পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

পূর্ব ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি মূলত সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) (সিপিআই(এম)) ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এই চার রাজনৈতিক দল দ্বারা প্রভাবিত। পশ্চিমবঙ্গ কয়েক দশক ধরে ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক হিংসার মধ্য দিয়ে গিয়েছে। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচন থেকে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল কংগ্রেস দ্বারা শাসিত। আগে এই রাজ্যে তিন দশক ধরে সিপিআই(এম)-এর শাসন ছিল।

সরকার[সম্পাদনা]

পশ্চিমবঙ্গ সরকার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ও তার ২৩ টি জেলার সর্বোচ্চ শাসনতান্ত্রিক কর্তৃপক্ষ। এটি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার বা স্থানীয় নামে রাজ্য সরকার নামেও পরিচিত। রাজ্যপাল সহ একটি শাসনবিভাগ, একটি আইনবিভাগ ও একটি বিচারবিভাগ নিয়ে এই সরকার গঠিত। ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলির মতোই, রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান রাজ্যপাল কেন্দ্রীয় সরকারের সুপারিশ অনুসারে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নির্বাচিত হন। তবে তার পদটি মূলত আনুষ্ঠানিক। মুখ্যমন্ত্রী সরকারের প্রধান, এবং তার হাতেই রাজ্যের প্রকৃত শাসনক্ষমতা ন্যস্ত থাকে। কলকাতা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী এবং এখানেই রাজ্যের আইনসভা বিধানসভা ও সচিবালয় মহাকরণ অবস্থিত। কলকাতা হাইকোর্টও কলকাতায় অবস্থিত। এর এক্তিয়ারভুক্ত এলাকা হল সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ ও আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ

পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান বিধানসভা এককক্ষবিশিষ্ট। বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ২৯৫। এরা বিধায়ক নামে পরিচিত। ২৯৪ বিধায়করা প্রতি পাঁচ বছরের জন্য পশ্চিমবঙ্গের জনগণ কর্তৃক সরাসরি নির্বাচিত হন এবং একজন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায় থেকে মনোনীত হন।

বিধানসভা[সম্পাদনা]

বিধানসভা ভবন, কলকাতা
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা পশ্চিমবঙ্গের এককক্ষবিশিষ্ট রাজ্য আইনসভা। পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার বিবাদীবাগ এলাকায় হাইকোর্টের দক্ষিণে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভবনটি অবস্থিত। বিধানসভার সদস্যদের বিধায়ক বলা হয়। তাঁরা পাঁচ বছরের জন্য জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার মোট আসনসংখ্যা ২৯৫। এর মধ্যে ২৯৪টি আসনের বিধায়করা এক-আসনবিশিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্র থেকে সরাসরি নির্বাচিত হয়ে আসেন এবং এক জন সদস্য অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায় থেকে সরাসরি নির্বাচিত হন। সাধারণত, বিধানসভার মেয়াদ পাঁচ বছরের; তবে তার আগেই বিধানসভা ভেঙে দেওয়া যায়।

নির্বাহী[সম্পাদনা]

২০১৩ সাল পর্যন্ত রাজধানী কলকাতাহয় অবস্থিত মহাকরণ ভবন (পূর্বনাম রাইটার্স বিল্ডিং) পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সচিবালয় ও প্রধান প্রশাসনিক দপ্তর ছিল। পরে মহাকরণ ভবনের সংস্কারের জন্য নিকটবর্তী হাওড়া শহরে অবস্থিত নবান্ন ভবনকে অস্থায়ীভাবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সচিবালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।[১]

রাজ্যপাল[সম্পাদনা]

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের নিয়মতান্ত্রিক প্রধান ও ভারতের রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি। রাষ্ট্রপতি পাঁচ বছরের মেয়াদে রাজ্যপাল নিয়োগ করে থাকেন। মহামান্য সিভি আনন্দ বোস পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজ্যপাল (দপ্তরকালের সূচনা ২৩ নভেম্বর ২০২২)।[২] রাজ্যপালের সরকারি বাসভবন রাজভবন

মুখ্যমন্ত্রী[সম্পাদনা]

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হলেন পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সরকার-প্রধান। ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, রাজ্যপাল রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক প্রধান হলেও প্রকৃত শাসনক্ষমতা মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই ন্যস্ত থাকে। নিয়মানুসারে, বিধানসভা নির্বাচনের পরে রাজ্যপাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী দলকে (বা জোটকে) সরকার গঠনের আহ্বান জানান। রাজ্যপালই মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়োগ করেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিসভা তাদের কাজকর্মের জন্য রাজ্য বিধানসভার কাছে যৌথভাবে দায়ী থাকেন। বিধানসভায় আস্থাভোটে জয়লাভ করলে মুখ্যমন্ত্রী পাঁচ বছরের মেয়াদে তার পদে আসীন থাকতে পারেন এবং তার পদটিও কোনও মেয়াদের নির্দিষ্ট সংখ্যায় সীমাবদ্ধ নয়।[৩]

১৯৪৭ সালের ২০ জুন বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভায় ভারত ভাগের প্রেক্ষিতে বাংলার ভাগ্য নির্ধারিত হয়।[৪] আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম লীগ প্রতিনিধিরা সমগ্র বাংলাকে পাকিস্তানভূক্ত করার পক্ষে রায় দেন। কিন্তু বাংলার হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিম অংশের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ৫৮-২১ ভোটে বাংলার পশ্চিম অংশকে ভারতভূক্তির পক্ষে রায় দেওয়ার ফলে বঙ্গভঙ্গ নিশ্চিত হয় ও 'পশ্চিমবঙ্গ'-এর জন্ম হয়। ৩ জুলাই প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের নেতৃত্বে একাদশ সদস্য বিশিষ্ট 'পশ্চিমবঙ্গ'-এর প্রথম মন্ত্রিসভা শপথ নেন। প্রধানমন্ত্রী হন প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ। অগস্ট মাসে ব্রিটিশ বাংলা প্রেসিডেন্সি আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে দুই নবগঠিত স্বাধীন রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হয়। মুসলমান-প্রধান পূর্বাঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় পাকিস্তানের পূর্ব বাংলা প্রদেশ এবং হিন্দু-প্রধান পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে গঠিত হয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। সেই সময় থেকে মোট আট জন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৪৭ সালের অগস্ট মাস থেকে ১৯৫০ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা পশ্চিমবঙ্গের প্রধানমন্ত্রী নামে অভিহিত হতেন। তারপরই "প্রধানমন্ত্রী" শব্দটির পরিবর্তে "মুখ্যমন্ত্রী" শব্দটি চালু হয়। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রথম প্রধানমন্ত্রী।[৫] তিনি মাত্র পাঁচ মাস ওই পদে আসীন ছিলেন। এরপর তাঁরই সহকর্মী ডা. বিধানচন্দ্র রায় তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন এবং ১৯৬২ সাল পর্যন্ত টানা চোদ্দো বছর প্রথমে প্রধানমন্ত্রী ও পরে মুখ্যমন্ত্রীর পদ অলংকৃত করেন। ওই বছর ১ জুলাই তাঁর মৃত্যুর পর চলতি বিধানসভার অবশিষ্ট মেয়াদে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন প্রফুল্লচন্দ্র সেন। এরপর পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুকালের জন্য অস্থির হয়ে ওঠে। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত রাজ্যে মোট চারটি জোট সরকার গঠিত হয় এবং মোট তিনবার সীমিত সময়ের জন্য রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়। এরপর সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মুখ্যমন্ত্রিত্বে কংগ্রেস পাঁচ বছরের পূর্ণ মেয়াদে পশ্চিমবঙ্গে সরকার পরিচালনা করে।[৬]

১৯৭৭ সালের নির্বাচনে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী)-র নেতৃত্বে বামফ্রন্ট বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। এরপর একটানা ২৩ বছর জ্যোতি বসু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘকালীন মুখ্যমন্ত্রিত্বের এটি একটি সর্বভারতীয় রেকর্ড। ২০১৮ সালে সিক্কিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন কুমার চামলিং প্রথম এই রেকর্ড ভাঙতে সক্ষম হয়েছিলেন।[৭] জ্যোতি বসুর পদত্যাগের পর তাঁর উত্তরসূরি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পরবর্তী এক দশক রাজ্যের কমিউনিস্ট সরকারের নেতৃত্ব দেন। ২০১১ সালের নির্বাচনে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট (ইউপিএ) বামফ্রন্টকে পরাজিত করে। ওই বছরই ১৯ মে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তিনিই রাজ্যের বর্তমান তথা প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তৃণমূল কংগ্রেস ইউপিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসে এবং পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনে এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এই নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস অধিকতর আসনে জয়লাভ করে পুনর্নির্বাচিত হয়।[৮][৯]

বিচার বিভাগ[সম্পাদনা]

