বিষয়বস্তুতে চলুন

বঙ্গোপসাগর

বঙ্গোপসাগর
বঙ্গোপসাগরের মানচিত্র
স্থানাঙ্ক১৫° উত্তর ৮৮° পূর্ব / ১৫° উত্তর ৮৮° পূর্ব / 15; 88
ধরনউপসাগর
প্রাথমিক অন্তর্প্রবাহভারত মহাসাগর
অববাহিকার দেশসমূহ
সর্বাধিক দৈর্ঘ্য২,০৯০ কিমি (১,৩০০ মা)
সর্বাধিক প্রস্থ১,৬১০ কিমি (১,০০০ মা)
পৃষ্ঠতল অঞ্চল২১,৭২,০০০ কিমি (৮,৩৯,০০০ মা)
গড় গভীরতা২,৬০০ মি (৮,৫০০ ফু)
সর্বাধিক গভীরতা৪,৬৯৪ মি (১৫,৪০০ ফু)

বঙ্গোপসাগর হলো বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর[] এটি ভারত মহাসাগরের উত্তর অংশে অবস্থিত একটি প্রায় ত্রিভূজাকৃতি উপসাগর। এই উপসাগরের পশ্চিম দিকে রয়েছে ভারতশ্রীলঙ্কা, উত্তর দিকে রয়েছে ভারত ও বাংলাদেশ এবং পূর্ব দিকে রয়েছে মিয়ানমারথাইল্যান্ড। বঙ্গোপসাগরের ঠিক মাঝখানে বিরাজ করছে ভারতের অধিভুক্ত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ

বঙ্গোপসাগরের আয়তন ২১,৭২,০০০ বর্গকিলোমিটার (৮,৩৯,০০০ বর্গমাইল)। একাধিক বড়ো নদী এই উপসাগরে এসে মিশেছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য গঙ্গা ও তার প্রধান দুই শাখানদী পদ্মাহুগলি, ব্রহ্মপুত্র ও তার উশাখানদী যমুনামেঘনা, ইরাবতী, গোদাবরী, মহানদী, কৃষ্ণা, সুবর্ণরেখা, কাবেরী ইত‍্যাদি নদীসমূহ। বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলি হল চেন্নাই, চট্টগ্রাম, পায়রা, কলকাতা, হলদিয়া, মংলা, পারাদীপ, টুটিকোরিন, বিশাখাপত্তনমইয়াঙ্গুন। বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার এই উপসাগরের তীরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রে অবস্থিত। এই উপসাগরের তীরে অবস্থিত বিখ‍্যাত পর্যটন কেন্দ্রগুলি হল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, চেন্নাই, পুুুরি, বিশাখাপত্তনম, সুুুুন্দরবন, দিঘা, ফুকে, কুয়াকাটা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ত্রিংকোমালি ইত‍্যাদি।

বঙ্গোপসাগরে জেলে নৌকার দৃশ্য

বিস্তার

[সম্পাদনা]

ইন্টারন্যাশানাল হাইড্রোগ্রাফিক অর্গানাইজেশন বঙ্গোপসাগরের যে সীমারেখা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, সেটি নিম্নরূপ:[]

পূর্ব দিকে: মায়ানমারের নেগ্রাইস অন্তরীপ (১৬°০৩' উত্তর) থেকে একটি রেখা আন্দামানের বৃহদায়তন দ্বীপগুলির উপর দিয়ে এমনভাবে টানা হয়েছে, যাতে দ্বীপগুলির মধ্যভাগের সংকীর্ণ জলভাগ রেখার পূর্ব দিকে পড়ে এবং বঙ্গোপসাগর থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। এই রেখাটি লিটল আন্দামান দ্বীপ (১০°৪৮' উত্তর অক্ষরেখা ও ৯২°২৪' পূর্ব দ্রাঘিমা রেখা) পর্যন্ত প্রসারিত। তারপর মায়ানমার সাগরের দক্ষিণপশ্চিম সীমা পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের সীমা প্রসারিত। (সুমাত্রার ওয়েজং রাজা (৫°৩২′ উত্তর ৯৫°১২′ পূর্ব / ৫.৫৩৩° উত্তর ৯৫.২০০° পূর্ব / 5.533; 95.200) থেকে পোয়েলো ব্রু পর্যন্ত একটি রেখা নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের পশ্চিম দিকের দ্বীপগুলির উপর দিয়ে এমনভাবে প্রসারিত, যাতে দ্বীপগুলির মধ্যভাগের সংকীর্ণ জলভাগ মায়ানমার সাগরে পড়ে। এই রেখাটি দক্ষিণে লিটল আন্দামান দ্বীপের স্যান্ডি পয়েন্ট পর্যন্ত প্রসারিত।
দক্ষিণ দিকে:

অ্যাডাম’স ব্রিজ (ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে) ও ডোন্ড্রা হেডের (শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ বিন্দু) থেকে পোয়েলো ব্রুয়ের উত্তর বিন্দু (৫°৪৪′ উত্তর ৯৫°০৪′ পূর্ব / ৫.৭৩৩° উত্তর ৯৫.০৬৭° পূর্ব / 5.733; 95.067) পর্যন্ত।

নামকরণ

[সম্পাদনা]

উপসাগরটির নাম ঐতিহাসিক বৃহৎ বঙ্গ অঞ্চলের (বর্তমানের পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ, বরাক উপত্যকা এবং ত্রিপুরা) নাম থেকে এসেছে। প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্রে বঙ্গোপসাগরকে বলা হয়েছে ‘মহোদধি’ (সংস্কৃত: महोदधि, অর্থাৎ, বিরাট জলাধার)।[][] প্রাচীন মানচিত্রগুলিতে এই উপসাগরটি সাইনাস গ্যাঞ্জেটিকাস বা গ্যাঞ্জেটিকাস সাইনাস নামে পরিচিত। এই কথা দুটির অর্থ গঙ্গা উপসাগর।[] প্রধানত প্রাচীন তামিল সাহিত্যে বঙ্গোপসাগরকে বঙ্গ কড়ল (বঙ্গ সাগর বা মহাসাগর) বলে উল্লেখ করা হয়েছে। চন্দ্র রাজবংশের ঢাকার মদনপুর তাম্রশাসনে এই উপসাগরটিকে 'বঙ্গসাগর' বলে অভিহিত করা হয়েছে।[]

বঙ্গোপসাগরের অন্যান্য সংস্কৃত নামগুলি হল ‘বঙ্গোপসাগর’ (সংস্কৃত: वङ्गोपसागर), বঙ্গসাগর (সংস্কৃত: वङ्गसागर) ও পূর্বপয়োধি (সংস্কৃত:पूर्वपयोधि, পূর্ব মহাসাগর)।

নদ-নদী

[সম্পাদনা]
উপগ্রহের ছবি: বঙ্গোপসাগরের উপকূলে সুন্দরবন, একাধিক নদী এসে পড়েছে এর বুকে

বাংলাদেশ ও ভারতের অনেক বৃহৎ নদী পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। তন্মধ্যে উত্তরদিক থেকে গঙ্গা, মেঘনা এবং ব্রহ্মপুত্র; দক্ষিণদিক থেকে মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা, ইরাবতী এবং কাবেরী নদী উল্লেখযোগ্য। ৬৪ কিলোমিটারব্যাপী (৪০ মাইল) কৌম নদী সবচেয়ে ছোট নদী হিসেবে সরু খাল দিয়ে এবং ২,৯৪৮ কিলোমিটারব্যাপী (১,৮৩২ মাইল) বিশ্বের ২৮তম দীর্ঘ নদী হিসেবে ব্রহ্মপুত্র নদ বাংলাদেশ, চীন, নেপালভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর ব-দ্বীপকে ঘিরে গঠিত হয়েছে। মিয়ানমারের (সাবেক বার্মা) ইরাওয়াদি (সংস্কৃত ইরাবত) নদীও এ উপসাগরে মিলিত হয়েছে এবং একসময় গভীর ও ঘন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের সৃষ্টি করেছিল।

সমুদ্র বন্দর

[সম্পাদনা]
বিশাখাপত্মম, ভারতের ব্যস্ততম সমুদ্রবন্দর।

বাংলাদেশের প্রধান তিনটি সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম,পায়রামংলা বন্দর এই উপসাগরে অবস্থিত। ভারতের প্রধান সমুদ্র বন্দরের মধ্যে কাকিনাদা, চেন্নাই, বিশাখাপত্তনম, কলকাতা, হলদিয়া, তৃণকমলি, পন্ডিচেরী এবং পারাদিপ। মায়ানমারের পূর্ববর্তী রাজধানী ও সর্ববৃহৎ নগরী ইয়াংগুন, বঙ্গোপসাগরের একটি উল্লেখযোগ্য সমুদ্রবন্দর।

