বিষ্ণু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষ্ণু
পালনকর্তা
Vishnu Kumartuli Park Sarbojanin Arnab Dutta 2010.JPG
দেবনাগরীविष्णु
অন্তর্ভুক্তিদেব (ত্রিমূর্তি)
আবাসবৈকুণ্ঠ
মন্ত্রॐ नमो नारायणाया
ওঁ নমঃ নারায়ণায়
অস্ত্রশঙ্খ, সুদর্শন চক্র , কৌমোদকী গদা ও পদ্ম। এছাড়াও নারায়ণাস্ত্র, বৈষ্ণবাস্ত্র[১]
প্রতীকসমূহশালিগ্রাম শিলা, পদ্ম, সুদর্শন চক্র, শঙ্খ
বাহনগরুড় (ঋষি বিনতার পুত্র)[১]
উৎসবহোলি, রাম নবমী, কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী, নরসিংহ জয়ন্তী[২]
সঙ্গীলক্ষ্মী

বিষ্ণু (সংস্কৃত: विष्णु) হিন্দুধর্মের দেবতা এবং ত্রিমূর্তির অন্যতম সদস্য, বিষ্ণু বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতিপালক রূপেও পরিচিত এছাড়াও তিনি বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ দেবতা। আদি শঙ্কর প্রমুখ পণ্ডিতদের মতে, বিষ্ণু ঈশ্বরের পাঁচটি প্রধান রূপের অন্যতম।[৩][৪][৫]

বিষ্ণু সহস্রনামে [৬] পুরাণ অনুসারে, বিষ্ণুর গাত্রবর্ণ ঘন মেঘের ন্যায় নীল (ঘনশ্যাম); তিনি চতুর্ভূজ এবং শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্ম ধারী। ভগবদ্গীতা গ্রন্থে বিষ্ণুর বিশ্বরূপেরও বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।[৭]

পুরাণে বিষ্ণুর দশাবতারেরও বর্ণনা রয়েছে। বিষ্ণুর এই দশ প্রধান অবতারের মধ্যে নয় জনের জন্ম অতীতে হয়েছে এবং এক জনের জন্ম ভবিষ্যতে কলিযুগের শেষলগ্নে হবে বলে হিন্দুরা বিশ্বাস করেন। বিষ্ণু সহস্রনামে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার উক্তিতে বিষ্ণুকে "সহস্রকোটি যুগ ধারী" বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর অর্থ, বিষ্ণুর অবতারগণ সকল যুগেই জন্মগ্রহণ করে থাকেন। ভগবদ্গীতা অনুসারে, ধর্মের পালন[৮] এবং দুষ্টের দমন ও পাপীর ত্রাণের জন্য বিষ্ণু অবতার গ্রহণ করেন। হিন্দুদের প্রায় সকল শাখাসম্প্রদায়ে, বিষ্ণুকে বিষ্ণু বা রাম, কৃষ্ণ প্রমুখ অবতারের রূপে পূজা করা হয়।[৯]

হিন্দুধর্মের ত্রিমূর্তি[১০][১১] ধারণায় ব্রহ্মাকে বিশ্বচরাচরের সৃষ্টির প্রতীক, বিষ্ণুকে স্থিতির প্রতীক ও শিবকে ধ্বংসের প্রতীক রূপে কল্পনা করা হয়েছে। গীতা মতে, বিষ্ণুদেব হস্তমুদ্রাযুক্ত (তর্জনী ও বৃদ্ধাঙ্গুলির সমন্বয়ে উৎপন্ন একপ্রকার মুদ্রা), পদ্মপাতার মতো বিকশিত চক্ষু বা জ্ঞানচক্ষুবিশিষ্ট। [১২][১৩]

ব্যুৎপত্তি[সম্পাদনা]

onushilon.org মতে, বিষ্ণু বানান বিশ্লেষণ: ব্+ই+ষ্+ণ্+উ। উচ্চারণ: biʃ.nu (বিশ্.নু)

শব্দ-উৎস: সংস্কৃত विष्णुः (বিষ্ণুঃ)>বাংলা বিষ্ণু। রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ: √বিষ্ (ব্যাপ্ত হওয়া) + ণু্, কর্তৃবাচ্য।

বেদে বিষ্ণু[সম্পাদনা]

বেদের বিষ্ণু মূলত সূর্য বা সবিতা। সূর্যদেবের বার রবিবার হলো বিষ্ণুবার।

বিষ্ণুদেবের প্রণাম মন্ত্র:

"ওঁ নমো ব্রহ্মণ্যদেবায় গোব্রাহ্মণহিতায় চ। জগদ্ধিতায় কৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ।।"

পুরাণে বিষ্ণু[সম্পাদনা]

বিষ্ণুর প্রণাম মন্ত্র[সম্পাদনা]

ওঁ ত্রৈলোক্য পূজিত শ্রীমন সদা বিজয় বর্দ্ধন।

শান্তিং কুরু গদাপানে নারায়ণায় নমোঽস্তুতে।।

দশাবতার[সম্পাদনা]