কলকাতা উচ্চ আদালতের মূল ভবন

কলকাতা উচ্চ আদালত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত এবং পশ্চিমবঙ্গ ব্যতীত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জও এর এক্তিয়ারের অন্তর্গত। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেক জেলার নিজস্ব আদালত রয়েছে (যেমন: পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল আদালত), এমনকি কিছু মহকুমারও নিজস্ব আদালত রয়েছে (যেমন: বনগাঁ মহকুমার বনগাঁ আদালত)।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

বিধানচন্দ্র রায় যুগ (১৯৪৭–১৯৬২)[সম্পাদনা]

১৯৫০ সালে কোচবিহারের রাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ ভারতের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করলে রাজ্যটি পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়। [১০] ১৯৫৫ সালে চন্দননগরের ফরাসী উপনিবেশ, যেটি ১৯৫০ সালে ভারত সরকারের অধীনে আসে, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হয়। সাথে সাথে বিহারের কিছু অঞ্চলও সংযুক্তি লাভ করে।

বিধানচন্দ্র রায়ের আমলে অনেকগুলি শিল্পের বিকাশ ঘটে। ১৯৫৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়।

যুক্তফ্রন্ট (১৯৬৭)[সম্পাদনা]

১৯৬৭ সালের রাজ্যসভা নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের সরকারের সিপিআই(এম) প্রধান চালিকাশক্তি ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বভার লাভ করেন বাংলা কংগ্রেসের অজয় মুখোপাধ্যায়

১৯৬৭ সালে উত্তরবঙ্গে নকশালবাড়িতে সিপিআই(এম) নেতা চারু মজুমদার ও কানু সান্যালের নেতৃত্বে কৃষক আন্দোলন গড়ে ওঠে। সরকার কড়া হাতে আন্দোলন দমন করে। ১৯৭০ ও ১৯৮০ এর দশকে ক্রমাগত মার্ক্সবাদী ও নকশালবাদী পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের শিল্প-সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

১৯৬৭-র নভেম্বরে, কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের যুক্তফ্রন্ট সরকারকে বরখাস্ত করে। শুরুতে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের নেতৃত্বে একটি সংখ্যালঘু সরকার গঠন করলেও সেই মন্ত্রিসভা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। যুক্তফ্রন্ট সরকার উৎখাত হওয়ার ঘোষণার পর রাজ্যজুড়ে ২৪-ঘণ্টার এক জোরদার হরতাল সংঘটিত হয়। ঘোষ মন্ত্রিসভার পতনের পর রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়।

১৯৬৯-এ রাজ্যে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সর্ববৃহৎ দলরূপে আত্মপ্রকাশ করে।[১১] কিন্তু সিপিআই ও বাংলা কংগ্রেসের সক্রিয় সমর্থনে অজয় মুখোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদে পুনঃবহাল হন। ১৯৭০এর ১৬ই মার্চ তিনি পদত্যাগ করলে রাজ্যে আবার রাষ্ট্রপতি শাসন ফিরে আসে।

সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় যুগ (১৯৭২–১৯৭৭)[সম্পাদনা]

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ১৯৭২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করে এবং বিজয়ী নেতা সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় মুখ্যমন্ত্রী হন। এই পর্যায়ে, ১৯৭৫ সালে, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দেশজুড়ে জরুরী অবস্থা জারি করেন। এই সময়কাল রাজ্যে পুলিশবাহিনীর সঙ্গে নকশালপন্থীদের চরম হিংসাত্মক লড়াই ও শেষ পর্যন্ত আন্দোলন দমনের জন্য চিহ্নিত হয়ে আছে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বহু শরণার্থী পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিলে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে।

[১২] ১৯৭৪এ, বসন্তরোগের মহামারীতে হাজারো মানুষের মৃত্যু ঘটে। ১৯৭৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসকে পরাজিত করলে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি এক বিশাল পরিবর্তনের সম্মুখীন হয়।

বামফ্রন্ট যুগ (১৯৭৭–২০১১)[সম্পাদনা]

১৯৭৭-এর বিধানসভা নির্বাচনে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) নেতৃত্বাধীন বামজোট ২৪৩ আসনে জয়লাভ করে সংখ্যাগুরুত্ব অর্জন করে। জ্যোতি বসুর মুখ্যমন্ত্রীত্বে প্রথম বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী) নেতৃত্বাধীন বামজোট পরবর্তী তিন দশক ধরে রাজ্যের শাসনভার পরিচালনা করে।[১৩]

