বাংলাদেশ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

স্থানাঙ্ক: ২৩°৪৮′ উত্তর ৯০°১৮′ পূর্ব / ২৩.৮° উত্তর ৯০.৩° পূর্ব / 23.8; 90.3
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
[পরীক্ষিত সংশোধন][অপরীক্ষিত সংশোধন]
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Masud.pce (আলোচনা | অবদান)
পরিষ্কারকরণ, সংশোধন
→‎বাংলাদেশ নামকরণের ইতিহাস: অনুচ্ছেদ যোগ : আলাপ পাতার অনুরোধ
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
১৪৫ নং লাইন: ১৪৫ নং লাইন:
| প্রকাশক = এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বাংলাদেশ
| প্রকাশক = এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বাংলাদেশ
}}</ref>
}}</ref>

== বাংলাদেশ নামকরণের ইতিহাস ==
আর্যরা "বঙ্গ" বলে এই অঞ্চলকে অভিহিত করতো।
বঙ্গে বসবাসকারী মুসলমানরা এই "বঙ্গ" শব্দটির সঙ্গে ফার্সি "আল" প্রত্যয় যোগ করে। এতে নাম দাঁড়ায় "বাঙাল" বা "বাঙালাহ"।
"আল" বলতে জমির বিভক্তি বা নদীর ওপর বাঁধ দেয়াকে বোঝাতো।<ref name="নামকরণ">{{ওয়েব উদ্ধৃতি |ইউআরএল=https://www.jugantor.com/national/122981/যেভাবে-নামকরণ-হয়-বাংলাদেশের |শিরোনাম=যেভাবে নামকরণ হয় বাংলাদেশের |তারিখ=১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ |ওয়েবসাইট=যুগান্তর |সংগ্রহের-তারিখ=৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ }}</ref>

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজারা এই বাংলাকে বিভিন্ন নাম দেন।
শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজুদ্দৌলাও বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, আসামের মতো কয়েকটি প্রেসিডেন্সি নিয়ে নাম দিয়েছিলেন "বঙ্গ"।
ব্রিটিশ শাসনামলে এই অঞ্চলের নাম হয় বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন অবসানের পর পাকিস্তানিরা পূর্ব বাংলার নাম দিতে চাইলো পূর্ব পাকিস্তান।
কিন্তু এ নিয়ে সেই সময় থেকেই বিতর্ক শুরু হয়।<ref name="নামকরণ"/>

১৯৬২ সালে নিউক্লিয়াস নামে ছাত্রলীগের একটি গোপন সংগঠন প্রতিষ্ঠা পায় যারা এই অঞ্চলকে বলতেন স্বাধীন পূর্ব বাংলা।
এরপর ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে স্লোগান দেয়া হয় "বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো।"
পরে ১৯৬৯ সালের ৫ই ডিসেম্বর শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন, "আমাদের স্বাধীন দেশটির নাম হবে বাংলাদেশ"।
কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, ১৯৫২ সালে সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বাংলা ভাষা থেকে "বাংলা", এরপর স্বাধীন দেশের আন্দোলন সংগ্রাম থেকে দেশ।<ref name="নামকরণ"/>


== ইতিহাস ==
== ইতিহাস ==

০৮:১৭, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ

বাংলাদেশ
জাতীয় সঙ্গীত: আমার সোনার বাংলা


জাতীয় রণ-সঙ্গীত: "নতুনের গান"[১]

বাংলাদেশ সরকারের সিলমোহর
  • বাংলাদেশ সরকার ও মন্ত্রণালয়সমূহের সীল
বাংলাদেশের অবস্থান
রাজধানী
ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি
ঢাকা
সরকারি ভাষাবাংলা[২]
স্বীকৃত জাতীয় ভাষাবাংলা
নৃগোষ্ঠী
(২০১১[৩])
ধর্ম
(২০১১[৪])
জাতীয়তাসূচক বিশেষণবাংলাদেশি
সরকারসংসদীয় গণতন্ত্র
আব্দুল হামিদ
শেখ হাসিনা
শিরীন শারমিন চৌধুরী
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন
আইন-সভাজাতীয় সংসদ
১৪-১৫ আগস্ট ১৯৪৭
১৪ অক্টোবর ১৯৫৫
• পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা
২৬ মার্চ ১৯৭১
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১
৪ নভেম্বর ১৯৭২
৩১ জুলাই ২০১৫
আয়তন
• মোট
১,৪৭,৫৭০ কিমি (৫৬,৯৮০ মা) (৯২তম)
• পানি (%)
৭%
জনসংখ্যা
• ২০১৭ আনুমানিক
১৬২,৯৫১,৫৬০[৫] (৭ম)
• ২০১১ আদমশুমারি
১৪৯,৭৭২,৩৬৪[৬] (৮ম[৫])
• ঘনত্ব
১,১০৬/কিমি (২,৮৬৪.৫/বর্গমাইল) (১০ম)
জিডিপি (পিপিপি)২০১৮ আনুমানিক
• মোট
$৭৫১.৯৪৯ বিলিয়ন[৭] (৩১তম)
• মাথাপিছু
$৪,৫৬১[৭] (১৩৯তম)
জিডিপি (মনোনীত)২০১৮ আনুমানিক
• মোট
$২৮৫.৮১৭ বিলিয়ন[৭] (৪৩তম)
• মাথাপিছু
$১,৭৫৪[৫] (১৪৮তম)
জিনি (২০১৬)৩২.৪০[৯]
মাধ্যম
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১৮)বৃদ্ধি ০.৬০৮[১০]
মধ্যম · ১৩৯তম
মুদ্রাটাকা (৳) (BDT)
সময় অঞ্চলইউটিসি+৬ (বাংলাদেশ মান সময়)
তারিখ বিন্যাসবঙ্গাব্দ দদ-মম-বববব
খ্রিস্টাব্দ dd-mm-yyyy
গাড়ী চালনার দিকবাম
কলিং কোড+৮৮০
আইএসও ৩১৬৬ কোডBD
ইন্টারনেট টিএলডি.বাংলা
.bd
ওয়েবসাইট
জাতীয় বাতায়ন

বাংলাদেশ (শুনুন) দক্ষিণ এশিয়ার একটি জনবহুল রাষ্ট্র। বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। ভূ-রাজনৈতিক ভাবে বাংলাদেশের পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ, আসামমেঘালয়, পূর্ব সীমান্তে আসাম, ত্রিপুরামিজোরাম, দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে মায়ানমারের চিনরাখাইন রাজ্য এবং দক্ষিণ উপকূলের দিকে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত।[১১] বাংলাদেশের ভূখণ্ড ভৌগোলিকভাবে একটি উর্বর ব-দ্বীপের অংশ বিশেষ। পার্শ্ববর্তী দেশের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গত্রিপুরা-সহ বাংলাদেশ একটি ভৌগোলিকভাবে জাতিগতভাষাগত "বঙ্গ" অঞ্চলটির অর্থ পূর্ণ করে। "বঙ্গ" ভূখণ্ডের পূর্বাংশ পূর্ব বাংলা নামে পরিচিত ছিল, যা ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পৃথিবীতে যে ক'টি রাষ্ট্র জাতিরাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদা পায় তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

বাংলাদেশের বর্তমান সীমান্ত তৈরি হয়েছিল ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে যখন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনাবসানে, বঙ্গ (বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি) এবং ব্রিটিশ ভারত বিভাজন করা হয়েছিল। বিভাজনের পরে বর্তমান বাংলাদেশের অঞ্চল তখন পূর্ব বাংলা নামে পরিচিত ছিল, যেটি নবগঠিত দেশ পাকিস্তানের পূর্ব অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল। পাকিস্তান অধিরাজ্যে থাকাকালীন ‘পূর্ব বাংলা’ থেকে ‘পূর্ব পাকিস্তান’-এ নামটি পরিবর্তিত করা হয়েছিল। শোষণ, বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দারিদ্র্যপীড়িত বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় ঘটেছে দুর্ভিক্ষ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ; এছাড়াও প্রলম্বিত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও পুনঃপৌনিক সামরিক অভ্যুত্থান এদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বারংবার ব্যাহত করেছে। গণসংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে যার ধারাবাহিকতা আজ পর্যন্ত। সকল প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গত দুই দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রগতি ও সমৃদ্ধি সারা বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম যদিও আয়তনের হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে ৯৪তম; ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর নবম। মাত্র ৫৬ হাজার বর্গমাইলেরও কম এই ক্ষুদ্রায়তনের দেশটির প্রাক্কলিত (২০১৮) জনসংখ্যা ১৮ কোটির বেশি অর্থাৎ প্রতি বর্গমাইলে জনবসতি ২৮৮৯ জন (প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১১১৫ জন)। রাজধানী ঢাকা শহরের জনসংখ্যা ১.৪৪ কোটি এবং ঢাকা মহানগরীর জনঘনত্ব প্রতি বর্গমা্গইলে ১৯,৪৪৭ জন।[১২] দেশের জনসংখ্যার ৯৯ শতাংশ মানুষের মাতৃভাষা বাংলা; সাক্ষরতার হার ৭২ শতাংশ।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে চলতি বাজারমূল্যে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণ ছিল ২৬১.২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বৃদ্ধি লাভ করে ২৮৫.৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উন্নীত হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে।[১৩] ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু গড় বার্ষিক আয় ছিল ১ হাজার ৭৫২ ডলার। সরকার প্রাক্কলন করেছে যে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ১ হাজার ৯৫৬ ডলার বা ১ লাখ ৬০ হাজার ৩৯২ টাকা।[১৪] দারিদ্রের হার ২৬.২০ শতাংশ, অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ১১.৯০ শতাংশ, এবং বার্ষিক দারিদ্র হ্রাসের হার ১.৫ শতাংশ। এই উন্নয়নশীল দেশটি প্রায় দুই দশক যাবৎ বার্ষিক ৫ থেকে ৬.২ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অর্জনপূর্বক "পরবর্তী একাদশ" অর্থনীতিসমূহের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য শহরের পরিবর্ধন বাংলাদেশের এই উন্নতির চালিকাশক্তিরূপে কাজ করছে। এর কেন্দ্রবিন্দুতে কাজ করেছে একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ত্বরিত বিকাশ এবং একটি সক্ষম ও সক্রিয় উদ্যোক্তা শ্রেণীর আর্বিভাব। বাংলাদেশের রপ্তানীমুখী তৈরি পোশাক শিল্প সারা বিশ্বে বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। জনশক্তি রপ্তানীও দেশটির অন্যতম অর্থনৈতিক স্তম্ভ। বিশ্ব ব্যাংকের প্রাক্কলন এই যে ২০১৮-২০ এই দুই অর্থ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রতি বছর গড়ে ৬.৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি লাভ করবে।[১৫]

গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের উর্বর অববাহিকায় অবস্থিত এই দেশটিতে প্রায় প্রতি বছর মৌসুমী বন্যা হয়; আর ঘূর্ণিঝড়ও খুব সাধারণ ঘটনা। নিম্ন আয়ের এই দেশটির প্রধান সমস্যা পরিব্যাপ্ত দারিদ্র গত দুই দশকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে এসেছে, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে দ্রুত, জন্ম নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে অর্জিত হয়েছে অভূতপূর্ব সফলতা। এছাড়া আন্তর্জাতিক মানব সম্পদ উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ দৃষ্টান্তমূলক অগ্রগতি অর্জনে সক্ষম হয়েছে।[১৬], তবে বাংলাদেশে এখনো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে যার মধ্যে রয়েছে পরিব্যাপ্ত রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি, বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলশ্রুতিতে তলিয়ে যাবার শঙ্কা। তাছাড়া একটি সর্বগ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থার রূপ নিয়ে নতুন ভাবে সামাজিক বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশে সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা প্রচলিত। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থাবিমসটেক-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এছাড়া দেশটি জাতিসংঘ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, বিশ্ব শুল্ক সংস্থা, কমনওয়েলথ অফ নেশনস, উন্নয়নশীল ৮টি দেশ, জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলন, ওআইসি, ইত্যাদি আন্তর্জাতিক সংঘের সক্রিয় সদস্য।

