বিষয়বস্তুতে চলুন

বাগেরহাট জেলা

স্থানাঙ্ক: ২২°৪০′০″ উত্তর ৮৯°৪৮′০″ পূর্ব / ২২.৬৬৬৬৭° উত্তর ৮৯.৮০০০০° পূর্ব / 22.66667; 89.80000
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাগেরহাট জেলা
জেলা
উপরে থেকে: ষাট গম্বুজ মসজিদ, সিঙ্গাইর মসজিদ, মোংলা বন্দর, করমজল পয়েন্ট সুন্দরবন, বাগেরহাট জাদুঘর
বাংলাদেশে বাগেরহাট জেলার অবস্থান
বাংলাদেশে বাগেরহাট জেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২২°৪০′০″ উত্তর ৮৯°৪৮′০″ পূর্ব / ২২.৬৬৬৬৭° উত্তর ৮৯.৮০০০০° পূর্ব / 22.66667; 89.80000 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগখুলনা বিভাগ
প্রতিষ্ঠা২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪
সরকার
 • জেলা প্রশাসকমোঃ খালিদ হোসেন
আয়তন
 • মোট৩,৯৫৯.১১ বর্গকিমি (১,৫২৮.৬২ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (১৯৯১)
 • মোট১৫,১৫,৮১৫
 • জনঘনত্ব৩৮০/বর্গকিমি (৯৯০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৬৪.৬২%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৯০০০ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৪০ ০১
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

বাগেরহাট বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত একটি জেলা। এটি খুলনা বিভাগের অন্তর্গত। উপজেলার সংখ্যা বিবেচনায় বাগেরহাট বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা।[]

অবস্থান ও আয়তন

[সম্পাদনা]

বাগেরহাট জেলার উত্তরে গোপালগঞ্জ জেলানড়াইল জেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে পিরোজপুর জেলাবরগুনা জেলা, পশ্চিমে খুলনা জেলা। ২২°৩২’ থেকে ২২°৫৬’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৩২’ থেকে ৮৯°৪৮’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে বাগেরহাট জেলার অবস্থান। এ জেলার আয়তন ৩৯৫৯.১১ বর্গকিলোমিটার; তারমধ্যে ১৮৩৪.৭৪ বর্গকিলোমিটার বনাঞ্চল, ৪০৫.৩ বর্গকিলোমিটার জলাশয় এবং অবশিষ্টাংশ নিম্ন-সমভূমি। বাগেরহাট জেলা সদরের অধিকাংশ ভৈরব নদীর পশ্চিম তীরে এবং শহরের বর্ধিত অংশ ভৈরবের দক্ষিণ প্রবাহ দড়াটানার পশ্চিম তীরে অবস্থিত।বঙ্গবসাগরেের উত্তরে এটি অবস্থিত। []


নামকরণের পটভূমি

[সম্পাদনা]

বাগেরহাটের নাম কে কবে দিয়েছিলেন তা গবেষণা সাপেক্ষ হলেও আজ তা নিরূপন করা দুঃসাধ্য। কারো কারো মতে বাগেরহাটের নিকটবর্তী সুন্দরবন থাকায় এলাকাটিতে বাঘের উপদ্রব ছিল, এ জন্যে এ এলাকার নাম হয়ত ‘‘বাঘেরহাট’’ হয়েছিল এবং ক্রমান্বয়ে তা বাগেরহাট-এ রূপান্তরিত হয়েছে। মতান্তরে হযরত খান জাহান আলী এর প্রতিষ্ঠিত ‘‘খলিফাত-ই-আবাদ’’ এর বিখ্যাত ‘‘বাগ’’ অর্থ বাগান, এ অঞ্চলে এতই সমৃদ্ধি লাভ করে যে, তা থেকেই হয়ে দাঁড়িয়েছে বাগের আবাদ তথা ‘‘ বাগেরহাট’’। তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতটি হচ্ছে শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ভৈরব নদীর উত্তর দিকের হাড়িখালী থেকে বর্তমান নাগের বাজার পর্যন্ত যে লম্বা বাঁক অবস্থিত, পূর্বে সে বাঁকের পুরাতন বাজার এলাকায় একটি হাট বসত। আর এ হাটের নামে এ স্থানটির নাম হলো বাঁকেরহাট। কালক্রমে বাঁকেরহাট পরিবর্তিত হয়ে দাঁড়িয়েছে বাগেরহাট নামে।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

