কুষ্টিয়া জেলা
কুষ্টিয়া জেলা | |
---|---|
জেলা | |
ঘড়ির কাঁটার ক্রম অনুযায়ী: হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু উপর পদ্মা, শিলাইদহ, লালন শাহের মাজার, মধ্যে ক্ষেত্র ভেড়ামারা | |
ডাকনাম: সাংস্কৃতিক রাজধানী | |
![]() বাংলাদেশে কুষ্টিয়া জেলার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°৫৫′১১″ উত্তর ৮৯°১৩′১২″ পূর্ব / ২৩.৯১৯৭২° উত্তর ৮৯.২২০০০° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | খুলনা বিভাগ |
জেলা প্রতিষ্ঠা | ১৯৪৭ |
জাতীয় সংসদ আসন | ৪টি |
সরকার | |
• জেলা প্রশাসক | মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম |
আয়তন | |
• মোট | ১,৬২১ বর্গকিমি (৬২৬ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা | |
• মোট | ২৪,৬৬,৮১১ |
• জনঘনত্ব | ১,৫০০/বর্গকিমি (৩,৯০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৮৬.৩৭% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৭০০০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৪০ ৫০ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট ![]() |
কুষ্টিয়া জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। কুষ্টিয়া পৌরসভা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পৌরসভা ও দেশের ১৩ তম বৃহত্তম শহর। লালনের মাজার ছাড়াও এ জেলার শিলাইদহে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি ও মীর মশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা। এ জেলাতে রয়েছে ইসলাম বিষয়ক বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। কুষ্টিয়া জেলাকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্পকলা একাডেমি কুষ্টিয়াতে অবস্থিত। শিল্প প্রতিষ্ঠানের দিক দিয়ে এ-জেলা দেশের খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কুষ্টিয়া শহর ছাড়াও এ জেলায় কুমারখালী ও ভেড়ামারা পৌরসভায় বিসিক শিল্প গড়ে ওঠেছে৷ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বাংলাদেশের বৃহত্তম তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র অবস্থিত। কুষ্টিয়া শহর হলো এ জেলার প্রশাসনিক সদর এবং প্রধান শহর। কুষ্টিয়া জেলার মানুষের কথ্য বা মুখের ভাষাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে শুদ্ধ ভাষা অর্থাৎ বাংলাদেশে বাংলা ভাষার সবচেয়ে প্রমিত রূপ বলা হয়ে থাকে। মুক্তিযুদ্ধের সূচনা এ জেলা থেকেই। নোবেল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার প্রথম জীবন ও কবিতার স্বর্নযুগ কুষ্টিয়ার শিলাইদহে কাটিয়েছিলেন।
ইতিহাস[সম্পাদনা]
বহুপূর্বে কুষ্টিয়া অবিভক্ত ভারতের নদীয়া জেলার (বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে) অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়াও পাবনা জেলার মহকুমা ও থানা হিসেবেও রাজশাহী বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ছিল এ জেলাটি। কোম্পানি আমলে কুষ্টিয়া যশোর জেলার অধীনে ছিল। ১৮৬৯ সালে কুষ্টিয়ায় একটি পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। হ্যামিলটন'স গেজেট প্রথম কুষ্টিয়া শহরের কথা উল্লেখ করে।

