ছাতক উপজেলা
ছাতক | |
---|---|
উপজেলা | |
ছাতক উপজেলা | |
![]() বাংলাদেশে ছাতক উপজেলার অবস্থান | |
বাংলাদেশে ছাতক উপজেলার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৫°২′৩০″ উত্তর ৯১°৪০′৩০″ পূর্ব / ২৫.০৪১৬৭° উত্তর ৯১.৬৭৫০০° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | সিলেট বিভাগ |
জেলা | সুনামগঞ্জ জেলা |
সংসদীয় আসন | সুনামগঞ্জ-৫ |
সরকার | |
• সংসদ সদস্য | মুহিবুর রহমান মানিক (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) |
আয়তন | |
• মোট | ৪৪০.৪ বর্গকিমি (১৭০.০ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[১] | |
• মোট | ৩,৯৭,৬৪২ |
• জনঘনত্ব | ৯০০/বর্গকিমি (২,৩০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৪০% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৩০৮০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৬০ ৯০ ২৩ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট ![]() |
ছাতক ( সিলেটি : ꠍꠣꠔꠇ ) বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। এটি সিলেটের শিল্পনগরী হিসাবে পরিচিত। ব্রিটিশ আমল থেকে এখানে ব্যাবসা বানিজ্যের প্রসার ঘটে। সুনামগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত হলেও এটি সিলেট জেলার সাথে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ব্যাবসায়ীক ও রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত। এছাড়া যোগাযোগের দিক দিয়েও ছাতক উপজেলা সিলেট জেলার কাছাকাছি। এক সময় ছাতক-সিলেট সংযুক্তির জন্য এখানের জনগণ তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলে৷ দাবির প্রেক্ষিতে ছাতককে সিলেট জেলার সাথে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (নিকার) এ প্রস্তাব উঠে। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি।
ভৌগোলিক অবস্থান[সম্পাদনা]
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই উপজেলার আয়তন ৪৪০.৪ বর্গকিলোমিটার। ছাতকের উত্তরে ভারতের মেঘালয়, পশ্চিমে দোয়ারাবাজার ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে জগন্নাথপুর উপজেলা এবং পূর্বে সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ, সিলেট সদর ও বিশ্বনাথ উপজেলা অবস্থিত।
প্রশাসনিক এলাকা[সম্পাদনা]
ছাতক উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম ছাতক থানার আওতাধীন।[২]
- ১নং ইসলামপুর
- ২নং নোয়ারাই
- ৩নং ছাতক সদর
- ৪নং কালারুকা
- ৫নং চরমহল্লা
- ৬নং খুরমা উত্তর
- ৭নং সিংচাপইড়
- ৮নং খুরমা দক্ষিণ
- ৯নং জাউয়াবাজার
- ১০নং দোলারবাজার
- ১১নং গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাঁও
- ১২নং ছৈলা আফজালাবাদ
- ১৩নং ভাতগাঁও
ইতিহাস[সম্পাদনা]
থানা গঠিত হয় ১৯০৮ সালে (পূর্ণাঙ্গরূপ লাভ করে ১৯২২ সালে) এবং উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮২ সালে। ১৭৮৮ সালে এ উপজেলার গঙ্গা সিংহ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। কোম্পানির সৈন্যদের সঙ্গে লড়াইয়ে তিনি বন্দী হন এবং পরে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। ১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং ১১ জন আহত হন। এছাড়া হাদার টিলা ও দুরবিন টিলায়ও পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন শিখা সতের (মাধবপুর)। সবচেয়ে পরিচিত স্মারকটি হলো ছাতকের কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধ।
জনসংখ্যার উপাত্ত[সম্পাদনা]
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০১ সালে ছাতক উপজেলার জনসংখ্যা: পুরুষ ১,৯৭,৯৫২ এবং মহিলা ১,৯৯,৬৯০ জন।[৩] মুসলিম ৩১৩৯৭১, হিন্দু ২০২৩৮, বৌদ্ধ ৭৪, খ্রিস্টান ১৭ এবং অন্যান্য ২৪৬।
