সিলেট জেলা

স্থানাঙ্ক: ২৪°৫৩′ উত্তর ৯১°৫২′ পূর্ব / ২৪.৮৮৩° উত্তর ৯১.৮৬৭° পূর্ব / 24.883; 91.867
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সিলেট
জেলা
ডাকনাম: জালালাবাদ
বাংলাদেশে সিলেট জেলার অবস্থান
বাংলাদেশে সিলেট জেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৪°৫৩′ উত্তর ৯১°৫২′ পূর্ব / ২৪.৮৮৩° উত্তর ৯১.৮৬৭° পূর্ব / 24.883; 91.867 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগসিলেট বিভাগ
আয়তন
 • মোট৩,৪৫২ বর্গকিমি (১,৩৩৩ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[১]
 • মোট৩৫,৬৭,১৩৮
 • জনঘনত্ব১,০০০/বর্গকিমি (২,৭০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৮১.২%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৬০ ৯১
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

সিলেট জেলা (সিলেটি: ꠍꠤꠟꠐ ꠎꠤꠟꠣ) বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল সিলেট। এটি সিলেট বিভাগের অধিক্ষেত্রভুক্ত একটি জেলা। উপজেলার সংখ্যানুসারে সিলেট বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা।[২] সিলেট বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত একটি প্রাচীন জনপদ। বনজ, খনিজ ও মৎস্য সম্পদে ভরপুর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত জন্য এ জেলা খ্যাত। জৈন্তিয়া পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য, জাফলং এর মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য, জাফলং চা বাগান, ভোলাগঞ্জের সারি সারি পাথরের স্তূপ, পাথরের বিছানাখ্যাত বিছনাকান্দি, রাতারগুল জলাবন পর্যটকদের টেনে আনে বার বার।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর সিলেট জেলার বিপুল সংখ্যক লোক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অভিবাসন গ্রহণ করেছে। তারা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখে। সিলেটের পাথর, বালির গুণগতমান দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। জেলার প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে যা সারা দেশের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ করে থাকে। স্বাধীনতা যুদ্ধে এ জেলার ভূমিকা অপরিসীম। মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানী এ জেলারই কৃতী সন্তান।

১৭৬৭ খ্রিষ্টাব্দে এ অঞ্চল ব্রিটিশদের করায়ত্ত হবার পর ১৭৭২ খ্রিষ্টাব্দে সিলেট জেলার সৃষ্টি হয় এবং প্রথম কালেক্টর হিসেবে নিয়োগ পান মিঃ উইলিয়াম থ্যাকারে। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এক পর্যায়ে সিলেট জেলাকে ভেঙ্গে চারটি জেলা সৃষ্টি করা হয় । স্বাধীনতাপূর্ব সদর মহুকুমার এলাকা নিয়ে বর্তমানে সিলেট জেলা গঠিত । ১২(বার)টি উপজেলা নিয়ে বর্তমান সিলেট জেলা গঠিত। [৩]

সিলেট জেলার প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা হলো সিলেট শহর । ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলেই সিলেট দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে। সিলেট পৌরসভা সৃষ্টি ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে । ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুন এক মারাত্মক ভূমিকম্প গোটা সিলেট শহরটি প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে ফেলে। পরবর্তী কালে ধ্বংসস্ত্তপের ওপর গড়ে উঠে ইউরোপীয় ধাঁচের আরও সুন্দর ও আধুনিক শহর। ১৮৯০ এর দশকের শেষ ভাগে বেশ কিছু রাস্তাঘাট তৈরি করা হয়। ১৯১২-১৫ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের একটি শাখা সিলেটের সাথে সংযুক্ত হলে দেশের অন্যান্য অংশের সাথে সিলেটের বিচ্ছিন্নতার প্রকৃত অবসান ঘটে।

চা শিল্পের কারণে বিশ শতকের প্রথম দিকে সিলেট শহরের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৫০ ও ১৯৬০ দশকে প্রবাসী সিলেটিদের কল্যাণে সিলেটের শহর দ্রুত নগরায়ণ ঘটতে থাকে৤ এই নগরায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

অবস্থান ও আয়তন[সম্পাদনা]

সিলেট জেলার ভৌগোলিক অবস্থান ২৪­° ৪০’ থেকে ২৫° ১১’’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১° ৩’’ থেকে ৯২° ৩’’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সিলেট জেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয়, দক্ষিণে মৌলভীবাজার জেলা, পূর্বে ভারতের আসাম, পশ্চিমে সুনামগঞ্জ জেলাহবিগঞ্জ জেলা। এই জেলার আয়তন ৩,৪৯০.৪০ বর্গ কিমি। বাৎসরিক সর্বচ্চো তাপমাত্রা ৩৩.২° সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩.৬° সেলসিয়াস। বাৎসরিক বৃষ্টিপাত ৩৩৩৪ মিলিমিটার। প্রধান নদী সুরমাকুশিয়ারা। হাওড় সংখ্যা ৮২ টি। সংরক্ষিত বনাঞ্চল ২৩৬.৪২ বর্গ কিলোমিটার। ভারতের খাশিয়া-জয়ান্তা পাহারের কিছু অংশ এই জেলায় পরেছে। এছাড়াও কিছু ছোট পাহাড় ও টিলা রয়েছে এখানে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জৈন্তাপুর (৫৪ মাইল), সারি টিলা (৯২ মাইল), লালখান টিলা (১৩৫ মাইল), ঢাকা দক্ষিণ টিলাসমূহ (৭৭.৭ মাইল)। [৪]