শব্দের ব্যুৎপত্তি

বাংলাদেশ শব্দটি খুঁজে পাওয়া যায় ২০শ শতাব্দীর শুরুর দিকে, যখন থেকে কাজী নজরুল ইসলাম রচিত "নম নম নম বাংলাদেশ মম" ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত "আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে" এর ন্যায় দেশাত্মবোধক গানগুলোর মাধ্যমে সাধারণ পরিভাষা হিসেবে শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়।[১৭] অতীতে বাংলাদেশ শব্দটিকে দুটি আলাদা শব্দ হিসেবে বাংলা দেশ আকারে লেখা হত। ১৯৫০ দশকের শুরুতে, বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদীরা শব্দটিকে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক মিটিং-মিছিল ও সভা-সমাবেশে ব্যবহার করেছে। বাংলা শব্দটি বঙ্গ এলাকা ও বাংলা এলাকা উভয়ের জন্যই একটি প্রধান নাম। শব্দটির প্রাচীনতম ব্যবহার পাওয়া যায় ৮০৫ খ্রিস্টাব্দের নেসারি ফলকে। এছাড়াও ১১-শতকের দক্ষিণ-এশীয় পাণ্ডুলিপিসমূহে ভাংলাদেসা পরিভাষাটি খুঁজে পাওয়া যায়।[১৮][১৯]

১৪শ শতাব্দিতে বাংলা সালতানাতের সময়কালে পরিভাষাটি দাপ্তরিক মর্যাদা লাভ করে।[২০][২১] ১৩৪২ সালে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ বাংলার প্রথম শাহ হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেন।[২০] উক্ত অঞ্চলকে বোঝাতে বাংলা শব্দটির সর্বা‌ধিক ব্যবহার শুরু হয় ইসলামী শাসনামলে। ১৬শ শতাব্দীতে পর্তুগিজরা অঞ্চলটিকে বাঙ্গালা নামে উল্লেখ শুরু করে।[২২]

বাংলা বা বেঙ্গল শব্দগুলোর আদি উৎস অজ্ঞাত; ধারণা করা হয় আধুনিক এ নামটি বাংলার সুলতানি আমলের বাঙ্গালা শব্দ থেকে উদ্ভূত হয়। কিন্তু কিছু ঐতিহাসিক ধারণা করেন যে, শব্দটি বং অথবা বাং নামক একটি দ্রাবিড়ীয়-ভাষী উপজাতি বা গোষ্ঠী থেকে উদ্ভূত হয়েছে। বং জাতিগোষ্ঠী ১০০০ খ্রিস্টপূর্বের দিকে এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিলেন।[২৩]

অন্য তত্ত্ব অনুযায়ী শব্দটির উৎপত্তি ভাঙ্গা (বঙ্গ) শব্দ থেকে হয়েছে, যেটি অস্ট্রীয় শব্দ "বঙ্গা" থেকে এসেছিল, অর্থাৎ অংশুমালী।[২৪] শব্দটি ভাঙ্গা এবং অন্য শব্দ যে বঙ্গ কথাটি অভিহিত করতে জল্পিত (যেমন অঙ্গ) প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থে পাওয়া যায়, যেমনঃ বেদ, জৈন গ্রন্থে, মহাভারত এবং পুরাণে। "ভাঙ্গালাদেসা/ ভাঙ্গাদেসাম" (বঙ্গাল/বঙ্গল)-এর সবচেয়ে পুরনো উল্লেখ রাষ্ট্রকূট গোবিন্দ ৩-এর নেসারি প্লেট্‌সে উদ্দিষ্ট (৮০৫ খ্রিস্ট-আগে), যেখানে ভাঙ্গালার রাজা ধর্মপালের বৃত্তান্ত লেখা আছে।[২৫]

বাংলাদেশ নামকরণের ইতিহাস

আর্যরা "বঙ্গ" বলে এই অঞ্চলকে অভিহিত করতো। বঙ্গে বসবাসকারী মুসলমানরা এই "বঙ্গ" শব্দটির সঙ্গে ফার্সি "আল" প্রত্যয় যোগ করে। এতে নাম দাঁড়ায় "বাঙাল" বা "বাঙালাহ"। "আল" বলতে জমির বিভক্তি বা নদীর ওপর বাঁধ দেয়াকে বোঝাতো।[২৬]

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজারা এই বাংলাকে বিভিন্ন নাম দেন। শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজুদ্দৌলাও বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, আসামের মতো কয়েকটি প্রেসিডেন্সি নিয়ে নাম দিয়েছিলেন "বঙ্গ"। ব্রিটিশ শাসনামলে এই অঞ্চলের নাম হয় বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন অবসানের পর পাকিস্তানিরা পূর্ব বাংলার নাম দিতে চাইলো পূর্ব পাকিস্তান। কিন্তু এ নিয়ে সেই সময় থেকেই বিতর্ক শুরু হয়।[২৬]

১৯৬২ সালে নিউক্লিয়াস নামে ছাত্রলীগের একটি গোপন সংগঠন প্রতিষ্ঠা পায় যারা এই অঞ্চলকে বলতেন স্বাধীন পূর্ব বাংলা। এরপর ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে স্লোগান দেয়া হয় "বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো।" পরে ১৯৬৯ সালের ৫ই ডিসেম্বর শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন, "আমাদের স্বাধীন দেশটির নাম হবে বাংলাদেশ"। কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, ১৯৫২ সালে সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বাংলা ভাষা থেকে "বাংলা", এরপর স্বাধীন দেশের আন্দোলন সংগ্রাম থেকে দেশ।[২৬]

ইতিহাস

পাহাড়পুর বিহার
নওগাঁর পাহাড়পুরের প্রাচীন বৌদ্ধপীঠের ধ্বংস স্তুপ
একাদশ শতাব্দীর বুদ্ধ মূর্তি
আহসান মঞ্জিল ঢাকা নবাব পরিবারের আদি বাসস্থান।
পলাশীর যুদ্ধের শেষে মীরজাফর ও লর্ড ক্লাইভের সাক্ষাৎ, ফ্রান্সিস হেম্যান (১৭৬২)
লালবাগের কেল্লা, মোঘল আমলে স্থাপিত এই দুর্গ

প্রাথমিক ও মধ্যযুগীয় সময়কাল

২০০৬ খ্রিস্টাব্দে উয়ারী-বটেশ্বর অঞ্চলে প্রাপ্ত পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুযায়ী বাংলাদেশ অঞ্চলে জনবসতি গড়ে উঠেছিলো প্রায় ৪ হাজার বছর পূর্বে। ধারণা করা হয় দ্রাবিড় ও তিব্বতীয়-বর্মী জনগোষ্ঠী এখানে সেসময় বসতি স্থাপন করেছিল। পরবর্তীতে এই অঞ্চলটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হয়ে স্থানীয় ও বিদেশী শাসকদের দ্বারা শাসিত হতে থাকে। আর্য জাতির আগমনের পর খ্রিস্টীয় চতুর্থ হতে ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত গুপ্ত রাজবংশ বাংলা শাসন করেছিল। এর ঠিক পরেই শশাঙ্ক নামের একজন স্থানীয় রাজা স্বল্প সময়ের জন্য এ এলাকার ক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হন। প্রায় একশ বছরের অরাজকতার (যাকে মাৎসন্যায় পর্ব বলে অভিহিত করা হয়) শেষে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পাল রাজবংশ বাংলার অধিকাংশের অধিকারী হয়, এবং পরবর্তী চারশ বছর ধরে শাসন করে। এর পর হিন্দু ধর্মাবলম্বী সেন রাজবংশ ক্ষমতায় আসে। দ্বাদশ শতকে সুফি ধর্মপ্রচারকদের মাধ্যমে বাংলায় ইসলামের প্রবর্তন ঘটে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে সামরিক অভিযান এবং যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে মুসলিম শাসকেরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। ১২০৫-১২০৬ খ্রিস্টাব্দের দিকে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী নামের একজন তুর্কী বংশোদ্ভূত সেনাপতি রাজা লক্ষ্মণ সেনকে পরাজিত করে সেন রাজবংশের পতন ঘটান। ষোড়শ শতকে মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে আসার আগে পর্যন্ত বাংলা স্থানীয় সুলতান ও ভূস্বামীদের হাতে শাসিত হয়। মুঘল বিজয়ের পর ঢাকায় বাংলার রাজধানী স্থাপিত হয় এবং এর নামকরণ হয় জাহাঙ্গীর নগর

শেখ মুজিবুর রহমান (ডান পাশ থেকে তৃতীয় জন) এবং মওলানা ভাসানী (ডান পাশ থেকে চতুর্থ জন) ১৯৫৩ সালে

ঔপনিবেশিক সময়কাল

বাংলায় ইউরোপীয় ব্যবসায়ীদের আগমন ঘটে পঞ্চদশ শতকের শেষভাগ থেকে। ধীরে ধীরে তাদের প্রভাব বাড়তে থাকে। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভের মাধ্যমে বাংলার শাসনক্ষমতা দখল করে।[২৭] ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিপ্লবের পর কোম্পানির হাত থেকে বাংলার শাসনভার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আসে। ব্রিটিশ রাজার নিয়ন্ত্রণাধীন একজন ভাইসরয় প্রশাসন পরিচালনা করতেন।[২৮] ঔপনিবেশিক শাসনামলে ভারতীয় উপমহাদেশে বহুবার ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এর মধ্যে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দের দুর্ভিক্ষে আনুমানিক ৩০ লাখ লোক মারা যায়।[২৯]

পাকিস্তানের সঙ্গে জোট

শহীদ মিনার ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ

১৯০৫ থেকে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ববঙ্গ ও আসামকে নিয়ে একটি নতুন প্রদেশ গঠিত হয়েছিল, যার রাজধানী ছিল ঢাকায়।[৩০] তবে কলকাতা-কেন্দ্রিক রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের চরম বিরোধিতার ফলে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়ে যায়। ভারতীয় উপমহাদেশের দেশভাগের সময় ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ধর্ম গরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পুনর্বার বাংলা প্রদেশটিকে ভাগ করা হয়। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অংশভুক্ত হয়; অন্যদিকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের অংশভুক্ত হয়। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে পূর্ববঙ্গের নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান করা হয়।[৩১] ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ভূমিস্বত্ব সংস্কারের মাধ্যমে জমিদার ব্যবস্থা রদ করা হয়।[৩২] কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত গুরুত্ব সত্ত্বেও পাকিস্তানের সরকার ও সেনাবাহিনী পশ্চিম পাকিস্তানীদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থেকে যায়। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ভাষা আন্দোলন পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে বৈরিতার প্রথম লক্ষণ হিসাবে প্রকাশ পায়।[৩৩] পরবর্তী দশক জুড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে নেয়া নানা পদক্ষেপে পূর্ব পাকিস্তানে বিক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। এসময় বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা হিসেবে আওয়ামী লীগের উত্থান ঘটে, এবং দলটি বাঙালি জাতির প্রধান রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি ৬ দফা আন্দোলনের সূচনা ঘটে যার মূল লক্ষ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বাধিকার আদায়। আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে কারাবন্দী করা হয়। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চাপিয়ে আবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়; কিন্তু ঊনসত্তরের তুমুল গণঅভ্যুত্থানের মুখে আইয়ুব খানের সামরিক জান্তার পতন ঘটে এবং মুজিব মুক্তি পান।

জাতীয় স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি স্মারক স্থাপনা

১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ১১ নভেম্বর এক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে পূর্ব পাকিস্তানের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ৫ লাখ লোকের মৃত্যু ঘটে। এ সময় পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের অসহযোগিতা ও ঔদাসীন্য প্রকট হয়ে ওঠে।

মুক্তিযুদ্ধ

১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের সংসদীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও সামরিক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে টাল-বাহানা করতে থাকে।[৩৪] মুজিবের সাথে গোলটেবিল বৈঠক সফল না-হওয়ার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জেনারেল ইয়াহিয়া খান ২৫শে মার্চ গভীর রাতে মুজিবকে গ্রেপ্তার করেন এবং পাকিস্তানী সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের অংশ হিসাবে বাঙালিদের উপর নির্বিচারে আক্রমণ শুরু করে।[৩৫] পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর এই নারকীয় হামলাযজ্ঞে রাতারাতি বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটে।[৩৬] সেনাবাহিনী ও তার স্থানীয় দালালদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল বুদ্ধিজীবী ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। গণহত্যা থেকে নিস্তার পেতে প্রায় ১ কোটি মানুষ দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। (LaPorte[৩৭], p. 103) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মোট জীবনহানির সংখ্যার হিসাব কয়েক লাখ হতে শুরু করে ৩০ লাখ পর্যন্ত অনুমান করা হয়েছে।[৩৮]

দুই থেকে চার লক্ষ নারী পাকিস্তানী সেনাদের দ্বারা ধর্ষিত হয়। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁরা ১০ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে অস্থায়ী সরকার গঠন করেন। এর প্রধানমন্ত্রী হন তাজউদ্দিন আহমদ। এই সরকার শপথ গ্রহণ করে ১৭ এপ্রিল। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা প্রায় ৯ মাস পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরূদ্ধে লড়াই করে। মুক্তিবাহিনী ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভারতের সহায়তায় ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে। মিত্রবাহিনী প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা’র কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পাকিস্তান বাহিনীর প্রধান জেনারেল নিয়াজী ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পন করে। প্রায় ৯০,০০০ পাকিস্তানী সেনা যুদ্ধবন্দী হিসাবে আটক হয়; যাদেরকে ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়।[৩৯]

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ

প্রথম সংসদীয় সময়কাল

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে প্রথমে সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা চালু হয় ও শেখ মুজিব প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের সংসদীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে দেশব্যাপী দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।[২৯] ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে শুরুতে মুজিব সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে দেশে বাকশাল নামীয় রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করেন। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট তারিখে সেনাবাহিনীর কিয়দংশ ও স্বীয় দলের কিছু রাজনীতিবিদের ষড়যন্ত্রে সংঘটিত অভ্যুত্থানে শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হন।[৪০]

সংসদীয় সময়কাল ও সামরিক অভ্যুত্থান (১৯৭৫-১৯৯১)

পরবর্তী ৩ মাসে একাধিক অভ্যুত্থান ও পাল্টা-অভ্যুত্থান চলতে থাকে, যার পরিসমাপ্তিতে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ নভেম্বর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন। জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরায় প্রবর্তন করেন এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রপতি জিয়া চট্টগ্রাম সফরের সময় আরেকটি অভ্যুত্থানে নিহত হন।[৪০] অতঃপর উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে বাংলাদেশের পরবর্তী শাসক জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রক্তপাতবিহীন এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। রাষ্ট্রপতি এরশাদ ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দেশ শাসন করেন। ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে তাঁর পতন হয় এবং তিনি ক্ষমতা ত্যাগ করলে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হয়।[৪১]

সমসাময়িক সংসদীয় সময়কাল (১৯৯১-বর্তমান)

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেত্রী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়ার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ হতে ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ হতে ২০০১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেত্রী হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। দারিদ্র ও দুর্নীতি সত্ত্বেও বাংলাদেশ বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে একটি গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসাবে তার অবস্থান সমুন্নত রেখেছে।

২০০১ খ্রিস্টাব্দের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিশাল জয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সরকার গঠন করে এবং খালেদা জিয়া পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি ২০০১ থেকে ২০০৬ খ্রিস্টাব্দ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর নানা নাটকীয় পালা বদলের মধ্য দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দিন আহমদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেন। এই সরকার প্রায় দুই বৎসর ক্ষমতায় থাকে এবং সেনা সমর্থিত সরকার হিসাবে সমালোচিত হয়। তবে ফখরুদ্দিন সরকার ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করে। এই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ-নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক মহাজোট সরকার গঠন করে এবং শেখ হাসিনা পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব লাভ করেন। এরপর ২০১৪ সালে ও ২০১৮ সালের সংসদীয় নির্বা‌চনে পুনরায় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ-নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক মহাজোট সরকার গঠন করে।

ভূগোল

কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা বাংলাদেশের আলোকচিত্র

দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম দুটি নদী - গঙ্গাব্রহ্মপুত্র যেখানে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে সেখানেই কালের পরিক্রমায় গড়ে ওঠে পৃথিবীর বৃহত্তম এই ব-দ্বীপ। এই গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র মোহনা অঞ্চলে প্রায় ৩০০০ বছর বা তারও পূর্ব থেকে যে জনগোষ্ঠীর বসবাস, তা-ই ইতিহাসের নানান চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে বর্তমানের স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশরূপে। ভৌগোলিক বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায়, ভারতমিয়ানমারের মাঝখানে। এর ভূখণ্ড ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। বাংলাদেশের পশ্চিম, উত্তর, আর পূর্ব সীমান্ত জুড়ে রয়েছে ভারত; পশ্চিমে রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য; উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয় রাজ্য এবং পূর্বে রয়েছে আসাম, ত্রিপুরামিজোরাম। তবে পূর্বে ভারত ছাড়াও মিয়ানমারের (বার্মা) সাথে সীমান্ত রয়েছে; দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। বাংলাদেশের স্থল সীমান্তরেখার দৈর্ঘ্য ৪,২৪৬ কিলোমিটার যার ৯৪ শতাংশ (৯৪%) ভারতের সাথে এবং বাকি ৬ শতাংশ মিয়ানমারের সাথে। বাংলাদেশের সমুদ্রতটরেখার দৈর্ঘ্য ৫৮০ কিলোমিটার। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশের কক্সবাজার পৃথিবীর দীর্ঘতম অনবচ্ছিন্ন সমূদ্র সৈকতগুলোর অন্যতম।

বাংলাদেশের উচ্চতম স্থান দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রামের মোডক পর্বত, সমুদ্রতল থেকে যার উচ্চতা ১,০৫২ মিটার (৩,৪৫১ ফুট)।[৪২] বঙ্গোপসাগর উপকূলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের অনেকটা অংশ জুড়ে সুন্দরবন অবস্থিত, যা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। এখানে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল (টাইগার) বাঘ , চিত্রল হরিণ সহ নানা ধরনের প্রাণীর বাস। ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে এই এলাকাকে বিলুপ্তির সম্মুখীন বলে ঘোষণা দেয়া হয়।[৪৩]

প্রশাসনভিত্তিক ভৌগলিক বিভাজন

বাংলাদেশ ৮টি প্রশাসনিক বিভাগে বিভক্ত।[৪৪] এগুলো হল: ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, সিলেট এবং রংপুর। প্রতিটি বিভাগে রয়েছে একাধিক জেলা। বাংলাদেশের মোট জেলার সংখ্যা ৬৪টি। জেলার চেয়ে ক্ষুদ্রতর প্রশাসনিক অঞ্চলকে উপজেলা বা থানা বলা হয়। সারাদেশে ৪৯২টি উপজেলা (সর্বশেষ হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা) রয়েছে।[৪৫] এই থানাগুলো ৪,৪৮৪টি ইউনিয়নে; ৫৯,৯৯০টি মৌজায় এবং ৮৭,৩১৯টি গ্রামে বিভক্ত। বিভাগ, জেলা ও থানা পর্যায়ের প্রশাসনে কোনো নির্বাচিত কর্মকর্তা নেই; সরকার নিযুক্ত প্রশাসকদের অধীনে এসব অঞ্চল পরিচালিত হয়ে থাকে। ইউনিয়ন বা পৌরসভার ওয়ার্ডগুলোতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতি রয়েছে। ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের আইন অনুযায়ী ইউনিয়ন পর্যায়ে মহিলাদের জন্য ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করা হয়।[৪৬]

এছাড়া শহরাঞ্চলে ১২টি সিটি কর্পোরেশন (ঢাকা-উত্তর, ঢাকা-দক্ষিণ, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কুমিল্লাময়মনসিংহ) এবং ২২৩টি পৌরসভা রয়েছে। এগুলোর সবগুলোতেই জনগণের ভোটে মেয়র ও জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়। রাজধানী ঢাকা বাংলাদেশের বৃহত্তম শহর। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য শহরের মধ্যে রয়েছে – চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, কক্সবাজার, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, রংপুর, যশোর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ,ও ফেনী

একটি ক্লিকযোগ্য মানচিত্র বাংলাদেশের বিভাগসমূহ দেখাচ্ছে।রংপুর বিভাগরাজশাহী বিভাগখুলনা বিভাগময়মনসিংহ বিভাগঢাকা বিভাগবরিশাল বিভাগসিলেট বিভাগচট্টগ্রাম বিভাগ
একটি ক্লিকযোগ্য মানচিত্র বাংলাদেশের বিভাগসমূহ দেখাচ্ছে।
বিভাগ প্রতিষ্ঠিত জনসংখ্যা[৪৭] আয়তন (কিমি)[৪৭] জনসংখ্যা ঘনত্ব
২০১১ (লোক/কিমি)[৪৭]
বৃহত্তম শহর
(জনসংখ্যা-সহ)
ঢাকা ১৮২৯ ৩৬,০৫৪,৪১৮ ২০,৫৩৯ ১,৭৫১ ঢাকা (৭,০৩৩,০৭৫)
চট্টগ্রাম ১৮২৯ ২৮,৪২৩,০১৯ ৩৩,৭৭১ ৮৪১ চট্টগ্রাম (২,৫৯২,৪৩৯)
রাজশাহী ১৮২৯ ১৮,৪৮৪,৮৫৮ ১৮,১৯৭ ১,০১৫ রাজশাহী (৪৪৯,৭৫৬)
খুলনা ১ অক্টোবর, ১৯৬০ ১৫,৬৮৭,৭৫৯ ২২,২৭২ ৭০৪ খুলনা (৬৬৩,৩৪২)
বরিশাল ১ জানুয়ারি, ১৯৯৩ ৮,৩২৫,৬৬৬ ১৩,২৯৭ ৬২৬ বরিশাল (৩২৮,২৭৮)
সিলেট ১ অগাস্ট, ১৯৯৫ ৯,৯১০,২১৯ ১২,৫৯৬ ৭৮০ সিলেট (৪৭৯,৮৩৭)
রংপুর ২৫ জানুয়ারি, ২০১০ ১৫,৭৮৭,৭৫৮ ১৬,৩১৭ ৯৬০ রংপুর (৩৪৩,১২২)
ময়মনসিংহ ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ১১,৩৭০,০০০ ১০,৫৮৪ ১,০৭৪ ময়মনসিংহ (৪,০৭,৭৯৮)
বাংলাদেশ ১৪৪,০৪৩,৬৯৭ ১৪৭,৫৭০ ৯৭৬ ঢাকা

জলবায়ু

বাংলাদেশের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ। আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর ভিত্তি করে ৬টি ঋতুতে ভাগ করা হয়েছে যথা: গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীতবসন্ত। বছরে বৃষ্টিপাতের মাত্রা ১৫০০-২৫০০মি.মি./৬০-১০০ইঞ্চি; পূর্ব সীমান্তে এই মাত্রা ৩৭৫০ মি.মি./১৫০ইঞ্চির বেশী। বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা ২৫° সেলসিয়াস। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা অতিক্রম করেছে। এখানকার আবহাওয়াতে নিরক্ষীয় প্রভাব দেখা যায়। নভেম্বর হতে মার্চ পর্যন্ত হালকা শীত অনুভূত হয়। মার্চ হতে জুন মাস পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল বিরাজ করে। জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চলে বর্ষা মৌসুম। এসময় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, ও জলোচ্ছ্বাস প্রায় প্রতিবছরই বাংলাদেশের কোনো না কোনো স্থানে আঘাত হানে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকা সমুদ্র সমতল হতে মাত্র ১০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। সমুদ্র সমতল মাত্র ১ মিটার বৃদ্ধি পেলেই এদেশের ১০% এলাকা নিমজ্জিত হবে বলে ধারণা করা হয়।[৪৮]

রাজনীতি

সরকার ব্যবস্থা

ঢাকার শের-এ-বাংলানগরে অবস্থিত বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবন
বাংলাদেশ বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকসমূহ
পতাকা লাল-সবুজ
প্রতীক শাপলা
সঙ্গীত আমার সোনার বাংলা
পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার
পাখি দোয়েল
ফুল সাদা শাপলা
বৃক্ষ আমগাছ
ফল কাঁঠাল
খেলা কাবাডি
পঞ্জিকা বঙ্গাব্দ
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা

বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে প্রণীত হয়। পরবর্তীতে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সর্বমোট ১৬টি সংশোধনী আনা হয়েছে।[৪৯] বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থার সরকার পদ্ধতি প্রচলিত। রাষ্ট্রযন্ত্রের তিনটি শাখা: সংসদ, প্রশাসন এবং বিচার ব্যবস্থা। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ এক কক্ষবিশিষ্ট। এতে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ৩০০ জন সদস্য ছাড়াও নারীদের জন্য ৫০টি সংরক্ষিত আসন আছে। প্রতিটি সংসদের নির্ধারিত মেয়াদকাল ৫ বছর। বাংলাদেশের প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দল হল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগবাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। এছাড়াও, জাতীয় পার্টি রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ১৮ বছর বা তদুর্ধ্ব সব নাগরিকের ভোটাধিকার রয়েছে।