অবশ্য কুষ্টিয়া কোনো প্রাচীন নগর নয়। সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে এখানে একটি নদীবন্দর স্থাপিত হয়। যদিও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এ বন্দর বেশি ব্যবহার করত, তবুও নীলচাষী ও নীলকরদের আগমনের পরেই নগরায়ন শুরু হয়। ১৮৬০ সালে কলকাতার (তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর রাজধানী)সাথে সরাসরি রেললাইন স্থাপিত হয়। একারণে এ অঞ্চল শিল্প-কারখানার জন্য আদর্শ স্থান বলে তখন বিবেচিত হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে যজ্ঞেশ্বর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস(১৮৯৬), রেণউইক, যজ্ঞেশ্বর এণ্ড কোং (১৯০৪) এবং মোহিনী মিলস (১৯১৯) প্রতিষ্ঠিত হয়। [১]
১৯৪৭-এ ভারতবর্ষ ভাগের সময় কুষ্টিয়া পৃথক জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। [২] এর মহকুমাসমূহ ছিল কুষ্টিয়া সদর, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর। তৎকালীন এস ডি ও মৌলভি আব্দুল বারী বিশ্বাস কে প্রধান করে ১৯৫৪ সালে গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্পের সদর দপ্তর স্থাপন করা হয়। এ ছাড়া আরো বেশ কিছু সরকারি অফিস কুষ্টিয়ায় স্থাপনের পরে শহরটিতে পুনরায় উন্নয়ন শুরু হয়। কুষ্টিয়া জেলায় বাংলাদেশের সর্বপ্রথম রেলস্টেশন জগতি রেলওয়ে স্টেশন, বাংলাদেশের প্রথম বালিকা বিদ্যালয় কুমারখালি পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় অবস্থিত।
অবস্থান ও আয়তন[সম্পাদনা]
কুষ্টিয়া জেলার আয়তন ১,৬২১.১৫ বর্গকিলোমিটার । এর উত্তরে রাজশাহী জেলা, নাটোর জেলা ও পাবনা জেলা, দক্ষিণে চুয়াডাঙ্গা জেলা ও ঝিনাইদহ জেলা, পূর্বে রাজবাড়ী জেলা, পশ্চিমে মেহেরপুর জেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ।
কুষ্টিয়ার ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রধান নদীগুলো হল পদ্মা নদী, গড়াই নদী, মাথাভাঙ্গা নদী, কালীগঙ্গা নদী ও কুমার নদ। জেলাটির গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭.৮°সে এবং গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১.২°সে । এখানকার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১,৪৬৭ মি.মি.।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
প্রশাসন[সম্পাদনা]
কুষ্টিয়া জেলা ৬টি উপজেলা, ৭টি থানা,[৩] ৫টি পৌরসভা, ৫৭টি ওয়ার্ড, ৭০টি মহল্লা, ৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ, ৭১০টি মৌজা ও ৯৭৮টি গ্রামে বিভক্ত। উপজেলাগুলো হলো:
কুষ্টিয়া জেলায় ৫ টি পৌরসভা রয়েছে যেগুলো একই নামের শহরসমূহ পরিচালনা করে:
- কুষ্টিয়া পৌরসভা -
- আয়তন ৪২.৭৯ বর্গ কি.মি.
- জনসংখ্যা ৪১৮,৩১২(বাংলাদেশের ১৩তম বড় শহর)।
- ওয়ার্ড সংখ্যা ২১ টি।
- কুমারখালী পৌরসভা-
- আয়তন- ১১ বর্গ কি.মি
- জনসংখ্যা প্রায় ৬০,০০০
- ওয়ার্ড সংখ্যা- ৯টি
- ভেড়ামারা পৌরসভা-
- আয়তন-১২ বর্গ কি.মি.
- জনসংখ্যা প্রায় ৬০,০০০
- ওয়ার্ড সংখ্যা - ৯টি
- মিরপুর পৌরসভা
- আয়তন- ৯.২২ বর্গ কি.মি.
