শাড়ি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ঐতিহ্যবাহী বাঙালি শাড়িতে ঠাকুরবাড়ির সারদা দেবী

শাড়ি বাংলাদেশ, ভারতসহ ভারতীয় উপমহাদেশের[১] নারীদের ঐতিহ্যবাহী ও নিত্যনৈমিত্তিক পরিধেয় বস্ত্র[২] শাড়ি লম্বা ও সেলাইবিহীন কাপড় দিয়ে তৈরি হয়। সাধারণত‍ একটি শাড়ি ১৮ ফুট (৫.৫ মি) থেকে ২১ ফুট (৬.৪ মি)[৩] দীর্ঘ এবং ৬০ থেকে ১২০ সেন্টিমিটার (২ থেকে ৪ ফুট) চওড়া [৩] কাপড়ে তৈরি হয়, যা বিভিন্নভাবে ভাঁজ করে পরা হয়ে থাকে। সবচেয়ে সাধারণ ভাঁজ হচ্ছে কোমরে জড়িয়ে একপ্রান্ত কাঁধের উপর দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা, যাকে আঁচল বলা হয়।[৪][৫][৬] শাড়ি সাধারণত পেটিকোটের (উত্তর ভারতে লেহেঙ্গা/ঘাগরা এবং বাংলাদেশ সহ পূর্ব ভারতে সায়া নামেও পরিচিত) উপরে পরা হয়ে থাকে।[৭] উপরের অংশের পোশাক হিসাবে ব্লাউজ (ভারতে ছোলি নামে পরিচিত) পরা হয়।

আবহমান বাংলার ইতিহাসে শাড়ির স্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কালের বিবর্তনে বদলেছে শাড়ির পাড়-আঁচল, বুনন এবং পরিধান কৌশল।[২] ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাধারণত‍ শাড়িকে সবচেয়ে উপযোগী পোশাক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নারী সেনারা শাড়ি পরলে কোমরে শার্ট বেঁধে রাখেন। শাড়ি বাঙালি ঐতিহ্যবাহী পোশাক। এই পোশাকের রয়েছে সৌন্দর্য। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শাড়িকে নারীদের মূল পোশাক হিসাবেও বিবেচনা করা হয়।[৮]

ব্যুৎপত্তি[সম্পাদনা]

শাড়ি শব্দটি সংস্কৃত শাটী[৯][২] शाटी śāṭī[১০] হতে উদ্ভূত, যার অর্থ 'কাপড়ের টুকরা',[১১] অর্থাৎ শাড়ি[বিদ্র ১] এবং পালি শব্দ शाडी বা साडी, এবং যা আধুনিক ভারতীয় ভাষায় শাড়ি হিসাবে পরিণত হয়েছে।[১৩] 'সাত্ত্বিক' শব্দটি সংস্কৃত সাহিত্যে এবং জাতক নামক বৌদ্ধ সাহিত্যে প্রাচীন ভারতে মহিলাদের পোশাক বর্ণনার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে।[১৪] এটি আধুনিক সময়ের 'শাড়ির' সমার্থক এবং সমতুল্য হতে পারে।[১৪] নারীদের ঊর্ধাঙ্গের পোশাকের বর্ণনায় প্রাচীন স্তনপট্ট শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে যা থেকে চোলির উদ্ভব হয়েছিল।[১৫][১৬] কহ্লনের দশম শতাব্দীর সাহিত্যকর্ম রাজতরঙ্গিনী (অর্থ 'রাজাদের নদী') বলে যে, কাশ্মীরে রাজকীয় আদেশ অনুসারে ডেকান (দক্ষিণাপথ) থেকে আসা চোলির প্রচলন হয়েছিল।[৭]

মারাঠিতে পেটিকোটকে পার্কার (परकर) বলা হয়, তামিল ভাষায় উলপাওয়াদাই (உள்பாவாடை) (pavada in other parts of South India: মালয়ালম: പാവാട, তেলুগু: పావడ, প্রতিবর্ণী. pāvāḍai, কন্নড়: ಪಾವುಡೆ, প্রতিবর্ণী. pāvuḍe) এবং পূর্ব ভারতে বাংলায় সায়া বলা হয়। এছাড়াও পেটিকোট-কে "ভিতরের স্কার্ট" বলা যেতে পারে।[১৭]

উৎপত্তি এবং ইতিহাস[সম্পাদনা]

প্রাচীন বাংলার শাড়ি পরিহিত টেরাকোটার মূর্তি, খ্রিস্টপূর্ব ২০০-১০০।
তারা প্রাচীন তিন টুকরো বেশভূষা চিত্রিত হয়েছে, আনু. ১১শ শতাব্দী।
মহিলাকে ওয়াইন পরিবেশন করা হচ্ছে, ডেকান, ১৬০০ সাধারন যুগ।

শাড়ি উৎপত্তির ইতিহাস খুব একটা স্পষ্ট নয়।[২] শাড়ি ধারণাটির উৎপত্তি সেলাইবিহীন বস্ত্রখণ্ড থেকে। নীহাররঞ্জন রায়ের মতে, আদিতে পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে সেলাই করা কাপড় পরিধানের প্রচলন ছিল না। সেলাইবিহীন প্রচলিত কাপড় পুরুষদের ক্ষেত্রে ধুতি এবং নারীদের ক্ষেত্রে শাড়ি নামে অভিহিত হতো। মূলত বয়নশিল্পের প্রচলন ঘটার পরই শাড়ির প্রচলন ঘটেছিল বলে ধারণা করা হয়।[১৮] শাড়ির মতো পোশাকের ইতিহাস পাওয়া যায় সিন্ধু সভ্যতায়, যার প্রতিষ্ঠা ভারত উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশে খ্রিস্টপূর্ব ২৮০০-১৮০০ খ্রিষ্টপূর্বে বেড়ে ওঠে।[১৯][৩][২০] খ্রিস্টাব্দ ৫ম সহস্রাব্দের কাছাকাছি সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশে তুলার প্রথম চাষ ও বোনা হয়েছিল।[২১] সেই সময়ের মধ্যে ব্যবহৃত রঞ্জকগুলি এখনও ব্যবহৃত হয়, বিশেষত নীল, লক্ষ, রুবিয়া কর্ডিফোলিয়া এবং হলুদ[২২] রেশম বোনা হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ২৪৫০ থেকে ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে[২৩][২৪] নবম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে রচিত চর্যাপদে সরাসরি শাড়ি শব্দের উল্লেখ না থাকলেও অনুরূপ পোশাকের আভাস পাওয়া যায়।[২৫] চৌদ্দ শতকের কল্পকাহিনী, গল্প-গাঁথা ও গীতিকবিতায় শাড়ির উল্লেখ পাওয়া যায়। সে সময়কার কবি চণ্ডীদাস (১৩৭০-১৪৩০) লিখেছেন:

নীল শাড়ি মোহন করি
      উচ্ছলিতে দেখি পাশ।
কি আর পরানে সপিনু চরণে
      দাস করি মনে আঁশ।

'শাড়ি' শব্দটি জৈন ও বৌদ্ধ সাহিত্যে মহিলাদের পোশাক হিসাবে উল্লিখিত 'সাত্তিক' থেকে উদ্ভূত হয়েছিল।[১৪][২৭] শাড়ি বা সাত্ত্বিক নিচের পোশাক অন্ত্রিয়ের সমন্বয়ে গঠিত একটি তিন অংশের একত্রে পরিধেয় পোশাক; কাঁধ বা মাথার উপর একটি পর্দা উত্তরিয়া পরা; এবং স্তনপাট্টা বা বুকবন্ধনী। খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীর সংস্কৃত এবং বৌদ্ধ পালি সাহিত্যে শাড়ির উল্লেখ রয়েছে।[২৮] এই সম্পূর্ণ তিন টুকরো পোশাক একটি পূর্ণাঙ্গ পরিধেয় পোশাক হিসাবে পরিচিত।[২৯] প্রাচীন ধুতি সদৃশ অন্ত্রিয় "মাছের লেজের" মতোন প্যাঁচিয়ে পড়া হয় যা ঢিলেভাবে পা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পা আবৃত রাখে এবং যার সামনের পায়ের অংশে আলংকারিক পরিধান শৈলীর চর্চা করা হয়।[৪][৩০][৩১] কালক্রমে এটি ভৈরনিবাসানী স্কার্টে বিবর্তিত হয়েছে, যা এখনকার যুগে ঘাগড়া এবং লেহেঙ্গা নামে পরিচিত।[৩২] উত্তরিয় কাঁধ বা মাথার উপরে একটি শাল জাতীয় পর্দা ছিল, যার ব্যবহার ক্রমশ বিস্তৃত হয়। এটিই আজকের যুগে ওড়না নামে পরিচিত।[৩৩] একইভাবে, স্তনপাত্তা প্রথম শতাব্দীতে চোলিতে বিবর্তিত হয়েছে।[১৫][১৬] খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে প্রথম শতাব্দীর মধ্যে, অন্ত্রিয় এবং উত্তরিয়কে একীভূত করে পালি সাহিত্যে উল্লিখিত শাড়ি হিসাবে পরিচিত একটি পোশাক তৈরি করা হয়েছিল, যা এক টুকরোতে দুটি পোশাকের উদ্দেশ্য পূরণ করে।[১৯][৩৪]