শিক্ষা[সম্পাদনা]
শিক্ষার গড় হার ৩৬.৩%; পুরুষ ৪০.০%, মহিলা ৩২.৪%। ছাতক উপজেলা জেলার অন্যান্য উপজেলার চেয়ে শিক্ষাদীক্ষায় অগ্রসর। উপজেলার উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে-
- ছাতক সরকারি বহুমুখী মডেল উচ্চবিদ্যালয়
- গোবিন্দগঞ্জ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়
- গোবিন্দগঞ্জ অনার্স কলেজ
- চন্দ্রনাথ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়
- ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি উচ্চবিদ্যালয়
- সিলেট পাল্প এন্ড পেপার মিল উচ্চবিদ্যালয়
- বুরাইয়া স্কুল এন্ড কলেজ (ছাতক)
- পাইগাঁও উচ্চবিদ্যালয়, জাউয়া।
- নতুনবাজার বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়, জাতুয়া।
- সমতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়
- মল্লিকপুর মডেল উচ্চবিদ্যালয়
- হাজী কমর আলী উচ্চবিদ্যালয়
- চরমহল্লা হাজী আব্দুল খালিক উচ্চবিদ্যালয়
- জাহিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়
- ঝিগলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
ছাতক উপজেলার মহাবিদ্যালয়সমূহঃ
- ছাতক সরকারি অনার্স কলেজ
- মঈনপুর জনতা ডিগ্রি কলেজ
- জাউয়া বাজার ডিগ্রি কলেজ।
ছাতক উপজেলা মাদ্রাসাঃ-
- বুরাইয়া কামিল মাদ্রাসা
- জালালিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ছাতক
- দারুল হাদিস মাদ্রাসা হাসনাবাদ
- আটগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় বড়কাপন
- ঝামক ইসলামিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা
- আলমুনির জামিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা দেওরগাও
- তানজিমুস সুন্নাহ্ মাদ্রাসা ও এতিমখানা বাদেশ্বরি
- রহমানিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা জিয়াপুর।
উপজেলার চিকিৎসা ব্যবস্থা[সম্পাদনা]
উপজেলা শহরে রয়েছে ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জাউয়া বাজারের কৈতকে রয়েছে ২০ শয্যার স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র। এছাড়া নাদামপুরে রয়েছে একটি স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র। প্রতিটি ইউনিয়নেই রয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক।
অর্থনীতি[সম্পাদনা]
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫২.১৫%, অকৃষি শ্রমিক ১০.৩৩%, শিল্প ০.৬০%, ব্যবসা ১০.১৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.১৯%, চাকরি ৭.১৬%, নির্মাণ ০.৮৯%, ধর্মীয় সেবা ০.৪২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৩.২৩% এবং অন্যান্য ১৩.৮৪%। কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৬.৮৭%, ভূমিহীন ৫৩.১৩%। শহরে ৩৩.৪৮% এবং গ্রামে ৪৮.৮৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে। প্রধান কৃষি ফসল ধান, তিল, তিসি, শাকসবজি। প্রধান ফল-ফলাদি কমলালেবু, আনারস, লিচু। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস ৩০, গবাদিপশু খামার ৩৭, হাঁস-মুরগির খামার ১৩০, নার্সারি ৭। যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৭৩.৯২ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩০৫.৯০ কিমি; রেলপথ ৩৪; রজ্জুপথ (রোপওয়ে) ১৯ কিমি; নদীপথ ১.৭০ নটিক্যাল মাইল। বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি। কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, বেত ও বাঁশশিল্প, নলখাগড়া ও শনের তৈরি শিল্পকর্ম প্রভৃতি। হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৮। ছাতক বাজার, গোবিন্দগঞ্জ বাজার, জাউয়া বাজার ও দোলারবাজার এবং মণিপুরীদের রাস পূর্ণিমার মেলা ও দূরবীন শাহের মেলা উল্লেখযোগ্য। প্রধান রপ্তানিদ্রব্য কমলালেবু, প্রাকৃতিক গ্যাস, সিমেন্ট, চুনাপাথর, কাগজ ও কাগজের মন্ড। বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৮.৮২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদ চুন, চুনাপাথর, বালি, গ্যাস, বাঁশ ও বেত।
