হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক
![]() |
ইসলাম |
---|
এর ধারাবাহিক নিবন্ধের অংশ: |
![]() |
ইসলাম ও অন্যান্য ধর্ম |
---|
![]() |
ইব্রাহিমীয় ধর্ম |
অন্যান্য ধর্ম |
ইসলাম এবং... |
হিন্দু–মুসলিম সম্পর্ক অনুসন্ধান ও গবেষণা শুরু হয় ৭ম শতকের প্রথম দিকে, ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামিক প্রভাব বিস্তারের সূচনা লগ্ন থেকে। বিশ্বের তিনটি বৃহত্তম ধর্মের দুটি হলো হিন্দুধর্ম এবং ইসলাম ধর্ম[১]। হিন্দুধর্ম, ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দু মানুষের জীবনের সামাজিক-ধর্মীয় উপায়। ইসলাম ধর্ম যথাযথভাবে একেশ্বরবাদী ধর্ম যেখানে একমাত্র উপাস্য হলেন আল্লাহ (আরবি: الله "ঈশ্বর": দেখুন ইসলাম ধর্মে ঈশ্বর)। সর্বশেষ ইসলামী নবী মুহাম্মাদ, যিনি কুরআনের মাধ্যমে মুসলমানদের ইসলামী রীতি-নীতি শিক্ষা দেন।
তুলনামুলক সাদৃশ্য ও পার্থক্য চিহ্নিতকরণ[সম্পাদনা]
ঈশ্বর সম্পর্কিত ধর্মতত্ত্ব ও ধারণা[সম্পাদনা]
ইসলামে কঠিনভাবে একেশ্বরবাদে বিশ্বাস করা হয় এবং ঈশ্বরের (আল্লাহর) একক অস্তিত্ব ও পূর্ণ ক্ষমতায় বিশ্বাস করা ইসলামের একটি মৌলিক শর্ত যাকে তাওহিদ বা একত্ববাদ বলে।
অপরদিকে, হিন্দুধর্ম ঈশ্বরকে একেশ্বরবাদ, বহু-ঈশ্বরবাদ, অবতারবাদ, নাস্তিক্যবাদ প্রভৃতি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে। তবে হিন্দু মূল ধর্ম গ্রন্থগুলোতে (বেদ, উপনিষদে) একেশ্বরবাদ এর কথাই বলা হয়েছে
গ্রন্থাবলি[সম্পাদনা]
হিন্দুধর্মের মুল ধর্মগ্রন্থগুলো হল বেদ ও উপনিষদ যেগুলোকে ঈশ্বরের বানী হিসেবে গণ্য করা হয়| আর মহামনীষিদের বানীগুলোকে যে গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করা হয় সেগুলোকে স্মৃতি বলা হয়।[২][৩][৪] ইসলামধর্মে কুরআন হল প্রধান ধর্মগ্রন্থ যাকে ঈশ্বরের বাণী হিসেবে গণ্য করা হয়[৫], যেটি ঈশ্বরের কাছ থেকে স্বর্গীয় দুত বা ফেরেশতা জিবরাঈল এর মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের প্রধান নবী মুহাম্মাদ কাছে প্রেরিত আল্লাহর (ইসলাম ধর্মে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের নাম) বাণী হিসেবে বিশ্বাস করা হয়। এছাড়া, হিন্দুধর্মের স্মৃতির মত ইসলাম ধর্মেও নবী মুহাম্মাদ এর বাণীসমূহ যা হাদীস নামে পরিচিত, তা প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বিবরণ অনুযায়ী মুহাম্মাদ -এর মৃত্যূর পর বিভিন্ন গ্রন্থ আকারে উৎসসহ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এই গ্রন্থগুলোও ইসলামী বিধিবিধানের উৎস।
মনীষিগণ - নবীগণ[সম্পাদনা]