প্রাচীন সংস্কৃত রচনা, বাণভট্ট রচিত কাদম্বরী এবং সিলাপোধিকারামের মতো প্রাচীন তামিল কাব্যে নারীদের নিদারুণ বর্ণনায় আচ্ছাদন বা শাড়ির বর্ণনা দেয়।[৩৫][৩৬][৩৭][৩৮] প্রাচীন ভারতে মহিলারা মধ্যচ্ছাদন হিসেবে শাড়ি পরার পরেও ধর্মশাস্ত্র লেখকরা বলেছিলেন যে নারীদের এমন পোশাক পরিধান করা উচিত যাতে নাভিটি কখনই দৃশ্যমান না হয় ।[৩৯][৪০] এরপর থেকে কিছু সময়ের জন্য নাভি প্রদর্শন একটি ট্যাবু হয়ে উঠেছিল এবং নাভি গোপন করা হতো।[৩][৪১][৪২] প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্যে এবং নাট্য শাস্ত্রে (একটি প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থ, যা প্রাচীন নৃত্য এবং পোশাকের বর্ণনা দেয়), পরম সত্তাসম্পন্ন নাভিকে জীবন এবং সৃজনশীলতার উৎস হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে । এ কারণে শাড়ি পড়ার সময় মধ্যাচ্ছাদন উন্মুক্ত রাখা হয়।[৪৩][৪৪] এছাড়াও চতুর্দশ শতাব্দীর শেষার্ধে মিথিলার প্রথিতযশা কবি বিদ্যাপতির রচনায়ও অঞ্চল (আঁচল), কাঁচুলি, শাড়ি শব্দের প্রয়োগ দেখা যায়:

উরহি অঞ্চল বাঁপি চঞ্চল
আধ পয়োর হেরু।
পবন পরাভব সরদ ঘন জনু
বেকত কএল সুমেরু।।[বিদ্র ২]

সাধারণত ধারণা করা হয় যে নিম্নাঙ্গের জন্য শাড়ির মতো পোশাক এবং ঊর্ধাঙ্গের জন্য কখনও কখনও শাল বা স্কার্ফের মতো পোশাক,যা 'উত্তরীয়' নামে পরিচিত, দীর্ঘকাল ধরে ভারতীয় মহিলারা পরিধান করেছিলেন এবং শত শত বছর ধরে তারাবর্তমান রূপে একে পরিধান করছেন। প্রাচীনকালে নিচের পোশাকটিকে 'নিভি' বা 'নিভিবন্ধ' বলা হত, এবং ঊর্ধাঙ্গের বেশিরভাগই উন্মুক্ত থাকত ।[১৪] কালিদাসের রচনায় 'কুরপাস' নামক এমন একধরনের আঁট-সাঁট বস্তুর কথা বলা হয়েছিল, য কেবল স্তনগুলিকে আবৃত রাখে।[১৪] এটি কখনো কখনো 'উত্তরাসঙ্গ' বা 'স্তনপট্ট' নামেও অভিহিত হত।

সিলাপোধিকারামের মতো কাব্যগ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, দক্ষিণ ভারতে প্রাচীন তামিলনাড়ুর সঙ্গম যুগে নিম্নাঙ্গ এবং মাথা ঢাকার জন্য এক টুকরো পোশাক ব্যবহৃত হত এবং শরীরের মধ্যাঙ্গ পুরোপুরি অনাবৃত থাকতো।[৩৬] শাড়ির অনুরূপ শৈলীর উদাহরণ কেরালার রাজা রবি বর্মার চিত্রগুলোতে রয়েছে।[৪৫] বহু সূত্র বলেছে যে প্রাচীন ভারতে এবং কেরালায় প্রতিদিনের পোশাকগুলোয় 'কুরপাসিকা' বা 'স্তনপট্টের সাথে মিল রেখে ভাঁজ করা বা পাতানো ধুতি (সারং) মোড়ানো হতো এবং মাঝে মধ্যে 'উত্তরিয়া' নামক একটি টুকরার ব্যবহার হতো যেটি ঊর্ধাঙ্গ বা মাথা ঢাকার কাজে ব্যবহার করা হতো।[১৪] দুই-টুকরো মুন্ডুম ন্যারিয়াথুম ছিল প্রাচীন কেরালার দৈনন্দিন পোশাক। কেরালার এক টুকরো শাড়ি মধ্যযুগীয় সময়কালে তামিলনাড়ু বা ডেকান থেকে মধ্যযুগীয় কেরালার বিভিন্ন মন্দির ম্যুরালগুলির উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল।[৩][২০][৪৬][৪৫]

খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর প্রাচীন ব্রজ-মথুরা মহিলার ভাস্কর্য

আদি সংস্কৃত সাহিত্যে নারীদের ব্যবহৃত ওড়নার জন্য বিস্তৃত শব্দভাণ্ডার রয়েছে, যেমন অবগুণ্ঠন (oguntheti/oguṇthikā), যার অর্থ আলখাল্লা-ঘোমটা, উত্তরিয় অর্থ কাঁধের ওড়না, মুখ-পাটা অর্থ মুখের পর্দা এবং শিরবস্ত্র অর্থ মাথার ঘোমটা।[৪৭] ভাষা রচিত প্রতীমানাটক নাটকে অবগুণ্ঠন ঘোমটার প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে যে "কোনো ধর্মীয় অধিবেশন, বিবাহ উৎসব, বিপর্যয় ও বনের মধ্যে কোনও মহিলাকে কোনও দোষ ছাড়াই (সংশ্লিষ্ট পক্ষের জন্য) দেখা যেতে পারে"।[৪৭] একই সংবেদনটি পরবর্তী সংস্কৃত সাহিত্যে আরো উদারভাবে প্রকাশিত হয়।[৪৮] খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত মৃচ্ছকটিক নাটকের লেখক শূদ্রক বলেছেন যে নারীরা সবসময় অবগুণ্ঠন ব্যবহার করতেন না। তিনি বলেছিলেন যে একজন বিবাহিত মহিলা জনসাধারণের মধ্যে চলাফেরা করার সময় ওড়না পড়তো।[৪৮] এটি ইঙ্গিত করে যে অবিবাহিত মহিলাদের জন্য পর্দা করার প্রয়োজন ছিল না।[৪৮] বিবাহিত মহিলাদের ওড়না পড়ার এই রীতি এখনও হিন্দিভাষী অঞ্চলে প্রচলিত এবং এটি ঘুঙ্গাট নামে পরিচিত, যেখানে একটি শাড়ির আলগা প্রান্তটি মুখের ওড়না হিসাবে কাজ করার জন্য মাথার উপরে টানানো হয়।[৪৯]

খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে খ্রিস্টাব্দ ষষ্ঠ শতাব্দীর ঐতিহাসিক ভাস্কর্য এবং চিত্রকর্মগুলির ওপর ভিত্তি করে, বিভিন্ন আঞ্চলিক পোশাকশৈলীতে আঁটসাঁট বডিস (পোশাকবিশেষ) বা ছোলির বিবর্তন ঘটেছে বলে বিশ্বাস করা হয়।[৫০] শুরুর দিকের ছোলির পিছনে আবদ্ধ এবং সামনে আবরণ ছিল; প্রাচীন উত্তর ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে সে সময় এর বহুল প্রচলন ছিল। ছোলির এই প্রাচীন রূপটি আজও ভারতের রাজস্থান রাজ্যে প্রচলিত।[৫১] সে সময়ের চোলিতে- গোটা পট্টি, মোচি, পাক্কো, খড়ক, সুফ, কাঠি, ফুলকড়ি এবং গামথির মতো সাজসজ্জাগত ঐতিহ্যবাহী সূচিকর্মের কাজ করা হত।[৫২] ছোলি ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে রাভিকি নামে পরিচিত যা পিছনের পরিবর্তে সামনের দিকে আবদ্ধ থাকে, কাসুতি এই অঞ্চলে চোলির জন্য ব্যবহৃত সূচিকর্মের ঐতিহ্যবাহী রূপ।[৫৩] নেপালে, ছোলি ছলো বা চৈবান্দি ছলো নামে পরিচিত এবং ঐতিহ্যগতভাবে সেগুলির সামনের দিকে আবদ্ধ থাকে।[৫৪]

বাঙালি ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে অষ্টম শতাব্দীতে শাড়ি ছিল প্রাচীন ভারতের প্রচলিত পোশাক। যেখানে তখনকার মেয়েরা আংটি, দুল, হার এসকল অংলকারের সঙ্গে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত শাড়ি পরিধান করত, এবং উপরে জড়ানো থাকত আধনা (আধখানা)। পাহাড়পুর থেকে প্রাপ্ত পাল আমলের কিছু ভাস্কর্য অনুমান করে এ ধারণা করা যায়।[২]