১৯৯১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নির্বাচনের পূর্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পদ্ধতি চালু হয় যা ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে সংশোধনক্রমে সংবিধানে গৃহীত হয়। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের ৯ম জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত নির্বাচনের পূর্বে কেয়ারটেকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়েছে। এই ব্যবস্থায় সরকারের মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হত। এ সময় সরকারি ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত হয় নির্দলীয় নিরপেক্ষ উপদেষ্টামণ্ডলীর মাধ্যমে। সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন মর্মে সংবিধানে প্রবিধান রয়েছে। সংসদীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়।[৪৯] ২০১১-এ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনপূর্ব নিদর্লীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পদ্ধতি বাতিল করা হয়। আবার, ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে সংবিধানের ১৬তম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রধান বিচারপতিদের অভিশংসন প্রথা চালু হয়। প্রধান বিচারপতিদের ইচ্ছে করলে সংসদ অভিশংসন করতে পারবে।

রাষ্ট্রপতি এদেশের আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান। তাঁর সীমিত ক্ষমতা রয়েছে; কেননা কয়েকটি ক্ষেত্র ব্যতীত প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিতে তিনি সাংবিধানিকভাবে বাধ্য। জাতীয় সংসদের সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য। তবে সংসদ নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে রাষ্ট্রপতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। রাষ্ট্রযন্ত্রের মূল ক্ষমতার অধিকারী হলেন প্রধানমন্ত্রী, যিনি "সরকার প্রধান" হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই সংসদ সদস্য হতে হয়। মন্ত্রীসভার মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মনোনীত এবং রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।

বাংলাদেশের সরকারি প্রশাসন যন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু হলো বাংলাদেশ সচিবালয়। রাষ্ট্রের বিভিন্ন কার্যাবলী পরিচালনার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নিযুক্ত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীরা মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রী পদমর্যাদায় বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়েছেন। উপদেষ্টামণ্ডলী মন্ত্রী সভার বৈঠকে অংশ গ্রহণ করেন। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে সরকার গঠনের পরও প্রধানমন্ত্রীর চার জন উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করেন একজন স্থায়ী সচিব। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে ৪১ টি মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। বড় মন্ত্রণালয়, যেমন অর্থ মন্ত্রণালয়, একাধিক “বিভাগ”-এ বিভক্ত যা কার্যতঃ মন্ত্রণালয় বটে। প্রতিটি জেলা এবং উপজেলায় সরকারি প্রশাসন ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা। মন্ত্রণালয়ের মূল কাজ নীতিমালা প্রণয়ন যা বিভিন্ন সংযুক্ত বিভাগ, সংস্থা, বোর্ড, কমিশন, একাডেমী প্রভৃতির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির জন্য পৃথক কার্যালয় রয়েছে। ২০১১-এর হিসাবে দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১১ লাখ ৮২ হাজার ৭৬৫।, এর বাইরে শূন্যপদ রয়েছে প্রায় দেড় লাখ। কর্মরতদের মধ্যে প্রথম শ্রেণীর সংখ্যা ১ লাখ ১৯ হাজার ৫২২, দ্বিতীয় শ্রেণীর ৭৩ হাজার ৩২১, তৃতীয় শ্রেণীর ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৩১১ এবং চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর সংখ্যা ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬১১ জন।[৫০]

সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। এর দুটি স্তর রয়েছে যথা হাইকোর্ট ডিভিশন (উচ্চ আদালত বিভাগ) ও অ্যাপিলাত ডিভিশন (আপিল বিভাগ)। রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারকদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। দেশের আইন-কানুন অনেকটা প্রচলিত ব্রিটিশ আইনের আদলে প্রণীত; তবে বিবাহ এবং উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইনগুলো ধর্মভিত্তিক। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণরূপে প্রশাসন থেকে পৃথক করা হয়েছে।

বৈদেশিক সম্পর্কসমূহ

বাংলাদেশের বৈদেশিক বা আন্তর্জাতিক বা পররাষ্ট্রনীতি হল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রণীত অপরাপর রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ও আচরণের নীতিমালা। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বাংলাদেশ 'সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়', এই নীতি অনুসরণ করে বৈদেশিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সবসময়ই বিংশ শতাব্দীর স্নায়ুযুদ্ধে প্রভাবশালী রাষ্ট্রসমূহের পক্ষাবলম্বন থেকে বিরত থেকেছে। একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হওয়ার কারণে অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সুদৃঢ় কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক রয়েছে। পাশাপাশি, রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধী।

পররাষ্ট্র নীতি

বাংলাদেশের জন্মলগ্নে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২০ এপ্রিল প্রণীত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সুস্পষ্টভাবে জাতিসংঘ সনদের প্রতি বিশ্বস্ততা এবং বিশ্বসম্প্রদায়ভুক্ত একটি জাতি হিসেবে সকল দায়দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। পরবর্তীতে বাংলাদেশের সংবিধানে পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতিসমূহ সন্নিবেশিত হয়। সংবিধানের প্রস্তাবনায় “মানবজাতির প্রগতিশীল আশা-আকাঙ্ক্ষার সহিত সঙ্গতি রক্ষা করিয়া আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে পূর্ণ ভূমিকা পালন” করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়েছে। এরই অনুসৃতিতে সংবিধানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির অভিমুখ নির্ধারণ করে ৪টি মূল স্তম্ভ উল্লেখ করা হয়েছে:

  1. জাতীয় সমতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা, বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা;
  2. শক্তি প্রয়োগ পরিহার এবং সাধারণ ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ প্রয়াস;
  3. নিজস্ব আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্ধারণ ও গঠনে প্রত্যেক জাতির অধিকারের স্বীকৃতি এবং;
  4. বিশ্বের সর্বত্র নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামের সমর্থন।

২০১৫ সালের হালনাগাদ হিসেব অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বের ৫৩টি দেশে বাংলাদেশের ৬৯টি মিশন রয়েছে। ঢাকায় অবস্থিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংযুক্ত বিভাগসমূহ, বিশ্বের ৫৩টি দেশে থাকা ৬৯টি দূতাবাস/ মিশনসমূহের মাধ্যমে পররাষ্ট্র বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোন আন্তর্জাতিক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেনি; বরং এদেশের নিরাপত্তা বাহিনী বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাত-সংকুল দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ১৯৮০-এর দশক থেকে সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে সাংবিধানিক বাধা না-থাকায় একজন বাংলাদেশী দ্বিতীয় একটি দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারেন। কোন প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক উত্তর আমেরিকা (যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা), অস্ট্রেলিয়া অথবা ইউরোপের কোন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে সে-দেশের নাগরিকত্ব প্রাপ্তির জন্য পঠিতব্য শপথ বাক্যে বা স্বাক্ষরিত কোন দলিলে যদি বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রত্যাহারের শপথ না-থাকে, তাহলে তাঁর বাংলাদেশী নাগরিকত্ব বহাল থাকবে। এক্ষেত্রে বিদেশী নাগরিকত্বধারী প্রবাসী বাংলাদেশী তার বাংলাদেশী পাসপোর্ট ব্যবহার করতে পারবেন। বাংলাদেশী নাগরিক ইসরায়েল ব্যতীত পৃথিবীর যে-কোন দেশে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশী পাসপোর্ট ব্যবহার করতে পারেন।

সামরিক খাত

২০১২ এর হিসাবে, সেনাবাহিনীর বর্তমান শক্তি ৩০০,০০০ প্রায় রিজার্ভসহ,[৫১] এবং নৌবাহিনী ১৯,০০০। ২০১৮ সালের হিসাবে বিশ্বের ১৩৩টি দেশের সামরিক বাহিনীর শক্তিমত্তার র‌্যাঙ্কিং তৈরিকারী এক বৈশ্বিক সুচকে বাংলাদেশ ৫৬ তম স্থান দখল করেছে। সুচকটির শিরোনাম ‘গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স ২০১৮’ [৫][৫২] প্রথাগত প্রতিরক্ষা ভূমিকা ছাড়াও, সামরিক বাহিনীকে দুর্যোগ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে ত্রাণ ও অভ্যন্তরীণ নাগরিক নিরাপত্তার জন্য কর্তৃপক্ষ ডাক দিতে পারে। বাংলাদেশ বর্তমানে সক্রিয় কোনো চলমান যুদ্ধে নেই, কিন্তু এটি ১৯৯১ সালে অপারেশন মরুভূমি ঝড় ([Operation Desert Storm] ত্রুটি: {{Lang-xx}}: text has italic markup (সাহায্য)) যুদ্ধে ২,৩০০ সৈন্য প্রেরণ করে এবং বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে সারা বিশ্বে একটি শীর্ষ অবদানকারী (১০,৭৩৬) শান্তিরক্ষা বাহিনী। মে ২০০৭ সালে, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, লাইবেরিয়া, সুদান, পূর্ব তিমুর এবং আইভরি কোস্ট এর প্রধান স্থাপনায় ছিল।[৫৩][৫৪]

সরকার সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য প্রাগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অস্ত্র ক্রয় করছে। ২০০৯-২০১৩ মেয়াদে সরকার প্রায় ১৫হাজার ১০৪ কোটি টাকা মূল্যের অস্ত্র-শস্ত্র ক্রয় করেছে।[৫৫] বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক আধুনিকায়নের লক্ষ্য নিয়ে ২০১০ খ্রিস্টাব্দে "ফোর্সেস গৌল ২০৩০" শীর্ষক একটি পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ চলছে। ২০২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে চীন থেকে ২টি সাবমেরিন ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। কুতুবদিয়া চ্যানেলে একটি সাবমেরিন পোতাশ্রয় গড়ে তোলা হচ্ছে। রাশিয়া থেকে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যমানের Mi-17 হেলিকপ্টার, প্রশিক্ষণ বিমান, ট্যাংক-বিধ্বংসী মিযাইল, আরমার্ড ক্যারিয়ার ক্রয়ের বিশাল অস্ত্র ক্রয় চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।[৫৬] চীন ও রাশিয়া ছাড়াও বাংলাদেশ জার্মানী, ফ্রান্স, বেলারুশ, সার্বিয়া, জাপান, ইংল্যান্ড ও ইতালী থেকে সমরাস্ত্র ক্রয় করে থাকে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বানৌজা বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ফিগ্রেট।

দুর্নীতি

দুর্নীতি হল বাংলাদেশের একটি চলমান সমস্যা, এছাড়াও দেশটি ২০০৫ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক প্রকাশিত তালিকায় পৃথিবীর তৎকালীন সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে স্থান লাভ করে। ২০১১[৫৭] এবং ২০১২ সালে[৫৮] দেশটি তালিকার অবস্থানে যথাক্রমে ১২০ এবং ১৪৪ তম স্থান লাভ করে, যেখানে কোন দেশ নম্বরের দিক থেকে যত উপরের দিকে যাবে ততই বেশি দুর্নীতিগ্রস্থ হিসেবে গণ্য হবে। প্রধানত অতিরিক্ত ভোগবাদী মানসিকতা ও নৈতিক মুল্যবোধের অভাব ও অবমুল্যায়ন দুর্নীতির পেছনে দায়ী, পাশাপাশি দরিদ্রতাও ক্ষেত্রবিশেষে দুর্নীতির প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশে সব শ্রেণির ব্যাক্তির ঘুষ গ্রহণের নজির রয়েছে। তবে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ঘুষ গ্রহণের নজির বেশি, যার কারণ স্ব‌ল্প সময়ের ব্যাবধানে জীবনযাত্রার মান মধ্যবিত্ত হতে বিলাসবহুল পর্যায়ে উন্নীতকরণের মানসিকতা। এছাড়াও মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তগণ তাদের জীবনযাত্রা মান উন্নয়নে ঘুষ গ্রহণ করে।

অর্থনীতি

পাট বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল
ধানক্ষেতে কৃষক

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। জাতিসংঘের শ্রেণীবিন্যাস অনুযায়ী এটি একটি স্বল্পোন্নত দেশ। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে ১০০০ টাকার আন্তজার্তিক মূল্যমান কমবেশী ১২.৫৯৯২ মার্কিন ডলার (১ মার্কিন ডলার = ৭৯.৩৭ টাকা)[৫৯]। দেশে বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ ৩১.৯০ বিলিয়ন ডলারের বেশী।[৬০]

সুইজার‌্যলান্ডের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট সুইসের বৈশ্বিক সম্পদ প্রতিবেদন ২০১৮ অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ২,৩৩২ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এ প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০০ সালে বাংলাদেশের মানুষের সম্পদের সর্বমোট মূল্যমান ছিল ৭,৮০০ কোটি মার্কিন ডলার এবং প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ ছিল ১,১৩৮ মার্কিন ডলার। সম্পদের সর্বমোট মূল্যমান বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮-এ ২৪,০০০ কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়। এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যা ১০,২৭,৯৩,০০০ জন ধরে প্রাক্কলন করা হয়েছে।[৬১]

