প্রাণায়াম
প্রাণায়াম (সংস্কৃত: प्राणायाम prāṇāyāma) হল একটি সংস্কৃত শব্দ যাকে বৈকল্পিকভাবে "প্রাণের প্রসারণ" (শ্বাসপ্রশ্বাস বা জীবনশক্তি) বা "শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ" হিসাবে অনুবাদ করা হয়। শব্দটি দুটি সংস্কৃত শব্দ: "প্রাণ" যার অর্থ জীবনশক্তি (নির্দিষ্টভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস হিসাবে পরিচিত), এবং হয় "আয়াম" (প্রাণকে বন্ধন বা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, শ্বাসকৌশলগুলির একটি সেট বোঝানো যেখানে শ্বাসপ্রশ্বাস নির্দিষ্ট ফলাফল তৈরি করতে ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবর্তিত হয়) বা "আয়াম"-এর নঞর্থক রূপ, যার অর্থ প্রসারণ বা বৃদ্ধি করা (জীবনশক্তির সম্প্রসারণ হিসাবে)। এটি প্রাচীন ভারতে মুনি ঋষিদের হাতে উৎপত্তি হওয়া একটি যোগীয় শৃঙ্খলা। যার দ্বারা সকল রোগ নিরাময় সম্ভব।
বিভিন্ন প্রকারের প্রাণায়াম আছে। বলা হয় বাহাত্তর হাজার প্রকারের প্রাণায়াম আছে :
"ঠাকুর বলিলেন- “মানুষের শরীরে বাহাত্তর হাজার নাড়ী আছে। ঐ সকল নাড়ীতে প্রাণ-বায়ুকে চালনা করবার যে সকল প্রক্রিয়া, তাহাকেই প্রাণায়াম বলে। এক এক নাড়ীতে এক এক প্রকার প্রক্রিয়ায় এই প্রাণবায়ু চলে। এইজন্য প্রাণায়ামও বাহাত্তর হাজার প্রকারের। নানারূপ অঙ্গভঙ্গীতে এবং নানা প্রকার শব্দতেও প্রাণায়াম হয়।"
ভাদুড়ী মহাশয় - মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ প্রাণায়ামের বিভিন্ন প্রণালীতে আশ্চর্য সিদ্ধি লাভ করেন। ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম তিনি এমন জোরে সঙ্গে করতে পারতেন যে - মনে হতো ঝড় উঠেছে। এই বিষয়টির সশ্রদ্ধ উল্লেখ আছে পরমহংস যোগানন্দ রচিত 'যোগী কথামৃত'-তে:
“তার অনেক অদ্ভুত সব ক্রিয়াকলাপ দেখেছি। পতঞ্জলির* অষ্টাঙ্গ যোগের মধ্যে প্রাণায়ামের** বিভিন্ন প্রণালী তিনি খুব দক্ষতার সঙ্গে আয়ত্ত করেছেন। একবার তিনি 'ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম' আমার সামনে এমন ভয়ঙ্কর জোরের সঙ্গে করে দেখালেন যে, মনে হল যেন ঘরের মধ্যে সত্যিসত্যিই একটা প্রবল ঝড় উঠেছে । তারপর তিনি ঝড়ের মত নিশ্বাস থামিয়ে উচ্চ সমাধিতে নিমগ্ন হয়ে গিয়ে একেবারে নিষ্পন্দ হয়ে পড়লেন । ঝড়ের পর শান্তির স্বর্গীয় জ্যোতিঃর ছটা যা তাঁর বদনে দেখা গেল, তা ভোলবার নয় ।”
ব্যুৎপত্তি
[সম্পাদনা]প্রাণায়াম (দেবনাগরী: प्राणायाम prāṇāyāma) হল একটি সংস্কৃত যৌগিক শব্দ।
হঠযোগপ্রদীপিকাতে বলা হয়েছে –
- चले वाते चलं चित्तं निश्चले निश्चलं भवेत्
- योगी स्थाणुत्वमाप्नोति ततो वायुं निरोधयेत्॥२॥
- (অর্থাৎ প্রাণ চলায়মান হয়ে গেলে চিত্তও চলায়মান হয়ে যায় এবং প্রাণ নিশ্চল হয়ে গেলে চিত্তও নিশ্চল হয়ে যায় এবং যোগী স্থানু হয়ে যান। এজন্য যোগীর শ্বাসপ্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।)
এছাড়াও বলা হয়েছে –
- यावद्वायुः स्थितो देहे तावज्जीवनमुच्यते।
- मरणं तस्य निष्क्रान्तिः ततो वायुं निरोधयेत् ॥
- (যতক্ষণ শরীরে বায়ু আছে ততক্ষণ জীবন আছে। বায়ুর নিষ্ক্রমণই (বেরিয়ে যাওয়া) মৃত্যু। এজন্য বায়ুকে নিরোধ করা দরকার।)
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ব্রহ্মচারী, শ্রীকুলদানন্দ (১৩৩৩)। শ্রীশ্রীসদ্গুরুসঙ্গ ( দ্বিতীয় খণ্ড)। পৃষ্ঠা ১৬৪: শ্রীমহানন্দ নন্দী, বড়বাজার, কলকাতা।
- ↑ শ্রী শ্রী পরমহংস, যোগানন্দ, যোগানন্দ (১৯৬০)। যোগিকথামৃত [পরমহংস যোগানন্দ-কৃত ইংরেজী " অটো বাইওগ্র্যাফি অফ এ যোগী"-র বঙ্গানুবাদ]। যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ্ ইন্ডিয়া, যোগদা সৎসঙ্গ মঠ, দক্ষিণেশ্বর, কলকাতা - ৭৬। পৃষ্ঠা ৭০।