স্কন্দপুরাণ
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ |
---|
আনুষঙ্গিক ধর্মগ্রন্থ |
স্কন্দপুরাণ হল বৃহত্তম হিন্দু পুরাণ।[১] এই পুরাণটির মূল উপজীব্য শিব ও পার্বতীর পুত্র স্কন্দ বা কার্তিকের লীলা। এছাড়াও এই পুরাণে শিব ও শৈব তীর্থস্থান সংক্রান্ত অনেক উপাখ্যান রয়েছে। হিন্দু কিংবদন্তি অনুসারে মহর্ষি ব্যাস এই পুরাণের রচয়িতা। এটি বিভিন্ন স্থানে খণ্ডিত আকারে পাওয়া গিয়েছে।
বিষয়বস্তু
[সম্পাদনা]স্কন্দপুরাণের গোটা বইটি কীভাবে বিন্যস্ত সে নিয়ে দুটি মত আছে। একটি মতে, বইটি ছয়টি সংহিতায় বিভক্ত; প্রতিটি সংহিতা আবার একাধিক খণ্ডে বিভক্ত। অপর মতে, পুরাণটি সাতটি খণ্ডে বিভক্ত। স্কন্দপুরাণের বর্তমানে সুলভ মুদ্রিত সংস্করণগুলি হল বঙ্গবাসী প্রেস, কলকাতা, শ্রীভেঙ্কটেশ্বর প্রেস, বোম্বাই (১৯১০) ও এন. কে. প্রেস, লখনউ। এই সব কটি সংস্করণেই সাত খণ্ডে বইটি প্রকাশিত। যথা: মহেশ্বর, বিষ্ণু বা বৈষ্ণব, ব্রহ্ম, কাশী, আবন্ত্য, নাগর ও প্রভাস। [২] ১৯৯৯-২০০৩ সালে মোতিলাল বানারসিদাস, নতুন দিল্লি ২৩ খণ্ডে স্কন্দপুরাণের একটি ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করে। এটিও সাত খণ্ডে বিভক্ত।
খণ্ডসমূহ
[সম্পাদনা]মহেশ্বর খণ্ড তিনভাগে বিভক্ত। যথা:[২]
- কেদার খণ্ড (৩৫টি অধ্যায়)
- কৌমারিকা খণ্ড বা কুমারিকা খণ্ড (৬৬ অধ্যায়) এবং
- অরুণাচল খণ্ড বা অরুণাচল মাহাত্ম্য, এটি আবার দুই ভাগে বিভক্ত:
- পূর্বার্ধ (১৩টি অধ্যায়) ও
- উত্তরার্ধ (২৪টি অধ্যায়)
বিষ্ণুখণ্ড বা বৈষ্ণব খণ্ড নয়টি ভাগে বিভক্ত। যথা:[২]
- ভেঙ্কটাচলমাহাত্ম্য (৪০টি অধ্যায়)
- পুরুষোত্তমক্ষেত্রমাহাত্ম্য (৪৯টি অধ্যায়)
- বদরিকাশ্রমমাহাত্ম্য (৮টি অধ্যায়)
- কার্তিকমাসমাহাত্ম্য (৩৬টি অধ্যায়)
- মার্গশীর্ষমাসমাহাত্ম্য (১৭টি অধ্যায়)
- ভাগবতমাহাত্ম্য (৪টি অধ্যায়)
- বৈশাখমাসমাহাত্ম্য (১০টি অধ্যায়) এবং
- বাসুদেবমাহাত্ম্য (৩২টি অধ্যায়)
ব্রহ্মখণ্ড তিন ভাগে বিভক্ত। যথা:[২]
- সেতুমাহাত্ম্য (৫২টি অধ্যায়)
- ধর্মারণ্য খণ্ড (৪০টি অধ্যায় এবং
- ''উত্তরখণ্ড বা ব্রহ্মোত্তর খণ্ড (২২টি অধ্যায়)
কাশীখণ্ড দুই ভাগে বিভক্ত। যথা:[২]
- পূর্বার্ধ (৫০টি অধ্যায়) এবং
- উত্তরার্ধ (৫০টি অধ্যায়)
আবন্ত্যখণ্ড তিন ভাগে বিভক্ত। যথা:[২]
- অবন্তিক্ষেত্রমাহাত্ম্য (৭১টি অধ্যায়)
- চতুরষ্টিলিঙ্গমাহাত্ম্য (৮৪টি অধ্যায়) এবং
