ফেনী

স্থানাঙ্ক: ২৩°১.১′ উত্তর ৯১°২৪.৬′ পূর্ব / ২৩.০১৮৩° উত্তর ৯১.৪১০০° পূর্ব / 23.0183; 91.4100
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ফেনী
ফেনী শহরে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য
ফেনী শহরে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য
ফেনী বাংলাদেশ-এ অবস্থিত
ফেনী
ফেনী
বাংলাদেশে অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৩°১.১′ উত্তর ৯১°২৪.৬′ পূর্ব / ২৩.০১৮৩° উত্তর ৯১.৪১০০° পূর্ব / 23.0183; 91.4100
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগচট্টগ্রাম বিভাগ
জেলাফেনী জেলা
পৌরসভা১৯৫৮
জেলা শহরের মর্যাদা১৯৮৪
সরকার
 • ধরনপৌরসভা
 • শাসকফেনী পৌরসভা
 • পৌর মেয়রনজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ)
আয়তন
 • মোট২২ বর্গকিমি (৮ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা
 • মোট১,৫৬,৯৭১
 • জনঘনত্ব৭,১০০/বর্গকিমি (১৮,০০০/বর্গমাইল)
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৩৯০০[১]
কলিং কোড+৮৮০
আঞ্চলিক টেলিফোন কোড৩৩১

ফেনী বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি শহর।[২] প্রশাসনিকভাবে এটি একই সাথে ফেনী জেলা এবং ফেনী সদর উপজেলার সদর। এর আয়তন ২২ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ১৫৬,৯৭১ জন, যা একে বাংলাদেশের ২৭তম বৃহত্তম শহরে পরিণত করেছে।[৩] ফেনী বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল নগরাঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি ফেনী জেলার সবচেয়ে জনবহুল এবং বৃহত্তম শহর। বিভাগীয় শহর বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে ৯১.৭ কি.মি.[৪] দূরত্বে ফেনী শহর অবস্থিত। শহরটির সবচেয়ে নিকটবর্তী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

নামকরণ[সম্পাদনা]

ফেনী নদীর নামানুসারে এ অঞ্চলের নামকরণ হয়েছে ফেনী। মধ্যযুগে কবি-সাহিত্যিকদের লেখায় একটি বিশেষ নদীর স্রোতধারা ও ফেরী পারাপারের ঘাট হিসেবে ফনী শব্দের ব্যবহার পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ষোড়শ শতাব্দীর সময়ে কবি কবীন্দ্র পরমেশ্বর পরাগলপুরের বর্ণনায় উল্লেখ করেন, ফনী নদীতে বেষ্টিত চারিধার, পূর্বে মহাগিরি পার নাই তার। এরপর সতের শতকে মির্জা নাথানের ফার্সী ভাষায় রচিত বাহরিস্তান-ই-গায়েবীতে ফনী শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে ফেনী-তে পরিণত হয়।

আঠারো শতকের শেষার্ধে কবি আলী রজা প্রকাশ কানু ফকির তাঁর পীরের বসতি হাজীগাঁও এর অবস্থান সম্পর্কে লিখছেন, ফেনীর দক্ষিণে এক ষর উপাম, হাজীগাঁও করিছিল সেই দেশের নাম। কবি মুহম্মদ মুকিম তাঁর পৈতৃক বসতির বর্ণনাকালে বলেছেন, ফেনীর পশ্চিমভাগে জুগিদিয়া দেশে। তারাও নদী অর্থে ফেনী ব্যবহার করেছেন। ধারণা করা হয় আদি শব্দ ফনী কবি ও সাহিত্যিকদের ভাষায় ফেনীতে পরিণত হয়েছে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

অতীতে এ অঞ্চল ছিল সাগরের অংশ, তবে উত্তর পূর্ব দিক ছিল পাহাড়িয়া অঞ্চলের পাদদেশ। বৃহত্তর নোয়াখালীর মধ্যে পূর্ব দিকের ফেনী অঞ্চলকে ভূ-খণ্ড হিসেবে অধিকতর প্রাচীন বলে পণ্ডিতগণ মত প্রকাশ করেছেন। ফেনীর পূর্বভাগের ছাগলনাইয়া উপজেলার শিলুয়া গ্রামে রয়েছে এক প্রাচীন ঐতিহাসিক শিলামূর্তির ধ্বংসাবশেষ। প্রকাশ শিলামূর্তির অবস্থানের কারণে স্থানটি শিলুয়া বা শিল্লা নামে পরিচিত হয়েছে। প্রাচীন কালে হয়ত এখানে বৌদ্ধ ধর্ম ও কৃষ্টির বিকাশ ঘটেছিল।

প্রাচীনকালে আধুনিক ফেনী অঞ্চল ছাড়া নোয়াখালীর বেশির ভাগ ছিল নিম্ন জলাভূমি। ফেনী নদীর তীরে রঘুনন্দন পাহাড়ের পাদদেশে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বীর বাঙ্গালী শমসের গাজীর রাজধানী ছিল। তিনি এখান থেকে যুদ্ধাভিযানে গিয়ে রৌশনাবাদ ও ত্রিপুরা রাজ্য জয় করেন। তিনি চম্পক নগরের একাংশের নামকরণ করেছিলেন জগন্নাথ সোনাপুর।

ভূগোল[সম্পাদনা]

ফেনী রাজধানী ঢাকা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং চট্টগ্রাম থেকে উত্তরে, ২২º৫৪΄ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৩º০৪΄ উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত এবং ৯১º১৮΄ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৯১º৩১΄ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ১২ মিটার[৫] এবং মোট আয়তন ২২ বর্গকিলোমিটার। ভূসংস্থান অনুসারে এটি সমতলভূমিতে অবস্থিত হলেও উত্তর থেকে দক্ষিণ ঢালু। বছরের অধিকাংশ সময়ই এখানে ক্রান্তীয় ভেজা এবং শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে। গড়ে তাপমাত্রা থাকে সর্বোচ্চ ৩২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোনিম্ন ১৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত এখানেও এপ্রিল থেকে জুন হল সবচেয়ে উষ্ণতম মাস এবং ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারী হল সবচেয়ে শীতলতম মাস। ফেনীর গড় বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ২৭৯৪ মিলিমিটার।

জনসংখ্যা[সম্পাদনা]

২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী ফেনী শহরের মোট জনসংখ্যা ১৫৬৯৭১ জন।[৬] যার মধ্যে ৮২৫৫৪ জন পুরুষ এবং ৭৪৪১৭ জন নারী। এ শহরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৭১০০ জন মানুষ বসবাস করে। নারী পুরুষের লিঙ্গ অনুপাত ১০০ঃ১১১ এবং শিক্ষার হার ৬৯.৭%(৭ বছরের উর্দ্ধে)। শহরের মোট বাড়ি রয়েছে ৩১৪৬৮টি।[৬]

প্রশাসন ও রাজনীতি[সম্পাদনা]

ফেনী টাউন কমিটি ১৯২৯ সালে গঠিত হয়েছিল। ১৯৯২ সালে টাউন কমিটি পৌরসভায় রুপান্তর করা হয়।

ফেনী পৌরসভা ১৮টি ওয়ার্ড[৭] এবং ৩৫টি মহল্লা নিয়ে গঠিত। প্রতি ওয়ার্ডের জন্য সরাসরি ভোটে নির্বাচিত একজন কাউন্সিলর থাকেন। পৌরসভার প্রধান হলেন মেয়র। এছাড়াও তিন জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর রয়েছেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Staff। "ZIP Code database of Bangladesh"। Geopostcodes.com। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুন ২০০৮ 
  2. "NGA GeoNames Database"। National Geospatial-Intelligence Agency। ২২ জুলাই ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৫ 
  3. "23: Area, Household, Population and Literacy Rate of the Cities, 2011"। Population & Housing Census-2011 [আদমশুমারি ও গৃহগণনা-২০১১] (পিডিএফ) (প্রতিবেদন)। জাতীয় প্রতিবেদন (ইংরেজি ভাষায়)। ভলিউম ৩: Urban Area Rport, 2011। ঢাকা: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। মার্চ ২০১৪। পৃষ্ঠা XI। ১১ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  4. "Distance from Feni to Chittagong"। distancesto.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০১-২১ 
  5. "Geographic coordinates of Feni, Bangladesh. Latitude, longitude, and elevation above sea level of Feni"dateandtime.info। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-০৫ 
  6. "4.1.12 Feni"। Population & Housing Census-2011 [আদমশুমারি ও গৃহগণনা-২০১১] (পিডিএফ) (প্রতিবেদন)। জাতীয় প্রতিবেদন (ইংরেজি ভাষায়)। ভলিউম ৩: Urban Area Rport, 2011। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। মার্চ ২০১৪। পৃষ্ঠা ৬৮,৬৯। ১১ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  7. "National Reports Union Statistics" (পিডিএফ)web.archive.org। Wayback Machine। Archived from the original on ৮ ডিসেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০১৯