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ[সম্পাদনা]

১৭৭২ সালের ১৭ মার্চ সিলেট জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭৪ সাল পর্যন্ত সিলেট জেলা ছিল চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। ঐ বছরেরই ১২ সেপ্টেম্বর নবসৃষ্ট আসাম প্রদেশের সাথে সিলেটকে সংযুক্ত করা হয়। ১৯৪৭ এর আগ পর্যন্ত (১৯০৫-১৯১১ পর্যন্ত বঙ্গভঙ্গ সময়ের কালটুকু বাদ দিয়ে) সিলেট আসামের অংশ ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির সময় গণভোটের মাধ্যমে সিলেট জেলা তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান এর সাথে সম্পৃক্ত হয়। তখন প্রশাসনিকভাবে সিলেট ছিল চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। ১৯৮৩-৮৪ সালে প্রশাসনিক পুনর্গঠন এর সময় বৃহত্তর সিলেট জেলাকে ০৪(চার)টি নতুন জেলায় বিভক্ত করা হয়।[৫]

সিলেট জেলা ২৭ ওয়ার্ড বিশিষ্ট ১টি সিটি কর্পোরেশন, ১৩টি উপজেলা, ১৭টি থানা, ৫টি পৌরসভা, ১০৬টি ইউনিয়ন, ১৬৯৩টি মৌজা, ৩৪৯৭টি গ্রাম ও ৬টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।

উপজেলাসমূহ[সম্পাদনা]

সিলেট জেলায় মোট ১৩টি উপজেলা এবং ৫টি পৌরসভা রয়েছে। উপজেলাগুলো হলো:

ক্রম নং উপজেলা আয়তন[৬]
(বর্গ কিলোমিটারে)
প্রশাসনিক থানা আওতাধীন এলাকাসমূহ
০১ ওসমানীনগর ২১২.৬১ ওসমানীনগর ইউনিয়ন (৮টি): উমরপুর, সাদীপুর, পশ্চিম পৈলনপুর, বুরুঙ্গাবাজার, গোয়ালাবাজার, তাজপুর, দয়ামীর এবং উসমানপুর
০২ কানাইঘাট ৩৯১.৭৯ কানাইঘাট পৌরসভা (১টি): কানাইঘাট
ইউনিয়ন (৯টি): লক্ষ্মীপ্রাসাদ পূর্ব, লক্ষ্মীপ্রাসাদ পশ্চিম, দীঘিরপাড় পূর্ব, সাতবাঁক, বড়চতুল, কানাইঘাট, দক্ষিণ বাণীগ্রাম, ঝিঙ্গাবাড়ী এবং রাজাগঞ্জ
০৩ কোম্পানীগঞ্জ ২৯৬.৭৬ কোম্পানীগঞ্জ ইউনিয়ন (৬টি): ইসলামপুর পশ্চিম, ইসলামপুর পূর্ব, তেলিখাল, ইছাকলস, উত্তর রণিখাই এবং দক্ষিণ রণিখাই
০৪ গোলাপগঞ্জ ২৭৮.৩৩ গোলাপগঞ্জ পৌরসভা (১টি): গোলাপগঞ্জ
ইউনিয়ন (১১টি): বাঘা, গোলাপগঞ্জ, ফুলবাড়ী, লক্ষ্মীপাশা, বুধবারী বাজার, ঢাকাদক্ষিণ, লক্ষণাবন্দ, ভাদেশ্বর, পশ্চিম আমুড়া, উত্তর বাদেপাশা এবং শরীফগঞ্জ
০৫ গোয়াইনঘাট ৪৮১.১৩ গোয়াইনঘাট ইউনিয়ন (১০টি): রুস্তমপুর, পশ্চিম জাফলং, পূর্ব জাফলং, লেঙ্গুড়া, পূর্ব আলীরগাঁও, ফতেপুর, নন্দিরগাঁও, তোয়াকুল, ডৌবাড়ী এবং পশ্চিম আলীরগাঁও
০৬ জকিগঞ্জ ২৬৫.৬৮ জকিগঞ্জ পৌরসভা (১টি): জকিগঞ্জ
ইউনিয়ন (৯টি): বারহাল, বীরশ্রী, কাজলসার, খলাছড়া, জকিগঞ্জ, সুলতানপুর, বারঠাকুরী, কসকনকপুর এবং মানিকপুর
০৭ জৈন্তাপুর ২৬৬.১১ জৈন্তাপুর ইউনিয়ন (৬টি): নিজপাট, জৈন্তাপুর, চারিকাটা, দরবস্ত, ফতেপুর এবং চিকনাগুল
০৮ দক্ষিণ সুরমা ১৮৭.৬৭ দক্ষিণ সুরমা ইউনিয়ন (৬টি): মোল্লারগাঁও, বরইকান্দি, তেতলী, কুচাই, সিলাম এবং কামালবাজার
মোগলাবাজার ইউনিয়ন (৪টি): লালাবাজার, জালালপুর, মোগলাবাজার এবং দাউদপুর
০৯ ফেঞ্চুগঞ্জ ১১৪.০৯ ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়ন (৫টি): ফেঞ্চুগঞ্জ, মাইজগাঁও, ঘিলাছড়া, উত্তর কুশিয়ারা এবং উত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ
১০ বালাগঞ্জ ১৬৩.১৫ বালাগঞ্জ ইউনিয়ন (৬টি): পূর্ব পৈলনপুর, বোয়ালজুড়, দেওয়ানবাজার, পশ্চিম গৌরীপুর, বালাগঞ্জ এবং পূর্ব গৌরীপুর
১১ বিশ্বনাথ ২১৩.১৬ বিশ্বনাথ পৌরসভা (১টি): বিশ্বনাথ
ইউনিয়ন (৮টি): লামাকাজী, খাজাঞ্চী, অলংকারী, রামপাশা, দৌলতপুর, বিশ্বনাথ, দেওকলস এবং দশঘর
১২ বিয়ানীবাজার ২৫৩.২৫ বিয়ানীবাজার পৌরসভা (১টি): বিয়ানীবাজার
ইউনিয়ন (১০টি): আলীনগর, চরখাই, দুবাগ, শেওলা, কুড়ারবাজার, মাথিউরা, তিলপাড়া, মোল্লাপুর, মুড়িয়া এবং লাউতা
১৩ সিলেট সদর ৩০১.৮১ কোতোয়ালী ওয়ার্ড (১৮টি): সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১নং, ২নং, ৩নং, ৪নং, ৫নং, ৯নং, ১০নং, ১১নং, ১২নং, ১৩নং, ১৪নং, ১৫নং, ১৬নং, ১৭নং, ১৮নং, ২২নং, ২৩নং এবং ২৬নং ওয়ার্ড
জালালাবাদ ইউনিয়ন (৪টি): জালালাবাদ, হাটখোলা, মোগলগাঁও এবং কান্দিগাঁও
বিমানবন্দর ওয়ার্ড (৩টি): সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৬নং, ৭নং এবং ৮নং ওয়ার্ড
ইউনিয়ন (২টি): খাদিমনগর এবং টুকের বাজার
শাহপরাণ ওয়ার্ড (৪টি): সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১৯নং, ২০নং, ২১নং এবং ২৪নং ওয়ার্ড
ইউনিয়ন (২টি): খাদিমপাড়া এবং টুলটিকর
দক্ষিণ সুরমা ওয়ার্ড (২টি): সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২৫নং এবং ২৭নং ওয়ার্ড

সংসদীয় আসন[সম্পাদনা]

সংসদীয় আসন জাতীয় নির্বাচনী এলাকা[৭] সংসদ সদস্য[৮][৯][১০][১১][১২] রাজনৈতিক দল
২২৯ সিলেট-১ সিলেট সদর উপজেলা এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশন আবুল কালাম আব্দুল মোমেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
২৩০ সিলেট-২ বিশ্বনাথ উপজেলা এবং ওসমানীনগর উপজেলা মোকাব্বির খান গণফোরাম
২৩১ সিলেট-৩ দক্ষিণ সুরমা উপজেলা, বালাগঞ্জ উপজেলা এবং ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা হাবিবুর রহমান হাবিব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
২৩২ সিলেট-৪ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা, গোয়াইনঘাট উপজেলা এবং জৈন্তাপুর উপজেলা ইমরান আহমদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
২৩৩ সিলেট-৫ কানাইঘাট উপজেলা এবং জকিগঞ্জ উপজেলা হাফিজ আহমেদ মজুমদার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
২৩৪ সিলেট-৬ বিয়ানীবাজার উপজেলা এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলা নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

ইতিহাস[সম্পাদনা]

সিলেটের আঞ্চলিক ইতিহাস গ্রন্থ অনুসারে এই অঞ্চলের প্রাচীন সীমানার যে উল্লেখ পাওয়া যায় সে অনুসারে তৎকালীন শ্রীহট্টমণ্ডল বর্তমান সিলেট বিভাগের চেয়ে আয়তনে অনেক বড় ছিল, এমনকি বাংলাদেশের বর্তমান সরাইল বা সতরখণ্ডল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত), জোয়ানশাহী (বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত), ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অনেকাংশ শ্রীহট্টের অন্তর্ভুক্ত ছিল।[১৩] প্রাচীন বৈদিক গ্রন্থ কামাখ্যা তন্ত্র অনুযায়ী প্রাচীন কামরুপ রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমাই প্রাচীন শ্রীহট্ট ছিল অর্থাৎ শ্রীহট্ট ছিল কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত। যোগিনী তন্ত্রে শ্রীহট্টের সীমার বিবরণ এরকম:

পূর্ব্বে স্বর্ণ নদীশ্চৈব দক্ষিণে চন্দ্রশেখর
লোহিত পশ্চিমে ভাগে উত্তরেচ নীলাচল
এতন্মধ্যে মহাদেব শ্রীহট্ট নামো নামতা।

