সামন্ততন্ত্র


সামন্ততন্ত্র (ইংরেজি: Feudalism), বা সামন্ত পদ্ধতি, ছিল একটি যৌথ সামাজিক, অর্থনৈতিক, সামরিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কাঠামো যা মধ্যযুগীয় ইউরোপে নবম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। সাধারণভাবে, এটি একটি এমন সমাজব্যবস্থা বোঝায় যেখানে ভূমির বিনিময়ে সেবা বা শ্রম প্রদান করা হতো এবং সেই ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে উঠত।
ফ্রাঁসোয়া লুই গঁসোফ ১৯৪৪ সালে সামন্ততন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করেন একটি পারস্পরিক আইনি ও সামরিক দায়বদ্ধতার কাঠামো হিসেবে, যা মূলত প্রভু, বাঁধনভুক্ত ব্যক্তি এবং ফিফ (ভূসম্পত্তি)-এর ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত।[১]
অন্যদিকে মার্ক ব্লোশ ১৯৩৯ সালে সামন্ততন্ত্রকে আরো বিস্তৃতভাবে সংজ্ঞায়িত করেন, যেখানে শুধুমাত্র যোদ্ধা অভিজাত শ্রেণি নয়, বরং সমাজের তিনটি প্রধান শ্রেণি—অভিজাত, যাজকশ্রেণি এবং কৃষকশ্রেণি—একটি পারস্পরিক দায়বদ্ধতা ও মনোরিয়াল ব্যবস্থার মধ্যে আবদ্ধ ছিল। এই ধরনের কাঠামোকে অনেক সময় "সামন্ত সমাজ" হিসেবেও অভিহিত করা হয়।[২]
যদিও শব্দটি মধ্যযুগীয় লাতিন feodum বা feudum (অর্থাৎ "ফিফ") থেকে উদ্ভূত,[৩] তবুও feudalism বা সামন্ততন্ত্র শব্দটি এবং এটি দ্বারা যে কাঠামো বোঝানো হয়, তা মধ্যযুগীয় মানুষদের দৃষ্টিতে কখনোই একটি আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে পরিগণিত হয়নি।[৪]
১৯৭৪ সালে এলিজাবেথ এ. আর. ব্রাউন-এর “The Tyranny of a Construct” প্রবন্ধ এবং ১৯৯৪ সালে সুসান রেইনল্ডস-এর Fiefs and Vassals গ্রন্থ প্রকাশের পর থেকে ইতিহাসবিদদের মধ্যে একটি বিতর্ক শুরু হয়, যেখানে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন—সামন্ততন্ত্র কি আদৌ একটি কার্যকর বিশ্লেষণাত্মক ধারণা? এই বিতর্ক এখনও চলমান।[৫][৬][৭]
সংজ্ঞা
[সম্পাদনা]Feudal শব্দটির ব্যবহার ১৪০৫ সালের মধ্যেই শুরু হয় এবং feudalism শব্দটি ১৮শ শতকের শেষের দিকে প্রচলিত হয়।[৫]
গঁসোফের সংজ্ঞা অনুযায়ী, সামন্ততন্ত্র একটি কাঠামো যেখানে যোদ্ধা অভিজাত শ্রেণির মধ্যে পারস্পরিক আইনি ও সামরিক দায়বদ্ধতা বিদ্যমান ছিল এবং তা প্রভু, ভ্যাসাল ও ভূসম্পত্তির ভিত্তিতে গড়ে উঠত।[১]
অন্যদিকে ব্লোশের মতে, সামন্ততন্ত্র ছিল একটি সমগ্র সামাজিক কাঠামো যা তিনটি রাজ্যিক শ্রেণি—অভিজাত, যাজক ও শ্রমজীবী—সমূহকে অন্তর্ভুক্ত করত এবং মনোরিয়াল ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হতো।[২]
ইউরোপ ছাড়াও প্রয়োগ
[সম্পাদনা]সামন্ততন্ত্রের ধারণাটি সামন্ত যুগের জাপান, মধ্যযুগীয় ইথিওপিয়া[৮] প্রভৃতি সমাজে তুলনামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে, যেখানে সামন্ততন্ত্রের সাথে কিছুটা মিল রয়েছে।
এছাড়া, চীনের চুনচিউ যুগ, প্রাচীন মিশর, পার্থীয় সাম্রাজ্য, ভারতের সামন্ততন্ত্র, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলসহ বিভিন্ন সমাজব্যবস্থায় 'সামন্তীয় বৈশিষ্ট্য' পাওয়া গেছে বলেও গবেষকরা মত দিয়েছেন।[৮]
তবে অনেক গবেষক মনে করেন, “সামন্ততন্ত্র” শব্দটি অতিমাত্রায় বিস্তৃত ও বহু অর্থে ব্যবহৃত হওয়ায় তার বিশেষ অর্থ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এজন্য অনেকে এই ধারণাটিকে সমাজ বিশ্লেষণে পরিত্যাজ্য বলে মনে করেন।[৫][৯]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ Ganshof, François Louis (১৯৫২)। Feudalism। Philip Grierson কর্তৃক অনূদিত। Longmans।
- ↑ ক খ Bloch, Marc (১৯৩৯)। Feudal Society।
- ↑ Shumaker, Walter A. (১৯০১)। The Cyclopedic Dictionary of Law। পৃষ্ঠা 365।
- ↑ Noble, Thomas (২০০২)। The Foundations of Western Civilization। The Teaching Company।
- ↑ ক খ গ Elizabeth A. R. Brown। "Feudalism"। Encyclopædia Britannica Online।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;reynolds
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ Halsall, Paul। "Feudalism?"। Internet Medieval Sourcebook।
- ↑ ক খ Jessee, W. Scott (১৯৯৬)। "Feudalism"। Reader's Companion to Military History। Houghton Mifflin Company।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;ebrown
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি