কুবের
কুবের | |
---|---|
ধনৈশ্বর্যের দেবতা | |
![]() সান অন্টোনিও মিউজিয়াম অব আর্ট-এ সংরক্ষিত কুবেরমূর্তি | |
সংস্কৃত লিপ্যন্তর | Kubēra |
অন্তর্ভুক্তি | দেব, লোকপাল, দিকপাল |
আবাস | লঙ্কা এবং পরে অলকাপুরী |
মন্ত্র | ওঁ শং কুবেরায় নমঃ |
অস্ত্র | গদা |
সন্তান | নলকুবর, মণিভদ্র, গন্ধমাদন |
বাহন | বরাহ, নকুল |
সঙ্গী | ভদ্রা |
মাতাপিতা |
|
কুবের (সংস্কৃত: कुबेर) বা কুবেরন হলেন ধনৈশ্বর্যের দেবতা এবং হিন্দু পুরাণ অনুসারে অর্ধদৈব যক্ষদের ঈশ্বরসম রাজা৷[১] তিনি দিকপাল হিসাবে বিবেচিত হন এবং উত্তরদিকের অধিষ্ঠাতা হিসাবে পূজিত হন৷ এছাড়া তিনি লোকপাল তথা জগতের সংরক্ষক হিসাবেও পূজিত হন৷ বিভিন্ন পৌরাণিক পুস্তকগুলি থেকে কুবেরকে একাধিক অর্ধদৈব শক্তির সংমিশ্রণ ও বিশ্বের সমস্ত ঐশ্বর্যের মালিক হিসাবে গণ্য করার উচ্চ প্রসংশনীয় বর্ণনা পাওয়া যায়৷ প্রায়শই কুবেরমূর্তি অলঙ্কারসজ্জিত স্থূলকায় দেহস্বরূপ ও একটি মুদ্রাপাত্র ও গদা নিয়ে থাকতে দেখা যায়৷
প্রাথমিকভাবে বৈদিক যুগে উল্লিখিত অসুরকুলের একজন অন্যতম প্রধান চরিত্র হিসাবে কুবেরর কথা থাকলেও পৌরাণিক যুগে ও হিন্দু মহাকাব্য রচনকালে তিনিই হয়ে ওঠেন ধনদেবতা৷ বিভিন্ন লিখিত প্রমাণ ও পুরাণে কুবেরকে লঙ্কার রাজা হিসাবে বর্ণিত করা হয়, কিন্তু তিনি তার বৈমাত্রেয় ভ্রাতা রাবণের দ্বারা লঙ্কাপুরী থেকে বিতাড়িত হন৷ পরবর্তীকালে তিনি অলকাপুরীতে নিজের রাজত্ব স্থাপন করেন, যা বর্তমান শ্রীলঙ্কার সিগিরিয়া অঞ্চলে অবস্থিত৷ বিভিন্ন ধর্মীয় পুস্তকে কুবেরর ধনৈশ্বর্য ও তার আড়ম্বরের কথা উল্লেখ করা রয়েছে৷
কুবের বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মের সর্ব্বৈবদেবতার মন্দিরেও স্থান পেয়েছেন৷ বৌদ্ধধর্মে তিনি বৈশ্রবণ নামেও পরিচিত৷ বৈশ্রবণ নামটি হিন্দুপুরাণেও উল্লেখ রয়েছে বিশ্রবা মুনির পুত্র হিসাবে৷ আবার জৈনদের মধ্যে তিনি সর্বানুভূতি নামে অধিক পরিচিত৷
কুবেরমূর্তি চিত্রশিল্প[সম্পাদনা]
কুবেরকে মূলত বামনরূপে পদ্মপাতার বর্ণযুক্ত ও ভুঁড়িসহ চরিত্রচিত্রণ করা হয়ে থাকে৷ পৌরাণিক বর্ণনা অনুসারে তার তিনটি পা, একটি চোখ ও মাত্র আটটি দাঁত রয়েছে, এছাড়া তার মূর্তিকে অলঙ্কারভূষিত হয়ে থাকতেই দেখা যায়৷ অনেকসময় কুবেরমূর্তিকে এক পুরুষের ওপর অধিরোহিত অবস্থায় দেখা যায়৷[২][৩] কুবেরের বিবরণে প্রতিবন্ধীত্ব স্বরূপ কমসংখ্যক দাঁত, তিনটি পা, তিনটি মাথা ও চারটি হাতের উল্লেখ পুরাণ-পরবর্তী সময়ে পাওয়া যায়৷[৪] কুবেরের এক হাতে গদা, অপর হাতে বেদানা বা মুদ্রার থলি থাকতে দেখা যায়৷[২] তার মূর্তিতে একগুচ্ছ অলঙ্কার পরিহিত অবস্থায় দেখা যায় এবং সঙ্গী হিসাবে নকুল থাকতে দেখা যায়৷ তিব্বতে গুপ্তধনের তত্ত্বাবধায়ক নাগদের ওপর কুবেরের বিজয় হিসাবে বেজিকে চিহ্নিত করা হয়৷[৫] একারণে তিব্বতি বৌদ্ধধর্মে কুবেরের মূর্তির সাথে বাহনহিসাবে বেজির বর্ণনা দেওয়া হয়৷[৩]