বিয়ের শাড়িগুলির জন্য লাল রঙ সবচেয়ে পছন্দের এবং এটি ভারতীয়-বাংলাদেশী সংস্কৃতিতে নববধূদের কাছে জনপ্রিয়।[৫৫] মহিলারা ঐতিহ্যগতভাবে রেশম, সুতি, ইক্কাত, ব্লক-প্রিন্ট, সূচিকর্ম এবং টাই-ডাই কাপড়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের আঞ্চলিক তাঁত শাড়ি পরিধান করতেন। ঐতিহ্যগতভাবে এবং আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে ব্রোকেড সিল্কের শাড়িগুলির পর পরই সর্বাধিক জনপ্রিয় স্থানে রয়েছে বনসারি, কাঞ্চিপুরম, গাদওয়াল, পাইথানি, মহীশূর, উৎপদা, বাবলপুরি, বালচুরি, মহেশ্বরী, চন্দেরি, মেখেলা, ঝিচা ইত্যাদি।[৫৬] পাটোলা, পোচাম্পল্লি, বোমকাই, খান্দুয়া, সমবলপুরি, গাদওয়াল, বারহামপুরী, বারগড়, জামদানি, তন্ত, মঙ্গলগিরি, গুঁতুর, চন্দেরি, মহেশ্বরী, নুয়াপাটন, তুষার, ইলকল, কোটপাদ এবং মণিপুরী নামে পরিচিত সিল্ক ইকাত এবং সুতির শাড়ি উৎসব এবং দৈনন্দিন পোশাক হিসাবে পরা হয়।[৫৭] বন্ধনী, লেহেরিয়া, বাগরু, আজরখ, সুনগুদি, কোটা ডাবু/ডাবু প্রিন্ট, বাঘ ও কালামকারি নামে পরিচিত টাই-ডাই এবং ব্লক-প্রিন্ট শাড়িগুলি বর্ষা মৌসুমে ঐতিহ্যগতভাবে পরা হতো।[৫৮] অনুষ্ঠানে পরিহিত শাড়িগুলিতে ব্যবহৃত প্রচলিত সূচিকর্মের মধ্যে গোটা পট্টি জনপ্রিয় রূপ নিয়েছে, অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী লোক সূচিকর্ম যেমন মোচি, পাক্কো, খড়ক, সুফ, কাঠি, ফুলকড়ি এবং গামথি সাধারণত অনানুষ্ঠানিক উপলক্ষে পরা হয়।[৫৯][৬০] বর্তমানে, পলিয়েস্টার, জর্জেট এবং চারমিউজের মতো আধুনিক কাপড়গুলিও শাড়ির জন্য ব্যবহৃত হয়।[৬১][৬২][৬৩]

জ্ঞানদানন্দিনী দেবী

শাড়ির উৎপত্তির ইতিহাস খুব একটা স্পষ্ট না হলেও জ্ঞানদানন্দিনী দেবী বাংলায় শাড়ি পরার পদ্ধতিতে বিপ্লব ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। জ্ঞানদানন্দিনী দেবী, যিনি জ্ঞানদানন্দিনী ঠাকুর নামেও পরিচিত, ১৮৫৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের যশোরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী, যিনি ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে যোগদানকারী প্রথম ব্রিটিশ ভারতীয়, বাংলাদেশীবাঙালি নারী।

তার সময়ে, শাড়িগুলি একটি ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল, যার নীচে ব্লাউজ বা পেটিকোট ছিল না। জ্ঞানদানন্দিনী ঠাকুর ড্রপ করার এই স্টাইলটিকে অস্বস্তিকর এবং অসুবিধাজনক বলে মনে করেছিলেন। তিনি একটি নতুন শৈলী প্রবর্তন করতে চেয়েছিলেন যা মহিলাদের জন্য আরও আরামদায়ক এবং ব্যবহারিক ছিল। তিনি বিভিন্ন শৈলী নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন এবং অবশেষে শাড়িটি ঢেকে রাখার একটি নতুন উপায় নিয়ে এসেছেন যার নীচে একটি ব্লাউজ এবং পেটিকোট পরা জড়িত।

জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর শাড়ি পরার নতুন শৈলী পশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশের মহিলাদের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে জনপ্রিয় হয়েছিল। এটি ঐতিহ্যবাহী শৈলীর তুলনায় আরো আরামদায়ক এবং ব্যবহারিক ছিল, এবং এটি আরও আধুনিক এবং আড়ম্বরপূর্ণ লাগছিল। নতুন শৈলী দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং এই অঞ্চলের মহিলাদের জন্য আদর্শ হয়ে ওঠে।

শাড়ির কাপড়ের আধুনিকীকরণে জ্ঞানদানন্দিনী ঠাকুরের অবদানকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তার উদ্ভাবনী ধারণাগুলি বাংলা ও উপমহাদেশে নারীদের পোশাক পরিধানের উপায়ে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করেছে এবং তার উত্তরাধিকার আজও নারীদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে।

পরিধানশৈলী[সম্পাদনা]

১৯২৮ সালের চিত্রে শাড়ির বিভিন্ন শৈলী অঙ্কন
লাইফ সাময়িকীর জন্য ভারতীয় অভিনেত্রী বেগম পারার শাড়ি পরার দৃশ্য

শাড়ি পরার প্রায় ৮০টিরও অধিক নথিভুক্ত উপায় প্রচলিত রয়েছে।[৬৪] কোমরের চারপাশে শাড়ি জড়ানোর সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতিটি হল শাড়ির এক প্রান্ত কোমরে প্যাঁচিয়ে অপর আলগা প্রান্তটি অর্থাৎ আঁচল কাঁধের উপর দিয়ে পেছনে ঝুলিয়ে পরিধান করা।[৬৫] তবে, শাড়ি বেশ কয়েকটি পদ্ধতিতে প্যাঁ চিয়ে পড়া যেতে পারে, যদিও কিছু শৈলীর জন্য নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য বা আকারের শাড়ি প্রয়োজন। শাড়ির ইতিহাসবিদ এবং স্বীকৃত বস্ত্রশিল্প পণ্ডিত রতা কাপুর চিশতি তার শাড়িস: ট্র্যাডিশন অ্যান্ড বিয়ন্ড গ্রন্থে শাড়ি পরিধানের ১০৮টি পদ্ধতি নথিভুক্ত করেছেন। এই গ্রন্থে গুজরাত, মহারাষ্ট্র, গোয়া, কর্ণাটক, কেরল, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, এবং উত্তরপ্রদেশ মোট ১৪টি রাজ্যের শাড়ি পরিধানের পদ্ধতি নথিভুক্ত হয়েছে।[৬৬] ফরাসি সাংস্কৃতিক নৃতাত্ত্বিক এবং শাড়ি গবেষক চ্যান্টাল বোলঞ্জার নিচের পরিধান পদ্ধতিগুলি শ্রেণিবদ্ধ করেছেন:[৩]