দ্বীপপুঞ্জ

[সম্পাদনা]

বঙ্গোপসাগরে অনেকগুলো দ্বীপমালা রয়েছে। তন্মধ্যে - আন্দামান, নিকোবর এবং মার্গুই দ্বীপপুঞ্জ অন্যতম। উত্তর-পূর্বে মিয়ানমার উপকূলের চিদুবা দ্বীপপুঞ্জ কয়েকটি কর্দমাক্ত আগ্নেয়গিরির জন্য বিখ্যাত যা মাঝে মাঝে সক্রিয় হয়। গ্রেট আন্দামান হচ্ছে আন্দামান দ্বীপমালার প্রধান দ্বীপ; অন্যদিকে রিচি'র দ্বীপটি ক্ষুদ্রতম দ্বীপপুঞ্জের আওতাধীন। ৫৭২টি দ্বীপের মধ্যে ৩৭টিতে অধিবাসী রয়েছে। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপেই বেশীরভাগ লোক বাস করে যা মোট জনগোষ্ঠীর ৬.৫%।[]

সমুদ্র সৈকতসমূহ

[সম্পাদনা]
দীঘা সমুদ্র সৈকতে সূর্যাস্ত।
কক্সবাজার, বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিস্তৃত সমুদ্র সৈকত।[১০]
সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ, বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ
সমুদ্র সৈকতঅবস্থান
কক্সবাজারবাংলাদেশ
কুয়াকাটাবাংলাদেশ
নিঝুম দ্বীপবাংলাদেশ
ইনানী সৈকতবাংলাদেশ
সোনাদিয়াবাংলাদেশ
সেন্ট মার্টিন্‌স দ্বীপবাংলাদেশ
বকখালিভারত
মন্দারমণিভারত
দীঘাভারত
চাঁদিপুরভারত
পুরীভারত
বিশাখাপত্তনমভারত
মেরিনা সৈকতভারত
গাপালিমিয়ানমার
অরুগ্রামশ্রীলঙ্কা

সমুদ্রবিজ্ঞান সম্পর্কীয়

[সম্পাদনা]

প্লেট টেকটোনিক্স

[সম্পাদনা]

ভারত মহাসাগরের অন্তর্গত বঙ্গোপসাগর একটি লবণাক্ত জলের সমুদ্র।পৃথিবীর লিথোস্ফিয়ারকে টেকটোনিক প্লেট বলা হয়। বঙ্গোপসাগরের নীচে, যা দুর্দান্ত ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেটের অংশ এবং আস্তে আস্তে উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই প্লেটটি সুন্দা ট্রেঞ্চে বার্মা মাইক্রোপ্লেটের সাথে দেখা করে। নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ বার্মা মাইক্রোপ্লেটের অংশ আর ইন্ডিয়া প্লেট সুন্দা ট্রেঞ্চ বা জাভা ট্রেঞ্চে বার্মা প্লেটের নিচে পরিচালনা করে। এখানে, একে অপরের উপর দুটি প্লেটের চাপ এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে যার ফলে মায়ানমারে আগ্নেয়গিরির মতো আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি হয় এবং সুন্দা আর্ক নামে একটি আগ্নেয়গিরির চাপ তৈরি হয়। সুমাত্রা-আন্দামান ভূমিকম্প এবং এশিয়ান সুনামি এই অঞ্চলে চাপের ফলে একটি সাবমেরিন ভূমিকম্পের ফলে ধ্বংসাত্মক সুনামির সৃষ্টি হয়েছিল।

সামুদ্রিক ভূতত্ত্ব

[সম্পাদনা]

সিলোন দ্বীপ এবং করোম্যান্ডেল উপকূল থেকে উপসাগরের মাথার দিকে প্রসারিত ৫০ মিটার জোন এবং দক্ষিণ দিকের দিকে আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপকে আলিঙ্গন করা একটি স্ট্রিপ দিয়ে সমুদ্রের নিচে ১০০ ফুট লাইন দ্বারা আবদ্ধ; প্রায় ৫০ মি। এর বাইরে ৫০০মি ব্যাপী সীমা রয়েছে। গঙ্গার মুখের বিপরীতে, যদিও এই গভীরতার মধ্যে অন্তরগুলি বদ্বীপ প্রভাব দ্বারা খুব বেশি প্রসারিত হয়।

