মধ্বাচার্য

মাধবাচার্য
জন্ম	বাসুদেব ১২৩৮ পাজক, উদুপি
আখ্যা	পূর্ণ প্রাজ্ঞ জগৎগুরু
প্রতিষ্ঠাতা	উদুপি শ্রী কৃষ্ণ মন্দির
ক্রম	বেদান্ত
গুরু	অচ্যুতপ্রেক্ষ তীর্থ
দর্শন	তত্ত্ববাদ দ্বৈত বেদান্ত

মাধবাচার্য (সংস্কৃত: मध्वाचार्यः; সংস্কৃত উচ্চারণ: [məd̪ʱʋɑːˈtʃɑːrjə]) বা মাধবা বা আনন্দতীর্থ বা পূর্ণ প্রাজ্ঞ (১২৩৮-১৩১৭) ছিলেন হিন্দু দর্শনের তত্ত্ববাদ দ্বৈত বেদান্তের প্রধান প্রবক্তা। তিনি ভক্তি আন্দোলনের সময়কালীন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক ছিলেন।মাধবাচার্য তাঁর মতবাদকে তত্ত্ববাদ নামে অভিহিত করেন যার অর্থ হল 'বস্তুবাদীর দৃষ্টিভঙ্গী থেকে যুক্তি'।মাধবাচার্য ১৩ শতকের ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের পশ্চিম উপকূলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন । কিশোর বয়সে, তিনি একাদণ্ডী আদেশের ব্রহ্ম-সম্প্রদায় গুরু অচ্যুতপ্রেক্ষায় যোগদান করে একজন সন্ন্যাসী হয়েছিলেন। মাধব হিন্দু দর্শনের ক্লাসিক অধ্যয়ন করেন এবং প্রধান উপনিষদ , ভগবদ্গীতা এবং ব্রহ্ম সূত্রের ( প্রস্থানত্রয়ি ) উপর ভাষ্য লেখেন , এবং সংস্কৃতে ৩৭ টি কাজের কৃতিত্ব পান । তাঁর লেখার ধরন ছিল চরম সংক্ষিপ্ত এবং সংক্ষিপ্ত প্রকাশের। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কাজটি অনুব্যখ্যান হিসাবে বিবেচিত হয় , যা একটি কাব্যিক কাঠামোর সাথে রচিত ব্রহ্ম সূত্রে তাঁর ভাস্যের একটি দার্শনিক পরিপূরক ।নিজের কিছু গবেষনায় তিনি নিজেকে বিষ্ণুপুত্র বায়ু নামে অভিহিত করেছেন।

মাধবাচার্য ছিলেন আদি শংকরাচার্য প্রদর্শিত অদ্বৈতবাদ এবং রামানুজ দ্বারা উপদেশকৃত বিশিষ্টাদ্বৈতবাদের একজন সমালোচক।দার্শনিক শিক্ষার হিন্দু কেন্দ্র এবং বহু দার্শনিক বিতর্ক সভার সাথে যুক্ত হয়ে তিনি বিভিন্ন সময়ে ভারতের বিভিন্ন জায়গা যেমন বদ্রিনাথ,পশ্চিমবঙ্গ, দ্বারকা, বারানসী, গোয়া এবং কন্যাকুমারী পরিভ্রমন করেছিলেন। ১২৮৫ তে তিনি গুজরাটের দ্বারকা থেকে একটি কৃষ্ণ মূর্তি এনে উদুপিতে একটি মন্দির স্থাপন করেন।

মাধবাচার্যের শিক্ষা যে আশ্রয়বাক্যকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল তা হল, আত্মা (স্বতন্ত্র জীবাত্মা ) এবং ব্রহ্ম ( চূড়ান্ত তত্ত্ব, ভগবান বিষ্ণু) এই দুইয়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য আছে,এই দুটি বিষয় হল অপরিবর্তনশীল ,পরস্পরের থেকে ভিন্ন দুটি সত্তা যারা স্বতন্ত্র আত্মা সমন্বিত এবং উভয়ই ব্রহ্মের উপর নির্ভরশীল। তাঁর সমধর্মী দার্শনিক গোষ্ঠী আস্তিক দ্বৈতবাদের শিক্ষা অদ্বৈতবাদীদেরর সাথে সহমত পোষণ করেনা। এই অদ্বৈতবাদী শিক্ষা বলতে বোঝায় বেদান্ত নির্ভর দুটি প্রভাবশালী দার্শনিক গোষ্ঠী শঙ্করের অদ্বৈতবাদ আর রামানুজের বিশিষ্টাদ্বৈতবাদের মূল বক্তব্য। মাধবাচার্যের মতে জীবের মোক্ষপ্রাপ্তি শুধুমাত্র ঈশ্বরের আশীর্বাদের দ্বারাই সম্ভব। মাধবাচার্য কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত দ্বৈতবাদ অনেকাংশেই বৈষ্ণববাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। মধ্যযুগীয় ভারতে যে ভক্তি আন্দোলন হয়েছিল তার অন্যতম অনুপ্রেরনা ছিল বৈদান্তিক দার্শনিক সম্প্রদায়ের অন্তর্গত তিনটি প্রভাবশালী শাখা - শঙ্করের অদ্বৈতবাদ, রামানুজের বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ এবং মাধবাচার্যের দ্বৈতবাদ। হিন্দুধর্মে মাধবাচার্যের ঐতিহাসিক প্রভাবকে কুলান্দ্রন আর ক্রেইমার ' সম্মানীয় কিন্তু অব্যাপক ' বলে উল্লেখ করেছেন।

জীবনী

মাধবাচার্যের জীবনীতে তার জন্মসালের বিষয়টি একটি অস্পষ্ট বিষয়। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে মাধবাচার্যের জীবৎকাল ছিল ১২৩৮-১৩১৭ এই সময়ের মধ্যে। আবার অনেকের মতে ১১৯৯-১২৭৮ এর সময়টি হল মাধবাচার্যের জীবনকাল। ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত বর্তমানে উদুপি জেলার কাছাকাছি পাজাকা নামক একটি স্থানে মাধবাচার্যের জন্ম হয়। ঐতিহ্যগতভাবে একথা বিশ্বাস করা হয় যে মাধবাচার্যের পিতার নাম ছিল নাদুল্য ( সংস্কৃতঃ মাধ্যগেহা,মাধ্যমন্দির)। মাধবাচার্যের মাতার নাম বিষয়েও অস্পষ্টতা আছে,অনেকের মতে সত্যবতী বা বেদান্তী ছিলেন মাধবাচার্যের মাতা। তুলু ভাষার একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহন করা মাধবাচার্যের পূর্বনাম নাম ছিল বাসুদেব। পরে তিনি মাধবাচার্য বা মাধবা বা আনন্দতীর্থ বা পূর্ণ প্রাজ্ঞ নামে বিখ্যাত হন। সন্ন্যাস জীবনের সূচনায় তাঁকে পূর্ণ প্রাজ্ঞ নামে অভিহিত করা হয়। মঠাধ্যক্ষ থাকাকালীন তাঁর নাম দেওয়ায় হয় আনন্দতীর্থ। ওনার এই তিনটি নামই তাঁর মতবাদের মধ্যে থেকে পাওয়া যায়। দ্বৈতবাদ বিষয়ক শাস্ত্রে তিনি সাধারণভাবে মাধবাচার্য নামেই বহুল পরিচিত।

চলচ্চিত্র

১৯৮৬ সালে মাধবাচার্য নামে জি ভি আইয়ার পরিচালিত একটি চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছিল, এটি সম্পূর্ণভাবে কন্নড় ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে একটি।

আরো পড়ুন

1. Flood, Gavin (২০০৩), The Blackwell Companion to Hinduism, Oxford: Blackwell Publishing, পৃষ্ঠা 251, আইএসবিএন 0-631-21535-2 উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
2. Gonsalves, Sunil, Yakshagana, OurKarnataka.com, সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১২ উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
3. Goswami, S.D. (১৯৭৬), Readings in Vedic Literature: The Tradition Speaks for Itself, S.l.: Assoc Publishing Group, পৃষ্ঠা 240 pages, আইএসবিএন 0-912776-88-9 উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
4. GuruRaghavendra.org, Shri Guru Raghavendra Brindavan Locator, GuruRaghavendra.org, সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১২ উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
5. New Zealand Hare Krishna Spiritual Resource Network, Padmanabha Tirtha, New Zealand Hare Krishna Spiritual Resource Network, সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১২ উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
6. Padmanabhachar, C.M., The Life and Teachings of Sri Madhvacharya (পিডিএফ), সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০১১ উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
7. Rao, Vishweshwara, Shri Vedavyasa Samputa Narasimha, OurKarnataka.com, সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১২ উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
8. Sharma, Chandradhar (১৯৯৪), A Critical Survey of Indian Philosophy, Delhi: Motilal Banarsidass, পৃষ্ঠা 372–5, আইএসবিএন 81-208-0365-5 উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
9. Tapasyananda (১৯৯১), Bhakti Schools of Vedanta, Madras (Chennai): Sri Ramakrishna Math, আইএসবিএন 81-7120-226-8 উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)

বহিঃসংযোগ

1. ইন্টারনেট এনসাইক্লোপিডিয়া অব ফিলোজফি ওয়েবসাইটে মধ্ব
2. The Life And Teachings of Sri Madhvacharyar by C.M. Padmanabha Char - at archive.org
3. Philosophy of Sri Madhvacharya by Dr. B.N.K. Sharma - at archive.org
4. S. Srikanta Sastri - "Logical system of Madvacharya", published in Poona Oriental Series - No. 75, "A Volume of Studies in Indology", presented to Prof P. V. Kane on his 60th birthday. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৭ জুলাই ২০২০ তারিখে
5. Brahmasutra Bhasya of Sri Madhvacharya with Glosses in Sanskrit - at archive.org
6. Tattva-Sankhyan of Madhvacharya with the Tika of Jayatirtha (Sanskrit-English) - at archive.org