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক খানাজরীপ অনুযায়ী সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ মানুষের আয় দেশের সর্বমোট আয়ের মাত্র ০.২৩ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান ইঙ্গিত করে যে আয়বণ্টনের অসমতা গত এক দশকে বৃদ্ধি পেয়েছে কেননা ২০০০ সালে দেশের সর্বমোট আয়ে সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ মানুষের অংশ ছিল ০.৭৮ শতাংশ। একইভাবে দেশের সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ মানুষের আয় ২০০০-এ মোট জাতীয় আয়ের ২৪.৬১ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৮৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। দেশের অনতম অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী আয় বণ্টনের অসমতার সূচক জিনি সহগের মান বৃদ্ধি পেয়ে ০.৪৮ এ পৌঁছেছে।[৬২]

১৯৮০'র দশক থেকে শিল্প ও সেবা খাতের ব্যাপক সম্প্রসারণ সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি অদ্যাবধি কৃষিনির্ভর কারণ দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ কৃষিজীবী। দেশের প্রধান কৃষিজ ফসলের মধ্যে রয়েছে ধান, পাট এবং চা। দেশে আউশ, আমন, বোরো এবং ইরি ধান উৎপন্ন হয়ে থাকে। পাট, যা বাংলাদেশের ‘সোনালী আঁশ’ নামে পরিচিত, এক সময় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান উৎস ছিলো।[৬৩] বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার অধিকাংশ আসে রফতানিকৃত তৈরি পোশাক থেকে, এবং অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার বেশীরভাগ ব্যয় হয় একই খাতের জন্য কাঁচামাল আমদানীতে।[৬৪] সস্তা শ্রম ও অন্যান্য সুবিধার কারণে ১৯৮০-র দশকের শুরু থেকে এই খাতে যথেষ্ট বৈদেশিক ও স্থানীয় বিনিয়োগ হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তৈরী পোশাক রপ্তানীর পরিমাণ ছিল ২৮ দশমিক ১৫ বিলিয়ন কোটি মার্কিন ডলার।[৬৫]

কক্সবাজার সৈকতে জেলেদের নৌকা

তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন[৬৬], যাদের ৯০%-ই নারী শ্রমিক।[৬৭] বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার আরেকটি বড় অংশ আসে প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো অর্থ হতে। পরিবর্তিত হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে ১৪৬৬ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।[৬৮] নানা অর্থনৈতিক সূচকে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের অবস্থান পিছনের সারিতে, তবে বিশ্ব ব্যাংকের ২০০৫ সালের দেশভিত্তিক আলোচনায় এদেশের শিক্ষা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য সামাজিক খাতে উন্নয়নের প্রশংসা করা হয়েছে।

১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশ গড়ে ৫% থেকে ৬.২% শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে এসেছে। মধ্যবিত্ত ও ভোক্তা শ্রেণীর প্রসারণ ঘটেছে দ্রুত। ২০০৫ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে গোল্ডম্যান স্যাক্স-এর বিশ্লেষণে বাংলাদেশকে আগামী ১১ দেশ এর মধ্যে গণ্য করা হয়েছে।[৬৯]

২০১৬-১৭ অর্থবৎসরের প্রাক্কলন অনুযায়ী এবছর প্রায় ৬.৮% জিডিপি প্রবৃদ্ধির ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছে।[৭০]

বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সারা দেশে চালু হওয়া ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচী। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনুস ক্ষুদ্র ঋণের প্রবক্তা। ১৯৯০ এর দশকের শেষভাগে গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ; ব্র্যাকসহ অন্যান্য সাহায্য সংস্থারও প্রায় ২৫ লাখ সদস্য রয়েছে।[৭১]

দেশের শিল্প ও রফতানির উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (ইপিজেড) স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বা বেপজা এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। দেশের রফতানি ও আমদানি বাণিজ্যর সিংহভাগ চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর, মংলা সমুদ্র বন্দরবেনাপোল স্থলবন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। তাই বাংলাদেশের প্রাচীনতম যাতায়াত পথ হিসেবে গণ্য করা হয় নৌপথ বা জলপথকে। নৌপথের নদীপথ এবং সমুদ্রপথ উভয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। নদীমাতৃক দেশ হিসেবে অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যবস্থায় নদীপথ গুরুত্বপূর্ণ, তবে বহির্বিশ্বের সাথে যাতায়াত ব্যবস্থায় সমুদ্রপথ ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে প্রায় ৮৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ অভ্যন্তরীণ নাব্য জলপথ রয়েছে। এর মধ্যে ৫৪০০ কিলোমিটার সারা বছর নৌচলাচলের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। অবশিষ্ট প্রায় ৩০০০ কিলোমিটার শুধু বর্ষাকালে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের নদীগুলো নৌচলাচলের জন্য বেশি উপযোগী। এ অঞ্চলেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দরগুলো অবস্থিত: ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, খুলনা প্রভৃতি। নদীপথে চলাচলকারী যাত্রীদের মধ্যে অধিকাংশই (৯৪%) নৌকালঞ্চে এবং বাকিরা (৬%) স্টিমারে যাতায়াত করেন। দেশের সমুদ্রপথ মূলত ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের প্রধান দুইটি সমুদ্র বন্দর, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর,মোংলা সমুদ্র বন্দর এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর একাজে ব্যবহৃত হয়।[৭২]

বাংলাদেশের স্থল যোগাযোগের মধ্যে সড়কপথ উল্লেখযোগ্য। সড়কপথের অবকাঠামো নির্মাণ এদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও ভৌগোলিক অবকাঠামোর মধ্যে বেশ ব্যয়বহুল। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশে পাকা রাস্তার পরিমাণ ছিলো ১৯৩১.১৭ কিলোমিটার, ১৯৯৬-১৯৯৭ সালের দিকে তা দাঁড়ায় ১৭৮৮৫৯ কিলোমিটারে।[৭২] ২০১০ খ্রিস্টাব্দে দেশের জাতীয় মহাসড়ক ৩৪৭৮ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪২২২ কিলোমিটার এবং ফিডার/জেলা রোড ১৩২৪৮ কিলোমিটার। দেশের সড়কপথের উন্নয়নের জন্য "বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন" (বিআরটিসি) নামে একটি সংস্থা গঠন করা হয়েছে।[৭৩] সড়কপথে প্রায় সব জেলার সাথে যোগাযোগ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো (ব্রিজ, কালভার্ট) নির্মিত না হওয়ায় ফেরি পারাপারের প্রয়োজন পরে। সড়কপথে জেলাভিত্তিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় বড় যানবাহন যেমন: ট্রাক, বাস ব্যবহৃত হলেও আঞ্চলিক বা স্থানীয় পর্যায়ে ট্যাক্সি, সিএনজি, মিনিবাস, ট্রাক ইত্যাদি যান্ত্রিক বাহন ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও বহু পুরাতন আমলের অযান্ত্রিক বাহন যেমন: রিকশা, গরুর গাড়ি, ঠেলাগাড়িও ব্যবহৃত হয়।

এছাড়া স্থলভাগে রেলপথ সবচেয়ে নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা হিসেবে ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের সময় বাংলাদেশে রেলপথ ছিলো ২৮৫৭ কিলোমিটার।[৭২] ২০০৮-২০০৯ সালের হিসাবমতে, বাংলাদেশে রেলপথ রয়েছে ২৮৩৫ কিলোমিটার।[৭৩] এদেশে মিটারগেজ এবং ব্রডগেজ-দু'ধরনের রেলপথ রয়েছে।[৭২] রেলপথ, রেলস্টেশনের দ্বারা পরিচালিত হয়, এছাড়া বিভিন্ন স্টেশনকে জংশন হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। রেলপথকে কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে নামে একটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। বাংলাদেশকে ট্রান্স এশীয় রেলওয়ে জালের সঙ্গে সংযোজনের জন্য চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ অবধি ১২৮ কিলোমিটার রেলসড়ক স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে (২০১৩)। এই রেলসড়ক মিয়ানমারের গুনদুম রেলস্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।[৭৪]

এছাড়াও দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে বাংলাদেশে আকাশপথে বা বিমানপথে যাতায়াতের ব্যবস্থাও রয়েছে। অভ্যন্তরীণ বিমান যাতায়াত ব্যবস্থায় দেশের ভিতরকার বিভিন্ন বিমানবন্দরে যাতায়াত করা যায়, আর আন্তর্জাতিক বিমান যাতায়াত ব্যবস্থায় শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বহির্দেশে গমনাগমন করা যায়।[৭২] ঢাকার কুর্মিটোলায় অবস্থিত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাংলাদেশের অন্যতম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট এবং কক্সবাজারেও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা হলো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স

বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা মূলত ছিলো ডাক আদান-প্রদানভিত্তিক। কিন্তু কালের আবর্তনে টেলিগ্রাফ, টেলিফোন এবং পরবর্তিতে মোবাইল ফোনের প্রবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন সংঘটিত হয়।

মুদ্রাব্যবস্থা

বাংলাদেশে দুই ধরনের মুদ্রাব্যবস্থা প্রচলিত আছে, ধাতব মুদ্রা ও কাগুজে নোট। ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেডের (SPCBL) অধিনে (শিমুলতলী, গাজীপুর) কাগুজে নোট গুলো মুদ্রিত হয়। নোট গুলো প্রচলন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১০ টাকার নোট SPCBL কর্তৃক মুদ্রিত প্রথম নোট। নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস লিমিটেড, বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠান। ১ টাকা এবং ১০০ টাকার নোট এ দেশে প্রথম মুদ্রিত নোট। বাংলাদেশের প্রথম টাকা ও মুদ্রার নকশাকার কে জি মুস্তফা। বর্তমানে নয়টি(৯) কাগুজে নোট এবং তিনটি(৩) ধাতব মুদ্রা চালু আছে।

পর্যটন খাত

কক্সবাজার পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত
মহাস্থানগড়- বগুড়া, প্রাচীন বাংলার প্রথম রাজধানী, পুন্ড্রনগর নামে পরিচিত ছিল। বর্তমানে মহাস্থানগড়
সুন্দরবন, বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বা লবণাক্ত ভূমির বন

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশের যোগাযোগ ও পর্যটন খাত অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল। আগস্ট, ১৯৭৫ সালে পৃথক একটি মন্ত্রণালয় হিসেবে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করা হয়। জানুয়ারি, ১৯৭৬ সালে এটি পুণরায় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বিভাগে পরিণত হয়। ডিসেম্বর, ১৯৭৭ সালে পৃথকভাবে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় খোলা হয়। ২৪ মার্চ, ১৯৮২ সালে এ মন্ত্রণালয়কে বিলুপ্ত করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যাস্ত করা হয়। এরপর ১৯৮৬ সাল থেকে উক্ত মন্ত্রণালয়কে পুণঃপ্রতিষ্ঠা অদ্যাবধি তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে।[৭৫]

জনসংখ্যার উপাত্ত

২০১১ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত আদমশুমারির প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৪ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ।[৭৬][৭৭][৭৮] এই আদমশুমারির প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২.২ শতাংশ।[৭৬][৭৮] সরকারি সংস্থা পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাক্কলন অনুযায়ী জুন ২০১৪-এ জনসংখ্যা ১৫৬,৪৯৯,৬৭৩ জন বা ১৫.৬৪ কোটি।[৭৯] অন্য একটি প্রাক্কলন অনুসারে মার্চ ২০১৪-এ বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৫.৯৫ কোটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির প্রাক্কলন ১৫.৮৫ কোটি। এই হিসাবে বাংলাদেশ পৃথিবীর ৮ম জনবহুল দেশ। জনঘনত্ব প্রতি বর্গমাইল এলাকায় ২৪৯৭ জনের বেশী।[৮০][৮১]

২০১১-এর আদমশুমারির প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী পুরুষ ও নারীর সংখ্যা যথাক্রমে ৭ কোটি ১২ লাখ ৫৫ হাজার এবং ৭ কোটি ১০ লাখ ৬৪ হাজার অর্থাৎ নারী ও পুরুষের অনুপাত ১০০:১০৩।[৭৬][৮২] জনসংখ্যার নিরিখে এটি বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম দেশ। এখানে জনবসতির ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১,০৫৫ জন, যা সারা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ (কিছু দ্বীপ ও নগর রাষ্ট্র বাদে)। দেশের অধিকাংশ মানুষ শিশু ও তরুণ বয়সী: যেখানে ০–২৫ বছর বয়সীরা মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ, সেখানে ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরা মাত্র ৩ শতাংশ। এদেশে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানুষের গড় আয়ু ৭১.৫ বছর।[৮৩]

