বিষয়বস্তুতে চলুন

হরিকেল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাংলার প্রাচীন রাজনৈতিক বিভাগ

হরিকেল বা হরকুল হলো ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্বদিকে বঙ্গ অঞ্চলের একটি প্রাচীন জনপদ। মূলত এটি ছিল প্রাচীন পূর্ববঙ্গের একটি জনপদ।[] অনুমান করা হয় এর স্থায়িত্বকাল নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রায় পাঁচশো বছর ছিল।[] বর্তমান বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলচট্টগ্রাম বিভাগ এর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবানখাগড়াছড়ি, ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য জুড়ে এই জনপদ বিস্তৃত ছিল।[][]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে প্রাচীন ভারতীয় লেখকগণ পূর্বভারতীয় একটি অঞ্চলকে হরিকেল বলে উল্লেখ করেন। সপ্তম শতাব্দীতে চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ এর অবস্থান নির্দেশ করেছেন পূর্বভারতের পূর্বসীমায়। নবম শতাব্দীর সাহিত্যকর্ম কর্পূরমঞ্জরীতে এ-বক্তব্যের সমর্থন পাওয়া যায়। এ-গ্রন্থে হরিকেলের নারীদের অন্যান্য পূর্ববঙ্গীয় নারীদের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তবে হিউয়েন সাঙ কিংবা অন্য কেউ এর ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে বিশদ কোনো বিবরণ দেন নি। এছাড়াও হরিকেল সম্পর্কে পরবর্তী সময়ের লেখক এবং কাহিনীকারদের বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর ও পরস্পর বিরোধী বক্তব্য রয়েছে। ফলে বিলুপ্ত এ-রাজ্যের অবস্থান নিরূপণ ও শনাক্তকরণে জটিলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। "হরিকেল" নামটি দ্বারা সমগ্র বঙ্গ বা অনেকসময় বঙ্গের অংশবিশেষকে বোঝানো হতো।[] একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীর অভিধান রচয়িতা হেমচন্দ্র তাঁর অভিধানচিন্তামণি-তে বঙ্গাস্তু হরিকেলীয়: অর্থাৎ হরিকেলকে বঙ্গেরই সমার্থক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। প্রাচীন ভারতীয় দার্শনিক এবং পণ্ডিত যাদব প্রকাশও হরিকেলকে বঙ্গের অন্তর্ভুক্ত বলে উল্লেখ করেছেন। একাদশ শতকের পাণ্ডুলিপি অষ্টসাহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতায় বঙ্গের বিভিন্ন অংশে পূজিত বেশ কিছু সংখ্যক মহাযান বৌদ্ধ দেবতাদের সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে। এতে ‘হরিকেলের লোকনাথ’-এর বর্ণনা আছে। তেরো শতকের একটি বৌদ্ধ পাণ্ডুলিপি ডাকার্ণবে বঙ্গের বৌদ্ধ তন্ত্রের ৬৪টি পবিত্রস্থান বা পীঠস্থানের একটি তালিকাতে হরিকেলও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাই স্পষ্টতই দেখা যায় যে, হরিকেল তখন পর্যন্ত বঙ্গে বেশ পরিচিত ও বিখ্যাত ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে সংগৃহীত দুটি পরবর্তীসময়ের পাণ্ডুলিপিতে কোনো উৎস বা কোনো প্রমাণাদির উল্লেখ ছাড়াই হরিকোলকে (সম্ভবত হরিকেলের সাথে অভিন্ন) সিলেটের সমার্থক রূপে উল্লেখ করা হয়েছে।[]

  1. "হরিকেল জনপদ"onushilon.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-১৩ 
  2. কানুনগো, সুনীতি ভূষণ (২০১৬)। প্রাচীন হরিকেল রাজ্য ও মধ্য চট্টগ্রামের ইতিবৃত্ত। নন্দন বইঘর। পৃষ্ঠা ৪, ২১। 
  3. "প্রাচীন বাংলার হরিকেল জনপদ অঞ্চলভুক্ত এলাকা"Edubasebd.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-১৩ 
  4. "প্রাচীন বাংলার জনপদসমূহ"। ২০২৩-০৩-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-১৩ 
  5. মজুমদার, রমেশচন্দ্র (১৯৬৬)। "বাংলা দেশের ইতিহাস (প্রাচীন যুগ)"। সংগ্রহের তারিখ ১৯ এপ্রিল ২০২৫ 
  6. এম হারূনুর রশীদ। "হরিকেল"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ জুন ২৩, ২০১৪ 

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]