- রেবাখণ্ড (২৩২টি অধ্যায়)
নাগরখণ্ড (২৭৯টি অধ্যায়) অংশটিতে তীর্থমাহাত্ম্য আছে।[২]
প্রভাসখণ্ড (৪৯১টি অধ্যায়) অংশে আছে:[২]
- প্রভাসক্ষেত্রমাহাত্ম্য (৩৬৫টি অধ্যায়)
- বস্ত্রাপথক্ষেত্রমাহাত্ম্য (১৯টি অধ্যায়)
- অর্বুদখণ্ড (৬৩টি অধ্যায়) এবং
- দ্বারকামাহাত্ম্য (৪৪টি অধ্যায়)
সংহিতাসমূহ
[সম্পাদনা]অন্যমতে, স্কন্দপুরাণ ছয়টি সংহিতায় বিভক্ত। এই মত অনুসারে, এই পুরাণটি অগস্ত্য সংহিতা বা শংকরী সংহিতার হালস্যমাহাত্ম্য, শঙ্করী সংহিতার সম্ভবখণ্ড, সূতসংহিতার শিবমাহাত্ম্য খণ্ড এবং সনৎকুমার সংহিতার কালিকাখণ্ড অংশে পাওয়া যায়। এই গ্রন্থগুলির মতে, স্কন্দপুরাণ ছয়টি সংহিতায় বিভক্ত। যথা:
- সনৎকুমার সংহিতা,
- সূত সংহিতা,
- শঙ্করী সংহিতা,
- বৈষ্ণবী সংহিতা,
- ব্রাহ্মী সংহিতা এবং
- সৌর সংহিতা।
সনৎকুমার সংহিতা, শঙ্করী সংহিতা, সূত সংহিতা ও সৌর সংহিতার পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়। মধ্বাচার্য লিখিত সূত সংহিতার একটি ভাষ্যেরও পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়।[২]
অন্যান্য অংশ
[সম্পাদনা]এগুলি ছাড়াও একাধিক বইকে স্কন্দপুরাণের অংশ বলে দাবি করা হয়। এগুলি সম্পূর্ণ বা খণ্ডিত আকারে পাওয়া যায়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য। হিমবৎ খণ্ড (নেপালমাহাত্ম্য যার অংশ) (৩০টি অধ্যায়), কনকাদ্রি খণ্ড, ভীমখণ্ড, শিবরহস্য খণ্ড, সহ্যাদ্রিখণ্ড, অযোধ্যাখণ্ড, মথুরাখণ্ড ও পাতালখণ্ড।[২]
জনপ্রিয় কাহিনিসমূহ
[সম্পাদনা]স্কন্দপুরাণে বর্ণিত জনপ্রিয় পৌরাণিক গল্পগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- প্রজাপতি দক্ষের যজ্ঞ।
- সমুদ্রমন্থন ও অমৃতের উত্থান।
- তারকাসুরের গল্প।
- পার্বতীর জন্ম ও শিববিবাহ।
- কার্তিকের জন্ম
- কার্তিক কর্তৃক তারকাসুর বধ।
- প্রলম্বাসুর বধ।
- শুম্ভ, নিশুম্ভ ও মহিষাসুর বধ।
- বিষ্ণুকুণ্ডের কথা।
- পদ্মাবতীর গল্প।
- শিব ও স্কন্দের তীর্থগুলির বর্ণনা।
- ত্রিশঙ্কু ও ঋষি বিশ্বামিত্রের গল্প।
- নরকগুলির বর্ণনা।
- জ্যোতির্লিঙ্গ বর্ণনা।
- নবদুর্গা বর্ণনা।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- Mani, Vettam. Puranic Encyclopedia. 1st English ed. New Delhi: Motilal Banarsidass, 1975.
- G. V. Tagare, Dr. The Skanda-Purana (23 Vols.), Motilal Banarsidass. 2007.