সোয়াচ অফ ন গ্রাউন্ডটি বঙ্গোপসাগরের ১৪ কিলোমিটার প্রশস্ত গভীর সমুদ্রের উপত্যকা। এই উপত্যকার গভীরতম রেকর্ড করা অঞ্চলটি প্রায় ১৩৫০ মি। সাবমেরিন উপত্যকাটি বেঙ্গল ফ্যান বা বঙ্গ পাখার অংশ, বিশ্বের বৃহত্তম সাবমেরিন পাখা।

সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান, উদ্ভিদ এবং প্রাণীজন্তু

[সম্পাদনা]

বঙ্গোপসাগর জৈব বৈচিত্র্যে পূর্ণ, প্রবাল শৈবাল, মোহনা, মাছের জাল এবং নার্সারি অঞ্চল এবং ম্যানগ্রোভের মধ্যে বিভক্ত। বঙ্গোপসাগর বিশ্বের বৃহত্তম সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানগুলির মধ্যে একটি।

কেরিলিয়া জর্দোনি হ'ল বঙ্গোপসাগরের একটি সাগর সাপ। গ্লোরি অফ বেঙ্গল শঙ্কু Conus bengalensis এমন একটি সমুদ্র শৈল যা বঙ্গোপসাগরের সৈকত বরাবর ছবি তোলা যায় একটি বিপন্ন প্রজাতি, জলপাই রাইডলি সমুদ্র কচ্ছপ বাঁচতে পারে কারণ ভারতের ওড়িশার গহিরমাথা সমুদ্র সৈকত, গহিরমাথা সামুদ্রিক বন্যজীবন অভয়ারণ্য, বাসা বাঁধতে পারে মার্লিন, ব্যারাকুডা, স্কিপজ্যাক টুনা, (ক্যাটসুওয়োনাস পেলেমিস), ইয়েলোফিন টুনা, ইন্দো-প্যাসিফিক হ্যাম্পব্যাকড ডলফিন (সওসা চিনেসিস), এবং ব্রাইডের তিমি (বালেনোপেটেরা এডেনি) সামুদ্রিক প্রাণীগুলির মধ্যে কয়েকটি। বঙ্গোপসাগর হোগফিশ (বোডিয়ানাস নিলি) এক প্রকার র‌্যাবস যা টর্বিড লেগুন রিফ বা অগভীর উপকূলীয় শৈলীতে বাস করে। ডলফিনগুলির স্কুলগুলি দেখা যায়, সেগুলি বোতল নাক ডলফিন (টারসিওপস ট্রানক্যাটাস), প্যান্ট্রপিকাল স্পটেড ডলফিন (স্টেনেলা অ্যাটেনুয়াতা) বা স্পিনার ডলফিন (স্টেনেলা লংগেরোস্ট্রিস)। টুনা এবং ডলফিন সাধারণত একই পানিতে বাস করে। অগভীর ও উষ্ণতর উপকূলীয় জলে ইরাবাদি ডলফিনগুলি (অর্কেইলা ব্রিভিরোস্ট্রিস) পাওয়া যায় |

গ্রেট নিকোবর বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ অনেক প্রাণীকে অভয়ারণ্য সরবরাহ করে যার মধ্যে কয়েকটিতে লবণাক্ত জলের কুমির (ক্রোকোডিলাস প্যারোসাস), দৈত্য চামড়াযুক্ত সমুদ্রের কচ্ছপ (ডেরোমেলিস করিয়াসিয়া) এবং মালায়ান বাক্স টার্টল (কুওরা অ্যাম্বোইনেসিস কমারোমা) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

আরেকটি বিপন্ন প্রজাতির রাজকীয় বেঙ্গল টাইগার সুন্দরবন একটি বিশাল ইস্টুয়ারিন ডেল্টাকে সমর্থন করে যা গঙ্গা নদী ডেল্টায় একটি ম্যানগ্রোভ অঞ্চল ধারণ করে|

রাসায়নিক সমুদ্রবিদ্যা

[সম্পাদনা]

