ওঁ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাংলা লিপিতে ওঁ-কার।

ওঁ বা ওঁ-কার (বাংলা উচ্চারণ: [om], শুনুন; দেবনাগরী: ॐ) হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈনধর্মের পবিত্রতম ও সর্বজনীন প্রতীক, পবিত্র শব্দ বা মন্ত্র। এটি হিন্দু দর্শনের সর্বোচ্চ ঈশ্বর পরম ব্রহ্মের বাচক।[১] এই ধর্মের প্রতিটি সম্প্রদায় ও উপসম্প্রদায়ের নিকটেই এটি পবিত্র বলে গণ্য।

স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, ওঁ-কার "সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের প্রতীক, ঈশ্বরেরও প্রতীক।"[২] রামকৃষ্ণ পরমহংস বলেছেন, "...ওঁ হইতে ‘ওঁ শিব’, ‘ওঁ কালী’, ‘ওঁ কৃষ্ণ হয়েছেন।"[৩] ওঁ-কার বৌদ্ধ ও জৈনদেরও একটি পবিত্র প্রতীক। শিখ সম্প্রদায়ও এটিকে সম্মান করেন। এই প্রতীকের দেবনাগরী রূপ ॐ, চীনা রূপ 唵, এবং তিব্বতীয় রূপ ༀ।[৪] এটি ওঙ্কার, প্রণব বা ত্র্যক্ষর নামেও পরিচিত।

ব্যুৎপত্তি[সম্পাদনা]

ওঁ শব্দটি সংস্কৃত ‘অব’ ধাতু থেকে উৎপন্ন, যা একাধারে ১৯টি ভিন্ন ভিন্ন অর্থে প্রযোজ্য। এই ব্যুৎপত্তি অনুযায়ী ওঁ-কার এমন এক শক্তি যা সর্বজ্ঞ, সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের শাসনকর্তা, অমঙ্গল থেকে রক্ষাকর্তা, ভক্তবাঞ্ছাপূর্ণকারী, অজ্ঞাননাশক ও জ্ঞানপ্রদাতা।[৫] ওঁ-কারকে ত্র্যক্ষরও বলা হয়, কারণ ওঁ তিনটি মাত্রাযুক্ত – "-কার", "উ-কার" ও "ম-কার"। "অ-কার", "আপ্তি" বা "আদিমত্ত্ব" অর্থাৎ প্রারম্ভের প্রতীক। "উ-কার" "উৎকর্ষ" বা "অভেদত্ব"-এর প্রতীক। "ম-কার", "মিতি" বা "অপীতি" অর্থাৎ লয়ের প্রতীক।[৬] অন্য ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয় সংঘটনকারী ঈশ্বরের প্রতীক।[৫]

"প্রণব" শব্দের আক্ষরিক অর্থ, "যা উচ্চারণ করে স্তব করা হয়"। [৭] এর অপর অর্থ, "যা চিরনূতন"। [৪]

গুরুত্ব ও ব্যাখ্যা[সম্পাদনা]

ওঁ-কার ঈশ্বরের সকল নামের প্রতিনিধিস্বরূপ ও তার শ্রেষ্ঠ নাম।[১৮] বেদ, উপনিষদ, গীতা ও অন্যান্য হিন্দুশাস্ত্রে সর্বত্রই ওঁ-কারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। অথর্ববেদের গোপথব্রাহ্মণের একটি কাহিনি অনুসারে দেবরাজ ইন্দ্র ওঁ-কারের সহায়তায় দৈত্যদের পরাস্ত করেন। এই কাহিনির অন্তর্নিহিত অর্থ, ওঁ-কারের বারংবার উচ্চারণে মানুষ তার পাশব প্রবৃত্তি জয় করতে সমর্থ হয়।[৫] কঠোপনিষদ মতে, ওঁ-কার পরব্রহ্ম। [১৯] মুণ্ডক উপনিষদে ওঁ-কার অবলম্বনে ঈশ্বরোপাসনার কথা বলা হয়েছে।[২০] শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন, তিনি সকল অক্ষরের মধ্যে ওঁ-কার। মৃত্যুকালে ওঁ-কারের উচ্চারণে পরম সত্য লাভ হয়।[২১] পতঞ্জলির যোগসূত্র-এ ওঁ-কারকে ঈশ্বরের প্রতীক বলে বর্ণিত হয়েছে এবং বলা হয়েছে, ওঁ-কারের স্মরণ ও উচ্চারণে সমাধি লাভ করা যায়।

ব্যবহার[সম্পাদনা]

ধর্মীয় চিহ্ন হলেও ব্যবহারিক জীবনে ওঁ-কারের প্রয়োগ আরও ব্যাপক। প্রত্যেকটি মন্ত্র ওঁ-কার দিয়ে শুরু হয়। চিঠিপত্রের শুরুতেও কেউ কেউ ওঁ-কার লিখে থাকেন। মন্দির, ঠাকুরঘর প্রভৃতি ধর্মীয় স্থানের প্রতীকচিহ্ন রূপেও ওঁ-কার ব্যবহৃত হয়। আজকাল ট্যাটু হিসাবেও এটি জনপ্রিয়। এছাড়া যোগাসনেও ওঁ বা ওম শব্দ ব্যবহার করা হয়।

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. তৈত্তিরীয় উপনিষদ, প্রথম অধ্যায়, অষ্টম অনুবাক, ১ সংখ্যক শ্লোক
  2. স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, চতুর্থ খণ্ড, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৬৪, পৃ. ১১৪
  3. শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত, অখণ্ড, শ্রীম-কথিত, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৮৬-৮৭, পৃ. ৩৫৯
  4. হিন্দু সিম্বল, স্বামী হর্ষানন্দ, রামকৃষ্ণ মঠ, ব্যাঙ্গালোর, ২০০০, পৃ. ৭
  5. হিন্দু সিম্বল, স্বামী হর্ষানন্দ, রামকৃষ্ণ মঠ, ব্যাঙ্গালোর, ২০০০, পৃ. ৮
  6. মাণ্ডুক্য উপনিষদ, ৮-১১ সংখ্যক শ্লোক
  7. বাঙ্গালা ভাষার অভিধান, জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস সংকলিত ও সম্পাদিত, দ্বিতীয় ভাগ, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা দ্রঃ
  8. ଓଁ (U+0B13 & U+0B01), ওঁ (U+0993 & U+0981)
  9. ௐ (U+0BD0)
  10. ಓಂ (U+0C93 & U+0C82)
    তেলুগু ఓం (U+0C13 & U+0C02)
  11. ഓം (U+0D13 & U+0D02)
  12. "oo m"
  13. 𑖍𑖼 (U+1158D & U+115BC)
  14. (U+5535)
  15. (U+0F00)
  16. টেমপ্লেট:Script/Bali (U+1B12 & U+1B01)
  17. ꦎꦴꦀ (U+A98E & U+A980 & U+A9B4)
  18. Hindu Symbols, Swami Harshananda, Ramakrishna Math, Bangalore, 2000, p.11
  19. কঠোপনিষদ, প্রথম অধ্যায়, দ্বিতীয় বল্লী, ১৬ সংখ্যক শ্লোক
  20. মুণ্ডক উপনিষদ, দ্বিতীয় মুণ্ডক, দ্বিতীয় খণ্ড, ৩ সংখ্যক শ্লোক
  21. শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, অক্ষরব্রহ্মযোগ, ১-৩ সংখ্যক শ্লোকগুলি

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]