বাংলাদেশের রাজনীতি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাংলাদেশের রাজনীতি
·
রাষ্ট্রের ধরনএককেন্দ্রিক সংসদীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র
সংবিধানবাংলাদেশের সংবিধান
আইনসভা
নামজাতীয় সংসদ
ধরনএককক্ষবিশিষ্ট
সভাস্থলজাতীয় সংসদ ভবন
সভাপতিশিরীন শারমিন চৌধুরী, স্পিকার
নির্বাহী বিভাগ
রাষ্ট্রপ্রধান
উপাধিবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি
বর্তমানমোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন
নিয়োগদাতাসংসদ
সরকারপ্রধান
উপাধিপ্রধানমন্ত্রী
বর্তমানশেখ হাসিনা
নিয়োগদাতারাষ্ট্রপতি
মন্ত্রিসভা
নামবাংলাদেশের মন্ত্রিসভা
বর্তমান মন্ত্রিসভাশেখ হাসিনার চতুর্থ মন্ত্রিসভা
নেতাপ্রধানমন্ত্রী
নিয়োগদাতারাষ্ট্রপতি
সদরদপ্তরপ্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
মন্ত্রিসভা৪১
বিচার বিভাগ
নামবিচার বিভাগ
সুপ্রীম কোর্ট
প্রধান বিচারপতিওবায়দুল হাসান
আসনরমনা থানা

বাংলাদেশের রাজনীতি ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই দেশটির জন্মের ইতিহাস, বিদ্যমান সরকার ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক প্রভাব এবং মানুষের রাজনীতিমনস্কতা কেন্দ্র করে আবর্তিত। ১৯৭১ এ অস্থায়ী সরকার গঠন এবং অস্থায়ী সংবিধান প্রণয়নের পর থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা কমপক্ষে পাঁচবার পরিবর্তিত হয়েছ। বাংলাদেশের রাজনীতি একটি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক (পরোক্ষ গণতন্ত্র) প্রজাতন্ত্রের কাঠামোর মধ্যে সংঘটিত হয়, যেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকারপ্রধান এবং একটি বহুদলীয় ব্যবস্থা বিদ্যমান। বহুদলীয় গণতন্ত্র পদ্ধতিতে এখানে জনগণের সরাসরি ভোটে জাতীয় সংসদের সদস্যরা নির্বাচিত হন। নির্বাহী (executive) ক্ষমতা সরকারের হাতে ন্যস্ত। আইন প্রণয়ন করা হয় জাতীয় সংসদেবাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ সালে প্রণীত হয়, এবং এখন পর্যন্ত এতে সতেরোটি সংশোধনী যোগ করা হয়েছে।[১]

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকলেও বিভিন্ন সময়ে সেনা শাসন এবং সেনা প্রভাব বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করেছে। ইসলামী শক্তি এবং জঙ্গীবাদী শক্তির উত্থানও কখনো কখনো বাংলাদেশের রাজনীতিকে প্রভাবান্বিত করেছে। রাজনীতির লক্ষ্য গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা এবং জনকল্যাণ। সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার রাজনীতিতে তাদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন। তারা সকল রূপ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।

বাংলাদেশে বহুসংখ্যক রাজনৈতিক দল রয়েছে যার মধ্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগবিএনপি প্রধান দুটি রাজনৈতিক শক্তি। বিএনপি দল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ সহ বেশ কিছু ইসলামপন্থীজাতীয়তাবাদী দলের সঙ্গে মৈত্রী সম্পর্ক স্থাপন করেছে, অপরদিকে আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যগতভাবে বামপন্থীধর্মনিরপেক্ষ দলসমূহের সঙ্গে সমান্তরালভাবে সংযুক্ত রয়েছে। এরপর, তৃতীয় শক্তিটি হলো জাতীয় পার্টি যা বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ বর্তমানে তিক্ত আকার ধারণ করেছে এবং প্রতিনিয়ত আন্দোলন, সহিংসতা এবং হত্যাকাণ্ডের জন্ম দিয়ে চলেছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় থেকে ছাত্র রাজনীতিও বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী উত্তরাধিকার হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। প্রায় সকল দলেরই অত্যন্ত সক্রিয় নিজস্ব ছাত্র সংগঠনের শাখা রয়েছে এবং শিক্ষার্থীদেরকেও সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা দুর্নীতিপরায়ণ হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ বেশ হতাশ।

