বিষয়বস্তুতে চলুন

বগুড়া

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বগুড়া
মহানগর
বগুড়া বাংলাদেশ-এ অবস্থিত
বগুড়া
বগুড়া
স্থানাঙ্ক: ২৪°৫০′৫৩″ উত্তর ৮৯°২২′২৩″ পূর্ব / ২৪.৮৪৮০৯০° উত্তর ৮৯.৩৭২৯৬৭° পূর্ব / 24.848090; 89.372967
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগরাজশাহী
জেলাবগুড়া
পৌরসভা১৮৭৬
সিটি কর্পোরেশন২০২৫
সরকার
  ধরনমেয়র-কাউন্সিলর
  শাসকবগুড়া সিটি কর্পোরেশন
আয়তন
  পৌর এলাকা৬৯.৫৬ বর্গকিমি (২৬.৮৬ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০২২)
  পৌর এলাকা৪,৮৫,৯৪৪
  পৌর এলাকার জনঘনত্ব৭,০০০/বর্গকিমি (১৮,০০০/বর্গমাইল)

বগুড়া বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের একটি মহানগর। বগুড়া নগরের কেন্দ্র থেকে ১১ কি.মি. উত্তরে মহাস্থানগড় অবস্থিত, যা একসময় প্রাচীন বাংলার রাজধানী ছিল এবং সেসময় পুণ্ড্রনগর নামে পরিচিত ছিল। ভৌগোলিক অবস্থান ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের কারণে বগুড়াকে উত্তরবঙ্গের রাজধানী বলা হয়। এছাড়া ঐতিহাসিকভাবে বগুড়া উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বলেও খ্যাত।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

ইতিহাস থেকে জানা যায় বাংলার প্রাচীনতম একটি নগরী বগুড়া। মৌর্যযুগে এটি পুণ্ড্রবর্ধন নামে পরিচিত ছিল। বগুড়ার প্রাচীন নাম পৌণ্ড্রবর্ধন ও এটি বরেন্দ্রভূমি বলে খ্যাত অঞ্চলের অংশবিশেষ। আজকের রাজশাহীও এই অঞ্চলভুক্ত ছিল। অঞ্চলটি ৯ থেকে ১২ শতক সেন রাজাদের দ্বারা শাসিত হয়। পরে ১৩শ শতকের শুরুতে তা মুসলিম শাসকদের অধীনে আসে। ১৩শ শতকের শুরুতে এই এলাকা মুসলিম শাসকদের হাতে যায়। তারপরও সেন বংশের নৃপতিরা সামন্তপ্রধান হিসাবে প্রায় ১০০ বছর শাসনকার্য চালায়। এরপর অচ্যুত সেনের আচরণে রাগান্বিত হয়ে গৌড়ের বাহাদুর শাহ (?-১৫৩৭) সেনদের বিতাড়িত করেন।[] ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বগুড়া ৭ নং বিডিএফ সেক্টরের অধীনে ছিল।

ভৌগোলিক অবস্থান

[সম্পাদনা]

বগুড়া শহর বগুড়া জেলার মধ্যভাগে প্রবাহিত করতোয়া নদীর কোল ঘেঁষে অবস্থিত। করতোয়া নদী উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে বগুড়াকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। বগুড়ার উত্তরে গাইবান্ধা জেলাজয়পুরহাট জেলা পশ্চিমে নওগাঁ জেলা, দক্ষিনে সিরাজগঞ্জ জেলা এবং পুর্বে যমুনা নদী এবং জামালপুর জেলার অবস্থান।

জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার সাথে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার স্থল ও জল পথে সংযোগ রয়েছে।

বগুড়া জেলার একদম মাঝখানে দিয়ে এন-৫ জাতীয় মহাসড়ক চলে গিয়েছে, যেটি এশিয়ান হাইওয়ে এর অংশ।

যোগাযোগ ব্যবস্থা

[সম্পাদনা]

বগুড়াকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বলা হয়। মূলত ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের বেশির ভাগ জেলায় যেতে বগুড়াকে অতিক্রম করতে হয় বলেই এরকম বলা হয়ে থাকে। বগুড়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত মানের। ট্রেন এবং বাস উভয় ব্যবস্থায় ঢাকা থেকে আসা যায়। জেলায় মোট রাস্তার পরিমাণ ৬,০৪১ কিলোমিটার। এর মধ্যে পাকা রাস্তা রয়েছে ২,৩১০ কিলোমিটার এবং কাঁচা রাস্তা রয়েছে ৩,৭৩১ কিলোমিটার। এছাড়াও জেলার উপর দিয়ে ৯০ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক বগুড়ার একেবারে মধ্যভাগ দিয়ে শেরপুর, শাহজাহানপুর, বগুড়া সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলা দিয়ে চলে গেছে। ভারী এবং দূর পাল্লার যানবাহন চলাচলের জন্য মূল সড়কের পাশাপাশি রয়েছে প্রশস্ত দুটি বাইপাস সড়ক। প্রথমটি ১ম বাইপাস নামে পরিচিত শহরের পশ্চিম দিকে মাটিডালি থেকে শুরু হয়ে বারপুর, চারমাথা, তিনমাথা রেলগেট, ফুলতলা হয়ে বনানীতে গিয়ে শেষ হয়েছে। দ্বিতীয়টি ২য় বাইপাস নামে পরিচিত যা ২০০০ সালের পরবর্তীকালে নির্মিত হয়। দ্বিতীয় বাইপাসটি মাটিডালি থেকে শুরু হয়ে শহরের পূর্ব পাশদিয়ে জয়বাংলা বাজার, সাবগ্রাম হয়ে বনানীতে গিয়ে মুল সড়কের সাথে মিলিত হয়েছে। এছাড়া নাটোর, পাবনা, রাজশাহী সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলা গুলোর সাথে যোগাযোগের জন্য একটি আলাদা মহাসড়ক রয়েছে যা নন্দীগ্রাম উপজেলার মধ্যদিয়ে নাটোরের সাথে সংযুক্ত। নওগাঁ জেলার সাথে যোগাযোগের জন্য চারমাথা থেকে আরেকটি সংযোগ সড়ক কাহালু, দুপচাঁচিয়া, সান্তাহারের মধ্য দিয়ে নওগাঁয় গিয়ে শেষ হয়েছে। এছাড়া বগুড়া জয়পুরহাট জেলাকে সংযুক্ত করার জন্য রয়েছে মোকামতলা হতে আলাদা সড়ক ব্যবস্থা।

