হাওড়া

স্থানাঙ্ক: ২২°৩৪′২৫″ উত্তর ৮৮°১৯′৩০″ পূর্ব / ২২.৫৭৩৬২৯৬° উত্তর ৮৮.৩২৫১০৪৫° পূর্ব / 22.5736296; 88.3251045
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হাওড়া
মহানগর
রাতের আলোয় হাওড়া সেতু বা রবীন্দ্র সেতু
হাওড়া জংশন রেলওয়ে স্টেশন, ভারতের বৃহত্তম (প্ল্যাটফর্মের সংখ্যার ভিত্তিতে) ও ব্যস্ততম রেলওয়ে স্টেশন।
ডাকনাম: ভারতের শেফিল্ড[১][২]
হাওড়া পশ্চিমবঙ্গ-এ অবস্থিত
হাওড়া
হাওড়া
স্থানাঙ্ক: ২২°৩৪′২৫″ উত্তর ৮৮°১৯′৩০″ পূর্ব / ২২.৫৭৩৬২৯৬° উত্তর ৮৮.৩২৫১০৪৫° পূর্ব / 22.5736296; 88.3251045
দেশভারত
রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ
জেলাহাওড়া জেলা
সরকার
 • ধরনপৌরসংস্থা
 • শাসকহাওড়া পৌরসংস্থা
 • সংসদপ্রসুন ব্যানার্জি (সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস)
আয়তন
 • মোট৬৩.৫৫ বর্গকিমি (২৪.৫৪ বর্গমাইল)
উচ্চতা১২ মিটার (৩৯ ফুট)
জনসংখ্যা (২০১১)[৩]
 • মোট১৩,৭০,৪৪৮
 • জনঘনত্ব২২,০০০/বর্গকিমি (৫৬,০০০/বর্গমাইল)
ভাষা
 • সরকারিবাংলা, ইংরেজি
সময় অঞ্চলভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+৫:৩০)
পিন৭১১ xxx
টেলিফোন কোড৯১ (৩৩)
লিঙ্গানুপাত৯০৪ / ১০০০
লোকসভা কেন্দ্রহাওড়া
বিধানসভা কেন্দ্রহাওড়া উত্তর, হাওড়া মধ্য, হাওড়া দক্ষিণ, শিবপুর
ওয়েবসাইটwww.howrah.gov.in

হাওড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হাওড়া জেলার সদর শহর। হুগলি নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত হাওড়া পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার যমজ শহর। কলকাতা ও আসানসোলের পর এটি পশ্চিমবঙ্গের তৃতীয় সবচেয়ে জনবহুল পৌরসভা। হাওড়া এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন কেন্দ্র এবং এটি কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের প্রবেশদ্বার।

ব্যুৎপত্তি[সম্পাদনা]

"হাওড়া" নামটির ব্যুৎপত্তি নিয়ে মতান্তর রয়েছে। একটি মতে, বর্তমান হাওড়া শহরের অদূরে অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে হাড়িড়া নামে একটি গ্রামের অস্তিত্ব ছিল; "হাওড়া" নামটি এই "হাড়িড়া" নামেরই অপভ্রংশ।[৪] অন্যমতে, "হাওড়া" নামটির উৎপত্তি "হাবড়" শব্দটি থেকে; যার অর্থ "যেখানে পাঁক ও কাদা বেশি হয়"।[৫] আবার কেউ কেউ মনে করেন, "হাওড়া" শব্দটির অর্থ "যে নিচু বা অবনত অঞ্চলে বর্ষার জল সঞ্চিত হয়"। হাওড়ার ভূমিরূপ এই জাতীয় ছিল বলে অঞ্চলটির এইরূপ নামকরণ হয়।[৫] ভাষাতাত্ত্বিক সুকুমার সেনের মতে, "হাওড়া" শব্দটি একটি ধ্বন্যাত্মক শব্দ থেকে ব্যুৎপন্ন হয়েছে; এর অর্থ "যেখানে কেবল জল-কাদা"।[৬]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

হাওড়ার ইতিহাস ৯০০ বছরের পুরনো। এই জেলাটি ঐতিহাসিক ভুরশুট রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভেনিসের পর্যটক সিজার ফেদারিকি ১৫৬৫-৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ভারত ভ্রমণ করেন। তিনি ১৫৭৮ সালে লেখা তার বিবরণীতে "Buttor" নামে একটি অঞ্চলের উল্লেখ করেন।[৭] এই বিবরণী অনুযায়ী, উক্ত অঞ্চলে জাহাজ যাতায়াতের (সম্ভবত হুগলি নদীর মাধ্যমে) সুবন্দ্যোবস্ত ছিল এবং সম্ভবত জায়গাটি ছিল বাণিজ্যিক বন্দর।[৭] জায়গার নামটির সঙ্গে দক্ষিণ হাওড়ার বেতড় অঞ্চলের নামের মিল পাওয়া যায়।[৭] ১৪৯৮ সালে বিপ্রদাস পিপলাইয়ের লেখা মনসামঙ্গল কাব্যেও বেতড়ের উল্লেখ পাওয়া যায়।[৮]