বঙ্গোপসাগরের সীমানা উপকূলীয় অঞ্চলগুলি খনিজ সমৃদ্ধ। শ্রীলঙ্কা, সেরেন্দিব বা রত্না - দ্বিপা যার অর্থ জেম দ্বীপ। অ্যামেথিস্ট, বেরিল, রুবি, নীলা, পোখরাজ এবং গারনেট হ'ল শ্রীলঙ্কার কিছু রত্ন। গারনেট এবং অন্যান্য মূল্যবান রত্নগুলি ওড়িশা এবং অন্ধ্র প্রদেশেও প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়|

কৌশলগত গুরুত্ব

[সম্পাদনা]

বঙ্গোপসাগর কেন্দ্রীয়ভাবে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত। এটি দুটি বিশাল অর্থনৈতিক ব্লক, সার্ক এবং আসিয়ান এর কেন্দ্রে অবস্থিত। এটি উত্তরের চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় অঞ্চল এবং ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরগুলিকে প্রভাবিত করে। চীন, ভারত, এবং বাংলাদেশ মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়ার সাথে সমুদ্র তীরে সন্ত্রাসবাদ রোধে সহযোগিতা বাড়াতে নৌ সহযোগিতা চুক্তি করেছে। এর অন্তর্নিহিত দ্বীপগুলি (আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ) এবং, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, বঙ্গোপসাগরের সাথে উপকূলের পাশাপাশি পারাদীপ কলকাতা, চেন্নাই, বিশাখাপত্তনম, টুটিকোরিন, চট্টগ্রাম এবং মংলা প্রভৃতি প্রধান বন্দরগুলি এর গুরুত্বকে যুক্ত করেছে।

চীন সম্প্রতি মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে এই অঞ্চলে প্রভাব ফেলতে চেষ্টা করেছে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং সম্প্রতি ভারতের সাথে বড় অনুশীলন করেছে | বঙ্গোপসাগরে সর্বকালের বৃহত্তম যুদ্ধ, যা মালবার২০০৭ নামে পরিচিত, ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড,সিঙ্গাপুর,জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে নৌযানগুলি অংশ নিয়েছিল। ভারত ছিল অংশগ্রহণকারী।

২০০৭ সালের মালাবারের নৌ মহড়ায় অংশ নেওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজের চিত্র। জাপান ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা এজিস ক্রুজার এবং বঙ্গোপসাগরে সিঙ্গাপুর ও ভারত থেকে লজিস্টিকাল সাপোর্ট জাহাজ অংশ নিয়েছিল।

বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চলের অঞ্চলে প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রচুর পরিমাণে জমা দেওয়া ভারত ও মায়ানমারকে একটি আঞ্চলিক বিবাদে গুরুতর জরুরি করে তুলেছিল। কিছু তেল ও গ্যাস ব্লকের অধিকার নিয়ে বিরোধের কারণে মিয়ানমার ও ভারতের মধ্যে বাংলাদেশের সাথে সংক্ষিপ্ত কূটনৈতিক বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বিতর্কিত সমুদ্রসীমা সীমানা ২০০৪ এবং ২০০৯ সালে সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল। সমুদ্র আইনে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বাংলাদেশ মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সীমানা বিবাদে একটি সমঝোতা চলছে।

নৌ ভূতত্ত্ব

[সম্পাদনা]

সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড হচ্ছে একটি ১৪ কিলোমিটার ব্যাপী বঙ্গোপসাগরের গভীর সমুদ্রের গভীর খাদ। গভীরতম এই উপত্যকা রেকর্ড আয়তন প্রায় ১৩৪০ মিটার।[১১] এখানকার ডুবো গিরিখাত বঙ্গ পাখার অংশ, যা বিশ্বের বৃহত্তম ডুবো গিরিখাত।[১২][১৩]

ঘূর্ণিঝড় ও ঘূর্ণিবাত্যা

[সম্পাদনা]

যখন বঙ্গোপসাগরে উৎপত্তি হয়ে ৭৪ মাইল (১১৯ কিলোমিটার) গতিবেগে বাতাস ঘূর্ণায়মান অবস্থায় মৌসুমী ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয় তখন তা সাইক্লোন বা ঘূর্ণিবাত্যা নামে আখ্যায়িত হয়। এ সাইক্লোন বা ঘূর্ণিবাত্যাই আটলান্টিক মহাসাগরে হারিকেন নামে পরিচিত।[১৪] ১৯৭০ সালে এরকমই এক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ভোলায় ১ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ অধিবাসী প্রাণ হারান যা স্মরণ করে আজো অনেক লোক শিউরে উঠেন। নিচে প্রাকৃতিক দূর্যোগের দেশ হিসেবে চিহ্নিত বাংলাদেশে বয়ে যাওয়া সাইক্লোনের তালিকা দেয়া হলোঃ-

