ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা

স্থানাঙ্ক: ২৪°৪২′৩০″ উত্তর ৯১°৫৬′২৫″ পূর্ব / ২৪.৭০৮৩৩° উত্তর ৯১.৯৪০২৮° পূর্ব / 24.70833; 91.94028
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ফেঞ্চুগঞ্জ
উপজেলা
মানচিত্রে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা
মানচিত্রে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা
স্থানাঙ্ক: ২৪°৪২′৩০″ উত্তর ৯১°৫৬′২৫″ পূর্ব / ২৪.৭০৮৩৩° উত্তর ৯১.৯৪০২৮° পূর্ব / 24.70833; 91.94028 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগসিলেট বিভাগ
জেলাসিলেট জেলা
আয়তন
 • মোট১১৪.০৯ বর্গকিমি (৪৪.০৫ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট১,৩৮,৮৮১
 • জনঘনত্ব১,২০০/বর্গকিমি (৩,২০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৬০%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৬০ ৯১ ৩৫
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

ফেঞ্চুগঞ্জ ওরফে ফিন্সুগঞ্জ বাংলাদেশের সিলেট জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। ফেঞ্চুগঞ্জ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকিকুশিয়ারা নদীর তীরে অবস্থিত। ফেঞ্চুগঞ্জ থানা ১৯০৭ সালে গঠিত হয় এবং ১৯৮০ সালে উপজেলা হয়।[১][২]

অবস্থান ও আয়তন[সম্পাদনা]

এই উপজেলার উত্তরে দক্ষিণ সুরমা উপজেলাগোলাপগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলাকুলাউড়া উপজেলা, পূর্বে গোলাপগঞ্জ উপজেলামৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলা, পশ্চিমে বালাগঞ্জ উপজেলা

প্রশাসনিক এলাকা[সম্পাদনা]

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় বর্তমানে ৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম ফেঞ্চুগঞ্জ থানার আওতাধীন।[৩]

ইউনিয়নসমূহ:

এ উপজেলায় ৩০টি মৌজা এবং ১১৪টি গ্রাম রয়েছে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

নামকরণ[সম্পাদনা]

দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী কর্তৃক প্রণীত ফেঞ্চুগঞ্জ অঞ্চলের গৌরবময় পুরাতত্ত্ব বিষয়ক পুস্তিকার উদ্বৃতি অনুযায়ী জানা যায় পূর্বকালে পরগণার বাজার, পিটাইটিকর ও কুশিয়ারা নদীর দক্ষিণ পাড়ের মধ্যবর্তী বর্তমান ছুরপান আলীর বাড়ির পার্শ্বে ছিল। তখন স্টিমার পথ বা রেলপথ ছিলনা। বর্ষাকালে চতুর্দিকে পানি থাকত। এছাড়াও নানাবিধ কারণে পরগণাবাসী বাজার স্থানান্তরের প্রয়োজন অনুভব করেন। তখন ফেঞ্চুগঞ্জের বর্তমান পূর্ববাজারের স্থান নির্ধারণ করা হয়। তৎকালীণ সময়ে ঐ স্থানের মালিকগণ পরগণাবাসীকে বাজারের জন্য বার আনা মালিকি স্বত্ত্ব দান করেন। ইন্দানগর পরগণার ফরিদপুর মৌজায় ব্রাহ্মণবাড়ী সংলগ্ন দক্ষিণে যে ছাড়া বাড়ী আছে ঐ বাড়ীর বসিন্দা ফেচুঁরাম বৈদ্য নামক এক ব্যক্তির একটি মাত্র দোকান ঐ স্থানে পূর্বে থেকে চালু ছিল। ঐ ফেঁচুরাম এর নাম অনুসারে উক্ত স্থানের নাম লোকজনের অজ্ঞাতসারে ফেঁচুগঞ্জ নাম পরিচিত হতে থাকে। পরবর্তীতে ফেচুগঞ্জকে ফেঞ্চুগঞ্জ নামকরণ করা হয়।

এছাড়াও এলাকার বিভিন্ন জনশ্রুতি রয়েছে। নুরপুর গ্রামের প্রবীণ সালিশি বিচারক ও বিশিষ্ট সমাজসেবক জনাব মোঃ নোমান মিয়া-এর মতে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম দুটি হচ্ছে (১)বর্তমান উপজেলার ভূমি অফিসের আশপাশে কোন এক স্থানে জেলে, কৃষকদের নিত্য প্রয়োজনীয় তামাক, চিড়া, গুড়,মুড়ি ইত্যাদির পশরা নিয়ে ফেঁচু নামের এক ব্যক্তির ঝুপড়ি ঘরের মত এক দোকান ছিল। ঐ দোকানদার ব্যক্তির নামানুসারে ফেঁচুগঞ্জ, যা পরবর্তীতে ফেঞ্চুগঞ্জ নামকরণ করা হয়।(২) অপর জনশ্রুতি হচ্ছে হযরত শাহ মালুম (র) এর মাজারের একজন খাদেম ছিলেন পেঁচু শাহ বা ফেঁচুই শাহ। তিনি প্রতিদিনি বিকাল বেলা কুশিয়ারা নদীর ঘাটে এসে বসতেন। পরে এখানে দোকানপাট গড়ে উঠলে এর নাম ফেঁচুগঞ্জ রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে ফেঁচুগঞ্জ এর নাম সংশোধন করে ফেঞ্চুগঞ্জ রাখা হয়।

বর্তমান উপজেলার ইতিহাস[সম্পাদনা]

ব্রিটিশ শাসিত ভারত এর অন্যতম জাহাজ কোম্পানী IGN of R.S.N (Indian General Navigation of River System Navigation Co LTD) এর জাহাজ মেরামত কেন্দ্র ছিল কুশিয়ারা তীরবর্তী ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা। ১৯২২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ একটি থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালের ২ জুলাই বাংলাদেশের অন্যান্য থানার সাথে এক প্রশাসনিক আদেশে ইহা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে এ উপজেলায় নতুন দুইটি ইউনিয়ন সহ মোট পাঁচটি ইউনিয়ন রয়েছে। ব্রিটিশ শাসিত ভারতের অন্যতম জাহাজ কোম্পানী IGN of R.S.N (Indian General Navigation of River system Navigation Co LTD) এর জাহাজ মেরামত কেন্দ্র ছিল কুশিয়ারা তীরবর্তী ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা।উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বর্তমান কার্যালয়টি ছিল মেরামত কোম্পানীর এজেন্ট এর বাংলো। বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসভবনটি ছিল জাহাজ কোম্পনীর ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের বাসা। কালের বিবর্তনে জাহাজ কোম্পানীর বাংলো উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে রূপান্তরিত হয়েছে। এ কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসরের বাসাকে কেন্দ্র করে এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের নিকট অনেক গল্প প্রচলিত আছে। অনেকে এ কার্যালয়কে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অফিস” হিসেবে অবিহিত করত। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস ভবনটি বর্তমানে ব্যবহার উপযোগী হলেও প্রশাসনিক ঐতিহ্য হিসেবে একে সংরক্ষণ করা একান্ত অপরির্হায যাতে করে পরবর্তী প্রজন্মও আমাদের অতীত ইতিহাসের নিদর্শন প্রত্যক্ষ করতে পারে।

জনসংখ্যার উপাত্ত[সম্পাদনা]

ফেঞ্চুগঞ্জের জনসংখ্যা ১,৩৮,৮৮১জন। তার মধ্যে পুরুষ ৭০,৪৪৯ জন এবং মহিলা ৬৮,৪৩২ জন।

শিক্ষা[সম্পাদনা]

ফেঞ্চুগঞ্জের সাক্ষরতার হার ৫৩.৪৫%। পুরুষদের স্বাক্ষরতার ৫৮.২৫% এবং মহিলাদের সাক্ষরতার হার ৪৮.৭৫%।

উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান[সম্পাদনা]

মাদ্রাসা
  • ফেঞ্চুগঞ্জ সরকারি কলেজ।
    • ফেঞ্চুগঞ্জ মোহাম্মদিয়া কামিল মাদরাসা (১৯৭১)।
    • ফরজানা চৌধুরী গার্লস স্কুল ও কলেজ
    • মানিক কোনা স্কুল এন্ড কলেজ
    • জমিরুনন্নেছা একাডেমি
    • ঘিলাছড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়
  • কাসিম আলী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়
  • ফরিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
  • এনজিএফএফ স্কুল
  • পিপিএম উচ্চ বিদ্যালয়
  • সৈয়দ রিয়াছত আলী
  • দনারাম উচ্চ বিদ্যালয়
    • উত্তর কুশিয়ারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়
  • ইউসুফ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • ব্রাম্মণগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • মাইজগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • উসমান আলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়
    • খিলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

অর্থনীতি[সম্পাদনা]

ফেঞ্চুগঞ্জে দুটি সরকারী সার কারখানা অবস্থিত। সেগুলো হলো- ১. ন্যাচারাল গ্যাস ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিঃ (ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা) এটি এশিয়ার প্রথম সার কারখানা। ২. শাহজালাল ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিঃ। এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সার কারখানা। তাছাড়াও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশের মডেল হিসেবেও পরিচিত। ফেঞ্চুগঞ্জে ৫ টি সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলো হলো- ১. ৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র (ফেঞ্চুগঞ্জ কম্বাইন্ড সাইকল গ্যাস) এটি বর্তমানে ১৮০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হয়েছে ২. বারাকাতুল্লাহ ইলেক্ট্র ডায়নামিক লিঃ ৫১ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন। ৩.এনার্জি প্রিমা লিঃ যা ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন। ৪. লিভার্টি পাওয়ার ইউ.এস (নির্মাণাধীন) ৫.কুশিয়ারা পাওয়ার প্লান্ট লিঃ (নির্মাণাধীন) ৬. বিল্ড আপ অপরা লিঃ (নির্মাণাধীন)। এছাড়া, এখানে ২ টি চা বাগান আছে।

বিবিধ[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা"fenchuganj.sylhet.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-১৭ 
  2. "ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-১৭ 
  3. "ইউনিয়নসমূহ - ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা"fenchuganj.sylhet.gov.bd। জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ১২ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]