ভক্তি
ভক্তি (সংস্কৃত: भक्ति) হিন্দুধর্মে উপাসনা তথা আরাধনার একটি বিশেষ রীতি । পূজনীয় দেবতা বা ব্যক্তির প্রতি বিশেষ অনুরাগ বা প্রেমকেই ভক্তি বলা হয়।[১] ঈশ্বরের নিকট সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের নামই ভক্তি।[২] ভক্তির পথে যিনি ঈশ্বরোপাসনা করেন, তাকে ভক্ত নামে[৩] এবং ভক্তিবাদী দর্শনকে ভক্তিমার্গ নামে অভিহিত করা হয়।[৪][৫] ভক্তিবাদ হিন্দুধর্মের একাধিক শাখাসম্প্রদায়ের মূলভিত্তি। বিভিন্ন সম্প্রদায় ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ভক্তিবাদের ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে।[৬]
ভক্তিবাদ ঈশ্বরপ্রেমকে প্রথা ও আচার-অনুষ্ঠানের ঊর্ধ্বে স্থান দেয়। ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধু, পিতামাতা-সন্তান, ও প্রভু-ভৃত্য ইত্যাদি মানবিক সম্পর্ক ভক্তিবাদের প্রধান স্তম্ভ।[৭] ঈশ্বরের কোনো নির্দিষ্ট রূপ,[৮] ঈশ্বরের নিরাকার রূপ,[৯] বা গুরুর প্রতি ভক্তি (গুরুভক্তি) ভক্তিবাদের অঙ্গ।[১০][১১] হিন্দুধর্মে সম্প্রদায়ভেদে ভক্তিবাদের নির্দিষ্ট রূপ প্রচলিত: শৈবেরা শিব ও শিব-সম্পর্কিত দেবদেবীগণের ভক্ত; বৈষ্ণবেরা বিষ্ণু ও তার অবতারগণের ভক্ত এবং শাক্তেরা মহাশক্তির বিভিন্ন রূপের ভক্ত। তবে কোনো নির্দিষ্ট দেবতার প্রতি ভক্তি থাকলে অন্য কোনো দেবতাকে পূজা করা যাবে না – এমন কোনো বিধান হিন্দুধর্মে নেই।[১২]
ভগবদ্গীতা প্রথম ধর্মগ্রন্থ যেখানে "ভক্তি" শব্দটিকে প্রথম ধর্মীয় পথ অর্থে উল্লেখ করা হয়।[১৩] এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয় ভাগবত পুরাণে।[৭] ভক্তি আন্দোলনের কালে দক্ষিণ ভারত থেকে ভক্তিবাদের উত্থান ঘটে। এই ভক্তিবাদের প্রবক্তারা ছিলেন বৈষ্ণব অলবর (খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ থেকে নবম শতাব্দী) ও শৈব নায়নার (খ্রিষ্টীয় পঞ্চম থেকে দশম শতাব্দী) সম্প্রদায়ভুক্ত। ভক্তিবাদ ও ভক্তিবাদী সাহিত্য সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে দেওয়ার পিছনে এঁরাই ছিলেন প্রধান অনুপ্রেরণা। খ্রিষ্টীয় দ্বাদশ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে ভক্তি আন্দোলন সমগ্র ভারতেই বিস্তার লাভ করেছিল।[১৪] ভারতে ভক্তিবাদের প্রভাব অন্যান্য ধর্মগুলির মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।[১৫][১৬][১৭][১৮] বর্তমানে ভক্তিবাদ ভারতীয় সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ধর্মীয় থেকে ধর্মনিরপেক্ষ – অনেক বিষয়েই আজ ভক্তিবাদের ছায়া সুস্পষ্ট।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]পাদটীকা
[সম্পাদনা]- ↑ "Monier-Williams Sanskrit-English Dictionary"। University of Cologne। পৃষ্ঠা bh। ২০০৮-০৬-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৪-১৯।
- ↑ Pechilis Prentiss, Karen (১৯৯৯)। The Embodiement of Bhakti। US: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 24। আইএসবিএন 9780195128130।
- ↑ Prentiss, p. 3.
- ↑ Klostermaier, Klaus (১৯৮৯)। A survey of Hinduism। SUNY Press। পৃষ্ঠা 210–212। আইএসবিএন 9780887068072।
- ↑ Prentiss, p. 23.
- ↑ Lindsay Jones, সম্পাদক (২০০৫)। Gale Encyclopedia of Religion। Volume 2। Thompson Gale। পৃষ্ঠা 856–857। আইএসবিএন ISBN 0-02-865735-7
|আইএসবিএন=
এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য)। - ↑ ক খ Cutler, Norman (১৯৮৭)। Songs of Experience। Indiana University Press। পৃষ্ঠা 1। আইএসবিএন 9780253353344।
- ↑ Neusner, Jacob (২০০৩)। World religions in America: an introduction। Westminster John Knox Press। পৃষ্ঠা 128। আইএসবিএন 0-664-22475-X।
- ↑ Prentiss, p. 21.
- ↑ Sivananda, Swami (২০০৪)। Guru Bhakti Yoga। Divine Life Society। আইএসবিএন 8170521688।
- ↑ Vivekananda, Swami (১৯৭০)। The Complete Works of Swami Vivekananda। Advaita Ashrama। পৃষ্ঠা 62।
- ↑ Rinehart, Robin (২০০৪)। Contemporary Hinduism: ritual, culture, and practice। ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 45। আইএসবিএন 9781576079058।
- ↑ Prentiss, p. 5,
- ↑ Flood, Gavin (১৯৯৬)। An Introduction to Hinduism। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 131। আইএসবিএন 9780521438780।
- ↑ Flood, Gavin D. (২০০৩)। The Blackwell companion to Hinduism। Wiley-Blackwell। পৃষ্ঠা 185। আইএসবিএন 9780631215356।
- ↑ Neusner, p. 135.
- ↑ Neill, Stephen (২০০২)। A history of Christianity in India, 1707-1858। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 412। আইএসবিএন 9780521893329।
- ↑ Kelting, Mary Whitney (২০০১)। Singing to the Jinas: Jain laywomen, Maṇḍaḷ singing, and the negotiations of Jain devotion। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 87। আইএসবিএন 9780195140118।
অতিরিক্ত পাঠ
[সম্পাদনা]- Swami Chinmayananda, Love Divine – Narada Bhakti Sutra, Chinmaya Publications Trust, Madras, 1970
- স্বামী তপস্যানন্দ, Bhakti Schools of Vedanta, Sri Ramakrishna Math, Madras, 1990
- A.C. Bhaktivedanta Swami Prabhupada, Srimad Bhagavatam (12 Cantos), The Bhaktivedanta Book Trust,2004
- Steven J. Rosen, The Yoga of Kirtan: conversations on the Sacred Art of Chanting (New York: FOLK Books, 2008)