অতপর খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর পরবর্তী সময়ে এই অঞ্চলের ভৌগোলিক রুপরেখার বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে। অষ্টম শতাব্দীর মধ্যভাগে সিলেট বিভাগের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু অংশ ত্রিপুরা রাজ্যের অধিভুক্ত এবং দক্ষিণ-পশ্চিমের অনেক অংশ হরিকেল রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। অবশিষ্টাংশে শ্রীহট্টের প্রাচীন রাজ্য জয়ন্তিয়া, লাউড় ও গৌড় বিস্তৃত ছিল। [১৪] দশম শতাব্দীতে মহারাজা শ্রীচন্দ্র কর্তৃক উৎকীর্ণ পশ্চিমবাগ তাম্রলিপি থেকে জানা যায় যে, তিনি সিলেট জয় করেছিলেন। ঐতিহাসিকদের ধারণা, সিলেট বা শ্রীহট্ট(সমঋদ্ধ হাট) বহু আগে থেকেই একটি বর্ধিষ্ণু বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে বর্তমান ছিল। প্রাচীন শ্রীহট্টে বিপুল হারে বাঙালি অভিবাসন হয়েছিল। ১৪ শতকে ইয়েমেনের সাধক পুরুষ হযরত শাহজালাল সিলেট জয় করেন এবং ইসলাম প্রচার শুরু করেন। সুলতানি আমলে সিলেটের নাম ছিল জালালাবাদ। ১৮৫৭ সালে বিদ্রোহের সময়ে সিলেটে বিদ্রোহীরা ব্রিটিশ বেনিয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ব্যর্থ হয়। নানকার বিদ্রোহ সিলেটের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। নানকাররা ছিল জমিদারদের ভূমিদাস। নানাকার বিদ্রোহ সহ আরও কয়েকটি বিদ্রোহ সংঘটিত হলে ১৯৫০ সালে এ প্রথা বিলুপ্ত করা হয়। [১৫]

সিলেট নামের উৎপত্তি[সম্পাদনা]

প্রাচীন গ্রন্থাদিতে এ অঞ্চলের (সিলেট বিভাগ) বিভিন্ন নামের উল্লেখ আছে।

হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে শিবের স্ত্রী সতী দেবীর কাটা হস্ত (হাত) এই অঞ্চলে পড়েছিল, যার ফলে 'শ্রী হস্ত' হতে শ্রীহট্ট নামের উৎপত্তি বলে হিন্দু সম্প্রদায় বিশ্বাস করেন।

খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের ঐতিহাসিক এরিয়ান লিখিত বিবরণীতে এই অঞ্চলের নাম "সিরিওট" বলে উল্লেখ আছে। এছাড়া, খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে এলিয়েনের (Ailien) বিবরণে "সিরটে", এবং পেরিপ্লাস অব দ্যা এরিথ্রিয়ান সী নামক গ্রন্থে এ অঞ্চলের নাম "সিরটে" এবং "সিসটে" এই দুইভাবে লিখিত হয়েছে।

চীনা মানুষ—অতঃপর ৬৪০ খ্রিষ্টাব্দে যখন চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এই অঞ্চল ভ্রমণ করেন। তিনি তার ভ্রমণ কাহিনীতে এ অঞ্চলের নাম "শিলিচতল" উল্লেখ করেছেন[১৬]। তুর্কি সেনাপতি

ইখতিয়ার উদ্দীন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজী দ্বারা বঙ্গবিজয়ের মধ্য দিয়ে এদেশে মুসলিম সমাজব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটলে মুসলিম শাসকগণ তাদের দলিলপত্রে "শ্রীহট্ট" নামের পরিবর্তে "সিলাহেট", "সিলহেট" ইত্যাদি নাম লিখেছেন বলে ইতিহাসে প্রমাণ মিলে। আর এভাবেই শ্রীহট্ট থেকে রূপান্তর হতে হতে একসময় সিলেট নামটি প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে বলে ঐতিহাসিকরা ধারণা করেন। [১৭][১৮]

যখন "সিলেটে" "হযরত শাহ্ জালাল" আসেন তখন শত্রু পক্ষ তাকে এবং তার অনুসারী ৩৬০ আউলিয়াদেরকে "শিলা" বা "পাথর" দ্বারা আটকেে দিয়েছিল। তখন মহান আল্লাহ্ তায়ালার অশেষ মেহেরবানীতে তিনি বলেন "শিলাহাট"(অর্থ্যাৎ- পাথর সরে যা)। তখন, তৎক্ষণাৎ পাথর গুলো সরে যায়। এই থেকে নাম রাখা হয় "শিলাহাট"। তারপর নাম সহজ করতে করতে হয় "শিলহাট", "সিলাহেট", "সিলেট (বর্তমানে)"। *[১৯]

এছাড়াও বলা হয়, এক সময় সিলেট জেলায় এক ধনী ব্যক্তির একটি কন্যা ছিল। তার নাম ছিল শিলা। ব্যক্তিটি তার কন্যার স্মৃতি রক্ষার্থে একটি হাট নির্মাণ করেন এবং এর নামকরণ করেন শিলার হাট। এই শিলার হাট নামটি নানাভাবে বিকৃত হয়ে সিলেট নামের উৎপত্তি হয়।[২১]

অর্থনীতি[সম্পাদনা]

সিলেট একটি প্রবাসীবহুল জনপদ। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্য সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সিলেট বিভাগের মানুষের বসবাস রয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা এই বিভাগের প্রধান উৎস[২২][২][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] এছাড়া পাহাড়ে ও প্রান্তরে বেড়ে ওঠা কৃষি ব্যবস্থাপনা যেমন; চা, ধান, মাছ, কমলা, লেবু, আনারস, বাশঁ, আম, ইত্যাদি এই অঞ্চলের মানুষের অনন্য অবলম্বন এছাড়া সিলেট পর্যটন এলাকা হিসেবে প্রসিদ্ধ। পর্যটন খাত থেকেও প্রচুর মুদ্রা অর্জন করে সিলেট।