বিষ্ণুধর্মোত্তর পুরাণে কুবেরকে ঐশ্বর্য, ধনসম্পদ ও অর্থশাস্ত্র উভয়ের প্রতিরূপ হিসাবে বিবরণ দেওয়া হয়, যা পরবর্তীকালে কুবেরের মূর্তিকল্পেও প্রভাব ফেলে৷ বর্ণনানুসারে কুবেরের গাত্রবর্ণ পদ্মপাতার মতো৷ তিনি এক পুরুষের ওপর অধিরোহিত যা ধনহানিকে চিহ্নিত করে আবার তিনি অলঙ্কার ও স্বর্ণবস্ত্র পরিহিত, যা তার ঐশ্বর্যের প্রতীক৷ তার বামচক্ষু পীত বা হরিদ্রাবর্ণ৷ তিঁনি গাত্রবর্ম পরিহিত এবং বৃৃহদোদর অবধি স্বর্ণালঙ্কার ভূষিত৷ বিষ্ণুধর্মোত্তর পুরাণ মতে কুবেরের মুখ সামান্য বামদিকে হেলানো এবং সুস্পষ্ট দাড়ি ও গোঁফযুক্ত৷ তার সামনের দিকে এগোনো চোয়াল ও দুটি বহিঃগজদন্ত তার দানশীলতা ও প্রয়োজনে শিক্ষাদানের গুণটিকে নির্দেশ করে৷ বাম জঙ্ঘায় অধিষ্ঠিত তার স্ত্রী ঋদ্ধি জীবনযাত্রার পথের প্রতিনিধিত্ব করেন৷ মূর্তিকল্পে ঋদ্ধিদেবীর বামহাত কুবেরের পৃষ্ঠদেশে এবং ডানহাতটি একটি রত্নপাত্র ধারণ করা অবস্থায় থাকে৷ প্রথাগত কুবের চতুর্ভুজ, তাহ একহাতে গদা রয়েছে, যা দণ্ডনীতি, প্রশাসন এবং বিচারব্যবস্থার প্রতীক৷ তার সম্মুখ বামহাতে একটি সিংহচিহ্ন রয়েছে যা ধনৈশ্বর্যের প্রতীক আবার পশ্চাদ বামহাতে রয়েছে শিবিক বা কুবেরাস্ত্র৷ একারণে তার বামহস্তজোড়কে শক্তিধারণ বলা হয়৷ কুবের নিধি পরিবেষ্ঠিত, কুবেরমূর্তির দুপাশে মানবরূপে মহাপদ্ম এবং শঙ্খ রয়েছে এবং তাদের হাতে তাদের স্বরূপ তথা পদ্ম ও শঙ্খও শোভা পায়৷ [৬]
অগ্নি পুরাণ মতে কুবেরকে মন্দিরে স্থাপিত করতে হলে অবশ্য কুবেরমূর্তিটি ছাগল বাহনে অধিষ্ঠিত হতে হবে ও মূর্তির হাতে গদা থাকা বাঞ্চনীয়৷[৭] মূর্তিকল্পের বদলে চিত্রকল্প হলে অবশ্যই চিত্রে স্বর্ণবর্ণের ব্যবহার ও একাধিক উজ্জ্বল বর্ণের প্রয়োগ থাকতে হবে৷[৮] কিছু উৎস, বিশেষত জৈনধর্ম মতে কুবেরকে মাদকাসক্ত হিসাবে ফুটিয়ে তোলানোর জন্য তার একটি হাতে উল্লেখযোগ্যভাবে অমিয়বদনার উপস্থিতি বর্ণনা করা হয়৷[৯]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ The Poems of Sūradāsa। Abhinav publications। ১৯৯৯।
- ↑ ক খ উদ্ধৃতি ত্রুটি: অবৈধ
<ref>
ট্যাগ;knapp
নামের সূত্রের জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ ক খ উদ্ধৃতি ত্রুটি: অবৈধ
<ref>
ট্যাগ;Britannica
নামের সূত্রের জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ Hopkins 1915, পৃ. 147
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি: অবৈধ
<ref>
ট্যাগ;Thomas
নামের সূত্রের জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ Prakash, Om (২০০০)। "Artha and Arthasastra in the Puranic Iconography and their symbolic implications"। Nagendra Kumar Singh। Encyclopaedia of Hinduism। 31–45। Anmol Publications PVT. LTD। পৃষ্ঠা 41–4। আইএসবিএন 81-7488-168-9।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি: অবৈধ
<ref>
ট্যাগ;Mani
নামের সূত্রের জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি: অবৈধ
<ref>
ট্যাগ;Alain
নামের সূত্রের জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ Sutherland 1991, পৃ. 65