হিন্দু নিধন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(হিন্দু্দের উপর উৎপীড়ন থেকে পুনর্নির্দেশিত)

হিন্দু নিধন বলতে বিভিন্ন সময়ে অন্য ধর্মের হাতে হিন্দু ধর্মালম্বিদের নিহত হওয়ার ঘটনাসমূহকে অভিহিত করা হয়। হিন্দুরা যুগ যুগ ধরে এই নিপীড়ন ও নিষ্পেষণের স্বীকার হয়েছে। এদের মধ্যে জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ, নথিভুক্ত গণহত্যা, মন্দির ও ধর্মীয় স্থান ধ্বংস করা, এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা উল্লেখিত।

হিন্দু নিধনের সংজ্ঞা[সম্পাদনা]

হিন্দু নিধন হচ্ছে হিন্দুদের ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে তাদের (ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর) সাথে পদ্ধতিগত ও বিভিন্ন ভাবে দুর্ব্যবহার বা অত্যাচার।[১] এই নিয়মতান্ত্রিক দুর্ব্যবহার এক ধরনের গোষ্ঠী বা উপ-সংস্কৃতির বিচ্ছিন্নতা । যা হিন্দু ইতিহাসের একটি দুঃখজনক এবং পুনরাবৃত্তিমূলক ব্যাপার । এতে একদল ভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসের লোকেরা হিন্দুধর্মের কাউকে তাদের নিজস্ব নৈতিক ও ব্যক্তিগত পরিচয়ের অনুভূতি থেকে আলাদা করে দেখে।[২] তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে হিন্দুদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। তাদের কষ্ট দেয়,হত্যা করে,নারী ধর্ষণ ও অপহরণ করে, হয়রানি করে, ভয় দেখায়, ব্যথা দেয়,ধর্মা‌নুভূতিতে আঘাতের মিথ্যা অভিযোগে কারাবাস করায়।[৩][৪] হিন্দুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা অস্বীকার করে বা সীমাবদ্ধ করে। এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রীয় সমর্থিত কাজ যেমন ধর্মীয় প্রতীককে কলুষিত করা,মন্দির, প্রতিমা ধ্বংস করা ও অগ্নিসংযোগ করা।[৫] এছাড়া যুদ্ধের সময় ও দাঙ্গার সময় দাঙ্গা করে হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি দখল করা।[৬]


মুসলমান শাসকদের দ্বারা মধ্যযুগের হিন্দু নিধন[সম্পাদনা]

১৮৬৯ সালের সোমনাথ মন্দির। যার উপর বার বার আক্রমণ হয়েছে

ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম আক্রমণ শুরু হয়েছিল খ্রিস্টীয় ৮ম শতাব্দীর প্রথমদিকে। মির্জা কালিচবেগ ফ্রেডুনবেগের ১৯০০ সালের ফারসি পাঠ চাচনামার অনুবাদ অনুসারে, সিংহলে ব্যবসা উপলক্ষে অবস্থানরত কয়েকজন আরব বণিকের মৃত্যু হলে সিংহলরাজ মৃত বণিকদের পরিবার-পরিজন ও হাজ্জাজ-বিন-ইউসুফের জন্য কিছু উপঢৌকন ৮টি জাহাজ যােগে বসরায় প্রেরণ করেন। কিন্তু জাহাজগুলো সিন্ধু উপকুলে দেবল বন্দরে পৌঁছলে কিছু সংখ্যক জলদস্যু কর্তৃক তা লুণ্ঠিত ও মৃত বণিকদের পরিবার-পরিজন বন্দি হয়।[৭] ইরাকের উমাইয়া প্রশাসক হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর জবাব দেয়ার অজুহাতে রাজা দাহিরের সিন্ধু রাজ্য আক্রমণ করে।[৮] তখন ৭১২ সালে হাজ্জাজ ৬,০০০ অশ্বরোহী নিয়ে আক্রমণ চালায়,মন্দির ধ্বংস করে, সিন্ধি বাহিনীকে হারিয়ে হিন্দু গণহত্যা করে ও তাদের দাসে পরিণত করেছিল ।[৯] পরে হাজ্জাজ অন্য হিন্দু ও বৌদ্ধ রাজাদের দ্বারা পরিচালিত রাজ্যগুলিতে আক্রমণ করেছিল,সম্পদ লুন্ঠিত হয়েছিল এবং হিন্দুরা জিম্মি হয়েছিল। মুসলিম সেনাবাহিনী অসংখ্য হিন্দু জাটকে যুদ্ধবন্দী হিসাবে বন্দী করে ইরাক ও অন্যত্র দাস হিসাবে স্থানান্তরিত করে।

ইউরোপিয়ানদের হাতে নিধন[সম্পাদনা]

পর্তুগিজ শাসনে গোয়া[সম্পাদনা]

ফ্রান্সিস জেভিয়ার যে ১৫৪৫ সালে ইনকুইজেশনের কথা বলেছিল

গোয়ার পর্তুগিজ শাসনের সময় হাজার হাজার হিন্দুদের খ্রিস্টধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা হয়েছিল। আইন পাস করার ফলে হিন্দুদের ধর্ম পালনে অসুবিধা হয়েছিল। মিথ্যা অভিযোগ ও ক্ষুদ্র অভিযোগে তাদের হয়রানি করা হতো।[১০] গোয়া ইনকুইজেশন ১৫৬০ সালে পর্তুগিজ শাসিত ভারতে পর্তুগিজ মিশনারিদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গোয়া ইনকুইজিশন জোর পূর্বক ধর্মান্তরিত গুপ্ত হিন্দুদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছিল । এটিতে রেকর্ড করা হয়েছে যে কমপক্ষে ৫৭ গোয়ান হিন্দুদের ১৫৬০ সাল থেকে শুরু করে তিনশ বছরের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।[১১][১২]এটির প্রস্তাব সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার করেছিল।[১৩][১৪]

গোয়ায় পর্তুগিজদের অধীনে হিন্দুরা অত্যন্ত নিপীড়নের মুখোমুখি হয়েছিল।[১৫]ভিকার জেনারেল মিগুয়েল ওয়াজ ১৫৪৩ সালে গোয়া থেকে পর্তুগালের রাজা জন তৃতীয়কে চিঠি লিখে বলেছিল যে গোয়াতেও স্পেনের মত ইনকুইজিশন প্রতিষ্ঠা করা হোক। তিন বছর পরে ফ্রান্সিস জেভিয়ার রাজাকে একই কথা বলে। এরপরেই গোয়ায় ইনকুইজেশন শুরু হয়। খ্রিস্টধর্ম প্রচারের নামে বাড়াবাড়ি শুনে রোমের পর্তুগিজ রাষ্ট্রদূত লুরেনকো পাইরেস রাজার প্রতি তার অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন । তিনি তাকে সতর্ক করে বলেছিলেন যে খ্রিস্টধর্মের নামে এই অত্যাচার আসলে ধর্ম এবং রাজ্যের অপকার করছে । ইনকুইজিশন পূর্ব দিকে পর্তুগিজ সাম্রাজ্যকে পতনের দিকে পরিচালিত করে।[১৫]

দক্ষিণ এশিয়া[সম্পাদনা]

মুসলিম শাসনের অবসানের পর থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায় একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্যে বসবাস করছে। হিংসাত্মক সংঘর্ষ প্রায়ই দেখা গেছে এবং ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির ফলে এই দ্বন্দ্ব স্থায়ী হয়েছে।

ভারত[সম্পাদনা]

কাশ্মীর[সম্পাদনা]

ঐতিহাসিকভাবে কাশ্মীর ভারতীয় সংস্কৃতি, ধর্ম এবং সাহিত্যের কেন্দ্রস্থল। কিন্তু এই এলাকায় কাশ্মীরি পণ্ডিত হিন্দুরা শতাব্দী ধরে অত্যাচারের শিকার হয়, জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত হয় এবং স্বাধীনতার আগে ও পরে এসবের শিকার হতে থাকে। ইসলামি উগ্রবাদীরা অবশিষ্ট অল্প সংখ্যক হিন্দুদের উপত্যকা থেকে বিতাড়িত করে। হিন্দুরা গৃহহীন হয়ে জম্মু ও দিল্লিতে শরণার্থী হিসেবে আজও দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। ১৯৮০ সালের পর মুসলিম জঙ্গিরা সেখানে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নির্মমভাবে হত্যা করে যারা কয়েক শতাব্দী ধরে সেখানে বসবাস করছিল। হাজার হাজার হিন্দু শিশু অনাথ হয়। মুসলিম জঙ্গিরা কাশ্মীর এবং জম্মুতে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের উপর হামলা চালায়। [১৬][১৭] হিন্দুদের অনেকেই কাশ্মীর ছেড়ে অন্য রাজ্যে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়। অনেক ক্ষেত্রে বাস ও ট্রেনে ভ্রমণকারী যাত্রীদের নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১৯৯৮ ওয়ানধামা গণহত্যা এমন একটি উদাহরণ। এ ঘটনায় ভারতীয় সেনাদের ছদ্মবেশে মুসলিম জঙ্গিদের হাতে ২৪ জন কাশ্মীরি হিন্দু নিহত হন। অমরনাথের মন্দিরে হামলা হিন্দুদের উপর অত্যাচারের আরেকটি উদাহরণ।

পাকিস্তান[সম্পাদনা]

হিন্দুরা পাকিস্তানে নির্যাতিত সংখ্যালঘু ধর্মগুলির মধ্যে একটি। ১৯৯০ এর দশক থেকে পাকিস্তানে ইসলামী জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে । এতে হিন্দুদের মতো ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ইসলামী জঙ্গিদের সাথে নিপীড়নের শিকার হচ্ছে ও আগের দশকের তুলনায় অধিকতর নিপীড়ন ভোগ করছে । তাদের উপর আক্রমণ হচ্ছে এবং তাদের জোরপূর্বক ধর্মান্তর করা হচ্ছে ।[১৮][১৯][২০]

বাংলাদেশ[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের গণহত্যার মানব অবশেষ এবং যুদ্ধের উপাদান-মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর-ঢাকা-বাংলাদেশ

১৯৭১এর বাংলাদেশের গণহত্যা[সম্পাদনা]

১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানি নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ দলের উত্থান বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সূচনা করে। ফলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে তথা বাংলাদেশে হিন্দুদের গণহত্যা করে। [২১][২২][২৩]পশ্চিমবঙ্গে এক কোটিরও বেশি শরণার্থী বাঙালি হিন্দু আসে।[২৪] ভারতীয় সেনাবাহিনী মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা করে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে।

একাত্তর পরবর্তী ঘটনা[সম্পাদনা]

কিন্তু শীঘ্রই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেদেশে হিন্দুদের উপর পুনরায় নিপীড়ন শুরু হয়। ১৯৭১ সালের পর অনেক বাঙালি হিন্দু ভারতে শরণার্থী হিসেবে চলে আসে মুসলমানদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে।[২৫] সেখানে অবশিষ্ট হিন্দুদের বিরুদ্ধে অকথ্য অত্যাচার করা হয়। মন্দিরগুলি ভেঙে ফেলা হয়। নারীদের অপহরণ ও ধর্ষণ করা হয়।[২৬][২৭] "লজ্জা" উপন্যাসে লেখিকা তসলিমা নাসরিন হিন্দুদের উপর হওয়া সহিংসতা এবং বাংলাদেশে হিন্দু নারীর প্রতি অত্যাচারের প্রতিবাদ করেন। ফলে তাকে ফতোয়া জারি করে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়।[২৮].