ঘূর্ণিঝড়ের নাম
ক্রমিক নংসালবিবরণকোড নাম
২০০৯ প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় আইলা
২০০৮ অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড় নার্গিস
২০০৭ অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড় সিডর
২০০৬ অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড় মালা
২০০৬, সেপ্টেম্বর টাইফুন জ্যাংসেন
২০০৪, নভেম্বর টাইফুন মুইফা
২০০২, মে উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড় ২বি
১৯৯১, এপ্রিল বাংলাদেশ সাইক্লোন
১৯৮৯, নভেম্বর টাইফুন গে
১০ ১৯৮৫, মে উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড় ওয়ান ১বি
১১ ১৯৮২, এপ্রিল সাইক্লোন ওয়ান ১বি
১২ ১৯৮২, মে উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড় টু ২বি
১৩ ১৯৮২, অক্টোবর উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড় থ্রী ৩বি
১৪ ১৯৮১, ডিসেম্বর সাইক্লোন থ্রী ৩বি
১৫ ১৯৮০, অক্টোবর উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড় ওয়ান ১বি
১৬ ১৯৮০, ডিসেম্বর অজানা ঘূর্ণিঝড় ফোর ৪বি
১৭ ১৯৮০, ডিসেম্বর উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড় ফাইভ ৫বি
১৮ ১৯৭১ সাইক্লোন ওড়িষ্যা
১৯ ১৯৭০, নভেম্বর ভোলা সাইক্লোন

ঐতিহাসিক স্থান

[সম্পাদনা]
বিবেকানন্দের ইলম
  • বঙ্গোপসাগরের নিচে শ্রী বৈশাখেসয়ারা স্বাম্পী (Vaisakheswara Swampy) মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ আছে।[১৫]
  • মহাবলিপুরাম নামক সাতটি বৌদ্ধ ধর্ম মন্দির এখানে আছে। মহাবলিপুরামের তীরবর্তী মন্দিরটি অষ্টম শতাব্দীতে নির্মাণ করা হয়।
  • বিবেকানন্দর ইল্লম, আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা যা এখানে সংরক্ষিত হয়েছে। ফ্রেডরিক টিউডর নামক রাজা কর্তৃক ১৮৪২ সালে বরফ সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরনের উদ্দেশ্যে এটি নির্মাণ করা হয়। স্বামী বিবেকানন্দের বিখ্যাত ভাষন এখানে কার্নান প্রাসাদের ধারণ করা আছে।
  • কনার্ক, সূর্য মন্দির বা কৃষ্ণ বৌদ্ধ মন্দিরের স্থান। ১২০০ সালের দিকে এই পবিত্র স্থানটি নির্মাণ করা হয়েছিল এবং তা বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।
  • ধানিসখাদিতে অবস্থিত রামানাথ মন্দির, যেখানে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর মিলিত হয়েছে।[১৬]

কৌশলগত উপযোগিতা

[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের জন্য

[সম্পাদনা]
বঙ্গোপসাগরে নৌবাহিনীর যৌথ মহড়া: ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসিঙ্গাপুর

বাংলাদেশের একমাত্র সমুদ্রসীমা হবার কারণে দেশের উন্নয়নে বঙ্গোপসাগরের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী তাদের বাৎসরিক মহড়া এই সাগরেই করে থাকে[১৭] এবং আন্তর্জাতিক মহড়াও এখানেই হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী নিয়ে গঠিত শেষ যৌথ মহড়াটি হয় ২০০৯ সালের শুরুর দিকে।[১৮]

চীনের জন্য

[সম্পাদনা]

গুজব আছে যে বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমারের কোকো দ্বীপে চীনের একটি সামুদ্রিক ঘাঁটি আছে।[১৯]

ভারতের জন্য

[সম্পাদনা]

কৌশলগত দিক দিয়ে বঙ্গোপসারগর ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ বঙ্গোপসারগরের উপকূল দিয়ে তাদের কিছু দুরবর্তী দ্বীপ আছে (আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ, নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ) এবং কলকাতা, চেন্নাই, ভিজাগ ও তুতিকরিন (Tuticorin) এর মত সমুদ্র বন্দর আছে। ১৯৭১ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে নৌবাহিনীর বেশির ভাগ আক্রমনই হয়েছিল বঙ্গোপসারগরে।[২০]