সরকারী ভাবে সিলেটে দুইটি বিসিক শিল্প নগরী গড়ে উঠেছে।
১। খাদিম নগর শিল্প নগরী
২। গোটাটিকর শিল্প নগরী।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান[সম্পাদনা]

  • শিক্ষার হার ৫১.২%। [২৩]

শিক্ষার ক্ষেত্রে সিলেট বাংলাদেশের একটি অগ্রসর অঞ্চল।

  1. বিশ্ববিদ্যালয়ঃ ০৭ টি (সরকারি ০২ টি, বেসরকারি ০৫ টি)।[২৩]
  2. কলেজঃ ৪৪ টি স্মাতকোত্তর-০১, স্মাতক-১৮, এইচএসসি-২০, সরকারি-৫টি, বেসরকারি-৩৯।[২৩]
  3. মাধ্যমিক বিদ্যালয়ঃ ৩১৬ টি (সরকারি ০৬ টি, বেসরকারি ২৭৭ টি এবং নিম্ন- মাধ্যমিক-৩৩ টি)।[২৩]
  4. প্রাথমিক বিদ্যালয়ঃ ১৯৬১ টি (সরকারি ১,৩৯২ টি, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়-১৫, কেজি স্কুল-৫৫৪)। [২৩]
  5. মাদ্রাসাঃ ২০০টি [সরকারি ১টি (উচ্চতর), কওমি ৪টি (উচ্চতর) বেসরকারি ইবতেদায়ী ৭৩ টি, দাখিল-৮১,আলিম-২৩, ফাযিল-১০, কামিল-০৮]। [২৩]
  6. ক্যাডেট কলেজঃ ০১ টি (এয়ারপোর্ট রোড, খাদিমনগর)। [২৩]
  7. আইন কলেজঃ ০২ টি (মেন্দিবাগ, সিলেট; ইলেকট্রিক সাপ্লাইরোড, আম্বরখানা)।[২৩]
  8. বন বিদ্যালয়ঃ ০১ টি (এয়ারপোর্ট রোড, খাদিমনগর)।[২৩]
  9. মডেল স্কুল ও কলেজ|মডেল স্কুল ও কলেজঃ ০১টি (পূর্ব শাহী ঈদগাহ)।[২৩]
  10. সংস্কৃত কলেজঃ ০১ টি (মীরের ময়দান)।[২৩]
  11. মুক ও বধির বিদ্যালয়ঃ ০১ টি (শেখঘাট)। [২৩]
  12. মনিপুরি নৃত্য একাডেমীঃ ০১ টি (সাগরদিঘী)। [২৩]
  13. প্রাইমারী টিচার্স ট্রেনিং একাডেমী|প্রাইমারী টিচার্স ট্রেনিং একাডেমীঃ]] ০১ টি (সুবিদবাজার)। [২৩]
  14. টিচার্স ট্রেনিং কলেজঃ ০৩ টি (সরকারি ০১ টি (শাহী ঈদগাহ), বেসরকারি ০২ টি)। [২৩]
  15. ক্রীড়া প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানঃ ০১ টি (এয়ারপোর্ট রোড, খাদিমনগর)। [২৩]
  16. মেডিকেল কলেজঃ ০৬ টি (সরকারি ০১ টি, বেসরকারি ০৫ টি)। [২৩]
  17. সরকারি কারিগরি কলেজঃ ০১ টি (খোজারখোলা)।[২৩]
  18. ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজঃ ০১ টি। [২৩]
  19. কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটঃ ০১ টি।[২৩]
  20. যুব প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটঃ ০১টি।[২৩]
  21. বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটঃ ০১টি।[২৩]
  22. আয়ুর্বেদ মেডিকেল কলেজঃ ০১টি (সরকারি)।[২৩]
  23. চক্ষু হাসপাতালঃ ০৩টি। [২৩]
  24. ডায়বেটিক হাসপাতালঃ ০১টি (পুরাণ লেন)।[২৩]
  25. সেবিকা প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটঃ ০১টি (ওসমানী মেডিকেল কলেজে)।[২৩]
  26. হোমিও কলেজঃ ০১ টি (মির্জাজাঙ্গাল)।[২৩]

:উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলোঃ [২৩]

  1. শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
  2. সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
  3. বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ
  4. বাগিরঘাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
  5. সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা
  6. এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ
  7. জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম দারুল হাদিস (১৯১৭)
  8. ঢাকাউত্তর রানাপিং আরাবিয়া হুসাইনিয়া মাদ্রাসা (১৯৩০)
  9. জামিয়া মোহাম্মদিয়া হাড়িকান্দী (১৯১৯)
  10. জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া (১৯৭৪)
  11. জামিয়া কাসিমুল উলুম দরগাহে হজরত শাহজালাল (রহ.) (১৯৬১)
  12. জামিয়া ইসলামিয়া হুসাইনিয়া গহরপুর (১৯৫৭)
  13. জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হাদিস রাজাগঞ্জ ইউনিয়ন (১৯৩২)
  14. জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর
  15. সিলেট ইইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ
  16. জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গা মাদ্রাসা
  17. লিডিং ইউনিভার্সিটি
  18. সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
  19. মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি
  20. নর্থ ইষ্ট ইউনিভার্সিটি
  21. মুরারিচাঁদ কলেজ
  22. মদনমোহন কলেজ
  23. শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা
  24. জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ
  25. নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ
  26. সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ
  27. পার্ক ভিউ মেডিকেল কলেজ
  28. হযরত শাহজালাল রঃ ডিগ্রি কলেজ,চিকনাগু, জৈন্তাপু, সিলেট
  29. জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হাদিস হরিপুর বাজার মাদ্রাসা, জৈন্তাপুর সিলেট
  30. জামেয়া ইসলামিয়া বুধবারীবাজার,গোলাপগঞ্জ,সিলেট

সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড[সম্পাদনা]

সিলেটে বেশ কিছু সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে; এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ, নজরুল একাডেমী ইত্যাদি।

ভাষা ও সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

ভাষা[সম্পাদনা]

ভাষা নিয়ত পরিবর্তনশীল এবং ভাষার পরিবর্তন হয় এলাকা ভিত্তিক এবং দূরত্বের উপর নির্ভর করে। সিলেটিদের কথ্য ভাষা প্রকৃত বাংলা ভাষা হতে বেশ আলাদা। সিলেট ঐতিহাসিক ভাবেই আলাদা ভাষা এবং আলাদা সংস্কৃতি ধারণ ও লালন করে আসছে। এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বসবাস যার ফলে ভাষার ক্ষেত্রেও রয়েছে বৈচিত্র্য। পূর্বে সিলেট আসাম রাজ্যের অন্তর্গত থাকার ফলে সিলেটের ভাষা ও সংস্কৃতিতে আসামের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও সিলেটের রয়েছে এক বৈচিত্র্যময় নিজস্ব ভাষা যা নাগরী লিপি হিসাবে পরিচিত।

সিলেটের স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উজ্জ্বলতম দলিল নাগরী লিপি। ড: সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় খৃষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীকে নাগরী লিপির প্রচলন কাল বলে মত প্রকাশ করেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন ষোড়শ শতাব্দীর শেষ দিকে মোঘলদের দ্বারা তাড়িত হয়ে সিলেটে আগত আফগান পাঠানরা এর সৃষ্টি করেন। এ ব্যাপারে আরেকটি মত চালু রয়েছে। সেটি হল-ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ সৃষ্ট সংস্কৃত বহুল বাংলার বিকল্প রুপে সিলেটিরা এই লিপি ও সাহিত্যের জন্ম দেন। এই রীতিতেই রচিত তৎকালীন উন্নত সাহিত্য। সিলেটের আঞ্চলিক বা কথ্য ভাষার রয়েছে বিজ্ঞান সম্মত লিপি মালা। গবেষক ও ভাষা বিজ্ঞানীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। নাগরীর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-এটি সিলেট অঞ্চলের মুসলমানদের একান্ত নিজস্ব সম্পদ। নাগরীর অক্ষর মাত্র ৩২টি। যুক্ত বর্ণ সাধারণত ব্যবহৃত হয় না। মাত্র আড়াই দিনে শেখা যায়। তাই মহিলাদের মধ্যে নাগরীর প্রচার ও প্রসার ছিল বেশি। এখনো অনেক মহিলা নাগরী জানেন। নাগরীতে রচিত পুঁথি পুস্তকের বিষয়বস্ত্ত প্রধানত নামায, রোজা, হজ্ব, যাকাত, ইসলামী ইতিহাস, ঐতিহ্য, কাহিনী এবং রাগ, বাউল ও মরমী সঙ্গীত। এ পর্যন্ত ৮৮টি মুদ্রিত গ্রন্থসহ(নাগরী হরফে) ১৪০টি গ্রন্থের সন্ধান পাওয়া গেছে। ‘সিলেটি নাগরী লিপি ভাষা ও সাহিত্য’ সম্পর্কে গবেষণা করে জনাব গোলাম কাদির ১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। নাগরী সাহিত্যে ছাদেক আলী সর্বাধিক জনপ্রিয় কবি। তিনি ১৭৯৮ সালে কুলাউড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আগে তার নাম ছিল গৌর কিশোর সেন। ১৮২৩ সালে তিনি মৌলভীবাজারের মুনসেফ ছিলেন।

নাগরী পুঁথি রচয়িতাদের মধ্যে এ পর্যন্ত মুন্সী ইরপান আলী,দৈখুরা মুন্সী, আব্দুল ওহাব চৌধুরী, আমান উল্যা, ওয়াজি উল্যা, শাহ হরমুজ আলী, হাজী ইয়াছিনসহ ৫৬ জনের পরিচিতি পাওয়া গেছে। গোলাম হুসনের লিখিত ‘তালিব হুসন'কে প্রথম গ্রন্থ রুপে ধরে নেওয়া হয়। নাগরী লিপিতে সাহিত্য সৃষ্টির অনেক পর এর মুদ্রণ শুরু হয়। টাইপ ও ছাপা খানার অভাবে হাতে লিখেই নাগরীর প্রসার ঘটে। এ সময় সিলেট শহরের হাওয়াপাড়া নিবাসী মৌলভী আব্দুল করিম ইউরোপ সফর শেষে দেশে ফেরেন। নাগরী লিপির টাইপ তৈরি করে চালু করেন ছাপা খানা। বন্দর বাজারে স্থাপিত ঐ প্রেসের নাম ছিল ইসলামিয়া প্রেস। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রেসটি বোমায় পুড়ে যায়। সিলেট শহরের নাইওরপুলে ছিল সারদা প্রিন্টিং পাবলিশিং। ১৯৪৭ পূর্ববর্তীকালে কলকাতা ও শিয়ালদহেও নাগরী লিপির প্রেস ছিল। বৃহত্তর সিলেট, কাছাড়, করিমগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় নাগরী লিপি ও সাহিত্যের প্রচার ও সমাদর ছিল।