ভুটান[সম্পাদনা]

১৯৯১-৯২ সালে ভুটান সরকার লক্ষ লক্ষ নেপালি হিন্দুকে নেপালে বিতাড়িত করেছিল। সেখানে তারা সবাই শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছে। এছাড়া তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড দেশে আশ্রয় নেয়।[২৯].

শ্রীলঙ্কা[সম্পাদনা]

এখানে বৌদ্ধরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। গৃহযুদ্ধে তামিল হিন্দু নিপীড়নে শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শ্রীলঙ্কায় তামিল হিন্দুরা নিয়মিত বৌদ্ধ চরমপন্থিদের নিগ্রহের স্বীকার হয়। শ্রীলঙ্কায় তামিল বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল হিন্দু তামিলদের উপর বৌদ্ধ চরমপন্থিদের নিগ্রহ।[৩০][৩১]

আফগানিস্তান[সম্পাদনা]

জনসংখ্যা গবেষণা পণ্ডিত আশীষ বসুর মতে ১৯৮০ এর দশকের পর আফগানিস্তানে ইসলামী মৌলবাদের উত্থানের সাথে সাথে হিন্দুরা "তীব্র ঘৃণার" শিকার হয়ে ওঠে। [৩২] তাদেরকে দেশত্যাগে এবং অন্য দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করা হয়।[৩৩][৩২] নির্যাতিত হিন্দুদের মধ্যে অনেকেই ১৯৯২ সালে এবং এরপরে ভারতে শরণার্থী হিসেবে আসতে শুরু করে।[৩২][৩৩][৩২][৩২][৩৪]ভারতে ঐতিহাসিকভাবে নির্যাতিত হিন্দুদের শরণার্থীদের জন্য নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন, ২০১৯ তৈরি করা হয়েছে।

তালেবান শাসনে সমপতন আইন ২০০১ সালে পাস করা হয়েছিল যাতে হিন্দুদের চিহ্নিত করতে জনসমক্ষে হলুদ ব্যাজ পরতে বাধ্য করা হয়। এটি হিটলারের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানিতে ইহুদিদের সাথে করা আচরণের অনুরূপ । [৩৫] হিন্দু মহিলাদের ইসলামী হিজাব পরতে বাধ্য করা হয়েছিল। যাকে তালেবানরা তাদের হয়রানি থেকে "রক্ষা" করার একটি ব্যবস্থা বলে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা করে। এটি ছিল তালেবানদের "অইসলামিক" এবং "প্রতিমাপূজক" হিন্দুদেরকে মুসলিম সম্প্রদায়ের থেকে আলাদা করার পরিকল্পনার অংশ।[৩৬] তবে কিছু প্রতিবাদের পর তালেবান বাধ্য হয়ে এই নীতি পরিত্যাগ করে। [৩৭]


ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন হিসেবে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ফরমানের নিন্দা করেছিল।[৩৮] ভারতের ভোপালে তালেবান শাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অ্যান্টি-ডিফেমেশন লীগের চেয়ারম্যান আব্রাহাম ফক্সম্যান একে নাৎসি জার্মানির শাসনের সাথে তুলনা করেন। যেখানে ইহুদিদের লেবেল পরা প্রয়োজন ছিল যা তাদের চিহ্নিত করত এবং [265]এর তুলনা করে ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্রেট ও ইহুদি গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া টম ল্যান্টোস এবং নিউইয়র্ক ডেমোক্র্যাট ও দ্বি-পক্ষীয় 'সেন্স অফ দ্য কংগ্রেস' -এর লেখক হিন্দু-বিরোধী ফরমান এলিয়ট এল এঙ্গেলের দ্বারা ছবি আঁকা হয়েছিল। [৩৯][৩৫]

১৯৯০ এর দশক থেকে অনেক আফগান হিন্দু দেশ ছেড়ে পালিয়ে জার্মানির মতো দেশে আশ্রয় চেয়েছে।[৪০]

মালেশিয়া[সম্পাদনা]

মালয়েশিয়ার জনসংখ্যার প্রায় নয় শতাংশ ভারতীয় তামিল। যাদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ১৯ শতাব্দীর শেষের দিকে এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ভারতীয় তামিল হিন্দুরা তামিলনাড়ু থেকে মালয়েশিয়ায় এসেছিল। ২০০৬ সালের এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে সহিংসতার সঙ্গে এই দেশের সিটি হল কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকটি হিন্দু মন্দির ভেঙে ফেলে ।[৪১]২০০৬ সালের ২১ এপ্রিল কুয়ালালামপুরের মালাইমেল শ্রী সেলভা কালিয়াম্মান মন্দির ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় যখন সিটি হল কর্তৃপক্ষ বুলডোজার দিয়ে মন্দিরটি ভেঙে ফেলে।[৪২]

সেলাঙ্গোর রাজ্যের সুবাং এবং শাহ আলমের ভোক্তা সমিতির সভাপতি মুসলিম অধ্যুষিত শহর শাহ আলমের স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে ১০৭ বছরের পুরনো হিন্দু মন্দির ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে। মালয়েশিয়ার ক্রমবর্ধমান ইসলামীকরণ অনেক মালয়েশিয়ানদের জন্য উদ্বেগের কারণ যারা হিন্দু ধর্মের মত সংখ্যালঘু ধর্ম অনুসরণ করে।[৪৩]২০০৬ সালের ১১ মে কুয়ালালামপুরের সশস্ত্র সিটি হল অফিসাররা ৬০০ বছরের পুরনো শহরতলির মন্দিরের একটি অংশ জোর করে ভেঙে ফেলে যা এক হাজারেরও বেশি হিন্দুদের উপাসনাস্থল। এর ফলে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ দায়ের করে বেশ কয়েকটি এনজিও'র জোট "হিন্দু রাইটস অ্যাকশন ফোর্স" এই ধ্বংসের প্রতিবাদ করে। [৪৪]একে মালয়েশিয়ায় মন্দির ধ্বংস করার একটি পরিকল্পিত পরিকল্পনা বলে অনেক হিন্দু অ্যাডভোকেসি গ্রুপ প্রতিবাদ করে। মালয়েশিয়া সরকার মন্দির ভাঙ্গার অজুহাত দেয় যে মন্দিরগুলি নাকি "অবৈধভাবে" নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু ভেঙে ফেলা বেশ কয়েকটি মন্দির শতাব্দী প্রাচীন ছিল।[৪৪] হিন্দু রাইটস অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের একজন আইনজীবীর মতে, মালয়েশিয়ায় প্রতি তিন সপ্তাহে একবার হিন্দু মন্দির ভেঙে ফেলা হয়। [৪৫]

মালয়েশিয়ার মুসলমানরাও বছরের পর বছর তীব্র হিন্দু বিরোধী হয়ে উঠেছে। সেলাঙ্গরে একটি মন্দিরের প্রস্তাবিত নির্মাণের প্রতিক্রিয়ায় মুসলিম উগ্রবাদীরা একটি গরুর মাথা কাটে। তারা বলে যে শাহ আলমে মন্দিরটি নির্মিত হলে রক্ত ​​ঝরবে।[৪৬] এই দেশে আইন ও বিশেষ করে ধর্মীয় পরিচয় সম্পর্কিত নানা ভাবে হিন্দুদের উপর চাপ প্রয়োগ করে ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য বাধ্য করে। [৪৭]

মায়ানমার[সম্পাদনা]

খা মং সিক গণহত্যায় নিহত পরিবারের সদস্যদের মৃতদেহ শনাক্ত করতে হিন্দু গ্রামবাসী জড়ো হয়।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উত্তর মংডু জেলার খ মং সেক নামে পরিচিত একটি গুচ্ছের গ্রামগুলি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ) রোহিঙ্গা মুসলমানদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায় যে সেদিন প্রায় ৯৯ জন বাঙালি হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছিল।[৪৮][৪৯]এরা নিজেদেরকে চাটগাইয়া হিন্দু হিসেবে দেয়।[৫০] মায়ানমারে এবং বাংলাদেশী শরণার্থী শিবিরে বাঙালি হিন্দুরা (বিশেষ করে মহিলারা) রোহিঙ্গাদের হাতে অপহরণ এবং জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত হয় ।[৫১]

কাজাকিস্তান[সম্পাদনা]

২০০৫-০৬ সালে কাজাখ সরকার আলমাটির কাছে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের আশ্রম ও সদস্যদের বাড়ি জোর করে উচ্ছেদ করে। সম্প্রদায়ের সদস্যদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়।[৫২]

সৌদি আরব[সম্পাদনা]

আরবে যারা মুসলিম নয় তাদের কোন ধর্মীয় অধিকার নেই। ধর্মীয় পোশাকে অন্য় ধর্মের লোকেরা নিষিদ্ধ। বাড়ির ভিতরে বা বাইরে অন্য ধর্মের দেবতাকে রাখা বা অন্য ধর্ম সম্পর্কিত জিনিস রাখা অপরাধ। নিয়মলঙ্ঘনকারীদের কারাদণ্ড এবং বেত্রাঘাতের মতো শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়।[৫৩].২০০৫ সালের ২৪ মার্চ সৌদি কর্তৃপক্ষ রিয়াধের একটি অ্যাপার্টমেন্টে পাওয়া অস্থায়ী হিন্দু মন্দিরের ধর্মীয় জিনিসপত্র ধ্বংস করে।[৫৪]

আমেরিকা[সম্পাদনা]

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ০.৭% হিন্দু।[৫৫] তারা আমেরিকার সবচেয়ে সমৃদ্ধ ধর্মীয় গোষ্ঠী। [৫৬][৫৭] আমেরিকায় হিন্দুদের আইনী এবং মৌলিক উভয় অধিকার রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও হিন্দুরা সেখানে হিন্দু বিদ্বেষের শিকার হয়। ১৯৮৭ সালে নিউ জার্সিতে "ডটবাস্টারস" নামে একটি গ্যাং দ্বারা ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিন্দুদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক হুমকি দেয়া এবং হামলা করা হয়েছিল। এই গ্যাং এর নামটির উৎপত্তি হয়েছে ঐতিহ্যগতভাবে ভারতীয় হিন্দু মহিলাদের কপালে পরা টিপ থেকে।[৫৮]

১৯৮৭ সালের অক্টোবরে এই গ্যাং এর একদল যুবক পার্সি বংশোদ্ভূত ভারতীয় পুরুষ নওরোজ মোদীকে আক্রমণ করে। যাকে হিন্দু বলে ভাবা হয়েছিল। কিন্তু তিনি জরথুস্ত্রীয়। যখন তিনি তার বন্ধুর সাথে গোল্ড কোস্ট ক্যাফে ছেড়ে বের হচ্ছিলেন। আক্রমণের ফলে তিনি কোমায় চলে যান। চার দিন পরে তিনি মারা যান। হামলার চারজন অপরাধী ছিল লুইস অ্যাসেভেদো, রালফ গঞ্জালেজ এবং লুইস প্যাডিলা । যারা তীব্র আক্রমণের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল এবং উইলিয়াম অ্যাসেভেদো সাধারণ আক্রমণের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়। এই হামলায় হাত,পা এবং একটি বেসবল ব্যাট বা ইট দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। দোষীদের বয়স দশ থেকে বারোজন যুবক নওরোজকে ঘিরে ধরে এবং কটূক্তি করে। টাকের জন্য তাকে "কোজাক" বা "বাল্দি" বলে উত্যক্ত করা হয়। নওরোজের বাবা জামশেদ মোদি পরে নিউ জার্সির হবোকেন শহর এবং পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। কারণ চতুর্দশ সংশোধনীর অধীনে আমেরিকান ভারতীয়দের বিরুদ্ধে চালানো সহিংসতায় হবোকেন পুলিশের উদাসীনতা এই ধরনের লোকদের উৎসাহ দিচ্ছে । এতে নওরোজ মোদীর নিরাপত্তা অধিকারের লঙ্ঘন হয়েছে। কিন্তু আদালত রায় দেয় যে এই হামলা ঘৃণ্য অপরাধ নয়। এতে নগর পুলিশ বা প্রসিকিউটরের কোনো দোষ ছিল না।[৫৯]

নওরোজ মোদির উপর আক্রমণের কিছুদিন পর এক ভারতীয় হিন্দুকে আক্রমণ করা হয়। তিনিও কোমায় চলে যান। এবার ঘটনার স্থান জার্সি সিটি হাইটসের ব্যস্ত রাস্তার কোণে। পুলিশ রিপোর্ট থেকে জানা যায় কৌশল সারানকে একটি সিটি পার্ক এবং ফায়ারহাউসের কাছে সেন্ট্রাল অ্যান্ড ফেরি অ্যাভেনিউতে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায়। তিনি ভারতের একজন লাইসেন্সধারী চিকিৎসক যিনি যুক্তরাষ্ট্রে লাইসেন্সের অপেক্ষায় ছিলেন। তাকে পরে নেওয়ার্কের বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।[৬০] বিনা প্ররোচনায় আক্রমণের ফলে তার মাথার খুলি ও মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তিনি আংশিক কোমায় ছিলেণ। ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বরে টমাস কোজাক, মার্টিন রিকিয়ার্ডি এবং মার্ক ইভানজেলিস্তাকে সারানের উপর হামলার ঘটনায় ফেডারেল নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের জন্য বিচারের আওতায় আনা হয়। কিন্তু তিনজনকে ১৯৯৩ সালে দুটি পৃথক বিচারে অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।[৬১]

ডটবাস্টাররা মূলত নিউইয়র্ক এবং নিউ জার্সিতে তাদের কর্মকাণ্ড চালায়। জার্সি সিটিতে তারা বেশিরভাগ অপরাধ করেছে। যদিও ১৯৯০ সালে নিউ জার্সি আইনসভায় কঠোর ঘৃণা-বিরোধী অপরাধ আইন পাস করা হয়েছিল। তবে হামলা অব্যাহত ছিল। ১৯৯১ সালে নিউ জার্সিতে ভারতীয় হিন্দুদের উপর করা ৫৮টি ঘৃণ্য অপরাধের রিপোর্ট করা হয়েছিল।[৬২]

২০১২ সালের ২ জানুয়ারি নিউইয়র্ক শহরের একটি হিন্দু উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। [৬৩]

২০১৯ সালে জানুয়ারির শেষের দিকে কেন্টাকির লুইসভিলে স্বামীনারায়ণ মন্দিরে হামলার ফলে মন্দিরের ক্ষতি হয় এবং মন্দিরের দেয়ালে হিন্দুবিদ্বেষী স্লোগান লেখা হয়। পরে হিন্দুধর্ম এবং অন্যান্য ঘৃণ্য অপরাধ সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য মেয়র একটি পরিচ্ছন্নতা অভিযানের প্রচেষ্টা করেছিলেন। মন্দিরে হামলার জন্য ১৭ বছর বয়সী একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।[৬৪][৬৫][৬৬]

ইতালি[সম্পাদনা]

শুরুতে ইতালিতে হিন্দুদের দুটি মন্দির ছিল। এখানে প্রায় ৩০,০০০ ইতালীয় হিন্দু এবং প্রবাসী হিন্দু আছে। ইতালির স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে ভুল তথ্য রয়েছে। এছাড়া হিন্দুদের প্রায়শই যোগ, হিন্দু ধর্ম এবং পবিত্র গোমাতা নিয়ে স্টেরিওটাইপগুলির সাথে লড়াই করতে হয়। [৬৭][৬৮]

ত্রিনিদাদ আর টোবাগো[সম্পাদনা]

ভারতীয় খ্যাতির প্রাথমিক দশকগুলিতে ভারতীয় হিন্দুরা এখানে খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠদের দ্বারা অবমাননার শিকার হয়েছিল।[৬৯] হিন্দুরা ত্রিনিদাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে অনেক অবদান রেখেছে যদিও রাজ্যটি ঐতিহাসিকভাবে হিন্দুদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করে। ত্রিনিদাদে হিন্দুরা প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার, হিন্দু বিবাহ বিল, বিবাহ বিচ্ছেদ বিল, শ্মশান অধ্যাদেশ এবং অন্যান্য বৈষম্যমূলক আইন নিয়ে লড়াই করেছে। [৬৯] ত্রিনিদাদ ঐপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীন হওয়ার পর আফ্রিকান-ভিত্তিক পিপলস ন্যাশনাল মুভমেন্ট দলের দ্বারা হিন্দুদের প্রান্তিকে পরিণত করা হয়। বিরোধী দল পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টিকে হিন্দুদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ায় "হিন্দু গোষ্ঠী" হিসেবে চিত্রিত করা হয়। হিন্দুদেরকে নানা ভাবে হেনস্তা করা করা হয়।[৬৯] 1985 সালে PNM কে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

১৯৮০এর দশকে তীব্র বিক্ষোভের ফলে হিন্দুদের প্রতি রাজ্যের মনোভাবের উন্নতি ঘটে। [৬৯] স্থানীয় হিন্দু সংস্কৃতি হিন্দু ধর্মের কিছু মৌলিক দিক বিচ্যুত হয়। ত্রিনিদাদের পরিবেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মাচরণে কিছু পরিবর্তন আসে এখানকার হিন্দু ধর্ম "ত্রিনিদাদ হিন্দুধর্ম" হিসেবে পরিচিত হয়। কিন্তু এত সমঝোতার পরও হিন্দু সংস্কৃতির কিছু বিষয়ে যখন প্রায়ই সংখ্যাগরিষ্ঠ খ্রিস্টানরা বিরোধ করে। যদিও এখানে প্রায়শই দ্বন্দ্ব হয় তবে এখন হিন্দু সংখ্যালঘুদের প্রতি এই দেশ কিছুটা সহায়। [৬৯]এখানে খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকদের দ্বারা হিন্দুদের জোরপূর্বক ধর্মান্তরের শিকার হতে হয়। [৭০]বিশেষ করে ধর্মপ্রচারক এবং পেন্টেকোস্টাল খ্রিস্টানরা এই ধরনের ক্রিয়াকলাপকে উৎসাহ দেয়। ফলে মাঝে মাঝেই খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী আফ্রো-ত্রিনিদাদিয়ানরা হিন্দু ইন্দো-ত্রিনিদাদিয়ানদের উপর নানা ভাবে অত্যাচার করে ।[৭০]

ফিজি[সম্পাদনা]

সুভায় গোবিন্দ রেস্তোরাঁর আগুনে পুড়ে যাওয়া ধ্বংসাবশেষ। ১৯ মে সুভার কেন্দ্রীয় বাণিজ্য জেলায় হিন্দুদের ১০০ টিরও বেশি দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়।

ফিজিতে হিন্দুরা দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৩৮%। ১৯৯০এর দশকের শেষের দিকে ফিজিতে খ্রিস্টীয় মৌলবাদীদের দ্বারা হিন্দুদের সাথে কয়েকটি দাঙ্গা লাগানো হয়ে। ২০০০ সালের বসন্তে প্রধানমন্ত্রী মহেন্দ্র চৌধুরীর নেতৃত্বে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ফিজিয়ান সরকার জর্জ স্পাইটের নেতৃত্বে একটি খ্রিস্টীয় মৌলবাদী জঙ্গি সংগঠনেরর দ্বারা জিম্মি হয়েছিল। তারা স্থানীয় ফিজিয়ানদের জন্য একচেটিয়াভাবে একটি পৃথক রাজ্যের দাবি করছিল যার ফলে হিন্দুদের কোন অধিকার আইনগতভাবে বাতিল করা হয়েছিল। ফিজির ভূখণ্ডের অধিকাংশই জাতিগতভাবে ফিজিয়ান সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত। [৭১] যেহেতু হিন্দু ধর্মের অনুশীলনকারীরা প্রধানত ভারতীয় তাই চরমপন্থী ফিজিয় খ্রিস্টীয় মৌলবাদীদের হামলাও প্রায়ই হিন্দু ধর্মীর প্রতিষ্ঠানের উপর হয়। সরকারি রিপোর্ট অনুসারে ২০০৪ সালের তুলনায় হিন্দু প্রতিষ্ঠানের উপর আক্রমণ ১৪% বৃদ্ধি পেয়েছে। হিন্দু এবং হিন্দু ধর্মকে খ্রিস্টীয় মৌলবাদীরা বহিরাগত তকমা দিচ্ছে । বিশেষ করে ২০০০ সালের মে অভ্যুত্থানের পরে ফিজিয় খ্রিস্টীয় মৌলবাদীদের দ্বারা হিন্দুরা হামলার শিকার হয়েছে । যারা ফিজিকে একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র তৈরি করতে চায়। হিন্দুদের প্রতি এই অসহিষ্ণুতা হিন্দু বিরোধী বক্তৃতা এবং মন্দির ধ্বংসের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। যা হিন্দুদের বিরুদ্ধে সরাসরি সহিংসতার সবচেয়ে সাধারণ রূপ। ২০০১ এবং ২০০৫ সালের এপ্রিলের মধ্যে মন্দিরে হামলার একশটি মামলা পুলিশের কাছে নথিভুক্ত হয়েছে। মন্দির হামলার সংখ্যার আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি হিন্দুদের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়েছে । ফলে হিন্দুরা প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে দ্রুত অভিবাসন করেছে। ফিজির মেথডিস্ট চার্চের মতো সংগঠিত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বারবার খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের আহ্বান জানিয়েছে এবং হিন্দু বিরোধী মনোভাব প্রচার করেছে।[৭২]