নোবেল পুরস্কারে ভূষিত অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের গ্রামীণ দারিদ্র বিমোচনে বিশেষ অবদান রেখেছেন।

জাতিগতভাবে বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ অধিবাসী বাঙালি।[৮৪] বাকি ২ শতাংশ অধিবাসী বিভিন্ন উপজাতি এবং বিহারী বংশোদ্ভূত। দেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ১৩টি উপজাতি রয়েছে। এদের মধ্যে চাকমামারমা উপজাতি প্রধান। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরের উপজাতিগুলোর মধ্যে গারোসাঁওতাল উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, কক্সবাজার এলাকায় বার্মা থেকে বিতাড়িত স্বল্পসংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছে। মোট জনগোষ্ঠীর ২১.৪ শতাংশ শহরে বাস করে; বাকি ৭৮.৬ শতাংশ গ্রামাঞ্চলের অধিবাসী।

সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে দারিদ্র বিমোচন ও জনস্বাস্থ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশে জনসংখ্যার এক বিশাল অংশ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে। মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক গড়ে দৈনিক মাত্র ১ মার্কিন ডলার আয় করে (২০০৫)। সরকারি হিসেব অনুযায়ী মাথাপিছু আয় বর্তমানে ১ হাজার ৫শ মার্কিন ডলারের বেশি। [৮৫] আর্সেনিকজনিত বিষক্রিয়া বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা।[৮৬] ১৯৯০ দশকের শেষভাগে বাংলাদেশে ম্যালেরিয়াডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে।

প্রধান শহরাঞ্চল

অবস্থান শহর জনসংখ্যা (২০১১ সাল পর্যন্ত)[৪৭][৮৭]
ঢাকা ৭,০৩৩,০৭৫
চট্টগ্রাম ২,৫৯২,৪৩৯
খুলনা ৬৬৩,৩৪২
নারায়ণগঞ্জ ৫৪৩,০৯০
সিলেট ৪৭৯,৮৩৭
গাজীপুর ৪৭৬,৩৫০
রাজশাহী ৪৪৯,৭৫৬
বগুড়া ৩৫০,৩৯৭
বরিশাল ৩২৮,২৭৮
১০ কুমিল্লা ৩২৬,৩৮৬
১১ পাবনা ২৮৬,০৫৪

ভাষা

দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষের মাতৃভাষা বাংলা, যা বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা। সরকারি, বেসকারি ও ব্যবসায়ীক কাজ-কর্মে ইংরেজি ভাষা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে বৈদেশিক যোগাযোগ ব্যতীত অন্যান্য সরকারি কর্মকাণ্ডে বাংলা ভাষা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

ধর্ম

২০১৮ সালে বাংলাদেশে ধর্ম[৮৮]
ধর্ম শতাংশ
মুসলিম
  
৮৬.৬%
হিন্দু
  
১২.১%
বৌদ্ধ
  
০.৬%
খ্রিস্টান
  
০.৪%

জনগোষ্ঠির প্রধান ধর্মবিশ্বাস ইসলাম ধর্মে (৮৬.৬ শতাংশ); এরপরেই রয়েছে হিন্দু ধর্ম (১২.১ শতাংশ), বৌদ্ধ ধর্ম (০.৬ শতাংশ), খ্রিস্ট ধর্ম (০.৪ শতাংশ), এবং অন্যান্য (০.৩ শতাংশ)।[৮৯] মুসলমানদের মধ্যে অধিকাংশ সুন্নি মতাদর্শী। ইসলাম হল বাংলাদেশের বৃহত্তম ও দাপ্তরিক রাষ্ট্রধর্ম, যা হল মোট জনসংখ্যার ৮৬.৬ শতাংশ।[৮৮] দেশটি অধিকাংশ বাঙ্গালি মুসলিমের আবাসস্থল, যা মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয়-বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী। অধিকাংশ বাংলাদেশি মুসলিম হল সুন্নি, এরপর রয়েছে শিয়া ও আহ্মাদিয়া। এর প্রায় চার শতাংশ হল উপাধিবিহীন মুসলিম[৯০] বাংলাদেশের রয়েছে বিশ্বের চতূর্থ-বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যা এবং দেশটি হল ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের পর বিশ্বের তৃতীয়-বৃহত্তম মুসলিম-সংখ্যাধিক্যের দেশ।[৯১]এই অঞ্চলে সুফিবাদের সুদীর্ঘ পরম্পরা রয়েছে।[৯২] বাংলাদেশে মুসলিমদের বৃহত্তম সমাবেশ হয় তাবলীগ জামাআত আয়োজিত বার্ষিক বিশ্ব ইজতেমায়, যা হজ্জের পর মুসলিম বিশ্বে দ্বিতীয়-বৃহত্তম মুসলিম জমায়েত।

হিন্দুধর্ম হল জনসংখ্যার দিক থেকে মোট জনসংখ্যার ১২.১ শতাংশ;[৮৮] এদের অধিকাংশ বাঙ্গালি হিন্দু, এবং কিছু অংশ হল সংখ্যালঘু নৃত্বাত্তিক জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশি হিন্দুগণ হল নেপাল ও ভারতের পর বিশ্বের দ্বিতীয়-বৃহত্তম হিন্দুধর্মীয় সম্প্রদায়। বাংলাদেশে হিন্দু জনগোষ্ঠী সমভাবে ও বহুলভাবে বিস্তৃত, যারা আবাসিক ঘনত্বের দিক থেকে গোপালগঞ্জ, দিনাজপুর,সিলেট, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, খুলনা, যশোর, চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম পাহড়ি এলাকায় সংখ্যাধিক। জনসংখ্যার দিক থেকে ক্রমশ হ্রাসপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী হওয়া সত্ত্বেও, হিন্দু সম্প্রদায় হল মুসলিমদের পর ঢাকার দ্বিতীয়-বৃহত্তম ধর্মীয় সম্প্রদায়।

বৌদ্ধধর্ম হল দেশটির তৃতীয়-বৃহত্তম ধর্ম, শতাংশের দিক থেকে ০.৬ শতাংশ। আবাসিক ঘনত্বের দিক থেকে বাংলাদেশি বৌদ্ধগণ চট্টগ্রাম পাহাড়ি এলাকার আদিবাসী গোষ্ঠীদের (বিশেষত চাকমা, মারমা ও তেঞ্চাঙ্ঘা জনগোষ্ঠী)মধ্যে অধিক ও উপকূলীয় চট্টগ্রামে ব্যাপকসংখ্যক বৌদ্ধ বাস করে। খ্রিস্টধর্ম হল দেশের চতূর্থ-বৃহত্তম ধর্ম, সংখ্যায় ০.৪ শতাংশ।[৯৩]

বাংলাদেশের সংবিধান ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করলেও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। এতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও সকল ধর্মের মানুষের সমান স্বীকৃতি নিশ্চিত করে।[৯৪] ১৯৭২ সাল থেকে, বাংলাদেশ হল দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সাংবিধানিক-ধর্মনিরপেক্ষ দেশ।[৯৫]

শিক্ষা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল ভবন
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের ভবন
ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশে স্বাক্ষরতার হার ক্রমবর্ধমান। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষার হার ছিল ৬৫ শতাংশ। ২০১৬ তে তা আরো বৃদ্ধি লাভ করে ৭২.৭৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০১৮ সালে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী দেশে সাক্ষরতার হার ৭২.৯ শতাংশ। ২০০৭ এর তুলনায় সাক্ষরতার হার ২৬.১০ শতাংশ বেড়েছে। ২০১০ সালে সাক্ষর নারী ছিল জনসংখ্যার ৫২.২ শতাংশ এবং পুরুষ ৬১.৩ শতাংশ। ২০১৬ তে সাক্ষর নারীর হার ৬৯.৯০ শতাংশে এবং সাক্ষর পুরুষের হার ৭৫.৬২ শতাংশে উন্নীত হয়।[৯৬]

বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থা তিন সারির এবং বহুলাংশে ভর্তুকিপুষ্ট। বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বহু বিদ্যালয়ের পরিচালনা ব্যয় সর্বাংশে বহন করে। সরকার অনেক ব্যাক্তিগত স্কুলের জন্য অর্থায়ন করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা খাতে, সরকার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের মাধ্যমে ১৫ টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়কে অর্থায়ন দিয়ে থাকে। ২০১০ খ্রিস্টাব্দ থেকে সরকার মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সকল ছাত্র-ছাত্রীকে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করে আসছে। শিক্ষা বৎসরের প্রথম দিনের মধ্যেই ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে নতুন ক্লাশের বই তুলে দেয়ার ঐতিহ্য প্রবর্তিত হয়েছে ২০১১ খ্রিস্টাব্দে।

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় তিন পদ্ধতি প্রচলিত। প্রথমত সাধারণ পদ্ধতির স্কুলগুলোতে সরকারি পাঠ্যক্রম অনুসৃত হয়। এসব স্কুলে শিক্ষাপ্রদানের ভাষা বাংলা। দ্বিতীয়ত রয়েছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। এগুলোতে পশ্চিমা পাঠ্যক্রম অনুসরণ করা হয়। তুলনামূলকভাবে সীমিত সংখ্যক হলেও উচ্চ মানের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য এই স্কুলগুলো প্রসিদ্ধ। তৃতীয়ত রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা। শেষোক্ত শিক্ষা ব্যবস্থার মূল ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষা। তবে ভাষা, গণিত, বিজ্ঞান, ব্যবসায় ইত্যাদি সকল বিষয়ও পাঠ্য।

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে তিনভাগে ভাগ করা যায়: সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় , বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় । বাংলাদেশে ৩৭টি সরকারি, ৮৩টি বেসরকারি এবং দুটো আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় চালু রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থির সংখ্যা বিবেচনায় বৃহত্তম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯২১ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত) প্রাচীনতম। ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি আন্তর্জাতিক সংস্থা ওআইসি-র একটি অঙ্গসংগঠন, এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ এবং দক্ষিণ আমেরিকা উপমহাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এশিয়ার ১৪টি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। ফ্যাকাল্টির সদস্যবৃন্দ এশিয়া, উত্তর আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি স্থানের বিখ্যাত সব প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছেন।[৯৭] বুয়েট, রুয়েট, কুয়েট, চুয়েট, বুটেক্স এবং ডুয়েট দেশের ছ'টি সরকারি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। কিছু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিও এখানে রয়েছে, তাদের মধ্যে শাবিপ্রবি, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি, নোবিপ্রবি, পবিপ্রবি উল্লেখযোগ্য।এছাড়াও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য

বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ শুরু হয়। এর ফলে ব্যক্তিখাতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হতে শুরু করে। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বাংলাদেশে ব্যক্তিখাতে স্থাপিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭৮।[৯৮]

২০০৫ খ্রিস্টাব্দের হিসাবে বাংলাদেশে স্বাক্ষরতার হার প্রায় ৪১ শতাংশ।[৯৯] ইউনিসেফের ২০০৪ খ্রিস্টাব্দের হিসাবে পুরুষদের মধ্যে স্বাক্ষরতার হার ৫০ শতাংশ এবং নারীদের মধ্যে ৩১ শতাংশ।[১০০] তবে সরকার বাস্তবায়িত বিবিধ সাক্ষরতা কর্মসূচীর ফলে দেশে শিক্ষার হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এর মধ্যে ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচী সবচেয়ে বেশি সাফল্য অর্জন করেছে।[১০১] দেশে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক। এছাড়া মেয়েদের শিক্ষার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রবর্তিত বৃত্তি প্রদান কর্মসূচী নারীশিক্ষাকে এগিয়ে নিচ্ছে।[১০২] ২০১৮ সালে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী দেশে সাক্ষরতার হার ৭২.৯ শতাংশ।

স্বাস্থ্য খাত

দারিদ্রপীড়িত বাংলাদেশে অপুষ্টি একটি দুরূগ সমস্যা যা স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। অপুষ্টিজনিত কারণে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হিসেবে পরিচিত শিশুরা বিশ্ব ব্যাংকের জরীপে বিশ্বে শীর্ষস্থান দখল করেছে যা মোটেই কাঙ্খিত নয়।[১০৩][১০৪] মোট জনগোষ্ঠীর ২৬% অপুষ্টিতে ভুগছে।[১০৫] ৪৬% শিশু মাঝারি থেকে গভীরতর পর্যায়ে ওজনজনিত সমস্যায় ভুগছে।[১০৬] ৫ বছর বয়সের পূর্বেই ৪৩% শিশু মারা যায়। প্রতি পাঁচ শিশুর একজন ভিটামিন এ এবং প্রতি দু'জনের একজন রক্তস্বল্পতাজনিত রোগে ভুগছে।[১০৭]

তবে গত দুই শতকে মানুষের খাদ্যগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে (২০১৩: ২০৪০ গ্রাম দৈনিক) এবং সুষম খাদ্যাভাস গড়ে উঠেছে যার ফলস্বরূপ অকাল মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে এবং জনগণের গড় আয়ু ৭১ দশমিক ৬ বৎসরে (২০১৬ খ্রি:) উন্নীত হয়েছে।[১০৮] বহু সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং ১৩ হাজার কমিউনিটি হাসাপাতালে মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার মান অনেকাংশে উন্নীত হয়েছে। জন্মকালে শিশু মৃত্যু হার (২০১৩: হাজারে ৫৩ জন) ও মাতৃমৃত্যুর হার (২০১৩: হাজারে ১৪৩ জন) উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে।[১০৯]

সংস্কৃতি

সাহিত্য

ঢেঁকি, যা শস্য ভাঙ্গার কাজে ব্যবহৃত হয়, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে একসময় বহুল ব্যবহৃত হত

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ঐতিহ্য হাজার বছরের বেশি পুরনো। ৭ম শতাব্দীতে লেখা বৌদ্ধ দোহার সঙ্কলন চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত। মধ্যযুগে বাংলা ভাষায় কাব্য, লোকগীতি ও পালাগানের প্রচলন ঘটে। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে বাংলা কাব্য ও গদ্যসাহিত্যের ব্যাপক বিকাশ ঘটে। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ বাংলা ভাষায় সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। বাংলার লোক সাহিত্যও সমৃদ্ধ; মৈমনসিংহ গীতিকায় এর পরিচয় পাওয়া যায়।

পরিবেশন শিল্পকলা

নৃত্যশিল্পের নানা ধরন বাংলাদেশে প্রচলিত। এর মধ্যে রয়েছে উপজাতীয় নৃত্য, লোকজ নৃত্য, শাস্ত্রীয় নৃত্য ইত্যাদি। দেশের গ্রামাঞ্চলে যাত্রা পালার প্রচলন রয়েছে। বাংলাদেশের সংগীত বাণীপ্রধান; এখানে যন্ত্রসংগীতের ভূমিকা সামান্য। গ্রাম বাংলার লোক সঙ্গীতের মধ্যে বাউল গান, জারি, সারি, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি, গম্ভীরা, কবিগান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। গ্রামাঞ্চলের এই লোকসঙ্গীতের সাথে বাদ্যযন্ত্র হিসাবে মূলত একতারা, দোতারা, ঢোল, বাঁশি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

প্রচারমাধ্যম ও চলচ্চিত্র

বিয়ের সাজে বৌ, বাংলাদেশের হস্তশিল্পের নমুনা

বাংলাদেশে মোট প্রায় ২০০টি দৈনিক সংবাদপত্র ও ১৮০০রও বেশি সাপ্তাহিক বা মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। তবে নিয়মিতভাবে পত্রিকা পড়েন এরকম লোকের সংখ্যা কম, মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৫%। গণমাধ্যমের মধ্যে রেডিও অঙ্গনে বাংলাদেশ বেতারবিবিসি বাংলা জনপ্রিয়। সরকারি টেলিভিশন সংস্থা বাংলাদেশ টেলিভিশন ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে বেসরকারি ১০টির বেশি উপগ্রহভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল ও ৫টির বেশি রেডিও সম্প্রচারিত হয়। ঢাকা-কেন্দ্রিক চলচ্চিত্র শিল্প হতে প্রতি বছর প্রায় ৮০ হতে ১০০টি বাংলা চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়।

রন্ধনশৈলী

বাংলাদেশের রান্না-বান্নার ঐতিহ্যের সাথে ভারতীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের রান্নার প্রভাব রয়েছে। ভাত, ডালমাছ বাংলাদেশীদের প্রধান খাবার, যেজন্য বলা হয়ে থাকে মাছে ভাতে বাঙালি। দেশে ছানা ও অন্যান্য প্রকারের মিষ্টান্ন, যেমন রসগোল্লা, চমচম, সন্দেশ, কালোজাম বেশ জনপ্রিয়।

পোশাক

বাংলাদেশের নারীদের প্রধান পোষাক শাড়ি। অল্পবয়স্ক মেয়েদের মধ্যে, বিশেষত শহরাঞ্চলে সালোয়ার কামিজেরও প্রচলন রয়েছে। পুরুষদের প্রধান পোষাক লুঙ্গি, তবে শহরাঞ্চলে পাশ্চাত্যের পোষাক শার্ট-প্যান্ট প্রচলিত। বিশেষ অনুষ্ঠানে পুরুষরা পাঞ্জাবী-পায়জামা পরিধান করে থাকেন।

উৎসব

এখানকার প্রধান সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে মুসলমান সম্প্রদায়ের উৎসব ঈদুল ফিত্‌র , ঈদুল আজহামিলাদুন্নবী এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গাপূজা। বৌদ্ধদের প্রধান উত্সব বুদ্ধ পূর্ণিমা, আর খ্রীস্টানদের বড়দিন। তবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব হচ্ছে দুই ঈদ, অর্থাৎ ঈদুল ফিত্‌র ও ঈদুল আজহা। ঈদুল ফিতরের আগের দিনটি বাংলাদেশে ‘চাঁদ রাত’ নামে পরিচিত। ছোট ছোট বাচ্চারা এ দিনটি অনেক সময়ই আতশবাজির মাধ্যমে পটকা ফাটিয়ে উদযাপন করে। ঈদুল আজহার সময় শহরাঞ্চলে প্রচুর কোরবানির পশুর আগমন হয়, এবং এটি নিয়ে শিশুদের মাঝে একটি উৎসবমুখর উচ্ছাস থাকে। এই দুই ঈদেই বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা ছেড়ে বিপুলসংখ্যক মানুষ তাঁদের জন্মস্থল গ্রামে পাড়ি জমায়। এছাড়া বাংলাদেশের সর্বজনীন উত্সবের মধ্যে পহেলা বৈশাখ প্রধান। গ্রামাঞ্চলে নবান্ন, পৌষ পার্বণ ইত্যাদি লোকজ উত্সবের প্রচলন রয়েছে। এছাড়া স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এবং ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে ২১শে ফেব্রুয়ারি তারিখে শহীদ দিবস পালিত হয়।

খেলাধূলা

ঢাকার শের-এ-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যবর্তী একটি ক্রিকেট ম্যাচ

বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু বা কাবাডি। এই খেলার মতোই বাংলাদেশের অধিকাংশ নিজস্ব খেলাই উপকরণহীন কিংবা উপকরণের বাহুল্যবর্জিত। উপকরণবহুল খুব কম খেলাই বাংলাদেশের নিজস্ব খেলা। উপকরণহীন খেলার মধ্যে এক্কাদোক্কা, দাড়িয়াবান্দা, গোল্লাছুট, কানামাছি, বরফ-পানি, বউচি, ছোঁয়াছুঁয়ি ইত্যাদি খেলা উল্লেখযোগ্য। উপকরণের বাহুল্যবর্জিত বা সীমিত সহজলভ্য উপকরণের খেলার মধ্যে ডাঙ্গুলি, সাতচাড়া, রাম-সাম-যদু-মধু বা চোর-ডাকাত-পুলিশ, মার্বেল খেলা, রিং খেলা ইত্যাদির নাম করা যায়। সাঁতার, বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায় ছাড়া, সাধারণ্যের কাছে আলাদা ক্রীড়া হিসেবে তেমন একটা মর্যাদা পায় না, যেহেতু বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবশ্যকীয়ভাবে সাঁতার শিখতে হয়। গৃহস্থালী খেলার মধ্যে লুডু, সাপলুডু, দাবা বেশ প্রচলিত। এছাড়া ক্রিকেটফুটবলের মতো বিভিন্ন বিদেশী খেলাও এদেশে বেশ জনপ্রিয়।

১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দল কেনিয়াকে হারিয়ে আইসিসি ট্রফি জয় করে, যার ফলে ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথমবারের মতো তাঁরা বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়। সেবার প্রথম পর্বে বাংলাদেশ স্কটল্যান্ডপাকিস্তান ক্রিকেট দলকে পরাজিত করে। এছাড়া ২০০০ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল টেস্ট ক্রিকেট খেলার মর্যাদা লাভ করে। ক্রিকেট দলের মধ্যে ধারাবাহিক সাফল্যের অভাব থাকলেও তাঁরা বিশ্বের প্রধান ক্রিকেট দলগুলোকে, যেমন: অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলংকাকে হারিয়ে এসেছে। ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অতি গুরুত্বপূর্ণ দুটি দল ভারতদক্ষিণ আফ্রিকাকে এবং ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে নাটকীয়ভাবে পরাজিত করে বিশ্বক্রিকেটে বিশেষ আলোচনার ঝড় তোলে। টেস্ট ক্রিকেট খেলার মর্যাদা লাভ করার পর এপর্যন্ত বাংলাদেশ তিনটি টেস্ট সিরিজ জয় করেছে। প্রথমটি জিম্বাবুয়ের সাথে ২০০৪-'০৫ খ্রিস্টাব্দে, দ্বিতীয়টি জুলাই ২০০৯-এ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপরীতে এবং তৃতীয়টি ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে জিম্বাবুয়েকে।[১১০] বাংলাদেশের খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সব ফরম্যাট ক্রিকেটে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের মর্যাদা অর্জন করেন।[১১১]

অন্যান্য খেলার মধ্যে হকি, হ্যান্ডবল, সাঁতার, কাবাডি এবং দাবা উল্লেখযোগ্য। এযাবৎ ৫ জন বাংলাদেশী - নিয়াজ মোর্শেদ, জিয়াউর রহমান, রিফাত বিন সাত্তার, আবদুল্লাহ আল রাকিব এবং এনামুল হোসেন রাজীব - দাবায় গ্র্যান্ড মাস্টার খেতাব লাভ করেছেন।[১১২][১১৩][১১৪][১১৫] বাংলাদেশের খেলাধুলা নিয়ন্ত্রণ বোর্ড ২৯টি খেলাধূলা সংক্রান্ত ভিন্ন ভিন্ন ফেডারেশন নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশ, ২০১১ খ্রিস্টাব্দে যৌথভাবে ভারত ও শ্রীলংকার সাথে আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ এককভাবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা, বাণিজ্যনগরী চট্টগ্রাম ও চা-শিল্পের জন্য বিখ্যাত সিলেটে খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হয়।