  • নিভি – মূলত অন্ধ্রপ্রদেশে এই পরিধান শৈলীতে শাড়ি পরা হয়; আধুনিক নিভি শৈলীর পাশাপাশি রয়েছে কাচ্চা নিভি নামে আরেকটি শৈলী, যেখানে দুই পায়ের মাঝখান দিয়ে শাড়ির এক প্রান্ত জড়িয়ে পেছনে কোমরের অংশে যুক্ত করে রাখা হয়। এতে সহজেই পা নাড়াচাড়া করে চলাফেরার সুবিধা পাওয়া যায়।
  • বাঙালি এবং ওড়িয়া শৈলীতে কোনও ভাজ বা পাট করা ছাড়াই শাড়ি পরা হয়।[৬৭] ঐতিহ্যগতভাবে বাঙালি শৈলীতে ভাঁজ বা কুঁচি ছাড়াই পরা হয় যেখানে শাড়িটির এক প্রান্ত কোমরের চারদিকে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত পেচিয়ে পরা হয় এবং অপর দীর্ঘ প্রান্তটি সাধারণত বাম কাঁধের উপর দিয়ে পেছনে প্যাঁচিয়ে বা ঝুলিয়ে রাখা হয়। এই প্যাঁচানো বা ঝুলন্ত অংশটিকে আঁচল বলে, যেটি সম্পূর্ণ মাথা ঢাকার উপযোগী দৈর্ঘ্যসম্পন্ন হয়ে থাকে। শাড়ি পরার আধুনিক শৈলী এসেছে ঠাকুর পরিবার থেকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় ভাই সত্যেন্দ্রনাথের স্ত্রী জ্ঞানদানন্দিনী দেবী বোম্বেতে অধ্যয়নকালে থাকার পর কলকাতায় শাড়ি পরার এই ভিন্নধর্মী শৈলীর প্রচলন ঘটান। এই পদ্ধতির জন্য শাড়ির নিচে সেমিজ বা জ্যাকেট (ব্লাউজের পুরাতন নাম) এবং পেটিকোট পরার প্রয়োজন ছিল এবং এই পোশাকে তৎকালীন নারীদের অন্দরমহল থেকে বাইরে আসার প্রচলন ঘটেছিল।
  • গুজরাতি/রাজস্থানি – নিভি শৈলীর অনুরূপ সুখগুলি টুকটাক করার পরে, শাড়ির আলগা প্রান্তটি পিছন দিক থেকে এনে, ডান কাঁধের উপারে ঝুলিয়ে রাখা হয়, এবং প্রায়শই পেছন দিক থেকে শেষ প্রান্ত টেনে সামনে আনা হয়।
  • হিমালয়ান - কুলুভি পাট্টু হিমাচল প্রদেশের পশমী শাড়ি পরার ঐতিহ্যবাহী রূপ। উত্তরাখণ্ডেও এক শাড়ি পরা হয়।
  • নেপালি - নেপালে শাড়ির বিভিন্ন ধরনের পরিধান পদ্ধতির প্রচলন রয়েছে। তবে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল নিভি শৈলী। গুজরাতি শৈলীর মতো ভোজপুরিঅবধি ভাষী সম্প্রদায় সোজা আঁচলে শাড়ি পরে থাকে। মিথিলা সম্প্রদায়ের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী মৈথিলি পরিধান শৈলী রয়েছে যেমন মধুবাণী এবং পূর্ণিয়া শৈলী, তবে বর্তমানে সেগুলি বিরল এবং বেশিরভাগ শাড়ির আঁচল সামনের অংশে রেখে বা নিভি শৈলীতে পরা হয়।[৬৮] রাজবংশী সম্প্রদায়ের নারীরা ঐতিহ্যগতভাবে কোনও শৈলী ছাড়াই শাড়ি পরেন এবং ঘাড়ের নিচে বেঁধে রাখেন তবে বর্তমানে শুধু বয়স্কদের মাঝেই এর প্রচলন রয়েছে। নিভি এবং বাঙালি শৈলীই আজকাল বেশি জনপ্রিয়। ঐতিহ্যবাহী নেওয়ারি শাড়ি শৈলীতে শাড়িটি নিচের হাঁটুর দৈর্ঘ্য পর্যন্ত ভাঁজ করা থাকে এবং এটি নিভি শাড়ির মতো পরা হয় তবে এর আঁচলটি বুক জুড়ে থাকার পরিবর্তে বেঁধে রেখে দেওয়া হয় যাতে এটি হাঁটুর কাছে নেমে না যায়। আঁচলটি শালের মতো বুক জুড়ে বেঁধে ডান কাঁধের পেছনে পিছন থেকে নামিয়ে আনা হয়। শাড়ি সাধারণত ব্লাউজের সাথে পরা হয়। নিভি শৈলীটি নেপালে শাহ এবং রাণাদের দ্বারা জনপ্রিয় হয়েছিল।
  • মহারাষ্ট্রীয়; শৈলী মহারাষ্ট্রীয় পুরুষদের ধুতির সাথে মিল রয়েছে, যদিও এখানে অনেক আঞ্চলিক ও সামাজিক ভিন্নতাও রয়েছে। শাড়ির মাঝখানের (দৈর্ঘ্যের দিক থেকে) অংশ মাঝ দিয়ে পিছনের কেন্দ্রে রাখা হয়, এর প্রান্ত সামনে এনে বেঁধে রাখা হয়, অতপর দুই প্রান্ত ধুতির মতো পায়ে জড়িয়ে দেওয়া হয়। শাড়ি হিসাবে পরার জন্য ধুতির তুলনায় নয় গজ অতিরিক্ত দীর্ঘ কাপড় ব্যবহার করা হয় এবং এর প্রান্তটি কাঁধ এবং শরীরের উপর দিয়ে পেছনে রাখা হয়। ব্রাহ্মণ নারীদের পরিধান শৈলীর সাথে মারাঠাদের ভিন্নতা রয়েছে। তেমনি সম্প্রদায় ভেদে শাড়ি পরিধান শৈলীর পার্থক্য রয়েছে। এই শৈলীটি মহারাষ্ট্র এবং গোয়ায় জনপ্রিয়।
  • মাদিসার – এই শৈলীটি তামিলনাড়ুর আয়েঙ্গার/আইয়ার ব্রাহ্মণ নারীদের ঐতিহ্যবাহী শৈলী যা সাধারণত ৯ গজ দৈর্ঘ্যের হয়েথাকে।[৬৯]
  • পিন কোসুভাম - ঐতিহ্যবাহী তামিলনাড়ু শৈলী
  • কোডাগু – শৈলীতে কর্ণাটকের কোডাগু জেলা থেকে উদ্ভূত মহিলাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই শৈলীতে শাড়ির ভাঁজ সামনের পরিবর্তে পিছনে করা হয়। শাড়ির আঁচল ডান কাঁধের উপর দিয়ে পিছন থেকে সামনের দিকে এনে রাখা হয় এবং শাড়ির বাকি অংশে পিন দিয়ে আটকানো থাকে।
  • মণিপুরি - শৈলীতে তিন টুকরো কাপরের পোশাক ইন্নাফি ভাইল হিসাবে পরিচিত । অন্যদিকে ফানেক লম্বা হাতা চোলির সঙ্গে নাভির নিচে পরিহিত শাড়ি।
  • খাসি - খাসি শৈলীত শাড়ি জৈনসেম নামে পরিচিত বিভিন্ন টুকরো কাপড়ে তৈরি পোশাক যা দেহকে নলাকার আকার দেয়।
  • গোব্বে সেরে – শৈলী মালনাড বা সহ্যাদ্রি এবং কর্ণাটকের মধ্য অঞ্চলে মহিলারা পরিধান করে থাকে। এই শাড়ি তিন-চার বার কোমরে জড়িয়ে তারপর কাঁধের উপর দিয়ে কোনাকুনি করে গলায় একটি গিঁট দিয়ে পরা হয়।
  • আসামি – শাড়ির মূলত তিন-অংশের পোশাক, যা মেখেলা চাদর নামে পরিচিত। কোমর থেকে নিচের দিকে টানা অংশটিকে মেখেলা বলা হয় এবং ওড়নার মতো অংশটি চাদর নামে পরিচিত এবং এর সঙ্গে লম্বা হাতা ছোলি পরে হয়ে থাকে।
  • মালায়ালি শৈলী – কেরালায় পরিহিত দুই অংশের শাড়ি বা মুন্ডুম ন্যারিয়াথুম। সাধারণত অধৌত সুতা দিয়ে তৈরি এবং এর পাড় সোনার বা রঙিন ফিতে দিয়ে নকশাসজ্জিত। এছাড়াও রয়েছে এক ধরনের মুন্ডুম ন্যারিয়াথুম কেরালা শাড়ি
  • উপজাতীয় শৈলী - প্রায়শই বুকের অংশে দৃঢ়ভাবে বেঁধে বক্ষ আবৃত রেখে পড়া হয়ে থাকে।
  • কুন্বি শৈলী বা ডেন্থলি: গোয়ান গৌড় ও কুনবিস এবং অন্য রাজ্য থেকে এখানে স্থানান্তরিত হয়ে আসা নারীদের মধ্যে পরিহিত। এই পদ্ধতিতে শাড়ির একটি অংশ কাঁধের নিচে গিঁট বেঁধে এবং আরেকটি অংশ কাধে ঝুলিয়ে পরা হয়।[৭০]

ঐতিহাসিক আলোকচিত্র এবং আঞ্চলিক পরিধান শৈলী[সম্পাদনা]

নিভি শৈলী[সম্পাদনা]

নিভি শাড়িতে জুব্বালের মহারাণী ঊর্মিলা দেবী।

ভিক্টোরিয় সংবেদনশীলতার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রয়োজনীয়তার কারণে নিভি পরিধান শৈলীর প্রচলন ঘটেছিল এবং এটি ওপনিবেশিক অতীতের একটি স্বীকৃতিস্বরূপ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভগ্নিপতি জ্ঞানদানন্দিনী দেবী নিভি শৈলীর প্রচলন করেছিলেন এবং ভারতীয় পরিচয় বজায় রেখে একটি ব্রিটিশ অধ্যুষিত সামাজিক কাঠামোয় মানানসই করার উপায় হিসাবে সাথে ব্লাউজ এবং পেটিকোটের বভ্যবহার শুরু করেছিলেন।[৭১][৭২] জটিল ভারতীয় সংস্কৃতিকে সু-সংজ্ঞায়িত স্টেরিওটাইপে মানানসই করে ব্রিটিশরা আনুষ্ঠানিক করার চেষ্টা করেছিল। শাড়ি ভিক্টোরিয় যুগের নীতিগুলির সাথে খাপ খায়নি, যা চলাফেরার স্বাধীনতার চেয়ে বিনয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। ব্রিটিশরা ভারতীয় সংস্কৃতির সারল্য মেনে নিতে পারেনি এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্যের মাধ্যমে তাদের একক বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন।[৭৩]

ফিলিপ ডি লাসল্লা অঙ্কিত ইন্দিরা দেবীর চিত্রকর্ম।

নিভি, ডেকান অঞ্চল থেকে আজকের সবচেয়ে জনপ্রিয় শাড়ি পরিধান শৈলীতে পরিণত হয়েছে।[৭৪] ব্রিটিশদের সাথে ক্রমবর্ধমান কথোপকথনে দেখা গিয়েছিল যে রাজপরিবারের বেশিরভাগ মহিলারা ১৯০০-এর দশকে পর্দা প্রথা থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। কোচবিহারের মহারাণী ইন্দিরা দেবী শিফন শাড়ি জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। তিনি জীবনের প্রথম দিকে বিধবা হয়েছিলেন এবং ঐতিহ্য অনুসারে নিরলংকার শোকের পক্ষে সূচীশিল্পিত বরোদা শালস ত্যাগ করেছিলেন। চরিত্রগতভাবে, তিনি তার "শোকের" কাপড়টিকে উচ্চ ফ্যাশনে রূপান্তরিত করেছেন। ফ্রান্সে তিনি তার ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যগুলিতে সর্বদা শিফন শাড়ি পরেছিলেন, এবং রাজকীয় ফ্যাশন স্টোরের রেশম শিফন শাড়ির পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।[৭৫]

