বাংলাদেশে নির্বাচন
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে নির্বাচনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন, গণভোট, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, জেলা পরিষদ নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন।


পটভূমি
[সম্পাদনা]১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর আওয়ামিলীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, কিন্তু পাকিস্তান সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হবার মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। স্বাধীনতার পর ১৯৭০ সালের পাকিস্তান সাধারণ জাতীয় নির্বাচন ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীদের নিয়ে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গণপরিষদ গঠন করা হয়। জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত ৪৬৯-এর (জাতীয় পরিষদে ১৬৯ জন আর প্রাদেশিক পরিষদে ৩০০ জন) মধ্যে ৪০৩ জন সদস্য নিয়ে গণপরিষদ গঠিত হয় এবং ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তীকালে এই সংবিধানের অধীনেই বাংলাদেশের সকল জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং হচ্ছে।
বাংলাদেশের সরকার হলো এককেন্দ্রিক সরকার ব্যবস্থা ভিত্তিক, যেখানে শাসনব্যবস্থায় সরকারের সব ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকে এবং কেন্দ্র থেকে দেশের শাসন পরিচালিত হয়।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন
[সম্পাদনা]জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে
[সম্পাদনা]- ১৯৭৮ সালের বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন — ভোটার উপস্থিতি: 54.3%, জিয়াউর রহমান 76.6% ভোটে নির্বাচিত।
- ১৯৮১ সালের বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন — ভোটার উপস্থিতি: 54.3%, আব্দুস সাত্তার 65.5% ভোটে নির্বাচিত।
- ১৯৮৬ সালের বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন — ভোটার উপস্থিতি: 54.9%, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ 84.1% ভোটে নির্বাচিত।
পরোক্ষ নির্বাচন (সংসদ বা নির্বাচনী কলেজের মাধ্যমে)
[সম্পাদনা]- ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন — নির্বাচিত: মোহাম্মদ মুহম্মদুল্লাহ
পদ্ধতি: সংসদের মাধ্যমে নির্বাচিত হন।
- ১৯৯১ সালের বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন — নির্বাচিত: আব্দুর রহমান বিশ্বাস (বিএনপি)
পদ্ধতি: সরাসরি ভোটপদ্ধতি বাদ দিয়ে সংসদীয় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক প্রধান হয়ে যান।
- ১৯৯৬ সালের বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন — নির্বাচিত: শাহাবুদ্দীন আহমদ (আওয়ামী লীগ প্রার্থী, কিন্তু সর্বদলীয়ভাবে সমর্থিত)
- ২০০১ সালের বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন — নির্বাচিত: এ. কিউ. এম. বদরুদ্দোজা চৌধুরী (বিএনপি)
- ২০০২ সালের বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন — নির্বাচিত: ইয়াজউদ্দিন আহমদ (বিএনপি সমর্থিত)
- ২০০৯ সালের বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন — নির্বাচিত: জিল্লুর রহমান (আওয়ামী লীগ)
- ২০১৩ সালের বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন — নির্বাচিত: আব্দুল হামিদ (আওয়ামী লীগ)
- ২০১৮ সালের বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন — নির্বাচিত: আব্দুল হামিদ (দ্বিতীয়বার, সর্বসম্মতভাবে)
- ২০২৩ সালের বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন — নির্বাচিত: মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন (আওয়ামী লীগ সমর্থিত, একক প্রার্থী)
জাতীয় সংসদ নির্বাচন
[সম্পাদনা]- ১৯৭৩ সালের বাংলাদেশ সাধারণ নির্বাচন — ভোটার উপস্থিতি: 54.9%, আওয়ামী লীগ 73.2% ভোট পেয়ে বিজয়ী।
- ১৯৭৯ সালের বাংলাদেশ সাধারণ নির্বাচন — ভোটার উপস্থিতি: 51.3%, বিএনপি 41.2% ভোট পেয়ে বিজয়ী।
- ১৯৮৬ সালের বাংলাদেশ সাধারণ নির্বাচন — ভোটার উপস্থিতি: 61.1%, জাতীয় পার্টি 42.3% ভোট পেয়ে বিজয়ী।
