সুহাসিনী দাস
সুহাসিনী দাস (জন্ম ১লা ভাদ্র ১৩২২ (বঙ্গাব্ধ) - মৃত্যু মে ২৫, ২০০৯) বাংলাদেশী নারী সংগঠক যিনি ব্রিটিশ বিরোধী এবং ভারতের স্বাধীনতা অন্দোলনের পূর্ব বাংলায় বিপ্লবী ভূমিকা পালন করেন।[১]
সুহাসিনী দাস | |
---|---|
জন্ম | ১৯১৫ ইং |
মৃত্যু | মে ২৫, ২০০৯ ইং |
জাতীয়তা | 🇧🇩 বাংলাদেশি |
পরিচিতির কারণ | স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সমাজসেবী |
আন্দোলন | ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন |
পিতা-মাতা |
|
পুরস্কার |
|
প্রাথমিক জীবন
[সম্পাদনা]সুহাসিনী দাস সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম প্যারীমোহন রায় ও মায়ের নাম শোভা রায়। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]মাত্র ১৬ বছর বয়সে সিলেট শহরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী কুমুদ চন্দ্র দাসের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের চার বছরের মধ্যেই তার স্বামীর মৃত্যু হয়। এর কিছুদিন পরই তিনি প্রথমে সমাজসেবা ও পরে রাজনীতিতে সক্রিয় হোন। শ্বশুড়ের পরিবার থেকে প্রাপ্ত অঢেল সম্পত্তির খুব সামান্য নিজের খরচের জন্য রেখে বাকি সব সম্পত্তি জণকল্যাণমূলক কাজে বিলিয়ে দিয়েছেন।[২] একসময় সাধারণ গৃহবধূ থেকে হয়ে উঠেছেন সক্রিয় কংগ্রেসকর্মী। সারা জীবন অভয় বাণী শুনিয়েছেন বঞ্চিতদের। জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন সাধারণ মানুষের পাশে থেকে। সাধারণ মানুষের কল্যাণে বিলিয়ে দিয়েছেন তাঁর বিশাল সম্পত্তির পুরোটাই। সুহাসিনী দাসের জন্ম ১৩২২ সনের ১ ভাদ্র, সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুরে। বাবা প্যারী মোহন রায় ও মা শোভা রায়। বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী ও শিল্পানুরাগী। তাঁদের গ্রামটি ছিল অন্য রকম। তখনকার সময় সেই গ্রামে মেয়েদের স্কুল ছিল। সেখানে পড়ানো হতো চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত। সুহাসিনীর পড়াশোনার হাতেখড়ি হয় ওই স্কুলেই। মেয়েদের ১৬ বছর বয়স, তখনকার সামাজিক দৃষ্টিকোণ বিয়ের জন্য অনেক বেশি বয়স। সে বয়সেই তাঁর বিয়ে হয় সিলেটের নামকরা ব্যবসায়ী কুমুদ চন্দ্র দাসের সঙ্গে। স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুতে দিশাহারা তিনি। অকাল বৈধব্যের শোক কাটিয়ে উঠতে তিনি আবার লেখাপড়ায় যোগ দেন। এ সময় তিনি শ্রীহট্ট মহিলা সংঘে যোগ দেন। এখানে মেয়েদের সুতা কাটার কাজ তাঁকে আগ্রহী করে তোলে। একপর্যায়ে তিনি এ কাজের দায়িত্ব নেন। চরকায় সুতা কাটতে কাটতে তিনি জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। কারণ ওই সময় স্বদেশি আন্দোলনের সঙ্গে হাতে বানানো কাপড় ও সুতার সম্পর্ক ছিল অনেক গভীর। এরই মধ্যে সুহাসিনীর সঙ্গে পরিচয় হয় কংগ্রেস নেতা ধীরেন্দ্রনাথ দাসের সঙ্গে। যোগ দেন কংগ্রেসে। কিছুদিনের মধ্যে পুরোপুরি রাজনৈতিক কর্মী বনে যান তিনি। ১৯৪২ সাল। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তখন উত্তাল গোটা ভারতবর্ষ। 'ডু অর ডাই' এই স্লোগানে মুখর সারা শহর আর গ্রাম। সুহাসিনী দাস গ্রেপ্তার হন ব্রিটিশ পুলিশের হাতে। ১৯৪৩ সালে ব্রিটিশ ষড়যন্ত্রে শুরু হয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। দাঙ্গা মোকাবিলায় রিলিফ ক্যাম্প খোলেন কংগ্রেসকর্মীরা। সুহাসিনী ঝাঁপিয়ে পড়েন আর্ত-মানবতার সেবায়। এর পরে ১৯৪৭ সালে রাজনৈতিক গণ্ডি পেরিয়ে তিনি মনোযোগী হন সমাজ সংস্কারে। ১৯৫০ সালে দাঙ্গার পর দলে দলে আত্মীয়স্বজন-বন্ধুরা যখন পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে যাচ্ছিল, তখনো অটল ছিলেন এই মহীয়সী নারী। জন্মভূমি ছেড়ে না গিয়ে নিজেকে উৎসর্গ করেন আর্ত-মানবতার সেবায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনে তাঁর দুই সংগঠনই মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়ায়। এসবের বাইরে সুহাসিনীর একটি প্রাণের প্রতিষ্ঠান ছিল। সেটি সিলেটের চালি বন্দরে উমেশ চন্দ্র-নির্মলা বালা ছাত্রাবাস। ১৯৬২ সালে কংগ্রেস নেতা নিকুঞ্জ বিহারী গোস্বামী এটি প্রতিষ্ঠা করেন।[৩] প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমৃত্যু এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন সুহাসিনী দাস।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে অবদান
[সম্পাদনা]‘ভারত ছাড়’ আন্দোলন শুরু হলে ১৯৪২ সালে সুহাসিনী দাসকে কারাগারে যেতে হয়। তিনি ১৯৪৬ সালে সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেন। সুহাসিনী দাস বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেরও সংগঠক। ১৯৪৭ সালে কুলাউড়ার রঙ্গিরকুল পাহাড়ে কংগ্রেস কর্মীরা একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিশেষ করে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দুর্যোগময় দিনগুলোতে তিনি তার বিচক্ষণতা দিয়ে আশ্রমটিকে রক্ষা করেন। পাকবাহিনী যখন গণহত্যা চালাচ্ছিল তখন সুহাসিনী দাস রঙ্গিরকুল আশ্রমে থেকে মানুষের সেবা করেন। বেশ কয়েকবার পাকবাহিনী আশ্রমে হামলা চালালেও প্রতিবারই তিনি আশ্রম ও নিজেকে রক্ষা করেন। স্বাধীনতার পর তিনি সক্রিয় রাজনীতি ছেড়ে যুক্ত হন সমাজসেবায়। বিশেষ করে নারীদের স্বাবলম্বী করার ক্ষেত্রে পালন করেন বিশেষ ভূমিকা।
পুরস্কার/সম্মাননা
[সম্পাদনা]১৯৭৩ সালে তিনি ভারতের রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে সংবর্ধিত হন। সমাজসেবায় গুরুত্ত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৬ সালে সুহাসিনী দাসকে রাষ্ট্রীয় ‘সমাজসেবা’ পুরস্কার দেওয়া হয়।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ সিলেট জেলা তথ্য বাতায়নে সুহাসিনী দাস ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৩ জুন ২০১১ তারিখে, সংগ্রহের তারিখ: নভেম্বর ২৫, ২০১১।
- ↑ মনোনীত গুণীজন পাতায় সুহাসিনী দাস, Gunijan.org.bd, সংগ্রহের তারিখ: ২৫ নভেম্বর ২০১১।
- ↑ "সুহাসিনী দাস | কালের কণ্ঠ"। Kalerkantho। ২০১৪-০৫-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-২৫।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |
- সিলেট জেলার ব্যক্তি
- জগন্নাথপুর উপজেলা
- বাঙালি জনহিতৈষী নারী
- ২০০৯-এ মৃত্যু
- বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ
- সিলেটের রাজনীতিবিদ
- ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন
- সুনামগঞ্জ জেলার ব্যক্তি
- বাংলাদেশী হিন্দু
- বাংলাদেশী সক্রিয় কর্মী
- ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন কর্মী
- ভারতীয় স্বাধীনতার বিপ্লবী আন্দোলন
- ভারতীয় স্বাধীনতা কর্মী
- ভারতীয় সমাজকর্মী
- বাংলাদেশী নারী অধিকার কর্মী
- ১৯১৫-এ জন্ম