নারায়ণোপনিষদ্‌

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নারায়ণ
নারায়ণ ও তাঁর পত্নী লক্ষ্মী
দেবনাগরীनारायण
IASTNārāyaṇa
নামের অর্থপরম জ্যোতি নারায়ণ
উপনিষদের
ধরন
বৈষ্ণব
সম্পর্কিত বেদকৃষ্ণ যজুর্বেদ
অধ্যায়ের সংখ্যা

নারায়ণ উপনিষদ (সংস্কৃত: नारायण उपनिषत्) বা নারায়ণোপনিষদ্‌ হল একটি অপ্রধান উপনিষদ্‌মুক্তিকা অনুসারে রামহনুমানের কথোপকথনের আকারে তালিকাভুক্ত ১০৮টি উপনিষদের মধ্যে এই উপনিষদের স্থান ১৮। এই গ্রন্থের রচয়িতার নাম ও কালপঞ্জি সঠিক জানা যায় না। নারায়ণ উপনিষদ সংস্কৃত ভাষায় রচিত এবং কৃষ্ণ যজুর্বেদের সঙ্গে যুক্ত।[১] এটি ১৪টি বৈষ্ণব উপনিষদের অন্যতম।[২] নারায়ণের (বিষ্ণু) প্রতি ভক্তি এই গ্রন্থের প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয়।[৩] হেনরি টমাস কোলব্রুকের ১৯শ শতাব্দীর প্রথম ভাগের সংকলন গ্রন্থে এই উপনিষদটির স্থান ৩৩তম।[৪]

পল ডুসেনের মতে, এটি সেই সকল উপনিষদ্‌গুলির অন্যতম যেগুলিকে “কাল্ট অফ ফর্মুলা” হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এই জাতীয় উপনিষদে বস্তু ও দর্শনের থেকে নির্দিষ্ট পদ্ধতির দিকে ধ্যান স্থান পরিবর্তন করে।[৫] নারায়ণোপনিষদ্‌ গ্রন্থের পদ্ধতিটি হল, ‘ওঁ নমঃ নারায়ণায়মন্ত্রটি মোক্ষ লাভের পথ। এই মন্ত্রের মাধ্যমে বিষ্ণুর সাজুয্য প্রাপ্ত হওয়া যায়।[৬] এই গ্রন্থটিকে অন্যতম মন্ত্র উপনিষদ্‌ মনে করা হয়।[১]

নারায়ণ উপনিষদ অনুসারে, “সকল দেবদেবী, সকল ঋষি ও সকল জীব নারায়ণ থেকে জাত হয় এবং নারায়ণেই বিলীন হয়।” ডুসেন মনে করেন, সম্ভবত বিভিন্ন যুগের ধর্মগ্রন্থ থেকে পঙ্‌ক্তি চয়ন করে এই গ্রন্থটি সংকলিত হয়েছে।[৫]

বিষয়বস্তু[সম্পাদনা]

নারায়ণোপনিষদ্‌ একটি ক্ষুদ্রায়তন উপনিষদ্‌। এই উপনিষদ্‌ পাঁচটি অধ্যায়ে বিভক্ত।[৫]

প্রথম অধ্যায় : সকল কিছু নারায়ণে জাত, নারায়ণেই লীন[সম্পাদনা]

উপনিষদ প্রথম অধ্যায়ে দাবি করে যে নারায়ণ প্রাণ (জীবনের সারাংশ, শ্বাস), ইন্দ্রিয় এবং মন (চিৎ এবং চেতনা) সৃষ্টি করেছেন। তিনি মহাবিশ্বের উপাদান সৃষ্টি করেছেন, যথা বাতাস (বায়ু), আলো (জ্যোতি), জল (অপ), আগুন (অগ্নি), ইথার (আকাশ) এবং পৃথিবী (পৃথ্বী)[৭] তাঁর থেকেই জন্মগ্রহণ করেছেন ব্রহ্মা, রুদ্র, প্রজাপতি, দ্বাদশ আদিত্য, ইন্দ্র, অষ্টবসু, কাব্যের ছন্দ, সকল ঋষি ও সকল জীব। সকলেই নারায়ণ থেকে জাত হন এবং শেষে নারায়ণেই বিলীন হয়ে যান।[৫][৬]

দ্বিতীয় অধ্যায় : নারায়ণ হলেন এক ঈশ্বর[সম্পাদনা]

দ্বিতীয় অধ্যায়ে ঘোষণা করা হয়েছে যে, নারায়ণ হলেন অদ্বিতীয়, চিরন্তন ঈশ্বর। তিনি এবং ব্রহ্ম, শিব, শক্র, কাল, সগুণ, নির্গুণ, অন্তস্থ, বহিঃস্থ, সকল ব্রহ্মাণ্ড, অতীয় ও ভবিষ্যৎ সকলই এক।[১][৫]

তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম অধ্যায় : নারায়ণ পদ্ধতি[সম্পাদনা]

তৃতীয় ও চতুর্থ অধ্যায়ে বলা হয়েছে যে, নারায়ণ উপনিষদ অধ্যয়ন হল নির্ভীক জীবনের পথ, অমরত্ব অর্জন, ব্রহ্মের অংশ হয়ে ওঠা। এই গ্রন্থের মতে, পাঠ্য মন্ত্রটি হল ‘ওঁ নমো নারায়ণায়’। এই মন্ত্রটি ১-২-৫ অক্ষরবিশিষ্ট। এই মন্ত্র পাঠ করলে দীর্ঘ জীবন প্রাপ্ত হওয়া যায় এবং সকল জাগতিক ও আধ্যাত্মিক কামনা পূর্ণ হয়।[৫]

পঞ্চম অধ্যায়ে অনুসারে, যিনি ‘ওঁ নমো নারায়ণায়’ পদ্ধতিতে পূজা করেন, তিনি বিষ্ণুর স্বর্গে গমন করেন এবং জন্ম ও সংসার থেকে মুক্ত হন। যিনি উপনিষদি পাঠ করেন, তিনি সকল পাপ থেকে মুক্ত হন এবং নারায়ণের সাজুয্য প্রাপ্ত হন।[৬] এই গ্রন্থে আরও বলা হয়েছে,

নারায়ণ অন্তরের আনন্দ, ব্রহ্ম, পুরুষ, অ, উ ও ম- এই তিন পবিত্র অক্ষর দ্বারা গঠিত ওঙ্কারের সঙ্গে ব্যক্তির মধ্যে বিলীন হন।

— নারায়ণোপনিষদ্‌ ৫.১[৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. K. Narayanasvami Aiyar, Thirty Minor Upanishads, University of Toronto Archives, ওসিএলসি ২৪৮৭২৩২৪২, pp. viii, 128–129
  2. Tinoco, পৃ. 87।
  3. Farquhar 1920, পৃ. 364।
  4. Paul Deussen (Translator), Sixty Upanisads of the Veda, Vol 2, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১৪৬৯১, pages 558–565
  5. Paul Deussen (Translator), Sixty Upanisads of the Veda, Vol. 2, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১৪৬৯১ (2010 Reprint), pp. 803–805
  6. Kennedy 1831, পৃ. 442।
  7. ॥ नारायणोपनिषत् ॥ Sanskrit text of Narayana Upanishad, SanskritDocuments Archives (2009), Quote: खं वायुर्ज्योतिरापः पृथिवी विश्वस्य धारिणी ।

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]