উৎপাদন ও শিল্প কারখানা[সম্পাদনা]
ছাতক সিলেট বিভাগের প্রাচীনতম শিল্পনগরী। ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের প্রথম সিমেন্ট কারখানা ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি যা পূর্বে আসাম-বেঙ্গল সিমেন্ট ফ্যাক্টরি নামে পরিচিত ছিল। নল-খাগড়া ও বাঁশের সহজলভ্যতায় প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের প্রথমদিককার কাগজের মণ্ড তৈরির কারখানা সিলেট পাল্প এন্ড পেপারমিল যা ২০০২ সালে সরকারের এক প্রজ্ঞাপনে বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে নিটল-নিলয় গ্রুপ কারখানাটি কিনলেও উৎপাদন চালু করেনি। ছাতকের নোয়ারাই ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বহুজাতিক সিমেন্ট উৎপাদন কারখানা লাফার্জ-হোলসিম গ্রুপ এর [[লাফার্জ-সুরমা সিমেন্ট ফ্যাক্টরি। এছাড়া আইনপুর সিমেন্ট ফ্যাক্টরি নামেও একটি সিমেন্ট কারখানা রয়েছে। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গ্রুপ আকিজ গ্রুপ ছাতকের বাজনা মহলে স্থাপন করেছে আকিজ ফ্যাক্টরি যেখানে বিভিন্ন প্লাস্টিকের বোতল উৎপাদন করা হয়। এছাড়া চুনের ভাটায় চুনা পাথর পুড়িয়ে চুন তৈরির শিল্প অনেক আগে থেকেই চালু আছে। ভোলাগঞ্জ ও বিছনাকান্দির পাথর কোয়ারি থেকে উত্তোলিত পাথর সুরমার দুই পাড়ের প্রায় শতাধিক ক্রাশার মেশিনে ভাঙিয়ে সারাদেশে সরবরাহ করা হয়।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী[সম্পাদনা]
সুচয়ন, প্রত্যায়ন, মঙ্গলা (১৯০৬) (অবলুপ্ত)। সাপ্তাহিক: ছাতক কণ্ঠ, ছাতক বার্তা (অবলুপ্ত)। মাসিক: ঝংকার (১৯২৯), প্রদীপ (১৯২৯) (অবলুপ্ত)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান[সম্পাদনা]
লাইব্রেরি ৩, সিনেমা হল ১, নাট্য সংগঠন ৩, অন্যান্য ২।
নদনদী[সম্পাদনা]

ছাতক উপজেলায় আছে সুরমা নদী, পিয়াইন নদী, সারী-গোয়াইন, সোনালী চেলা, ঘানুয়ারা নদী, বোকা নদী
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব[সম্পাদনা]
- শামসুল উলামা আবু নসর ওহীদ - বাঙালি শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ।
- দুর্বিন শাহ - মরমি সাধক
- আব্দুল হক অ্যাডভোকেট-এমএনএ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ।
- মুসলিম চৌধুরী -সাহিত্যিক।
- মুহিবুর রহমান মানিক-রাজনীতিবিদ।
- কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন-রাজনীতিবিদ।
- আবুল হাসনাত মোঃ আব্দুল হাই-রাজনীতিবিদ।
- নজিবুর রহমান - জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব
- গিয়াসউদ্দিন আহমেদ -গীতিকার
বিবিধ[সম্পাদনা]
আরও দেখুন[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে ছাতক"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১৫।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "ইউনিয়নসমূহ - ছাতক উপজেলা"। chhatak.sunamganj.gov.bd। জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ২৬ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ নভেম্বর ২০২০।
- ↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। "বাংলাদেশ বাতায়ন, ছাতক উপজেলা"। http://chhatak.sunamganj.gov.bd। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২৮ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১৪।
|ওয়েবসাইট=
এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]
- বাংলাপিডিয়ায় ছাতক উপজেলা
- ছাতক উপজেলা - জাতীয় তথ্য বাতায়ন।