ভারতে শিফন শাড়ি অধিপত্য বিস্তারের মধ্য দিয়ে সমস্ত দেশ জুড়ে ফ্যাশনগুলিকে একত্রিত করে। এর স্নিগ্ধতা, হালকা ওজন এবং সৌন্দর্য, মার্জিত, স্নেহপূর্ণ কুঁচির শৈলী ভারতীয় জলবায়ুর সাথে আদর্শভাবে উপযোগী ছিল। বিভিন্ন আদালত শাড়ির দেশীয় বা নিজস্ব শৈলী গ্রহণ করেছিল। বেশিরভাগ আদালতে বারাণসীর সোনালি পাড়ের শাড়ি, সূক্ষ্ম জারদোজি কাজ, গোটা, মকাইশ এবং টিলা কাজ যা মসৃণ কাপড়ে শোভিত করেছিল, একইসাথে ঐতিহ্যবাহী এবং অলঙ্কারের অন্তর্নিহিত পছন্দ উভয় চাহিদাই পুরণ করেছিল। ডেকানে মহারাণীদের কয়েকটি আলোকচিত্রে দেখা যায় যে মহিলারা তাদের হাতাবিহীন ব্লাউজ পরিধান করতো, সাথে সমৃদ্ধভাবে সুসজ্জিত কোমর কোট থাকতো। তাদের সমাবেশে শিফন শাড়ি কতটা চটুল হয়ে ওঠে সাভানুরের বেগমের সঙ্গে তা মনে পড়ে যায়। কিছু আদালতে এটি জালি বা নেট কুর্তা এবং অ্যামবুসকৃত রেশমের কোমর বন্ধনীর সাথে সারদি বা জ্যাকেটের সাথে পরা হতো। এগুলির মধ্যে কিছু এত সমৃদ্ধ ছিল যে পুরো জমিটি মুক্তো এবং জারদোজি সূচিকর্ম করা হতো।[৭৫][৭৬]

পেশাদার পরিধান শৈলী[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন হোটেল কর্মচারী ইউনিফর্ম হিসাবে শাড়ি পরেন।

ভারতীয় উপমহাদেশে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে শাড়ি একটি ব্যবহারিক ভূমিকা রাখার পাশাপাশি আলংকারিক চাহিদাও পূরণ করে। এটি কেবল শীতে উষ্ণ এবং গ্রীষ্মে শীতল রাখে না, উপরন্তু এর পরিধান শৈলী ঢিলেঢালা হওয়ায় এটি মহিলাদের পছন্দ। এই কারণে, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা সহ উপমহাদেশে বিভিন্ন বিমানবালাদের ইউনিফর্ম হিসাবে দেখা যায়।[৭৭] বিমানবালাদের শাড়ি সে দেশের ঐতিহ্যবাহী শাড়ির মতো করে বানানো হয়।

ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতীক হিসাবে ভারতে এবং বাংলাদেশে অনেক পাঁচতারা-বিলাসবহুল হোটেলের মহিলা কর্মীরা ইউনিফর্ম হিসাবে শাড়ি পরেন।[৭৮] একইভাবে, উপমহাদেশের মহিলা রাজনীতিবিদরা পেশাদার ভাবে শাড়ি পরে থাকেন। ইন্দিরা গান্ধী এবং সোনিয়া গান্ধীর মতো নেহেরু-গান্ধী পরিবারের মহিলারা প্রচারণার জন্য বিশেষ ব্লাউজের সঙ্গে শাড়ি পরেন, যা সাধারণের চেয়ে দীর্ঘ এবং ভিড়ের মধ্যে মধ্যচ্ছদা প্রদর্শনী রোধ করতে সহায়ক। স্টাইলিস্ট প্রসাদ বিদাপা বলেন, "আমি মনে করি সোনিয়া গান্ধী দেশের সবচেয়প স্টাইলিশ রাজনীতিবিদ। কারণ তিনি তার শাশুড়ির কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে উৎকৃষ্ট শাড়িগুলি পেয়েছিলেন। আমি খুশি যে তার পছন্দের মধ্য দিয়ে তিনি ভারতীয় তাঁতশিল্পকে সমর্থন করেন।" বিজেপি রাজনীতিবিদ সুষমা স্বরাজ পিন-আপ আঁচলের শাড়িতে তার গৃহিণীর ন্যায় চেহারা বজায় রেখেছেন, অন্যদিকে এআইএডিএমকে সাধারণ সম্পাদক জয়ললিতা শাড়ি পরেন বর্মের মতো।[৭৯]

বাংলাদেশ[সম্পাদনা]

২০১৩ সালে মস্কোর ক্রেমলিনে রাজশাহী সিল্ক শাড়িতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

শাড়ি বাংলাদেশী নারীদের জাতীয় পোশাক। বিবাহিত অধিকাংশ নারী তাদের নিত্য পোশাক হিসাবে এবং অবিবাহিত মেয়েরা প্রায়শই শাড়ি পরে থাকেন। নৈমিত্তিক এবং আনুষ্ঠানিকতায় শাড়ি বাংলাদেশের নারীদের সবচেয়ে জনপ্রিয় পোশাক। যদিও ঢাকাই জামদানি (হাতে বোনা শাড়ি) বিশ্বব্যাপী পরিচিত এবং শাড়ি পরেন এমন সমস্ত নারীর কাছে সর্বাধিক পরিচিত। এছাড়াও বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের শাড়ি রয়েছে। রেশম এবং সুতি উভয় ক্ষেত্রে শাড়ির আঞ্চলিক বৈচিত্র্য রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, তাঁতের রেশম শাড়িতাঁতের সুতি শাড়ি, ঢাকাই বেনারসি, রাজশাহী রেশম, টাঙ্গাইল, পাবনা, তসর রেশম, মণিপুরী এবং কাতান শাড়ি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় শাড়ি । শাড়ি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমানবালাদের পোশাক। এছাড়াও দেশের নারী রাজনীতিবিদেরা সাধারণত শাড়ি পড়ে থাকেন।

শ্রীলঙ্কা[সম্পাদনা]

ঐতিহ্যবাহী ক্যান্ডীয় শাড়ি (ওসারিয়া) পরিহিত সিংহলি নারী।

শ্রীলঙ্কার নারীরা বিভিন্ন পরিধানশৈলী অনুসারে শাড়ি পরেন। সেখানকার দুটি জনপ্রিয় পরিধানশৈলী হলো- ভারতীয় শৈলী (ধ্রুপদী নিভি প্যাঁচ) এবং ক্যান্ডীয় শৈলী যা সিংহলি ভাষায় ওসারিয়া নামে পরিচিত। ক্যান্ডীয় শৈলীটি সাধারণত পার্বত্য ক্যান্ডি অঞ্চলে বেশি জনপ্রিয়, যেখান থেকে শৈলীটির নামের উৎপত্তি হয়েছে। যদিও সমাজের পোশাকের অভিরুচিই মূল ভূমিকা পালন করে, বেশিরভাগ নারী নিজেদের ব্যক্তিগত পছন্দ বা তাদেরকে কোন পোশাকে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বলে মনে হবে, এই মনোভাবের উপর নির্ভর করেও শাড়ি পরে থাকেন।

ঐতিহ্যবাহী ক্যান্ডীয় (ওসরিয়া) শৈলীতে শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজ পরা হয়, যা বক্ষ পুরোপুরি ঢাকা রাখে এবং শাড়ির সামনের দিকে আংশিকভাবে গোটানো থাকে। তবে, বিভিন্ন শৈলীর আধুনিক সংমিশ্রণের ফলে বেশিরভাগ পরিধানকারী উপরিভাগে শাড়ি জড়িয়ে পরেন না। শাড়ির চূড়ান্ত আঁচলের অংশটি ছাড়া রাখা হয়। এটি দ্রাবিড় শৈলীর (নিবন্ধের নিচে উল্লিখিত) অনুরূপ।

ক্যান্ডীয় শৈলী অনুযায়ী পরিহিত শাড়ি সিংহলি নারীদের জাতীয় পোশাক হিসাবে বিবেচিত হয়। এটি শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সের বিমানবালাদের ইউনিফর্ম।

১৯৬০-এর দশকে, 'হিপস্টার' শাড়ি নামে পরিচিত মিনি শাড়ি শ্রীলঙ্কার ফ্যাশনে প্রভাব তৈরি করেছিল। এটি নাভির নিচে পরা হতো এবং আঁচল এমনভাবে রাখা হত, যাতে পরিস্ফুট হত অসচেতন আবেদন । রক্ষণশীল লোকেরা 'হিপস্টার' শৈলীকে "একটি সুন্দর পোশাকের অবমাননাকর প্রহসন" এবং "একটি বীভৎস ও উদ্দেশ্যহীন পোশাক" হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন।[৮০][৮১]

নেপাল[সম্পাদনা]