ইসলাম ধর্মে নবী হলেন পৃথিবীতে বিভিন্ন যুগে এবং স্থানে কোন জাতির জন্য সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক মনোনিত পথপ্রদর্শক যিনি উক্ত জাতিকে সৃষ্টিকর্তা মনোনিত নির্দেশ ও বিধিবিধান প্রদানের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ধর্মীয় উৎস অনুসারে সৃষ্টিকর্তা মোট এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন যাদের মাঝে প্রথম নবী হলেন আদম এবং সর্বশেষ নবী ও রাসূল হলেন মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম) , যাকে তার সময়কাল থেকে পরবর্তী সকল যুগের ও স্থানের মানুষের জন্য চূড়ান্ত নবী ও রাসূল হিসেবে মনোনিত করা হয়েছে। কিছু মুসলিম (আব্দুল হক বিদ্যার্থী) ও হিন্দু পন্ডিত (বেদ প্রকাশ উপাধ্যায়, এম.এ. শ্রীবাস্তব) মনে করেন, ভবিষ্যপুরাণে নরাশংস নামে যে শেষ অবতার বা কল্কি নামক অবতারের কথা বলা হয়েছে,অনেকেই মনে করে থাকেন যে ইসলামের শেষ নবী মুহাম্মদ হলেন সেই ব্যক্তি বা অবতার; কারণ নরাশংস নামের অর্থ প্রশংসিত মানব যা আরবিতে মুহাম্মদ শব্দটির অর্থের সমার্থক বলে কেউ কেউ মত দেন, যদিও তা অধিকাংশ হিন্দু শাস্ত্রবিদদের ব্যাখ্যায় অসমর্থিত।
মহাপুরুষদের মত হিন্দু ধর্মেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংস্কারক এনেছে যাদের মাধ্যমে হিন্দু ধর্ম ধাপে ধাপে সমৃদ্ধ হয়েছে। এদেরকে মনিষী বা মুনি বলা হয়।
ফেরেশতাগণ - দেবদেবীগণ[সম্পাদনা]
অন্যান্য ইব্রাহিমীয় ধর্মের মতই ইসলাম ধর্মও ফেরেশতার অস্তিত্বে বিশ্বাসী যারা হলেন আল্লাহর সৃষ্ট স্বর্গীয় দূত। এপরদিকে হিন্দুধর্মেও স্বর্গীয় দুত রয়েছে যাদের দেবতা বা দেবী বলা হয়। এরা দুই ভাগে বিভক্ত। এক শ্রেণী হল ঈশ্বরের অংশ আর অপর শ্রেণী হল ঈশ্বর কর্তৃক সৃষ্ট। হিন্দুধর্মে স্বর্গীয় দূতদের পূজা করা হয়, যা ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ। ইসলাম ধর্মে ঈশ্বর ব্যতীত কোন কিছুর উপাসনা করা নিষিদ্ধ। অপরদিকে হিন্দু ধর্মে দেবদূতদের পূজাকে আধ্যাত্মিক সাধনার অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। ইসলাম ধর্মে ইবলিশ হল জ্বিন প্রজাতি হতে জন্ম নেয়া, মানুষের মনে কুমন্ত্রণা প্রদানকারী শয়তান শ্রেণীর নেতা। ইসলামে শয়তানের অস্তিত্বে বিশ্বাসের মতই হিন্দুধর্মেও অসুরে বিশ্বাস করা হয়| হিন্দুধর্মে একাধিক অসুর রয়েছে কিন্তু তারা কোন নেতৃস্থানীয় অসুরে বিশ্বাস করে না।
স্থাপত্য এবং নামকরণ[সম্পাদনা]
আদর্শ ও নৈতিক গুনাবলি[সম্পাদনা]
ধর্মীয় আচার-রীতিনীতি, প্রার্থনা ও উপবাস পদ্ধতি[সম্পাদনা]