মণিপুরী নৃত্যকলা[সম্পাদনা]

মণিপুরী সংস্কৃতির সমৃদ্ধতম শাখা হলো নৃত্যকলা। মুণিপুরী ধর্মমতে মানব ও পৃথিবী সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকেই নৃত্যের শুরু।

নৃত্যের মণিপুরী প্রতিশব্দ হলো-জাগোই। বিশেষজ্ঞদের মতে-চৎনা চৎনা কোয়বা-হেঁটে হেঁটে বৃত্ত সৃষ্টি করা থেকে চকোয় যা পরিবর্তিত হয়ে জগোই শব্দের উৎপত্তি ঘটিয়েছে। আবার অনেকের মতে, এই জাগোই শব্দের উৎপত্তি সংস্কৃত চক্র শব্দ থেকে। আর তাই মণিপুরী নৃত্যের দৈহিক গতিই বৃত্ত বা অর্ধবৃত্ত রচনা করে যা গোলাকৃতির মণিপুর উপত্যকা বা বৃহত্তর অর্থে পৃথিবী ও বিশ্বসৃষ্টির প্রতীক।

মণিপুরি নৃত্যের আদিরূপ লাই হারাওবা নৃত্য। লাই অর্থ দেবতা, হারাওবা অর্থ আনন্দ। অর্থাৎ দেবতাদের আনন্দ বিনোদনের জন্য নৃত্য পরিবেশনা।
বর্তমানে প্রচলিত লাই হারাওবা নৃত্যে চারটি প্রকারভেদ রয়েছে। এগুলো হলো কংলৈ হারাওবা, মোইরাং হারাওবা, চকপা হারাওবা ও ককচিং হারাওবা । লাই ঈকৌবা বা দেবতার উদ্বোধন দিয়ে শুরু লাই হারাওবা নৃত্য। তারপর পর্যায়ক্রমে পরিবেশিত হতে থাকে লৈশেম জগোই (পৃথিদবী সৃষ্টির নৃত্য), লৈনেৎ জগোই (সমতল ভূমির সৃষ্টির নৃত্য), লৈতা জগোই (বসতি স্থাপনের নৃত্য), লৈমা জাগোই (কুমারী নৃত্য)। তারপর ধীরে ধীরে গৃহনির্মাণ, কাপড় বোনা, শস্যরোপণ, শিকার, বিভিন্ন ক্রীড়াকৌশল, সমস্ত কিছুই পর্যায়ক্রমে পরিবেশিত হতে থাকে।

তাই ঐতিহাসিক Saraj Nalini Parrott বলেছেন, The Lai Haroba mirrors the entire culture of the Manipuri People.

লাই হারাওবা নৃত্য একটি লোকনৃত্য কিন্তু ধ্রুপদী নৃত্যের শৃঙ্খলা এতে সুষ্পষ্ট। বস্তুত এই নৃত্য ধ্রুপদী নৃত্যের অঙ্কুরবিশেষ। এই নৃত্যে নানাপ্রকার লৌকিক হস্তমুদ্রা ব্যবহ্নত হয়। তান্ত্রিক হস্তমুদ্রার সাথে সাদৃশ্য লক্ষণীয়। পরবর্তীকালে লাই হারাওবা নৃত্যই পরিশোধিত-পরিমার্জিত হয়ে রূপ নিয়েছে ধ্রুপদী নৃত্যের। মণিপুরে বৈষ্ণব সংস্কৃতির প্রসারের পর থেকে এই নৃত্য রাসনৃত্যের অন্যতম উপাদান ভঙ্গি পারেং-এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। [২৪]

পত্র পত্রিকা[সম্পাদনা]

দৈনিক যুগভেরী (প্রাচীনতম বাংলা সংবাদপত্র, প্রথম প্রকাশ ১৯৩০), দৈনিক শ্যামল সিলেট, দৈনিক সিলেটের ডাক, দৈনিক জালালাবাদ,দৈনিক সিলেট সংলাপ, দৈনিক সিলেট বানী,দৈনিক সিলেটের দিনকাল,দৈনিক জাগ্রত সিলেটসহ বেশ কিছু দৈনিক পত্রিকা সিলেট থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে আসছে। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাপ্তাহিক, মাসিক ও সাময়িক পত্র পত্রিকা সিলেট থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে।

অনলাইন নিউজ পোর্টালে :

  • sylhetveiw.com
  • sylcosongbad.com,
  • ajkersyelhet.com,
  • sylhetprotidin24.com,
  • dainksylhet.com


চিত্তাকর্ষক স্থান ও পর্যটন আকর্ষণ[সম্পাদনা]