ফিজির মেথোডিস্ট চার্চ হিন্দু সম্প্রদায়ের সাংবিধানিক সুরক্ষায় বিশেষভাবে আপত্তি জানায়। খ্রিস্টধর্মের রাষ্ট্রীয় পক্ষপাতিত্ব এবং মন্দিরগুলিতে পদ্ধতিগত আক্রমণে ফিজিয় হিন্দুরা বড় হুমকিতে আছে। একটি মানবাধিকার কমিশন গঠন সত্ত্বেও ফিজিতে হিন্দুদের দুর্দশা অব্যাহত রয়েছে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Divya Sharma (২০২০)। "Glossary"। Ethics, Ethnocentrism and Social Science Research। Taylor & Francis। আইএসবিএন 978-1-00-028273-3 
  2. Peter Baofu (২০১৩)। The Future of Post-Human Migration: A Preface to a New Theory of Sameness, Otherness, and Identity। Cambridge Scholars Publishing। পৃষ্ঠা 321–327। আইএসবিএন 978-1-4438-4487-1 
  3. Eileen Barker; James T. Richardson (২০২০)। Reactions to the Law by Minority Religions। Taylor & Francis। পৃষ্ঠা 190–192। আইএসবিএন 978-1-00-033324-4 
  4. ""অনেক হয়েছে হিন্দু নিধন, এবার হোক জনবিনিময়": খুলনায় মন্দির ভাঙা ও আক্রমণ প্রসঙ্গে বাংলাদেশকে স্পষ্ট ভাষায় হুঁশিয়ারি মতুয়া সম্প্রদায়ের বিধায়ক অসীম সরকারের"Samhati Samvad (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৮-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. amartya.lahiri। "হিন্দু নিধন নিয়ে পাকিস্তান-কে লজ্জার মুখে ফেলল নেপাল, ক্রমে হাওয়া ঘুরছে কাঠমাণ্ডুতে"Asianet News Network Pvt Ltd। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৩ 
  6. Brian J. Grim; Roger Finke (২০১০)। The Price of Freedom Denied: Religious Persecution and Conflict in the Twenty-First Century। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 46–51, 58–59। আইএসবিএন 978-1-139-49241-6 
  7. Bengal, Rising (২০২০-০৯-১৪)। "সিন্ধুদেশ রক্ষায় সম্মুখ সমরে একা রাজা দাহির"Rising Bengal (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৩ 
  8. "সিন্ধু বিজয়ে উপমহাদেশের ইতিহাসের বাঁকবদল"Kalerkantho। ২০১৯-০৬-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৩ 
  9. "সিন্ধুর শেষ হিন্দু রাজা দাহির, যাঁর বীরগাথা আজও শোনায় পাকিস্তানের 'দাহেরি' সম্প্রদায় - The Wall"Dailyhunt (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৩ 
  10. Machado 1999, পৃ. 94–96
  11. Salomon, H. P. and Sassoon, I. S. D., in Saraiva, Antonio Jose. The Marrano Factory. The Portuguese Inquisition and Its New Christians, 1536–1765 (Brill, 2001), pp. 345–7.
  12. "Goa Inquisition was most merciless and cruel"Rediff.com। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০১৬ 
  13. Rao, R.P (১৯৬৩)। Portuguese Rule in Goa: 1510-1961বিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন। Asia Publishing House। পৃষ্ঠা 43ওসিএলসি 3296297 
  14. "Goa Inquisition"The New Indian Express। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০১৬ 
  15. de Souza, Teotonio (১৯৯৪)। Discoveries, Missionary Expansion, and Asian Cultures। Concept Publishing Company। পৃষ্ঠা 80। আইএসবিএন 9788170224976। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০১৪ 
  16. "Atrocities on Kashmiri Hindus by Pakistan-Trained Terrorists"। ২০০৬-০৮-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৮-২৬ 
  17. Gill, Kanwar Pal Singh"The Kashmiri Pandits: An Ethnic Cleansing the World Forgot"। South Asian Terrorism Portal। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৮-২৬ 
  18. Farahnaz Ispahani (২০১৭)। Purifying the Land of the Pure: A History of Pakistan's Religious Minorities। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 165–171। আইএসবিএন 978-0-19-062165-0 
  19. Bert B. Lockwood (২০০৬)। Women's Rights: A Human Rights Quarterly Reader। Johns Hopkins University Press। পৃষ্ঠা 227–235। আইএসবিএন 978-0-8018-8373-6 
  20. Javaid Rehman (২০০০)। The Weaknesses in the International Protection of Minority Rights। Martinus Nijhoff Publishers। পৃষ্ঠা 158–159। আইএসবিএন 90-411-1350-9 
  21. U.S. Consulate (Dacca) Cable, Sitrep: Army Terror Campaign Continues in Dacca; Evidence Military Faces Some Difficulties Elsewhere, 31 March 1971, Confidential, 3 pp
  22. "Telegram 978 From the Consulate General in Dacca to the Department of State, March 29, 1971, 1130Z" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৯ 
  23. Bose, Sarmila (২০১১)। Dead Reckoning: Memories of the 1971 Bangladesh War। London: Hurst and Co.। পৃষ্ঠা 73, 122। আইএসবিএন 978-1-84904-049-5 
  24. "Pakistan: The Ravaging of Golden Bengal". Time. 2 August 1971.
  25. Welle (www.dw.com), Deutsche। "হিন্দুরা কেন দেশত্যাগ করেন? | DW | 26.07.2019"DW.COM। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৫ 
  26. Encyclopaedia of Bangladesh, N. K. Singh, Anmol Publications Pvt. Ltd; ISBN 8126113901
  27. Bangladesh 2018 International Religious Freedom Report, US State Department (2019), pages 11–12
  28. Shifting Continents/colliding Cultures: Diaspora Writing of the Indian Subcontinent, R. J. Crane and R. Mohanram, Rodopi, 2000;ISBN 9042012714
  29. http://www.unhcr.org/refworld/topic,463af2212,469f2cba2,469f386a1e,0.html
  30. "Sri Lanka's Continued Attempt to Murder a Minority Culture - Salem-News.Com"www.salem-news.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৫ 
  31. "Of A Sustained Buddhist Extremism in Sri Lanka" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৫ 
  32. Ashish Bose (2004), Afghan Refugees in India, Economic and Political Weekly, Vol. 39, No. 43, pp. 4698-4701
