যোগতত্ত্বোপনিষদ্

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
যোগতত্ত্বোপনিষদ্
দেবনাগরীयोगतत्त्व
নামের অর্থযোগ ও পরম সত্য
রচনাকাল১৫০ খ্রিস্টাব্দ
সম্পর্কিত বেদঅথর্ববেদ
শ্লোকসংখ্যা১৪৩
মূল দর্শনবেদান্ত

যোগতত্ত্বোপনিষদ্ (সংস্কৃত: योगतत्त्वोपनिषत्)[১] বা যোগতত্ত্ব উপনিষদ্ (সংস্কৃত: योगतत्त्व उपनिषत्) হল হিন্দুধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপনিষদ্‌[২] সংস্কৃত ভাষায় রচিত এই গ্রন্থটি অথর্ববেদের সঙ্গে সম্পৃক্ত এগারোটি[৩] এবং চার বেদের সঙ্গে জড়িত মোট কুড়িটি যোগোপনিষদের অন্যতম।[৪][৫] মুক্তিকা উপনিষদে রাম কর্তৃক হনুমানের নিকট কথিত ১০৮টি উপনিষদের তালিকা যোগতত্ত্বোপনিষদের ক্রমিক সংখ্যা ৪১।[৬] উপনিষদ্ হিসেবে যোগতত্ত্বোপনিষদ্ হিন্দুধর্মের দার্শনিক ধ্যানধারণার উপস্থাপক বেদান্ত সাহিত্যধারার অঙ্গ।[৭]

যোগতত্ত্বোপনিষদের প্রাপ্ত পুথিগুলির দু’টি প্রধান পাঠান্তরের কথা জানা যায়। একটি পাঠান্তরে পনেরোটি শ্লোক রয়েছে, কিন্তু তা অথর্ববেদের সঙ্গে যুক্ত।[৮] অপর পাঠান্তরটি কৃষ্ণ যজুর্বেদের সঙ্গে যুক্ত এবং ১৪২টি শ্লোকবিশিষ্ট।[৯][১০] এই বর্ধিত পুথিটি অনেকটাই অন্যরকম এবং তেলুগু ভাষায় রচিত।[৮] এই গ্রন্থটি বৈষ্ণবীয় ধারণায় যোগ দর্শনের বর্ণনার জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।[৮][১১]

যোগতত্ত্বোপনিষদ্ গ্রন্থটিতে যোগসূত্র, হঠযোগকুণ্ডলিনী যোগের অনুরূপ ধ্যানধারণা বর্ণনা করা হয়েছে।[১] এই গ্রন্থে যোগের চারটি ধরন আলোচিত হয়েছে: মন্ত্রযোগ, লয়যোগ, হঠযোগরাজযোগ[১২] বেদান্ত দর্শনের ব্যাখ্যাকারী হিসেবে এই উপনিষদে ওঁ অক্ষর থেকে শুরু করে যোগ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আত্মার অর্থ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।[১৩] যোগতত্ত্বোপনিষদের মতে, “যোগানুশীলন ব্যতিরেকে জ্ঞান মোক্ষ প্রদান করতে পারে না, আবার জ্ঞান ব্যতিরেকে যোগও মোক্ষদায়ী হয় না” এবং সেই সঙ্গে এও বলা হয়েছে যে “যিনি মোক্ষলাভ করতে চান, তিনি যোগ ও জ্ঞান উভয়েরই অনুশীলন করবেন”।[১৪]

নাম-ব্যুৎপত্তি[সম্পাদনা]

‘যুজ্’ ধাতু থেকে উৎসারিত সংস্কৃত ‘যোগ’ শব্দটির সাধারণ আক্ষরিক অর্থ ‘সংযুক্ত করা’, ‘একত্রিত করা’ বা ‘যোজিত করা’।[১৫] সংস্কৃত ভাষা ও ভারতীয় দর্শন বিশেষজ্ঞ সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্তের মতে, "যোগ" শব্দটি সম্ভবত ‘যুজির যোগ’ (সংযোজিত করা) বা ‘যুজ্ সমাধৌ’ (মনসংযোগ করা) ধাতু দু’টির কোনও একটি থেকে উৎসারিত।[১৬]

‘যোগতত্ত্ব’ শব্দটি ‘যোগ’ ও ‘তত্ত্ব’ শব্দদ্বয় গঠিত একটি যৌগিক শব্দ। ‘তত্ত্ব’ শব্দের অর্থ ‘সত্য’[৯] বা "বাস্তবতা, তৎ-ত্ব"।[১৭] জার্মান ভারততত্ত্ববিদ ও দর্শনের অধ্যাপক পল ডুসেন ‘যোগতত্ত্ব’ শব্দটির অর্থ করেছেন ‘যোগের সারাংশ’ ("the essence of Yoga")।[১৮]

‘উপনিষদ্’ হল বেদের জ্ঞানকাণ্ড বেদান্ত সাহিত্যের অন্তর্গত গুহ্যতত্ত্ব-সংক্রান্ত ধর্মগ্রন্থ। উপনিষদেই হিন্দুধর্মের দার্শনিক ধ্যানধারণাগুলি গ্রন্থিত হয়েছে। এই শাস্ত্রটিকে বেদের সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য বলে গণ্য করা হয়।[৭]

কালপঞ্জি ও সংকলন[সম্পাদনা]

মারশিয়া এলিয়াডের মতে, এই গ্রন্থটির রচনাকাল মহাভারতের নীতিমূলক অংশসমূহ, প্রধান সন্ন্যাস উপনিষদ্সমূহ এবং ব্রহ্মবিন্দূপনিষদ্ (যা সম্ভবত মৈত্রায়ণীয়োপনিষদের সমসাময়িক), ক্ষুরিকোপনিষদ্, তেজবিন্দূপনিষদ্, ব্রহ্মবিদ্যোপনিষদ্, নাদবিন্দূপনিষদ্, যোগশিক্ষোপনিষদ্, ধ্যানবিন্দূপনিষদ্ ও অমৃতবিন্দূপনিষদের মতো আদিকালীন যোগ উপনিষদ্গুলির সমসাময়িক।[১৯]

এলিয়াডের মতে, যোগতত্ত্বোপনিষদ্ যোগকুণ্ডলিণ্যুপনিষদ্, বরাহোপনিষদ্পাশুপতব্রহ্মোপনিষদ্ ইত্যাদি দশ অথবা এগারোটি পরবর্তীকালীন যোগ উপনিষদের পূর্বে রচিত হয়েছিল।[১৯] গণিতের অধ্যাপক তথা হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মে যোগ দর্শন-বিষয়ক লেখক মাইকেল হোয়াইটম্যান একটি সম্ভাব্য বিকল্প কালপঞ্জির কথা উল্লেখ করেছেন।[২০]) তিনি মনে করেন, গ্রন্থখানি সম্ভবত ১৫০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ রচিত।[২১] তুলনামূলক ধর্মবিদ্যার অধ্যাপক ডেভিড গর্ডন হোয়াইট অপরপক্ষে মনে করেন যে, এই গ্রন্থের "ধ্যানধারণা ও চিত্রাবলি ধ্রুপদি বেদান্তের ঐতিহ্য থেকে" উৎসারিত এবং এটি সম্ভবত একটি মধ্যযুগীয় গ্রন্থ, যার রচনাকাল খ্রিস্টীয় একাদশ থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়।[২২] গেভিন ফ্লাড মনে করেন যে, যোগতত্ত্বোপনিষদ্ অন্যান্য যোগ উপনিষদের সঙ্গেই সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ১০০ থেকে ৩০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে রচিত।[২৩]

১৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মোহাম্মেদ দারা শিকোহ "ঔপনেখৎ" নামে পঞ্চাশটি উপনিষদের একটি ফার্সি অনুবাদ-সম্বলিত সংকলন সম্পাদনা করেন। এই সংকলনের মুখবন্ধে তিনি এটিকে ধর্ম-বিষয়ে শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ বলে উল্লেখ করেছিলেন। এই সংকলনের ২২ সংখ্যক উপনিষদ্টি ছিল যোগতত্ত্বোপনিষদ্।[২৪] উত্তর ভারতে জনপ্রিয় উপনিষদ্ সংকলনগুলির ক্রমানুসারেই দারা শিকোহ-র সংকলনটি গ্রন্থিত হয়েছিল। হেনরি টমাস কোলব্রুক সম্পাদিত ৫২টি উপনিষদের সংকলনে এই উপনিষদ্টির ক্রমসংখ্যা ২৩।[২৫] খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীর বেদান্ত শাস্ত্রজ্ঞ শংকরানন্দের কিছুকাল পরের ব্যক্তিত্ব নারায়ণের ৫২টি উপনিষদের সংকলনের বিবলিওথিকা ইন্ডিকা সংস্করণেও এই উপনিষদ্টির ক্রমসংখ্যা ২৩।[২৬]

গঠন[সম্পাদনা]

যোগীশ্রেষ্ঠ বিষ্ণু

যোগতত্ত্বোপনিষদের তেলুগু পাঠান্তরে ১৪২টি শ্লোক আছে।[২৭] অন্যদিকে সংস্কৃত ভাষায় রচিত এই গ্রন্থের ক্ষুদ্রতম প্রাপ্ত পুথিটিতে আছে মাত্র পনেরোটি শ্লোক।[৮] উভয় পাঠের প্রারম্ভেই হিন্দু দেবতা বিষ্ণুকে পরমপুরুষ, মহাযোগী, পরমেশ্বর, মহাতপস্বী ও সত্যের পথে এক প্রদীপ রূপে বন্দনা করা হয়েছে।[৯][১][২৮] এই কারণে গ্রন্থটি হিন্দুধর্মের বৈষ্ণবীয় প্রথার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।[১]

সংস্কৃত পাঠের ৩ থেকে ১৫ সংখ্যক শ্লোকগুলির অর্থ ও বার্তা প্রতিফলিত হয়েছে এই গ্রন্থের তেলুগু পাঠের শেষ তেরোটি শ্লোকে।[২৯][৩০]

বিষয়বস্তু[সম্পাদনা]

যোগতত্ত্বোপনিষদ্ হল যোগ-সংক্রান্ত প্রাপ্ত প্রাচীনতম গ্রন্থগুলির অন্যতম। এই গ্রন্থে যোগের পদ্ধতি ও উপকারিতার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে।[৩১]

প্রথম কোনও উপনিষদে অনুশীলন ও ধ্যানের মাধ্যমে প্রাপ্ত অসাধারণ ক্ষমতাগুলির অসংখ্য ও যথাযথ বিস্তারিত বিবরণ প্রদত্ত হল। চারটি প্রধান আসনের (সিদ্ধ, পদ্ম, সিংহ ও ভদ্র) কথা উল্লিখিত হয়েছে, সেই সঙ্গে প্রথম অনুশীলনকারীদের বাধাগুলির কথাও বলা হয়েছে – আলস্য, বাচালতা ইত্যাদি। এরপর রয়েছে প্রাণায়মের একটি বিবরণ, সঙ্গে রয়েছে মাত্রার (শ্বাসক্রিয়ার পর্যায়ের পরিমাপের একক) সংজ্ঞা এবং অতিন্দ্রীয়বাদী শারীরতত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ (শরীরের লঘুত্ব, গাত্রবর্ণের উজ্জ্বলতা, পাচনশক্তির বৃদ্ধি প্রভৃতি বাহ্য চিহ্নাদির মাধ্যমে নাড়িশুদ্ধির কথা বর্ণিত হয়েছে)।

— যোগতত্ত্বোপনিষদ্ সম্পর্কে মারশিয়া এলিয়াড, যোগ: ইম্মর্ট্যালিটি অ্যান্ড ফ্রিডম[৩১]

আত্ম-উপলব্ধি ও যোগ-শিক্ষার্থীর গুণাবলি[সম্পাদনা]

ব্রহ্মার অনুরোধে বিষ্ণু ব্যাখ্যা করলেন যে, সকল আত্মাই মায়া সৃষ্ট জাগতিক সুখ ও দুঃখের চক্রে আবদ্ধ[৩২][৩৩] এবং মোক্ষ জন্ম, বার্ধক্য ও ব্যাধির চক্রের হাত থেকে উদ্ধার পাওয়ার সহায়ক।[৩২] বিষ্ণু বলেন, এই ক্ষেত্রে শাস্ত্রজ্ঞান নিষ্ফল এবং “মোক্ষের অবর্ণনীয় অবস্থা” তাদের এমনকি দেবতাদেরও সুকৌশলে এড়িয়ে যায়।[৩২][৩৩]

যোগতত্ত্বোপনিষদের মতে, পরম সত্য ও সর্বোচ্চ সত্ত্বা ব্রহ্মকে জানলে তবেই মোক্ষ ও আত্ম-উপলব্ধির পথে উপনীত হওয়া যায়।[৩৪][৩২] যদি কোনও যোগ-শিক্ষার্থী “আসক্তি, ক্রোধ, ভয়, ভ্রান্তি, লোভ, অহংকার, কাম, জন্ম, মৃত্যু, কার্পণ্য, মূর্ছা, ইন্দ্রিয়বিলাস, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, লজ্জা, ত্রাস, হৃদয়-জ্বালা, শোক ও আনন্দ” হতে মুখ হতে পারে তবে সে এই সর্বোচ্চ সত্ত্বাকে উপলব্ধি করতে পারবে।[৩৪][৩২]

যোগ ও জ্ঞান[সম্পাদনা]

যোগতত্ত্বোপনিষদে যোগকে ধ্যানের একটি মাধ্যম হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।[৩৫]

যোগতত্ত্বোপনিষদের প্রথম দিকের শ্লোকগুলিতে, যোগ ও জ্ঞানের উপর যুগপৎ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে উভয়েই পারস্পরিকভাবে প্রয়োজনীয় ও পরস্পরের পরিপূরক।[৩১][৩৬]

সংস্কৃত পণ্ডিত আইয়ার “জ্ঞান” শব্দটির সংজ্ঞার অনুবাদে লিখেছেন,[৪০] “যার মাধ্যমে ব্যক্তি নিজের মধ্যে ‘কৈবল্যে’র (মোক্ষ) সত্য স্বরূপ পরম আসন, নিষ্কলুষ, অখণ্ড এবং সচ্চিদানন্দের স্বরূপ রূপে উপলব্ধি করে”।[১৪] এই জ্ঞান হল ব্রহ্মজ্ঞান এবং পরব্রহ্মের সঙ্গে জীবের আত্মার অভিন্ন স্বরূপের জ্ঞান।[৪১] যোগতত্ত্বোপনিষদের মতে, যোগ ও জ্ঞান একযোগে ব্রহ্মোপলব্ধি ও মোক্ষলাভ ঘটায়।[১]

যোগ[সম্পাদনা]

যোগতত্ত্বোপনিষদ্ হঠযোগের উপর গুরুত্ব আরোপ করে।[৪২]

যোগতত্ত্বোপনিষদে বিষ্ণু ব্রহ্মাকে বলেন যে, যোগ হল এক,[৪৩] কিন্তু অনুশীলনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকারের। তার মধ্যে চারটি যোগ প্রধান – মন্ত্রযোগ (যা মন্ত্রের মাধ্যমে সাধিত হয়), লয়যোগ (যা গভীর মনঃসংযোগের মাধ্যমে সাধিত হয়), হঠযোগ (যা প্রয়াসের মাধ্যমে সাধিত হয়) এবং রাজযোগ (যা ধ্যানের মাধ্যমে সাধিত হয়)।[৪৪]

যোগতত্ত্বোপনিষদের মতে, এই চার প্রকার যোগেই চারটি অবস্থা প্রাপ্ত হওয়া যায়: ‘আরম্ভ’ (সূচনা, এই পর্যায়ে অহিংসা ও সঠিক খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে আসন অভ্যাস করা শুরু করতে হয়),[৪৫] ‘ঘট’ (এই দ্বিতীয় সংগতকরণ পর্যায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ এবং দেহ ও মনের সম্পর্কটি শিক্ষা করতে হয়),[৪৬] ‘পরিচয়’ (তৃতীয় ঘনিষ্ঠ পর্যায়ে বায়ুপ্রবাহ রুদ্ধ ও নিয়ন্ত্রিত এবং পরে মন ও আত্মার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ধ্যান অভ্যাস করতে হয়),[৪৭] এবং (চতুর্থ পর্যায়ে সমাধি লাভ হয় এবং আত্মাকে উপলব্ধি করা যায়)।[৪৮] এই গ্রন্থের হঠযোগের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে এবং অধিকাংশ শ্লোকই হঠযোগ-বিষয়ক। যদিও এও বলা হয়েছে রাজযোগে যোগসাধনা শীর্ষবিন্দুতে আরোহণ করে।[৪২]

যোগতত্ত্বোপনিষদে মন্ত্রযোগকে মন্ত্রের শ্রাবণিক পাঠের একটি নিয়ম বলে উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু এও বলা হয়েছে যে এটি যোগের একটি অধস্তন স্তর।[৪৯] এই পদ্ধতিতে বারো বছর ধরে মন্ত্র পাঠ বা সুরে বর্ণ শব্দের আবৃত্তি করতে হয়।[৫০] যোগতত্ত্বোপনিষদের মতে, এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে জ্ঞান এবং কৃচ্ছ্রতাসাধনের বিশেষ ক্ষমতা অর্জন করা যায়।[১৪] সেই সঙ্গে এই গ্রন্থে এও বলা হয়েছে যে, মন্ত্র-ভিত্তিক এই যোগ-পদ্ধদিটি সেই সব স্থূলবুদ্ধির ব্যক্তির জন্য যারা অন্য তিন ধরনের যোগ সাধনে অক্ষম।[৫১][৫০]

লয়যোগকে বর্ণনা করা হয়েছে গভীর মনঃসংযোগের একটি পদ্ধতি হিসেবে, যেখানে দৈনন্দিন কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে সর্বক্ষণ চিন্তার কেন্দ্রে থেকে “অখণ্ড ঈশ্বর” ধারণাটি।[৪৯][৫২] গুরুত্বের দিক থেকে লয়যোগের স্থান দ্বিতীয়। এটির কেন্দ্রে থাকে চিত্ত বা মনকে সংহতকরণের একটি পদ্ধতি, যেখানে ব্যক্তি সর্বদা নিরাকার ঈশ্বরের ধারণা করে চলে।[১৪][৫০]

দশটি যমের মধ্যে মিতাহার (পরিমিত আহার) সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। দশটি নিয়মের মধ্যে, হে চতুরানন, অহিংসা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।

—যোগতত্ত্বোপনিষদ্, ২৮–২৯[৩৭][৫৩]

যোগতত্ত্বোপনিষদের অধিকাংশ শ্লোকে হঠযোগের বিবরণ পাওয়া যায়।[৪২] হঠযোগের বর্ণনায় এই গ্রন্থে আটটি পরস্পর-নির্ভরশীল পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে: দশটি যম (আত্ম-সংযম), দশটি নিয়ম (আত্ম-পর্যবেক্ষণ), আসন (ভঙ্গিমা), প্রাণায়ম (শ্বাস নিয়ন্ত্রণ), প্রত্যাহার (ইন্দ্রিয় বিজয়), ধারণা (পূর্ণ মনোযোগ), ধ্যান ও ধ্যানমগ্ন চৈতন্যের অবস্থা সমাধি[৫৪][৫০][৫১]

ধ্যান আলোচনার পরে ১২৮ সংখ্যক শ্লোক থেকে এই গ্রন্থে হঠযোগের কুড়িটি স্তর বর্ণিত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ‘মহামুদ্রা’, ‘মহাবন্ধ’, ‘খেচরী মুদ্রা’, ‘মূলবন্ধ’, ‘উড্ডীয়ন বন্ধ’, ‘জলন্ধর বন্ধ’, ‘বজ্রোলি’, ‘অমরোলী’ ও ‘সহজোলি]।[৫৫] এরপর সংস্কৃত পণ্ডিত আয়াঙ্গারের অনুবাদ অনুযায়ী[৫৬] এই উপনিষদে রাজযোগকে যোগীদের জগৎ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[৫৭] এই গ্রন্থের ধ্যানের অবলম্বন হিসেবে প্রণব বা ওঁ মন্ত্রটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেটিকে ১৩৪-১৪০ সংখ্যক শ্লোকগুলিতে ব্যাখ্যাও করা হয়েছে। এরপর মোক্ষের স্বরূপ ও পরম সত্য সম্পর্কে একটি বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে এই গ্রন্থে।[৫৮][৫৯]

আসন[সম্পাদনা]

যোগতত্ত্বোপনিষদে আসন
যোগতত্ত্বোপনিষদে কথিত প্রাণায়মের জন্য চারটি প্রধান আসন
প্রাণায়মের জন্য চারটি প্রধান আসন (ঘড়ির কাঁটার ক্রমে: ভদ্রাসন, সিদ্ধাসন, সিংহাসন ও পদ্মাসন)

যোগতত্ত্বোপনিষদে অনেক আসনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু বলা হয়েছে যে প্রাণায়মের প্রাথমিক শিক্ষার্থীর জন্য চারটি আসন নির্ধারিত – সিদ্ধাসন, পদ্মাসন, সিংহাসনভদ্রাসন[৬০] এই আসনগুলির বিষদ বিবরণও এই উপনিষদে দেওয়া হয়েছে।[৬০]

এই গ্রন্থে বলা হয়েছে, পদ্মাসনে বসে প্রাণায়মের সময় নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখা উচিত। এই সময় শ্বাস গ্রহণ, শ্বাস রোধ ও শ্বাস ত্যাগ হবে ধীর, সুষম ও গভীর।[৬১] এই গ্রন্থে সময়ের পরিমাপের (‘মাত্রা’ বা সাংগীতিক তালের মাধ্যমে) কথাও বলা হয়েছে, যাতে অভ্যাসকারী নিজেই প্রাণায়মের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও অগ্রগতির পরিমাপ করতে পারে। যোগ শিক্ষার্থী নিজেই আঙুল দিয়ে নিজের হাঁটুর উপর টোকা মেরে সময়ের হিসাব রাখতে পারে।[৬০] ক্রমান্বয়ে ষোলো মাত্রায় শ্বাস গ্রহণ, চৌষট্টি মাত্রায় শ্বাস রোধ ও ধীরে ধীরে বত্রিশ মাত্রায় শ্বাস ত্যাগকে প্রাণায়মের লক্ষ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[৬০][৬১]

যোগীরা চোখে যা দেখেন, তা সবই আত্মা বলে ধারণা করেন। একইভাবে যা শোনেন, যা আঘ্রাণ করেন, যার স্বাদ গ্রহণ করেন ও যা স্পর্শ করেন, তার সবই আত্মা বলে ধারণা করেন।

—যোগতত্ত্বোপনিষদ্ ৬৯–৭২[৩৭][৬২]

এই উপনিষদে প্রাণায়মের বিবিধ পদ্ধতি আলোচিত হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে যে, এক নাসারন্ধ্র দিয়ে শ্বাস গ্রহণ করে অপর নাসারন্ধ্র দিয়ে শ্বাস ত্যাগের প্রাণায়মটি দিনে বেশ কয়েকবার নিয়মিত অভ্যাস করলে ‘নাড়ি’ (ধমনী) পরিশুদ্ধ হয় এবং তাতে হজম শক্তি ও পরিশ্রমের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, মেদ হ্রাস পায় এবং ত্বক উজ্জ্বল হয়।[৬০][৬১] এই গ্রন্থে যোগ-শিক্ষার্থীকে লবণ, সরিষা, অম্ল খাদ্য ও মশলাযুক্ত কষায় ঝাল খাদ্য গ্রহণ করতে বারণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এও বলা হয়েছে যে, যোগ-শিক্ষার্থী উপবাস করবে না, ঊষাকালে স্নান করবে না, যৌন সংগম থেকে বিরত থাকবে এবং আগুনের কাছে বসবে না। ৪৬ থেকে ৪৯ সংখ্যক শ্লোকে দুধ ও ঘি, রান্না করা গম, কলাই ও ভাত খাওয়ার উপদেশ দেওয়া হয়েছে।[৬৩][৬৪] এছাড়াও যোগাভ্যাসের সময় শরীরের যে যে অংশ কাঁপে বা বেশি ঘামে সেই সব স্থানে মালিশ করার কথাও বলা হয়েছে।[৬৫]

কুণ্ডলিনী যোগ

এই গ্রন্থ মতে, যোগাভ্যাসের পরবর্তী স্তরটির নামকরণ করা হয়েছে ‘ঘট’ (সংস্কৃত: घट)। এর উদ্দেশ্য কথিত হয়েছে প্রাণ (শ্বাস), অপান (শরীরে জলের মিশ্রণ ও বায়বায়ন), মন ও বুদ্ধির সংহতিসাধন এবং সেই সঙ্গে জীবাত্মাপরমাত্মার মিলন। যোগতত্ত্বোপনিষদের মতে এই ক্রিয়াটি ‘প্রত্যাহার’ (ইন্দ্রিয় থেকে মনোযোগ তুলে নেওয়া) ও ‘ধারণা’-র (মনঃসংযোগ) স্তরে উন্নতির পথে একটি ধাপ।[৬৬] এই উপনিষদের মতে, ‘ধারণা’ হল সকল ব্যক্তি ও সকল বস্তুকে তাঁর নিজের আত্মার সঙ্গে অভিন্ন ধারণা করা।[৬২] ৭২ থেকে ৮১ সংখ্যক শ্লোকে যোগের ‘ঘট’ পর্যায়ে যে সকল অলৌকিক ক্ষমতা প্রাপ্ত হওয়া যায় সেগুলির বর্ণনা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে উপনিষদে এও বলা হয়েছে যে, “উৎকর্ষ সাধনের জন্য অভ্যাস প্রয়োজন, যোগী কখনই তিনি কী অর্জন করেছেন তা নিয়ে আনন্দ অনুভব করবেন না, অহংকার করবেন না, কারও অনুরোধে কিছু করতে বা করে দেখাতে যাবেন না, অন্যদের কথা ভুলে থাকবেন এবং সেই সঙ্গে তিনি নিজের সামনে কী লক্ষ্য রেখে এগোচ্ছেন তার কথা সর্বদা স্মরণ করবেন”।[৩৭][৬৭]

কুণ্ডলিনী[সম্পাদনা]

যোগতত্ত্বোপনিষদের ৮২ সংখ্যক শ্লোকের পর থেকে যোগানুশীলনের তৃতীয় স্তর ‘পরিচয়’ (সংস্কৃত: परिचय, ঘনিষ্ঠতা) বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে।[৬৮] যোগতত্ত্বের মতে, এই সময় যোগীর কুণ্ডলিনী জাগ্রত হয়। ধর্ম ও এশীয় বিদ্যার অধ্যাপক জেমস লকটেফেল্ডের মতে,[৬৯] ‘কুণ্ডলিনী’ হল “প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে নিহিত সুপ্ত আধ্যাত্মিক শক্তি।”[৭০] যোগতত্ত্বোপনিষদে যে প্রেক্ষাপটটি উল্লিখিত হয়েছে তা তন্ত্রেরও একটি ভিত্তিগত ধারণা। তন্ত্রে বলা হয়েছে, এটি মহাশক্তির এমন একটি রূপ যা সকল ব্যক্তির মধ্যেই সুপ্ত অবস্থায় থাকে এবং তার জাগরণই সাধনার লক্ষ্য।[৭০] যোগতত্ত্বোপনিষদে এই স্তরটিকে বর্ণনা করা হয়েছে এমন এক স্থান হিসেবে যেখানে যোগীর চিত্ত (মন) জাগ্রত হয় এবং সুষুম্নাচক্রে প্রবিষ্ট হয়।[৭১][৩৭]

শীর্ষাসন

সমাধি হল এমন এক অবস্থা যেখানে জীবাত্মা ও পরমাত্মা অভিন্ন।

—যোগতত্ত্বোপনিষদ্ ১০৭[৭২][৭৩]

পৃথিবী, অপ, অগ্নি, বায়ুআকাশ – এই পঞ্চতত্ত্বকে এই গ্রন্থে বলা হয়েছে ‘পঞ্চব্রহ্ম’, যা এই পঞ্চ তত্ত্বের মধ্যে নিহিত পাঁচ দেবতার (ব্রহ্মা, বিষ্ণু, রুদ্র, ঈশ্বর ও সদাশিব) প্রতীক এবং আরও বলা হয়েছে যে, এই পঞ্চ দেবতার নিকট উপনীত হওয়ার প্রক্রিয়াটি হল ধ্যান।[৭১] যোগতত্ত্বোপনিষদের মতে, এই ধ্যানকে সঙ্গত দান করে বর্ণ, জ্যামিতিক আকৃতি ও মন্ত্র: পৃথিবীর ক্ষেত্রে স্বর্ণাভ হলুদ, চতুর্ভূজ ক্ষেত্র ও ‘লং’; অপের ক্ষেত্রে সাদা, অর্ধচন্দ্রাকার আকৃতি ও ‘বং’; অগ্নির ক্ষেত্রে লাল, ত্রিকোণ ও ‘রং’; বায়ুর ক্ষেত্রে কালো, ষট্কোণ ও ‘যং’ এবং আকাশের ক্ষেত্রে ধূম্রবর্ণ, বৃত্ত ও ‘হং’।[৭৪][৭৫]

উপনিষদ্টির ১১২ থেকে ১২৮ সংখ্যক শ্লোকে হঠযোগের বিভিন্ন আসনের কথা নলা হয়েছে।[৭৬][৭৭] শীর্ষাসন (২৪ মিনিট মাথা সম্পূর্ণ শরীরের নিচে রেখে পা উঠিয়ে থাকা), বজ্রোলি ও আম্রোলি মুদ্রার পদ্ধতি ও উপকারিতা সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে। এই সকল আসন ও মুদ্রা অভ্যাসের মাধ্যমে যোগী রাজযোগের অবস্থায় উন্নীত হন এবং মাতা-পুত্র-পত্নী সম্পর্কের জীবনচক্রের অর্থ উপলব্ধি করতে পারেন।[৭৮]

প্রণব ধ্যান[সম্পাদনা]


(এই তিন অক্ষর"অউম"...) ও ব্রহ্ম অভিন্ন, ইহার দ্বারা যোগী তুরীয় অবস্থায় সমগ্র ইন্দ্রিয়গোচর জগতে পরিব্যাপ্ত থাকেন “ইহার সকলই আমি” – এই ধারণায়। ইহাই সত্য। ইহাই কেবল পরম অস্তিত্ব, যা মূল স্তর।

—যোগতত্ত্বোপনিষদ্ ১৩৫–১৩৬[৩৭][৭৯]

যোগতত্ত্বোপনিষদে যোগানুশীলনের অঙ্গ হিসেবে ওঁ মন্ত্রটির মূলতত্ত্ব ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে যে, ‘ওঁ’ অর্থাৎ অ, উ ও ম – এই তিন অক্ষর প্রতিবিম্বিত করে “তিন বেদ, তিন সন্ধ্যা (প্রভাত, মধ্যাহ্ন ও সায়ম), তিন স্বর, তিন অগ্নি ও তিন গুণকে”।[৮০] রূপকের মাধ্যমে এই যোগানুশীলনকে বর্ণনা করা হয়েছে ফুলের লুক্কায়িত সুগন্ধ আঘ্রাণ, দুধ থেকে ঘি প্রস্তুত, তিলের বীজ থেকে তেল প্রস্তুত, স্বর্ণ আকরিক থেকে স্বর্ণ নিষ্কাষণ এবং নিজ হৃদয়ে আত্মার অনুসন্ধানের সঙ্গে।[৮০] ‘অ’ অক্ষরটি পদ্মের প্রস্ফুটিত হওয়ার প্রতীক, ‘উ’ অক্ষরটি ফুল ফোটার প্রতীক, ‘ম’ অক্ষরটি নাদে (তত্ত্ব বা অন্তর্নিহিত সত্য, শব্দ) উপনীত হয় এবং ‘অর্ধমাত্রা’ তুরীয় বা নৈঃশব্দের আনন্দের ইঙ্গিতবাহী।[৮১][৮২]

যোগতত্ত্বোপনিষদে বলা হয়েছে যে, কথিত যোগপ্রণালী অনুসরণ করে যোগী যখন শরীরের নয়টি মুখের ক্রিয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপনে সক্ষম হন এবং অন্তর্বর্তী সুষুম্নাকে জাগরিত করেন, তখন তিনি কুণ্ডলিনীকেও জাগিয়ে তোলেন এবং আত্ম-সচেতন হন অর্থাৎ পরম সত্যকে জানতে পারেন এবং নিজ আত্মার প্রতি তাঁর দৃঢ় প্রত্যয় স্থাপিত হয়।[৩৭][৮৩]

গুরুত্ব[সম্পাদনা]

জগতের সঙ্গে যোগীর সম্পর্ক

এক দূরবর্তী অবারিত স্থানে,
শান্তিতে ও নির্জনে, নির্বিঘ্নে,
সকল সত্ত্বা ও নিজ আত্মার
সুরক্ষা নিশ্চিত করেন যোগী।

—যোগতত্ত্বোপনিষদ্ ১৫[৮৪]

যোগতত্ত্বোপনিষদ্ হল যোগ-সংক্রান্ত সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থগুলির অন্যতম।[৩১][৮৫]

যোগতত্ত্বেই যোগানুশীলন সর্বাপেক্ষা অনুপূঙ্খভাবে উদ্ঘাটিত হয়েছে: এই গ্রন্থে [যোগের] আটটি ‘অঙ্গ’ উল্লিখিত হয়েছে এবং চার প্রকার যোগের মধ্যে পার্থক্যকরণ করা হয়েছে: মন্ত্রযোগ, লয়যোগ, হঠযোগরাজযোগ

— মার্সিয়া এলিয়াড, যোগ: ইম্মর্ট্যালিটি অ্যান্ড ফ্রিডম[৩১]

হোয়াইটম্যানের মতে, এই গ্রন্থে বিভিন্ন ধরনের যোগানুশীলন পদ্ধতি আলোচিত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হল হঠযোগ, যা “সুসংহতভাবে গড়ে ওঠা এক অনুশীলন পদ্ধতি” এবং যার মূল উদ্দেশ্য হল “শরীরের সুস্বাস্থ্য ও শুচিতা রক্ষা এবং শরীরের সকল ক্রিয়ার উপর আত্ননিয়ন্ত্রণে উৎকর্ষ সাধন”।[২১] এই উপনিষদের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল চার প্রকার যোগের সংজ্ঞা এবং একটি তুলনামূলক আলোচনা।[২১][৯]

যোগতত্ত্বোপনিষদ্ ও ব্রহ্মোপনিষদ্ হল চক্র-সংক্রান্ত তান্ত্রিক ধারণাগুলির প্রাচীনতম উৎসের অন্যতম। এই ধারণাগুলিই তিব্বতি বৌদ্ধধর্মে গৃহীত হয়েছিল।[৮৬] যদিও ইয়ায়েল বেন্টরের মতে, তিব্বতি বৌদ্ধ শাস্ত্রে ও হিন্দু যোগতত্ত্বোপনিষদে দেহের অভ্যন্তরে চক্রগুলির অবস্থান প্রসঙ্গে সামান্য কিছু পার্থক্য লক্ষিত হয়।[৮৭]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. লারসন ও পটার ১৯৭০, পৃ. ৬১৮।
  2. ডুসেন, বেডেকর এবং পালসুলে (অনূ.) ১৯৯৭, পৃ. ৫৫৭, ৭১৩।
  3. ডুসেন, বেডেকর এবং পালসুলে (অনূ.) ১৯৯৭, পৃ. ৬৫৭।
  4. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. vii।
  5. জি. এম. পাতিল (১৯৭৮), ‘ঈশ্বর ইন যোগ ফিলোজফি’, ‘দ্য ব্রহ্মবাদিন্’, ১৩শ খণ্ড, বিবেকানন্দ প্রকাশন কেন্দ্র, পৃ. ২০৯–২১০
  6. ডুসেন, বেডেকর এবং পালসুলে (অনূ.) ১৯৯৭, পৃ. ৫৫৬।
  7. ম্যাক্স মুলার, দ্য উপনিষদ্স, ১ম পর্ম, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, পৃ. ছিয়াশি, পাদটীকা ১, ২২, মন্ত্র ১৩.৪
  8. ডুসেন, বেডেকর এবং পালসুলে (অনূ.) ১৯৯৭, পৃ. ৭১৩–৭১৬।
  9. আইয়ার ১৯১৪, পৃ. ১৯২।
  10. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩০১–৩২৫।
  11. গেরাল্ড জেমস লারসন (২০০৯), ‘রিভিউ: ডিফারেনশিয়েটিং দ্য কনসেপ্টস অফ "যোগ" অ্যান্ড "তন্ত্র" ইন সংস্কৃত লিটারারি হিস্ট্রি’, জার্নাল অফ দি আমেরিকান ওরিয়েন্টাল সোসাইটি, ১২৯শ খণ্ড, সংখ্যা ৩, পৃ. ৪৮৭–৪৯৮
  12. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩০১।
  13. ডুসেন ২০১০, পৃ. ৯।
  14. আইয়ার ১৯১৪, পৃ. ১৯৩।
  15. মনিয়ার মনিয়ার-উইলিয়ামস (১৮৯৯)। আ সংস্কৃত-ইংলিশ ডিকশনারি। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ৮০৪। 
  16. দাশগুপ্ত, সুরেন্দ্রনাথ (১৯৭৫)। আ হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়ান ফিলোজফিদিল্লি, ভারত: মোতিলাল বনারসিদাস। পৃষ্ঠা ২২৬। আইএসবিএন 81-208-0412-0 
  17. স্টিফেন ফিলিপস (২০০৯), যোগ, কর্ম, অ্যান্ড রিবার্থ: আ ব্রিফ হিস্ট্রি অ্যান্ড ফিলোজফি, কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস, আইএসবিএন ৯৭৮-০-২৩১-১৪৪৮৫-৮, অধ্যায়: শব্দকোষ, পৃ. ৩২৭
  18. ডুসেন, বেডেকর এবং পালসুলে (অনূ.) ১৯৯৭, পৃ. ৭১৩।
  19. মারশিয়া এলিয়াড (১৯৭০), যোগ: ইম্মরট্যালিটি অ্যান্ড ফ্রিডম, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস, আইএসবিএন ০-৬৯১-০১৭৬৪-৬, পৃ. ১২৮–১২৯
  20. কার্ডিন ২০১৫, পৃ. ৩৫৫।
  21. হোয়াইটম্যান ১৯৯৩, পৃ. ৮০।
  22. ডেভিড গর্ডন হোয়াইট (২০১১), যোগ ইন প্র্যাকটিশ, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৬৯১-১৪০৮৬-৫, পৃ. ১০৪
  23. ফ্লাড ১৯৯৬, পৃ. ৯৬।
  24. ডুসেন, বেডেকর এবং পালসুলে (অনূ.) ১৯৯৭, পৃ. ৫৫৮–৫৫৯।
  25. ডুসেন, বেডেকর এবং পালসুলে (অনূ.) ১৯৯৭, পৃ. ৫৬১।
  26. ডুসেন, বেডেকর এবং পালসুলে (অনূ.) ১৯৯৭, পৃ. ৫৬২–৬৫।
  27. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩২৫।
  28. "যোগতত্ত্ব উপনিষদ্" (পিডিএফ) (সংস্কৃত ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  29. ডুসেন, বেডেকর এবং পালসুলে (অনূ.) ১৯৯৭, পৃ. ৭১৪–৭১৬।
  30. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩২২–৩২৫।
  31. মার্সিয়া এলিয়াড (১৯৭০), যোগ: ইম্মর্ট্যালিটি অ্যান্ড ফ্রিডম, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস, আইএসবিএন ০-৬৯১-০১৭৬৪-৬, পৃ. ১২৯
  32. আইয়ার ১৯১৪, পৃ. ১৯২–৯৩।
  33. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩০২।
  34. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩০২–৩০৪।
  35. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩১৭–৩১৮।
  36. জ্যঁ ভেরেঁ (১৯৭৬), যোগ অ্যান্ড দ্য হিন্দু ট্র্যাডিশন , ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো প্রেস (অনুবাদক: ডেরেক কোল্টম্যান, ১৯৮৯), আইএসবিএন ৮১-২০৮-০৫৪৩-৭, পৃ. ৫৭–৫৮
  37. ॥ যোগতত্ত্বোপনিষদ্ ॥ যোগতত্ত্বোপনিষদের সংস্কৃত পাঠ, সংস্কৃতডক্যুমেন্টস আর্কাইভস (২০০৯)
  38. ডেরেক (অনু) ১৯৮৯, পৃ. ২২৬।
  39. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩০৪।
  40. অ্যালেক্স ওয়েম্যান (১৯৮২), রিভিউড ওয়ার্ক: থার্টি মাইনর উপনিষদ্স, ইনক্লুডিং দ্য যোগ উপনিষদ্স বাই কে. নারায়ণস্বামী আইয়ার, ফিলোজফি ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট, খণ্ড ৩২, সংখ্যা ৩(জুলাই, ১৯৮২), পৃ. ৩৬০–৩৬২
  41. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩০১–৩০৫।
  42. লারসন ও পটার ১৯৭০, পৃ. ১৩৭–১৩৮।
  43. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩০৫।
  44. Larson ও Potter 1970, পৃ. 618।
  45. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩০৬–৩১২।
  46. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩১২–৩১৪।
  47. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩১৪–৩১৭।
  48. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩১৭–৩২৫।
  49. লারসন ও পটার ১৯৭০, পৃ. ১৩৭–১৩৮, ৬১৮–৬১৯।
  50. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩০৫–৩০৬।
  51. লারসন ও পটার ১৯৭০, পৃ. ৬১৮–৬১৯।
  52. ড্যানিয়েল মারিয়াউ (২০০৭), লয়যোগ, এনসাইক্লোপিডিয়া অফ হিন্দুইজম গ্রন্থে (সম্পাদক: ডেনিস কাশ ও অন্যান্য), রটলেজ, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৭০০৭-১২৬৭-০, পৃ. ৪৬০
  53. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩০৬।
  54. আইয়ার ১৯১৪, পৃ. ১৯৩–৯৪।
  55. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩১৭–৩২১।
  56. অ্যান্টোনিও রিগোপোলোস (১৯৯৮)। দত্তাত্রেয়: দ্য ইম্মর্টাল গুরু, যোগী, অ্যান্ড অবতার: আ স্টাডি অফ দ্য ট্রান্সফরমেটিভ অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ক্যারেক্টার অফ আ মাল্টি-ফ্যাসেটেড হিন্দু ডেইটি। স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্ক প্রেস। পৃষ্ঠা ৭৯ (১২–১৪ টীকা সহ), ৮০ (১৯–২২ টীকা সহ)। আইএসবিএন 978-0-7914-3696-7 
  57. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩২১–৩২৩।
  58. আইয়ার ১৯১৪, পৃ. ১৯৪।
  59. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩২৩–৩২৫।
  60. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩০৭–৩০৯।
  61. আইয়ার ১৯১৪, পৃ. ১৯৪–১৯৫।
  62. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩১২–৩১৩।
  63. আইয়ার ১৯১৪, পৃ. ১৯৪–৯৬।
  64. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩০৯–৩১০।
  65. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩১০–৩১১।
  66. আইয়ার ১৯১৪, পৃ. ১৯৬–৯৭।
  67. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩১৩–৩১৪।
  68. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩১৪–৩১৫।
  69. জেমস লকটেফেল্ড, কার্থেজ কলেজ, উইসকনসিন (২০১৫)
  70. জেমস জি লকটেফেল্ড (২০০১), দি ইলাস্ট্রেটেড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ হিন্দুইজম: এ-এম, রোজেন পাবলিশিং, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮২৩৯-৩১৭৯-৮, পৃ. ৩৮১–৩৮২
  71. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩১৪–৩১৬।
  72. আইয়ার ১৯১৪, পৃ. ১৯৯।
  73. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩১৮।
  74. আইয়ার ১৯১৪, পৃ. ১৯৭–৯৮।
  75. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩১৫–৩১৭।
  76. আইয়ার ১৯১৪, পৃ. ১৯৮–২০০।
  77. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩১৯–৩২২।
  78. আইয়ার ১৯১৪, পৃ. ২০০।
  79. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩২৩।
  80. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩২২–৩২৪।
  81. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩২৩–৩২৪।
  82. আইয়ার ১৯১৪, পৃ. ২০১।
  83. আয়াঙ্গার ১৯৩৮, পৃ. ৩২৪–৩২৫।
  84. ডুসেন, বেডেকর এবং পালসুলে (অনূ.) ১৯৯৭, পৃ. ৭১৬।
  85. টম স্টিলেস (১৯৭৫), ‘হিস্টোরিক্যাল পারসপেক্টিভস অফ ক্ল্যাসিক্যাল যোগ ফিলোজফিজ’, যোগ জার্নাল, ১ম খণ্ড, ৩য় সংখ্যা, পৃ. ৬
  86. গ্যুর্মে ২০০৮, পৃ. ৮৬।
  87. ইয়ায়েল বেন্টর (২০০০), ‘ইন্টিরিয়রাইজড ফায়ার রিচুয়ালস ইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইন টিবেট’, জার্নাল অফ দি আমেরিকান ওরিয়েন্টাল সোসাইটি, ১২০শ খণ্ড, ৪র্থ সংখ্যা, পৃ. ৫৯৭ (পাদটীকা সহ)

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]