হিন্দুধর্মের অনুসারীগণ দৈনিক নিয়মিত ও অনিয়মিতভাবে তাদের উপাস্য দেবতা, দেবীগণের প্রতিমূর্তিকে সামনে রেখে উপাসনা ও ভক্তিমূলক পূজা করে থাকে। তাদের দৈনন্দিন উপাসনার মধ্যে আরেকটি প্রচলিত রীতি হল অগ্নির দ্বারা উপাসনা, এতে অগ্নিবেদীতে ঘি তুষ প্রভৃতি দান করে দেহ ও মনের আত্মিক মুক্তি সন্ধান করা হয়।এছাড়াও নিত্য পাঁচ বার ঈশ্বর এর কাছে পার্থনা ও ধ্যান করা আবশ্যক ॥ অন্যদিকে ইসলাম ধর্মে সালাত বা নামাজের মাধ্যমে প্রতিদিন পর্যায়ক্রমিকভাবে পাঁচবার আল্লাহ বা ঈশ্বরকে স্বরণ করা হয়।
খাবার[সম্পাদনা]
ইসলাম ধর্ম শূকর ছাড়া[৬] অন্যান্য চারণপশুর মাংস খাওয়া অনুমোদন করে। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু শর্ত পুরণ হতে হবে যা সুরা মায়েদাহ তে দেওয়া আছে, প্রাণীটি চতুষ্পদী ও তৃণভোজী হতে হবে এবং তা আল্লাহর নামে জবাই হতে হবে জবাইয়ের সময় কন্ঠস্থ রগ (শিরা,রক্তনালিকা) বিচ্ছিন্ন করে রক্ত প্রবাহিত করতে হবে, তবেই তা হালাল হবে। তবে বৈদিক সনাতন ধর্মের অনুসারীদের নিরামিষভোজী শাকাহারী হতে বলা হয়েছে। বৈদিক সনাতন ধর্মমতে প্রাণীহত্যা ও প্রাণীজ মাংস নিষিদ্ধ। যদিও হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন শ্রেণীতে এটি নিয়ে দ্বিমত থাকার কারণে অনেকেই প্রাণীজ আমিষ ভক্ষণ করে, বিশেষত ভারতের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে। স্মৃতিশাস্ত্রের বিখ্যাত গ্রন্থ পদ্মপুরাণে "সুরাপান"কে দ্বিতীয় মহাপাপ হিসেবে ধরা হয়। ইসলামেও মদ্যপান স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ। গো মাংস ইসলামে বৈধ হলেও সনাতনধর্মাবলম্বীদের কাছে গোমাংস ভক্ষণ একটি অতি গর্হিত অপরাধ। কারণ সনাতন ধর্মে গরুকে সমৃদ্ধির প্রতীক এবং দুগ্ধদানের কারণে দুগ্ধদাত্রী মায়ের সমতুল্য মনে করা হয়। ইসলামে মানবীয় সম্পর্কের সাথে অন্যান্য জীবের সম্পর্কের স্পষ্ট পার্থক্য করা হলেও হিন্দুধর্মে মানব, প্রাণী ও উদ্ভিদ সকল জীবকে ভ্রাতৃত্বের দৃষ্টিতে বিবেচনা করা হয়।
একজীবন - পুনরায় দেহ ধারণ(পুনর্জন্ম)[সম্পাদনা]
ইসলাম ধর্মমতে মানবজীবন একটাই ও একবারই আসে। এতে পুনরায় দেহ ধারণ বলে কিছু নেই। শুধু কিয়ামতের দিন সবাইকে পুনরুত্থিত করা হবে ও বিচার করা হবে। জীবিত থাকা অবস্থায় কৃতকর্মের উপর ভিত্তি করে মৃত্যুপরবর্তী জীবনে প্রতিদান দেওয়া হবে যা অনন্তকালের জন্য প্রাপ্য হবে। বিপরীতভাবে হিন্দুধর্মমতে, মানুষ মৃত্যুর পর পুনরায় দেহ ধারণ করে। একে পুনর্জন্ম বলে।
বিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের অভিমত[সম্পাদনা]
হিন্দুধর্ম সম্পর্কে মুসলিম বিজ্ঞ ব্যক্তিগণের অভিমত[সম্পাদনা]