পরপর পাঁচবার বামফ্রন্ট সরকারকে নেতৃত্ব প্রদানের পর জ্যোতি বসু সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে তাঁর উত্তরসূরী হিসাবে নিযুক্ত করেন। পাঁচ বছর পর মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হাত ধরে বামফ্রন্ট আবার ক্ষমতায় আসে।[১৪]

তৃণমূল যুগ (২০১১–বর্তমান)[সম্পাদনা]

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ২০১১র নির্বাচনে তৃণমূল ও বাংলা কংগ্রেসের জোট সরকার জয়ী হয়। ২০১৩তে তৃণমূল জাতীয় কংগ্রেসের জোট থেকে বেরিয়ে আসে। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল এককভাবে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আসে। এই সময়ে রাজ্যে বাঙালি জাতীয়তাবাদী মনোভাব বেড়ে যায় এবং শাসক দল কমিউনিস্টদের দমনে নেমে পড়ে।

২০১৬ সাল থেকে বাংলার অর্থনীতিতে ভালো বৃদ্ধি চোখে পড়ে, মমতা ব্যানার্জির একাধিক সামাজিক প্রকল্পে বাংলা আবার এগোতে শুরু করে, ২০২০ সালে অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বাংলার শেষ দশকের জিডিপি প্রবৃদ্ধি চোখে পড়ে, বাংলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে ওঠে, যা বাংলার ভবিষ্যতকে ত্বরান্বিত করে।

প্রধান ঘটনাসমূহ[সম্পাদনা]

মরিচঝাঁপি হত্যাকাণ্ড[সম্পাদনা]

মরিচঝাঁপি হত্যাকাণ্ড ছিলো ১৯৭৯ সালে রাজ্যপুলিশ দ্বারা রচিত ঘৃণ্য রাজনৈতিক হত্যাকান্ড যেখানে দেশভাগ পরবর্তী পূর্ব পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থী বাঙালি হিন্দুদের সুন্দরবনের মরিচঝাঁপি দ্বীপে গণহত্যার শিকার হতে হয়েছিলো।[১৫]

সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ড[সম্পাদনা]

বানতলা ধর্ষণ মামলা[সম্পাদনা]

১৯৯০ সালের ৩০ মে গোসাবা রাঙাবেড়িয়া থেকে ফেরার পথে বানতলা রোডে একদল দুষ্কৃতির হাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দুই মহিলা স্বাস্থ্য আধিকারিক ও একজন ইউনিসেফের আধিকারিক ধর্ষিতা হন। দুষ্কৃতিদের বাধা দিতে গিয়ে একজন আধিকারিক ও তাদের গাড়ির চালক নিহত হন।

সিঙ্গুর টাটা ন্যানো বিবাদ[সম্পাদনা]

নন্দীগ্রাম হত্যাকাণ্ড[সম্পাদনা]

১৯৯০ সালের ৩০ মে গোসাবা রাঙাবেড়িয়া থেকে ফেরার পথে বানতলা রোডে একদল দুষ্কৃতির হাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দুই মহিলা স্বাস্থ্য আধিকারিক ও একজন ইউনিসেফের আধিকারিক ধর্ষিতা হন। দুষ্কৃতিদের বাধা দিতে গিয়ে একজন আধিকারিক ও তাদের গাড়ির চালক নিহত হন।

রাজনৈতিক দল[সম্পাদনা]

জাতীয় দল[সম্পাদনা]

দল পতাকা নির্বাচন প্রতীক মতবাদ প্রতিষ্ঠা প্রতিষ্ঠাতা পশ্চিমবঙ্গ বিভাগের নেতা/নেত্রী আসনসংখ্যা
লোকসভা রাজ্যসভা বিধানসভা
ভারতীয় জনতা পার্টি দক্ষিণপন্থী ৬ এপ্রিল ১৯৮০ অটলবিহারী বাজপেয়ী সুকান্ত মজুমদার
১৬ / ৪২
১ / ১৬
৬৫ / ২৯৪
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) বামপন্থী ৭ নভেম্বর ১৯৬৪ ই. এম. এস. নাম্বুদিরিপাদ মহম্মদ সেলিম
০ / ৪২
০ / ১৬
০ / ২৯৪
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস মধ্যপন্থী ২৮ ডিসেম্বর ১৮৮৫ অ্যালান অক্টাভিয়ান হিউম অধীর রঞ্জন চৌধুরী
২ / ৪২
২ / ১৬
০ / ২৯৪

রাজ্য দল[সম্পাদনা]