- ১৯৮৮ সালের বাংলাদেশ সাধারণ নির্বাচন — ভোটার উপস্থিতি: 52.5%, জাতীয় পার্টি 68.4% ভোট পেয়ে বিজয়ী।
- ১৯৯১ সালের বাংলাদেশ সাধারণ নির্বাচন — ভোটার উপস্থিতি: 55.5%, বিএনপি 30.8% ভোট পেয়ে বিজয়ী।
- ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সাধারণ নির্বাচন — ভোটার উপস্থিতি: 21.0%, বিএনপি (বিরোধী দল বর্জন)।
- ১৯৯৬ সালের জুন বাংলাদেশ সাধারণ নির্বাচন — ভোটার উপস্থিতি: 75.0%, আওয়ামী লীগ 37.44% ভোট পেয়ে বিজয়ী।
- ২০০১ সালের বাংলাদেশ সাধারণ নির্বাচন — ভোটার উপস্থিতি: 75.6%, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট 46% ভোটে বিজয়ী।
- ২০০৮ সালের বাংলাদেশ সাধারণ নির্বাচন — ভোটার উপস্থিতি: 87.1%, আওয়ামী লীগ 48.04% ভোট পেয়ে বিজয়ী।
- ২০১৪ সালের বাংলাদেশ সাধারণ নির্বাচন — ভোটার উপস্থিতি: 40.0%, আওয়ামী লীগ বিজয়ী (বিরোধী দল বর্জন)।
- ২০১৮ সালের বাংলাদেশ সাধারণ নির্বাচন — ভোটার উপস্থিতি: 80.2%, আওয়ামী লীগ বিজয়ী।
- ২০২৪ সালের বাংলাদেশ সাধারণ নির্বাচন — ভোটার উপস্থিতি: প্রায় 41%, আওয়ামী লীগ বিজয়ী।
- ২০২৬ সালের বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন — অনুষ্ঠিতব্য
গণভোট
[সম্পাদনা]- ১৯৭৭ সালের বাংলাদেশ গণভোট — ভোটার উপস্থিতি: 88.1% (সরকারি হিসাব), 98.9% পক্ষে ভোট।
- ১৯৮৫ সালের বাংলাদেশ গণভোট — ভোটার উপস্থিতি: 72.2%, 94.5% পক্ষে ভোট।
- ১৯৯১ সালের বাংলাদেশ সাংবিধানিক গণভোট — ভোটার উপস্থিতি: প্রায় 35%, 84% সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার পক্ষে।
- ২০২৬ সালের বাংলাদেশ সাংবিধানিক গণভোট - অনুষ্ঠিতব্য
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন
[সম্পাদনা]বাংলাদেশে এ পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন মোট ৬ বার অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। এরপর ১৯৯৯, ২০০২, ২০০৭, ২০১২,২০১৫ এবং সবশেষ ২০২০ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা পরিষদ নির্বাচন
[সম্পাদনা]বাংলাদেশে প্রথম জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালে, এরপর সর্বশেষ ২০২২ সালে। জেলা পরিষদ নির্বাচন জনগণের সরাসরি ভোটে নয় বরং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা পরোক্ষভাবে নির্বাচন হয়।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন
[সম্পাদনা]বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট ৬টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৮৫ সালে প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৯০, ২০০৯, ২০১৪, ২০১৯ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।[১][২]
পৌরসভা নির্বাচন
[সম্পাদনা]২০১১ সালের পৌরসভা নির্বাচন জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০১৫ সালের পৌরসভা নির্বাচন ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০২১ সালের পৌরসভা নির্বাচন জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০২৪ সালের পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে কিছু তথ্য পাওয়া যায়।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন
[সম্পাদনা]বাংলাদেশে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালে। এরপর ১৯৭৭, ১৯৮৩, ১৯৮৮, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০৩, ২০১১, ২০১৬ এবং সর্বশেষ ২০২১ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।[৩]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Bangladesh Election Commission"। www.ecs.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫।
- ↑ প্রতিনিধি, বিশেষ (৭ মে ২০২৪)। "এক নজরে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: প্রথম ধাপ"। এক নজরে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: প্রথম ধাপ। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫।
- ↑ "১১ এপ্রিল ইউপি নির্বাচন শুরু"। The Daily Ittefaq। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫।