পাল সাম্রাজ্য
পাল সাম্রাজ্য | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
৭৫০ খ্রিস্টাব্দ[১]–১১৬১ খ্রিস্টাব্দ[২] | |||||||||
পতাকা | |||||||||
খ্রিস্টীয় ৯তম শতাব্দী নাগাদ পাল সাম্রাজ্যের অবস্থান[৩] | |||||||||
অবস্থা | সাম্রাজ্য | ||||||||
রাজধানী | একাধিক
| ||||||||
প্রচলিত ভাষা | সংস্কৃত, প্রাচীন বাংলা ভাষা মৈথিলী | ||||||||
ধর্ম | বজ্রযান বৌদ্ধধর্ম মহাযান বৌদ্ধধর্ম শৈবধর্ম শাক্তধর্ম বৈষ্ণবধর্ম | ||||||||
সরকার | রাজতন্ত্র | ||||||||
• প্রতিষ্ঠাতা | গোপাল | ||||||||
• দ্বিতীয় সম্রাট | ধর্মপাল | ||||||||
সম্রাট | |||||||||
• ৭৫০ - ৭৭৭ | গোপাল | ||||||||
• ১১৮১ - ১১৯৮ | মদনপাল (সর্বশেষ স্বীকৃত পাল সম্রাট) | ||||||||
ঐতিহাসিক যুগ | ধ্রুপদি ভারত | ||||||||
• প্রতিষ্ঠা | ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ[১] | ||||||||
• বিলুপ্ত | ১১৬১ খ্রিস্টাব্দ[২] | ||||||||
| |||||||||
বর্তমানে যার অংশ | ভারত বাংলাদেশ নেপাল |
পাল সাম্রাজ্য (৭৫০-১১৬১ খ্রি)[১][২] ভারতীয় উপমহাদেশের ধ্রুপদি পরবর্তী যুগের একটি সাম্রাজ্য ছিল। এই সাম্রাজ্যের উৎসস্থল ছিল বাংলা অঞ্চল। পাল সাম্রাজ্যের নামকরণ করা হয় এই সাম্রাজ্যের শাসক পাল রাজবংশের নামানুসারে। পাল সম্রাটদের নামের শেষে ‘পাল’ অনুসর্গটি যুক্ত ছিল। প্রাচীন প্রাকৃত ভাষায় এই শব্দটির অর্থ ‘রক্ষাকর্তা’। পাল সম্রাটেরা বৌদ্ধধর্মের মহাযান ও তান্ত্রিক সম্প্রদায়ের অনুগামী ছিলেন। এই সাম্রাজ্যের পত্তন ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে গৌড়ের সম্রাট পদে গোপালের নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে ঘটেছিল।[১] অধুনা বাংলা ও পূর্ব বিহারের ভূখণ্ড পাল সাম্রাজ্যের প্রধান কেন্দ্র ছিল। এই সাম্রাজ্যের প্রধান শহরগুলি ছিল - পাটলীপুত্র, বিক্রমপুর, রামাবতী (বরেন্দ্র), মুঙ্গের, তাম্রলিপ্ত ও জগদ্দল।
পাল সম্রাটরা প্রাজ্ঞ কূটনীতিবিদ ও সামরিক বিজেতা ছিলেন। তাদের সেনাবাহিনীর বৈশিষ্ট্য ছিল একটি বৃহৎ যুদ্ধহস্তী বাহিনী। তাদের নৌবাহিনী বঙ্গোপসাগরে বাণিজ্যিক ও প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকা পালন করত। পাল সম্রাটরা ছিলেন ধ্রুপদি ভারতীয় দর্শন, সাহিত্য, চিত্রকলা ও ভাস্কর্যশিল্পের বিশিষ্ট পৃষ্ঠপোষক। তারা একাধিক বৃহদায়তন মন্দির ও মঠ নির্মাণ করিয়েছিলেন। এগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল সোমপুর মহাবিহার। তারা নালন্দা ও বিক্রমশিলা মহাবিহারের পৃষ্ঠপোষকতাও করতেন। শ্রীবিজয় সাম্রাজ্য, তিব্বতি সাম্রাজ্য ও আরবের আব্বাসীয় খিলাফতের সঙ্গে পাল সাম্রাজ্যের সুসম্পর্ক বজায় ছিল।[৬] বাগদাদের বাইতুল হিকমাহ এই যুগেই ভারতীয় সভ্যতার গাণিতিক ও জ্যোতির্বিজ্ঞান-সংক্রান্ত কীর্তিগুলির সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল।[৭]
খ্রিস্টীয় ৯ম শতাব্দীর প্রথম ভাগে পাল সাম্রাজ্য সর্বাধিক সমৃদ্ধি লাভ করেছিল। এই সময় পাল সাম্রাজ্যই ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তরাঞ্চলের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। সেই যুগে এই সাম্রাজ্য বৃহত্তর পূর্ব-ভারতবর্ষ, উত্তর ও উত্তরপূর্ব ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভূখণ্ডে প্রসারিত হয়।[১][৮] পাল সাম্রাজ্য সর্বাধিক সমৃদ্ধি ঘটেছিল সম্রাট ধর্মপাল ও দেবপালের রাজত্বকালে। তিব্বতে অতীশ দীপঙ্করের মাধ্যমে পাল সাম্রাজ্য প্রভূত সাংস্কৃতিক প্রভাব বিস্তার করেছিল। পাল সাম্রাজ্যের সাংস্কৃতিক প্রভাব পড়েছিল দক্ষিণপূর্ব এশিয়াতেও। উত্তর ভারতে পাল শাসন ছিল ক্ষণস্থায়ী। কারণ কনৌজের আধিপত্য অর্জনের জন্য গুর্জর-প্রতিহার ও রাষ্ট্রকূটদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে পাল সম্রাটরা পরাজিত হন। কিছুকালের জন্য পাল সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছিল। তারপর সম্রাট প্রথম মহীপাল বাংলা ও বিহার অঞ্চলে দক্ষিণ ভারতীয় চোল অনুপ্রবেশ প্রতিহত করেন। সম্রাট রামপাল ছিলেন সর্বশেষ শক্তিশালী পাল সম্রাট। তিনি কামরূপ ও কলিঙ্গে আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। খ্রিস্টীয় ১১শ শতাব্দীতে পাল সাম্রাজ্যের নানা অঞ্চলে বিদ্রোহ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এর ফলে সাম্রাজ্যের শক্তি অনেকটাই হ্রাস প্রাপ্ত হয়।
খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দীতে বরেন্দ্রতে দিব্যকের বিদ্রোহ এবং দ্বাদশ শতাব্দীতে হিন্দু সেন রাজবংশের পুনরুত্থানের ফলে পাল সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। সেই সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বশেষ প্রধান বৌদ্ধ সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে। বাংলার ইতিহাসে পাল যুগকে অন্যতম সুবর্ণযুগ মনে করা হয়।[৯][১০] বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে কয়েক শতাব্দীব্যাপী গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে পাল সম্রাটরা বাংলায় স্থিতাবস্থা ও সমৃদ্ধি আনয়ন করেছিলেন। পূর্বতন বঙ্গীয় সভ্যতাকে তারা উন্নত করে তোলেন। সেই সঙ্গে শিল্পকলা ও স্থাপত্যের ক্ষেত্রে অসামান্য কীর্তি রেখে যান। তাদের রাজত্বকালেই প্রাচীন বাংলা ভাষার বিকাশ ঘটে। বাংলার প্রথম সাহিত্যকীর্তি চর্যাপদ পাল যুগেই রচিত হয়েছিল। আজও তিব্বতি বৌদ্ধধর্মে পাল উত্তরাধিকার প্রতিফলিত হয়।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]উৎপত্তি
[সম্পাদনা]কিছু অবিন্যস্ত উল্লেখ থেকে পাওয়া যায়, প্রথম পাল রাজা গোপাল ছিলেন বাপ্যত নামে এক যোদ্ধার পুত্র, তার ঠাকুরদা দয়িতবিষ্ণু এক স্থানীয় সামন্তের কর্মচারী। রামচরিতম্ গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, পাল রাজাদের পিতৃভূমি (‘জনকভূ’) ছিল বরেন্দ্র (উত্তরবঙ্গ)। এই রাজবংশের জাতিগত উৎস অজ্ঞাত। পরবর্তীকালের নথিপথ, যেমন বল্লালচরিত গ্রন্থে ও ঘনারাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্যেও (উভয় গ্রন্থই খ্রিষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে রচিত) বলা হয়েছে যে, পাল সম্রাটেরা ছিলেন ক্ষত্রিয়; ঘনারাম এবং তারানাথ বলেছেন ধর্মপাল সমুদ্র বংশের সঙ্গে সম্পর্কিত। রামচরিতম্ গ্রন্থে পঞ্চদশ পাল সম্রাট রামপালকে ক্ষত্রিয় বলা হয়েছে। [১০] পাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার সমসাময়িক খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীতেআর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্প গ্রন্থে পাল রাজবংশকে দাস জাতীয় বলা হয়েছে। ঐতিহাসিক নীহাররঞ্জন রায় উল্লেখ করেছেন, পালরাজদের জন্মভূমি বরেন্দ্রী, তাঁরা তাঁদের রাজবংশ প্রতিষ্ঠায় বৈশিষ্ট্যগতভাবে বাঙালি ছিলেন। আপাতদৃষ্টিতে ষোড়শ শতাব্দীর জনপ্রিয় ঐতিহ্য তাদের তিনটি শীর্ষ বর্ণের বাইরে বলে মনে করেছিল, তাই তারানাথ এবং মঞ্জুশ্রীমুলকল্পের লেখকের অনুমানগুলি ঐতিহাসিকভাবে আরও সঠিক মনে হয়। তারানাথ বলেছিলেন যে গোপাল একটি বৃক্ষ-দেবতার বীজে একজন ক্ষত্রিয় মহিলার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। নিঃসন্দেহে এই গল্পটি টোটেম সংস্কৃতির সাথে যুক্ত, এবং এতে, পৌরাণিক ব্রাহ্মণ্যবাদের বাইরের সমাজের প্রতিফলন রয়েছে।[১১] ঐতিহাসিক বিশ্বেশ্বর চক্রবর্তী ও এইচএস কোটিয়াল এর মতে পাল রাজারা ও দিব্যক কৈবর্ত বা মাহিষ্য ছিলেন।[১২][১৩] নগেন্দ্রনাথ বসু লিখেছেন পাল রাজারা কায়স্থ । তবে পাল রাজারা নিজেদের কখনও পৌরাণিক ব্রাহ্মণ্য বর্ণ সমাজের বলে কোনো দাবি করেননি; প্রথম দিকের পাল রাজারা একান্ত ভাবে বৌদ্ধ ধর্মের অনুরক্ত ছিলেন।[১৪][১৫]
প্রতিষ্ঠা
[সম্পাদনা]শশাঙ্কের রাজ্যের পতনের পর বাংলা অঞ্চলে নৈরাজ্য দেখা দেয়। এই সময় এই অঞ্চলে কোনও কেন্দ্রীয় শাসক ছিলেন না। ক্ষুদ্র গোষ্ঠীপতিরা নিরন্তর নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। সমসাময়িক গ্রন্থে এই অবস্থাটিকে ‘মাৎস্যন্যায়’ (অর্থাৎ বড়ো মাছ যেমন ছোটো মাছকে খেয়ে ফেলে, সেই রকম অবস্থা) বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এই সময়েই গোপাল প্রথম পাল রাজা হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন। খালিমপুর তাম্রলিপি থেকে অনুমিত হয়, বাংলা অঞ্চলের ‘প্রকৃতি’ (জনসাধারণ) তাকে রাজা নির্বাচিত করেছিল।[১০] প্রায় ৮০০ বছর পরে তারানাথও লিখেছেন যে, বাংলার জনসাধারণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাকে নির্বাচিত করেছিল। যদিও এই ঘটনাটি কিংবদন্তির আকারে প্রচলিত এবং ঐতিহাসিকভাবে নির্ভরযোগ্য তথ্য নয়। এই কিংবদন্তি অনুসারে, নৈরাজ্যের এক যুগের পর জনসাধারণ পরপর একাধিক রাজাকে নির্বাচিত করেছিলেন। কিন্তু তাদের সকলকেই নির্বাচনের পরের রাতেই এক নাগ রানি ভক্ষণ করেন। গোপাল সেই নাগ রানিকে হত্যা করতে সমর্থ হন এবং সিংহাসনে আসীন থাকতে সমর্থ হন।[১৬] ঐতিহাসিক প্রমাণ নির্দেশ করে যে, গোপাল প্রত্যক্ষভাবে জনসাধারণ কর্তৃক নির্বাচিত হননি। একদল সামন্ত গোষ্ঠীপতি তাকে নির্বাচিত করেন। এই ধরনের নির্বাচন বাংলা অঞ্চলের সমসাময়িক সমাজে খুবই সাধারণ ঘটনা ছিল।[১০][১৬]
গোপালের সিংহাসনারোহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা ছিল। কারণ একাধিক স্বাধীন গোষ্ঠীপতি কোনও প্রকার বিরোধ ছাড়াই তার রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।[৯]
খালিমপুর তাম্রপত্র |
খালিমপুর তাম্রলেখ, ১-৩৩ পঙ্ক্তি |
খালিমপুর তাম্রলেখ, ৩৪-৬২ পঙ্ক্তি |
ধর্মপাল ও দেবপালের রাজ্যবিস্তার
[সম্পাদনা]গোপালের সাম্রাজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটান তার পুত্র ধর্মপাল ও পৌত্র দেবপাল। প্রথম দিকে প্রতিহার শাসক বৎসরাজার হাতে ধর্মপাল পরাজিত হয়েছিলেন। পরে রাষ্ট্রকূট রাজা ধ্রুব ধর্মপাল ও বৎসরাজা দুজনকেই পরাজিত করেন। ধ্রুব দাক্ষিণাত্য অঞ্চলে ফিরে গেলে ধর্মপাল উত্তর ভারতে একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। তিনি কনৌজের ইন্দ্রায়ুধকে পরাজিত করেন এবং কনৌজের সিংহাসনকে নিজের নির্বাচিত চক্রায়ুধকে স্থাপন করেন। উত্তর ভারতের আরও কয়েকটি ছোটো রাজ্য ধর্মপালের আধিপত্য স্বীকার করে নেয়। কিছুকাল পরেই বৎসরাজার পুত্র দ্বিতীয় নাগভট ধর্মপালের রাজ্যবিস্তার পর্যবেক্ষণ করতে আসেন। তিনি কনৌজ জয় করেন এবং চক্রায়ুধকে বিতাড়িত করেন। এরপর দ্বিতীয় নাগভট মুঙ্গের পর্যন্ত অগ্রসর হন এবং একটি আকস্মিক যুদ্ধে ধর্মপালকে পরাজিত করেন। ধর্মপাল আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন এবং রাষ্ট্রকূট সম্রাট তৃতীয় গোবিন্দের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করেন। তৃতীয় গোবিন্দ উত্তর ভারত আক্রমণ করে দ্বিতীয় নাগভটকে পরাজিত করেন।[১৭][১৮] রাষ্ট্রকূট নথিপত্র থেকে জানা যায় যে, চক্রায়ুধ ও ধর্মপাল দুজনেই রাষ্ট্রকূট আধিপত্য স্বীকার করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তৃতীয় গোবিন্দ দাক্ষিণাত্যে ফিরে গেলে ধর্মপাল উত্তর ভারত নিজের নিয়ন্ত্রণে আনেন। তিনি ‘পরমেশ্বর পরমভট্টারক মহারাজাধিরাজ’ উপাধি গ্রহণ করেছিলেন।[৯]
ধর্মপালের পর তার পুত্র দেবপাল সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন। তাকে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী পাল শাসক মনে করা হয়।[৯] তিনি প্রাগজ্যোতিষ (অধুনা অসম) ও উৎকল (অধুনা ওড়িশা) আক্রমণ করেছিলেন। প্রাগজ্যোতিষের রাজা বিনাযুদ্ধেই তার কাছে আত্মসমর্পণ করেন এবং উৎকলের রাজা, রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে যান।[১৯] তার উত্তরসূরিদের দ্বারা উৎকীর্ণ লিপিগুলিতে দাবি করা হয়েছে যে, তিনি আরও কিছু অঞ্চল জয় করেছিলেন। তবে এগুলি অতিমাত্রায় অতিরঞ্জিত তথ্য (নিচে ভূগোল অংশটি দেখুন)।[১০][২০]
পতনের প্রথম পর্যায়
[সম্পাদনা]দেবপালের মৃত্যুর পর পাল সাম্রাজ্য ধীরে ধীরে ভেঙে পড়তে শুরু করে। দেবপালের ভ্রাতুষ্পুত্র বিগ্রহপাল অল্প কিছুকাল রাজত্ব করার পর সিংহাসন ত্যাগ করেন এবং সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। বিগ্রহপালের পুত্র তথা উত্তরসূরি নারায়ণপাল ছিলেন একজন দুর্বল শাসক। তার রাজত্বকালে রাষ্ট্রকূট রাজা অমোঘবর্ষ পালদের পরাজিত করেন। পালেদের পতনের সুযোগ নিয়ে অসমের রাজা হরজর সম্রাট উপাধি গ্রহণ করেন এবং শৈলোদ্ভব রাজবংশ ওড়িশা অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে।[৯]
নারায়ণপালের পুত্র রাজ্যপাল অন্তত ১২ বছর রাজত্ব করেছিলেন। তিনি কয়েকটি জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান ও সুদৃশ্য মন্দির নির্মাণ করান। তার পুত্র দ্বিতীয় গোপাল কয়েক বছর রাজত্ব করার পরই বাংলার উপর থেকে আধিপত্য হারান এবং তারপর শুধুমাত্র বিহার অঞ্চল শাসন করেন। পরবর্তী রাজা দ্বিতীয় বিগ্রহপালকে চান্দেল ও কলচুরি আক্রমণ সহ্য করতে হয়। তার রাজত্বকালে পাল সাম্রাজ্য গৌড়, রাঢ়, অঙ্গ ও বঙ্গ প্রভৃতি ছোটো ছোটো রাজ্য বিভাজিত হয়ে যায়। হরিকেলের (পূর্ব ও দক্ষিণ বাংলা) কান্তিদেব ‘মহারাধিরাজ’ উপাধি গ্রহণ করেন এবং এবং একটি পৃথক রাজ্য স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে চন্দ্র রাজবংশ এই রাজ্যটি শাসন করেছিল।[৯] কম্বোজ পাল রাজবংশ গৌড় রাজ্যটি (পশ্চিম ও উত্তর বাংলা) শাসন করত। এই রাজবংশের শাসকেরা নামের শেষে ‘-পাল’ উপসর্গটি ব্যবহার করতেন (যেমন রাজ্যপাল, নারায়ণপাল ও নয়পাল)। এই রাজবংশের উৎসটি অজ্ঞাত। তবে এই ব্যাপারে সর্বাধিক যুক্তিগ্রাহ্য মতটি হল, কোনও এক পাল আধিকারিক রাজধানী সহ পাল সাম্রাজ্যের একটি বৃহৎ অংশের ক্ষমতা হস্তগত করে এই রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[৯][১০]
প্রথম মহীপালের রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা
[সম্পাদনা]প্রথম মহীপাল ৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তার তিন বছরের মধ্যেই তিনি উত্তর ও পূর্ব বাংলা পুনরুদ্ধার করেছিলেন। এছাড়াও তিনি অধুনা বর্ধমান বিভাগের উত্তরাঞ্চলও পুনরুদ্ধার করেছিলেন। তার রাজত্বকালে ১০২১ থেকে ১০২৩ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে চোল সাম্রাজ্যের প্রথম রাজেন্দ্র চোল কয়েকবার বাংলা আক্রমণ করেছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল গঙ্গার জল সংগ্রহ। রাজ্যবিস্তার করতে গিয়ে তিনি একাধিক শাসককে পদানত করতে সক্ষম হন এবং প্রভূত সম্পদ লুণ্ঠন করেন। বাংলার ধর্মপাল, রণসুর ও গোবিন্দচন্দ্রকে প্রথম রাজেন্দ্র চোল পরাজিত করেন। এঁরা সম্ভবত পাল রাজবংশের প্রথম মহীপালের অধীনস্থ সামন্ত শাসক ছিলেন।[২১] প্রথম রাজেন্দ্র চোল প্রথম মহীপালকেও পরাজিত করেন এবং পাল রাজার থেকে “দুর্লভ শক্তির হস্তীবাহিনী, নারী ও সম্পত্তি” লাভ করেন।[২২] প্রথম মহীপাল উত্তর ও দক্ষিণ বিহারেও আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। সম্ভবত গজনির মামুদের ভারত আক্রমণের ফলে উত্তর ভারতের রাজশক্তিগুলির দুর্বল হয়ে পড়া তাকে এই রাজ্যবিস্তারে সহায়তা করেছিল। তিনি সম্ভবত বারাণসী ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলিও জয় করেছিলেন। কারণ, তার ভ্রাতা স্থিরপাল ও বসন্তপাল বারাণসীতে একাধিক ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণ ও সংস্কারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীকালে কলচুরি রাজা গাঙ্গেয়দেব অঙ্গের শাসককে পরাজিত করে বারাণসী অধিকার করেন। অঙ্গের এই শাসক সম্ভবত ছিলেন প্রথম মহীপাল।[৯]
পতনের দ্বিতীয় পর্যায়
[সম্পাদনা]প্রথম মহীপালের পুত্র নয়পাল এক দীর্ঘ যুদ্ধের পর কলচুরি রাজা কর্ণকে (গাঙ্গেয়দেবের পুত্র) পরাজিত করেন। পরবর্তীকালে তারা বৌদ্ধ পণ্ডিত অতীশের মধ্যস্থতায় একটি শান্তিচুক্তি সাক্ষর করেন। নয়পালের পুত্র তৃতীয় বিগ্রহপালের রাজত্বকালে কর্ণ পুনরায় বাংলা আক্রমণ করেন। কিন্তু সেবারও তিনি পরাজিত হন এবং সেবারও একটি শান্তিচুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। তৃতীয় বিগ্রহপাল কর্ণের কন্যা যৌবনশ্রীকে বিবাহ করেন। পরে চালুক্য রাজা ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্যের হাতে তৃতীয় বিগ্রহপাল পরাজিত হন। ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্যের বাংলা আক্রমণের সময় দক্ষিণ ভারত থেকে বাংলায় বহু সৈনিক এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন। এটিই সেন রাজবংশের দাক্ষিণাত্য উৎসের ব্যাখ্যা।[২৩] ওড়িশার সোমবংশী রাজা মহাশিবগুপ্ত যযাতিও তৃতীয় বিগ্রহপালের রাজ্য আক্রমণ করেছিলেন। এরপরে একাধিক আক্রমণের ফলে পাল সাম্রাজ্যের শক্তি অনেকটাই হ্রাস পায়। তার রাজত্বকালেই বর্মণরা পূর্ব বাংলা অধিকার করেন।[৯][১০]
তৃতীয় বিগ্রহপালের পুত্র দ্বিতীয় মহীপাল অল্প কিছুকালের জন্য পালেদের সামরিক গৌরব ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিতম্ গ্রন্থে তার রাজত্বকালের বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। দ্বিতীয় মহীপাল তার ভ্রাতা রামপাল ও দ্বিতীয় সুরপালকে কারারুদ্ধ করেছিলেন। তিনি সন্দেহ করেছিলেন, তারা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। এর কিছুকাল পরেই তিনি কৈবর্ত প্রজাসত্ত্বভোগী গোষ্ঠীপতিদের বিদ্রোহের সম্মুখীন হন। এই অভ্যুত্থান কৈবর্ত বিদ্রোহ নামে খ্যাত। দিব্য (বা দিব্বক) নামে এক সামন্ত রাজা তাকে হত্যা করেন এবং বরেন্দ্র অঞ্চলে সার্বভৌমত্ব লাভ করেন। এই অঞ্চল প্রায় অর্ধ শতাব্দী দিব্যকের উত্তরসূরি রুদক ও ভীমের নিয়ন্ত্রণে থাকে। দ্বিতীয় সুরপাল মগধে পালিয়ে যান এবং অল্প কিছুকাল রাজত্ব করার পর মারা যান। তারপর তার ভ্রাতা রামপাল সিংহাসনে বসে। তিনি দিব্যের পৌত্র ভীমের বিরুদ্ধে একটি প্রধান যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। তার মামা মথন (রাষ্ট্রকূট রাজবংশের) এবং দক্ষিণ বিহার ও দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলার একাধিক সামন্ত শাসক তাকে সাহায্য করেন। রামপাল শেষ পর্যন্ত ভীমকে পরাজিত করেন এবং তাকে ও তার পরিবারকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেন।[৯][১০]
কৈবর্ত বিদ্রোহ
[সম্পাদনা]কৈবর্ত বিদ্রোহকে বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশ এমনকি ভারতবর্ষের প্রথম সফল জনবিদ্রোহ। কৈবর্ত বলতে, বাংলার চাষী কৃষক বা মৎস্যজীবী সম্প্রদায়কে বোঝানো হয়। যদিও কৈবর্ত বিদ্রোহ শুধুই জনবিদ্রোহ ছিল না, বরং তাতে যুক্ত হয় তৎকালীন সামন্তদের একটি বড় অংশ। একে বরেন্দ্র বিদ্রোহ নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। এ সময় পাল বংশের রাজা ছিলেন দ্বিতীয় মহীপাল, ধারণা করা হয় তার রাজত্বকাল ১০৭৫-১০৮০ সালের মধ্যে। এই বিদ্রোহের নেতা ছিলেন দিব্য। তিনি প্রথমদিকে পালদের একজন রাজকর্মচারী কিংবা সামন্ত ছিলেন। তিনি কৈবর্তদের একত্রিত করে একটি শক্তিশালী বাহিনী। তৈরি করেন । মহীপাল তার রাজ্যের সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতেও ব্যর্থ হন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিদ্রোহের ডাক দেন দিব্য। কৈবর্তরা এতে সাড়া দেয় এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রাজ্যের বরেন্দ্র অংশ অধীনে আনতে সক্ষম হয়। দ্বিতীয় মহীপাল যুদ্ধে নিহত হন। এর মধ্যে দিব্যর নেতৃত্বে বরেন্দ্রকে রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করা হয় । রামপাল সিংহাসনে আরোহণের পর ভীমের রাষ্ট্রের পতন হয়। কৈবর্তরা যেন আর কখনো রুখে দাঁড়াতে না পারে সে জন্য তিনি ভীম ও তাঁর পরিবারকে কঠোর শাস্তি দেন। প্রাচীন বাংলাদেশের ইতিহাসে রামপাল একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন। বরেন্দ্রভূমির পুনরুদ্ধার, বাংলার সর্বত্র নিজ প্রাধান্য স্থাপন, কামরূপ ও উৎকল জয় এবং চালুক্য ও গাওড়বালদের আক্রমণ প্রতিরোধ তার জীবনের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব।[২৪]
রামপাল কর্তৃক রাজ্য পুনরুদ্ধার
[সম্পাদনা]বরেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ হস্তগত করার পর রামপাল পাল সাম্রাজ্যকে পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করেন। তবে তেমন সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হন না। তিনি নতুন রাজধানী রামাবতী থেকে রাজ্যশাসন করতেন। রামাবতীই পাল সাম্রাজ্যের পতন পর্যন্ত সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল। তিনি করভার হ্রাস করেছিলেন, কৃষিকার্যে উৎসাহ দান করতেন এবং একাধিক জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। তিনি কামরূপ ও রাঢ় অঞ্চলে নিজের আধিপত্য বিস্তার করেন এবং পূর্ব বাংলার বর্মণ রাজাকে তার আধিপত্য স্বীকার করতে বাধ্য করেন। অধুনা ওড়িশা ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ অর্জনের জন্য তিনি তিনি গঙ্গ রাজার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। রামপালের মৃত্যুর পূর্বে গঙ্গরা উক্ত অঞ্চল অধিকার করতে সমর্থ হয়নি। পাল ও চোল সাম্রাজ্যের সাধারণ শত্রু গণ ও চালুক্যদের বিরুদ্ধে সমর্থন জোগাড় করার জন্য রামপাল চোল রাজা কুলোত্তুঙ্গর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। তিনি সেনদের উপর নজর রেখেছিলেন। কিন্তু কর্ণাটকের নান্যুদেব নামক গোষ্ঠীপতির কাছে মিথিলা হারান। গহদবল শাসক গোবিন্দচন্দ্রের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে তিনি পাল সাম্রাজ্যকে উক্ত শাসকের আগ্রাসী সমরনীতির হাত থেকে রক্ষা করেন।[৯][১০]
সর্বশেষ পতন
[সম্পাদনা]রামপাল ছিলেন পাল রাজবংশের সর্বশেষ শক্তিশালী শাসক। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র কুমারপালের রাজত্বকালে কামরূপ রাজ্য-এ একটি বিদ্রোহ মাথাচাড়া দেয়। বৈদ্যদেব এই বিদ্রোহ দমন করেন। কিন্তু কুমারপালের মৃত্যুর পর বৈদ্যদেব কার্যত একটি পৃথক রাজ্য স্থাপন করেন।[৯] রামচরিতম্ অনুসারে, কুমারপালের পুত্র তৃতীয় গোপালকে তার কাকা মদনপাল খুন করেন। মদনপালের শাসনকালে পূর্ব বাংলার বর্মণরা স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং ওড়িশায় পূর্ব গঙ্গা রাজবংশ-এর সঙ্গে সংঘাত পুনরায় ঘনীভূত হয়। মদনপাল গহদবলদের কাছ থেকে মুঙ্গের অধিকার করেছিলেন। কিন্তু বিজয় সেন তাকে পরাজিত করে দক্ষিণ ও পূর্ব বাংলা নিজের নিয়ন্ত্রণে আনেন। ১১৬২ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ গোবিন্দপাল নামে এক রাজা অধুনা গয়া জেলার ভূখণ্ডে রাজত্ব করতেন। কিন্তু পাল সম্রাটদের সনেগ তার কোনও সম্পর্ক ছিল বলে সুদৃঢ় প্রমাণ পাওয়া যায় না। পাল সাম্রাজ্যের পতনের পর সেন রাজবংশ বাংলা শাসন করতে শুরু করে।[১০]
ভূগোল
[সম্পাদনা]পাল রাজবংশের সাম্রাজ্যসীমা তাদের সমগ্র রাজত্বকালে পরিবর্তনশীল ছিল। পালরা এক সময়ে উত্তর ভারতের একটি বৃহৎ অংশ জয় করলেও, গুর্জর-প্রতিহার, রাষ্ট্রকূট ও অন্যান্য কম শক্তিশালী রাজাদের সঙ্গে ক্রমাগত বিরোধিতার পরিপ্রেক্ষিতে তারা সেই সাম্রাজ্য ধরে রাখতে পারেননি। [২৫]
গোপালের প্রতিষ্ঠিত মূল রাজ্যটির সঠিক সীমারেখা কী ছিল, তার কোনও নথি পাওয়া যায় না। তবে সম্ভবত সমগ্র বাংলা অঞ্চল সেই রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।[৯] ধর্মপালের শাসনকালে পাল সাম্রাজ্যের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছিল। বাংলা ছাড়াও তিনি অধুনা বিহার ভূখণ্ড প্রত্যক্ষভাবে শাসন করতেন। একটা সময় কনৌজ রাজ্য (অধুনা উত্তরপ্রদেশ) পালদের করদ রাজ্য ছিল এবং সেই রাজ্য শাসন করতেন চক্রায়ুধ।[৯] কনৌজের সিংহাসনে নিজের নির্বাচিত রাজাকে স্থাপন করে ধর্মপাল একটি সাম্রাজ্য সভাও গঠন করেছিলেন। তার স্থাপিত খালিমপুর তাম্রলিপি থেকে জানা যায়, সেই সাম্রাজ্য সভায় ভোজ (সম্ভবত বিদর্ভ), মৎস্য (রাজস্থানের জয়পুর অঞ্চল), মদ্র (পূর্ব পাঞ্জাব), কুরু (দিল্লি অঞ্চল), যদু (সম্ভবত মথুরা, দ্বারকা বা পাঞ্জাবের সিংহপুর), যবন, অবন্তী, গান্ধার ও কিরার (কাংরা উপত্যকা) শাসকেরা উপস্থিত থাকতেন।[১০][২৬] এই রাজন্যবর্গ কনৌজের সিংহাসনে চক্রায়ুধের নির্বাচন সমর্থন করেহিলেন এবং “সম্মানপ্রদর্শনপূর্বক তাঁদের কম্পিত শিরোভূষণ সহ অবনত হয়েছিলেন।”[২৭] এই ঘটনা থেকে অনুমিত হয় যে, সার্বভৌম সম্রাট হিসেবে ধর্মপালের কর্তৃত্ব অধিকাংশ শাসকই মেনে নিয়েছিলেন। তবে মৌর্য বা গুপ্ত সাম্রাজ্যের মতো এই ব্যবস্থা সুদৃঢ় ছিল না। অন্যান্য শাসকেরা ধর্মপালের সামরিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু তারা নিজস্ব অঞ্চল শাসন করতেন।[১০] উত্তর ভারতে তার আধিপত্যের পরিপ্রেক্ষিত্বে গুজরাতের কবি সোদ্ধল ধর্মপালকে ‘উত্তরাপথস্বামী’ (‘উত্তর ভারতের অধিপতি’) বলেছিলেন।[২৮]
উৎকীর্ণ লিপিগুলিতে দেবপালের সামরিক অভিযান সম্পর্কে অনেক অতিশয়োক্তি লক্ষিত হয়। দেবপালের উত্তরসূরি নারায়ণপাল কর্তৃক উৎকীর্ণ বাদল স্তম্ভলিপি অনুসারে, নিজের ব্রাহ্মণ মন্ত্রী দর্ভপাণির সুপরামর্শ ও নীতির বলে দেবপাল উত্তর ভারতের ‘চক্রবর্তী’ বা সার্বভৌম নরপতি হয়েছিলেন। তার রাজ্যের সীমানা ছিল বিন্ধ্য থেকে হিমালয় পর্বতমালা পর্যন্ত। এই লিলি অনুসারে, তার সাম্রাজ্য দুই মহাসমুদ্র (খুব সম্ভবত আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর) পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছিল। এই লিপিতে এমনও দাবি করা হয়েছে যে, দেবপাল উৎকল (অধুনা ওড়িশা), হুন, কম্বোজ, দ্রাবিড়, কামরূপ (অধুনা অসম) ও গুর্জরদের পরাজিত করেছিলেন:[৯]
- দেবপালের গুর্জর প্রতিপক্ষ সম্ভবত ছিলেন মিহির ভোজ। পূর্ব ভারতে তার আগ্রাসন দেবপাল প্রতিহত করেছিলেন।
- হুন রাজার পরিচয় অনিশ্চিত।
- কম্বোজ রাজপুত্রের পরিচয়ও অনিশ্চিত। কম্বোজ নামক প্রাচীন দেশটি অধুনা আফগানিস্তান ভূখণ্ডে অবস্থিত ছিল। কিন্তু দেবপালের সাম্রাজ্য ততদূর পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছিল বলে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় না। এই লিপিতে কম্বোজ বলতে উত্তর ভারতে আগত কম্বোজ উপজাতিও বোঝাতে পারে (কম্বোজ পাল রাজবংশ দেখুন)।
- দ্রাবিড় রাজাকে সাধারণত রাষ্ট্রকূট রাজা অমোঘবর্ষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কোনও কোনও গবেষকের মতে, দ্রাবিড় রাজা হলেন পাণ্ড্য রাজা শ্রীমার শ্রীবল্লভ। কারণ ‘দ্রাবিড়’ শব্দটির মাধ্যমে কৃষ্ণা নদীর দক্ষিণাঞ্চল বোঝায়। এই তত্ত্ব অনুসারে, হয়ত চান্দেল রাজা বিজয় দেবপালকে দাক্ষিণাত্য অভিযানে সাহায্য করেছিলেন। তবে যদি দেবপাল দক্ষিণের কোনও অঞ্চল অধিকার করেও থাকেন, তবে তা ছিল সাময়িক।
দেবপালের বিজয়াভিযান সম্পর্কে যে দাবি করা হয় তার মধ্যে অতিশয়োক্তি আছে। তবে তা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকারও করা যায় না: দেবপাল যে উৎকল ও কামরূপ জয় করেছিলেন, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তাছাড়া রাষ্ট্রকূট ও গুর্জর-প্রতিহারদের প্রতিবেশী রাজ্যগুলি সেই সময় দুর্বল ছিল। তাও হয়ত তাকে সাম্রাজ্য বিস্তারে সাহায্য করেছিল।[২০] মনে করা হয়, দেবপাল পাঞ্জাবে সিন্ধু নদ পর্যন্ত সামরিক অভিযান চালিয়েছিলেন।[৯]
দেবপালের মৃত্যুর পর পাল সাম্রাজ্য দুর্বল হতে শুরু করে। তার উত্তরসূরি নারায়ণপাল অসম ও ওড়িশার নিয়ন্ত্রণ হারান। তিনি কিছু সময়ের জন্য মগধ ও উত্তর বাংলার নিয়ন্ত্রণও হারিয়েছিলেন। তৃতীয় গোপাল বাংলার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শুধুমাত্র বিহারের একটি অংশ শাসন করতেন। দ্বিতীয় বিগ্রহপালের রাজত্বকালে পাল সাম্রাজ্য ছোটো ছোটো রাজ্যে ভেঙে পড়ে। মহীপাল বাংলা ও বিহারের অংশ পুনরুদ্ধার করেছিলেন। তার উত্তরসূরিরা আবার বাংলার আধিপত্য হারান। সর্বশেষ শক্তিশালী পাল সম্রাট রামপাল বাংলা, বিহার, অসম ও ওড়িশার কিছু অংশ নিজের নিয়ন্ত্রণে আনেন।[৯] মদনপালের মৃত্যুর সময় পাল সাম্রাজ্যের সীমা ছিল মধ্য ও পূর্ব বিহার এবং উত্তর বাংলার মধ্যে সীমিত।[৯]
প্রশাসন
[সম্পাদনা]পাল প্রশাসন ছিল রাজতান্ত্রিক। রাজাই ছিলেন সকল ক্ষমতার কেন্দ্র। পাল রাজারা ‘পরমেশ্বর’, ‘পরমভট্টারক’, ‘মহারাজাধিরাজ’ ইত্যাদি সম্রাটসুলভ উপাধি গ্রহণ করতেন। বাদল স্তম্ভলিপি অনুযায়ী পাল রাজারা ব্রাহ্মণদের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করতেন। পাল সাম্রাজ্যে ‘গর্গের পরম্পরা’ ১০০ বছর প্রধানমন্ত্রিত্ব করেছেন:
- গর্গ
- দর্ভপাণি
- সোমেশ্বর
- কেদারমিশ্র
- ভট্ট গৌরবমিশ্র
পাল সাম্রাজ্য পৃথক পৃথক ‘ভুক্তি’তে (প্রদেশ) বিভক্ত ছিল। ভুক্তিগুলি ‘বিষয়’ (বিভাগ) ও ‘মণ্ডলে’ (জেলা) বিভক্ত ছিল। ছোটো ছোটো প্রশাসনিক ক্ষেত্রগুলিতে ছিল ‘খণ্ডল’, ‘ভাগ’, ‘আবৃত্তি’, ‘চতুরক’ ও ‘পট্টক’। তৃণমূল স্তর থেকে সাম্রাজ্য সভা পর্যন্ত প্রশাসনের পরিধি বিস্তৃত ছিল।[২৯]
পাল তাম্রলিপিতে নিম্নোক্ত প্রশাসনিক পদগুলির কথা উল্লিখিত হয়েছে:[৩০]
- রাজা
- রাজন্যক
- রণক (সম্ভবত অধীনস্থ গোষ্ঠীপতি)
- সামন্ত ও মহাসামন্ত (সামন্ত রাজা)
- মহাসন্ধি-বিগ্রহিক (পররাষ্ট্র মন্ত্রী)
- দূত (প্রধান রাষ্ট্রদূত)
- রাজস্থানীয় (উপপ্রধান)
- অগ্গরক্সা (প্রধান রক্ষী)
- ষষ্ঠাধিকর্তৃ (কর সংগ্রাহক)
- চৌরোদ্ধারণিক (আরক্ষা কর)
- শৌলকক (বাণিজ্য কর)
- দশপারাধিক (জরিমানা আদায়কারী)
- তরিক (নদী পারাপারের উপর আরোপিত করের সংগ্রাহক)
- মহাক্ষপতালিক (কোষাদ্ধক্ষ)
- জ্যেষ্ঠকায়স্থ (নথি প্রবন্ধক)
- ক্ষেত্রপ (ভূমি ব্যবহার বিভাগের প্রধান) ও প্রমাতৃ (ভূমি জরিপ বিভাগের প্রধান)
- মহাদণ্ডনায়ক বা ধর্মাধিকার (প্রধান বিচারপতি)
- মহাপ্রতিহার
- দণ্ডিক
- দণ্ডপাশিক
- দণ্ডশক্তি (পুলিশ বাহিনী)
- 'খোল (গোপন বাহিনী)
- গবাধক্ষ (গো-খামারের প্রধান)
- ছাগাধ্যক্ষ (ছাগ-খামারের প্রধান)
- মেষাধ্যক্ষ (মেষ-খামারের প্রধান)
- মহিষাধ্যক্ষ (মহিষ-খামারের প্রধান)
- বোগপতি
- বিষয়পতি
- ষষ্ঠাধিকৃত
- দৌঃশশধানিক
- নকাধ্যক্ষ
সংস্কৃতি
[সম্পাদনা]ধর্ম
[সম্পাদনা]বৌদ্ধধর্ম
[সম্পাদনা]পাল সম্রাটরা ছিলেন মহাযান বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষক। গোপালের মৃত্যুর পর রচিত কয়েকটি নথিতে তাকে বৌদ্ধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তা সত্য কিনা জানা যায় না।[৩১] পরবর্তী পাল রাজারা নিশ্চিতভাবেই বৌদ্ধ ছিলেন। তারানাথ লিখেছেন যে, গোপাল গোঁড়া বৌদ্ধ ছিলেন এবং তিনি ওদন্তপুরীর বিখ্যাত মঠটি নির্মাণ করেন।[৩২] ধর্মপাল বৌদ্ধ দার্শনিক হরিভদ্রকে তার গুরুত্বে বরণ করেন। তিনি বিক্রমশিলা মঠ ও সোমপুর মহাবিহার প্রতিষ্ঠা করেন। তারানাথ আরও বলেছেন যে, তিনি ৫০টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন এবং বৌদ্ধ লেখক হরিভদ্রের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। দেবপাল সোমপুর মহাবিহারের সংস্কার করেন এবং তার আয়তন বৃদ্ধি করেন। এই মহাবিহার হিন্দু রামায়ণ ও মহাভারত মহাকাব্যের দৃশ্যাবলি দ্বারাও সজ্জিত ছিল। প্রথম মহীপাল সারনাথ, নালন্দা ও বোধগয়ায় একাধিক মঠ ও মন্দির সংস্থার ও নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন।[৯] তাকে নিয়ে লেখা মহীপাল গীত নামে এক জাতীয় লোকসংগীত এখনও বাংলার গ্রামীণ অঞ্চলে জনপ্রিয়।
পাল সম্রাটরা বিক্রমশিলা ও নালন্দার মতো বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্রের বিকাশে সাহায্য করেন। নালন্দাকে নথিবদ্ধ ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অন্যতম মনে করা হয়। পাল সম্রাটদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই মহাবিহারের সর্বাধিক সমৃদ্ধি ঘটেছিল। পাল যুগের বিশিষ্ট বৌদ্ধ পণ্ডিতরা ছিলেন অতীশ, সন্তরক্ষিত, সরহ, তিলোপা, বিমলমিত্র, দানশীল, দানশ্রী, জিনমিত্র, জ্ঞানশ্রীমিত্র, মঞ্জুঘোষ, মুক্তিমিত্র, পদ্মনাভ, সম্ভোগবজ্র, শান্তরক্ষিত, শীলভদ্র, সুগতশ্রী ও বিরচন।
গৌতম বুদ্ধের দেশের শাসক হিসেবে পাল সম্রাটরা বৌদ্ধ বিশ্বে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। যবদ্বীপের শৈলেন্দ্র রাজা বালপুত্রদেব দেবপালের কাছে এক দূত পাঠিয়ে নালন্দায় একটি মঠ নির্মাণের জন্য পাঁচটি গ্রাম অনুদান চান।[৩৩] দেবপাল তার অনুরোধ রক্ষা করেছিলেন। তিনি নগরহরের (অধুনা জালালাবাদ) ব্রাহ্মণ বীরদেবকে নামন্দা মঠের প্রধান নিযুক্ত করেন। বৌদ্ধ কবি বজ্রদত্ত (লোকেশ্বরশতক গ্রন্থের রচয়িতা) তার সভাকবি ছিলেন।[৯] পাল রাজত্বকালে বৌদ্ধ পণ্ডিতরা বাংলা থেকে অন্যান্য অঞ্চলে গিয়ে বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেন। অতীশ তিব্বত ও সুমাত্রায় ধর্মপ্রচার করেন। তিনি ছিলেন ১১শ শতাব্দীতে মহাযান বৌদ্ধধর্ম প্রচারের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব।
শৈবধর্ম
[সম্পাদনা]পাল সম্রাটরা শৈব সন্ন্যাসীদেরও (বিশেষত গোলাগি মঠের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন যাঁরা) সমর্থন করতেন।[৩৪] নারায়ণপাল নিজে একটি শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি তার ব্রাহ্মণ মন্ত্রী কর্তৃক আয়োজিত যজ্ঞেও উপস্থিত ছিলেন।[৩৫] বৌদ্ধ দেবদেবীদের পাশাপাশি পাল যুগে হিন্দু দেবতা বিষ্ণু, শিব ও সরস্বতীর মূর্তিও নির্মিত হয়েছিল।[৩৬]
সাহিত্য
[সম্পাদনা]পাল সম্রাটরা সংস্কৃত পণ্ডিতদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। তাদের কয়েকজন পাল আধিকারিকও ছিলেন। পাল শাসনকালেই ‘গৌড় রীতি’ নামক রচনাশৈলী বিকাশলাভ করে। অনেক বৌদ্ধ তান্ত্রিক গ্রন্থ পাল যুগে রচিত ও অনূদিত হয়। উপরে ধর্ম অংশে উল্লিখিত বৌদ্ধ পণ্ডিতেরা ছাড়াও পাল যুগের বিশিষ্ট কয়েকজন পণ্ডিত ছিলেন জীমূতবাহন, সন্ধ্যাকর নন্দী, মাধব-কর, সুরেশ্বর ও চক্রপাণি দত্ত।[৯]
পালযুগে রচিত উল্লেখযোগ্য দর্শন গ্রন্থগুলি হল গৌড়পাদের আগম শাস্ত্র, শ্রীধর ভট্টের ন্যায় কুণ্ডলী ও ভট্ট ভবদেবের কর্মানুশীলন পদ্ধতি। চিকিৎসাবিদ্যা সংক্রান্ত গ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে চক্রপাণি দত্তের চিকিৎসা সংগ্রহ, আয়ুর্বেদ দীপিকা, ভানুমতী, শব্দ চন্দ্রিকা ও দ্রব্য গুণসংগ্রহ, সুরেশ্বরের শব্দ-প্রদীপ, বৃক্ষায়ুর্বেদ ও লোহপদ্ধতি, বঙ্গসেনের চিকিৎসা সারসংগ্রহ, গদাধর বৈদ্যের সুশ্রত, জীমূতবাহনের দায়ভাগ, ব্যবোহার মাত্রিকা ও কালবিবেক। সন্ধ্যাকর নন্দীর আধা-কথাসাহিত্যমূলক মহাকাব্য রামচরিতম্ (১২শ শতাব্দী) পাল ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসূত্র।
পাল যুগে রচিত চর্যাপদ নামক গানগুলিতে প্রোটো-বাংলা ভাষার একটি রূপ লক্ষিত হয়।[৯]
শিল্প ও স্থাপত্য
[সম্পাদনা]পাল ভাস্কর্যশৈলীটি ভারতীয় শিল্পকলার একটি স্বতন্ত্র পর্যায়। এই ভাস্কর্যশৈলীটি বাংলার ভাস্করদের শৈল্পিক দক্ষতার একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন।[৩৭] এই ভাস্কর্যশৈলীটি গুপ্ত শিল্পকলার দ্বারা প্রভাবিত।[৩৮]
-
কারুকার্য-খচিত শঙ্খ
-
নালন্দা থেকে প্রাপ্ত খসর্পণ লোকেশ্বরের ভাস্কর্য
পূর্বেই বলা হয়েছে যে, পাল সম্রাটরা বহু মঠ ও অন্যান্য ধর্মস্থান নির্মাণ করেছিলেন। অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রে অবস্থিত সোমপুর মহাবিহার এখন একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। ২১ একর (৮৫,০০০ বর্গমিটার) আয়তন-বিশিষ্ট চত্বরে অবস্থিত এই মহাবিহারে ১৭৭টি কক্ষ, বহু স্তুপ, মন্দির ও অন্যান্য ভবন রয়েছে। বিক্রমশিলা, ওদন্তপুরী ও জগদ্দল প্রভৃতি অন্যান্য বৃহদায়তন মহাবিহার পাল স্থাপত্যের উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। এই সুবৃহৎ মহাবিহারগুলিকে তুর্কি আক্রমণকারী বখতিয়ার খিলজি দুর্গপ্রাসাদ মনে করে ধ্বংস করে দেন। পাল ও সেন রাজত্বকালে বিহার ও বাংলার শিল্পকলা নেপাল, ব্রহ্মদেশ, শ্রীলঙ্কা ও যবদ্বীপের শিল্পকলাকে প্রভাবিত করেছিল।[৩৯]
-
সোমপুরের কেন্দ্রীয় বেদীর সজ্জা
-
বিক্রমশিলার ধ্বংসাবশেষ
-
২০১৬ সালের সোমপুর মহাবিহার
পাল শাসকদের তালিকা
[সম্পাদনা]অধিকাংশ পাল উৎকীর্ণ লিপির প্রতিষ্ঠাকাল হিসেবে রাজবর্ষের উল্লেখ রয়েছে, কোনও সর্বজন-পরিচিত পঞ্জিকা যুগের উল্লেখ নেই। এই কারণে পাল রাজাদের রাজাবলির কালরেখা নির্ণয় করা কঠিন।[৪০] বিভিন্ন লিপি ও ঐতিহাসিক নথির ব্যাখ্যার ভিত্তিতে ইতিহাসবিদগণ নিম্নোক্ত পাল রাজাবলিটি নির্ণয় করেছেন:[৪১]
রমেশচন্দ্র মজুমদার (১৯৭১)[৪২] | আব্দুল মোমিন চৌধুরী (১৯৬৭)[৪৩] | বিন্ধ্যেশ্বরীপ্রসাদ সিনহা (১৯৭৭)[৪৪] | দীনেশচন্দ্র সরকার (১৯৭৫-৭৬)[৪৫] | দিলীপকুমার গঙ্গোপাধ্যায় (১৯৯৪)[৪০] | |
---|---|---|---|---|---|
প্রথম গোপাল | ৭৫০–৭৭০ | ৭৫৬–৭৮১ | ৭৫৫–৭৮৩ | ৭৫০–৭৭৫ | ৭৫০-৭৭৪ |
ধর্মপাল | ৭৭০–৮১০ | ৭৮১–৮২১ | ৭৮৩–৮২০ | ৭৭৫–৮১২ | ৭৭৪-৮০৬ |
দেবপাল | ৮১০–আনুমানিক ৮৫০ | ৮২১–৮৬১ | ৮২০–৮৬০ | ৮১২–৮৫০ | ৮০৬-৮৪৫ |
মহেন্দ্রপাল | অনুল্লিখিত (মহেন্দ্রপালের অস্তিত্ব পরবর্তীকালে আবিষ্কৃত একটি তাম্রলিপির মাধ্যমে প্রমাণিত হয়।) | ৮৪৫-৮৬০ | |||
প্রথম শূরপাল | প্রথম বিগ্রহপালের বিকল্প নাম বলে বিবেচিত | ৮৫০–৮৫৮ | ৮৬০-৮৭২ | ||
দ্বিতীয় গোপাল | (তামার প্লেট ১৯৯৫ সালে আবিষ্কৃত হয়। শিলালিপির পাঠ্য ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয়।) | ||||
প্রথম বিগ্রহপাল | ৮৫০–৮৫৩ | ৮৬১–৮৬৬ | ৮৬০–৮৬৫ | ৮৫৮–৬০ | ৮৭২–৮৭৩ |
নারায়ণপাল | ৮৫৪–৯০৮ | ৮৬৬–৯২০ | ৮৬৫–৯২০ | ৮৬০–৯১৭ | ৮৭৩-৯২৭ |
রাজ্যপাল | ৯০৮–৯৪০ | ৯২০–৯৫২ | ৯২০–৯৫২ | ৯১৭–৯৫২ | ৯২৭-৯৫৯ |
তৃতীয় গোপাল | ৯৪০–৯৫৭ | ৯৫২–৯৬৯ | ৯৫২–৯৬৭ | ৯৫২–৯৭২ | ৯৫৯-৯৭৬ |
দ্বিতীয় বিগ্রহপাল | ৯৬০–আনুমানিক ৯৮৬ | ৯৬৯–৯৯৫ | ৯৬৭–৯৮০ | ৯৭২–৯৭৭ | ৯৭৬-৯৭৭ |
প্রথম মহীপাল | ৯৮৮–আনুমানিক ১০৩৬ | ৯৯৫–১০৪৩ | ৯৮০–১০৩৫ | ৯৭৭–১০২৭ | ৯৭৭–১০২৭ |
নয়পাল | ১০৩৮–১০৫৩ | ১০৪৩–১০৫৮ | ১০৩৫–১০৫০ | ১০২৭–১০৪৩ | ১০২৭–১০৪৩ |
তৃতীয় বিগ্রহপাল | ১০৫৪–১০৭২ | ১০৫৮–১০৭৫ | ১০৫০–১০৭৬ | ১০৪৩–১০৭০ | ১০৪৩–১০৭০ |
দ্বিতীয় মহীপাল | ১০৭২–১০৭৫ | ১০৭৫–১০৮০ | ১০৭৬–১০৭৮/৯ | ১০৭০-১০৭১ | ১০৭০-১০৭১ |
দ্বিতীয় শূরপাল | ১০৭৫–১০৭৭ | ১০৮০–১০৮২ | ১০৭১–১০৭২ | ১০৭১–১০৭২ | |
রামপাল | ১০৭৭–১১৩০ | ১০৮২–১১২৪ | ১০৭৮/৯–১১৩২ | ১০৭২–১১২৬ | ১০৭২–১১২৬ |
কুমারপাল | ১১৩০–১১৩৫ | ১১২৪–১১২৮ | ১১৩২–১১৩৬ | ১১২৬–১১২৮ | ১১২৬–১১২৮ |
চতুর্থ গোপাল | ১১৪০–১১৪৪ | ১১২৯–১১৪৩ | ১১৩৬–১১৪৪ | ১১২৮–১১৪৩ | ১১২৮–১১৪৩ |
মদনপাল | ১১৪৪–১১৬২ | ১১৪৩–১১৬২ | ১১৪৪–১১৬১/৬২ | ১১৪৩–১১৬১ | ১১৪৩–১১৬১ |
গোবিন্দপাল | ১১৫৫–১১৫৯ | অনুল্লিখিত | ১১৬২-১১৭৬ বা ১১৫৮-১১৬২ | ১১৬১–১১৬৫ | ১১৬১–১১৬৫ |
পালপাল | অনুল্লিখিত | অনুল্লিখিত | অনুল্লিখিত | ১১৬৫–১১৯৯ | ১১৬৫–১২০০ |
টীকা:[৪১]
- প্রথম যুগের ইতিহাসবিদগণ মনে করতেন যে, প্রথম বিগ্রহপাল ও প্রথম শূরপাল একই ব্যক্তির দুই নাম। বর্তমানে জানা গিয়েছে যে, তাঁরা দুইজন জ্ঞাতিভ্রাতা ছিলেন। তাঁরা একই সময়ে (হয়ত ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে) বা একজনের পর অপর জন শাসনকার্য চালান।
- আব্দুল মোমিন চৌধুরী গোবিন্দপাল ও তাঁর উত্তরসূরি পালপালকে পাল সম্রাটবংশের সদস্য হিসেবে স্বীকার করেননি।
- বিন্ধ্যেশ্বরীপ্রসাদ সিনহার মতে, গয়া উৎকীর্ণ লিপিটিকে “গোবিন্দপালের রাজত্বকালের ১৪শ বৎসর” বা “গোবিন্দপালের রাজত্বকালের ১৪ বছর পর” – এই দুই ভাবে পড়া যায়। তাই এক্ষেত্রে দুটি তারিখ প্রযোজ্য হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
সামরিক বাহিনী
[সম্পাদনা]পাল সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ সামরিক আধিকারিক ছিলেন ‘মহাসেনাপতি’। পাল সম্রাটেরা মালব, খাস, হুন, কুলিক, কর্ণাট, লতা, ওড্র ও মনহলি প্রভৃতি অঞ্চল থেকে ভাড়াটে সৈন্য আমদানি করতেন। সমসাময়িক রচনা থেকে জানা যায়, রাষ্ট্রকূটদের পদাতিক বাহিনী ছিল শ্রেষ্ঠ, গুর্জর-প্রতিহারদের অশ্বারোহী বাহিনী ছিল শ্রেষ্ঠ এবং পাল সাম্রাজ্যের হস্তীবাহিনী ছিল বৃহত্তম। আরব বণিক সুলেইমান বলেছেন যে, পাল সেনাবাহিনী বলহার (সম্ভবত রাষ্ট্রকূট) ও জুর্জের (সম্ভবত গুর্জর-প্রতিহার) রাজার সেনাবাহিনীর চেয়ে বড়ো ছিল। তিনি আরও বলেছেন যে, পাল সেনাবাহিনীতে ১০,০০০-১৫,০০০ লোককে জ্বালানি ভরা ও কাপড় কাচার কাজে নিয়োগ করা হত। তিনি আরও দাবি করেছেন যে, যুদ্ধের সময় পাল রাজা ৫০,০০০ যুদ্ধহস্তীর নেতৃত্ব দিতেন। সুলেইমানের বিবরণটি অতিরঞ্জিত বর্ণনার ভিত্তিতে রচিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। ইবন খালদুন উল্লেখ করেছেন হাতির সংখ্যা ছিল ৫,০০০।[৪৬]
বাংলায় স্থানীয় ঘোড়ার ভাল প্রজাতি পাওয়া যায় না বলে, অশ্বারোহী বাহিনীর ঘোড়া পালেরা কম্বোজ প্রভৃতি বিদেশি রাষ্ট্র থেকে আমদানি করত।[৪৭]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]উপাদান
[সম্পাদনা]পাল সাম্রাজ্য সম্পর্কে তথ্যের প্রধান সূত্রগুলি হল:[৪৮]
- পাল বিবরণী
- বিভিন্ন উৎকীর্ণ লিপি, মুদ্রা, ভাস্কর্য ও স্থাপত্য
- রামচরিত, অভিনন্দ রচিত একটি সংস্কৃত গ্রন্থ (৯ম শতাব্দী)
- রামচরিতম্, সন্ধ্যাকর নন্দী রচিত একটি সংস্কৃত মহাকাব্য (১২শ শতাব্দী)
- সুভাষিত রত্নকোষ, বিদ্যাকর কর্তৃক সম্পাদিত একটি সংস্কৃত রচনা-সংকলন (পাল যুগের শেষভাগে রচিত)
- অন্যান্য বিবরণ
- সিলসিলতুত-তৌয়ারিখ আরব বণিক সুলেইমান কর্তৃক রচিত (৯৫১ খ্রিষ্টাব্দ)। সুলেইমান পাল রাজ্যকে ‘রুহ্মি’ বা ‘রাহ্মা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
- দ্পাল দুস খ্যি ‘খোর লো’ই চোস ব্স্কোর গ্যি ব্যুং খুংস ন্যের ম্খ্ (ভারতে বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস) তারানাথ কর্তৃক রচিত (১৬০৮)। এই গ্রন্থে পাল যুগ সম্পর্কে প্রচলিত কয়েকটি প্রথাগত কিংবদন্তি ও জনশ্রুতির উল্লেখ করা হয়েছে।
- আইন-ই-আকবরি আবুল ফজল কর্তৃক রচিত (১৬শ শতাব্দী)
কথাসাহিত্যে পাল রাজবংশ
[সম্পাদনা]- ধর্মপাল, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় (উপন্যাস, ১৯১৫)
- তুমি সন্ধ্যার মেঘ, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় (উপন্যাস, ১৯৫৮)
- দেবপাল, কামাল রহমান (উপন্যাস, ২০১৬)
- পটমঞ্জরী, অভীক সরকার (উপন্যাস, ২০২২)
- গৌড়চন্দ্রিকা, রজত পাল (উপন্যাস, ২০২৩)
- পালপ্রদীপিকা, রজত পাল (উপন্যাস, ২০২৪)
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ R. C. Majumdar (১৯৭৭)। Ancient India। Motilal Banarsidass Publ.। পৃষ্ঠা 268–। আইএসবিএন 978-81-208-0436-4।
- ↑ ক খ Sengupta 2011, পৃ. ৩৯–৪৯।
- ↑ Schwartzberg, Joseph E. (১৯৭৮)। A Historical atlas of South Asia। Chicago: University of Chicago Press। পৃষ্ঠা 146, map XIV.2 (g)। আইএসবিএন 0226742210।
- ↑ Michael C. Howard (২০১২)। Transnationalism in Ancient and Medieval Societies: The Role of Cross-Border Trade and Travel। McFarland। পৃষ্ঠা 72। আইএসবিএন 978-0-7864-9033-2।
- ↑ Huntington ও 1984 56।
- ↑ "পাল বংশ ও বাংলায় পাল বংশের ইতিহাস | পাল সাম্রাজ্য"। Studious (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০১-২৬। ২০২২-০৪-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-১৩।
- ↑ Raj Kumar (২০০৩)। Essays on Ancient India। Discovery Publishing House। পৃষ্ঠা 199। আইএসবিএন 978-81-7141-682-0।
- ↑ Sailendra Nath Sen (১৯৯৯)। Ancient Indian History and Civilization। New Age International। পৃষ্ঠা 280–। আইএসবিএন 978-81-224-1198-0।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত থ দ ধ ন প ফ Sailendra Nath Sen (১৯৯৯)। Ancient Indian History and Civilization। New Age International। পৃষ্ঠা 277–287। আইএসবিএন 978-81-224-1198-0।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ Sengupta 2011, পৃ. 39-49।
- ↑ Ray, Niharranjan (১৯৯৪)। History of the Bengali People: Ancient Period (ইংরেজি ভাষায়)। Orient Longman। পৃষ্ঠা 336। আইএসবিএন 978-0-86311-378-9।
- ↑ Bhandarkar, Devadatta Ramkrishna (১৯৩৯)। Indian Culture Vol. 6। পৃষ্ঠা 113–14।
- ↑ Kotiyal, H. S. (১৯৭৩)। "Sudra Rulers and Officials in Early Medieval Times"। Proceedings of the Indian History Congress। 34: 80–87। আইএসএসএন 2249-1937।
- ↑ André Wink (১৯৯০)। Al-Hind, the Making of the Indo-Islamic World। BRILL। পৃষ্ঠা 265। আইএসবিএন 90-04-09249-8।
- ↑ Haldar, Narotam (১৯৮৮)। Gangaridi - Alochana O Parjalochana। পৃষ্ঠা ৫৪।
- ↑ ক খ Biplab Dasgupta (২০০৫)। European Trade and Colonial Conquest। Anthem Press। পৃষ্ঠা 341–। আইএসবিএন 978-1-84331-029-7।
- ↑ John Andrew Allan; Sir T. Wolseley Haig (১৯৩৪)। The Cambridge Shorter History of India। Macmillan Company। পৃষ্ঠা 143।
- ↑ Bindeshwari Prasad Sinha (১৯৭৭)। Dynastic History of Magadha। Abhinav Publications। পৃষ্ঠা 179। আইএসবিএন 978-81-7017-059-4।
- ↑ Bhagalpur Charter of Narayanapala, year 17, verse 6, The Indian Antiquary, XV p 304.
- ↑ ক খ Bindeshwari Prasad Sinha (১৯৭৭)। Dynastic History of Magadha। Abhinav Publications। পৃষ্ঠা 185। আইএসবিএন 978-81-7017-059-4।
- ↑ Sengupta 2011, পৃ. 45।
- ↑ John Keay (২০০০)। India: A History। Grove Press। পৃষ্ঠা 220। আইএসবিএন 978-0-8021-3797-5।
- ↑ John Andrew Allan; Sir T. Wolseley Haig (১৯৩৪)। The Cambridge Shorter History of India। Macmillan Company। পৃষ্ঠা 10।
- ↑ "পাল বংশ ও বাংলায় পাল বংশের ইতিহাস | পাল সাম্রাজ্য"। Studious (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০১-২৬। ২০২২-০৪-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-২১।
- ↑ Bagchi 1993, পৃ. 4।
- ↑ Bindeshwari Prasad Sinha (১৯৭৭)। Dynastic History of Magadha। Abhinav Publications। পৃষ্ঠা 177–। আইএসবিএন 978-81-7017-059-4।
- ↑ Paul 1939, পৃ. 38।
- ↑ Bagchi 1993, পৃ. 39–40।
- ↑ Paul 1939, পৃ. 122–124।
- ↑ Paul 1939, পৃ. 111–122।
- ↑ Huntington ও 1984 39।
- ↑ Taranatha (১৮৬৯)। Târanâtha's Geschichte des Buddhismus in Indien [History of Buddhism in India] (জার্মান ভাষায়)। Anton Schiefner কর্তৃক অনূদিত। St. Petersburg: Imperial Academy of Sciences। পৃষ্ঠা 206।
Zur Zeit des Königs Gopâla oder Devapâla wurde auch das Otautapuri-Vihâra errichtet.
- ↑ P. N. Chopra; B. N. Puri; M. N. Das; A. C. Pradhan, সম্পাদকগণ (২০০৩)। A Comprehensive History of Ancient India (3 Vol. Set)। Sterling। পৃষ্ঠা 200–202। আইএসবিএন 978-81-207-2503-4।
- ↑ Bagchi 1993, পৃ. 19।
- ↑ Bagchi 1993, পৃ. 100।
- ↑ Krishna Chaitanya (১৯৮৭)। Arts of India। Abhinav Publications। পৃষ্ঠা 38। আইএসবিএন 978-81-7017-209-3।
- ↑ আবদুল মমিন চৌধুরী (২০১২)। "পাল বংশ"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ Rustam Jehangir Mehta (১৯৮১)। Masterpieces of Indian bronzes and metal sculpture। Taraporevala। পৃষ্ঠা 21।
- ↑ Stella Kramrisch (১৯৯৪)। Exploring India's Sacred Art Selected Writings of Stella Kramrisch। Motilal Banarsidass Publishe। পৃষ্ঠা 208। আইএসবিএন 978-81-208-1208-6।
- ↑ ক খ দিলীপ কুমার গাঙ্গুলি (১৯৯৪)। Ancient India, History and Archaeology (ইংরেজি ভাষায়)। অভিনব। পৃষ্ঠা ৩৩–৪১। আইএসবিএন 978-81-7017-304-5।
- ↑ ক খ সুসান এল. হান্টিংটন (১৯৮৪)। The "Påala-Sena" Schools of Sculpture (ইংরেজি ভাষায়)। ব্রিল আর্কাইভ। পৃষ্ঠা ৩২–৩৯। আইএসবিএন 90-04-06856-2।
- ↑ আর. সি. মজুমদার (১৯৭১)। History of Ancient Bengal [প্রাচীন বাংলার ইতিহাস] (ইংরেজি ভাষায়)। জি. ভরদ্বাজ। পৃষ্ঠা ১৬১–১৬২।
- ↑ আব্দুল মমিন চৌধুরী (১৯৬৭)। Dynastic history of Bengal, c. 750-1200 CE [বাংলার রাজবংশীয় ইতিহাস, আনু. ৭৫০-১২০০ সিই] (ইংরেজি ভাষায়)। পাকিস্তান এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ২৭২–২৭৩।
- ↑ বিন্দেশ্বরী প্রসাদ সিনহা (১৯৭৭)। Dynastic History of Magadha, Cir. 450–1200 A.D. (ইংরেজি ভাষায়)। অভিনব পাবলিকেশন্স। পৃষ্ঠা ২৫৩–। আইএসবিএন 978-81-7017-059-4।
- ↑ দীনেশচন্দ্র সরকার (১৯৭৫–৭৬)। "Indological Notes - R.C. Majumdar's Chronology of the Pala Kings"। জার্নাল অফ ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি (ইংরেজি ভাষায়)। নবম: ২০৯-১০।
- ↑ Paul 1939, পৃ. 139–143।
- ↑ Paul 1939, পৃ. 143–144।
- ↑ Bagchi 1993, পৃ. 2-3।
গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- Bagchi, Jhunu (১৯৯৩)। The History and Culture of the Pālas of Bengal and Bihar, Cir. 750 A.D.-cir. 1200 A.D.। Abhinav Publications। আইএসবিএন 978-81-7017-301-4।
- Huntington, Susan L. (১৯৮৪)। The "Påala-Sena" Schools of Sculpture। Brill Archive। আইএসবিএন 90-04-06856-2।
- Paul, Pramode Lal (১৯৩৯)। The Early History of Bengal। Indian History। 1। Indian Research Institute। ২০১৬-০৮-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-২৮।
- Sengupta, Nitish K. (২০১১)। Land of Two Rivers: A History of Bengal from the Mahabharata to Mujib। Penguin Books India। পৃষ্ঠা 39–49। আইএসবিএন 978-0-14-341678-4।