ্যাত প্রাথমিক ব্যাখ্যাকারী ইবনে আব্বাস (রা.) এই মত পোষণ করতেন। বিশিষ্ট সুন্নি পন্ডিত আল-থালাবি, আল-রাজি, আল-হাসকানি, শিয়া পন্ডিত আল-তাবারসি, আল-হিল্লি, আল-বালাগি এবং মুতাজিলা পণ্ডিত ইবনে আবি আল-হাদিদের রচনাতেও অনুরূপ বর্ণনা পাওয়া যায়।[৭]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Hazleton 2013, পৃ. 129।
- ↑ Watt 1953, পৃ. 150।
- ↑ ক খ Lings 1991, পৃ. 117।
- ↑ Nasr ও Afsaruddin 2022।
- ↑ Nasr এবং অন্যান্য 2015, পৃ. 257।
- ↑ Mavani 2013, পৃ. 71।
- ↑ Shah-Kazemi 2015।