- জনসংখ্যা প্রায় ৪৫,০০০
- ওয়ার্ড সংখ্যা- ৯টি
- খোকসা পৌরসভা
- আয়তন- ১২.৩৮ বর্গ কি.মি
- জনসংখ্যা প্রায় ৪৫,০০০
- ওয়ার্ড সংখ্যা - ৯টি
জনসংখ্যা[সম্পাদনা]
কুষ্টিয়া জেলার জনসংখ্যা ২৩,৬৬,৮১১ জন, যার মধ্যে ৫০.৮৬% পুরুষ ও ৪৯.১৪% মহিলা। জনসংখ্যার ৯৫.৭২% মুসলিম, ৪.২২% হিন্দু ও ০.০৬% অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
শিক্ষা[সম্পাদনা]
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কুষ্টিয়ায় অবস্থিত। কুষ্টিয়ায় প্রথম স্থাপিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হলো রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় ।
অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছেঃ
- মেডিক্যাল কলেজঃ ২টি
- সরকারি মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালঃ ১টি(নির্মানাধীন) সরকারি মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলে কার্যক্রম চলছে।
- বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালঃ ১টি (সেলিমা মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতাল){নির্মানাধীন}
- সরকারি মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলঃ ১টি
- বেসরকারি মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) ৫টি
- ১:আলো মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল।
- ২:ডাঃ লিজা-ডাঃ রতন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল।
- ৩:স্পেশালাইজড মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল।
- ৪:লালন শাহ মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল
- ৫:পদ্মা গড়াই মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল।
- সরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটঃ ১
- বেসরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটঃ১০
এর মধ্য অন্যতম দর্পণ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট
- সরকারি কলেজঃ: ৯ (কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ; কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজ, কুষ্টিয়া; হোসেনাবাদ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ ; কুষ্টিয়া সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ; কুষ্টিয়া সরকারি সিটি কলেজ কুষ্টিয়া; কুষ্টিয়া সরকারি সিটি কলেজ; আমলা সরকারি কলেজ ,কুষ্টিয়া; খোকসা কলেজ, কুষ্টিয়া; কুমারখালী সরকারি কলেজ, কুষ্টিয়া;ভেড়ামারা সরকারি মহিলা কলেজ,কুষ্টিয়া)
- জেলা স্কুলঃ ১ (কুষ্টিয়া জিলা স্কুল ,কুষ্টিয়া)* হোসেনাবাদ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ, কুষ্টিয়া সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ: ১
- বেসরকারি কলেজঃ: ৩০
- সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ঃ ৩
- বেসরকারি উচ্চবিদ্যালয়ঃ ১৭৩
- বেসরকারি নিম্ন বিদ্যালয়ঃ ৩৮
- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ঃ ৩৩০
- বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ঃ ২৭৫
- কিন্ডারগার্টেনঃ ৩৯০
- মাদ্রাসাঃ ৩৭
- কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রঃ ২
- আইন কলেজঃ ১
- প্রতিবন্ধীদের বিদ্যালয়ঃ ১
- শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রঃ ২
উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:
মহিষকুন্ডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সিরাডিরাজুল হক মুসলিম (বহুমুখী) উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৬), কুষ্টিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (স্থাপিত ১৮৭৬),কুমারখালি এম এন পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়(স্থাপিত :১৮৫৬),কুমারখালি সরকারি বালিকা বিদ্যালয় (স্থাপিত:১৮৬৩) মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় (স্থাপিত ১৮৯৮), কুষ্টিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (স্থাপিত ১৯৪৭), কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ (স্থাপিত ১৯৬৮), দৌলতপুর অনার্স কলেজ (স্থাপিত ১৯৮৫), কুষ্টিয়া হাই স্কুল এবং কুষ্টিয়া জিলা স্কুল (স্থাপিত ১৯৬১)। কুওয়াতুল ইসলাম কামিল (এম.এ) মাদরাসা, রক্সিগোলি, বড়বাজার, কুষ্টিয়া (প্রতিষ্ঠিত ১৯৫৫) ঐতিহ্যেবাহী হরিনারায়ণপুর হাইস্কুল (স্থাপিত. .১৮৯১)((আমলা সদরপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়)) (প্রতিষ্ঠিত ১৮৯৯) (আমলা সরকারি কলেজ,১৯৭২),(কুমারখালি সরকারি কলেজ,১৯৭০)।