বগুড়া শহরের একেবারে ভিতর দিয়ে চলে গেছে সান্তাহার - লালমনিরহাট মিটারগেজ রেলপথ, এই রেলপথে রয়েছে শহরের একমাত্র স্টেশন বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন

বগুড়ার একমাত্র বিমানবন্দরটি বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া নামক স্থানে অবস্থিত। তবে বিমান বন্দরটি বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হয়।

অর্থনীতি

[সম্পাদনা]

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বগুড়া শহরের অবকাঠামোগত প্রচুর উন্নতি সাধিত হয়েছে। নতুন শহর পরিকল্পনার মাধ্যমে রাস্তাগুলো পুননির্মাণ এবং দু লেনে উন্নীতকরণ করা হয়েছে। এখানকার মাটি বেশ উর্বর এবং এখানে প্রচুর শস্যের উৎপাদন হয়। বিগত কয়েক বছরে বগুড়ায় লাল মরিচের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যা কিনা ১০০ কোটি টাকার ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। ব্যবসা- বাণিজ্যের উন্নতির সাথে সাথে এখানকার ব্যাংকিং ব্যাবস্থাপনাতেও এসেছে নতুন মাত্রা; সরকারি বেসরকারি প্রায় সব ব্যাংকের একটি করে শাখা রয়েছে এখানে। ২৪ ঘণ্টাই শহরের যে কোনো প্রান্তে এটিএম বুথ খোলা পাওয়া যায়। ২০০৮ সালে ফ্রান্সের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ড্যানোন গ্রুপ গ্রামীণ গ্রুপের সাথে যৌথভাবে শক্তিদই তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।

দর্শনীয় স্থান

[সম্পাদনা]

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

[সম্পাদনা]

একাধিক মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় প্রশংসনীয় ফলাফলের কারণে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বগুড়া একটি উজ্জ্বল নাম। বগুড়ায় বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজ চলমান। এছাড়াও বগুড়ার বিভিন্ন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দেশের একাধিক শীর্ষ স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের মাধ্যমে নিজেদের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে।

বগুড়া জেলার উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো:

জলবায়ু

[সম্পাদনা]
বগুড়া-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
মাস জানু ফেব্রু মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টে অক্টো নভে ডিসে বছর
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) ২৫.০
(৭৭.০)
২৮.০
(৮২.৪)
৩২.৬
(৯০.৭)
৩৫.১
(৯৫.২)
৩৩.৫
(৯২.৩)
৩২.২
(৯০.০)
৩১.৪
(৮৮.৫)
৩১.৪
(৮৮.৫)
৩১.৫
(৮৮.৭)
৩১.০
(৮৭.৮)
২৮.৯
(৮৪.০)
২৬.০
(৭৮.৮)
৩০.৬
(৮৭.০)
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) ১১.৭
(৫৩.১)
১৩.৫
(৫৬.৩)
১৭.৯
(৬৪.২)
২২.৫
(৭২.৫)
২৪.১
(৭৫.৪)
২৫.৬
(৭৮.১)
২৬.১
(৭৯.০)
২৬.১
(৭৯.০)
২৫.৬
(৭৮.১)
২৩.২
(৭৩.৮)
১৭.৬
(৬৩.৭)
১৩.১
(৫৫.৬)
২০.৬
(৬৯.১)
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি)
(০.৪)
১৩
(০.৫)
২১
(০.৮)
৬১
(২.৪)
২১০
(৮.৩)
৩২৬
(১২.৮)
৩৯৭
(১৫.৬)
৩০২
(১১.৯)
২৫৭
(১০.১)
১৪৫
(৫.৭)
১৫
(০.৬)

(০.২)
১,৭৬২
(৬৯.৪)
উৎস: Climate-data.org

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

[সম্পাদনা]


তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "বগুড়া নামকরণের ইতিহাস ও ঐতিহ্য :: দৈনিক ইত্তেফাক"archive.ittefaq.com.bd (Bengali ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০২১{{ওয়েব উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: অচেনা ভাষা (লিঙ্ক)

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]
  • উইকিমিডিয়া কমন্সে বগুড়া সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।