লুতের কন্যাগণ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বাইবেলের পিতৃপুরুষ লুতের কন্যাদ্বয়ের ঘটনা আদিপুস্তকের ১৯ নং অধ্যায়ের দুটি সংযুক্ত গল্পে পাওয়া যায়। প্রথম গল্পে, লুত তার কন্যাদের একটি সমকামী সদোমীয় জনতার সামনে পেশ করেন; দ্বিতীয় গল্পে, তার কন্যাদ্বয়ই তার অজান্তে তার সাথে সহবাস করে এবং সন্তান জন্ম দেয়।

আদিপুস্তকে শুধুমাত্র দুইজন কন্যার সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, কিন্তু কারোরই নাম উল্লেখ নেই। তবুও, হিব্রু মিদ্রাশ (ব্যাখ্যা) দ্য বুক অফ জাসের এ, পাল্টিথ নামে আরেকটি কন্যার বর্ণনা পাওয়া যায়, যাকে আইন ভঙ্গ করার দায়ে সদোমীয়রা পুড়িয়ে হত্যা করে। তার দোষ, তাকে বিদেশীদের কাছে দান করা হয়েছিল।[১]

আদিপুস্তকে[সম্পাদনা]

আদিপুস্তক:১৯ এ রয়েছে, লূত সদোমে আসা দুই ফেরেশতাদের আতিথেয়তাকালে তাদেরকে তার বাড়িতে রাত্রে থাকার আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু শহরের পুরুষরা বাড়ির চারপাশে জড়ো হয় এবং লূতকে তার অতিথিদের হস্তান্তর করার দাবি করে যাতে তারা তাদের "কাম সিদ্ধ করতে পারে"। লূত তাদের এহেন দুষ্টামির জন্য তাদের উপদেশ দেন এবং পরিবর্তে তার দুই কুমারী কন্যাকে ভোগ করার প্রস্তাব দেন। যখন জনতা লূতের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, তখন ফেরেশতারা তাদের অন্ধকারে আঘাত করে এবং শহর ধ্বংস হওয়ার আগে লূতকে শহর ছেড়ে চলে যেতে সতর্ক করে।[২]

অনুচ্ছেদ ১৪ তে বলা হয় যে, লূতের কন্যাদের পতি ছিল, "যারা তার মেয়েদের বিয়ে করেছিল"।[৩] এই অনুচ্ছেদের ফলে তার কন্যারা যে কুমারী ছিল, সেই বক্তব্যের বিরোধিতা হয়। আধুনিক আন্তর্জাতিক সংস্করণ অনুবাদ অনুসারে, এই ব্যক্তিরা শুধুমাত্র তার মেয়েদের "বিবাহ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ" ছিলেন। রবার্ট অল্টার বলেন যে, ১৫ নং শ্লোক: "আপনার দুটি কন্যা যারা আপনার সাথে থাকবে", এই উল্লেখ ইহা নির্দেশ করে যে, লূতের দুটি কুমারী কন্যা তার সাথে শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তবে তার অন্যান্য বিবাহিত কন্যাগণ স্বামীর সাথে পিছনে থেকে যায়।[৪]

কিং জেমস ভার্সন (কেজেভি) এবং নিউ রিভাইজড স্ট্যান্ডার্ড ভার্সন (এনআরএসভি) বর্ণনা করে যে, বেঁচে থাকা বড় কন্যা ছিল "প্রথম সন্তান", যেখানে সমসাময়িক ইংরেজি সংস্করণ (সিইভি) তে "জ্যেষ্ঠ" শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।[৫]

সদোম থেকে পালানোর সময়, লূতের স্ত্রী লবণের স্তম্ভে পরিণত হয়ে যায়। লূত এবং তার কন্যারা জোয়ারায় আশ্রয় নেয়, কিন্তু পরে একটি গুহায় বসবাস করতে পাহাড়ে উঠে। এক সন্ধ্যায়, লূতের বড় মেয়ে লূতকে মাতাল করে এবং তার অজান্তেই তার সাথে সহবাস করে। পরের রাতে, ছোট মেয়েও একই কাজ করে। তারা উভয়েই গর্ভবতী হয়; বড় মেয়ে মোয়াবের জন্ম দেয়, আর ছোট মেয়ে আম্মানের জন্ম দেয়।[৬]