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "NATIONAL SYMBOLS→National march"শামীম রেজা (ইংরেজি ভাষায়)। বাংলাদেশ: বাংলা একাডেমি। 
  2. "Article 3. The state language"। The Constitution of the People's Republic of Bangladeshbdlaws.minlaw.gov.bd। Ministry of Law, The People's Republic of Bangladesh। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  3. জানুন [Discover Bangladesh]। National Web Portal of Bangladesh। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ 
  4. জানুন [Bangladesh] (পিডিএফ)। US department of States। 
  5. হক, শাকিলা (১৩ ডিসেম্বর ২০১৭)। "পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে এগিয়ে বাংলাদেশ"দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  6. Data.Census – Bangladesh Bureau of Statistics.
  7. "Bangladesh"World Economic Outlook DatabaseIMF 
  8. [১]
  9. "Gini Index"World Bank। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১১ 
  10. "Human Development Report 2018"। United Nations Development Programme। 2018। সংগ্রহের তারিখ 3 oct 2018  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  11. "বাংলাদেশকে জানুন"bangladesh.gov.bd। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। 
  12. "ওয়ার্ল্ড পপ্যুলেশন রিভিয়্যু তথ্যতীর্থ"। Worldpopulationreview.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৬-১৬ 
  13. [২]
  14. [৩]
  15. Economy to stay strong
  16. Bangladesh - Country Profile
  17. "Notation of song aaji bangladesher hridoy"। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  18. Keay, John (২০০০)। India: A History। Atlantic Monthly Press। পৃষ্ঠা 220। আইএসবিএন 978-0-87113-800-2In C1020 ... launched Rajendra's great northern escapade ... peoples he defeated have been tentatively identified ... 'Vangala-desa where the rain water never stopped' sounds like a fair description of Bengal in the monsoon. 
  19. Sen, Sailendra Nath (১৯৯৯) [First published 1988]। Ancient Indian History and Civilization। New Age International। পৃষ্ঠা 281। আইএসবিএন 978-81-224-1198-0 
  20. Ahmed, Salahuddin (২০০৪)। Bangladesh: Past and Present। APH Publishing। পৃষ্ঠা 23। আইএসবিএন 978-81-7648-469-5 
  21. "But the most important development of this period was that the country for the first time received a name, ie Bangalah." Banglapedia: Islam, Bengal
  22. Sircar, D. C. (১৯৯০)। Studies in the Geography of Ancient and Medieval India। Motilal Banarsidass Publ.। পৃষ্ঠা 135। আইএসবিএন 978-81-208-0690-0 
  23. জেমস হাইট্‌স্‌ম্যান ও রবার্ট এল. ওয়ার্ডেন, সম্পাদক (১৯৮৯)। "Early History, 1000 B. C.-A. D. 1202"। Bangladesh: A country study (ইংরেজি ভাষায়)। লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস। 
  24. সেনগুপ্ত, অমিতাভ (২০১২)। Scroll Paintings of Bengal: Art in the Village (ইংরেজি ভাষায়)। AuthorHouse UK। পৃষ্ঠা ১৪। আইএসবিএন 978-1-4678-9663-4 
  25. "Vangala"বাংলাপিডিয়া (ইংরেজি ভাষায়)। এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-১৩ 
  26. "যেভাবে নামকরণ হয় বাংলাদেশের"যুগান্তর। ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  27. ব্যাক্সটার, পৃ. ২৩-২৮
  28. ব্যাক্সটার, পৃ. ৩০-৩২
  29. সেন, অমর্ত্য (১৯৭৩)। Poverty and Famines। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন ০-১৯-৮২৮৪৬৩-২ 
  30. ব্যাক্সটার, পৃ. ৩৯-৪০
  31. Collins, L; Lapierre, D (১৯৮৬)। Freedom at Midnight, Ed. 18। Vikas Publishers, New Delhi। আইএসবিএন ০-৭০৬৯-২৭৭০-২ 
  32. ব্যাক্সটার, পৃ. ৭২
  33. ব্যাক্সটার, পৃ. ৬২-৬৩
  34. ব্যাক্সটার, পৃ. ৭৮-৭৯
  35. Salik, Siddiq (১৯৭৮)। Witness to Surrender। Oxford University Press। আইএসবিএন ০-১৯-৫৭৭২৬৪-৪ 
  36. "Genocide in Bangladesh, 1971"। Gendercide Watch। 
  37. LaPorte, R (১৯৭২)। "Pakistan in 1971: The Disintegration of a Nation"। Asian Survey। 12(2): 97–108। 
  38. White, M (নভেম্বর ২০০৫)। Death Tolls for the Major Wars and Atrocities of the Twentieth Century 
  39. Burke, S (১৯৭৩)। "The Postwar Diplomacy of the Indo-Pakistani War of 1971"। Asian Survey13 (11): 1036–1049। 
  40. Mascarenhas, A (১৯৮৬)। Bangladesh: A Legacy of Blood। Hodder & Stoughton, London। আইএসবিএন ০-৩৪০-৩৯৪২০-X 
  41. Corporation, British Broadcasting (১৬ জুলাই ২০১৩)। "Bangladesh profile"BBC 
  42. Summit Elevations: Frequent Internet Errors. Retrieved 2006-04-13.
  43. IUCN (১৯৯৭)। "Sundarban wildlife sanctuaries Bangladesh"। World Heritage Nomination-IUCN Technical Evaluation 
  44. "CIA World Fact Book, 2005" 
  45. [৪], প্রথম আলো। প্রকাশ - জুন ০২, ২০১৪, হালনাগাদ: ১৬:৫২
  46. Local Government Act, No. 20, 1997
  47. "2011 Population & Housing Census: Preliminary Results" (পিডিএফ)। Bangladesh Bureau of Statistics। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারি ২০১২ 
  48. Ali, A (১৯৯৬)। "Vulnerability of Bangladesh to climate change and sea level rise through tropical cyclones and storm surges"। Water, Air, & Soil Pollution92 (1-2): 171–179। 
  49. "Constitutional Amendments"বাংলাপিডিয়া। Asiatic Society of Bangladesh। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৭-১৪ 
  50. "Daily Jugantor" 
  51. Bangladesh Military Forces Retrieved 12 June 2009.
  52. Including service and civilian personnel. See Bangladesh Navy. Retrieved 17 July 2007.
  53. "TOTAL BD PARTICIPATION IN UN DEPL (COMPLETED)"বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ফেব্রুয়ারি ২০০৭। ১১ জুন ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০০৮ 
  54. "Bangladeshi officers enhance UN troops' logistical support in Darfur"UN News Center। United Nations। ২৩ অক্টোবর ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ 
  55. "Defence purchase govt's priority"। Archive.thedailystar.net। ২০১৩-০৮-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১২-০৩ 
  56. Agencies/Dhaka (২০১৩-১২-২১)। "Bangladesh to purchase submarines from China"। Gulf-times.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১২-০৩ 
  57. * "Corruption Perceptions Index 2011"। Transparency International। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০১৩ 
  58. * "Corruption Perceptions Index 2012"। Transparency International। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০১৩ 
  59. মুদ্রা বিনিময় হার তথ্যতীর্থ
  60. Bangladesh Foreign Exchange Reserves
  61. ক্রেডিট সুইসের তথ্য প্রতিবেদন
  62. নাজমুল আহাসান-এর লেখা Why Bangladesh's inequality is likely to rise
  63. "Jute"Banglapedia। Asiatic Society of Bangladesh। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৭-১৪ 
  64. Roland, B (২০০৫)। "Bangladesh Garments Aim to Compete"। BBC। 
  65. "তারপরও এগিয়েছে পোশাক খাত, বেড়েছে রপ্তানি"চ্যানেল আই অনলাইন। ২৩ এপ্রিল ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২৯ এপ্রিল ২০১৮ 
  66. খাতুন, ফাহমিদা (১০ মে ২০১৩)। "তৈরি পোশাক খাত: এগোনোরপথ"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২৯ এপ্রিল ২০১৮ 
  67. Begum, N (২০০১)। "Enforcement of Safety Regulations in Garment sector in Bangladesh"। Proc. Growth of Garment Industry in Bangladesh: Economic and Social dimension। পৃষ্ঠা 208–226। 
  68. "Per capita income rises to $1466"। thedailystar.net। ২০১৬-০৪-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-২৫ 
  69. "South Korea, Another `BRIC' in Global Wall"। ২০০৫-১২-০৯। 
  70. Annual Report 2004-2005, Bangladesh Bank
  71. Schreiner, Mark (২০০৩)। "A Cost-Effectiveness Analysis of the Grameen Bank of Bangladesh,"। Development Policy Review21 (3): 357–382। 
  72. আলম, ড: শামসুল; সেলিনা শাহজাহান, কাজী আবদুর রউফ,। "বাংলাদেশের পরিচয়"। এম. আমিনুল ইসলাম। মাধ্যমিক ভূগোল (মুদ্রণ)। পাঠ্যপুস্তক (নভেম্বর ২০০১ সংস্করণ)। ঢাকা: জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠপুস্তক বোর্ড। পৃষ্ঠা ২৩১। 
  73. "বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১০"। মাসিক কারেন্ট ওয়ার্ল্ড (প্রিন্ট)। ঢাকা: বিসিএস প্রকাশন। জুলাই ২০১০। পৃষ্ঠা ২৫, ৯৬। 
  74. Bangladesh Marching Ahead, Prime Minister's Office, March 2014.
  75. "বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইট, সংগ্রহঃ ৩১ মে, ২০১২ইং"। Mocat.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১২-০৩ 
  76. "প্রথম আলো পত্রিকার প্রতিবেদন"। Archive.prothom-alo.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১২-০৩ 
  77. ২০০৫ খ্রিস্টাব্দের উপাত্ত অনুযায়ী জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৬০ লাখ।
  78. "World Health Report 2005"। World Health Organization। 
  79. Bangladesh Bureau of Statistics (BBS)
  80. "ওয়ার্ল্ড পপুলেশান রিভিয়্যু তথ্যর্তীথ"। Worldpopulationreview.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১২-০৩ 
  81. বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা গত কয়েক বছর যাবৎ বাংলাদেশের জনসংখ্যার বিষয়ে যে পরিসংখ্যান ব্যবহার করছে, তার সঙ্গে ২০১১ খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারীর পরিসংখ্যানের পার্থক্য বিস্তর। যেমন, ইউএনএফপিএ ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের "বিশ্ব জনসংখ্যা প্রতিবেদনে" জানিয়েছিল যে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ১৩ লাখ। পরে ২০১০ খ্রিস্টাব্দের জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে, ২০১০ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৪৪ লাখ।
  82. ২০০৫ খ্রিস্টাব্দের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে নারী ও পুরুষের অনুপাত ১০০:১০৬।
  83. http://www.ittefaq.com.bd/national/2017/04/25/111910.html
  84. ""Background Note: Bangladesh". Retrieved 11 June 2008"। State.gov। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১২-০৩ 
  85. "Congressional Budget Justification - FY 2005"USAID 
  86. Nickson, R; J McArthur, W Burgess, KM Ahmed, P Ravenscroft, M Rahman (১৯৯৮)। "Arsenic poisoning of Bangladesh groundwater"। Nature (6700): 338। 
  87. "Bangladesh: Divisions, Districts, Major Cities & Municipalities - Statistics & Maps on City Population"। Citypopulation.de। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৫-১১ 
  88. "বাংলাদেশকে জানুন"bangladesh.gov.bd। বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১৮ 
  89. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; bangladesh1 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  90. Chapter 1: Religious Affiliation retrieved 4 September 2013
  91. "Muslim Population by Country"। Pew Research। ২৭ জানুয়ারি ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২৩ অক্টোবর ২০১৩ 
  92. "Community: Sufism in Bangladesh"Sufism Journal। ২১ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১০ 
  93. "১০ বছরে ৯ লাখ হিন্দু কমেছে"prothom-alo.com। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  94. "Report on International Religious Freedom"U.S. Department of State 
  95. Struggle for the Soul of Bangladesh ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে. Tony Blair Faith Foundation (5 December 2014). Retrieved on 27 April 2015.
  96. Unesco: Bangladesh literacy rate reaches all-time high of 72.76% in 2016
  97. ইউজিসি কর্তৃক আইইউটিকে আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়রূপে ঘোষণা।
  98. "ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্টস কমিশন তথ্যতীর্থ"। Ugc.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১২-০৩ 
  99. "2005 Human Development Report"UNDP 
  100. "Bangladesh Statistics"। UNICEF। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১২-০৩ 
  101. Ahmed, A; Nino, C del (২০০২)। The food for education program in Bangladesh: An evaluation of its impact on educational attainment and food security, FCND DP No. 138। International Food Policy Research Institute। 
  102. Khandker, S; M Pitt,, N Fuwa (২০০৩)। Subsidy to Promote Girls’ Secondary Education: the Female Stipend Program in Bangladesh। World Bank, Washington, DC। 
  103. "Child and Maternal Nutrition in Bangladesh" (পিডিএফ) 
  104. "Bangladesh has world's highest malnutrition rate" 
  105. "The state of food insecurity in the food 2011" (পিডিএফ) 
  106. "THE STATE OF THE WORLD'S CHILDREN 2011" (পিডিএফ) 
  107. "High Malnutrition in Bangladesh prevents children from becoming "Tigers"" 
  108. "গড় আয়ু এখন ৭১ দশমিক ৬ বছর"দৈনিক প্রথম আলো। ২৫ এপ্রিল ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৯ এপ্রিল ২০১৮ 
  109. Bangladesh Marching Ahead, Prime Minister's Office, March 2014
  110. "Bangladesh secure series victory"বিবিসি নিউজ। ২০০৯-০৭-২০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১২-০৩ 
  111. তিন ফরম্যাটেই সাকিব এখন বিশ্ব সেরা
  112. "Internet Edition"। The Daily Star। ২০০৮-০৫-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১২-১৩ 
  113. "Most popular bangla daily newspaper"। Prothom Alo। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১২-১৩ 
  114. দেশভিত্তিক পরিসংখ্যান, ফিদে
  115. Rifat gets GrandMaster title, দি নিউ নেশন, জুলাই ৮, ২০০৬।
  • ব্যাক্সটার, সি (১৯৯৭)। Bangladesh, from a Nation to a State [বাংলাদেশ, একটি জাতি থেকে একটি রাষ্ট্রে] (ইংরেজি ভাষায়)। ওয়েস্ট ভিউ প্রেস। আইএসবিএন 0-8133-3632-5ওসিএলসি 47885632 

বহিঃসংযোগ

সরকার ও প্রশাসন সম্বন্ধীয়

অন্যান্য