১৭১৩ সালে আওরঙ্গজেব নাতি ফর‌রুখসিয়ার রাজ্যাভিষেকের সময় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বেঙ্গল কাউন্সিল তার কাছে একটি ডেপুটেশন পাঠিয়ে হুগলি নদীর পূর্বে ৩৩টি ও পশ্চিমে ৫টি গ্রামে বসতি স্থাপন করার অনুমতি চায়।[৯] ১৭১৪ সালের ৪ মে তারিখে লেখা কাউন্সিলের কনসালটেশন বুকের তালিকা অনুযায়ী এই ৫টি গ্রাম হল: সালকিয়া, হাওড়া, কাসুন্দিয়া, রামকৃষ্ণপুর ও বেতড়। এগুলি আজ হাওড়া শহরেরই অন্তর্গত অঞ্চল।[১০] কিন্তু কোম্পানি শুধু এই ৫টি শহরে বসতি স্থাপনেরই অনুমতি পায়নি।[১০] ১৭২৮ সালে আধুনিক হাওড়া জেলা ছিল বর্ধমান ও মহম্মদ আমিনপুর জমিদারির অন্তর্গত।[১০] পলাশির যুদ্ধের পর ১৭৬০ সালের ১১ অক্টোবর বাংলার নবাব মীর কাসিম সাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে কোম্পানি হাওড়া জেলার অধিকার পায়।[১১] ১৭৮৭ সালে হুগলি জেলা গঠিত হয়।[১২] সেই সময় হাওড়া জেলাও হুগলি জেলার অন্তর্গত ছিল। ১৮৪৩ সালে পৃথক হাওড়া জেলা গঠিত হয়।[১৩]

১৮৫৪ সালে হাওড়া রেল টার্মিনাস তৈরি হওয়ার পর হাওড়া গুরুত্বপূর্ণ শিল্পনগরী হয়ে ওঠে। ১৮৫৫ সালে এখানে গমকল স্থাপিত হয়। তারপর পাঠকল স্থাপিত হয়। ১৮৭০ সালের দশকে হাওড়া স্টেশনের কাছে মোট পাঁচটি কারখানা গড়ে ওঠে।[১৪] ১৮৮৩ সালে হাওড়া-শালিমার রেল সেকশন ও শালিমার টার্মিনাস তৈরি হয়।

১৯১৪ সালের মধ্যে ভারতের সবকটি প্রধান শহরে রেল স্টেশন গড়ে ওঠে। এই সময় রোলিং স্টক ও অন্যান্য সামগ্রীর চাহিদা বাড়লে হাওড়ার লিলুয়ায় রেলওয়ে কর্মশালা চালু হয়। ১৯১৪ সালেই হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প গড়ে ওঠে এখানে।[১৫] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত এখানে কারখানার সংখ্যা বাড়তে থাকে। ফলে হাওড়ায় অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ণ হয়। অনেক বসতি গড়ে ওঠে কারখানাগুলিকে ঘিরে।

ভূগোল[সম্পাদনা]

হাওড়ার অবস্থিতি ২২°৩৪′২৫″ উত্তর ৮৮°১৯′৩০″ পূর্ব / ২২.৫৭৩৬২৯৬° উত্তর ৮৮.৩২৫১০৪৫° পূর্ব / 22.5736296; 88.3251045 অক্ষ-দ্রাঘিমাংশে।[১৬] শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড়ে ১২ মিটার (৩৯ ফুট) উঁচুতে অবস্থিত। হাওড়া হুগলি নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত।

জলবায়ু[সম্পাদনা]

হাওড়া-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
মাস জানু ফেব্রু মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টে অক্টো নভে ডিসে বছর
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) ২৬
(৭৯)
২৯
(৮৪)
৩৩
(৯১)
৩৬
(৯৭)
৩৬
(৯৭)
৩৪
(৯৩)
৩৩
(৯১)
৩৩
(৯১)
৩৩
(৯১)
৩২
(৯০)
৩০
(৮৬)
২৭
(৮১)
৩২
(৮৯)
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) ১২
(৫৪)
১৬
(৬১)
২১
(৭০)
২৪
(৭৫)
২৫
(৭৭)
২৬
(৭৯)
২৬
(৭৯)
২৬
(৭৯)
২৬
(৭৯)
২৪
(৭৫)
১৯
(৬৬)
১৪
(৫৭)
২২
(৭১)
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি) ১৯.২
(০.৭৬)
৩৯.৪
(১.৫৫)
৩৮
(১.৫)
৪৯.৫
(১.৯৫)
১৩২.৭
(৫.২২)
২৪৫.৯
(৯.৬৮)
৩৪৭.৬
(১৩.৬৯)
৩২২.৪
(১২.৬৯)
২৯১.২
(১১.৪৬)
১৬৩.৬
(৬.৪৪)
২৭.৯
(১.১০)
৫.৭
(০.২২)
১,৬৮৩.১
(৬৬.২৬)
উৎস: Howrah Weather