ইহুদি ঐতিহ্যমতে, লূতের কন্যারা বিশ্বাস করত যে, সমগ্র পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেছে এবং তারাই একমাত্র বেঁচে আছে। তাই তারা মানব জাতিকে রক্ষার জন্য অজাচারের আশ্রয় নেয়।[৭] অগাস্টিন[৮], ক্রাইসোস্টম [৯] এবং আইরেনিয়াসের[১০] মতো প্রাথমিক চার্চ ফাদারদেরও সাধারণ মতামত ছিল এটি। এই ধারণার ভিত্তি হল বড় মেয়ের মন্তব্য: "পৃথিবীতে একজন মানুষও নেই, তাদেরকে সন্তান দেওয়ার জন্য।"[১১] তারপরও জন ক্যালভিনের মতো ভাষ্যকাররা উল্লেখ করেন যে, পরিবারটি মাত্র জোয়ারে বাস করে উঠেছিল, তাই তারা অবশ্যই জানত যে তারাই বেঁচে থাকা একমাত্র মানবজাতি নয়! ক্যালভিন তাই উপসংহারে বলেন যে, বড় মেয়ের মন্তব্যটি সমগ্র পৃথিবীকে বোঝায় না, কেবলমাত্র সেই অঞ্চলকে বোঝায় যেখানে তারা বাস করত।[১২]

অনেক পণ্ডিত লুতের কন্যাদের দুটি পর্বের মধ্যে একটি সংযোগ টেনেছেন। রবার্ট অল্টারের মতে, চূড়ান্ত পর্বটি "তার হঠকারী প্রস্তাবের জন্য মাপা মাপা ন্যায়বিচারের পরামর্শ দেয়।"[১৩]

অনেক ভাষ্যকার লুটের কন্যাদের কর্মকে ধর্ষণ বলে আখ্যা করেছেন। এসথার ফুচসের মতে, অনুচ্ছেদগুলি লূতের কন্যাদের কর্মকে "অজাচারী 'ধর্ষণ' এর সূচনা এবং অপরাধ হিসাবে উপস্থাপন করে।"[১৪] অল্টার এ মতে সম্মত হন। তিনি আরো যোগ করেন যে, বড় মেয়ে যখন বলে: "আস, আমরা তার সাথে শুই", এই প্রসঙ্গে হিব্রু ক্রিয়াপদের অর্থ "ধর্ষণ" এর কাছাকাছি।"[১৫]

কুরআনে[সম্পাদনা]

কুরআনের ১১ ও ১৫ নম্বর সূরায় লূতের কন্যাদের সদোমীদের কাছে অর্পণের কাহিনী পাওয়া যায়।[১৬] কুরআনের মতে, লূত তার কন্যাকে বৈধ বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।[১৭] সদোমীদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের বিভিন্ন উল্লেখ রয়েছে। লূত জোর দিয়েছিলেন যে, কেউ তার মেয়েদের বিয়ে করতে চাইলে তাকে প্রথমে তার ধর্ম পরিবর্তন করতে হবে; বা যে সদোমীগণ অতীতে তার কন্যাদের বিয়ে করার অনুমতি প্রত্যাখ্যান করেছিল, তাদের আবার বিয়ে করার কোন আইনি অধিকার নেই।[১৮]

বিবাহতত্ত্বের ব্যাপারে "আমার কন্যা" শব্দটি রূপক অর্থে নেওয়া উচিত। লূত, একজন নবী হিসাবে, তার জাতির পিতা হিসাবে বিবেচিত হন; তাই এটা নিশ্চিত যে, তিনি সদোমীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তার জাতির মহিলাদের সাথে বিবাহ করার জন্য।[১৯]

কন্যাদের সাথে লূতের অজাচারী সম্পর্কের কাহিনী কুরআনে সত্যায়িত নয়।[২০]

শিল্প[সম্পাদনা]

কন্যাদের সাথে লূতের যৌন সম্পর্ক এমন একটি বিষয়, যা মধ্যযুগীয় শিল্পে খুব কমই অন্বেষণ করা হয়েছিল।[২১][২২] যদিও ষোড়শ শতাব্দীতে, গল্পটি ইউরোপীয় শিল্পীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যৌনতার কারণে। সে যুগে লূত এবং তার কন্যাদের চিত্রে সাধারণত যৌনতার অভিযোগ আনা হয়; চিত্রকর্মগুলিতে কন্যাদেরকে বেশিরভাগ নগ্ন হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে, এবং লূতকে চিত্রিত করা হয়েছে বাইবেলের বর্ণনার বিপরীতে, "একজন সুখী অনুগত ব্যক্তিত্ব বা আক্রমণাত্মক প্রলোভনকারী" হিসেবে।[২৩]

গ্যালারি[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

  • সেন্ট লুতের মঠ, একটি বাইজেন্টাইন মঠ, যাকে "লুতের গুহা" বলে মনে করা হত।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

উদ্ধৃতি[সম্পাদনা]

উৎস[সম্পাদনা]