ডোকরা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ডোকরা হল "হারানো মোম ঢালাই" পদ্ধতিতে তৈরি একটি শিল্প কর্ম। এই শিল্পের ইতিহাস প্রায় ৪০০০ হাজার বছরের পূরানো। সিন্ধু সভ্যতার শহর মহেঞ্জদোড়োতে প্রাপ্ত "ড্যান্সিং গার্ল" বা "নৃত্যরত নারী মূর্তি" হল ডোকরা শিল্পের নিদর্শন। ভারত ছাড়াও চীন,মালয়েশিয়া,জাপান প্রভৃতি দেশে এই শিল্প কর্ম পাওয়া যায়। এটি একটি প্রাচীন শিল্প কর্ম।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

একটি ডোকরা শিল্পের মূর্তি
পাঁচ সন্তানের সঙ্গে মা

মনে করা হয় মধ্যপ্রদেশ এর বস্তার ও ছত্তিসগড়ে এই শিল্পের উদ্ভব হয়। পরে ঝাড়খণ্ডবিহার-এ ছড়িয়ে পড়ে। আরও পরে পশ্চিমবঙ্গওড়িশা রাজ্যে এর প্রসার ঘটে। বর্তমানে ডোকরা শিল্পে পশ্চিমবঙ্গ অন্যতম নাম।

পদ্ধতি[সম্পাদনা]

ডোকরা শিল্প পদ্ধতি একটি জটিল ও সময় সাপেক্ষ, সূক্ষ্য শিল্প কর্ম। প্রথমে শিল্পীরা পুকুর থেকে লাল বা সাদা মাটি সংগ্রহ করে ও মাটির মণ্ড তৈরি করে; এর পর মাটি দিয়ে হাতে করে একটি অবয়ব তৈরি করে। অবয়বটির উপর মোম, তেল এর প্রলেপ দেওয়া হয় । শেষে নরম মাটির প্রলেপ দেওয়া হয়। এর পর এটিকে পোড়ানো হয়। ফলে মোম গলে একটি ছিদ্র দিয়ে বাইড়ে বেরিয়ে আসে ।এর পর ওই ছিদ্র দিয়ে গলানো পিতল ঢালা হয় এবং শক্ত হলে মূর্তিটি সংগ্রহ করা হয়। মূর্তিটি এর পর শিরিষ কাগজ দ্বারা ঘষে উজ্জ্বল করা হয়।

পশ্চিমবঙ্গের ডোকরা শিল্প[সম্পাদনা]

পশ্চিমবঙ্গের ডোকরা শিল্পের কিছু নিদর্শন

পশ্চিমবঙ্গে ডোকরা শিল্পের প্রসার ঘটে আজ থেকে কয়েকশো বছর পূর্বে। প্রধানত ঝাড়খণ্ড থেকে এই শিল্প পুরুলিয়া হয়ে এই শিল্প রাজ্যের পশ্চিম প্রান্তের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। সেগুলির মধ্যে অন্যতম জেলাগুলো হল- বাঁকুড়া, বর্ধমান, পুরুলিয়াপশ্চিম মেদিনীপুর। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলা-বিকনা, খাতডার লক্ষীসাগর, লাদনা,ছাতনা, শববেড়িয়া। বর্ধমান-গুসকরার দরিয়াপুর ও পুরুলিয়ার নাডিহায় ডোকার শিল্পের প্রধান কেন্দ্র গুলি অবস্থিত। এর মধ্যে বাঁকুড়ার বিকনা ও বর্ধমানের দরিয়াপুর উল্লেখযোগ্য। এই দুই জায়গার ডোকরা শিল্পের প্রসিদ্ধি জগৎজোড়া।

পুরস্কার[সম্পাদনা]

এই শিল্প কর্মের জন্য ১৯৬৬ সালে শুম্ভ কর্মকার, ১৯৬৮ সালে দরিয়াপুর এর হারাধন কর্মকার, ১৯৮৮ সালে মটর কর্মকার, ২০১২ সালে পাত্রসায়ের এর নিতাই কর্মকার রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পান।

সংকট[সম্পাদনা]

বর্তমানে এই শিল্পের অবস্থা খুব ভাল না। বিভিন্ন কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি এর মূল কারণ। এছাড়া সরকারি প্রচার কম। অনেক যায়গায় শিল্পির অভাব দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ডোকরা শিল্প প্রসারের জন্য কাজ করছে।[১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "ইলেক্ট্রনিক্সের হাত ধরে ডোকরা শিল্পে নয়া মোড়"এবেলা। সংগ্রহের তারিখ JULY 15 2016  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)