বৃহত্তর কুষ্টিয়া[সম্পাদনা]
ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে কুষ্টিয়া কয়েকটি সাবডিভিশন নিয়ে গঠিত একটি বড় জেলা, যার প্রতিটি সাবডিভিশন পরবর্তীকালে জেলা হয়েছে। কিন্তু এই তিন জেলা চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ার মানুষের কাছে বৃহত্তর কুষ্টিয়া শুধুই একটি অতীত নয়, আরও কিছু। বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায় যে, এই অঞ্চলের ও অবিভক্ত নদীয়া জেলার আদি বাসিন্দাদের মুখের ভাষার সাথে আধুনিক প্রমিত বাংলার ঘনিষ্ঠ মিল পাওয়া যায়। এই তিন জেলার অধিবাসীদের বৃহত্তর সমাজকে বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলা বলা হয়। বিভিন্ন সংস্থা যেমন: "বৃহত্তর কুষ্টিয়া এসোসিয়েশন", "বৃহত্তর কুষ্টিয়া সমাজ" এই তিন জেলার জনগনের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার উপজেলাগুলো হচ্ছে- কুষ্টিয়া সদর, মেহেরপুর সদর, চুয়াডাঙ্গা সদর, কুমারখালি, আলমডাঙ্গা, গাংনী, ভেড়ামারা, মিরপুর, দামুড়হুদা, দৌলতপুর, জীবননগর, মুজিবনগর ও খোকসা।
কৃষি[সম্পাদনা]
বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত কুষ্টিয়াতেও প্রধানত ধান, পাট, আখ, ডাল, তৈলবীজ ইত্যাদি চাষ করা হয়। তবে জেলাটিতে তামাক ও পানের চাষও লক্ষণীয়। এছাড়াও মহিষকুন্ডির চরে স্বল্প পরিমানে বাদাম উৎপন্ন হয়
অর্থনীতি[সম্পাদনা]
বাংলাদেশের অন্যান্য বিভিন্ন অঞ্চলের মতো কুষ্টিয়া কেবল চাষাবাদের উপর নির্ভরশীল নয়। চাষাবাদের পাশাপাশি কুষ্টিয়ায় শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। কুষ্টিয়ায় অনেক তামাকের কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে নাসির টোব্যাকো লিমিটেড, ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো, দি ইউনাইটেড ঢাকা টোব্যাকো, পারফেক্ট টোব্যাকো উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের বৃহত্তম বৈদ্যুতিক তার তৈরির কারখানা বি.আর.বি. কেবলস কুষ্টিয়ায় অবস্থিত। জেলার কুমারখালি উপজেলায় গড়ে উঠেছে উন্নতমানের ফ্রেব্রিকস শিল্প। এখানে উৎপাদিত ফ্রেব্রিকস সামগ্রী দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়া কুষ্টিয়ায় অসংখ্য চালের মিল রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম মা ভান্ডারী অটো রাইচ মিল। বিভিন্ন কলকারখানা গড়ে ওঠায় এককভাবে কৃষিকাজের উপর নির্ভরতা কম।
কুষ্টিয়ার শিল্প[সম্পাদনা]
কুষ্টিয়ায় শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা-
- বৃহৎ শিল্প - ১২০ টি
- মাঝারী শিল্প -২৩০ টি
- ক্ষুদ্র শিল্প - ৬২১২ টি
- কুটির শিল্প - ২১৮৩৭ টি
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বিসিক শিল্প নগরীতে অনেক বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কুমারখালী উপজেলার বিসিক শিল্পনগরীতে রয়েছে অনেক টেক্সটাইল ও হোসিয়ারী ইন্ডাস্ট্রি। ভেড়ামারা উপজেলায় ৫০০ একর জায়গার উপর নির্মিত হচ্ছে কুষ্টিয়ার ইকোনোমিক জোন, যেখানে শত শত শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। ভেড়ামারা উপজেলায় দেশের সর্ববৃহৎ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে, সেখানে গড়ে উঠেছে কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান। দৌলতপুর উপজেলায় রয়েছে তামাক শিল্প। কুষ্টিয়ার খাজানগর এলাকায় ৪০০ অটো এবং হাস্কিং রাইস মিল রয়েছে যেখান থেকে বাংলাদেশের ৭০% চাল প্রক্রিয়াজাত হয়ে থাকে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] কুষ্টিয়াতে এর পাশাপাশি গড়ে উঠেছে অনেক আটা ময়দার মিল। এছাড়াও তামাক ও আখ শিল্প এ জেলাকে কৃষির পাশাপাশি শিল্পে সমৃদ্ধ করে তুলেছে।
এ জেলার উল্লেখযোগ্য শিল্প গ্রুপ
- বি আর বি গ্রুপ যেটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ ক্যাবল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।
- নাসির গ্রুপ
- কে এন বি গ্রুপ
- রশিদ গ্রুপ
- মা ভান্ডারী গ্রুপ
- উডল্যান্ড গ্রুপ
