বাঁশি
বাঁশি হলো এক ধরনের সুষির অর্থাৎ ফুৎকার (ফুঁ) দিয়ে বাজানো যায় এমন বাদ্যযন্ত্র। বাংলায় বাঁশিকে মুরালি, মোহন বাঁশি, বংশী অথবা বাঁশরিও বলা হয়। বাঁশির পাশ্চাত্য সংস্করণের নাম ফ্লুট(flute)। ভারতীয় উপমহাদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাঁশি তৈরিতে তরলা বাঁশ ব্যবহার করা হয়। কেউ কেউ শখের বশে ষ্টিলের, তামার, পিতলের, রূপার এমনকি সোনার পাইপ দিয়েও বাঁশি তৈরী করিয়ে থাকেন। এই প্রাচীন এবং মনহরানো বাদ্যযন্ত্রের গায়ে সাতটি ছিদ্র (মাঝে মাঝে আটটিও ছিদ্র দেখা যায়) থাকে। যে নল বা পাইপটি দিয়ে বাঁশি তৈরি করা হয় তার একপাশ সম্পূর্ণ আটকে বায়ুরোধী করে দেওয়া হয়। বাঁশের তৈরি বাঁশিতে গিট বা গিরা একপাশকে বায়ুরোধী করার কাজে ব্যবহার করা হয়। বন্ধ এবং খোলা প্রান্তের মাঝামাঝিতে ছিদ্রগুলো করা হয়। যে ছিদ্রটি বন্ধ প্রান্তের ঠিক কাছাকাছি থাকে সেটা দিয়ে কৌশলে ফু দিতে হয় এবং বাকি ছযটি ছিদ্র ডান হাতের মধ্যবর্তী তিনটি এবং বাম হাতের মধ্যবর্তী তিনটি আঙ্গুল দিয়ে কখনো আটকে কখনো ছেড়ে দিয়ে সুর তুলতে হয়।
বাঁশির প্রকারভেদ
[সম্পাদনা]বাংলাদেশে সহ ভারত নেপালে বিভিন্ন রকম বাঁশীর দেখা যায়।
তার মাঝে বহুলপরিচিত বাঁশী গুলো হলো [১]
১- সরল বাঁশি
২-আড় বাঁশি
৩- টিপরাই বাঁশি
৪- সানাই বাঁশি
৫- ভিন বাঁশি
৬- মোহন বাঁশি
বাঁশি তৈরির পদ্ধতি
[সম্পাদনা]বাঁশি তৈরিতে লাগে বিশেষ ধরনের মুলিবাঁশ বা নল বাশ। যার উভয় দিকের বেয় আকার ও পুরুত্ব এক সমান। পুরুত্ব পাতলা হলে সুন্দর মিষ্টি আর নিখুত সুর আসবে। বাঁশ রোদে শুকিয়ে বাঁশি অনুসারে মাপমতো কেটে টুকরো করা হয়। এরপর টুকরোগুলো মসৃণ করে নিতে হয়। সংরিহিত বাঁশের অংশকে বাঁশি তৈরির সঠিকপদ্ধতি অনুসারে তার গায়ে পেনসিল কলম আর পরিমাপ করার ফিতে বা রুলার দিয়ে মেপে চিহ্ন দিয়ে নিতে হয়। পরে কয়লার আগুনে পোড়ানো লোহার শলাকা দিয়ে ছিদ্র করা হয়। আঁকা হয় নকশা। এরপর মাটির প্রলেপ লাগিয়ে আবার আগুনে সেঁকে জলেতে ধুয়ে বাঁশিগুলো পুনরায় রোদে শুকানো হয়। শুকানোর পর বার্নিশ করা হয়। এরপর বাঁশিতে ফুঁ—সুর উঠল কিনা তা পরীক্ষা করা হয়।
বাঁশির নম্বর | বাঁশির স্কেল |
---|---|
৮ ১/২ (সাড়ে আট) | C# (সি শার্প) |
৮ | C ( সি ) |
৭ | B ( বি ) |
৬ ১/২ (সাড়ে ছয়) | A# (এ শার্প) |
৬ | A ( এ ) |
৫ ১/২ (সাড়ে পাঁচ) | G# (জি শার্প) |
৫ | G ( জি ) |
বাঁশির স্বরগ্রাম
[সম্পাদনা]বাঁশিতে সংগীতের সাতটি স্বর (সা রে গা মা পা ধা নি) এবং পাঁচটি বিকৃত স্বর ( ঋ জ্ঞ ক্ষ দ ণ), সর্বমোট ১২ টি স্বরই পাওয়া যায় ।
বাঁশিতে সুর পরিবর্তন (টিউনিং) করা যায় না, তাই একজন বংশীবাদক কে ১২ টি স্কেলের ১২টি বাঁশিই সাথে রাখতে হয়।
বাঁশিতে
- উদারা সপ্তক এর পা ধা নি
- মুদারা সপ্তক এর সবগুলো স্বর
- তারা সপ্তক এর সা রা গা মা পা পাওয়া যায়
পা্ ধা্ নি্ সা রে গা মা পা ধা নি র্সা র্রে র্গা র্মা র্পা বাঁশিতে সাধারণত ৮টি ফুটো থাকে । একটি ফু দেবার জন্য ও ৬ টি সুরের জন্য । আর একটা থাকে কড়ি মধ্যম বাজানোর জন্য । বড় বাঁশির ক্ষেত্রে সেটি পা দিয়ে বন্ধ করে বাজানো হয় আর ছোট বাশির ক্ষেত্রে কনিষ্ঠা আঙ্গুল দিয়ে বাজানো হয় । বাঁশিতে "পা" ও "মা" স্বর দুটি বাজালে সপ্তক পরিবর্তন এর জন্য কাটা আওয়াজ আসে তাই পন্ডিত ভেংকাটেস গোদখিন্ডি পঞ্চম ছিদ্র (pancham hole ) এর আবিষ্কার করেন । এতে করে "পা" ও "মা" এর মধ্যেও মীড় করা সম্ভব হয় । তাছাড়াও কড়ি "মা" বাজানোর ছিদ্র ছাড়াও এখন একি যায়গায় শুদ্ধ "মা" ও শুদ্ধ "গা" বাজানোর জন্যও একের অধিক (২/৩) ফুটো করা থাকে ।
চিত্রশালা
[সম্পাদনা]আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ মৃণাল দাশ গুপ্ত (১ জানুয়ারি ২০১৩)। সহজ পদ্ধতির বাঁশী শিক্ষা। অশোক ধর, গণেশ এন্ড কোং; ৯৮, হাজারী লেইন, চট্টগ্রাম।