বাগেরহাটে প্রথম বসতি স্থাপন করে অনার্য শ্রেণীর মানুষ। এদের মধ্যে রয়েছে ভূমধ্য সাগরীয় অঞ্চল হতে আসা অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় এবং মঙ্গোলীয় আলপাইন প্রভৃতি। এ অঞ্চলে অনার্য প্রভাবের বড় নিদর্শন হল পৌন্ড্রক্ষত্রিয় সম্প্রদায়। এ জেলার বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে রামপাল উপজেলায় এ সম্প্রদায়ের লোক বেশি বাস করে। পৌন্ড্র শব্দের অপভ্রংশ পুড়া বা পোদ। পৌন্ড্র শব্দটি দ্রাবিড় শব্দজাত যার অর্থ ইক্ষু। অনার্য শ্রেণীভূক্ত নমশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষ ও বাগেরহাটে প্রচুর বাস করে। এদের পূর্ব নাম চন্ডাল। এরা বরেন্দ্র অঞ্চল হতে এসে এখানে বসবাস শুরু করে। এ ছাড়া বাগেরহাটে এক শ্রেণীর মৎস্য শিকারী বা জেলে বসবাস করে যাদের আদি পুরুষ নিগ্রোবটু(নিগ্রয়েড) । এরা ভারত উপমহাদেশের আদিমতম অধিবাসী। খ্রীষ্টের জন্মের প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে মধ্য এশিয়া হতে এ অঞ্চলে আর্য তথা আদি নর্কিভ বা ইন্ডিভদের আগমণ ঘটে। আর্য-অনার্যের শোণিত ধারাই এ অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে ।বস্ত্ত পূজারী অনার্যগণ কৌমধর্ম (টাইবাল ধর্ম) অনুসরণ করতো। শক্তি পূজারী আর্যরা নিয়ে আসে বৈদিক ধর্ম। সূর্য ও অগ্নি ছিল তাদের অন্যতম উপাস্য। আর্য ও অনার্য উভয় ধর্মের আচার অনুষ্ঠান রীতিনীতির মিশ্রণে প্রতিষ্ঠিত হয় হিন্দুধর্ম। বাগেরহাটের অতি প্রাচীন স্থান পানিঘাটে প্রাপ্ত কষ্টি পাথরের অষ্টাদশ ভূজা দেবীমূর্তি, মরগা খালের তীরে খানজাহান আলী এর পাথর ভর্তি জাহাজ ভিড়বার স্থান জাহাজঘাটায় মাটিতে গ্রোথিত পাথরে উৎকীর্ণ অষ্টাদশ ভূজা মহিষ মর্দিনী দেবীমূর্তি, চিতলমারী উপজেলাধীন খরমখালি গ্রামে প্রাপ্ত কৃষ্ণ প্রস্তরের বিষ্ণু মূর্তি ইত্যাদি নিদর্শন এখানে হিন্দু সভ্যতা বিকাশের পরিচয় বহন করে। ১৪৫০ খ্রিঃ খানজাহান আলী খাঞ্জেলী দীঘি খনন করান। এ সময় অনন্য সাধারণ ধ্যাণী বৌদ্ধমূর্তি পাওয়া যায়। ১৯৭১ সালে বৌদ্ধ পুরোহিত বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরো পাল আমলে নির্মিত ঐ বৌদ্ধমূর্তিটি কমলাপুর বৌদ্ধ বিহারে সংস্থাপন করেন। এটা এ অঞ্চলে বৌদ্ধ প্রভাবের পরিচয় বহন করে।

প্রশাসনিক এলাকা

[সম্পাদনা]

পৌরসভা ০৩ টি, গ্রামেরসংখ্যা ১,০৪৭ টি। বাগেরহাট জেলা মোট ৯ টি উপজেলায় বিভক্ত। এগুলো হলো: ০৩ টি পৌরসভা,০৯ টি উপজেলা,৭৫টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ১০৪৭ টি গ্রাম এবং জাতীয় সংসদের ৪টি সংসীয় আসন রয়েছে।

