বিষয়বস্তুতে চলুন

জগজিত সিং অরোরা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(জগজিৎ সিং অরোরা থেকে পুনর্নির্দেশিত)

জগজিৎ সিংহ অরোড়া

আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর গ্রহণকালে অরোড়া, ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১
স্থানীয় নাম
ਜਗਜੀਤ ਸਿੰਘ ਅਰੋੜਾ
جگجیت سنگھ اروڑا
জন্ম(১৯১৬-০২-১৩)১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯১৬
কালা গুজরাঁ, ঝেলম, পাঞ্জাব, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা পাঞ্জাব, পাকিস্তান)
মৃত্যু৩ মে ২০০৫(2005-05-03) (বয়স ৮৯)
নয়াদিল্লি, ভারত
আনুগত্য ব্রিটিশ ভারত
(১৯৩৯–১৯৪৭)
 ভারত
(১৯৪৭–১৯৭৩)
সেবা/শাখা ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী
 ভারতীয় সেনাবাহিনী
কার্যকাল১৯৩৯–১৯৭৩
পদমর্যাদা লেফটেন্যান্ট জেনারেল
সার্ভিস নম্বরআইসি-২১৪[]
ইউনিট২য় পাঞ্জাব রেজিমেন্ট (১৯৪৭ অবধি)
পাঞ্জাব রেজিমেন্ট (১৯৪৭ পরবর্তী)
নেতৃত্বসমূহ পূর্ব কমান্ড
যুদ্ধ/সংগ্রাম
পুরস্কার পরম বিশিষ্ট সেবা পদক
বীর প্রতীক
পদ্মভূষণ
স্বাক্ষর

লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিংহ অরোড়া পিভিএসএম[][][][note ১][] (গুরুমুখী: ਜਗਜੀਤ ਸਿੰਘ ਅਰੋੜਾ, শাহমুখী: جگجیت سنگھ اروڑا; ১৩ই ফেব্রুয়ারি ১৯১৬[note ২] – ৩রা মে ২০০৫) ছিলেন একজন ভারতীয় জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা, যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং ১৯৭১ সালের ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধকালে পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং-ইন-চিফ (জিওসি-ইন-সি) পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি যুদ্ধের পূর্ব ফ্রন্টে স্থলবাহিনীর অভিযান সংগঠন ও পরিচালনা করেছিলেন, যা পূর্ব পাকিস্তানে সম্মিলিত পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে এবং এর ফলে বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়।[]

ভারতীয় ও বাংলাদেশি মিত্রবাহিনীর কমান্ডার হিসেবে পূর্বাঞ্চলীয় মঞ্চে জেনারেল অরোড়া পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ. এ. কে. নিয়াজীর কাছ থেকে আত্মসমর্পণ গ্রহণ করেছিলেন।

ভারতীয় স্থলবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি শিরোমণি অকালী দলে যোগ দেন এবং রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পারিবারিক জীবন

[সম্পাদনা]

জগজিত সিং অরোরা ১৯১৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পাকিস্তানে ঝিলামে সম্ভ্রান্ত শিখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[] তার বাবা পেশায় ছিলেন একজন ইঞ্জিনিয়ার। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং এক ছেলে ও কন্যা সন্তানের জনক।

কর্মজীবন

[সম্পাদনা]

জগজিত সিং অরোরা ১৯৩৯ সালে ইন্ডিয়ান মিলিটারী একাডেমী থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন এবং ২য় পাঞ্জাব রেজিমেন্টে কমিশনড্‌ পদ পান। ১৯৬১ সালে চীনা সামরিক বাহিনীকে মোকাবেলা করতে সীমান্ত এলাকায় সফলতার সাথে নেতৃত্ব দেন এবং ঐ সময়েই তিনি ব্রিগেডিয়ার হিসেবে পদোন্নতি পান।[]

পূর্ব-পাকিস্তান পর্ব

[সম্পাদনা]

২১শে নভেম্বর, ১৯৭১ সালে লেঃ জেনারেল অরোরা ভারতীয় পূর্বাঞ্চলীয় কমাণ্ডের প্রধান হিসেবে বাংলাদেশ-ভারতের মিত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবেও মনোনীত হন। ভারত-বাংলাদেশের সরকার প্রধানদের রাজনৈতিক-সামরিক সহযোগীতা চুক্তির আওতায় তিনি প্রধান হন। বাংলাদেশ পক্ষীয় দলের প্রধান ছিলেন জেনারেল এম. এ. জি ওসমানী[] তিনি পূর্ব-পাকিস্তানে যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে যাবতীয় আলাপ-আলোচনায় দায়বদ্ধ ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার দু'সপ্তাহ পূর্বে ভারতীয় সামরিক বাহিনী মুক্তিবাহিনীর সহায়তায় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে পাশ কাটিয়ে অগ্রসর হয় ও ঢাকা করায়ত্ত করেন। এর ফলে তিনি পূর্ব-পাকিস্তানে নিয়োজিত পাকবাহিনীর প্রধান লেঃ জেঃ এ. এ. কে. নিয়াজী ও তার সৈন্যবাহিনীকে আত্মসমর্পণের জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। পাকিস্তানি সৈন্যদের অবস্থান ও আক্রমণ থাকা সত্ত্বেও অরোরা তার বাহিনীকে পাশ কাটিয়ে যেতে নির্দেশ দেন এবং যথাসম্ভব ও দ্রুততার সাথে ঢাকাগামী হবার আদেশ দেন। ফলে, এক পর্যায়ে নিয়াজী ও তার দলবল আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এতে নিয়াজী'র কোন শর্ত ছিল না এবং ঢাকা দখল হয়ে যাওয়ায় রসদভাণ্ডারও করায়ত্ত্ব করতে পারেননি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের ঘটনা পরম্পরায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও জড়িয়ে পড়ার ফলে পাকিস্তান সামরিক জান্তা তার পূর্ব-পাকিস্তান অংশের নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পাশাপাশি সামরিক আক্রমণে ভারতের মাসব্যাপী রণ পরিকল্পনা সফল হয়। অরোরা তার নৈতিক সহায়তা দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করে যুদ্ধ জয় করেন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়ন ঘটান।

পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ অধ্যায়

[সম্পাদনা]
লেঃ জেনারেল অ্যারোর উপস্থিতিতে পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাহিনীর কমান্ডিং অফিসার লেঃ জেনারেল এ কে নিয়াজী ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন

১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ইতিহাস তথা বাংলাদেশীদের জন্য একটি চিরস্মরণীয় দিন। জেঃ অরোরা ভারত-বাংলাদেশের সমন্বয়ে গড়া মিত্রবাহিনীর প্রধান হিসেবে লেঃ জেঃ নিয়াজী'র আত্মসমর্পণ দলিল গ্রহণ করেন। দলিলে স্বাক্ষরের মাধ্যমে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষ হয় এবং বাংলাদেশ নামক একটি নতুন দেশের অভ্যুদয় ঘটে।

আত্মসমর্পণের দলিলে উল্লেখ ছিল: "পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় কমাণ্ড বাংলাদেশে অবস্থানরত সকল সৈন্য মিত্রবাহিনীর প্রধান লেঃ জেঃ জগজিত সিং অরোরা'র কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে রাজী হয়েছেন।"

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে লেঃ জেঃ অরোরা'র কৃতিত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ ও বীরত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরপ্রতীক পদকে ভূষিত করে সম্মানিত করেন।

যুদ্ধের ফলাফল হিসেবে নব্বই হাজারেরও বেশি পাকিস্তানিকে বন্দী করে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। তন্মধ্যে প্রায় ৪৬,৮০০ জন (সেনা - ৩৫হাজার, প্যারামিলিটারী- ৫হাজার, পুলিশ-৫হাজার, বিমানবাহিনী-৮শত এবং নৌবাহিনী-১হাজার) ছিলেন সামরিক পোষাকধারী।[]

রাজনৈতিক জীবন

[সম্পাদনা]

সামরিক জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করে জগজিত সিং অরোরা বেশ কয়েক বছর ভারতীয় সংসদের রাজ্যসভায় সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। শিখ জনগোষ্ঠীর আকালী দলের একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন তিনি।

১৯৮৪ সালে অমৃতসরে শিখদের প্রধান তীর্থক্ষেত্র স্বর্ণমন্দিরে সেনাবাহিনী আক্রমণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান তিনি। স্বর্ণমন্দির আক্রমণের অব্যবহিত পরই শিখ দেহরক্ষীর হাতে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী নিহত হন ও পরবর্তীকালে শিখবিরোধী দাঙ্গার সূচনা ঘটে।

মহাপ্রয়াণ

[সম্পাদনা]

৩ মে, ২০০৫ সালে ৮৯ বছর বয়সে ভারতের দিল্লীতে অরোরা'র মহাপ্রয়াণ ঘটে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে জড়িয়ে পড়া চীরস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে। তার মৃত্যু পরবর্তীকালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খান গভীর শোক প্রকাশ ও বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। শোকবার্তায় তিনি বলেন যে, "অরোরা বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ১৯৭১ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের স্বাধীনতায় অংশগ্রহণ ও মুক্তিযুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকায় তার নেতৃত্ব ছিল অবিস্মরণীয় ও অসাধারণ।"

আরো দেখুন

[সম্পাদনা]

পাদটীকা

[সম্পাদনা]
  1. এই পাঞ্জাবি ব্যক্তিনামটির বাংলা প্রতিবর্ণীকরণে উইকিপিডিয়া:বাংলা ভাষায় পাঞ্জাবি শব্দের প্রতিবর্ণীকরণে ব্যাখ্যাকৃত নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. 1 2 উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Gazette_India নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  2. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; DCOAS নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  3. Indian Army List (Special Edition) 1947। Government of India Press। ১৯৪৭। পৃ. ২৪৫–২৪৬।
  4. "Homage to a Hero: Lt Gen J. S. Arora"Frontline। ১৭ জুন ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১১ bharat-rakshak.com এর মাধ্যমে।
  5. "The Tribune, Chandigarh, India - Opinions"দ্য ট্রিবিউন, চন্ডিগড়, ভারত (English ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭{{ওয়েব উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: অচেনা ভাষা (লিঙ্ক)
  6. France-Presse, Agence (৬ মে ২০০৫)। "Jagjit Singh Aurora, 89, Indian War Hero"The New York Times (মার্কিন ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭
  7. Raja, Dewan Mohammad Tasawwar, O GENERAL MY GENERAL (Life and Works of General M A G Osmany), p35-109, আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৮৮৬৬-১৮-৪
  8. ১৯৭১ সালের বীরসেনানী লেঃ জেঃ অরোরা'র মহাপ্রয়াণ : টাইমস্‌ অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]
  1. Aurora ও Arora উভয় বানানই দাপ্তরিক নথিতে ব্যবহৃত হয়েছে; তবে “Aurora” বানানটি প্রাধান্য পেয়েছে ভারতের স্বাধীনতা-পূর্ব ভারতীয় সেনা তালিকা এবং ভারতের রাজপত্রে
  2. স্বাধীনতা-পূর্ব ভারতীয় সেনাতালিকা মোতাবেক।
উদ্ধৃতি ত্রুটি: "note" নামক গ্রুপের জন্য <ref> ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="note"/> ট্যাগ পাওয়া যায়নি