জনপরিসংখ্যান[সম্পাদনা]

ভারতের ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে,[১৭] হাওড়া শহরের জনসংখ্যা ১,৩৭০,৪৪৮ । জনসংখ্যার ৫৪% পুরুষ এবং ৪৬% মহিলা। হাওড়ার সাক্ষরতার হার ৭৭%, যা জাতীয় সাক্ষরতার হার ৫৯.৫%-এর চেয়ে অনেক বেশি। পুরুষদের মধ্যে ৮১% সাক্ষর এবং মহিলাদের মধ্যে ৭৩% সাক্ষর। হাওড়ার জনসংখ্যার ৯%-এর বয়স ছয় বছরের কম।

১৮৯৬ সালে ব্রিটিশ ভারতের জনগণনা অনুযায়ী, হাওড়ার জনসংখ্যা ছিল ৮৪,০৬৯। ১৯০১ সালে তা বেড়ে হয় ১৫৭,৫৪৯।[১৮] কর্মক্ষেত্রে সুযোগ ও অন্যান্য সুবিধার জন্য এই সময় হাওড়ার পুরুষ জনসংখ্যা ১০০% ও মহিলা জনসংখ্যা ৬০% বৃদ্ধি পেয়েছিল।[১৮] হিন্দু জনসংখ্যার ৪৩%, মুসলিম ৫৫% এবং অন্যান্য ২%>

পরিবহন[সম্পাদনা]

হাওড়া রেল স্টেশন[সম্পাদনা]

১৮৫৪ সালে হাওড়া স্টেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে হাওড়া হল পূর্ব রেলওয়ে ও দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের প্রধান কেন্দ্র। হাওড়ার অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশন শালিমার


পূর্ব-পশ্চিম মেট্রো রেল (কে এম আর সি)[সম্পাদনা]

পূর্ব-পশ্চিম মেট্রো (কে এম আর সি) রেল বগি

২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করেছিল কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন বা কে এম আর সি; প্রকল্পটি ছিল যমজ শহর কলকাতা এবং হাওড়াকে যুক্ত করার উদ্যোগ। বিধাননগর পাঁচ নম্বর সেক্টর থেকে ১৬.৬ কিমি যাত্রাপথে মাটির ওপরে ও ভূগর্ভে ছ-টি করে স্টেশন থাকছে। এর মধ্যে দুঃসাহসিকভাবে কলকাতা থেকে গঙ্গার তলা দিয়ে এই রেল হাওড়ার মাটি ছুঁয়েছে। অনেক বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে বিধাননগরের দিকে ফুলবাগান পর্যন্ত মাটির ওপরে পূর্ব-পশ্চিম মেট্রো চলাচল শুরু হয়েছে ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। হাওড়ার দিকে থাকছে দুটি স্টেশন, হাওড়া এবং হাওড়া ময়দান। [১৯]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Bengal (India), West (১৯৭২)। West Bengal District Gazetteers: Calcutta and Howrah (ইংরেজি ভাষায়)। State editor, West Bengal District Gazetteers। পৃষ্ঠা 202। ১০ অক্টোবর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ 
  2. Shaw, Shri Ram (২০ সেপ্টেম্বর ২০০১)। "Sheffield of India dying an untimely death"The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। ১১ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ 
  3. West Bengal — City population
  4. "হাওড়া", পশ্চিমবঙ্গ পরিচয়, বাসুদেব গঙ্গোপাধ্যায়, শিশু সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ২০০০, পৃ. ১০৪-০৮
  5. "জেলা পরিচয়: হাওড়া জেলা", সপ্তর্ষি মিত্র, যোজনা (ধনধান্যে), সেপ্টেম্বর ২০০৭ সংখ্যা, পৃ. ৩৭-৪৫
  6. বাংলা স্থান নাম, সুকুমার সেন, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ১৪০০ বঙ্গাব্দ, পৃ. ১৪৬
  7. Donald Frederick Lach, p.473
  8. O'Malley ও Chakravarti 1909, পৃ. 19
  9. O'Malley ও Chakravarti 1909, পৃ. 22
  10. O'Malley ও Chakravarti 1909, পৃ. 23
  11. O'Malley ও Chakravarti 1909, পৃ. 25
  12. O'Malley ও Chakravarti 1909, পৃ. 26
  13. O'Malley ও Chakravarti 1909, পৃ. 27
  14. Samita Sen, p.23
  15. Mark Holmström, p.58
  16. Falling Rain Genomics, Inc - Haora
  17. "Census of India 2001: Data from the 2001 Census, including cities, villages and towns (Provisional)"। Census Commission of India। ২০০৪-০৬-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-০১ 
  18. O'Malley ও Chakravarti 1909, পৃ. 31
  19. "Annual Report" (পিডিএফ)। Kolkata Metro Rail Corporation Ltd.। ২০১৭।