দাপ্তরিক প্রধান
দপ্তর নাম দল দায়িত্বগ্রহণের সময়
রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন আওয়ামী লীগ ২৪ এপ্রিল, ২০২৩
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ ৬ জানুয়ারি, ২০০৯
সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী আওয়ামী লীগ ৩০ এপ্রিল, ২০১৩
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নিরপেক্ষ ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধের পর শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে রাষ্ট্রপতি হিসেবে আওয়ামী লীগের পক্ষে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সংসদীয় গণতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ১৯৭৫ সালে সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতি রদ করে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। একই বছর শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের বেসামরিক প্রশাসনকেন্দ্রিক রাজনীতিতে প্রথমবারের মতো সামরিক ক্ষমতার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ ঘটে। এরপর ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত তিনবার সংসদ নির্বাচন (১৯৭৯, ১৯৮৬১৯৮৮ সালে) আয়োজিত হলেও দেশে মূলত সামরিক শাসন জারি ছিল। ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিজয়ের মাধ্যমে দেশে পুনরায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হবার পর থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পরিবারতন্ত্র[২][৩][৪] এদেরকে সাধারণত এমন পরিবার হিসাবে চিহ্নিত করা হয় যারা একটি দল, জাতীয় সরকার বা জাতীয় রাজনৈতিক বিশিষ্টতার অন্যান্য পদে তাদের রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। এই জাতীয় রাজবংশের সদস্যরা সাধারণত নিজেদের কঠোরভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেন না বরং তাদের ব্যবসা ও সংস্কৃতি সম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপে অংশ নিতে দেখা গেছে। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের ধারণা রাজনীতিবিদদের উত্তরসূরীদের কঠোর পরিশ্রম করতে নিরুৎসাহিত করে এবং পরিবারতন্ত্রকে উৎসাহিত করতে পারে। রাজপরিবারের রাজনীতিবিদদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা রয়েছে, সেটি হলো তাদের পূর্বসূরির জনপ্রিয়তা এবং রাজনৈতিক সংযোগ নেই এমন ব্যক্তিদের থেকে ভোটে জেতার উচ্চ সম্ভাবনা। রাজবংশীয় রাজনীতিবিদদের সাধারণত শিক্ষাগত দক্ষতাও কম থাকে, কারণ তাদের অবস্থান (সামাজিক, রাজনৈতিক) আমলাতান্ত্রিক বা একাডেমিক যোগ্যতার চেয়ে রাজবংশীয় সংযোগগুলোর উপর বেশি নির্ভর করে। বংশোদ্ভূত প্রার্থীরা, প্রায় একচেটিয়াভাবে উচ্চবর্গ থেকে আসা, তাদের নিজস্ব অর্পিত অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষার জন্য স্বাভাবিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট, যা সুদের সমস্যার দ্বন্দ্ব উপস্থাপন করে।

বাংলাদেশী রাজনীতি দুইটি পরিবারের মধ্যে তিক্ত দ্বন্দ্ব দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে।শহীদ প্রেসিডেন্ট বীর উত্তম জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৮১ সাল থেকে ৩৭ বছর যাবত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে আছেন। আর শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। তারা "ব্যাটলিং বেগমস" নামে পরিচিত;[৫] এই দুই মহিলা তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে দলীয় পরিচয় উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশ শাসন করে আসছেন।[৬][৭]

পরিবারতন্ত্র বাংলাদেশী সমাজের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উপর যে প্রভাব পড়েছে তা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। পরিবারতন্ত্রের প্রতি জনগণের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া এবং রাজবংশীয় ক্রিয়াকলাপ এবং দুর্নীতির মধ্যে সংযোগ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে এমন কোনও আইন নেই যা বাংলাদেশে রাজনৈতিক রাজবংশের উপস্থিতি সীমাবদ্ধ করবে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Nasim swipes at Khaleda"bdnews24.com। জুলাই ১৮, ২০১১। ১৯ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ আগস্ট ২০১১ 
  2. https://www.amarsangbad.com (২০১৬-০১-৩১)। "পরিবারতন্ত্রের বৃত্তে বন্দি রাজনীতি!"amarsangbad.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-১৯ 
  3. দত্ত, শেখর (জানুয়ারি ৮, ২০২০)। "রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র"জাগো নিউজ। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১৯, ২০২৩ 
  4. "Pamphlet" (পিডিএফ)www.cmi.no 
  5. Alam, Julhas (৫ জানুয়ারি ২০১৪)। "Fear for Bangladesh as 'Begums' fight forfuture power"Daily Express। London। 
  6. "Women and property rights: Who owns Bangladesh?"The Economist (Blog)। ২১ আগস্ট ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  7. Torild, Skard (২০১৪)। Women of power: Half a century of female presidents and prime ministers worldwide। Policy Press। পৃষ্ঠা 135–। আইএসবিএন 978-1-4473-1578-0 

আরও দেখুন[সম্পাদনা]