পরিবেশগত ক্ষতি

[সম্পাদনা]

প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ বা তার কাছাকাছি মাসগুলোতে দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মহাসাগর থেকে আসা বায়ু দূষণ মেঘ বঙ্গোপসাগরের উপর জমা হয়। যার মধ্যে যানবাহনের ধোঁয়া, রান্নাবান্নায় নির্গত ধোঁয়া এবং শিল্প-কারখানার বর্জ্য অন্যতম।[২১]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

ব্রিটিশ পেনাল কলোনী

[সম্পাদনা]
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের রোস দ্বীপ (Ross Island)।

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের একটি অংশ রোস দ্বীপে (Ross Island) ১৮৯৬ সালে কালো পানি অথবা ক্ষুদ্রাতির কারাগার তৈরি হয়। যা ব্রিটিশ পেনাল কলোনী হিসেবে ব্যবহৃত হতো এবং সেখানে রাজনৈতিক বন্দীদের আজীবন কারাবাস দেয়া হতো।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Map of Bay of Benglal- World Seas, Bay of Bengal Map Location – World Atlas"
  2. সিফাতুল কাদের চৌধুরী (২০১২)। "বঙ্গোপসাগর"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর (সম্পাদকগণ)। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন ৯৮৪৩২০৫৯০১ওসিএলসি 883871743ওএল 30677644M
  3. "Bay of Bengal" (ইংরেজি ভাষায়)। Wildlife Conservation Society। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০১২
  4. "Limits of Oceans and Seas, 3rd edition" (পিডিএফ)। International Hydrographic Organization। ১৯৫৩। ৮ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল থেকে (পিডিএফ) আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০
  5. Kuttan (২০০৯)। The Great Philosophers of India। AuthorHouse। আইএসবিএন ৯৭৮-১৪৩৪৩৭৭৮০৭
  6. "Dhanushkodi"। indiatourism4u.in। ৮ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২১ আগস্ট ২০১৩
  7. 1794, Orbis Veteribus Notus by Jean Baptiste Bourguignon d'Anville
  8. Chhabra, B.ch. (১৯৪৯)। "Epigraphia Indica"। পৃ. ৫৭। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০২৫
  9. "পোর্ট ব্লেয়ার"। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১১
  10. "বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিস্তৃত সমুদ্র সৈকত"The Sydney Morning Herald। ৩১ জানুয়ারি ২০০৭।
  11. Morphological features in the Bay of Bengal ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ জুন ২০০৭ তারিখে URL accessed 21 January 2007
  12. Curray, Joseph R.; Frans J. Emmel; David G. Moore (ডিসেম্বর ২০০২)। "The Bengal Fan: morphology, geometry, stratigraphy, history and processes"। Marine and Petroleum Geology১৯ (10)। Elsevier Science Ltd: ১১৯১–১২২৩। ডিওআই:10.1016/S0264-8172(03)00035-7
  13. France-Lanord, Christian; Volkhard Spiess; Peter Molnar; Joseph R. Curray (মার্চ ২০০০)। "Summary on the Bengal Fan: An introduction to a drilling proposal" (পিডিএফ)। Woods Hole Oceanographic Institution। ৫ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল থেকে (পিডিএফ) আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
  14. "জাতীয় দূর্যোগে করণীয়"। ১২ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১১
  15. "Sri Vaisakheswara still lies underwater" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ এপ্রিল ২০০৬ তারিখে URL accessed January 22, 2007
  16. রামায়ণ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখে URL accessed January 21, 2007
  17. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১১
  18. http://www.thefinancialexpress-bd.com/2009/05/27/67818.html
  19. "1971 War: How the US tried to corner India"www.rediff.com
  20. "প্রাকৃতিক দুর্যোগ: বঙ্গোপসাগরের উপর ধোঁয়ার স্তর"। ২৬ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১১

আরো পড়ুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]
  1. ৪৯৭ ভি সুরিয়া নারায়ণ: বঙ্গোপসাগরের সম্প্রদায়ের প্রত্যাশা
  2. বঙ্গোপসাগর:HighBeam Encyclopedia
  3. সংক্ষিপ্ত ব্রিটানিকা