হাকু পাতাসি শাড়িতে নেপালি নারীরা

শাড়ি নেপালের সর্বাধিক নারী পরিহিত পোশাক। নেপালি নারীরা বিভিন্নভাবে শাড়ি পরেন, এর মধ্যে হাকু পাতাসি উল্লেখযোগ্য। এটি লালপেড়ে কালো শাড়ি যা কোমরের চারপাশে জড়িয়ে পরা হয় এবং শাড়ির উপরের অর্ধেক বা আঁচল দিয়ে ঊর্ধাঙ্গ ঢেকে রাখা হয়, যা ওড়নার প্রয়োজন মেটায়।

পাকিস্তান[সম্পাদনা]

পাকিস্তানে শাড়ির স্থান সালোয়ার-কামিজ প্রায় সম্পূর্ণ দখল করে নিয়েছে। তবে শাড়ি এখনো জনপ্রিয় এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এখনও পরা হয়ে থাকে, যদিও দৈনন্দিন জীবনে পাকিস্তানি নারীরা সালোয়ার-কামিজ পরে থাকে। তবুও শাড়ি অনেক অনুষ্ঠানে মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত শ্রেণির মধ্যে জনপ্রিয় পোশাক হিসাবে রয়ে গেছে। শাড়ির সর্বাধিক প্রচলন করাচি এবং ইসলামাবাদের মতো মহানগর এলাকায় সাধারণত দেখা যায় এবং বিয়ে ও অন্যান্য ব্যবসায়িক ধরনের কাজের জন্যেও নিয়মিত পরা হয়। সাধারণত মোহাজির নামে পরিচিত ভারতীয় অভিবাসী পাকিস্তানিরা শাড়ির ব্যবহার টিকিয়ে রেখেছে, যা প্রধানত করাচিতেই দেখা যায়। সিন্ধুতে অনেক মুসলিম নারীরা নিজের অবস্থান বা সৌন্দর্য বিকাশের জন্য শাড়ি পরেন।[৮২] প্রবীণ মুসলিম নারীরা ভারত বিভাজনের আগে ভারতে শাড়ি পরতেন।[৮৩] সেখানে নতুন প্রজন্ম শাড়ির প্রতি আগ্রহ ফিরিয়ে এনেছেন। শাড়ি পাকিস্তানি হিন্দু নারীদের প্রতিদিনের পোশাক হিসাবে পরিহিত।

এশিয়ার অন্যান্য পোশাকের সাথে মিল[সম্পাদনা]

শাড়ি ভারতীয় উপমহাদেশের মহিলাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক হলেও, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশ মায়ানমার, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড এবং লাওসের মহিলারাও অনুরূপ পোশাক পরে। যেখানে একটি দীর্ঘ আয়তক্ষেত্রাকার কাপড়ের টুকরো শরীরের চারপাশে জড়িয়ে পরা হয়। এ ধরনের পোশাক শাড়ি থেকে কিছুটা ভিন্ন, কারণ এ ধরনের পোশাক অনেকটা স্কার্ট হিসাবে শরীরের (কোমর থেকে) নিচের অর্ধেক অংশে জড়ানো থাকে এবং উর্ধাঙ্গে ব্লাউজ পড়া হয়। অনেকটা সারং-এর মতো, আবার কিছুটা বর্মি লুঙ্গির মতো। সাধারণত ফিলিপিনো মালং এবং তাপিস, লাওটিয় এক্সআউট লাও এবং সুয়া প্যাটে দেখা যায়, অন্যদিকে থাই সোবাই এবং সিনহ, কম্বোডিয় সাম্পোট এবং তিমুরের তাই-এর মতো। মূলত ভারতীয় উপমহাদেশে সাধারণত শাড়ির এক প্রান্ত কোমরের চারদিকে জড়িয়ে রাখা হয় এবং অন্য প্রান্ত বুকের উপর দিকে কাঁধের উপর দিয়ে পেছনে ঝুুলিয়ে রাখা হয়।[৪][৩][২০]

অলঙ্করণ ও আলংকারিক আনুষঙ্গিক[সম্পাদনা]

পোশাকের দোকানে উৎসব উপলক্ষে গোটা পট্টি সূচিকর্ম সহ ঐতিহ্যবাহী শাড়ির প্রদর্শন।
উত্তর প্রদেশের ঐতিহ্যবাহী ছোলি

কোমরে জড়ানোর ফলে শাড়ির একটি সরল প্রান্ত পরিধানের পর মোড়কের অভ্যন্তরের মতো আড়াল থাকে, মাঝের প্রস্থের দুই প্রান্তে দীর্ঘ আলংকারিক সীমানা থাকে এবং শেষ প্রান্ত বা আঁচলের এক থেকে তিন ফুট অংশ যা বোনা থাকে এবং দৈর্ঘ্য অনুযায়ী বিভিন্ন নকশা বিস্তৃত থাকে। এই আঁচলের প্রান্তটি কোমরে জড়ানোর সময় নিভি শৈলীতে কাঁধের উপরে রাখা হয়।

অতীতে শাড়িগুলি সাধারণত রেশম বা সুতির বোনা হতো। কেতাদুরস্তরা সূক্ষ্মভাবে বোনা, ডায়াফ্যানস সিল্ক শাড়ি পরে থাকে যা লোককাহিনী অনুসারে, একটি আঙুলের আংটির মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে পারার মতন কোমল হয়ে থাকে। অনেকে হাতে বোনা মোটা সুতি শাড়ি পরে থাকেন। একসময় সকল শাড়ি হাতে বোনা ছিল এবং সময় বা অর্থের যথেষ্ট বিনিয়োগের প্রতিনিধিত্ব করেছিল।

সাধারণ হাতে বোনা গ্রামীণ শাড়িগুলি প্রায়শই কাপড়ের মধ্যে বোনা চেক বা ডোরা দিয়ে সজ্জিত করা হয়। সস্তা শাড়িগুলি খোদাই করা কাঠের ব্লক এবং উদ্ভিজ্জ রঙ বা টাই-ডাই ব্যবহার করে ব্লক প্রিন্ট দ্বারা সজ্জিত ছিল, যা ভারতে বন্ধনি কাজ হিসাবে পরিচিত।

ভাদ্দনাম বা কমরবন্ধ হ'ল এক ধরনের শাড়ি বেল্ট যা শাড়ির জটিল কুচি স্থির রাখতে ব্যবহৃত হয়।

ব্যয়বহুল শাড়িগুলির কাপড়ে বিস্তৃত জ্যামিতিক, পুষ্পশোভিত বা আলংকারিক নকশা দেখা যায়। কখনো কখনো ওয়ার্প এবং ওয়েফ থ্রেডগুলি প্রথমে টাই-ডাই করার পর বোনা হত, উদাহরণস্বরূপ ইকাত শাড়ি। কখনও কখনও বিভিন্ন রঙের সুতা দিয়ে মূল কাপড়ের ভিত্তি বোনা হত; সাথে অলঙ্কারযুক্ত পাড় (বা সীমানা), একটি বিস্তৃত আঁচল এবং প্রায়শই কাপড়ের মধ্যেই ছোট ছোট পুনরাবৃত্তি নকশা করা হয়। এক বাটিস বা ভূট্টিস বলা হয় (পৃথক বানানে)। অভিনব শাড়িগুলির জন্য, এই শৈলী স্বর্ণ বা রৌপ্য সুতার সাথে বোনা হয়ে থাকে, যা জরি কাজ না পরিচিত।

কখনও কখনও শাড়ি বুনন পরে বিভিন্ন ধরনের সূচিকর্মে সাজানো হয়। রেশমের কাজে রঙিন রেশম সুতোর সাহায্যে সূচিকর্ম করা হয়। জারদোজি সূচিকর্মে স্বর্ণ ও রৌপ্য সুতোর পাশাপাশি কখনও কখনও মুক্তো এবং মূল্যবান পাথর ব্যবহার করা হয়। জারদোজির সুলভ আধুনিক সংস্করণগুলি নকল মুক্তো এবং স্বরোস্কি স্ফটিকের মতো সিন্থেটিক ধাতব সুতো এবং অনুকরণ পাথর ব্যবহার করে তৈরি হয়।

আধুনিক কালে, শাড়ি ক্রমবর্ধমান যান্ত্রিক তাঁতে বোনা হয় এবং কৃত্রিম তন্তু বা সুতা যেমন পলিয়েস্টার, নাইলন বা রেয়ন দিয়ে তৈরি হয়, যার জন্য প্রায়শই স্টার্চিং বা ইস্ত্রি করার প্রয়োজন হয় না।

এ সমস্ত শাড়িগুলি সাধারণত মেশিনে ছাপা হয় বা শাড়ির পিছনে পাতলা আস্তরণযুক্ত অ্যামব্রয়েডারির প্যাটার্নগুলিতে বোনা হয়। ফলে পেছনের অংশে কুরুচিপূর্ণ হয়ে ওঠার সাপেক্ষে শাড়ির সামনের অংশে একটি বিস্তৃত শিল্পকর্ম ফুটিয়ে তোলা হয়। পাঞ্চরা কাজ সস্তা মেশিন-তৈরি ট্যাসেল ট্রিমের সাথে অনুকরণ করা হয়। ফ্যাশন ডিজাইনার আদিত্য শর্মা বলেছেন, "আমি ৫৪টি শৈলীতে শাড়ি পরাতে পারি"।[৮৪]