বিষ্ণুর দশ মুখ্য অবতারের সমষ্টিগত নামই দশাবতার। এই দশাবতারের কথা জানা যায় গরুড় পুরাণ থেকে।[১৪] এই দশ অবতার মানব সমাজে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তির ভিত্তিতে সর্বাপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হন। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, প্রথম চার অবতারের আবির্ভাবকাল সত্যযুগ। পরবর্তী তিন অবতার ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ হন। অষ্টম ও নবম অবতারের আবির্ভাবকাল যথাক্রমে দ্বাপরযুগকলিযুগ। দশম অবতার কল্কির আবির্ভাব ৪২৭,০০০ বছর পর কলিযুগের অন্তিম পর্বে ঘটবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে।[১৫] বিষ্ণুর দশ অবতারগুলো হচ্ছে:

১. মৎস্য - মাছরূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
২. কূর্ম - কচ্ছপের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
৩. বরাহ - বন্য শূকরের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
৪. নৃসিংহ - অর্ধনরসিংহরূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
৫. বামন - খর্বকায় বামনের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ
৬. পরশুরাম - পরশু অর্থাৎ কুঠারধারী রামের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ
৭. রাম - অযোধ্যার যুবরাজ ও রাজা রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ
৮. কৃষ্ণ - দ্বাপরযুগে জ্যেষ্ঠভ্রাতা বলরাম সাথে অবতীর্ণ। ভাগবত পুরাণ অনুসারে দ্বাপরযুগে অনন্ত নাগের অবতার বলরাম রূপে কৃষ্ণের সঙ্গে অবতীর্ণ হন। অধিকাংশ বৈষ্ণব শাখাসম্প্রদায় বলরামকে বিষ্ণুর অবতার বলে মনে করেন। যে সকল সূত্রে বুদ্ধের কোনো উল্লেখ নেই সেখানে বলরামকেই বিষ্ণুর নবম অবতার রূপে দশাবতারের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
৯. বুদ্ধ - কলিযুগে বিষ্ণুর নবম অবতার হিসেবে অবতীর্ণ।
১০. কল্কি - এই ভবিষ্যৎ অবতার কলিযুগের শেষ পর্বে অবতীর্ণ হবেন বলে হিন্দুরা মনে করেন।
দশাবতার (পুথিচিত্র): (বামদিক থেকে) মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, বলরাম, বুদ্ধ, কল্কি।

বৈষ্ণব[সম্পাদনা]

যারা বিষ্ণুর উপাসনা করেন, তাদের বৈষ্ণব বলা হয়। শ্রীচৈতন্য বঙ্গদেশে গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের প্রবর্তন করেন। সাহিত্য, চিত্রকলা, ভাস্কর্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিষ্ণু সুবিদিত। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বিভিন্ন মন্দির ও জাদুঘরে বিষ্ণুর অনেক মূর্তি আছে।[১৬]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

টীকা[সম্পাদনা]

  • Translation by Richard W. Lariviere (১৯৮৯)। The Nāradasmr̥ti। University of Philadelphia। 
  • Patrick Olivelle. "The Date and Provenance of the Viṣṇnu Smṛti." Indologica Taurinensia, 33 (2007): 149-163.

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Constance Jones; James D. Ryan (২০০৬)। Encyclopedia of Hinduism। Infobase Publishing। পৃষ্ঠা 491–492। আইএসবিএন 978-0-8160-7564-5 
  2. Muriel Marion Underhill (১৯৯১)। The Hindu Religious Year। Asian Educational Services। পৃষ্ঠা 75–91। আইএসবিএন 978-81-206-0523-7 
  3. The Sri Vaishnava Brahmans, K. Rangachari (1931)p. 2
  4. A. Berridale Keith, The Yajur Veda - Taittiriya Sanhita 1914, full text
  5. The Sanhitâ of the Black Yajur Veda with the Commentary of Mâdhava ‘Achârya, Calcutta (Bibl. Indica, 10 volumes, 1854-1899)
  6. Sri Vishnu Sahasaranama - Transliteration and Translation of Chanting
  7. Prabhupada, AC Bhaktivedanta। "Bhagavad-gita As It Is Chapter 11 Verse 3"। vedabase.net। ২০০৮-০৫-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৫-১০  "see the cosmic manifestation"
  8. Bhagavad Gita 4.7 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে "...at that time I descend Myself"
  9. Matchett, Freda (২০০০)। Krsna, Lord or Avatara? the relationship between Krsna and Visnu: in the context of the Avatara myth as presented by the Harivamsa, the Visnupurana and the Bhagavatapurana। Surrey: Routledge। পৃষ্ঠা 254। আইএসবিএন 0-7007-1281-X  p. 4
  10. For definition of trimurti as "the unified form" of Brahmā, Viṣṇu and Śiva and use of the phrase "the Hindu triad" see: Apte, p. 485.
  11. For the term "Great Trinity" in relation to the Trimurti see: Jansen, p. 83.
  12. For quotation defining the trimurti see Matchett, Freda. "The Purāṇas", in: Flood (2003), p. 139.
  13. For the Trimurti system having Brahma as the creator, Vishnu as the maintainer or preserver, and Shiva as the transformer or destroyer see: Zimmer (1972) p. 124.
  14. গরুড় পুরাণ (১।৮৬।১০,১১)
  15. B-Gita 8.17 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে "And finally in Kal-yuga (the yuga we have now been experiencing over the past 5,000 years) there is an abundance of strife, ignorance, irreligion and vice, true virtue being practically nonexistent, and this yuga lasts 432,000 years. In Kali-yuga vice increases to such a point that at the termination of the yuga the Supreme Lord Himself appears as the Kalki avatara"
  16. http://bn.banglapedia.org/index.php?title=বিষ্ণু

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]