হযরত শাহজালাল ও হযরত শাহ পরান এর পবিত্র মাজার শরীফ এ জেলায় অবস্থিত। প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ লোক মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আগমন করেন। আসে বিপুল সংখ্যক পর্যটক। সিলেট এর স্থানীয় ভাষা ‘‘নাগরী ভাষা’’র একটি বিশেষত্ব রয়েছে যা অন্য অঞ্চল থেকে পৃথক। শীত মৌসুমে সিলেটের হাওর-বাওর গুলো ভরে উঠে অতিথি পাখির কলরবে।

# জাফলং [২৫]
  1. ভোলাগঞ্জ
  2. লালাখাল
  3. তামাবিল
  4. হাকালুকি হাওর [২৬]
  5. ক্বীন ব্রীজ
  6. হযরত শাহজালালহযরত শাহ পরাণ এর মাজার শরীফ
  7. মহাপ্রভু শ্রী চৈত্যনো দেবের বাড়ী
  8. হাছন রাজার মিউজিয়াম
  9. মালনি ছড়া চা বাগান
  10. ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর
  11. পর্যটন মোটেল
  12. জাকারিয়া সিটি
  13. ড্রিমল্যান্ড পার্ক
  14. কৈলাশটিলা
  15. হাকালুকি হাওর
  16. লালাখাল
  17. পাংতুমাই
  18. আলী আমজদের ঘড়ি
  19. জিতু মিয়ার বাড়ী
  20. মনিপুরী রাজবাড়ি
  21. মনিপুরী মিউজিয়াম
  22. শাহী ঈদগাহ
  23. ওসমানী শিশু পার্ক
  24. মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত
  25. সিলেটি নাগরী লিপি
  26. পাংতুমাই
  27. রাতারগুল
  28. টাংগুয়ার হাওর
  29. লোভাছড়া
  30. হাম হাম জলপ্রপাত
  31. কৈলাশটিলা
  32. পরিকুণ্ড জলপ্রপাত
  33. সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান
  34. হারং হুরং
  35. বরাক নদীর তিন মোহনা

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বঃ[সম্পাদনা]

(১৮৪৫-১৯০৮)

  • মো : রস্তুম আলী খান- অব. প্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ, বিয়ানীবাজার ও প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ দাসের বাজার আদর্শ কলেজ, বড়লেখা, মৌলভীবাজার।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন, ২০১৪)। "এক নজরে সিলেট জেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ৬ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০১৪  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  2. "জেলাগুলোর শ্রেণি হালনাগাদ করেছে সরকার"। বাংলানিউজ২৪। ১৭ আগস্ট ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০২০ 
  3. "জেলা তথ্য বাতায়ন"বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। Archived from the original on ৬ জুলাই ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১১ 
  4. "http://www.banglapedia.org"। ৩১ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০১১  |title= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  5. "জেলার পটভূমি"। ২২ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০১১ 
  6. "ইউনিয়ন পরিসংখ্যান সংক্রান্ত জাতীয় তথ্য" (পিডিএফ)web.archive.org। Wayback Machine। Archived from the original on ৮ ডিসেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  7. "Election Commission Bangladesh - Home page"www.ecs.org.bd 
  8. "বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জানুয়ারি ১, ২০১৯" (পিডিএফ)ecs.gov.bdবাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ১ জানুয়ারি ২০১৯। ২ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৯ 
  9. "সংসদ নির্বাচন ২০১৮ ফলাফল"বিবিসি বাংলা। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  10. "একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল"প্রথম আলো। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  11. "জয় পেলেন যারা"দৈনিক আমাদের সময়। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  12. "আওয়ামী লীগের হ্যাটট্রিক জয়"সমকাল। ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  13. Ancient India" Ramesh Chandra Majumdar, Chapter 3, p267, Motilal Banarsidass Publishers, Eighth Edition: Delhi, 1977
  14. সিলেট গীতিকা
  15. "ঐতিহাসিক ঘটনাবলি"। ২২ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০১১ 
  16. Journal of The Royal Asiatic Society, part 1, 1st January 1920 (Six Countries Mentioned By Yuan Chwang.)
  17. বিলেতে সিলেটবাসী, ইতিহাস গবেষক ও সাংবাদিক মতিয়ার রহমান চৌধুরী (ইউ,কে)।
  18. সাংবাদিক ও কলামিষ্ট মোহাম্মদ হান্নান মিয়া (ইউ,কে) সম্পাদিত (স্মরণিকা পুস্তক)নবীগঞ্জের ডাক
  19. হযরত শাহ্ জালাল এর জীবনী। সিলেট। 
  20. "আধ্যাত্মিক রাহবার হযরত শাহজালাল (রহ.)'র জীবন ও কর্ম"আমাদের সিলেট। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০১৬ 
  21. "দেশবীক্ষণ : সিলেট জেলা" (প্রিন্ট)। যায় যায় দিন। ১ জুলাই ২০১৪। পৃষ্ঠা ৭। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১৪ 
  22. সিলেট বিভাগের ভৌগোলিক ঐতিহাসিক রুপরেখা, সৈয়দ মোস্তফা কামাল, প্রকাশক- শেখ ফারুক আহমদ, পলাশ সেবা ট্রাস্ট সিলেট, প্রকাশকাল- ফেব্রুয়ারি ২০০১১, পৃঃ ১০
  23. সিলেট জেলা বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন
  24. [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ অক্টোবর ২০১১ তারিখে ভাষা ও সংস্কৃতি
  25. প্রকৃতি কন্যা জাফলং
  26. হাকালুকি হাওর

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]