ইসলামধর্ম সম্পর্কে হিন্দু বিজ্ঞ ব্যক্তিগণের অভিমত[সম্পাদনা]
রাজনীতি ও ঐতিহাসিক সংঘর্ষ[সম্পাদনা]
ইসলাম ধর্ম রক্ষার্থে হযরত মুহাম্মদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তার অনুসারীদের অর্থাত্ সাহাবীদের অনেক সংঘর্ষ তথা যুদ্ধ করতে হয়েছে। তথাপি হিন্দু ধর্মে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে কুরুক্ষেত্র-এর মতো মহাযুদ্ধ করতে হয়েছিল।
হিন্দুধর্ম ও ইসলামধর্মের সমাজ-সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা[সম্পাদনা]
শহরগুলোতে বৃদ্ধির হার[সম্পাদনা]
ভারত প্রধানত হিন্দু ধর্মপ্রধান দেশ হলেও বিভিন্ন শহরে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা বৃদ্ধির হার নিম্নে ১.৩%(দিল্লি) থেকে সর্বোচ্চ ১০%(ভুপাল) পর্যন্ত রয়েছে| পাশাপাশি এক লক্ষের অধিক জনসংখ্যাবিশিষ্ট বেশ কিছু শহর রয়েছে যেখান ৫% বেশি মুসলিম বসবাস করে।
আরও দেখুন[সম্পাদনা]
- ভারতে হিন্দুধর্ম
- ভারতে ইসলাম
- বাংলাদেশে ইসলাম
- বাংলাদেশে হিন্দুধর্ম
- কাজী নজরুল ইসলাম
- রামমোহন রায়
- লালন
- বিবেকানন্দ
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- আকবর
- বীরবল
- ইসলামের সমালোচনা
- হিন্দুধর্মের সমালোচনা
- শাহজাহান
- গিরিশ চন্দ্র সেন
- ব্রাহ্ম সমাজ
- চেরামন পেরুমল
- মালিক দীনার
- কল্কি অবতার অউর মুহম্মদ সাহিব (বই)
- জাকির নায়েক
- রবি শঙ্কর (ধর্মীয় নেতা)
- ইসলাম ও অন্যান্য ধর্ম
- হিন্দুধর্ম ও ইহুদীধর্ম
- ভারতে মুসলিম বিরোধী সহিংসতা
- মুসলিমদের দ্বারা হিন্দুদের উপর নিপীড়ন
- হিন্দু–খ্রিস্টান প্রবেশপথসমূহের ইতিহাস, খ্রিস্টাব্দ ৩০৪ থেকে ১৯৯৬
- ইসলামে বৈশ্বিক বিভাজনসমূহ
- জাকির নায়েক ও রবিশঙ্কর
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ "Table: Religious Composition by Country, in Numbers"। Pew Research Center's Religion & Public Life Project (Washington DC)। ১৮ ডিসেম্বর ২০১২। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০১৫।
- ↑ Klostermaier, Klaus K. (২০০৭)। A Survey of Hinduism. (3. ed. সংস্করণ)। Albany, N.Y.: State University of New York Press। পৃষ্ঠা 46–49। আইএসবিএন 0-7914-7082-2।
- ↑ William Duiker, Jackson Spielvogel (২০১২)। World History। Cengage learning। পৃষ্ঠা 90।
- ↑ James M. Nelson (২০০৯)। Psychology, Religion, and Spirituality। Springer। পৃষ্ঠা 77।
- ↑ Neal Robinson (2013), Islam: A Concise Introduction, Routledge, আইএসবিএন ৯৭৮-০৮৭৮৪০২২৪৩, Chapter 7
- ↑ Quran 2:173