সংসীয় আসন সমূহ

[সম্পাদনা]

পৌরসভাসমূহ

[সম্পাদনা]
  1. বাগেরহাট পৌরসভা
  2. মোংলা পৌরসভা
  3. মোড়েলগঞ্জ পৌরসভা

উপজেলাসমূহ

[সম্পাদনা]

থানাসমূহ

[সম্পাদনা]

অর্থনীতি

[সম্পাদনা]

বাগেরহাট জেলার মানুষ প্রধানত কৃষি নির্ভর। এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে নারিকেল ও সুপারি জন্মে। ধান, মাছ ও বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনীতির প্রধান উৎস। সুন্দরবন উপকূলের কিছু মানুষ মধু ও গোলপাতা সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে।[]

বনজ সম্পদ

[সম্পাদনা]

বাগেরহাট জেলা বনজ সম্পদে অত্যন্ত সমৃদ্ধ, যার মূল উৎস হচ্ছে সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চল। জেলার মোট বনভূমির পরিমাণ ২,০০,৯১৯ হেক্টর, যার একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন—সুন্দরবন। এই বনাঞ্চল খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার প্রায় ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। দেশের মোট বনভূমির প্রায় ৪৪% সুন্দরবনে অবস্থিত, যা বাংলাদেশের মোট ভূখণ্ডের ৪.২%। সুন্দরবনের প্রায় ৬৭% এলাকা স্থলভূমি এবং ৩১% জলভাগ।

বাগেরহাট জেলার শরনখোলা, মোরেলগঞ্জ ও মংলা উপজেলায় সুন্দরবনের পূর্বাংশ অবস্থিত। ২০০১ সালে সুন্দরবনকে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়—বাগেরহাট (পূর্ব), খুলনা (মধ্য) এবং সাতক্ষীরা (পশ্চিম)। বাগেরহাট অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত দুটি রেঞ্জ হলো শরনখোলা ও চাঁদপাই।

সুন্দরবনে রয়েছে ৪৫৩ প্রজাতির বন্যপ্রাণী, যার মধ্যে ১২০টি মাছ, ২৯০টি পাখি, ৪২টি স্তন্যপায়ী, ৩৫টি সরীসৃপ এবং ৮টি উভচর প্রাণী। রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ ও ইরাবতী ডলফিনসহ অনেক বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী এখানে বাস করে। উদ্ভিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রজাতিগুলো হলো সুন্দরী, গেওয়া, কেওড়া, লালাবাইন এবং গোলপাতা, যা সুন্দরবনের প্রতিবেশ ব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করে তোলে।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের আওতায় সুন্দরবনের ১,৩৯,৭০০ হেক্টর এলাকাকে তিনটি অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যা ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়। []

কৃষি সম্পদ

[সম্পাদনা]

বাগেরহাট জেলার অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। জেলার উত্তরাঞ্চল এগ্রোইকোলজিক্যাল অঞ্চল ১১ ও ১২ এর অন্তর্ভুক্ত, আর সমগ্র জেলা এগ্রোইকোলজিক্যাল অঞ্চল ১৩-এর অন্তর্গত। জেলায় মোট চাষযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ১,২৯,৪৩৬ হেক্টর, যার মধ্যে প্রায় ৯% জমিতে সেচের সুবিধা রয়েছে।

জেলার প্রধান ফসলের মধ্যে রয়েছে ধান, পাট, পান, সুপারি ও বিভিন্ন ধরনের সবজি। অধিকাংশ কৃষক স্থানীয় জাতের পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান, গম, ডাল, মসলা ও সবজি চাষ করেন। ফল ও বৃক্ষজাত পণ্যের মধ্যে কলা, নারিকেল, সুপারি ও পেয়ারা উল্লেখযোগ্যভাবে উৎপাদিত হয়।

রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্যের মধ্যে ধান, চিংড়ি, পাট, সুপারি, পান, গুড়, আম ও কাঁঠাল বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। জেলার শস্য নিবিড়তা ১২০ শতাংশ, যা কৃষিকাজের সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরে। তবে কৃষিজমির যথাযথ ব্যবহার পরিকল্পনার অভাবে অনেক জমি অব্যবহৃত, অতি ব্যবহৃত বা ভুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, ফলে কৃষকের শ্রম ও অর্থের অপচয় হচ্ছে।[]

মৎস্য সম্পদ

[সম্পাদনা]

বাগেরহাট জেলা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ অঞ্চল। সমুদ্র, সুন্দরবন, নদী, খাল ও বিল মিলিয়ে এই জেলায় গড়ে উঠেছে একটি বিশাল মৎস্য ভাণ্ডার। জেলার নদী-মোহনা, খাঁড়ি, বিল ও প্লাবনভূমি মাছের বৈচিত্র্যে ভরপুর। এ অঞ্চলে ধান চাষের সময় এবং বর্ষাকালে প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরা হয়। ২০০১-২০০২ অর্থবছরে জেলায় মোট ১০,২১৩ মেট্রিক টন মাছ আহরণ হয়, যার মধ্যে নদী ও মোহনা থেকে ৩,৭১৯ মে.টন এবং প্লাবনভূমি থেকে ৬,৪৯৪ মে.টন মাছ সংগ্রহ করা হয়।

এ জেলার জলজ পরিবেশে পাওয়া যায় নানা জাতের দেশি ও সামুদ্রিক মাছ, যেমন—ইলিশ, রুই, কাতলা, মৃগেল, বোয়াল, শোল, কই, মাগুর, পাংগাস, বিল বাগার, চিতল, কালিবাউশ ইত্যাদি। এছাড়া ধানক্ষেতে পাওয়া যায় দ্রুত বর্ধনশীল প্রজাতির ভেটকি, ভাঙন, ট্যাংড়া, পাশা মাছ। সাধারণত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে ধানক্ষেত শুকাতে শুরু করলে এইসব মাছ ধরা হয়। সুন্দরবনের নদী-মোহনা ও খাঁড়িতে পাওয়া যায় ভেটকি, ইলিশ, ভাঙন, জাবা, কাইবল, রেখা ও চিংড়ি।[]

চিংড়ি চাষ

[সম্পাদনা]

বাগেরহাট জেলা বাংলাদেশের অন্যতম চিংড়ি উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। ১৯৬০ এর দশকের শেষ দিকে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার ফলে কৃষিজমি অনাবাদী হয়ে পড়ায় এলাকাবাসী বিকল্প পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করে। শুরুতে ভেটকি, পারশে ও ট্যাংড়া মাছ চাষ হলেও পরে ঘেরে চিংড়ি চাষ শুরু হয়। ১৯৭০ এর দশকে আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ির চাহিদা বাড়ার ফলে এই শিল্প দ্রুত সম্প্রসারিত হয়। বর্তমানে জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় বাগদা ও গলদা চিংড়ির চাষ হয়।[]

শুঁটকি উৎপাদন

[সম্পাদনা]

বাগেরহাট জেলার মূল ভূখণ্ড, চর ও দ্বীপ অঞ্চলগুলোতে, বিশেষ করে রায়েন্দা, দুবলা, আলোর কোল, মেহের আলীর চর, ও মংলা নদীর চরে শুঁটকি তৈরি হয়ে থাকে। শরনখোলা উপজেলার দুবলার চরের শুঁটকি বিশেষভাবে বিখ্যাত। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৭-৮ হাজার জেলে এখানে অস্থায়ীভাবে বসবাস করে সমুদ্রে মাছ ধরে এবং তা শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করে। এখানে তৈরি শুঁটকির মধ্যে চিংড়ি, চান্দা, রূপচাঁদা, ছুরি, লাক্ষা ও লইট্যা মাছ উল্লেখযোগ্য। শুঁটকির বড় একটি অংশ রপ্তানি করা হয়। বর্তমানে উন্নয়ন প্রকল্প ও বিভিন্ন এনজিওর প্রচেষ্টায় অনেক জেলে পরিবার আধুনিক পদ্ধতিতে শুঁটকি উৎপাদন করছে।[]

পুকুরে মাছ চাষ

[সম্পাদনা]

জেলায় মোট ২,৫৩৪ হেক্টর পুকুর রয়েছে, যার মধ্যে ২,০৯২ হেক্টর পুকুরে নিয়মিত মাছ চাষ হয়। ২০০৩ সালের তথ্য অনুযায়ী এই পুকুরগুলো থেকে মোট ৫,৫৩৮ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। পুকুরে চাষকৃত মাছের মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, গ্রাসকার্প, কালিবাউশ, সিলভারকার্প ও তেলাপিয়া উল্লেখযোগ্য।[]

পশু সম্পদ

[সম্পাদনা]

কৃষি শুমারী ১৯৯৬ অনুসারে বাগেরহাট জেলার গ্রামীণ এলাকায় মোট ৮৮,৬৩১টি গৃহের গ্রামীণ গৃহস্থালির ৩৫% গবাদিপশু রয়েছে, এবং মোট গবাদিপশুর সংখ্যা ২,৬৫,২৪৪। অর্থাৎ, প্রতিটি ঘরে গড়ে ৩টি করে গবাদিপশু আছে। এ ছাড়া, গ্রামীণ গৃহস্থের ৭২% মুরগি লালন পালন করে (ঘর প্রতি ৫.৪৫ মুরগি)। গ্রামীণ গৃহস্থের ৮৬১৭৫পরিবারে হাঁস লালনপালন করে (৪৫.৯৫%) এবং ঘর প্রতি গড়ে ২.০৪টি করে হাঁস আছে। এ ছাড়া জেলায় মোট ১২টি পশু সম্পদ খামার এবং ২৬৭টি হাঁস-মুরগি খামার রয়েছে। [] []

পর্যটন শিল্প

[সম্পাদনা]

শিক্ষা

[সম্পাদনা]

যশোর শিক্ষাবোর্ডের নিয়ন্ত্রণে বাগেরহাট এর শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। বাগেরহাট জেলায় সাক্ষরতার হার ৬৪.৬২%। প্রাথমিক বিদ্যালয় মোট ১০৯০টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৮২টি, নিম্ন-মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫০টি,কলেজিয়েট ০৬টি, মহাবিদ্যালয় ৩৩টি, মাদ্রাসা ২৪৫টি। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কারিগরী কলেজ-০১টি, পিটিআই-০১টি, ভিটিআই-০১টি, কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র-০৪টি, কৃষি ও প্রযুক্তি কলেজ ০১টি, যুবপ্রশিক্ষন কেন্দ্র-০১টি, হোমিওপ্যাথিক কলেজ ০১টি, মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল-০১টি, মেরিণ ইনস্টিটিউট-০১টি, শারীরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ০১টি, সরকারি শিশুসদন-০২টি, আইন কলেজ-০১টি, টেক্সটাইল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট- ০১টি।

স্বাস্থ্যতথ্য

[সম্পাদনা]

বাগেরহাট জেলায় হাসপাতাল ১১টি, শয্যাসংখ্যা ৪১৫টি, (সদর হাসপাতাল-২৫০শয্যা, ০৩টি ৫০শয্যা, ৫টি ৩১ শয্যাবিশিষ্ট, মাতৃসদন কেন্দ্র ১০ শয্যাবিশিষ্ট), ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৬২টি, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৯%, নলকূপের সংখ্যা ২০,০৫২টি, গভীর নলকূপ ৫,১৯৯টি (সচল-৫,১৪৩টি, অকেজো-৫৬টি), অ-গভীর নলকূপ ১৪,৮৫৩টি (সচল-১২,৯৩০টি, অকেজো-১,৯২৩টি), পিএসএফ ১৮৫৮টি (সচল-১৫০৮টি, অকেজো-৩৫০টি), ভিএসএসটি ১২২৮টি (সচল-১০৫০টি, অকেজো-১৭৮টি), এসএসটি ২,৬১৯টি (সচল-২৪৬৪টি, অকেজো-১৫৫টি), রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং ৮৮টি, স্যানিটেশন কভারেজ ১০টি।

কৃষিতথ্য

[সম্পাদনা]

মোট জমির পরিমাণ ১,৭৪,৮২৪হেক্টর। আবাদী ১,৫৬,৩৮৮হেক্টর (ফসলীজমি ১,৩৩,৮৯৮ হেক্টর, ফলবাগান ২২,৪৯০হেক্টর), অনাবাদী/পতিত ৮,৯৭৮হেক্টর, স্থায়ীজলাবদ্ধজমি ৯,৪৫৮হেক্টর।প্রধান উৎপন্ন ফসল: ধান, পাট, পান, কলা, নারিকেল, সুপারি, ডাল, আলু, তরমুজ, আখ ও শাকসবজি। এ অঞ্চল চিংড়ি মাছ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত।