হাতে বোনা, হাতে সজ্জিত শাড়িগুলি প্রাকৃতিকভাবে মেশিনের অনুকরণের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয়বহুল। হস্ত বিপনের সামগ্রিক বাজার অচল হবার পর ভারতীয় তাঁতিদের মধ্যে চরম দুর্দশা এনেছিল। তবে, হাতে বোনা শাড়ির এখনও বিবাহ এবং অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে জনপ্রিয়তা রয়েছে।

ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে শাড়ি[সম্পাদনা]

লন্ডনে রাবণ চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ারে শাড়িতে ঐশ্বর্যা রাই

ঐতিহ্যবাহী শাড়ি ১৯৭০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাব ফেলেছিল। ইউজিন নোভাক, যিনি নিউইয়র্কে রয়্যাল শাড়ি হাউস নামের একটি দোকান চালাতেন, বলেন যে তিনি মূলত নিউইয়র্ক অঞ্চলে ভারতীয় মহিলাদের কাছে শাড়ি বিক্রি করতেন। কিন্তু পরে অনেক মার্কিন ব্যবসায়ী মহিলা এবং গৃহিণী তার গ্রাহক হয়েছিলেন, যারা তাদের শাড়িগুলি পশ্চিমা গাউনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ রাখতে পছন্দ করতেন। তিনি আরো বলেন যে পুরুষরা শাড়ি পরিহিতার মধ্যে ফুটে ওঠা নারীত্বে আকৃষ্ট হয় । [৮৫] নতুনরা জানিয়েছেন যে শাড়ি পরা স্বাচ্ছন্দদায়ক, কোনও পটি বা স্টকিংয়ের প্রয়োজন পড়ে না এবং প্রবাহিত পোশাকটি অস্বাভাবিক কৃপায় এতোটা মেয়েলি অনুভবদায়ক।[৮৬][৮৭]

বিশ্বব্যাপী ভারতীয় ফ্যাশন প্রবণতা বৃদ্ধির কারণে আন্তর্জাতিকভাবে শাড়ির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ঐশ্বর্যা রাইয়ের মতো অনেক বলিউড তারকা ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বকারী আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানগুলিতে শাড়ি পরে উপস্থিত হয়েছেন।[৮৮][৮৯] ২০১০ সালে, বলিউড অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন জাতীয় পোশাকে একটি জাতীয় অনুষ্ঠানে তার দেশের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। আন্তর্জাতিক কান চলচ্চিত্র উৎসবে তার প্রথম রেড কার্পেটের উপস্থিতিতে, তিনি রোহিত বাল শাড়ি পরে উপস্থিত হয়েছিলেন।[৯০][৯১]

আন্তর্জাতিক সেলিব্রেটিরা ভারতীয় ফ্যাশন ডিজাইনারদের পরিকল্পিত ঐতিহ্যবাহী শাড়ি পরে থাকেন।[৯২] পামেলা অ্যান্ডারসন বিগ বসে আকস্মিক অতিথি হিসাবে শাড়ি পরে উপস্থিত হন, বিগ ব্রাদারের ভারতীয় সংস্করণে, যা তার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করেছিলেন মুম্বাই-ভিত্তিক ফ্যাশন ডিজাইনার অ্যাশলে রেবেলো।[৯৩] ২০০৭ সালের নভেম্বরে ভার্জিনিয়ার ম্লেয়ানের রিটজ কার্লটনে ইয়থএইডসে অ্যাশলে জুড একটি বেগুনি শাড়ি দান করেছিলেন।[৯৪][৯৫][৯৬] নিউইয়র্কের বার্ষিক ফ্যাশন রকসের কনসার্টে লাল গালিচায় ভারতীয় শাড়ি পরে ডিজাইনার রকি এসের সঙ্গে র‌্যাম্প করেছিলেন জেসিকা, অ্যাশলে, নিকোল, কিম্বারলি এবং মেলোডি - পুসিক্যাট ডল্‌স[৯৭] ২০১৪ সালে আমেরিকান সঙ্গীতশিল্পী সেলিনা গোমেজকে নেপালে ইউনিসেফের দাতব্য অনুষ্ঠানের জন্য শাড়ি পরতে দেখা যায়।[৯৮]

যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি শাড়ি, নট সরি ডিজিটাল-আন্দোলনের মাধ্যমে শাড়ি রাজনৈতিক উপকরণে পরিণত হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রিভারসাইডের লিঙ্গ অধ্যয়নের অধ্যাপক তানিয়া রাওয়াল-জিন্দিয়া ইনস্টাগ্রামে বিদেশিবিদ্বেষ-বিরোধী ফ্যাশন-প্রচার শুরু করেছিলেন।[৯৯][১০০][১০১][১০২]

নাচের পোশাক হিসাবে শাড়ি[সম্পাদনা]

প্রচীন ভারতে ঐতিহাসিকভাবে নাচের পোশাক হিসাবে শাড়ি পরিহিত হতো। ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্য যেমন, ভরতনাট্যম, কত্থক, কুচিপুড়ি, মণিপুরি, মোহিনীঅট্টম, ওড়িশি, গৌড়ীয় নৃত্যে অধিকাংশ সময়ে নৃত্যশিল্পীরা শাড়ি পরিধান করে। ভারত ও বাংলাদেশের[১০৩] চলচ্চিত্রের নাচের দৃশ্যে শাড়ির প্রচলন ব্যপক।

বিভিন্ন ধরনের শাড়ি[সম্পাদনা]

যদিও বিমানবালাদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শাড়ি বলতে আধুনিক ঘরানার শাড়িকেই জনপ্রিয় করা হয়েছে, তবে উপমহাদেশের প্রতিটি অঞ্চলেই নিজস্ব ধরনের শাড়ির তৈরি ও জনপ্রিয় হয়েছে। নিচে কিছু পরিচিত ও জনপ্রিয় শাড়ির নাম দেয়া হয়েছে।

পূর্বাঞ্চলীয় শাড়ি[সম্পাদনা]

পশ্চিমাঞ্চলীয়[সম্পাদনা]

উত্তরাঞ্চলীয় শাড়ি[সম্পাদনা]

দক্ষিণাঞ্চলীয় শাড়ি[সম্পাদনা]

মধ্যাঞ্চলীয় শাড়ি[সম্পাদনা]

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

টীকা[সম্পাদনা]