- এন বিশ্বাস গ্রুপ
- বায়েজিদ গ্রুপ
- হেলথকেয়ার গ্রুপ
- কুষ্টিয়া গ্রুপ
- ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো
- জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল
নদীসমূহ[সম্পাদনা]
কুষ্টিয়া জেলায় অনেকগুলো নদী রয়েছে। নদীগুলো হচ্ছে পদ্মা নদী, মাথাভাঙ্গা নদী,হিসনা নদী,কুমার নদ, কালীগঙ্গা নদী, গড়াই নদী ও ডাকুয়া খাল নদী,সাগরখালী নদী।[৪][৫]
আকর্ষণীয় স্থান[সম্পাদনা]
কুষ্টিয়া একটি প্রাচীন জনপদ। পূর্বে কুষ্টিয়া নদীয়া জেলার একটি মহকুমা ছিল। এখানে দেখার মত অনেক স্থান রয়েছেঃ
- রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ী - কুমারখালি উপজেলার শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়ী রয়েছে;
- ফকির লালন সাঁইজির মাজার - বাউল ফকির লালন সাঁইজির মাজার কুমারখালি উপজেলার চাঁপড়া ইউনিয়নের ছেউড়িয়া গ্রামে;
- টেগর লজ - কুষ্টিয়া শহরের মিলপাড়ায় অবস্থিত এই দোতলা ভবনটি;
- পরিমল থিয়েটার - কুষ্টিয়া শহরের স্থায়ী রঙ্গমঞ্চ,যা বর্তমানে একটি শপিং মলে পরিণত হয়েছে;
- গোপীনাথ জিউর মন্দির - নলডাঙ্গার মহারাজা প্রমথ ভূষণ দেব রায় কর্তৃক দানকৃত জমির উপর নির্মিত;
- মীর মশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা - বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক মীর মশাররফ হোসেনের বাস্ত্তভিটা কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়ায় অবস্থিত;
- পাকশী রেল সেতু - কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় অবস্থিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রেল সেতু;
- লালন শাহ সেতু - কুষ্টিয়া জেলার পদ্মা নদীর উপর নির্মিত "লালন শাহ" সেতুটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতু।
- ঝাউদিয়া শাহী জামে মসজিদ - চারশো বছরের পুরনো ঝাউদিয়া শাহী জামে মসজিদ, নবাব শায়েস্তা খানের আমলে নির্মিত।
- পদ্মা-গড়াই মোহনা - কুষ্টিয়া শহরের অদূরেই রয়েছে পদ্মা গড়াই নদীর মোহনা, অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত এ স্থানটি বরাবরই পর্যটকদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে
- স্টেডিয়াম খুলনা বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম নির্মিত হচ্ছে শেখ কামাল স্টেডিয়াম যা ১৩ একর জমির উপর ২০২৩ সালে উদ্বোধন হতে পারে নির্মাণাধীন
- এছাড়াও কুষ্টিয়া জেলাতেই রয়েছে দেশের প্রথম বালিকা বিদ্যালয় কুমারখালি সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, দেশের প্রথম রেলস্টেশন জগতি রেলস্টেশন, কুষ্টিয়া পৌরসভার চত্বর দেশের প্রথম রেলসেতু গড়াই রেলসেতু, দেশের প্রথম রেললাইন, কুষ্টিয়ার বৃহত্তম বিল চাপাইগাছী-নান্দিয়ার বিল, স্বস্তিপুর শাহী জামে মসজিদ, 'গোল্ডেন ভিলেজ' খ্যাত দৌলতপুরের পঁচিশটি গ্রাম, বারাদি টেরাকোটা মঠ, খোকসা ফুলবাড়ি মঠ, গড়াই পাড়,শেখ রাসেল সেতু, উপমহাদেশের একসময়ের বৃহত্তম বস্ত্রকল মোহিনী মিল ইত্যাদি।
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব[সম্পাদনা]
আরো দেখুন[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "শিল্প প্রতিষ্ঠান"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১৪ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০১৪।
- ↑ "ইতিহাস ঐতিহ্য সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক রাজধানী কুষ্টিয়া"। দৈনিক সংগ্রাম। ৯ জুলাই ২০১২। ৬ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০১৪।
- ↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে কুষ্টিয়া জেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২১ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০১৪।
- ↑ ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৩৯০, আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৮৯৪৫-১৭-৯।
- ↑ মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক (ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি। ঢাকা: কথাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৬১২। আইএসবিএন 984-70120-0436-4।
বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]
- কুষ্টিয়া জেলা- জাতীয় তথ্য বাতায়ন