  33. Emadi, Hafizullah (২০১৪)। "Minorities and marginality: pertinacity of Hindus and Sikhs in a repressive environment in Afghanistan"। Nationalities Papers। Cambridge University Press। 42 (2): 307–320। এসটুসিআইডি 153662810ডিওআই:10.1080/00905992.2013.858313 , Quote: "The situation of Hindus and Sikhs as a persecuted minority is a little-studied topic in literature dealing with ethno-sectarian conflict in Afghanistan. (...) the breakdown of state structure and the ensuing civil conflicts and targeted persecution in the 1990s that led to their mass exodus out of the country. A combination of structural failure and rising Islamic fundamentalist ideology in the post-Soviet era led to a war of ethnic cleansing as fundamentalists suffered a crisis of legitimation and resorted to violence as a means to establish their authority. Hindus and Sikhs found themselves in an uphill battle to preserve their culture and religious traditions in a hostile political environment in the post-Taliban period. The international community and Kabul failed in their moral obligation to protect and defend the rights of minorities and oppressed communities."
  34. Emadi, Hafizullah (২০১৪)। "Minorities and marginality: pertinacity of Hindus and Sikhs in a repressive environment in Afghanistan"। Nationalities Papers। Cambridge University Press। 42 (2): 315–317। এসটুসিআইডি 153662810ডিওআই:10.1080/00905992.2013.858313 
  35. Haniffa, Aziz (১৪ জুন ২০০১)। "US lawmakers say 'We are Hindus'"Rediff.com। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে ২০১৫ 
  36. "Taliban to mark Afghan Hindus"CNN। ২২ মে ২০০১। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  37. Adamec, Ludwig W. (২০১২)। Historical Dictionary of Afghanistan। Scarecrow Press। পৃষ্ঠা 202। আইএসবিএন 978-0-8108-7815-0 
  38. "India deplores Taleban decree against Hindus"Rediff.com। ২১ মে ২০০১। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে ২০১৫ 
  39. "Taliban: Hindus Must Wear Identity Labels"People's Daily। ২৩ মে ২০০১। 
  40. Immigrant Hinduism in Germany: Tamils from Sri Lanka and Their Temples ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ অক্টোবর ২০১২ তারিখে,pluralism.org
  41. Temple row – a dab of sensibility please,malaysiakini.com
  42. "Malaysia demolishes century-old Hindu temple"Daily News and Analysis। ২১ এপ্রিল ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ৭ মে ২০১৫ 
  43. "Pressure on multi-faith Malaysia"BBC News। ১৬ মে ২০০৬। 
  44. "Hindu group protests 'temple cleansing' in Malaysia"Financial Express। AP। ২৩ মে ২০০৬। ৪ জুলাই ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  45. "Malaysia Muslims protest proposed Hindu temple"Associated Press। ২৮ আগস্ট ২০০৯। ২ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  46. "Malaysia Muslims protest proposed Hindu temple"Associated Press। ২৮ আগস্ট ২০০৯। ২ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  47. "Malaysia strips Hindus of rights"Daily Pioneer। ১৯ জানুয়ারি ২০১০। ২২ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  48. "Rohingya militants slaughtered 99 Hindus in a single day: Amnesty International"। সংগ্রহের তারিখ ২১ আগস্ট ২০১৮ 
  49. "Rohingya militants 'massacred Hindus'"। ২২ মে ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২১ আগস্ট ২০১৮ – www.bbc.com-এর মাধ্যমে। 
  50. "'Don't call us Rohingya': Myanmarese Hindu refugees in Bangladesh detest the incorrect labelling - Firstpost"www.firstpost.com। সংগ্রহের তারিখ ২১ আগস্ট ২০১৮ 
  51. "Hindu Rohingya refugees forced to convert to Islam in Bangladesh camps"India Today। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৯ 
  52. http://www.forum18.org/Archive.php?article_id=873
  53. "ఆర్కైవ్ నకలు"। ২০০৬-০৫-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৫-২২ 
  54. Marshall, Paul. "Saudi Arabia's Religious Police Crack Down"। ২২ মে ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০০৭ . Freedom House
  55. Lakshman, Narayan (১৪ মে ২০১৫)। "Hindus' population share in U.S. doubles in 7 years"The Hindu 
  56. "America's Changing Religious Landscape"Pew Research Center। ১২ মে ২০১৫। 
  57. Hilburn, Matthew (৩০ জুলাই ২০১২)। "Hindu-Americans Rank Top in Education, Income"VOA 
  58. Marriott, Michel (১২ অক্টোবর ১৯৮৭)। "In Jersey City, Indians Protest Violence"The New York Times। পৃষ্ঠা 1। 
  59. Verdict ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১০ মার্চ ২০১২ তারিখে of the Third Circuit Court of Appeals in Mody v. City of Hoboken (959 F.2d 461)
  60. In Jersey City, Indians Protest Violence. The New York Times, p. 2
  61. Kaulessar, Ricardo (২ মে ২০০৯)। "'DotBusters' victim looks back"The Hudson Reporter। Hudson County, New Jersey। ১৫ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  62. "Dot Busters in New Jersey"The Pluralism Project। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  63. "New York firebomb attacks hit mosque, Hindu site" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে. News Daily. 2 January 2012
  64. "Kentucky Hindu Temple Vandalized With Crosses, Christian Phrases"The Huffington Post। ৩১ জানুয়ারি ২০১৯। 
  65. "Hundreds help 'paint away the hate' at Louisville Hindu temple"The Courier-Journal। ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯। 
  66. "17-year-old arrested in connection with Louisville Hindu temple vandalism"The Courier-Journal। ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯। 
  67. admin (২০২০-০১-১০)। "Now, there are more Hindus in Italy than ever, but challenges remain"CT (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৫ 
  68. "Italy's Hindu Controversy"Hinduism Today (ইংরেজি ভাষায়)। ১৯৯৭-০৯-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৫ 
  69. Singh, Sherry-Ann, Hinduism and the State in Trinidad, Inter-Asia Cultural Studies, Volume 6, Number 3, September 2005, pp. 353–365(13)
  70. "International Religious Freedom Report 2002: Trinidad and Tobago"U.S. Department of State। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে ২০১৫ 
  71. Fraenkel, Jonathan; Firth, Stewart (২০০৭)। From Election to Coup in Fiji: The 2006 Campaign and Its Aftermath। ANU E Press। পৃষ্ঠা 306। আইএসবিএন 978-1-921313-36-3 
  72. "Lt. colonel rabuka throws out the allegedly indian bavadra"India Today। ১৫ জুন ১৯৮৭।