  1. শাঢী: স্ত্রীং-সং, পরিধেয় বস্ত্র, শাড়ি।[১২]
  2. অনুবাদ: চঞ্চল হাতে বুকের ওপর আঁচল রাখার সময়ে একটি স্তনের অর্ধেক দেখা গেল, মনে হলো, বায়ুর তাড়নে শরতের মেঘ অপসৃত হয়ে সুমেরু প্রকাশিত হলো।[২৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. লিন্টন ১৯৯৫
  2. শাওয়াল খান (২০১২)। "শাড়ি"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  3. বোলঞ্জার ১৯৯৭, পৃ. ৬।
  4. আলকাজি ১৯৯৬
  5. বোলঞ্জার ১৯৯৭
  6. ঘুরে ১৯৫১: Includes rare photographs of 19th century Namboothiri and nair women in ancient saree with bare upper torso
  7. কাতিয়ার ২০০৯, পৃ. ২১১।
  8. "Sari, Always in Vogue"হিন্দুইজম টুডে। ২০১৮-০৩-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৩-০৯ 
  9. শাহেদ ১৯৮৫, পৃ. ১।
  10. আর এস ম্যাকগ্রিগোর, সম্পাদক (১৯৯৭)। অক্সফোর্ড হিন্দি-ইংরেজি অভিধান (ইংরেজি ভাষায়)। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ১০০৩। আইএসবিএন 978-0-19-864339-5 
  11. মনিয়র-উইলিয়ামস ১৯৯৫, পৃ. ১০৬৩।
  12. বিদ্যালংকার, মহাত্মা রামকমল। সচিত্র প্রকৃতবাদ অভিধান (৪র্থ সংস্করণ)। 
  13. কাপুর ২০০২, পৃ. ৬৪২২।
  14. সচিনানন্দ ১৯৭৫, পৃ. ৩১-৩৫।
  15. Prachya Pratibha, 1978 "Prachya Pratibha, Volume 6", p.121
  16. পদ্মা ১৯৯১, পৃ. ১১৮।
  17. "How to wear saree perfectly - Glowpink"। ২৬ মার্চ ২০১৫। ২০ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  18. শাহেদ ১৯৮৫, পৃ. ১০।
  19. আলকাজি ১৯৯৬, পৃ. ৪৮।
  20. ঘুরে ১৯৫১
  21. স্টেইন ১৯৯৮, পৃ. ৪৭।
  22. "What did the Indus people wear and what material were their clothes made of?"। Harappa.com। ২ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  23. অ্যাবট ২০০৯, পৃ. ৯৪৫।
  24. গুড, কেনোযের এবং মেডো ২০০৯, পৃ. ৪৫৭।
  25. শাহেদ ১৯৮৫, পৃ. ৪।
  26. শাহেদ ১৯৮৫, পৃ. ৩।
  27. প্রাসাদ মহাপাত্র ১৯৯২
  28. প্রাসাদ মহাপাত্র ১৯৯২, পৃ. ৩৫।
  29. ভান্ডারী ২০০৫, পৃ. ৮৪।
  30. লিন্টন ১৯৯৫, পৃ. ১৭০।
  31. Prof. Dipak Sharma (2012) "SOUVENIR of 2nd International Science Congress (ISC-2012).", p.282
  32. কোহেয়া-ফানজো ১৯৮৪, পৃ. ১২৬।
  33. বৈদ্য ২০০১, পৃ. ১৪৪।
  34. লেভিক, ক্রাইট্‌স এবং নানজি ২০০৮, পৃ. ৪৭।
  35. কাতিয়ার ২০০৯
  36. পার্থসারথি ১৯৯৩
  37. তার্লো ১৯৯৬, পৃ. ১৫৪।
  38. ঘুরে ১৯৫১, পৃ. ১৫৪।
  39. জৈন ২০০৩
  40. আলট্রাকার ১৯৫৬, পৃ. ৩৮০।
  41. সাম্নার ২০০৭
  42. লিন্টন ১৯৯৫, পৃ. ৪০।
  43. মুনি ১৯৬৭
  44. বেক ১৯৭৬, পৃ. ২১৩–২৪৩।
  45. মিলার ও ব্যানার্জী ২০০৪
  46. ফ্রেঞ্জ ও মারার ২০০৪, পৃ. ৯৩।
  47. ঘুরে ১৯৫১, পৃ. ২৩৬।
  48. আয়ার ১৯৮৭, পৃ. ১৫২।
  49. পাণ্ডে ১৯৯৩, পৃ. ৬৩।
  50. কাতিয়ার ২০০৯, পৃ. ২৪।
  51. চন্দের ২০০৩
  52. ক্রিল ১৯৯৯, পৃ. ৯৩।
  53. History of Kasuti is mentioned by Govind D. Belgaumkar and Anil Kumar Sastry (২৭ অক্টোবর ২০০৬)। "Unique symbols of Karnataka"Online Edition of The Hindu, dated 2006-10-27। Chennai, India: 2006, The Hindu। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০০৭ 
  54. মজুপুরিয়া ২০০৭, পৃ. ২৯১।
  55. Ava Laboy Capo (2013) "Wedding Traditions from Around the World.", p.18
  56. "Saree saga: Draped for elegance, growth too"The Economic Times। Mumbai। ৫ এপ্রিল ২০০৯। 
  57. Jay Narayan Vyas, Textile Review, 2007 "Indian Textiles 2015: Comprehensive Forecast on Indian Textiles Industry in 2015 with an Exhaustive Buyer's Guide for Textile Machinery", p.126
  58. Wada, Yoshiko Iwamoto (২০০২)। Memory on Cloth: Shibori Now। Kodansha International। পৃষ্ঠা 28। আইএসবিএন 9784770027771 
  59. "Embroidery on Indian wedding wear | Gota work"। nidhishekhawat475.wixsite.com। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  60. Anne Morrell (1995) "The Techniques of Indian Embroidery.", p.68
  61. "Indian Bridal Wear Trends 2014, Photos & Review"Vivah Planners। ১৪ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুলাই ২০১৪At times, even use of different fabrics like crêpe, Georgette, tissue and satin are used. 
  62. Sandhu, Arti (২০১৫)। Indian Fashion: Tradition, Innovation, Style। bloomsbury। পৃষ্ঠা 19। আইএসবিএন 978-18478-8780-1 
  63. ফেদেরিকো ২০০৯, পৃ. ১৩৬।
  64. Anita Rao Kashi। "How to Wear a Sari in India"। World Hum। ২০ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১২ 
  65. "The History of Indian Sarees - Chappals UK"chappals.co.uk। ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জানুয়ারি ২০১৭ 
  66. চিশতি ও সিংহ ২০০৭
  67. "Regional Styles of Wearing A Sari By Indian Women"। ৭ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ আগস্ট ২০১৯ 
  68. "Nivi Style Saree Draping"। Indian Wedding Saree। ১০ এপ্রিল ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ 
  69. "Madisar Pudavai"। Tamilnadu.com। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। ৯ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ আগস্ট ২০১৯ 
  70. Sikka, Raghav। "Wendell Rodricks showcase"Hindustan Times। New Delhi। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  71. "Dressing the Indian woman"। ২০১৪-১২-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৩-১৭ 
  72. "9 Facts You Might Not Know About The Sari"Google Arts & Culture। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৩-১৭ 
  73. Gupta, Toolika (২০১১)। "The Effect of British Raj on Indian Costume" (পিডিএফ)Process Arts। ৬ আগস্ট ২০২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জানুয়ারি ২০২০ 
  74. Linda Lynton(1995), The Sari: Styles, Patterns, History, Technique আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮১০৯-৪৪৬১-৯, page 187; Quote: It is in the Karnataka (Mysore) and western Maharashtran area that the nivi style is believed to have originated..
  75. Kumar, Rita (মে ২০০৮)। "A story of sartorial amalgamation"Seminar (585)। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  76. "Royal style diaries for the princess in you"theluxecafe.com। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জানুয়ারি ২০১৭ 
  77. Sarah Murray (১৫ মার্চ ২০০৫)। "How haute couture went on to even greater heights"। Financial Times। পৃষ্ঠা 4। The nationality of the airline company is often also reflected in the designs of the cabin crew uniforms, such as ... the saris of Air India. 
  78. "Now Banarasi sarees for Taj staff"। Rediff.com। সংগ্রহের তারিখ ১৩ নভেম্বর ২০১১ 
  79. Akanksha Swarup & Soni Sangwan (২০ এপ্রিল ২০০৯)। "Sari secrets of politicians!"India Today। ২৪ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১২ 
  80. "Minisaree causes uproar in Ceylon"Gadsden Times। ১১ জুলাই ১৯৬৯। ১১ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০১২ 
  81. "Eastern Miniskirt causes considerable uproar"Reading Eagle। ৬ জুলাই ১৯৬৯। ১১ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০১২ 
  82. "Bollywood, saris and a bombed train"Asia Times। ৯ আগস্ট ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ আগস্ট ২০০৭ 
  83. "The spread of the salwar"The Hindu। Chennai, India। ২৪ অক্টোবর ২০০৪। ৬ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ আগস্ট ২০০৭ 
  84. Davina Raisinghani (১২ জানুয়ারি ২০০৯)। "Sari, it's a wrap"Khaleej Times Online। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১২ 
  85. "Sari is coming trend in USA"The Hour। ৪ জানুয়ারি ১৯৭৭। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১২ 
  86. Helen Hennessy (২০ এপ্রিল ১৯৬৫)। "Indian Sari is Exotic Style"The Leader-Post। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১২ 
  87. Helen Hennessy (২২ এপ্রিল ১৯৬৫)। "Stylish Set Only Six Yards Away From Sari Fashions."Eugene Register-Guard। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১২ 
  88. ""Ravan's star-studded premiere in London," The Indian Express"The Indian Express। India। ১৭ জুন ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ১৩ নভেম্বর ২০১১ 
  89. "Indian threads: When Bollywood celebrities went ethnic at Cannes"Th Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১৬ 
  90. ""Deepika walks Cannes red carpet in saree," The Hindu"The Hindu। India। Press Trust of India। ১৪ মে ২০১০। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ নভেম্বর ২০১১ 
  91. "Deepika always wanted to wear saree at international do"। Movies.ndtv.com। ৪ মে ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ নভেম্বর ২০১১ 
  92. "Saree – Re-emerging as the Fashion Icon of Indian Youth!"forimmediaterelease.net। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ 
  93. Bhushan, Nyay (১৯ নভেম্বর ২০১০)। ""Pamela Anderson Gets Indian Makeover for TV Turn," The Hollywood Reporter"The Hollywood Reporter। সংগ্রহের তারিখ ১৩ নভেম্বর ২০১১ 
  94. "Firang babes in saree-Ashley Judd"The Times of India। ২৪ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ নভেম্বর ২০১১ 
  95. "Around the world in 9 yards"Hindustan Times। India। ২৬ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ নভেম্বর ২০১১ 
  96. "Ashley Judd Is So Very Sari"। TMZ। ২৮ মে ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ১৩ নভেম্বর ২০১১ 
  97. "Saree jahan se achha, The Times of India"The Times of India। ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৮। ২৮ নভেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ নভেম্বর ২০১১ 
  98. "Spotted: Selena Gomez shows off her sexy curves in a sari"India Today। ২৪ মে ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১৬ 
  99. "Twitter Campaign #SareeNotSorry Fights Xenophobia"Bustle (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-০১ 
  100. pbordelon@theadvocate.com, PAM BORDELON |। "'Saree Not Sorry' campaign aims to break down cultural walls"The Advocate (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-০১ 
  101. "The #SareeNotSorry Movement Is Taking a Beautiful Stand Against Xenophobia"Mic (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-০১ 
  102. West, REENA RATHORE, India। "Professor Tanya Rawal's #SareeNotSorry Campaign Uses Fashion to Fight Racism"India West (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৮-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-০১ 
  103. ব্রুজি ও গিবসন ২০১৩, পৃ. ৪৭।
  104. "Hard earned Paisa Vasool shopping - Times of India"The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-১০ 
  105. "History of Chanderi sarees"Bunkar Virasat Sanrkshan Sanstha [Weaver Heritage Conservancy]। Albira। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 

উৎস[সম্পাদনা]

সাময়িকী

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]