নেত্রকোণা জেলা

স্থানাঙ্ক: ২৪°৫২′৪৮″ উত্তর ৯০°৪৩′৪৮″ পূর্ব / ২৪.৮৮০০০° উত্তর ৯০.৭৩০০০° পূর্ব / 24.88000; 90.73000
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নেত্রকোণা
জেলা
উপরে-বাম থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে: নেত্রকোনা সার্কিট হাউস রাস্তা, নির্মলেন্দু গুন এর বাড়ি, সোমেশ্বরী নদী কাছে দুর্গাপুর, বিরিশিরি লেক, তেলিগাতি-আটপাড়া রাস্তা
বাংলাদেশে নেত্রকোণা জেলার অবস্থান
বাংলাদেশে নেত্রকোণা জেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৪°৫২′৪৮″ উত্তর ৯০°৪৩′৪৮″ পূর্ব / ২৪.৮৮০০০° উত্তর ৯০.৭৩০০০° পূর্ব / 24.88000; 90.73000 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগময়মনসিংহ বিভাগ
আয়তন
 • মোট২,৮১০.২৮ বর্গকিমি (১,০৮৫.০৬ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০২১)[১]
 • মোট২৩,২৪,৮৫৬
 • জনঘনত্ব৮৩০/বর্গকিমি (২,১০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৬৬.১৩%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৩০ ৭২
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

নেত্রকোণা জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ময়মনসিংহ বিভাগের একটি প্রশাসনিক এলাকা। উপজেলার সংখ্যানুসারে নেত্রকোণা বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা।[২] এখানে রয়েছে পাহাড়ি জলপ্রপাত,লাল বালি, চীনা মাটির পাহাড়, টিলা,হাওড়,নদী, খাল, বিল।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে এ অঞ্চল গুপ্ত সম্রাটগণের অধীন ছিল। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গুপ্তযুগে সমুদ্রগুপ্তের অধীনস্থ এই অঞ্চলসহ উত্তর-পশ্চিম ময়মনসিংহ অঞ্চল কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দুরাজ শশাংকের আমন্ত্রণে চৈনিক পরিব্রাজক হিউ এন সাঙ যখন কামরূপ অঞ্চলে আসেন, তখন পর্যন্ত নারায়ণ বংশীয় ব্রাহ্মণ কুমার ভাস্কর বর্মণ কর্তৃক কামরূপ রাজ্য পরিচালিত ছিল। খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগে পূর্ব ময়মনসিংহের উত্তরাংশে পাহার মুল্লুকে বৈশ্য গারো ও দুর্গা গারো তাদের মনগড়া রাজত্ব পরিচালনা করতো। ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষ দিকে জনৈক মুসলিম শাসক পূর্ব ময়মনসিংহ অঞ্চল আক্রমণ করে অল্প কিছুদিনের জন্য মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। চতুর্দশ শতাব্দীতে জিতারা নামক একজন সন্ন্যাসী কামরূপের তৎকালীন রাজধানী ভাটী অঞ্চল আক্রমণ ও দখল করেন। সে সময় পর্যন্তও মুসলিম শাসক ও অধিবাসী স্থায়ীভাবে অত্রাঞ্চলে অবস্থান ও শাসন করতে পারেনি। খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে আলাউদ্দিন হোসেন শাহের শাসনামলে (১৪৯৩-১৫১৯) সমগ্র ময়মনসিংহ অঞ্চল মুসলিম রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত হয়।

আলাউদ্দিন হোসেন শাহ’র পুত্র নসরৎ শাহ’র শাসনামলে (১৫১৯-১৫৩২) দু'একবার বিদ্রোহ সংঘটিত হলেও বিদ্রোহীরা সফল হয়নি। সমগ্র ময়মনসিংহ অঞ্চলেই নসরৎ শাহ’র শাসন বলবৎ ছিল। নসরৎ শাহ-র উত্তরাধিকারীরা (১৫৩৩-১৮৩৮) কিংবা তার পরবর্তী লক্ষ্মণাবতীর অন্য শাসকেরা ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপর আধিপত্য বজায় রাখতে পারেনি। ময়মনসিংহের উত্তরাংশ কোচদের পুনরাধীন হয়ে পড়ে। বাকী অংশ দিল্লীর পাঠান সুলতান শেরশাহ-র (১৫৩৯-১৫৪৫) শাসনভুক্ত হয়েছিল। তৎপুত্র সেলিম শাহ’র শাসনের সময়টি (১৫৪৫-১৫৫৩) ছিল বিদ্রোহ ও অস্থিরতায় পূর্ণ। রাজধানী দিল্লী থেকে অনেক দূরে ও কেন্দ্রীয় রাজশক্তির দূর্বলতার সুযোগে প্রধান রাজস্ব সচিব দেওয়ান সুলায়মান খাঁ (যিনি পূর্বে কালিদাস গজদানী নামে পরিচিত ছিলেন) সম্রাটের বিরুদ্ধাচরণ করেন। এতে করে দেশী ও বিদেশী রাজ্যলিপ্সুরা এতদঞ্চল দখলের প্রয়াস পায়। এর মধ্যে ভাটী অঞ্চল (পূর্ব-উত্তরাংশ) সোলায়মান খাঁ-র দখলভুক্ত ছিল। কেন্দ্রীয় শাসকের প্রেরিত সৈন্যদের হাতে সোলায়মান খাঁ নিহত হলেও তার দু’পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠ পুত্র ঈশা খাঁ খিজিরপুর থেকে ভাটী অঞ্চলে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে ঈশা খাঁ’র মৃত্যুর পর তৎপুত্র মুসা খাঁ ও আফগান সেনা খাজা উসমান খাঁ কর্তৃক অত্রাঞ্চল শাসিত ছিল। সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে (১৬০৫-১৬২৭) সমগ্র ময়মনসিংহ অঞ্চল মোঘল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।[৩][৪]

ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৮০ খিস্টাব্দে হওয়া নেত্রকোণা মহকুমাকে ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জানুয়ারি নেত্রকোণা জেলা করা হয়।

অবস্থান ও আয়তন[সম্পাদনা]

এই জেলার উত্তরে উত্তরে ভারতের মেঘালয়, দক্ষিণে কিশোরগঞ্জ জেলা, পূর্বে সুনামগঞ্জ জেলা, পশ্চিমে ময়মনসিংহ জেলা

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ[সম্পাদনা]

নেত্রকোণা জেলা ১০টি উপজেলা, ১১টি থানা, ৫টি পৌরসভা, ৮৬টি ইউনিয়ন, ১৯৬৭টি মৌজা, ২২৯৯টি গ্রাম ও ৫টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।

উপজেলাসমূহ[সম্পাদনা]

নেত্রকোণা জেলায় মোট ১০টি উপজেলা রয়েছে। উপজেলাগুলো হল:

ক্রম নং উপজেলা আয়তন[৫]
(বর্গ কিলোমিটারে)
প্রশাসনিক থানা আওতাধীন এলাকাসমূহ
০১ আটপাড়া ১৯২.৫১ আটপাড়া ইউনিয়ন (৭টি): স্বরমুশিয়া, শুনই, লুনেশ্বর, বানিয়াজান, তেলিগাতী, দুওজ এবং সুখারী
০২ কলমাকান্দা ৩৭৬.২২ কলমাকান্দা ইউনিয়ন (৮টি): কলমাকান্দা, নাজিরপুর, পোগলা, বড়খাপন, লেঙ্গুরা, খারনৈ, কৈলাটি এবং রংছাতি
০৩ কেন্দুয়া ৩০৩.৬০ কেন্দুয়া পৌরসভা (১টি): কেন্দুয়া
ইউনিয়ন (১৩টি): আশুজিয়া, দলপা, গড়াডোবা, গণ্ডা, সান্দিকোণা, মাসকা, বলাইশিমুল, নওপাড়া, কান্দিউড়া, চিরাং, রোয়াইলবাড়ী আমতলা, পাইকুড়া এবং মোজাফরপুর
০৪ খালিয়াজুড়ি ২৯৭.৬৩ খালিয়াজুড়ি ইউনিয়ন (৬টি): মেন্দিপুর, চাকুয়া, খালিয়াজুড়ি, নগর, কৃষ্ণপুর এবং গাজীপুর
০৫ দুর্গাপুর ২৭৯.২৮ দুর্গাপুর পৌরসভা (১টি): দুর্গাপুর
ইউনিয়ন (৭টি): কুল্লাগড়া, দুর্গাপুর, চণ্ডিগড়, বিরিশিরি, বাকলজোরা, কাকৈরগড়া এবং গাঁওকান্দিয়া
০৬ নেত্রকোণা সদর ৩৪১.৭১ নেত্রকোণা সদর পৌরসভা (১টি): নেত্রকোণা
ইউনিয়ন (১২টি): মৌগাতি, মেদনী, ঠাকুরাকোণা, সিংহের বাংলা, আমতলা, লক্ষ্মীগঞ্জ, কাইলাটি, দক্ষিণ বিশিউরা, চল্লিশা, রৌহা, কালিয়ারা গাবরাগাতি এবং মদনপুর
০৭ পূর্বধলা ৩০৮.০৪ পূর্বধলা ইউনিয়ন (১১টি): হোগলা, ঘাগড়া, জারিয়া, ধলা মূলগাঁও, পূর্বধলা, আগিয়া, বিশকাকুনী, খলিশাউড়, নারান্দিয়া, গোহালাকান্দা এবং বৈরাটি
০৮ বারহাট্টা ২২০ বারহাট্টা ইউনিয়ন (৭টি): বাউসী, সাহতা, বারহাট্টা, আসমা, চিরাম, সিংধা এবং রায়পুর
০৯ মদন ২৩৩.৩০ মদন পৌরসভা (১টি): মদন
ইউনিয়ন (৮টি): কাইটাইল, চানগাঁও, মদন, গোবিন্দশ্রী, মাঘান, তিয়শ্রী, নায়েকপুর এবং ফতেপুর
১০ মোহনগঞ্জ ২৪১.৯৯ মোহনগঞ্জ পৌরসভা (১টি): মোহনগঞ্জ
ইউনিয়ন (৭টি): বড়কাশিয়া বিরামপুর, বড়তলী বানিহারী, তেতুলিয়া, মাঘান সিয়াদার, সমাজ সহিলদেও, সুয়াইর এবং গাগলাজুর

সংসদীয় আসন[সম্পাদনা]

সংসদীয় আসন জাতীয় নির্বাচনী এলাকা[৬] সংসদ সদস্য[৭][৮][৯][১০][১১] রাজনৈতিক দল
১৫৭ নেত্রকোণা-১ দুর্গাপুর উপজেলা এবং কলমাকান্দা উপজেলা মোশতাক আহমেদ রুহী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
১৫৮ নেত্রকোণা-২ নেত্রকোণা সদর উপজেলা এবং বারহাট্টা উপজেলা আশরাফ আলী খান খসরু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
১৫৯ নেত্রকোণা-৩ আটপাড়া উপজেলা এবং কেন্দুয়া উপজেলা অসীম কুমার উকিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
১৬০ নেত্রকোণা-৪ মদন উপজেলা, খালিয়াজুড়ি উপজেলা এবং মোহনগঞ্জ উপজেলা সাজ্জাদুল হাসান (আমলা) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
১৬১ নেত্রকোণা-৫ পূর্বধলা উপজেলা ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল:বীর প্রতীক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

শিক্ষা[সম্পাদনা]

শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণধীন ভবন

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৬৬.১৩%; পুরুষ ৩৭.৯%, মহিলা ৩১.৯%। নেত্রকোণা জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় ১ টি, মেডিকেল কলেজ ১ টি, কলেজ ২৯ টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৩৬ টি, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৮৩ টি, মাদ্রাসা ১৬০টি রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়[সম্পাদনা]

কলেজসমূহ[সম্পাদনা]

মেডিকেল কলেজ[সম্পাদনা]

অন্যান্য[সম্পাদনা]

নেত্রকোণা সরকারী মহিলা কলেজ

বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব[সম্পাদনা]

বৈচিত্রময় খাদ্যাভ্যাস[সম্পাদনা]

শুটকি, চ্যাপা, কবাক, গরুর মাংসের শুটকি, বালিশ মিষ্টি, দামড়া পিঠা ইত্যাদি।

চিত্তাকর্ষক স্থান[সম্পাদনা]

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে নেত্রকোণা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২৩ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০১৬ 
  2. "জেলাগুলোর শ্রেণি হালনাগাদ করেছে সরকার"। বাংলানিউজ২৪। ১৭ আগস্ট ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০২০ 
  3. নেত্রকোণা জেলার ইতিহাস’ (পৃষ্ঠা-১৬৮, খন্ড-৫)
  4. বাংলাপিডিয়া
  5. "ইউনিয়ন পরিসংখ্যান সংক্রান্ত জাতীয় তথ্য" (পিডিএফ)web.archive.org। Wayback Machine। Archived from the original on ৮ ডিসেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০২০ 
  6. "Election Commission Bangladesh - Home page"www.ecs.org.bd 
  7. "বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জানুয়ারি ১, ২০১৯" (পিডিএফ)ecs.gov.bdবাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ১ জানুয়ারি ২০১৯। ২ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৯ 
  8. "সংসদ নির্বাচন ২০১৮ ফলাফল"বিবিসি বাংলা। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  9. "একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল"প্রথম আলো। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  10. "জয় পেলেন যারা"দৈনিক আমাদের সময়। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  11. "আওয়ামী লীগের হ্যাটট্রিক জয়"সমকাল। ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  12. ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ২৯৬।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]