শিল্পতথ্য

[সম্পাদনা]

সিমেন্ট ফ্যাক্টরী ০৪টি, এলপিজি প্লান্ট ০২টি, ক্ষুদ্র শিল্প ৫৪২টি, কুটির শিল্প ২,৩০২টি, বিসিক শিল্পনগরী ০১টি।

নদ-নদী

[সম্পাদনা]
  1. শিবসা নদী
  2. দড়াটানা নদী
  3. পশুর নদী
  4. পানগুছি নদী
  5. হরিণঘাটা নদী
  6. বলেশ্বর নদী
  7. ভোলা নদী
  8. মোংলা নদী
  9. রায়মঙ্গল নদী
  10. ভৈরব নদী
  11. মধুমতি নদী

চিত্তাকর্ষক স্থান

[সম্পাদনা]

প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা

[সম্পাদনা]

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

[সম্পাদনা]
  1. সুন্দরবন
  2. ঢাংমারী বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য
  3. মাঝের চর, শরণখোলা
  4. চাঁদপাই বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য
  5. দুধমুখী বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য
  6. সুন্দরবন পূর্ব বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য
  7. দুবলার চর
  8. কটকা সমুদ্র সৈকত
  9. টাইগার পয়েন্ট

দীঘি/ জলাশয়

[সম্পাদনা]
  1. ঘোড়া দীঘি
  2. ঠাকুর দীঘি
  3. পচা দীঘি
  4. কোদাল ধোয়া দীঘি
  5. ঝলমলিয়া দীঘি

অন্যান্য

[সম্পাদনা]
  1. মংলা বন্দর
  2. খান জাহান আলী বিমানবন্দর
  3. সুন্দরবন রিসোর্ট, বারাকপুর
  4. চন্দ্রমহল, রনজিতপুর।
  5. বাগেরহাট জাদুঘর
  6. ওয়ান্ডার কিংডম
  7. বাগেরহাট পৌর পার্ক
  8. শেখ হেলাল উদ্দিন স্টেডিয়াম
  9. রুপা চৌধুরী পৌর পার্ক
  10. ডিসি পার্ক, যাত্রাপুর

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

[সম্পাদনা]

শিক্ষাবিদ

[সম্পাদনা]

কবি ও সাহিত্যিক

[সম্পাদনা]

খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা

[সম্পাদনা]

রাজনীতিবিদ

[সম্পাদনা]

খেলোয়াড়

[সম্পাদনা]

অন্যান্য

[সম্পাদনা]


মিডিয়া

[সম্পাদনা]

সংবাদপত্র

[সম্পাদনা]
  • দক্ষিণ বাংলা
  • উত্তাল
  • দক্ষিণ কণ্ঠ
  • বাগেরহাট দর্পন
  • বাগেরহাট বার্তা
  • দূত
  • সাপ্তাহিক খানজাহান
  • নোনাজল

লোক সংস্কৃতি

[সম্পাদনা]

মেলা

  • খানজাহান আলী (রঃ) মাজারের ওরস
  • দুবলার চরের রাস মেলা
  • রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ মেলা
  • যাত্রাপুরের রথের মেলা
  • তালেশ্বরের রথের মেলা
  • মঘিয়ার মেলা
  • কালাচাঁদ ফকিরের মেলা
  • কালখেরবেড়ের মেলা
  • চাঁদপাই এর মেলা
  • বাণিজ্য মেলা
  • বৈশাখী মেলা
  • ভৈরব নদের নৌকা বাইচ
  • মধুমতী নদীর নৌকা বাইচ

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "জেলাগুলোর শ্রেণি হালনাগাদ করেছে সরকার"। বাংলানিউজ২৪। ১৭ আগস্ট ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০২০ 
  2. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "বাংলাদেশ জনসংখ্যা ও গৃহগণনা ২০১১ জেলা প্রতিবেদন – বাগেরহাট" (পিডিএফ)। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২৭ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০২৫ 
  3. "জেলা তথ্য বাগেরহাট"bangladesh portal.gov.bd। ২০ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০২৫ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]