দল পতাকা নির্বাচন প্রতীক মতবাদ প্রতিষ্ঠা প্রতিষ্ঠাতা পশ্চিমবঙ্গ বিভাগের নেতা/নেত্রী আসনসংখ্যা
লোকসভা রাজ্যসভা বিধানসভা
নিখিল ভারত ফরওয়ার্ড ব্লক
বামপন্থী ২২ জুন ১৯৩৯ সুভাষচন্দ্র বসু জি. দেবরাজন
০ / ৪২
০ / ১৬
০ / ২৯৪
সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস
মধ্যপন্থী ১ জানুয়ারি ১৯৯৮ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
২৪ / ৪২
১৩ / ১৬
২২৫ / ২৯৪

প্রশাসনিক বিভাগ[সম্পাদনা]

পশ্চিমবঙ্গের জেলাসমূহ

পশ্চিমবঙ্গ ৫টি বিভাগ২৩টি জেলা নিয়ে গঠিত। প্রত্যেক জেলা আবার এক বা একাধিক মহকুমা নিয়ে গঠিত, যা আবার একাধিক পৌরসভা, পৌর নিগমসমষ্টি উন্নয়ন ব্লক নিয়ে গঠিত।

রাজ্য
(পশ্চিমবঙ্গ)
বিভাগ
(যেমন: বর্ধমান বিভাগ)
জেলা
(যেমন: হুগলি জেলা)
মহকুমা
(যেমন: চন্দননগর মহকুমা)
পৌরসভা
(যেমন: তারকেশ্বর পৌরসভা)
পৌর নিগম
(যেমন: চন্দননগর পৌরনিগম)
সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক
(যেমন: সিঙ্গুর ব্লক)
গ্রাম পঞ্চায়েত
(যেমন: সিঙ্গুর পঞ্চায়েত)

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Teething troubles at Nabanna ease out. Indian Express (9 October 2013).
  2. "Kesri Nath Tripathi sworn in as Bengal Governor"। Zee News। ২৪ জুলাই ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৪ 
  3. ইন্ট্রোডাকশন টু দ্য কনস্টিটিউশন অফ ইন্ডিয়া (ইংরেজি), দুর্গাদাস বসু, লেক্সিসনেক্সিস বাটারওয়ার্থস, ওয়াধা, নাগপুর, ১৯৬০, ২০শ সংস্করণ, ২০১১ পুনর্মুদ্রণ, পৃ. ২৪১, ২৪৫আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৮০৩৮-৫৫৯-৯। টীকা: এই গ্রন্থে সাধারণভাবে ভারতীয় রাজ্যগুলির কথা আলোচিত হয়েছে। নির্দিষ্টভাবে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও তা সমান প্রযোজ্য।
  4. বন্দ্যোপাধ্যায়, শেখর (২০০৯)। Decolonization in South Asia: Meanings of Freedom in Post-independence West Bengal, 1947–52। রাউটলেজ। আইএসবিএন 9781134018239। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০১৯ 
  5. Saibal Sen. "Post-Independence, a Prime Minister for Bengal!". The Times of India. 15 August 2013. Archived on 16 July 2018.
  6. Origin and Growth of the West Bengal Legislative Assembly. West Bengal Legislative Assembly. Retrieved on 27 July 2018.
    Note: In case of an error, please click the "Origin & Growth" button in the top left of the website.
  7. "Pawan Kumar Chamling crosses Jyoti Basu’s record as longest-serving Chief Minister ". The Hindu. 29 April 2018.Archived on 31 July 2018.
  8. Shiv Sahay Singh. "Congress quits Mamata Ministry". The Hindu. 22 September 2012. Archived on 26 July 2018.
  9. Subrata Nagchowdhury. "Behind Mamata Banerjee’s landslide victory in Bengal, old ghosts versus new promise". The Indian Express. 20 May 2016. Archived on 26 July 2018.
  10. Dr. Sailen Debnath,ed. Social and Political Tensions In North Bengal since 1947, আইএসবিএন ৮১-৮৬৮৬০-২৩-১.
  11. Indian National Congress had won 55 seats, Bangla Congress 33 and CPI 30. CPI(M) allies also won several seats.ECI: Statistical Report on the 1969 West Bengal Legislative Election
  12. (Bennett ও Hindle 1996, পৃ. 63–70)
  13. Biswas, Soutik (2006-04-16). "Calcutta's colourless campaign". BBC. Retrieved 2006-08-26.
  14. Bhattacharya,, Snigdhendu (25 April 2011). "Ghost of Marichjhapi returns to haunt". The Hindustan Times. Retrieved 5 August 2013.
  15. "Book Excerpt: 'Countless Were killed, Many Raped,' Say Eyewitnesses of Bengal's Marichjhapi Massacre"। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০১৯ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]